আলো আঁধার, পর্ব:৮+৯

#আলো_আধাঁর
লিখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

৮.
শালা আমি আইসা সবার আগে তোর কান জড়ায়ে গুইনা গুইনা দুইটা চড় না মারছি তো আমার নাম ফাহিম না। তোর মাথায় ঘিলু নাই। তুই না মানসিক ডাক্তার তোর মন মানসিকতা এত খারাপ কবে থেকে হইলো।
তুই ব্যাপারটা বুঝতেসিস না। দিয়ার মনে এখনো ঐ ছেলের জন্য ফিলিংস থাকলে। সি অজ প্রেগন্যান্ট উইথ হিজ চাইল্ড। মানে সম্পর্কটা কতটা গভীর ছিল একবার ভাব।
তো কি হইছে? সম্পর্ক গভীর ছিল, ইটস্ পাস্ট টেনস্। এখন ঐ ব্যাটা আর ওর লাইফে নাই। আর দিয়ার মনে যদি ফিলিংস থেকেও থাকে ইউ ক্যান ইজিলি রিমুভ দ্যাট রাইট?
হুম বাট……
ওয়েট তুই এইটা ভাবতেছিস না তো যে মেয়েটা আর ভার্জিন নাই ইউজড্?
ব্যাপারটা সেরকম না আই হ্যাভ প্রবলেম উইথ দ্যাট বাট…….
প্রবলেম আছে মানে? তুই নিজে ভার্জিন। যে এখন ভার্জিন মেয়ে খুজোঁস? এটা ২০২০ সাল। এ যুগে এসব কমন। আর তোর চিন্তা ধারার কি হইলো টিপিক্যাল পুরুষদের মতো বিহেভ কেন করতেছিস?
প্লিজ। আমার কথা শেষ করতে দে। বিষয়টা মোটেও সেরকম না। প্রথমত ওর প্রতি আমার অনুভূতিটা, ইটস্ আ হ্যাভেনলি থিংক। আমি যখনই চিন্তা করছি আমার ভালোবাসা অন্য কারো সাথে এতটা ক্লোজ….. উফ আই জাস্ট কান্ট থিংক আবাউট ইট। ইটস্ সো পেইনিং। যখনই ভাবি ওর মনে অন্য কেউ আছে, আমি সহ্য করতে পারছি না।
ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু তোর সবার সামনে থেকে এভাবে চলে আসা উচিত হয়নি। ইটস্ ইওর প্রফেশন। তোর প্রফেশনালি বিহেভ করা উচিত ছিল।
ওহ শীট। এইটা তো মাথায় ই ছিল না। সবাই না জানি কি ভাবছে?
হুম এখন মাথায় ঢুকছে। শোন মেয়েটা অনেক বেশি সহ্য করছে তুই ব্যাপারটাকে পারসোনালি না নিয়ে প্রফেশনালি নে। আমাদের কাজ তো এইটাই তাইনা। আর হয়তো এই প্রসেসের মধ্যে তোদের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক বিল্ড আপ হলো। তাছাড়া এখন ব্যাপারটা দুই পরিবারের মধ্যে এসে গেছে। এভাবে কুইট করলে প্রবলেম হতে পারে।
ঠিক বলছিস না জানি ভাবী কি ভাবছে। তুই দেশে কবে আসবি?
সেমিনার টা শেষ হোক আগে।
আচ্ছা তাহলে পরে কথা হবে। বাই।
বাই।
ফোনটা রাখার পর অনেক টাই হালকা লাগছে রিয়াদের নিজেকে। ফাহিম ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর সাথে কিছু শেয়ার করার পর কেমন যেন একটা শান্তি শান্তি লাগে। দিয়ার সমস্যাটা ও অবশ্যই দেখবে। এটা ওর কাজ ওর দায়িত্ব। আর তাছাড়া ও দিয়াকে ভালোবাসে। আর ভালোবাসায় তো কোনো এক্সপেক্টেশন থাকতে নেই। ভালোবাসায় শুধু ভালোবাসতে হয়। কোনো শর্ত ছাড়াই শুধু ভালোবাসতে হয়।

হিয়া তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। রাজিব ওকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে। কোনো কথা বলছে না। শুধু রিয়াদের ওভাবে চলে যাওয়াটায় কেমন যেন খটকা লাগছে ওর। তখন দিয়ার বিয়ের কথা শুনে ও কেমন ওর চেহারার রঙ পাল্টে গিয়েছিল।
আই এম সরি।
বেশ কিছুক্ষণ কাঁদার পর চোখ মুছে হিয়া রাজিবের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতেই ঘোর কাটল রাজিবের। বলল,
আমাকে কেন সরি বলছেন?
