আসক্তি ২ পর্ব ৩০+৩১+৩২

#আসক্তি২
পর্বঃ৩০(বোনাস)
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

আমন্ত্রিত মেহমানরা চলে গেছে ঘন্টাখানিক হবে।শাড়িটা চেঞ্জ করে নেয় পাখি।এখন যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেলো। রাখি সহ আরো কয়েকজন মেয়ে পাখিকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখেছে।আর ওরা শানের ঘর সাজাতে ব্যস্ত।পাখি এসবে ভীষণ বিরক্ত। কারণ এগুলো অতিরিক্ত আদিখ্যেতা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না তার।একবার তো রাখিকে বলেও ফেলল,”এতসবের কি খু্ব দরকার আছে?”
রাখি তো ঠোঁট কাটা স্বভাবের। গায়ে ধাক্কা মেরে বললো,”কেন খুব অসুবিধা করবে বুঝি?”
এরপর লজ্জায় পাখি আর ও কথার পথ মারায় নি।অগত্যা ইনায়াহ্’র সাথে বসে গোপাল ভাঁড় দেখতে হচ্ছে।

সারাদিনের সাজসজ্জায় ভীষণ ক্লান্ত পাখি।ঘুমে চোখদুটো ঢুলু ঢুলু।মনে মনে পার্লারের মেয়েদের গুষ্টি উদ্ধার করছে ।পই পই করে বলেছিলো “এতো ভারি মেকআপ করাবেন না ”
তবুও তারা পাখির কথা শোনে নি।সে মেকআপ তুলতে আবার কত্তো কাহিনী।ঠোঁটের ডগায় বিড়বিড় রাখিসহ সব মেয়েদের গালাগাল করে সোফায় ইনায়াহ্’র কোলে মাথাটা আলগোছে রেখে চোখ বুঁজে ফেলে পাখি।খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ইনায়াহ্।তখনি হাসিটা ম্লান হয়ে যায় ঠোঁটের কোণে।পাখি ক্লান্ত পাপড়ি দুটো টেনে খুলে ভ্রু নাচায়। মানে হাসি থামানোর কারণ কী?
ইনায়াহ্ খুব করূনস্বরে বলে,”তুমি নাকি এখন থেকে সান সাইনের ঘরে থাকবা,আমার ঘরে থাকবা না?”
চট করে উঠে বসে পাখি।চিন্তায় পরে যায় এসব ইনায়াহ্’কে কেন বলা হয়েছে? আর কে বলছে?
ঘুমকে দূরে ঠেলে ইনায়াহ্’কে বুকে জড়িয়ে বলে,”এসব কে বলেছে মা?”
“সান সাইন যখন তোমায় ঘরে নিয়ে গেলো হাত টেনে, তখন দিদা আর রাখি ম্যাম বলেছে।বলেছে আমি যেন…..”,বলতেই দুফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে ইনায়াহ্’র।বাকিটা আর বলা হয় না।পাখির বুকে ইনায়াহ্’র চোখের পানিটা তীরের মতো বিঁধছে।
পাখির কোমড় জড়িয়ে কেঁদে ওঠে ইনায়াহ্।কান্নাজড়িত দরদমাখা কন্ঠে বলে,”আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না মুন সাইন।ওরা জানে না?”

পাখি ইনায়াহ্’র মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,”এমন কেন ভাবছ বেবি?আমি তো তোমার পাশেই থাকব। বিশ্বাস করো?”
ইনায়াহ্’র কান্নার গতি থেমে আসে।

চাবিটা আঙ্গুলের ডগায় ঘুরাতে ঘুরাতে ড্রয়িংরুমে পা রাখে শান।ঢুকেই ইনায়াহ্’কে কাঁদতে দেখে।দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,”মাম্মাম,কি হয়েছে তোমার?”
উৎসুক চোখ দুটো পাখির দিকে উত্তরের আশায় থাকে।
“ওকে নাকি রাহেলা চাচি আর রাখি বলেছে আমায় ছেড়ে থাকতে হবে সেটা ভেবে কাঁদছে”
শান ভাবনায় পরে যায়। কৌতূহল দমাতে না পেরে বলে,”কেন তুমি কোথায় যাবা?তোমায় ছাড়া থাকতে হবে কেন?”
পাখি হতাশ চোখে তাকিয়ে শানকে বোঝার চেষ্টা করে। মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়,”কেন জানেন না?আমি বাড়ি চলে যাব”
এতোক্ষনে খেয়াল হয় শানের। নিজের করা ভুলে নিজেই লজ্জিত হয়।অসহায় মুখ করে পাখির দিকে তাকায়। ইনায়াহ্’কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমিও যে তোমার মুন সাইন ছাড়া থাকতে পারব না মা”
শানের কথায় পাখি হেসে ফেলে মুখে হাত দিয়ে ইনায়াহ্ চট করে বলে,”আইডিয়া”
“কি?”,শান পাখি দুজনেই একসাথে প্রশ্ন করে।শানের চোখে সোজা চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয় পাখি।
ইনায়াহ্ বিজ্ঞের মতো ভেবে বলে,”আমরা তিনজনে একঘরে ঘুমাব।ইয়েএএ”
“মজা হবে না বলো সান সাইন?”,স্বগতোক্তি করে জানতে চায় ইনায়াহ্।
শান মুখটা ফ্যাকাসে করে অনর্থক হাসি টেনে বলে,”হ্যাএএ,খুউউব মজা হবে”
শানের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না।বহু কষ্টে পাখি হাসিটা চেপে রাখে।কিন্তু বেশিক্ষন রাখতে পারলো না।বোম ফাটানো হাসিতে পুরো বাড়ি কাপিয়ে হাসতে হাসতে সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলো।

পাখির হাসিতে শানের শরীর জ্বলে পুড়ে একাকার।অবশ্য ভালো যে লাগছে না তা কিন্তু নয়। এই প্রথম পাখিকে এভাবে প্রাণ খুলে হাসতে দেখলো শান।সরু চোখে তাকিয়ে বলে,”হেসে নাও।যা আমার তা আমি উসুল করতে জানি পাখি রানী। ”
পাখি হাসিটা জোড় করে কয়েক সেকেন্ড থামিয়ে রেখে আবার শানের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে শব্দ করে।

ওর হাসিতে উপর থেকে দপদপ করে নেমে আসে সবাই।হৈহৈ করে বলে,”কি হইছে, কি হইছে। পাখি?এমনে হাসছো ক্যা?”
পাখি কি বলবে সবার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার শানের দিকে তাকায়।ফের হেসে দেয়।তবে শান এবার রাগি চোখে তাকাতেই হাসিটা উবে যায়।শান সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতেই আটকে দেয় মেয়েরা।অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,”কী?”
“এখন যাওয়া যাবে না”
“আজব তো,আমার ঘরে আমি যাবো না মানে!”
“যাবেন না বলি নি।বলেছি আরো ঘন্টা খানিক পরে”
“পাখি তোমার বন্ধুরা এবার বেশি করছে।সরতে বলো ওদের”
পাখি একটু গলা উচিয়ে বলে,” আমাকেই উপরে উঠতে দিচ্ছে না আবার আমি যাবো উকিল হতে!”

