উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -২৪+২৫

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_24
#Writer_Fatema_Khan

আয়ান মোবাইলের স্ক্রিনে দেখে রাত ১২টার উপরে বাজে তাই সে আর কল দিলো না। এত রাতে কল দেওয়া উচিত হবে না হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। এই ভেবে আয়ান মোবাইল টা পকেটে নিয়ে নিলো। রোজা আর তার মা ঘুমিয়ে গেছে। জার্নি করে রেস্ট নেয় নি বাসায় এসে। রান্না করতে হয়েছে আয়ানের মাকে আর রোজাও তার মায়ের সাথেই ছিলো। তাই রাতের খাবার পরেই তারা যার যার রুমে চলে যায় ঘুমাতে। বড় বড় তিনটা বেড রুম থাকায় তিনজন তিন রুমেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ রোজা রাত জেগে পড়ে তাই তার মায়ের ঘুমের বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে রোজা আজ নিজে থেকেই তার মায়ের কাছে ঘুমিয়েছে। আয়ান নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে এসেই আবার কাজে মনযোগ দিলো।
_________
কাব্য নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে। সেই সময় কেউ দরজায় নক করলে কাব্য উঠে দরজা খুলে দেয়। দেখে তার মা দাঁড়িয়ে আছে।
—আসব?

— ওহ মা অনুমতি নেওয়ার কি আছে বলতো, তুমি আমার রুমে সারাদিন আসা যাওয়া করতেই পারো।

কাব্যের মা রুমে ঢুকে পা তুলে খাটে বসে পরে। আর কাব্যকেও হাতের ইশারায় বসতে বলে। কাব্য গিয়ে তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। কাব্যের মা চুলে বিলি কেটে দিলে কাব্য চোখ বন্ধ করে নেয়।
—কাব্য

— হুম

—তুই কি কথাকে আগে থেকেই চিনিস?

কাব্য চোখ খুলে ফেলে আর বলে,
—পাঁচ বছর আগে থেকেই চিনি, তবে আজ আমি তাকে আমাদের অফিসে দেখে পুরাই অবাক। সে নিজেও যে কম অবাক হয় নি তার ফেস দেখেই বুঝা গেছে।

—এত বছর আগে থেকে চেনা জানা! কই কখনো বলিস নিতো।

—একদিনের পরিচয় ছিলো তাও বিদেশ যাওয়ার আগে আমি ট্রেনে করে ঢাকায় আসলাম না সেই ট্রেনে ছিলো। সেখানেই দেখা হয়৷ তারপর আবার দেশে আসার পর দেখা হলো।

—তুই কি কথাকে পছন্দ করিস

—অনেক পছন্দ করি কিন্তু কথা আমাকে একিটুও পছন্দ করে না।

—আমার রাজপুত্রের ন্যায় ছেলেকে পছন্দ করে না এটা কোনো কথা হলো!

—আসলে মা ওর অতীত তেমন একটা ভালো ছিলো না তাই আর কি।

—কি হয়েছিলো ওর সাথে?

—সেসব বাদ দাও না এটা বলো আগে কথাকে তোমার কেমন লাগে?

—ওর সাথে আমার রাস্তায় দেখা হয়। খুব ভালো একটা মেয়ে। আমার তো প্রথম দিন থেকেই খুব ভালো লাগে আর আমাদের অফিসে জয়েন হওয়াতে আমার তো খুব ভালো লেগেছিলো।

—তোমার ছেলে ওই মেয়েকেই বিয়ে করবে বুঝলে

— হুম বুঝতে পেরেছি।

—আচ্ছা মা একটা কথা বলো, বাবা কবে আসবে?