আপনি বিয়ের পর প্রথম বার এ বাড়িতে এলেন আর আমার বোনের এরকম একটা ব্যাপার…..
পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না হিয়া। তার আগেই রাজিব ওর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে বলল,
বিয়ে মানে বোঝেন? সেদিন তিন কবুল বলে শুধু আপনাকেই নয় বরং আপনার সমস্ত কিছুকে আমি আমার হিসেবে এক্সেপ্ট করেছি। এখন কিছুই আর আমার আপনার নয়। আমাদের হয়ে গেছে। তাই এসব ফরমালিটি আমার সাথে করতে আসবেন না। আর দিয়ার বিষয়টা…..
হঠাৎ দরজায় শব্দ হওয়ায় পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না রাজিব। হিয়া গিয়ে দরজা খুলতেই রিয়াদ ভিতরে ঢুকলো। একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
সরি ভাবী আমি তখন ওভাবে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। আসলে পুরো ব্যাপারটা অ্যানালাইসিস করতে আমার একটু একা সময়ের প্রয়োজন ছিল আর তুমিও কাঁদছিলে সো…
সমস্যা নেই।
আমার আরো কিছু বিষয় জানার ছিল তাই আবারো তোমার কাছে এলাম।
বলো কি জানতে চাও?
দিয়ার জ্ঞান ফেরার পর ওর রিএ্যাকশান কেমন ছিল? আই মিন ও কিছু বলেছিল এমন কেন করে ছিল?
ঐদিন ষোলো ঘন্টা পর ওর জ্ঞান ফিরেছিল। প্রথমে ও কোনো কথাই বলে নি। আমরা সবাই ওর কাছেই ছিলাম। তারপর সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর ও খুব আস্তে করে আমাকে একটা কথাই বলেছিল ” কেন বাঁচালি আমাকে। জানিসনা মরতে কত কষ্ট হয় এখন আবারো সেই কষ্টটা করতে হবে।” আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন মরতে চায় ও।
কি বলেছিল?
বলল, বেঁচে থেকে কি করবে যেখানে ইমরান ওকে আর চায় না। ইমরান নাকি অন্য কাউকে পেয়ে গেছে। সেদিন ও কেন মরতে চেয়েছিল জান? ইমরানের বাসায় গিয়ে ও সেদিন অন্য একটি মেয়েকে ওর সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেছিল। কতটা কষ্ট নিয়ে ও কাজটা করেছিল এখন বুঝি। তোমার ভাইয়ের সাথে আমার দুই দিনের পরিচয় কিন্তু এখনই আমি তাকে অন্য কারো সাথে কল্পনাও করতে পারবোনা আর দিয়া তো চোখের সামনে ওর তিন বছরের ভালোবাসা শেষ হতে দেখেছে।
হিয়ার শেষ কথাটা রাজিবের বুকে গিয়ে লাগলো। দুশ্চিন্তায় মূহুর্তে ওর মুখ কালো হয়ে গেল। রিয়াদ আর হিয়া নিজেদের মতো কথা বলায় রাজিবের দিকে কেউই খেয়াল করল না। হিয়া বলে যাচ্ছে,
বোকাটা কি ভেবেছিল জানো? একটা বাচ্চা এলে ওদের সম্পর্ক নাকি ঠিক হয়ে যাবে। ইমরান অনেক আগে থেকেই ওর সাথে ইন্টিমেট হতো। ওর রুমে আমি কন্ট্রাসেপটিভ ও পেয়েছি। সম্পর্কের শেষে এসে ইমরান জাস্ট ওর ফায়দা নিচ্ছিল। আর ও যা নেই তা টিকিয়ে রাখতে এত চেষ্টা করছিল।
এবোরশন কখন হয়েছিল। সেদিনই ওর জ্ঞান ফেরার অনেক আগে। কিন্তু ও জানতো না। আমি ওকে বুঝিয়ে আমাকে ছুঁয়ে কথা আদায় করলাম যে ও এমন স্টেপ আর কখনোই নিবে না।
এবোরশনের ব‌্যাপারটা জানার পর ও কি করেছিল?