মুখে একরাশ বিরক্তির ছাপ নিয়ে ফিরে এসে বসে পরে সোফায়।পাখির দিকে আড়চোখে তাকাতেই পাখি হাসিটা মিলিয়ে নেয়।শান রাগিচোখে চেয়ে আনমনে বলে,”হেসে নাও।আমিও বোঝাব। দেখিও”

🌸🌸

ঘন্টাখানিক যেতে না যেতেই মেয়েগুলো নেমে আসে।রাখি ওদের লিডার।এসেই পাখিকে তাড়া দেয়।
“হুহ হুহ নে, উঠ”
“কোথায় যাব?”,কন্ঠের স্বর খাঁদে নামিয়ে বলে পাখি
“বাসর ঘরে”
চমকে যায় পাখি।জীবনে যেন প্রথম শুনলো এই কথাটা।
“আসবি নাকি সবাই মিলে কোলে তুলে নেবো?”,একরোখা প্রশ্ন করে রাখি।
পাখি ঘুম জড়ানো মাথাটা ইনায়াহ্’র কাঁধে দিচ্ছে। আর ইনায়াহ্ বিরক্তি নিয়ে বার বার সরিয়ে দিচ্ছে।কারণ তার টিভি দেখতে মনঃক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
জড়িয়ে আসা কন্ঠে বলে,”কিসের বাসর,কার বাসর,কবে?আমি জানি না কিছু।আমি ইনায়াহ্’র কাছে ঘুমাব”
বলেই শানের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে পাখি।শান রাগিচোখে চেয়ে আছে ওর দিকে।

মেয়েরা আর কোন কথা না বলে পাখিকে ধরে মিলে নিয়ে যায়।
“আরে করছিস কি?ইনায়াহ্…. কাঁদবে আমিও থাকতে পারব না ওকে ছাড়া”,হাত পা ছুড়ে বলে পাখি।মূলত সে চাইছে শানকে খেপাতে।

পাখিকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে জোড় করে নতুন আরেকটা ব্যাকলেস লেহেঙ্গা পরিয়ে দেয়।বেশ গর্জিয়াস করে সাজিয়ে দেয় রাখি।একপ্রকার ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায় শানের ঘরে।পাখির ভিতর ভিতর কিরকম অনুভূতি হচ্ছে তা সে কাউকেই বোঝাতে পারছে না।দরদর করে ঘাম ঝড়ছে শরীর বেয়ে।রাখির দিকে করূন দৃষ্টিতে তাকাতেই রাখি কানে কানে বলে,”ইনজয় বেইব”
পাখির কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হয় যেন।
ঠেলে ঠুলে খাটের মাঝে নিয়ে বসিয়ে দেয় পাখিকে।

পাখিকে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই ইনায়াহ্ টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেছে শানের কোলে।শান ওকে বুকে জড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় ঘরে যাবে বলে।রাখি দ্রুত নেমে বলে,”আমায় দিন আমি শোয়াই দিই”
শান কিছু না বলে রাখিকে দিয়ে উপরে উঠে যায়।রাখি রাহেলাকে ডেকে ইনায়াহ্’র শোয়ানোর কথা বলে।তখন রাহেলা বলে, “আমার ঘরে দিয়া আসো মা।আমার কাছে থাকলে কাঁদবে না ”

শান ভিড়ানো দরজাটা ঠেলে ভিতরে পা রাখে।তাজা ফুলের তাজা ঘ্রান নাকের কাছ আসতেই প্রান ভরে যায়।চারিদিকে সুবাসিত। চোখ পড়ে বেশ বড়সড় ঘোমটা টেনে খাটের মাঝখানে বসে থাকা পাখির উপর।দরজাটা খোলা রেখেই ভিতরে ঢোকে।পাখির বুক ধুকপুক করে চলেছে ইতোমধ্যে। অজানা অনুভূতিতে সারা শরীর কাপঁছে ঠকঠক করে।শান ওর দিকে একবার চেয়ে কাবার্ড থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।এরপর একপ্রকার শব্দ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে পাখির।লেহেঙ্গা সমেত বিছানার চাদরটা খামছে ধরে। শ্বাস নেয়াই যেন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাত হয়ে গেছে অনেকটাই।সবাই নিজ নিজ বাড়ি চলে যায়।রাখিও আর দেরি করে না।চলে যায় বাড়িতে।

শান সোজা দ্রুত পায়ে পাখির দিকে এগিয়ে যেতেই দড়বড় করে বিছানা ছাড়ে পাখি।ঘোমটার আড়ালে বলে,”এসব কি ধরনের অসভ্যতা?এভাবে এগিয়ে আসার মানে কি?”
শান কন্ঠে অধিক মাধুরতা মিশিয়ে বলে,”কি করলাম আমি?তুমি ভয়ে নামছো কেন?অপরাধীর মতো পালাচ্ছো কেন?
পাখি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,”দেখুন যতোই আজ ফুলশয্যা টয্যা হোক না কেন আআমি মমোটইেই এসবে মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই”
“আমি প্রস্তুত করে নিবো”,একরোখা জবাব শানের।
পাখি জিহ্ব কেটে বলে,”ছিঃ”
“ও ছি ছিৎকারে কিচ্ছু হবে না ”
পাখি বুঝতে পারে শানকে তখন খেপানো উচিত হয় নি, উহু একদমই উচিত হয় নি।সুযোগ বুঝে পা টিপে টিপে দরজার কাছে এসে দরজা খুলতেই শান দ্রুত এসে দরজায় নিজের বলিষ্ঠ হাত রাখে। বন্ধ হয় দরজা।নিজের পিছনে এতোটাই কাছে শান ঘুরতে গেলেই বুকের উপর মুখ থুবড়ে পরে যাবে সে। ভেবেই বুক যেন হাঁফরের মতো ওঠানামা করছে।কেউ কোন কথা না বলে ওভাবেই চুপচাপ থাকে।

পাখি আমতাআমতা করে বলে,”ইইনায়াহ্,ইনায়াহ্ তো আমায় ছাড়া ঘুমাতে পারে না, না?আজ যাই। ”
শান্তস্বরে শান জবাব দেয়ে,”ইনায়াহ্ ঘুমিয়েছে আরও ঘন্টা খানিক আগে”
“ওহহহ ঘুমিয়ে গেছে?”
“পিছনে ঘুরো”,পাখির কথাকে উপেক্ষা করে বলে শান।কিন্তু পাখি ঘোরে না।অগত্যা শান মাথার উপর থেকে ওড়না টা সরিয়ে দেয়।ব্যাকলেস লেহেঙ্গার কারনে পিঠটা পুরোটাই উন্মুক্ত হয়ে যায়।পাখি স্তম্ভিত হয়ে খামচে ধরে লেহেঙ্গার কুচি।এরপর ওকে আকষ্মাত কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসায়। দুহাত কচলাচ্ছে পাখি মাথা নিচু করে।এটাই বোধহয় পৃথিবীর সবথেকে লজ্জাজনক পরিস্থিতি।
শান সন্দিহান চোখে চেয়ে বলে,”আমায় খেপাতে ভালো লাগে, না?খুব হাসছিলে তখন দেখলাম।এবার হাসি কোথায় গেলো?আজ পুরো ডানা দুটোই কেটে দিবো যে…..”
বেশ মাধুর্য নিয়ে হাসে শান।