—তোর বাবা আসতে আসতে লেইট হবে, ওইখানের কাজ কমপ্লিট হয়নি এখনো।

—ওহ

—এক কাজ কর, তুই ঘুমিয়ে পর রাত তো অনেক হলো আর আমিও শুতে যাই।

—ঠিক আছে মা।

তারপর কাব্য তার মায়ের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে নিলো আর তার মা রুম থেকে চলে গেলো। কাব্যও কিছুক্ষণ পর ঘুমাতে চলে গেলো।
__________
কথা আর কনক নিজেদের পড়া শেষ করে আর কথা অফিসের টুকিটাকি কাজ করে নেয়। তারপর তারা ঘুমানোর জন্য তৈরি হয়। কনক আর কথা শুয়ে পরে। কনক কথার দিকে ফিরে বলে,
—জানিস আজ কি হয়েছে

—কি হয়েছে?

—আয়ান এসেছিলো আর আমাকে বাসায়ও ড্রপ করে দিয়েছে

—আয়ান! ওই ছেলেটার নাম আয়ান?

— হুম কেনো তোকে বলি নি আমি আগে?

—কে জানে ঠিক মনে পরছে না, রিয়ান ভাইয়ার একটা বন্ধু আছে বলেছিলাম না তোকে তার নামও আয়ান ছিলো। আচ্ছা তারপর বল কি বললো আয়ান ভাইয়া?

—উনি আমাকে প্রপোজ করেছেন। বলেছে আমাকে ভালোবাসে।

—তাহলে এতদিন উনি কোথায় গায়েব ছিলো

—আসলে হয়েছে কি কাব্য জিজু আর তূর্য ভাইয়াকে আয়ান দেখেছিলো আমার সাথে আর যখনি দেখেছে আমি আর তূর্য হাসাহাসি করছিলাম। তাই উনি ভেবেছেন আমি হয়তো তূর্যের সাথে রিলেশনে আছি। তাই আয়ান আমার থেকে দূরে দূরে ছিলেন আর মজার বিষয় হলো সে আমার উপর রেগেও ছিলো। যেখানে সে তার মনের কথাই আমাকে বলেনি।

—ওহ। তা তুই কি বললি রাজি হয়েছিস নাকি মানা করে দিয়েছিস

—আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি আয়ানকে কিভাবে দেখি। আমার তাকে ভালো লাগে কিন্তু সেটা ভালোবাসা নাকি সেটা সিওর না। তাই ভালো করে কিছুই বলতে পারলাম না।

—আচ্ছা তুই নিজেকে কিছুটা সময় দে তারপর ভেবে উত্তর টা আয়ান ভাইয়াকে দিয়ে দিস।

—আমিও এটাই ভাবছি।

—তুই জানিস আমার অফিসের বস কে?

—কে যে কাল তোর লেইট হওয়াতে তোর উপর রেগে অফিস থেকে চলে গিয়েছিলো?

— হুম

—কে উনি?

—আমার অফিসের বস হলো কাব্য

—কিহ!

কনক এক লাফ দিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো। তার চোখ দুটো যেনো কোটর থেকে বেড়িয়ে আসবে।
—ঠিক তোর মতই আমারও এক্সপ্রেশন ছিলো তবে তা ভেতরে ভেতরে অফিসে তো আর চিৎকার করতে বা লাফ দিতে পারি না। কাব্যেরও সেইম অবস্থা ছিলো আমাকে দেখে। কি করবে না করবে বুঝতেছে না। ম্যামের সামনেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো।

—কাব্য জিজু তাহলে তোর বস। এতো পুরাই জমে ক্ষীর। খুব ভালো হয়েছে তোরা সারাদিন একসাথে থাকলে দেখবি তোরও কাব্য জিজুর প্রতি অনুভূতি কাজ করবে।

—তাই নাকি! আচ্ছা এবার ঘুমা তাহলে আমার সকালে অফিস যেতে হবে। শুভরাত্রি

—ঠিক আছে। শুভরাত্রি। এই এক মিনিট এক মিনিট

—আবার কি?

—কাল আশ্রমে যাবি না?

