উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -৩২+৩৩

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_32
#Writer_Fatema_Khan

অনেকক্ষণ যাবত এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে কাব্য। আজ বিদেশ থেকে রায়হান খান আসবে। কাল কাব্যের বিয়ে আর আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ তাই আজকেই দেশে ফিরতে হলো। কিছুক্ষণ পর কাব্য তার রায়হান খানকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে যায়। বাবার কাছে গিয়েই কাব্য তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। তার বাবাও তাকে পরম যত্নে বুকে টেনে নিলো।
—কাব্য আজ আমি অনেক খুশি তুই নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ও মূল্যবান সময়ে পা দিতে যাচ্ছিস।

—তোমরা খুশি তো আমার এই সিদ্ধান্তে, আর মায়ের কাছে নিশ্চই কথার ব্যাপারে শুনেছো। তুমি ওকে সামনে দেখলে তোমার আরও ভালো লাগবে।

—ওর নাম কথা তাই না?

— হ্যাঁ বাবা ওর নাম কথা। সে আমার কাব্যকথা।

কাব্যের মাথায় হাত দিয়ে তার বাবা বললেন
—সুখি হ কথাকে নিয়ে। কোনো কিছুই যেনো বাধা হতে না পারে তোদের মাঝে।

—আমার সবটুকু দিয়ে কথাকে সুখি রাখার চেষ্টা করব আমি। খুব ভালোবাসি তাকে কখনো কষ্ট পেতে দিব না আমি।

—আচ্ছা এবার যাওয়া যাক। সন্ধ্যায় তোর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান আছে তাই না।

— হুম বাবা।

—তাহলে দেরি কেনো তাড়াতাড়ি চল। তোর মা আবার অপেক্ষা করছে।

—ঠিক তাড়াতাড়ি চলো, মা বলেছিলো তুমি আসলেই যেনো বাসায় চলে যাই।

তারপর কাব্য আর তার বাবা গাড়িতে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে চলে যায়।
________
গায়ে হলুদের সাজে সজ্জিত হয়ে বসে আছে কথা৷ পাঁচ বছর আগে কথার গায়ে হলুদের রাতেই কথার জীবন পালটে যায়। চোখ বন্ধ করলেই ওই রাতে বিহানের করা বেঈমানীর চিত্র ভেসে উঠছে। আর সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে কাব্যের বাবা রায়হান খান যাকে কিনা অনেক আগে থেকেই কথা চিনে কিন্তু কোথায় দেখেছে তা মনে করতে পারছে না৷ চোখ জোড়া খুলে আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে কথা। পার্লারের মেয়েরা এসে সাজিয়ে দিয়ে গেছে তাকে। কাচা হলুদের উপরে সাদা স্টোনের কাজ করা। কানে, গলায়, হাতে, মাথায় সব ফুলের গয়না দিয়ে সাজানো। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে কথা পেছনে ফিরে তাকালো। কনক, শিলা আর রোজা তৈরি হয়ে আছে। শিলা বললো,
—কিরে তোর হয়েছে? আমরা তোকে নিচে নিয়ে যেতে এলাম।

— হুম হয়ে গেছে তো সেই কখন আমি রুমে বসেই ছিলাম।

—আচ্ছা তাহলে চল নিচে সবাই অনুষ্ঠান শুরু করার জন্য অপেক্ষা করছে।

—ঠিক আছে চল।

যাওয়ার পথে কথার মোবাইল বেজে ওঠে। সবাই পেছনে তাকায়। ড্রেসিং টেবিলের উপর পরে থাকা মোবাইলের উপর কাব্য নামটা দেখে শিলা, কনক আর রোজা হেসে দেয়। কনক বলে,
—কথা তুই জিজুর সাথে আগে কথা বল আমরা বাইরে দাড়াই। বেচারা জিজু তো তোকে দেখার জন্য বেকুল হয়ে আছে। সেটা তো কালকে ছাড়া সম্ভব না তাই তুই কথাই বলে নে।

রোজা বললো,
—আপু তোমাকে কাব্য জিজু কি বলে? অবশ্যই রোমান্টিক কিছু তাই না? ইস কি সুন্দর তোমাদের সম্পর্ক।