পাখি মাথাটা কিঞ্চিত উঠিয়ে বলে,”আপনি ভারি নির্লজ্জ”
“লজ্জা নারীর ভূষণ”
“বেহায়া লোক”
শব্দ করে হেসে ওঠে শান।উঠে পাখির পিছনে গিয়ে বসে।একে একে প্রত্যেকটা অলঙ্কার খুলে ফেলে আলতো হাতে।প্রতিটা স্পর্শ যেন পাখিকে নতুন এক পাখির সাথে পরিচয় করাচ্ছে।চোখ মুখ খিচে রেখেছে করূনভাবে।সেদিকে একবার চেয়ে শান হেসে ফেলে।এরপর পিছন থেকে জড়িয়ে নেয়।কাঁধে মুখ গুঁজে খুব মিষ্টি করে বলে,”তুমি কি সত্যিই মানসিকভাবে অপ্রস্তুত? ”
পাখি কিছু বলতে পারে না।চোখ বন্ধ করে রাখে লজ্জায়।লজ্জা, ভালোলাগা,আংশিক ভয়, নতুন কিছুর অনুসন্ধান সব মিলিয়ে যেন এক মিশ্র অনুভূতি।

কাঁধে ঠোঁট ছুঁইতেই কেপে ওঠে পাখি।শান নিঃশব্দ হেসে কানে কানে বলে,”যা আমার তা আমি নিতে জানি।তবে তুমি না চাইলে না।”
এবার চোখ তুলে তাকায় পাখি।শান ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,”ইচ্ছের বাহিরে কিচ্ছু করতে হবে না।তুমি যা চাইবে তাই হবে।শুধু আমায় ছেড়ে যেও না।আমি এবার ধোকা পেলে সত্যিই মরে যাবো পাখি।”
‘যাও ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে এসো।”,স্বাভাবিক স্বরে বলে শান।
শানের চোখের দিকে একরাশ ভালোবাসা দেখে থমকে যায় পাখি।মনে পড়ে শানের তিক্ততায় ভরা অতীতের কথা।মূহূর্তেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে পাখির।সকল জড়তা ভুলে শানের গলা জড়িয়ে ধরে। নিজেকে ভাসিয়ে দেয় অজানা গন্তব্যের ভেলায়।গলায় মুখ গুঁজে বলে,”আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।জীবন চলে যাবে তবু আপনাকে ছাড়ব না”

শান আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।সে ভাবতেও পারে না ভালোবাসা নামোক জিনিস টা এভাবে তার জীবনে ধরা দেবে।নিজেকে এই মূহূর্তে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে শানের।নিজের সাথে পাখিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
“আলু ভর্তা বানানোর প্লান আছে?”,খড়খড়ে কন্ঠে বলে ওঠে পাখি।
মুচকি হেসে হাতের বাঁধন আলগা করে দেয় শান।দুগালে দুইহাত রেখে এগিয়ে যায় পাখির দিকে।গন্তব্য তিড়তিড় করে কাপঁতে থাকা ঐ অধরযুগল।মূহূর্তেই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় দুজনের খাড়া নাক দুটো।দুজনেই হেসে ফেলে শব্দ করে। পাখির হাসতে থাকা মুখটা হঠাৎই নিজের কাছে নিয়ে আসে শান।হাসিটা মিলিয়ে যায় অন্য একজোড়া ঠোঁটের অন্তরালে।

🌸🌸

সকালের মিষ্টি রোদ মুখে পরতেই চোখের পাতা পিটপিট করে পাখির।নিজেকে আবিষ্কার করে শানের উন্মুক্ত বুকের উপর।শান তখনো জাগে নি।মাথা তুলে শানের দিকে তাকায় পাখি।আজ থেকে এই মানুষটাকে ছুঁয়ে দেখার অধিকার তার,আগলে রাখার দায়িত্ব তার।কি থেকে, কি হলো সবটা ভাবতেই যেন পাখি হেসে ওঠে।একটু পর উঠে শানের কপালে চুমু দেয় পাখি।ঘুম ভেঙ্গে যায় শানের।ঘুম জড়ানো চোখে চেয়ে মুচকি হেসে পাখির দিকে তাকায়।শানের চোখের ভাষা ভীষণ লজ্জায় ফেলল পাখিকে।মাথা নুয়ে বুকের উপর রাখলো।
#আসক্তি২
পর্বঃ৩১
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সকাল থেকে মুখ গোমড়া করে সোফায় বসে আছে ইনায়াহ্।কারোর সাথে কোন কথা বলে নি।তার অভিযোগ কাল কেন মুন সাইন তার পাশে ঘুমায় নি?কেন তাকে মিথ্যে বলা হলো?
ইনায়াহ্’কে ঘিরে রাখে পাখি,রাহেলা আর শান।সবাই এটা সেটা দিয়ে বুঝাচ্ছে কিন্তু কোন কাজই হচ্ছে না।
“সরি বেবি,আর কখনো হবে না এমন। প্লিজ রাগ করো না”,কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে কথাটা বলে পাখি।শান শান্ত চাহনীতে একবার পাখির দিকে তাকায়।কটমটে ও চোখের অভিযোগে চোখ নামিয়ে নিতে বাধ্য হয় শান।
“আজ আমরা ঘুরতে যাবো মাম।তোমার ফেভারিট জায়গায়।যাবে আমার সাথে?”,চোখে মুখে একরাশ ইতিবাচক উত্তরের অপেক্ষায় প্রস্তাব রাখে শান।তবুও ইনায়াহ্ কথা বলে না।চোখের কোণে জল থৈথৈ। যেন পলক পড়লেই টুপ করে গন্ড ভেজাবে।পাখি বেশ বুঝতে পেরেছে ইনায়াহ্ ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে ভিতর ভিতর।রাগ দেখিয়ে শানকে সামন থেকে সরিয়ে দেয়।ইনায়াহ্’র পায়ের কাছে বসে মাথাটা কোলে এলিয়ে দেয়।
কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,”তুমি যদি কথা না বলো আমি কেঁদে দেবো।বাড়ি চলে যাবো”
ইনায়াহ্ আর রাগকে সচল রাখতে পারে না।পাখির মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলে,”কথা দাও আর কখনো আমায় ছাড়া থাকবে না?”
পাখি শানের দিকে একবার তাকিয়ে ইনায়াহ্’কে আশ্বস্ত করে, “আর কখনো তোমায় ছেড়ে থাকব না।প্রমিজ ”
ইনায়াহ্ খুশিতে গলা জড়িয়ে ধরে।

এতোক্ষন পুরো ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেন রাহেলা।ব্যপার টা মোটেও তার কাছে সুবিধের মনে হচ্ছে না।এমন চললে তো শান পাখির মাঝে দূরত্বের তৈরী হবে আর যেটা তাদের অাগত ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলবে।তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যেভাবেই হোক ইনায়াহ্’কে তিনি বোঝাবেন।