—কাল ওহ না না আজ তো ১২টার উপরে বাজে। আজ তোর জন্মদিন। সেটাও ভুলে গেছিস! শুভ জন্মদিন দোস্ত, তোর প্রতিটা দিন কাটুক সুখের তোর প্রতিটা মুহূর্ত হোক হাসির। সারাজীবন হাসিখুশি থাক এটাই কামণা করি।

বলেই কনক কথাকে জড়িয়ে ধরে আর কথাও কনককে জড়িয়ে ধরে।

—ওহ হ্যাঁ, মনে পরেছে, অনেক ধন্যবাদ। তাহলে তো কাল অফিস থেকে জলদি আসতে হবে তারপর আশ্রমে গিয়ে সবার সাথে সময় কাটাবো। কতদিন হলো বুড়িটাকে দেখি না।

— হুম এবার তো অনেক দিন পর যাওয়া হবে আমাদের। আচ্ছা এবার ঘুমিয়ে পর না হলে সকালে তোর লেইট হয়ে যাবে।

— হুম এবার ঘুমানো দরকার। ঘুমিয়ে পরি আর তুইও ঘুমা।

—ওকে।
________
কথা ১০টার আগেই অফিসে পৌঁছে যায়। নিজের টেবিলে বসে সব গুছিয়ে নিচ্ছে কাজ শুরু করার আগে। কথা আজ কালো রঙের একটা ড্রেস পরে। সাথে ছোট এক জোড়া ঝুমকা আর হাতে কাচের কালো চুড়ি। কপালে কালো টিপ আর চোখে মোটা করে কাজল দেয়া। অফিস থেকে সরাসরি আশ্রম যাবে তাই একেবারেই তৈরি হয়ে এসেছে কথা। চুলগুলো আজ ছেড়ে দেওয়া। অন্যান্য দিন কথা কোনো ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে না। কোনো মতে চুল বেধেই কলেজ যায় আর এই দুইদিন এভাবেই অফিস এসেছে। আজ আশ্রম যাবে বলে হালকা সেজেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলিমা আর কাব্য অফিসে আসলো। তারা সরাসরি তাদের জায়গায় চলে গেলো। কথা আজ দুপুরের পর ছুটি নিবে তাই সে নীলিমা খানকে একা রুমে পেলেই যাবে। না হলে কাব্য হাজার প্রশ্ন করবে। কথা নিজের কাজে মন দিলো। কাজ করতে করতে এক পর্যায়ে কথা দেখে কাব্য রুম থেকে বেড়িয়ে অন্যদিকে চলে গেলো। কথা এই সুযোগেই নীলিমা খানের কাছে গেলো। দরজার কাছে এসে দরজা নক করতেই নীলিমা বলে,
—কাম ইন

কথা ভেতরে ঢুকে সৌজন্যমূলক একটা হাসি দেয়। নীলিমাও তার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
—আরে কথা ভেতরে এসো আর বসো। কিছু বলবে কাজে কি কিছু সমস্যা?

কথা চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
—নো ম্যাম কাজে কোনো সমস্যা নেই। আর ম্যাম আজকের সব কাজ আমি কাল রাতেই বাসায় করেছিলাম একটু যদি চেক করতেন আর কি। আর ম্যাম আমার আজ দুপুরের পর ছুটি চাই।

—কোনো প্রবলেম নাকি? আজকের কাজ এত তাড়াতাড়ি শেষ করে ছুটি চাইছো

—আসলে ম্যাম আজ আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে খুব জরুরি না হলে আমি বলতাম না।

—আচ্ছা ঠিক আছে যাও। আর তুমি চাইলে এখুনি যেতে পারো তোমার কাজ তো কমপ্লিট।

—থ্যাংক্স ম্যাম। আমি তাহলে এখুনি যাই।

—ওকে। আর কথা আরেকটা কথা আজ কিন্তু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

কথা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললো,
—অনেক ধন্যবাদ ম্যাম। আমি আসছি।

কথা উলটো দিকে ফিরে যাওয়ার সময় কাব্য দরজা খুলে ভেতরে আসে আর কথাকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। কথাকে কখনোই এভাবে দেখে নি কাব্য। গায়ে হলুদের সাজে দেখেছিলো তাও সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল কথার কান্নার কারণে। আজ যেনো কথার উপর থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে পরেছে কাব্যের।
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_25
#Writer_Fatema_Khan

