আসমানী ও জ্বীন পর্ব -০৩

#আসমানী_ও_জ্বীন
#০৩
#ইসরাত_জাহান_এশা

সাথে সাথে সে নৌকায় ২ রাকাত নফল নামাজের নিয়্যত করে দাড়িয়ে গেলো নামাজে সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই নৌকা উল্টে গেলো।,,,,
করীম সাহেব পুনরায় তাকে নদীর পাড়ে সেই দাড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলো এবং বার বার চোখ কচলাতে শুরু করে। আমি এখানেই আছি তাহলে নদীর পাড়ে কেমন করে আসলাম আ আ আপনি কে বলুন তো?
— নৌকাতে উঠুন তারপর না হয় পরিচিত হলাম।
— না আগে বলুন আপনি কে?
— ভয় পাচ্ছেন কেনো? ভয় পাওয়ার কিছু নেই আপনি তো আপনার রব ব্যতিত কাউকেই ভয় পান না তাহলে আমাকে বিশ্বাস করতে অসুবিধা কি? আপনি যার গোলামী করেন আমিও তার গোলামী করি যিনি আপনার রব তিনি আমারো রব। তবে সমস্যা এক জায়গাতেই আপনি মানুষ আমি জ্বিন। এবার চলুন।
— ওহহ তাহলে আপনি জ্বিন তো হটাৎ আমার সামনে আসলেন?
— আসলে আপনার অপেক্ষায় এতদিন ছিলাম আপনি সঠিক লোক কিনা সেটা পরিক্ষা করার জন্য আমার জাদু দিয়ে সেটা পরিক্ষা করলাম।
— আপনি যার কাছে যেতে চাচ্ছেন তার কাছে আমি আপনাকে নিয়ে যাব। কিন্তু আমি তার কাছে যেতে পারব না আপনাকে তার থেকে অনুমতি নিতে হবে তাহলে আমি সাথে সাথেই আপনার পাশে বসে পরব।
— কেনো যেতে পারবেন না?
— কারন আমি অভিশাপ্ত জ্বিন, একটু ভুলের জন্য আমাকে এতদিন এইভাবে আপনার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে আর এতদিনে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। শুধু আপনি সাথে করে নিয়ে চলুন। আপনি পারবেন আমাকে ওস্তাদের থেকে অভিশাপ মুক্ত করতে। আর আজই সেই পূর্নিমার রাত যার কথা তখন বলা হয়েছিল ।
— কেনো অভিশাপ্ত করা হয়েছিল?
— আমি পিচাশদের কাছে সকল গোপন তথ্য প্রকাশ করে দিয়েছিলাম লোভে পরে। কিন্তু শেষে আমাকে তারা যে শক্তি দেওয়ার কথা বলেছিল তা দেইনি আরো মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে তার জন্য ওস্তাদ আমাকে অভিশাপ্ত করেছিলেন।
—- আমরা মনে হয় এসে গেছি।
—-হুমমম নামুন তাহলে।
— আচ্ছা তোমার নাম কি জ্বীন?
— নুহা জ্বীন।

নুহা জ্বীন করীম সাহেবর হাত ধরল তারপর বড় একটা পাহার সেটা পেড়িয়ে ছোট্ট একটা দ্বীপের পাশে গিয়ে থামল। সেখানে ছোট একটা মসজিদ যা দেখতে বেশ চমৎকার।

— জনাব আপনি এখন ঐ খানে যান আমি আর যেতে পারব না। মনে করে আমার কথাটা বলবেন।
—- আচ্ছা জাজাকাল্লাহ খাইরান।
করীম সাহেব আস্তে আস্তে ভীতরে প্রবেশ করল। একজন বৃদ্ধ লোক মিস্টি সুরে কুরআান তিলাওয়াত করছে। করীম সাহেব আস্তে আস্তে তার পাশে বসে শুনছে।
কুরআন পড়া শেষ করে জিজ্ঞেস করল কে তুমি বাবা?

— আসসালামু আলাইকুম ওস্তাদ,আমি করীম।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম। তো কি খবর?
— আসমানীকে খুঁজে পেয়েছি।
— কোথায় আছে এখন??
— ঐ বাড়িতেই আছে কিন্তু কখনো বেড় হয়নি। ওরা ওকে আটকে রেখেছে কাজের মেয়ের মত কাজ করিয়েছে। আস্তে আস্তে করীম সাহেব সব ঘটনা খুলে বলেন।
— ওহহ আচ্ছা তাহলে আসার সময় নুহা তোমাকে সাহায্য করেছে?
— জ্বী ওস্তাদ
— নুহা এদিকে আয়।

নুহা দৌড়ে করীম চাচার পিছনে বসে পড়ে।
— ওস্তাদ আমাকে ক্ষমা করুন ঐ পিশাচদের সাথে হাত মিলিয়ে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছি আপনি আমাকে ক্ষমা করুন আর কখনো আপনার অবাধ্য হবো না।
— হুমম ক্ষমা করেছি অনেক আগেই কিন্তু এটুকু শাস্তি না দিলে তুই তোর ভুল বুঝতি না। এখন শোন।
— হুকুম করুন ওস্তাদ।
— আজ পূর্ণিমার রাত আজ রাতেই আসমানীর ২২ বছর পূর্ণ হবে।ওর ভিতরে নতুন কোনো শক্তি জাগ্রত হবে। আর পিশাচদের শেষ করার আর এই মায়াজাল থেকে বাঁচতে হলে ওকে দরকার।ওর বাবা মা দাদা সবাই নিখোঁজ তাদের উদ্ধার করতে হবে। ও কোনো সাধারণ মেয়ে না। তাই ও যেখনেই আছে করীমকে নিয়ে ওকে নিয়ে আসবে আর আমার চিঠিটা দিবে।