পাখি রাহেলা মিলে সকলের জন্যে সকালের খাবারের ব্যবস্থা করে।সকালের ঐ ঘটনার পর থেকে আর চোখে পড়েনি শান।বাকি টুকটাক কাজ রাহেলাকে বুঝিয়ে ঘরে এসে শানকে খোঁজে পাখি;কোথাও নেই।হঠাৎই দরজা লাগানোর শব্দে চমকে পিছনে ফেরে পাখি।
“কি হলো দরজা কেন লাগালেন?”,অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
শান্ত ভঙ্গিতে পাখির দিকে চেয়ে শান জবাব দেয়,”সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি?”
“বলেছি?”
“তবুও ”
“পথ ছাড়ুন, নিচে চলুন। খাবেন।”
“খাবো তো”
শানের কথার মাঝে দুষ্টুমির রেশ।মাথা তুলে তাকিয়ে পাখি লাজুক স্বরে বলে,”আপনি খুব দুষ্টু। সরুন”
পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই ডান হাতটা টেনে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে শান।পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।ঘর্মাক্ত ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয় গভীরভাবে।প্রতিটা স্পর্শই অন্য অনুভূতির জানান দিচ্ছে।শানকে সরিয়ে দিতেই স্পর্শের গভীরত্ব আরো বেড়ে যায়।কাঁধের উপর লম্বা চুলের ঢিলে খোপাটা খুলে দেয় শান।ঘনঘন শ্বাসে ঘ্রান নেয় সে চুলের।অন্যরকম মাদকতার ছোঁয়ায় পাগল প্রায় শানের তনু মন।

হাতের বাঁধন হালকা হতেই পাখি সরে আসে।
“কি পাগল রে বাবা!”,অবাক হয়ে বলে পাখি।শান আবার হাতটা টেনে আনে নিজের কাছে।ঘোরলাগা সে দৃষ্টি উপেক্ষা করতে পারে না পাখি।গালের কাছে হাতের আলতো স্পর্শ দিয়ে শান বলে,”সত্যি কি মাম্মামের সাথে থাকবা?”
চকিতে মাথা তুলে পাখি শানের চোখের দিকে তাকায়। কেমন যেন অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে ও চোখ মুখে।
“কি করব?ও তো মানবে না!”,জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে পাখি।
“জানি না।”
গম্ভীরভাবে পাখি অস্ফুট স্বরে বলে,”রাত হোক, দেখা যাবে। এখন ছাড়ুন। অনেক কাজ পরে আছে আমার”
“খুব পালাই পালাই করছো না?”,অভিমানের সুর শানের কন্ঠে।
একগাল হেসে পাখি জবাব দেয়,”কাজ আছে বললাম না”
“ওকে”,বলেই পাখিকে ছেড়ে দেয় শান।

🌸🌸

সেই সকাল বেলা শান বেরিয়ে গেছে। আর ফেরে নি।দুপুরে খেতেও আসে নি।ফোনও ধরছে না।ভীষণ দূঃচিন্তা হচ্ছে পাখির।নিজে থেকেই ফোন দেয়।রিং হচ্ছে অথচ ধরছে না।এভাবে কয়েকবার চলার পর ব্যর্থ হয়ে পাখি থম মেরে বসে থাকে।এদিকে ইনায়াহ্ও সকাল থেকে আর কাছ ছাড়া করছে না পাখিকে।পাখি যেখানে যেখানে যাচ্ছে সেও পিছু পিছু যাচ্ছে। যেটা দেখে বেশ হাসি পায় পাখির।
ইনায়াহ্’কে সোফায় বসিয়ে বলে,”বিকেল তো হয়ে এলো, নাস্তা করতে হবে না?”
“হুমমম।ক্ষিদে লেগেছে মুন সাইন”
“তাহলে এখানে বসো আমি কিছু করে নিয়ে আসি।”,বলেই দরজার দিকে একবার তাকায় পাখি।এই বুঝি শান চলে এলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয় তবু শানের দেখা মেলে না।আনমনে ভাবতে থাকে,”এতো সামান্য ব্যপার নিয়ে এতো রাগ কে করে রে ভাই!তখন কাজ ছিলো বলেই তো…..”
পাখির ভাবনার মাঝেই শান চলে আসে। ইনায়াহ্’র ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত ইনায়াহ্’কে একবার ভালো করে দেখে কপালে চুমু এঁকে চলে যায়।পাখি হা করে শুধু চেয়ে থাকে।এমন একটা ভাব করে যেন পাশে আর কেউই ছিলো না।পাখি গজ গজ করে শানের পিছু পিছু ওর ঘরে চলে যায়।
“সারাদিন কোথায় ছিলেন?”,রাগি কন্ঠে প্রশ্ন করে পাখি।
শান কোন জবাব না দিয়ে শার্টের বোতাম খোলা শুরু করে।পাখি বুঝতে পারে রেগে বোম হয়ে আছে শান।দ্রুত এগিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।হাত সরিয়ে বোতাম খুলতে খুলতে বলে,”এতো রাগ কিসের, শুনি তো?”
শান অপলক চোখে পাখির দিকে চেয়ে ভাবে,”তোমার উপর কেন রাগ করে থাকা যায় না বলোতো!”
“কি হলো কিছু বলছেন না যে”
একহাতে পাখির কোমড় জড়িয়ে ধরে শান।গম্ভীর গলায় জবাব দেয়,”রাগ করলেই বা কি”
“বাব্বাহ,এতো অভিমান!তখন তো ব্যস্তই ছিলাম”
“আর এখন! “,বলতে বলতেই মুখটা এগিয়ে আনে পাখির কাছে।
“ইনায়াহ্”,বলতেই শান চট করে ছেড়ে দেয় পাখিকে।দরজার দিকে নজর ফেলে বুঝতে পারে কেউ নেই সেখানে।আর সেই সুযোগে পাখি হাসতে হাসতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

শান সেদিকে চেয়ে মুচকি হেসে ভাবে,”জীবনে অনেকটা পথ একসাথে হাঁটা বাকি।তাই কি বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি?তোমায় আমি অনেক ভালো রাখবো পাখি”

🌸🌸

গভীর রাত। চারদিক শুনশান। রাস্তার ধারের দুএকটা দোকান খোলা থাকলেও তাতে তেমন জাঁকজমকতা নেই।ঘুমন্ত শানের শরীর ঘামে ভিজে একাকার।মুখে শুধু অস্পষ্ট গোঙ্গানির শব্দ।ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে হফাতে থাকে।সাইডে রাখা পট খুলে পানি খেয়ে নেয়। যেন কতোকালের তৃষ্ণার্ত সে।বুকে হাত চেপে খানিক পূর্বে দেখা দূঃস্বপ্নের কথা ভাবতে থাকে।
“এটা কী করে সম্ভব?এরকম কিছু……”

ভাবতেই কেমন যেন ছটফট করে বুকের ভেতর।দরজা খুলে বাহিরে আসে শান।পাখিদের ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে।কেমন নিষ্পাপ লাগছে পাখির মুখটা।ধীর পায়ে এগিয়ে যায় পাখির দিকে।সন্তর্পনে শুয়ে পরে পাশের ফাঁকা ছোট্ট জায়গায়।
দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাখিকে।কাঁধে মুখ গুঁজে জড়িয়ে আসা কন্ঠে বলে,”আমি তোমায় ছেড়ে থাকতে পারব না।দেখা স্বপ্নটা যেন স্বপ্নই হয় পাখি”