প্রথমে তো ও মানতেই চায়নি। সবসময় বলত ” দেখিস বড়াপু আমাদের বেবিকে দেখে ও ঠিক ফিরে আসবে।” ওর এসব কথায় অতিষ্ঠ হয়ে আমি জীবনে প্রথমবার ওকে একটা চড় মেরেছিলাম। তখনই ওকে জরিয়ে ধরে বলেছিলাম ওর বাচ্চাটা নেই আর ইমরান ও কোনোদিন ফিরবে না। সেদিনই ও কেঁদেছিলো। আর পরদিন থেকে ওর অবস্থা আগের থেকেও খারাপ হয়ে গেল। কিছুদিন পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে হোস্টেলে গিয়ে উঠলো। হক আংকেল বলেছিল দিয়ার মানসিক অবস্থা আগের থেকেও বেশি খারাপ হয়ে গেছে তাই ওকে কোনো কিছু তে বাঁধা দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই আমরাও কিছু বললাম না।
ইমরানের কি হলো?
প্রশ্নটা শুনে হিয়া করুন ভাবে হাসলো। তারপর বলল,
ও বেশ ভালোই আছে। থাকবেনা এত বড় অপরাধ করে কোনো শাস্তি না পেয়ে উল্টে সমস্ত ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্যে মোটা অংকের টাকা আর একটা আস্ত কোম্পানি পেলে তো ভালো থাকার ই কথা। জানো প্রথমে বাবার ওপর ভিষণ রাগ হয়েছিল। পরে ভেবে দেখলাম। এ বাড়ির সম্মানে আর বিশেষ করে দিয়ার সম্মান বাঁচাতে এটুকু দরকার ছিল।
চলবে…………

#আলো_আধাঁর
লিখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

৯.
আমি যেটা বুঝলাম ওকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।
আজকের সেমিনার শেষ হতে বেশ রাত হয়ে যায় আর অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকায় সেখান থেকে ফিরে সোজা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে ফাহিম। বেশ কিছুক্ষণ পরে ফোনের ভাইব্রেশনে একপ্রকার বাধ্য হয়ে আধো ঘুম আধো জাগরণে ফোনটা রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই উপরের কথাটা কানে এলো ওর। সাথে সাথে ওর ঘুম ছুটে গেল। তারপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে বসতে বসতে অনেকটা ধমকের সুরে ও রিয়াদকে বলল,
রাত আড়াইটার সময় তুই ফাজলামি করোস আমার লগে। এই নিয়া কয়বার ফোন দিয়ে এই কথা তুই বলসোস সারাদিন। সেমিনারে ও তোর ফোনের চক্করে আমার পকেট সবসময় কাপাকাপির উপ্রে ছিল।
দোস্ত রাগিস কেন? এই খানে দিন তো খেয়াল ছিল না তোর ঐ খানে রাত।
খেয়াল খাকবো কেমনে এখন তো শয়নে স্বপনে শুধু সেই। তো তারে ফোন দিয়া জ্বালাও আমারে কেন?
ঠিক বলছিস এইটা তো আমার মাথায় ই আসে নাই। এক্ষুনি ভাবীর কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে আসি।
বলেই ফোনটা রেখে দিল রিয়াদ। ফাহিম ভাবছে ভালোবাসার পাওয়ার কি এতোই যে পাগলের ডাক্তার নিজেই পাগল হয়ে যায়। এইতো কয়েক মাস আগের কথা এক ভালোবাসায় ব্যর্থ মানুষের কাউন্সিলিং করছিল রিয়াদ। লোকটা মেয়েটাকে পাগলের মত ভালোবাসাতো। রিয়াদ লোকটাকে স্বাভাবিক জীবনে তো ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল কিন্তু মেয়েটিকে তার মন থেকে সরাতে পারেনি। সেদিন রিয়াদ অবাক হয়ে বলেছিল, ” ভালোবাসা নামক সামান্য একটা অনুভুতির পাওয়ার এত বেশি বিশ্বাস করা যায় না। এর আগেও তো এধরনের কয়েকটা কেস এসেছে সেগুলোয় তো এত সময় লাগেনি। আর শেষে এসে কেউ বলেনি তাকে আজও ভালবাসি।” ফাহিমের ইচ্ছে করছে রিয়াদ কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে “তোরও কি ঐ লোকটার মতো কঠিন ভালোবাসা হয়েছে নাকি বাকিদের মতো সহজ ভালোবাসা।” কিন্তু তা না করে ফোনটাকে পুরোপুরি অফ করে আবারো ঘুমিয়ে পড়ল ও।