শিলা বললো,
—কিরে তোরও লাগবে নাকি, তাহলে আয়ান ভাইয়ার সাথে কথা বলি যে তার বোন বড় হয়ে গেছে।

—এই না না শিলা আপু আমিতো মজা করেই বলছিলাম।

কনক দুইজনকে থামিয়ে বলে,
—এই তোমরা দুইজনেই থামো আর কথাকে কাব্য জিজুর কল রিসিভ করতে দাও। দুইবার কল কেটে আবার বাজতে শুরু করলো। পরে জিজু রেগে গেলে। আর এই পাকা রোজার ব্যাপারটা আমি দেখছি। আর কথা তোর কথা শেষ হলে আমাদের ডেকে দিস আমরা তোকে নিচে নিয়ে যাব।

তারপর তারা রুম থেকে বের হয়ে বাইরে দাড়ালো আর দরজা চাপিয়ে দিলো৷ কথা কল রিসিভ করলো
—উফ তুমি কই থাকো, আর যেখানেই থাকো মোবাইলটা তো নিজের কাছেই রাখতে পারো নাকি

—আসলে সবাই সামনে ছিলো তাই রিসিভ করতে পারি নি।

—আচ্ছা ঠিক আছে। এখন একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছি।

—কি কথা?

—তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। একটু যদি তোমাকে দেখতে পারতাম তাহলে ভালো লাগতো। আসলে আমাকে সবাই হলুদ পরাবে বলে নিতে এসেছে তাই যাওয়ার আগে তোমার সাথে কথা বলে নিলাম আর কি।

— হুম বুঝলাম। তাহলে এবার যান সবাই অপেক্ষা করছে।

—আচ্ছা যাচ্ছি। শোনো আরেকটা কথা

—কি?

—আই লাভ ইউ কথা। খুব খুব খুব ভালোবাসি তোমায়। তোমাকে বলতে হবে না এখন। যখন তোমার মনে হবে তুমি আমাকে ভালোবাসো সেদিন নিজে থেকেই বলবে। ততদিন আমি অপেক্ষায় থাকবো। এখন রাখছি আমি। বাই

তারপর কাব্য নিজেই কল কেটে দিলো। কথা কান থেকে মোবাইল নামিয়ে হাসলো আর বললো,
—পাগল একটা

—ওহ হো পাগল একটা

কথা এভাবে তার কথার রিপিট শুনে চমকে গেলো। দেখে কনক, রোজা আর শিলা দরজায় কান পেতে তাদের কথা শুনছিলো। কথা শেষ হতেই তারা ভেতরে চলে আসে।
—এভাবে কান পেতে কথা শোনার মানে কি?