আশ্রমে থাকা পরিচায়িকা আশ্রমের সামনে একটা চেয়ারে বসে আছে আর তার কোলেই মাথা রেখে বসে আছে কথা। তিনি কথার মাথার বিলি কেটে দিচ্ছেন আর কথা চোখ বন্ধ করে তা উপভোগ করছে।
—কিরে কথা কনক এলো না যে?

—ওর ক্লাস আছে তাই আসতে লেইট হবে আর আমি তো অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি তাই সকাল সকাল চলে এলাম। কেনো বুড়ি আমি তাড়াতাড়ি আসাতে তুমি বুঝি খুশি হওনি

—ভালোই করেছিস তাড়াতাড়ি এসে গেছিস। আর আমি খুশি হব না কেনো রে, কতদিন তোর এই চাঁদ মুখখানার দেখা পেলাম বল

—হয়েছে হয়েছে আর লাগবে না আমি সব বুঝি

—এই কথা শোন না আমার কথা আজ না তোর পছন্দের সব রান্না হয়েছে খাবি আয়

—কনক আসুক তারপর

—কনক আসতে তো দেরি হবে তুই একটু করে খেয়ে নে

—আচ্ছা ঠিক আছে
__________
কনক কলেজ থেকে বেরিয়ে দেখলো নিবির স্যার দাঁড়িয়ে আছে তার গাড়ির কাছে হেলান দিয়ে। তিনি কনককে দেখে সামনে এগিয়ে আসলো
—কথা কোথায় কনক? কয়েকদিন ধরে ওকে কলেজে দেখছি না কোনো সমস্যা নাকি?

—না স্যার ওর আসলে একটা জব হয়েছে সেখানেই ব্যস্ত থাকে।

—সামনে তোমাদের এক্সাম আর এই সময় ও ক্লাসে মনযোগ না দিয়ে জবে ঢুকেছে

—আসলে স্যার আমাদের তো টিউশন করেই চলতে হয় আর এই জবটাতে ভালো স্যালারি পাচ্ছে তাই আর কি। বুঝতেই পারছেন স্যার।

—ইদানীং ওই বখাটে ছেলে দুইটাকেও দেখা যায় না।

—স্যার ওনারা বখাটে না। কথাকে পছন্দ করে আর কি ওই ভাইয়াটা এতটুকুই। আচ্ছা স্যার আমার দেরি হচ্ছে আমি যাই।

—ঠিক আছে যাও।

কথা চলে যায় সেখান থেকে। আর মিলি তাদের সব কথাই শুনছিলো। সে এগিয়ে আসে নিবিরের দিকে।
—কি হলো স্যার, একা একা দাঁড়িয়ে আছেন যে?

—না কিছু না। তুমি বাসায় যাও নি এখনো ক্লাস তো শেষ তোমাদের

—যাচ্ছিলাম তখনই আপনার দিকে চোখ পরলো

—মানে!

—মানে খুব সহজ স্যার, আচ্ছা বাদ দিন আমি আসি তাহলে

—আমি দিয়ে আসব তোমাকে বাসায়? তোমার যদি আপত্তি না থাকে আর কি

মিলি নিজে নিজে ভাবলো,
—আমি তো চাই সারাজীবন আপনার সাথে সাথে চলতে কিন্তু আপনি তো অন্যদিকেই মগ্ন থাকেন।

—কি ভাবছো?