রাজিবের রুমে বাড়ির ছোটরা সবাই হিয়া আর ওর বিয়ের ভিডিও দেখার জন্য জড়ো হয়েছে। কাল হিয়ারা আসার সময় ও বাড়ির ভিডিওর এক কপি নিয়ে এসেছে। রাজিব ভিডিও চালু করবে এমন সময় রিয়াদ এসে ঢুকলো ওদের রুমে। সবাইকে ওদের রুমে দেখে যে উদ্দেশ্যে এসেছিল সেটা প্রকাশ করতে পারলোনা ও। তাই সবার সাথে ও ও বসে পড়ল ভিডিও দেখতে। রিয়াদ পুরো ভিডিও জুড়ে শুধু দিয়াকে খুঁজছে। হলুদের ভিডিওর প্রথমে একঝলক শুধু দেখা গেল ওকে। তাও সাধারণ পোশাকে। আর কোথাও দিয়ার দেখা মিলল না। একেবারে বিয়ের দিন মাঝের দিকে গিয়েই আবার দেখা পাওয়া গেল ওর। হিয়ার আঁচলের এক কোণ ধরে স্টেজে এসে কিছুক্ষণ হিয়ার সাথে বসে ছিল। তারপর আবারো গায়েব। আর হিয়ার বিদায়ের সময়ে ওকে ভিডিও তে শেষ বারের মত দেখা গেল। হঠাৎ রিয়াদের কিছু একটা মনে হলো কিন্তু ও পুরো ভিডিও শেষ হওয়ার এবং সবার চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। ভিডিও শেষ করে সবাই এটা ওটা নিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো। তারপর একে একে বেড়িয়ে গেল। সবাই বেড়িয়ে গেলে রিয়াদ হিয়াকে জিজ্ঞেস করল,
আচ্ছা ভাবী দিয়ার এই জামাকাপড়ের কোন ধরার ব্যাপারটা কি?
এটা ওর ছোট বেলার অভ্যাস। এটা দিয়ে ও কারো প্রতি নির্ভরতা বা ভালোবাসা প্রকাশ করে। খেয়াল করলে বুঝতে পারবে ও কিন্তু সবার বেলায় এটা করে না। আসলে ছোটবেলায় সবসময় সুযোগ পেলেই এভাবে মামনির আঁচল ধরত ও। মামনির পর পুরো বাড়িতে ওর নির্ভরতা বা ভরসার জায়গাটা ছিলাম আমি। তাই যতক্ষণ বাড়িতে থাকতাম আমার ওড়নার কোণ সবসময় ও ধরে রাখতো। আর একটা মানুষের ক্ষেত্রে ও এমনটা করে ছিল….
ইমরান। তাইতো?
হুম। কিন্তু ইমরান ওর নির্ভরতার যোগ্য ছিলনা।
চিন্তা করো না ভাবী। ওর জীবনে আর কোন অযোগ্য মানুষ যাতে না আসে আমি সেই চেষ্টাই করবো।
রিয়াদের কথায় হাসি ফুটে উঠল হিয়ার মুখে। ও বলল,
আমি এ ব্যাপারে তোমাকে সবধরনের সহযোগিতা করব।
আপাতত ওর কন্টাক্ট নাম্বার আর ওর হোস্টেলের ঠিকানা দাও। তোমার বোন আবারো হোস্টেলে ফিরে গেছে।
তোমাকে আমি এক্ষুনি টেক্সট করে দিচ্ছি। আর শোনো ওকে সবসময় ফোনে নাও পেতে পারো।। আর আননোন নাম্বার থেকে ফোন রিসিভ করবে কিনা সিওর না।
সমস্যা নেই। তুমি পাঠাও আমি দেখে নেবো।
বলেই হিয়াদের রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল রিয়াদ। এখনই একবার দিয়াকে দেখতে যাবে ও।

হোস্টেলে ফিরে চুপচাপ বসে ইমরান আর ওর কিছু ছবি দেখছিল দিয়া। পুরোনো স্মৃতি মনে আসায় চোখ দিয়ে সমানে পানি গড়িয়ে পড়ছিল ওর। ও প্রতিদিন নিয়ম করে ইমরানের নাম্বারে ফোন করে। কিন্তু ফোনের অপরপাশ থেকে ইমরানের বদলে একটি নারী কন্ঠ সবসময় ইংরেজি এবং বাংলায় দুটো বাক্যই বলে যায়, এই নাম্বারে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দয়া করে আবারো চেষ্টা করুন।” ইমরানের সাথে ওর শেষ দেখার দৃশ্যটা ও মনে করতে চায় না। কিন্তু বারবার কেন জানি সেটাই মনে পড়ে যায় ওর। নতুন অফিসে বসার পর থেকেই ইমরান কেমন যেন চেঞ্জ হয়ে যায়। ওর প্রতি ইমরানের ভালোবাসা টা ছিল কিনা দিয়া