—ও কিছু না। এখন চল নিচে।

কথা কে নিয়ে তারা তিনজনেই নিচে চলে গেলো। সেখানে নিয়ে কথাকে সোফায় বসিয়ে দিলো। অনেক বয়স্ক লোকেরা এখানে উপস্থিত। সবাই কথাকে দোয়া করছে। বাচ্চারা আর বাকিরা বাইরে গায়ে হলুদের স্টেজের কাছে এখনো বিভিন্ন কাজ করছে। কিছুক্ষণ পরেই বরপক্ষের ছেলে মেয়েরা রওয়ানা দিবে কথাকে হলুদ দেওয়ার জন্য।
________
স্টেজের উপর কাব্য বসে আছে। হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরে আছে আজ৷ প্রথম কাব্যের মা আর বাবা তাকে হলুদ লাগিয়ে দেয়। তারপর একে একে সব আত্মীয় স্বজনরা কাব্যকে হলুদ লাগায়। তারপর তূর্য, অয়ন আর আরাফ এসে হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে তার পুরো মুখে হলুদ মেখে দেয়। কাব্যের হলুদ শেষ হলেই সবাই কথার বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়। ঢাকা থেকে ২ ঘন্টার রাস্তা তাই কারো তেমন একটা অসুবিধা হবে না তাই সবাই বাসে বা ট্রেনে করে না গিয়ে নিজেদের গাড়ি নিয়ে গেলো।
________
কথার হলুদ শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই৷ হলুদে কথাদের আত্মীয় স্বজনরা নাচ গানে মেতে উঠেছে। বাচ্চারা যার যার মত আনন্দ করছে। কনক, রোজা আর শিলাও একসাথে নাচলো। আয়ান যেনো কনকের থেকে চোখ সরাচ্ছে না আজ এতটা সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। কথাকেও মাঝে মাঝে টেনে নিয়ে আসলো তারা নাচার জন্য। কথা একটু একটু জয়েন হত তাদের সাথে তারপর আবার বসে যেতো। বরপক্ষের যারা গায়ে হলুদে আসবে বলেছে তারা সবাই এসে গেছে। তাদের মধ্যে তূর্য, অয়ন, আরাফ, মিলি ছাড়াও কাব্যের আরও কাজিন এসেছে। অয়ন সবসময় মিলির আশেপাশেই থাকছে যা মিলিকে খুবই অসস্তিতে ফেলছে। তূর্য যেখানে গায়ে হলুদ সেখানে ঢুকার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলো। সে ঢুকেই দেখে সবুজ রঙের শাড়ি পরে স্টেজের সামনে রোজা খুব সুন্দর করে নাচছে। তূর্য সেখানে দাঁড়িয়েই রোজার নাচ দেখছিলো। রোজার নাচ শেষ হলে রোজা সামনে তাকিয়ে দেখে তূর্য তার দিকেই এক নজরে তাকিয়ে আছে। এভাবে তূর্য রোজার দিকে তাকিয়ে থাকাতে রোজা লজ্জা পেয়ে গেলো তাই তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে সরে গেলো। তূর্য রোজার পেছনে যেতে নিলে আরাফ তাকে আটকে দেয়,
—কিরে তূর্য আমরা সবাই এদিকে তুই ওইদিকে কই যাচ্ছিলি?

—আমাকে আটকানো খুব দরকার ছিলো, কাব্যের তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এবার আমি যতদিন না করি তোরা তো করবি না তাহলে এটা তো আমার দেখার বিষয় তাই না। তোদের বিয়ের জন্য হলেও আমার একটা মেয়ে খুজতে হবে নিজের জন্য।

—শালা মিথ্যাবাদী কোন মেয়েকে দেখেছিস বল?

—আরে আছে একজন ঢাকায় দেখা হয়েছিলো এখন দেখি এখানেও আছে৷ মানে কথার আত্মীয় হয়। এখন তোদের জন্য কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।

—আচ্ছা ওইদিকে চল ওইখানে কথার বন্ধুবি কনককে দেখা যাচ্ছে।

—চল।

সেখানে গিয়ে তারা দেখে আয়ান, শিলা, কনক, রিয়ান আর রোজা দাঁড়িয়ে আছে। তূর্য রোজাকে দেখে একটা হাসি দিলো। রোজাও হেসে নিচে তাকিয়ে রইলো। শিলা বললো,
—কিরে রোজা এতক্ষণ তো তোর কথাই বন্ধ করা যাচ্ছিলো না আর এখন এভাবে চুপ কেনো? আর সন্ধ্যায় বলছিলি না রোমান্টিক কথার ব্যাপারে তো এখন দেখ কাব্য জিজুর কত বন্ধু এসেছে কাউকে পছন্দ হলো কিনা দেখ?

শিলার কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করলো। রোজা এতে খুব লজ্জা পেলো। তূর্য তখনও রোজার দিকেই তাকিয়ে আছে। রোজা মনে মনে ভাবছে,
—এদের সামনে কেনো যে কিছু বলতে যাই, মান সম্মান যা ছিলো সব গেলো আজ সবার সামনে।

—কিরে কি ভাবছিস কিছু বল?.

—আমি একটু আসছি ওইদিকে আমাকে ডাকছিলো।

বলেই রোজা ছুটে চলে গেলো সেখান থেকে। মিলি বললো,
—আরে রোজা দাড়াও। এই মেয়ের কি হলো? লজ্জা পেয়েছে হয়তো।

কনক বললো,
— হুম সেটাই হবে

তূর্য আয়ানকে বললো,
—আচ্ছা আয়ান আপনি এখানে?