ঘুম ভেঙ্গে যায় পাখির।পেটের দিকে তাকিয়ে দেখে দুটো হাত বেঁধে রেখেছে তাকে।কাঁধের উপর কারো অস্পষ্ট আকুতি।সাথে গরম নিঃশ্বাস।পাখির বুঝতে অসুবিধা হয় না মানুষটা কে হতে পারে!শানের হাতের উপর দুহাত চেপে চাপাস্বরে ভয়ার্ত গলায় বলে,”কি হয়েছে আপনার? ”
পাখির ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় উঠে বসে শান।পাখিও বসে সাথে সাথে।মুখোমুখি বসে শানের গালে হাত রেখে বলে,”কি হয়েছে?এতো ঘেমেছেন কেন? বলুন না প্লিজ”
শান স্থীর দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।
হুট করে পাখিকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার কেন যেন মনে হয় আমি কোন ভুলে ডুবে আছি।এই স্বপ্নটা ইতোপূর্বে বহুবার দেখেছি। আজকের মতো ভয়ানক ছিলো না পাখি। আমায় একা করে যেও না।আমি আর ……. ”
বলতে বলতে কেঁপে ওঠে শানের গলা।পাখি বেশ বুঝতে পেরেছে শান কোন দূঃস্বপ্ন দেখেছে।মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলে,”এরকম কখনো মনে করবেন না।আমি কখনোই আপনাকে ছেড়ে যাবো না”

শানের কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে বলে,”আমার কিছু বলার ছিলো ডাক্তার সাহেব”
শান নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,”কি ?”
“আমার কেন যেন মনে হয় আপনার জানার মাঝে কিছু ভুল আছে।আপনার মা কে আমার কখনোই খারাপ মানুষ বলে মনে হয় না”
চট করে পাখিকে ছেড়ে দেয় শান।বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।ট্রাউজারের পকেটে হাত রেখে বিপরীত মুখী হয়ে জবাব দেয়,”উনি কখনোই ভালো মানুষ ছিলেন না আর না এখন আছেন।উনি মুখোশ পরিহীতা ভদ্র রমনী”

পাখি আর কিছু না বলে শানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।পিঠে মুখ গুঁজে বলে, “আচ্ছা ঠিকাছে বাদ দিন এসব।এবার কি এখানে ঘুমাবেন নাকি ঘরে যাবেন?”
শান বুকে রাখা পাখির হাত দুটো টেনে হাতের পিঠে চুমু দিয়ে বলে,”নিজের ভালো থাকার পূর্বে ইনায়াহ্’র ভালো থাকাটা আমার কাছে বেশি ইম্পোর্ট্যান্ট পাখি।ও আমার পৃথিবী।”

🌸🌸

শানের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে রাফি।গত কতোগুলো দিন সে গ্রামে কাটিয়েছে।ছুটি নিয়েছে মাত্র তিন দিনের। অথচ তিনদিন কবেই পেরিয়ে গেছে।শান আগা-গোড়া ভালো করে পরোখ করে বলে,”তা এতোদিন কি করলি গ্রামে?”
“ভাইয়া, মা অসুস্থ্য হয়ে গেছিলো।”,রিনরিনে কন্ঠে জবাব দেয় রাফি।
মায়ের কথা শুনতেই শানের চোখমুখে থমথমে ভাব চলে আসে। অন্যমনস্ক হয়ে প্রশ্ন করে, “মা কে খুব ভালোবাসিস?”
“হ্যা ভাইয়া।খুব ভালোবাসি।মায়েরা খুব ভালো হয় বলেই তো ভালো না বেসে থাকা যায় না “,বলেই শানের মুখের দিকে তাকায় রাফি।
পাখি রান্না ঘরে কাজ করছে তবুও কোথাও যেন মনোযোগ টা শান আর রাফির কথার মাঝে রয়ে যায়।

রাফির কথায় শান ওর দিকে তাকায়।মনে পড়ে যায় নিজের মায়ের সাথে কাটানো সুখের মূহূর্তগুলো।
“যা, নাস্তা করে রেডি হয়ে আয়।হসপিটালে যাবো।”,স্বাভাবিক স্বরে বলে শান।
রাফি চলে যেতেই আবার বলে,”শোন, তোর ভাবিকে বল নাস্তা দিতে”
শানের কথায় রাফি বড় বড় চোখে তাকায়।বিড়বিড় করে বলে,”ভাবি!”
“হুমমম, তোকে কতোবার ফোন করেছিলাম।উঠাইছিস?”
“কোন ভাবি, ভাইয়া? ”
“পাখি”
খুশিতে ঝলমলিয়ে ওঠে রাফির চোখমুখ।সে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।

এতোক্ষন শানের কথা শুনে পাখি বুঝতে পারে মনের কোথাও না কোথাও এখনো মায়ের জন্যে শানের মনে অনুভূতি জীবন্ত।অনেক ভাবনার মাঝেই রাহেলা রান্না ঘরে ঢোকে।
“বউ মা, রান্না শেষ?”
“হ্যা চাচি,শেষ”,হাস্যোজ্বল মুখে বলে পাখি। নিজের কথা শেষ করে আবারও কাজে মনোযোগ দেয়।হঠাৎ কাজ থামিয়ে বলে,”চাচি আজ আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।যেহেতু এখন আমি এ বাড়ির বউ। এটুকু অধিকার তো আমার আছে, তাই না?”

পাখির কথায় থমকে যায় রাহেলা।সে বেশ বুঝতে পারে পাখি এখন কি জানতে চাইবে।পাখির দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে,”আমি জানি মা, তুমি কি জানতে চাও”
“প্লিজ চাচি, না করবেন না।আমার জানাটা খুব জরুরী।আমি আর উনাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারব না চাচি।উনি ভীষণ ভয়ে থাকেন এই একটা কারণে”

………….

ইনায়াহ্’কে রেডি করিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয় পাখি।তার মন খুব চঞ্চল আজ।শুধু সময় গুনছে কতোক্ষনে স্কুলে যাবে, স্কুল ছুটি হবে আর কতোক্ষনে কাঙ্খিত মানুষটার সাথে দেখা হবে।সবটাই যেন সময়ের উপরই আজ নির্ভর করছে। আর সময় টাই যেন কাটতে চাইছে না।
#আসক্তি২
পর্বঃ৩২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

দোতলা বিশিষ্ট সুন্দর ছিমছাম নীল রঙ্গের একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে পাখি।বাম হাতে ইনায়াহ্’র হাত শক্ত করে ধরে রাখা।অগণিত প্রশ্নের উত্তর জানার কৌতূহল,কিছুটা নতুন অভিজ্ঞতার পূর্বাভাস কিংবা বড় কোন লুকানো রহস্য জানার আগ্রহ, নানা ধরনের অনুভূতির সংমিশ্রনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে পাখি।রাফিকে বিদায় জানিয়েছে দশ মিনিট আগে।ভিতরে এক পা রাখার সাহস যোগাতে দুই পা পিছিয়ে আসতে হচ্ছে।রাফি পইপই করে বলে গেছে এতোবড় কাজটা না করতে। কিন্তু শোনে নি পাখি।শুনবেই বা কী করে, ভালোবাসার মানুষের কষ্ট কেউই সহ্য করতে পারে না আর সেখানে এতো বড় যন্ত্রনা।