— না স্যার চলুন আমার আবার কিসের সমস্যা থাকবে।

—আচ্ছা তাহলে চলো

নিবির আর মিলি গাড়ির ভেতর বসে আছে। কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। নিবির বলে উঠলো,
—কি হলো তুমি এভাবে চুপ করে আছো কেনো খারাপ লাগছে নাকি তোমার

—না স্যার তেমন কোনো কথা না। আচ্ছা স্যার আমি যদি আপনাকে কিছু বলি আপনি কি আমার উপর রেগে যাবেন বা আমার সাথে আর কখনো কথা বলবেন না।

—তুমি আমাকে কি এমন কথা বলবে যে আমি রাগ করব সেই কথায়, আর তেমন কিছু হলেও তোমার সাথে কথা বন্ধ করব কেনো তুমি আমার স্টুডেন্ট

—স্যার গাড়িটা একটু থামাবেন সাইডে

—কোনো সমস্যা তোমার

—না একটু থামান না স্যার

নিবির গাড়ি সাইড করে। মিলি গাড়ি থেকে নেমে যায় সাথে নিবিরও নামে। একটা খোলা জায়গায় মিলি দাঁড়িয়ে আছে নিবির তার পেছনে। নিবির কিছুই বুঝতে পারে না মিলির হঠাৎ কি এমন হলো তাই সে মিলির কাধে হাত রাখে,
—মিলি

সাথে সাথে মিলি নিবিরের দিকে ফিরে। মিলির চোখে পানি তা দেখে নিবির কিছুটা না অনেকটাই অবাক হলো। মিলি মুহূর্তেই তাকে জড়িয়ে ধরে। নিবির মিলির আচরণে অবাক হয়ে যায়। কিন্তু সে মিলির মাথায় হাত রাখে আর বলে,
—কি হয়েছে মিলি আমাকে বলো?

—স্যার আপনি কেনো বুঝেন না আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি, কেনো বুঝেন না কতটা চাই আমি আপনাকে?

—এসব কি বলছো তুমি, আমি কখনো তোমাকে সেভাবে ভাবি নি। সবসময় নিজের স্টুডেন্টের মতই ভাবি যেভাবে বাকিদের ভেবে আসছি

—কিন্তু আমি যে আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। আপনি যখন কথার আশেপাশে থাকেন আমার কত কষ্ট হয় আপনি যদি একটু বুঝতেন। অবশ্য কখনো আমার দিকে তাকানোর সময় আপনার হয়নি তাই আপনি বুঝতেও পারেন নি।

নিবির মিলিকে কি বলবে বুঝতে পারে না। তাই সেভাবেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আর মিলি তখনও নিবিরকে জড়িয়ে ধরে রাখে।
_________
কনক দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আয়ানের জন্য। আয়ান আসবে বলেছে কিছুক্ষণের ভেতর। বলতে বলতে আয়ান চলে এলো। কনক আয়ানকে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলো।
—কেমন আছেন আপনি?

—আলহামদুল্লিহ ভালো, তুমি?

— আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আপনি রাস্তায় ছিলেন তাই আর কিছুই বলি নি আমার আসলে এক জায়গায় যেতে হবে।

—তুমি না করলেও তোমার সাথে আজ দেখা করাটা আমার জরুরি ছিলো

—কেনো কিছু হয়েছে কি? আসলে আমার একটু তাড়া আছে আজ কথার জন্মদিন বলে কথা বুঝতেই পারছেন।

কথার জন্মদিন শুনে আয়ান আরও অবাক হলো কারণ আজ রিয়ানের বোনেরও জন্মদিন ছিলো। —আচ্ছা আমিও যেতে চাই যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে।

—না না আমার কোনো সমস্যা নেই। আমরা যেই আশ্রমে থাকতাম সেখানেই জন্মদিন পালন করব আপনি গেলে কথা খুব খুশি হবে।

—আচ্ছা তাহলে চলো যাওয়া যাক তার আগে তোমার বান্ধুবির জন্য কিছু গিফট কিনে নেই।

— না তার দরকার নেই কথা আপনাকে দেখলেই খুব খুশি হবে

—তা কি করে হয় জন্মদিনে যাব খালি হাতে গেলে খারাপ দেখায়।

—আচ্ছা তাহলে চলুন।
_________
—স্যার আসলে কথা ম্যাম তো একটা আশ্রমে আছেন। আজ এখানে ওনার জন্মদিন পালন করা হবে।

—কিহ্! আজ কথার জন্মদিন?