—কথার ভাই আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড। আর কথা নিজের ছোট বোনের মত। আমার কাছে রোজা যেমন কথাও তেমন।

—ওহ বুঝলাম, শুনে খুব ভালো লাগলো।

—আমি একটু আসছি ওইদিকে দেখে আসি

তূর্য সেখান থেকে চলে আসলো রোজাকে খুজতে। আর বাকিরা আড্ডায় মেতে উঠলো।
_________
কথার অনেকক্ষণ যাবত স্টেজে বসে থাকায় আর এত নাচ গানের মাঝে মাথা ব্যাথা করছে তাই কথার মাকে বলে সে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকে দেখে পুরো রুম অন্ধকার। ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালে কেউ তার হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_33
#Writer_Fatema_Khan

দুই ইঞ্চিরও কম দূরত্ব দুইজনের। দুইজন এতটাই কাছাকাছি যে একজনের শ্বাস আরেকজনের উপর পরছে। কথা নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু সামনে থাকা মানুষটা পুরুষ হওয়ার দরুন কথা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। কথা নিজের শক্তি আর ব্যয় না করে বললো,
—হাত ছাড়ুন কাব্য আমি ব্যাথা পাচ্ছি তো।

—এই মেয়ে তুমি আমাকে কি করে চিনলে যে আমি কাব্য!

— এতে না চেনার কি আছে, আমার রুমে ঢুকে আমাকে এত রাতে এভাবে দেয়ালের সাথে অন্য কেউ চেপে ধরলে সে এখান থেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরতে পারবে না। তাই এই দুঃসাহস শুধুমাত্র আপনিই দেখাতে পারেন। আর এমনিতেও আমি আপনাকে চিনতে পারি

—বাহ্! এতটা কবে থেকে চেনো আমাকে?

—এখন বলুন এত রাতে এখানে আসার মানে কি?

—ফোনে তো বললাম তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো তাই সবার সাথে চলে এলাম

—আপনিও পারেন। কিন্তু আমার রুমে কি করে এলেন আর এটাই যে আমার তা কি করে বুঝলেন?

—আমার ওয়ান এন্ড অনলি শালি কনক আছে কি করতে, আর সাথে আছে রোজা এবং আমার একমাত্র শালার বউ শিলা। ওরাও সাহায্য করেছে আমাকে এই ব্যাপারে।

—ইস সবাই আপনার সাথে থেকে থেকে আপনার মতোই দুষ্ট হয়ে গেছে।

—আমার দুষ্টুমির এখনো কিছুই দেখো নি তুমি।

— আরও কিছু দেখার বাকি আছে নাকি?

—একবার বিয়েটা হোক তারপর তুমি বুঝবে আমি কত দুষ্টুমি করতে পারি।

কথা আর কিছুই বললো না। চোখ নিচের দিকে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য এখনো কথাকে দেয়ালের সাথে চেপে রেখেছে। কাব্য হাত দুটি ছেড়ে দেয় আর এক হাত দেয়ালের উপর ভর করে দাঁড়ায়। কথা চুপ করে থাকে কাব্যের দিকে না তাকিয়ে। হঠাৎ কথা নিজের কোমরের উন্মুক্ত জায়গায় ঠান্ডা কিছু অনুভব করে। কথা কাব্যের দিকে তাকায় সে দেখে কাব্য হাসছে। কাব্য বলে,
—সবাই আমার বউকে হলুদ পরাবে আর আমি পরাব না এটা কি করে হতে পারে?

কোমর থেকে হাত সরিয়ে কাব্য হলুদের বাটি থেকে বেশি করে হলুদ নিয়ে কথার দুই গালে মাখিয়ে দেয়। তারপর কাব্য কথার অনেকটা কাছে গিয়ে কথার গালের সাথে নিজের গাল ঘষে হলুদ লাগিয়ে নেয়। কথা চোখ বন্ধ করে নেয় আর খুব অবাক হয়ে যায় এবং অনেক লজ্জায় পরে যায় কাব্যের এভাবে কাছে আসাতে। যেনো পুরো শরীরে এক অদ্ভুত অনুভূতির শিহরণ বয়ে যায়। কাব্য এবার কথা থেকে দূরে সরে দাঁড়ায় আর বলে,
—এই দেখো আমিও তোমাকে হলুদ দিলাম আর তুমিও আমাকে হলুদ দিলে এখন সম্পূর্ণ হলো আমাদের গায়ে হলুদ।