“মুন সাইন”,হাত ধরে নিজের দিকে টানে ইনায়াহ্।সম্বিৎ ফিরে পাখি চেয়ে থাকে ইনায়াহ্’র দিকে।একটু ঝাঁকিয়ে বলে,”তুমি ভিতরে কেন যাচ্ছো না,চলো না!এটাতো দিদার বাড়ি।তুমি জানো আমার দিদা, বেষ্ট দিদা!আমায় কত্তো আদোর করে।আর দাদু তো সারাদিন আমায় কত্তো ভালোবাসে।”
ইনায়াহ্’র কথায় ভাবনায় পরে যায় পাখি,”ডাক্তার সাহেবের কাছে এতোটা খারাপ তিনি, অথচ বাকি সবাই বলে তার গুনের শেষ নেই।এর কারণ তো কিছু একটা আছেই।আমায় জানতেই হবে।আমার ডাক্তারকে আমি আর কষ্ট পেতে দেবো না”
ভেবেই ইনায়াহ্’র হাত ধরে বুকে সাহস সঞ্চার করে বাড়ির ভিতরের দিকে পা রাখে পাখি।

সকাল বেলা পাখির প্রশ্নের কাটকাট জবাব দিয়েছে রাহেলা,”আমাদের শানবাবা তোমায় যা বলেছে সব ভুল বলেছে।ম্যাডামের মতো মানুষ এ জগতে দ্বিতীয় জন আছে বলে মনে হয় না।এর থেকে বেশি কিছু তোমায় বলতে পারব না।বাকিটা জেনে নেয়ার দায়িত্ব তোমার। আর শানবাবাকে এই ভুল থেকে বের করে আনার দায়িত্বও তোমার মা”
“চাচি, আমায় সবটা জানতে হবে।দয়া করে বলুন প্লিজ”,অনুনয়ের স্বরে বলে পাখি।
রাহেলা সবজি কাটতে কাটতে বলে,”মাগো,সবার কিছু না কিছু দায়িত্ব থাকে। যেটা নিজেকেই সঠিকভাবে পালন করতে হয়।আমার দায়িত্ব এটুকুই যে তোমাকে তোমার প্রশ্নের উত্তরের রাস্তা অবধি দেখানো। বাকিটা যে তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে।এর অবশ্যই কারণ আছে।আমি সবটা উত্তর জানালে তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না।শুধু এটুকু বলি, রাফি তোমায় ঐ বাড়ি অবধি পোঁছে দেবে”

পাখি আর মোটেও কালক্ষেপণ করতে চায় নি।তাই তো স্কুল ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই চলে আসে শর্মিলা বেগমের বাড়ি।এ পথ যে অনেকটা কন্টকময় তা আর পাখির অজানা নয়।

🌸🌸

“দাদুভাই”,উচ্ছ্বসিত কন্ঠে ডাকে ইনায়াহ্।

ভর দুপুরের ভ্যাপসা গরমে কোথাও বের হওয়ার জো নেই। তাই ঘরে বসে বসেই এসির ঠান্ডা হাওয়াকে প্রাধান্য দেন খান সাহেব।সামনে তার চল্লিশ ইঞ্চির বোকাবাক্সটা অনর্গল বকবক করেই চলছে।ষাটোর্ধ খান সাহেব একসময় নিযুক্ত ছিলেন আর্মির অফিসার পদে।রিটায়ার্ড হওয়ার পর এখন ঘর বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে।তবুও কোথাও বয়সের বিন্দুমাত্র রেশ তার শরীরকে ছুঁতে পারে নি।এখনো আর পাঁচটা নওজোয়ান তার কাছে ডাল-ভাত।

ইনায়াহ্’র কন্ঠে চমকিত হয়ে মাথা ঘুরিয়ে নেন খান সাহেব। মরুর আকাশে এক পশলা বৃষ্টির মতো হাসি ফুটে ওঠে তার চোখে মুখে।নিমিশেই সব বিরক্তি ছুটে যায়।ঠোঁট প্রশস্ত করে দু হাত বাড়িয়ে দেয়।ইনায়াহ্ পাখির থেকে দৌঁড়ে ছুটে যায়।
এদিকে দুপুরের রান্নার কাজে ব্যস্ত শর্মিলার কানে যেন ইনায়াহ্’র গলার স্বর এক আকাশ পরিমান খুশি বয়ে আনে।খুন্তি হাতেই হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে আসেন।পিছন পিছন চলে আসে রানু;আব্দুল্লাহ্ আর রাহেলার মেয়ে।খান সাহেব যখন কর্মরত ছিলেন তখন শর্মিলা নিজের একাকিত্বের সঙ্গী হিসেবে সন্তানের দূঃখ ভুলতে রানুকে নিজের কাছে রাখেন।

ইনায়াহ্’র দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সদর দরজার কাছে চোখ রাখেন শর্মিলা।এক জোরা উৎসুক চোখ চেয়ে দেখছে তাদের মিলন মেলা।এগিয়ে আসে পাখির দিকে।শর্মিলা বেগম বুঝতে পারেন না এই মূহূর্তে তার কী অভিব্যক্তি প্রকাশ করা উচিত।আগা-গোড়া পরোখ করে তিনি দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন।
“আস্সালামু আলাইকুম মা”

শান্ত কিন্তু ধারালো একটা কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসে শর্মিলার।শেষের সম্বোধনটা যেন বুকের বাঁ পাশে কোথাও নতুন করে চিনচিনে ব্যথার পাল তুলে দেয়।কয়েক মূহূর্ত তিনি চোখের পাতা দুটোকে বিশ্রাম দেন।খুব ধীরে চোখ খুলে স্পষ্ট স্বরে বলে ওঠেন,”মা!কতো পরিচিত অথচ কতোখানি আকুল তোমার ডাক।কি কপাল আমার, ছেলের কন্ঠে মা ডাক শোনার জন্যে হাহাকার করে বুক, অথচ ছেলের বউ এসে…… ”
“বড় মা, ভাবিকে এভাবেই দাঁড় করিয়ে রাখবা?”,রানুর কথায় কন্ঠে ভাঁটা পরে শর্মিলার।খুন্তিটা রানুর হাতে দিয়ে চোখের কোণাদুটো সাবধানে মুছে নেন। স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে বলেন, “ভিতরে আসো”

ভিতরে প্রবেশ করেই খান সাহেবকে সালাম জানায় পাখি।জবাব জানিয়ে ভ্রুদ্বয়ে সামান্য ভাঁজ ফেলে শর্মিলার দিকে তাকায় তিনি।শর্মিলা চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে বলেন,”বউ মা”
চকিতে তাকিয়ে থাকে পাখি।যেন ডাকটা তার মুখের জন্যেই আল্লাহ্ তৈরী করেছেন।পাখিকে অবাক বিষ্ময়ে কিছুক্ষন আগা-গোড়া দেখে খান সাহেব হন্তদন্ত হয়ে বলেন,”আসো মা আসো, বসো বসো”
“এই রানু বউ মা প্রথমবার আসলো আমাদের বাড়ি।দাঁড়িয়ে দেখছিস কি। যা মিষ্টি নিয়ে আয় দৌঁড়া”
“এখুনি আনছি বাবা”

নিজের জন্যে এতো উৎকন্ঠা দেখে বেশ অবাক হয় পাখি। পুলকিত হয়ে বাড়োন করে, “আমায় নিয়ে এতোটা ব্যস্ত হবেন না।আমার খুব অস্বস্তি লাগছে”
বেশ বিব্রতকর অবস্থা পাখির চোখেমুখে।যা নজড় এড়ায় না শর্মিলা।
“বাসায় বলে এসেছো?”
“না মানে,মানে…..আমি স্কুল থেকে আরকি….”,রিনরিনে স্বরে অর্ধ্বকথায় থেমে যায় পাখি।
“স্বামীর বিনা অনুমতিতে এভাবে আসা ঠিক হয় নি। এ বাড়ির কথা শুনলে তোমার সাথে অনেক ঝামেলা হতে পারে”,স্থীর দৃষ্টিতে চোখ মেলে কথাগুলো বলেন শর্মিলা।