সেটা বলতে পারবে না। তবে ইমরানেকে যেকোনো মূল্যে দিয়া চাইতো। তাই এক শুক্রবার ইমরানের সাথে দেখা করতে গিয়ে হোটেল রুমে ভালোবাসার পরিক্ষা দিতে একটুও পিছপা হয় নি ও। তারপর তো প্রায় প্রতি রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে পিছনের গেট দিয়ে বারান্দার রেলিং টপকে আসতো ইমরান। আবার সকালের আলো ফোটার আগেই বেরিয়ে যেত। ভেবেছিল এভাবেই হয়তো ধরে রাখা যাবে ওকে। কিন্তু শেষ দিকে ইমরানের সেই আসাটাও কমে গেল। একদিন কলেজ থেকে ফেরার গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে বাসে উঠে ছিল দিয়া। সামনের সিটে দুই মহিলা বসে ছিল। মহিলাদের কথপোকথন থেকে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো দিয়া। সেখানে এক মহিলা অন্যজনকে বলেছিল,” বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে নে, বাচ্চার মায়াতে ও তোরে ছাড়তে পারবে না।” ইমরানের সাথে সম্পর্কের শুরু থেকেই ওকে ম্যাচিউরড বানানোর যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল ইমরান। প্রথম থেকেই বেশ খোলামেলা ভাবেই সবকিছু বোঝাতো ইমরান ওকে। আর ওর ও কিছু জানার হলে ইমরানের থেকেই জানতো। ইমরানের সমস্ত কথা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস তো করতই সাথে মেনেও চলতো। ইমরান ওকে শিখিয়ে ছিল ভালোবাসা থাকলেই শারীরিক সম্পর্ক করা যায় বিয়ে এখানে মেন্ডোটারি না। আর সে সময় থেকেই ইমরান ওকে কি একটা ঔষধ ও এনে দিয়েছিল। ও জানতে চাইলে বলেছিল, “এটা খেলে বাচ্চা হয় না।” ও আবারও প্রশ্ন করেছিল,
এটা খাওয়া বাদ দিলে বাচ্চা হয়ে যায়?
হুম। তাই আমি যেদিন আসবো এটা খাওয়া বাদ দিবে না।
ও ভেবে পায়নি ইমরান ওকে এই ঔষধ টা কেন খেতে বলল। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ ও করেনি। চুপচাপ ইমরান যেভাবে বলেছিল সেভাবেই ঔষধ গুলো খাচ্ছিল ও। কিন্তু ঐ দিন বাসের ঘটনার পর থেকে ও আর ওটা খায়নি। কিছুদিন পর ও নিজে হসপিটালে গিয়ে পরীক্ষা করে বাচ্চার ব্যাপারে সিওর হয়ে গিয়েছিল ইমরানের বাসায়। কিন্তু গিয়ে যে দৃশ্য ও দেখেছিলো আর ইমরানের মুখে যে কথা ও শুনে ছিল তাতে আর নিজেকে সামলাতে পারেনি। তখনই এসে আত্মহত্যার মতো ঐ কঠিন কাজটা করে ফেলেছিল। বসে বসে এসব কথাই ভাবছিল ও। ঠিক এমন সময় ওর ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রীনে একটা আননোন নাম্বার। প্রথমে ভাবলো ধরবে না। কিন্তু পরক্ষনেই ইমরান হতে পারে ভেবে ফোনটা রিসিভ করে বেশ উৎসাহ নিয়ে বলল,
হ্যালো।
হ্যালো সিগারেট সুন্দরী। আমার কলের অপেক্ষায় ছিলে নাকি?
কন্ঠটা ইমরানের না হলেও “সিগারেট সুন্দরী” ডাকটা পরিচিত লাগলো দিয়ার। পরক্ষনেই ডাকটাকে পরিচিত লাগার কারণ আবিষ্কার করে সাথে সাথে ফোন কেটে দিল দিয়া। আবারও একই নাম্বার থেকে ফোন আসায় হুট করেই হার্টবিট বেড়ে গেল ওর। কিন্তু ফোন টা আর রিসিভ করল না ও। দুই তিন বার কল দেওয়ার পর একই নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এল। ” একটু বারান্দায় আসোতো সিগারেট সুন্দরী তোমাকে দেখি।” ম্যাসেজ পড়ে চোখ কপালে উঠে গেল দিয়ার। এক দুই মিনিটের পরিচয়ে লোকটা ওকে দেখতে চাইবে কেন? কি ভয়ংকর কথা।।
চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here