— জ্বী ওস্তাদ।
— যাও করীম যাও খুব তারাতারি যাও। আল্লাহ ভরসা।

নুহা করীম কে নিয়ে বাতাসের সাথে রওনা করে আসমানীর সাথে দেখা করার জন্য।
এদিকে আসমানীর অবস্থা তেমন একটা ভালো না গায়ে প্রচুর জ্বর। আসমানীর দাদী কি থেকে কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।

হে আল্লাহ তুমি আমার নাতীনকে সুস্থ করে তোলো। আল্লাহ ওর প্রতি তুমি রহম করো। ক্ষমা করো ওকে।।
।।
আসমানীর দাদী আলমারীর কাছে গিয়ে একটি পুরানো বই বের করলেন। বইটি হাতে নেওয়ার সাথে সাথে বইটি নিজে থেকে উল্টে যাচ্ছে সাথে সাথে আসমানীর দাদীর হাত থেকে বইটি পড়ে যায়।

একটা পেইজে গিয়ে বইটিতে লেখা ভেসে উঠে আজ সেই পূর্নিমার রাত যখন চারোদিকে চাঁদের আলোই আলোকিত হবে আর সেই অসাধারণ বালিকার মধ্যে এই বংশের কালো ছায়া দুর করার শক্তি তার কাছে আসবে। সেই পারবে সবার উপর থেকে মায়া জাদু ও কালোজাদুর প্রভাব কাটতে।
আসমানীর দাদী বইটি নিচ থেকে তুলতে যাবে সাথে সাথে বইটি ঐখানে থেকে ভেনিস হয়ে যায়।

আসমার দাদী চিন্তায় পড়ে যায় কে সেই মেয়ে কোথায় পাবো তাকে? আজ আসমা সুস্থ থাকলে ওকে নিয়ে বের হোতাম। বলতে বলতে আসমার দাদী জানালা খুলে দিল
আস্তে আস্তে পুর্নিমার আলো জানালা ভেদ করে আসমানীর গায়ের উপর পড়ে। সাথে সাথে আসমানীর শরীর আলোই আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে চাঁদের আলোতে ওর রুপ ২গুন হয়ে উঠে।

আসমানীর দাদী চমকে উঠে তাহলে সেই মেয়েই আমাদের আসমা তাহলে আসমাই সেই অসাধারণ বালিকা যার কথা ঐ ডায়রিতে লেখা ছিলো?

ভাবতে ভাবতেই নুহা জ্বিন আর করীম সাহেব আসমানীর ঘরে প্রবেশ করে,,,,

— তোমরা?
— ওহহ তাহলে চিনতে পেরেছেন আমাদের?
— চিনবো না কেনো তোমাদের আশায়ই তো এতোদিন ছিলাম কোথায় আছে আমার স্বামী কোথায় আছে আমার ছেলে কোথায় আছে আমার বউ।
—- এটা শুধু আসমানী বের করতে পারবে আসমানী সেই অসাধারণ বালিকা( নুহা),,,,,,
,,,

পুর্নিমার আলো চারদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে অধরার গায়ে প্রচুর ব্যথা শুরু হয়। সহ্য করতে না পেরে ও মা বলে চিৎকার দিয়ে আয়নার সামনে দাড়ায়। সাথে সাথে সেই অর্ধ চেহারার মহিলা আবারো আয়নার সামনে আসে।

—- কি এবার বিশ্বাস হলো তো।
— হ্যা মা। কিন্তু আমি এই ব্যথা সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ মা আমার এই ব্যথা কমিয়ে দাও।
— আমি চাইলেই পারব না এই ব্যথা কমানোর জন্য একটা যুবতী মেয়ে দরকার যার বয়স ১৮-২০।

অধরা ভাবতে শুরু করে এখন এই মুহূর্তে এমন মেয়ে কই পাবে আর আসমানীর বয়স এখন ২২ কখনোই সম্ভব না তাহলে তো নিজের মেয়ে চাঁদনী ছাড়া এখন কাউকে পাবে না। নিজের মেয়েকে এখন শেষ করতে হবে ভেবে বুক কেপে উঠে অধরার।

— কি ভাবছিস আমি জানি কিন্তু কিছু করার নেই তুই চাঁদনীকে ডাক আমি তোদের সবাইকে এখান থেকে নিয়ে যাব।

অধরা ব্যথা সহ্য না করতে পেরে চিৎকার দিয়ে চাঁদনী কে ডাকে। চাদঁনী মায়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে অধরার রুমে আসে। এসে মায়ের কদার্য রূপ দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে পিছনে যেতে শুরু করে ।
—- মা তোমার এই অবস্থা কেনো, আয়নায় উনি কে?
— চাঁদনী তুই আমার কাছে আয় তারাতারি পিছনে যাস না।
চাঁদনী পালানোর চেষ্টা করলে অধরা ওর হাত ধরে ফেলে। অধরা চাঁদনীর হাত ধরে আয়নার উপর হাত রাখল। অধরা আর চাঁদনী আয়নার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো।

চলবে,,,,,,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here