কাচুমাচু করে পাখি জবাব দেয়,”আমার কিছু কথা ছিলো মা।যেগুলো জানা আমার খুব জরুরী।”
“তুমি রেস্ট করো।এসেছো,দুপুরে খেয়ে যেও।”
“মা প্লিজ”,অনুনয়ের স্বরে বলে পাখি।
থমকে যায় শর্মিলা।খান সাহেবের দিকে তাকাতেই তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইনায়াহ্’র হাত ধরে উপরে চলে যায়।রানুও চলে যায় রান্নাঘরে।

পাখি চট করে শর্মিলার দুই হাত ধরে বলে,”আপনার ছেলে আপনাকে অনেক ভালোবাসে মা।কিন্তু কোন একটা কারণে তিনি আপনাকে মানতে পারছে না।কী সে কারণ মা। আমায় বলুন ।তার এই চাপা কষ্ট আমার সহ্য হয় না”
ছেলের মনের কথা তিনি বোঝেন।তবুও আজ পাখির মুখে শুনে মনের মাঝে হাহাকার টা বেড়ে যায় দ্বিগুন।
“শান তো তোমায় সবটা বলেই দিয়েছে মা, তাহলে?”
“আমার মনে হয় উনার কোথাও ভুল হয়েছে মা;উনার জানার মাঝে ভুল আছে।আমি সঠিক টা জানাতে চাই উনাকে”

মুচকি হেসে ওঠে শর্মিলা।মূহূর্তেই সে হাসি মিলিয়ে যায় ঠোঁটের কোণে।তাকাতেই চোখ আটকে যায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শানের দিকে।শান এক দৃষ্টে আগুন চোখে তাকিয়ে থাকে পাখির দিকে।পাখি শর্মিলার দৃষ্টি অনুসরন করে দরজার দিকে তাকাতেই বুকে “ধ্বক” করে ওঠে। দুটো শুকনো ঢোক গিলে সন্তোর্পনে দাঁড়ায়। এগিয়ে যায় শানের দিকে।কটমটে দৃষ্টিতে শান নজড় ফেলে শর্মিলার দিকে।

এই প্রথম এ বাড়ির চৌকাঠে পা রেখেছে শান।চোখ ভরা জল নিয়ে শর্মিলা চেয়ে থাকে ছেলের দিকে। দৃষ্টি উপেক্ষা করে পাখির হাত চেপে ধরে শান।টেনে নিয়ে আসে দরজার দিকে।কি ভেবে থেমে যায় সে।
“ইনায়াহ্”,জোড়ে চিৎকার করে ইনায়াহ্’কে ডাকে।কেঁপে ওঠে পুরো বাড়ি।অন্তরাত্মা সমেত কেঁপে ওঠে পাখি।
“ইনায়াহ্ এখানে থাকুক না আজ “,শ্বান্তকন্ঠের অনুরোধ শর্মিলার।
বজ্রকন্ঠে জবাব দেয়,”ইনায়াহ্’কে দেখে রাখার মতো ক্ষমতা আছে আমার”

শানের কর্কশ গলার স্বরে উপর থেকে খান সাহেবের হাত ধরে নেমে আসে ইনায়াহ্। ড্রেস ছাড়িয়ে নরমাল ড্রেসে সে।ফ্রেশও হয়ে গেছে কিছুক্ষন আগেই।তা ইনায়াহ্’র চোখ মুখে পানির ফোটা দেখেই বোঝা যায়।শান একবার খান সাহেবের দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ডাকে ইনায়াহ্’কে।
“ইনায়াহ্ চলে আসো,রাইট নাউ”
“আমি দিদার কাছে থাকব আজ”,সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে নামতে নামতে বলে ইনায়াহ্।
শান অবাক হয়ে যায় ইনায়াহ্’র এমন আচরনে।শর্মিলাকে জড়িয়ে পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ও মুন সাইন, আমি আজ এখানে থাকি না প্লিজ”

ইনায়াহ্’র কথায় পাখি জিহ্বায় শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার পূর্বেই শান ওকে টেনে নিয়ে আসে বাড়ির বাহিরে।গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে বসতে বলে।অপর পাশে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে শান। ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে দেয় কোন কথা ছাড়াই।অবাক চোখে ভয়ে ভয়ে তাকায় পাখি।শানের রাগের কাছে কিছু বলার মতো সাহস তার হচ্ছে না।দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে আসে বাড়িতে।আবারও পাখিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা খুলে বের করে আনে ওকে।হাত চেপে ধরে উঠে যায় সোজা উপরে।রাহেলার বোঝার বাকি নেই পানি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে।আহত স্বরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে যান তিনি।

🌸🌸
“কার সাহসে ও বাড়ি গেছো?”,শান্তস্বরে প্রশ্ন করে শান।
একবার শানের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নেয় পাখি।নখ খুঁটতে খুঁটতে বলে, “আমি, মানে….”
“বলো”,আবার প্রশ্ন করে শান।এতো শান্ত সে স্বর অথচ খুব ভয়ানক। ঝড়ের পূর্বাভাস যাকে বলে।
“স্কুল শেষে, গেছিলাম”, আমতাআমতা করে বলে পাখি।
“ও বাড়ি যাওয়ার আগে একটি বারও আমার কথা মনে হলো না তোমার?”,দাঁতে দাঁত পিষে রাগ দেখিয়ে বলে শান।
পাখি এগিয়ে শানকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে,”আপনি প্লিজ শান্ত হোন।আমরা তো ভালোভাবে বসে কথাগুলো বলতে…..”
“ভালোভাবে বসে!”,চোখ মুখ কুচকে বলে শান।স্বগতোক্তি করে বলে, “পাখি সামনে থেকে সরো।রাগের মাথায় কি করে বসব নিজেও জানি না।সরো”
মুখটা থমথমে করে পাখি জবাব দেয়,”মারবেন?”

থেমে যায় শান।মুখ থেকে যেন রাগের কালো মেঘটা সরে যায় পাখির এই একটি মাত্র কথাতে।একহাত টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে শান বলে,”আমি অনেক কিছু হারিয়েছি এ জীবনে।আর কিছু হারাতে পারব না।তোমাকে হারাবার কথা ভাবতেও পারি না।এক মূহূর্তের জন্যেও তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতে পারি না আমি।তুমি আমার সেই আসক্তি যার নেশায় আমি আসক্ত।আমি চাই না তুমি ঐ মহিলার সাথে দ্বিতীয়বার সাক্ষাত করো”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে পাখিকে পাশে সরিয়ে রেখে চলে যায় শান।হতভম্ব হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে পাখি।

🌸🌸

বিকেল গড়িয়ে যায় তবু শানের দেখা মেলে না।কয়েকবার ফোন করলে কেটে দিয়েছে শান।বুঝতে পারে পাখি, শান ভীষণ রেগে আছে।রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে কি করা উচিত ভাবতে থাকে।

সন্ধ্যেবেলা রান্নাঘরে রাহেলাকে এ টু জেট সব কথা বলেছে পাখি।এরপর থেকে ভীষণ চিন্তিত রাহেলা সাথে একরাশ হতাশা।
“শানবাবা কি কোনদিনও সত্যিগুলো জানতে পারবে না?”