—জি স্যার।

—ঠিক আছে তুমি রাখো আর সেখানে তোমাকে আর থাকতে হবে না। চলে আসো।

—ওকে স্যার।

লাইন কেটে কাব্য ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে হাসে।
—আজ কথার জন্মদিন আর আমি সেলিব্রেশন করব না তা কি করে হয়। তোমার জন্য বড় একটা সারপ্রাইজ থাকবে প্রেয়সী।

এটা বলেই কাব্য অফিস থেকে বের হয়ে গেলো।
_________
মিলির বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় নিবির। তারপর তাদের মধ্যে আর কোনো কথা হয়নি। তবে নিবির কয়েকবার মিলির দিকে দেখছিলো কিন্তু মিলি তাকাচ্ছিলো না। তার দৃষ্টি নিচের দিকে ছিলো। সে নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেয়ে বসে আছে। সে ভাবতেও পারে নি আবেগের বশে পরে এমন কিছু করে বসবে। নিবির তার সম্পর্কে এখন কি ভাববে তা নিয়েই সে বড় টেনশনে আছে।
—মিলি তোমার বাসা এসে গেছে

মিলি উপরে তাকিয়ে দেখে নিবির তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয় আর বাইরে তাকিয়ে দেখে সত্যি সে বাসার নিচে। গাড়ি থেকে নেমে মিলি বললো,
—আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার

—না ঠিক আছে তুমি বাসায় যাও আর হ্যাঁ সামনে তো এক্সাম তাই অন্যদিকে মন না দিয়ে পড়ার দিকে মন দেও। মানে আমি কি বলতে চাইছি তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো।

মিলি আরেকদফা লজ্জা পেলো নিবিরের কথায়। নিবির যে একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্যই এই কথা বলেছে তা সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
—স্যার আমি খেয়াল রাখব।

সেখানে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে মিলি দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো। মিলির ছুটে যাওয়া দেখে নিবির হেসে দেয় আর তার করা আচরণের কথা ভাবে আর বলে,
—মেয়েটা একদম বাচ্চাদের মত কাদছিলো আজ। কিন্তু আমি কখনো ভাবতেই পারি নি মিলির মত চুপচাপ একটা মেয়ে যে কিনা সারাক্ষণ বই নিয়ে পরে থাকে সে আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু কান্না বন্ধ হওয়ার পর যে লজ্জায় বেচারির মুখটা কেমন হয়েছে তা দেখার মত।

নিবির নিজে নিজেই মিলির ব্যবহারে হালকা হেসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
_________
আয়ানের বাইক এসে থামলো আশ্রমের সামনে। আয়ান বারবার ভাবছিলো যেনো সে তার কাঙ্খিত ব্যক্তিটিকেই দেখতে পায়। আয়ান আর কনক ভেতরে যাচ্ছে কিছুটা দূরেই একটা মেয়ে কিছু বাচ্চাদের সাথে ছুটাছুটি করছে। কনক বললো,
—ওই যে কথা বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে। ওইদিকেই চলুন

— হুম চলো।

কথা ছুটাছুটি করছিলো ঠিক তখন আয়ান তাকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। আয়ানের সামনে রিয়ানের বোন কথা দাঁড়িয়ে আছে। আয়ানের একটুও চিনতে ভুল হয়নি এটাই তাদের কথা। কনক আয়ানকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বুঝালো কি হয়েছে থেমে গেলো কেনো? আয়ান মাথা নেড়ে বুঝানো কিছুই না। তারা আবার কথার দিকে এগুতে লাগলো। তারা যখন কথার খুব কাছাকাছি আয়ান বলে,
—কথা।

কথা নিজের নাম কোনো এক পরিচিত কন্ঠে শুনে পেছনে তাকালো৷ আর তাকিয়ে দেখলো তার সামনে আয়ান দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here