শানের কাছে আবার ফোন করে পাখি।সোজাসুজি উত্তর দেয় , “দেরি হবে”
মুখ গোমড়া করে বসে থাকে পাখি।আচমকাই একটা অদ্ভুত বুদ্ধি মাথায় আসে।মূহূর্তেই লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। পরোক্ষনে ভাবতে থাকে, “আমারই তো”

কাবার্ড থেকে পাতলা ফিনফিনে জর্জেটের লাল শাড়িটা বের করে পাখি।বিয়েতে রাখি এটা সিক্রেইট গিফট হিসেবে দিয়েছিলো।ভাবতেই লজ্জার লাল আভা গালে ফুটে ওঠে।বেশ পরিপাটি করে সেট করে নেয় শরীরের সাথে।আয়নার সামনের টুলটা টেনে নিয়ে গাঢ় করে কাজল দেয় চোখে।লাল টকটকে রং টা ঠোঁটে রাঙ্গিয়ে নেয় গাঢ় করে।পাউট করে হেসে ফেলে মূহূর্তেই।লম্বা মসৃন চুল গুলো ছেড়ে দেয় পিঠের উপর।দাঁড়িয়ে পা থেকে মাথা অবধি দেখে নেয়।শব্দ করে হেসে ফেলে পাখি।

ঘরে কয়েক রঙ্গের মোম জ্বালিয়ে দেয় পাখি।এরপর লাইটটা অফ করে ঘড়ির দিকে তাকায়।
“এগারটা!এতোক্ষনে তো আসা কথা!”,ভাবতে ভাবতে জানলার কাছে এগিয়ে যায় পাখি।তখনি বাড়ির ভিতরে ঢোকে শানের গাড়ি।বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।তড়িঘড়ি করে নিজেকে আরেকবার দেখে নেয়.

মিনিট পাঁচেকের মাঝেই শান ঘরে ঢোকে।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে থ হয়ে যায়।নাকি আসে কড়া লেডিস পারফিউমের সুঘ্রাণ।চারিদিকে লাল নীল মোমের আলোয় জ্বলজ্বল করছে।একবার চোখ বুলিয়ে হাতের ফোন, গাড়ির চাবি, ওয়ালেট সবটা দরজা পাশের ওয়ারড্রবের উপরে রাখে।বিছানায় বসে মোজা জোড়া খুলতে খুলতে চারিদিকে আবার চোখ বুলিয়ে নেয়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে ড্রেস নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।

পাখি বেলকোনি থেকে আড়চোখে সেসব দেখছে।কিছুক্ষন পর গোসল সেড়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয় শান।তড়িৎগতিতে পাখি সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।হাত থেকে তোয়ালে টা কেড়ে নিয়ে মাথা মুছে দেয়।শান চোখ মেলে তাকায় ওর দিকে।মাথা থেকে পা অবধি দেখে নজড় গিয়ে আটকে লাল রঙ্গের পুরু আস্তরনে আচ্ছাদিত ঠোঁটের উপর।পাখি সেদিকে আড়চোখে তাকিয়ে শানের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে।
শানের দৃষ্টি এবার থামে কোমড়ের কাছের উন্মুক্ত জায়গায়।ফট করে চোখ সরিয়ে চলে আসে শান।

ব্যপার টা মোটেও ভালো লাগল না পাখির।ঠোঁট উল্টিয়ে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকে।শান চুল গুলো ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুলে ব্রাশ করতে করতে বলে,”ঠোঁটের ঐ রং সরাও।কি বিশ্রী দেখাচ্ছে!আর এতো সিডিউস করার দরকার নাই”

পাখি চমকে তাকায় শানের দিকে।নজর এদিক সেদিক করে পাখি অন্যত্র চলে যেতেই হাত টেনে ধরে শান।
খুব ধীরে টেনে আনে নিজের কাছে।একহাতে কোমড় জড়িয়ে ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে ঘষে ঠোঁটের রং টা উঠিয়ে দিতে দিতে বলে,”তুমি এমনিই অনেক সুন্দর।”
বৃদ্ধাঙ্গুলে মাখানো রং টা কোমড়ের খোলা জায়গায় মুছে বলে,”এসবের কোন দরকার নাই”

“আপনি যে রেগে আছেন আমার উপর।তাই ভাবলাম……”,মিনমিন করে বলে পাখি।
বেশ সাবলীল ভাবে জবাব দেয় শান,”আমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে তোমার এই খোলা চুল আর শাড়িটাই এনাফ।এসব রঙ চঙ্গের দরকার নাই পাখি।আর সবথেকে বড় কথা আমি রেগে নেই”

শান্ত চাহনীতে তাকায় পাখি। দুপাশের চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে শান বলে,”খুব ভালোবাসি”
চোখ বন্ধ রেখে মুচকি হেসে ওঠে পাখি।কতো সাধারন একটা বাক্য অথচ শানের কন্ঠে কতোই না শ্রুতিমধুর শোনায় তার কাছে।আবেশে গালের উপর রাখা শানের ডান হাতটায় ঠোঁট ছুঁয়ে পাখি জবাব দেয়,”আমার কিছু চাই ডাক্তার সাহেব”
“কী? ”
“কথা দিন”
“দিলাম”
“আমি চাই আপনি মায়ের সাথে একটি বার কথা বলুন।তার থেকে সবটা শুনুন”

পাখির কথায় সরে যায় শান।পিছু ফিরে চিরুনি টা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।মাথায় চিরুনি চালিয়ে বলে,”এটা তোমার কেমন আবদার পাখি।অন্য কিছু চাও।আমি মা নামোক মানুষটাকে মুছে ফেলেছি ষোল বছর আগে।”
“যদি বলি আমার ভালোবাসার আবদার!”

থেমে যায় শান।হাত যেন অচল হয়ে উঠছে।কিছুক্ষণ আয়নায় তাকিয়ে দেখে পিছনে দাঁড়ানো পাখির প্রতিবিম্বের দিকে।চিরুনি টা টেবিলে রেখে পিছু ফিরে বলে, “ওকে।শুধুমাত্র তোমার জন্যে আমি তার সাথে দেখা করব।তবে মনে রেখো, তার জন্যে জমানো ঘৃনা একরত্তিও কমবে না”

খুশিতে ঝলমলিয়ে ওঠে পাখি।কাল বিলম্ব না করেই শানের বুকে ঝাপিয়ে পরে ।শান টাল সামলাতে পিছনে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে পা ঠেস দেয়।
“আরে আস্তে পরে যাবা “,পাখির চুলে হাত বুলিয়ে বলে শান।
পাখি আরো শক্ত করে চেপে ধরে শানকে।অস্ফুটস্বরে বলে,”আপনি আছেন না, এমন করেই ধরে ফেলবেন”
পাখির চুলের ভাঁজে মুখ লুকিয়ে বলে,”আছি তো”

চলবে……
চলবে……
চলবে….

[সবাই বোনাস বোনাস বলে চিল্লিয়ে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিলো, তাই দিলাম।সবার কতো আগ্রহ! ভাবা যায়!🙄]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here