কথার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না, কি বলবে কাব্যকে সে? লজ্জায় কাব্যের চোখের দিকে তাকানো সম্ভব হচ্ছে না তার। তার মন চাইছে এক ছুটে কাব্যের সামনে থেকে কোথাও লুকিয়ে যেতে। কথার এমন লজ্জায় রাঙা মুখ যেনো কাব্যের কাছে মনে হচ্ছে এক সর্গীয় সৌন্দর্য এসে ভর করেছে কথার মুখে। যা এই মুহূর্তে কাব্যকে চূর্ণ বিচূর্ণ করতে সক্ষম। কথার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে কাব্য বলে,
—কথা তোমার রুমের ওয়াশরুমটা কোথায়? এভাবে বাইরে গেলে সবাই খুব পচাবে তাই এগুলো ধুয়ে যেতে হবে।

—এই যে এইদিকে আসুন।

কাব্য নিজের ফোন টা খাটের উপর রেখে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যায়। ওয়াশরুমের দরজা আটকে কাব্য হাত মুখ পরিষ্কার করতে থাকে। সত্যিই এভাবে বাইরে গেলে কাব্যের সব বন্ধুরা আর কাজিনরা ওকে খুব পচাবে। তাই এসব পরিষ্কার করা খুব জরুরি। কথা রুমের লাইট অন করে দেয়। তারপর একটা টিস্যু নিয়ে নিজের মুখের হলুদ মুছতে মুছতে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। রুমের লাইট অন করে দেওয়ায় নিজের কোমরের কাছের হলুদের দিকে চোখ পরে তার। তাড়াতাড়ি শাড়ি দিতে ওই জায়গা ঢেকে নেয় সে। মোবাইলের রিং টোনে তার নজর খাটের উপর পরে। মোবাইলের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে তূর্য লেখা আছে কথা মোবাইলটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতে যাবে তার আগেই কল টা কেটে গেলো। কথা খাটের উপর মোবাইলটা রেখে দিবে সেই সময় আবার কল আসে। কথা আবার স্ক্রিনের উপরের নামটা দেখে। স্ক্রিনের সেখানে বাবা নাম লেখা তবে নামের সাথে একটা ছবিও যুক্ত করা। ছবি দেখে কথার হাত থেকে মোবাইল পরে গেলো খাটের উপর। কথার চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করলো। কাব্য ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা খুললে কথা নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
—কি হলো কি করছো তুমি?

কথা কাব্যের দিকে ফিরে তাকায়। আর বলে,
—কই কিছুই না। আপনার কল এসেছে দুইটা

—আমার কল! নিশ্চই তূর্যরা দিয়েছে।

— হুম তূর্য ভাইয়া দিয়েছে সাথে আরেকটি নাম্বার থেকেও কল এসেছে।

—কে?

—আপনার বাবা

—ওহ আচ্ছা বাবা কল দিয়েছে। বাবা আজকেই দেশে ফিরে এসেছে। আমাকে বাবা খুব ভালোবাসে আর দেখো তোমাকেও নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসবে। আর মায়ের কথা নাই বা বলি তাকে তো তুমি দেখেছোই।

—স্ক্রিনে যার ছবি ছিলো সেটা কি আপনার বাবার ছবি?

— হ্যাঁ। তবে এটা আমি দেশের বাইরে যাওয়ার আগের ছবি। এখন বাবা দাড়ি রেখে দিয়েছেন। তাই অনেকটাই অন্যরকম লাগে দেখতে।

কথা আর কিছুই বললো না। খাটের উপর বসে পরলো। কথার হঠাৎ কি হলো কাব্য তাই বুঝতে পারছে না। কেমন যেনো অস্থির দেখাচ্ছে। কাব্য এক গ্লাস পানি নিয়ে কথার পাশে বসলো তারপর নিজেই কথার মুখের কাছে গ্লাস ধরলো। কথা পুরো পানিটা খেয়ে নিলো। এই শীতের মাঝেও কথা ঘামাচ্ছে। কাব্য পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছে দিলো। কাব্য কথাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
— তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে, হঠাৎ করে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?

—আমার কিছু ভালো লাগছে না কাব্য। আচ্ছা কাব্য আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন তো?

—নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। আমার মনে হয় তোমার ঘুমানো দরকার। এক কাজ করি আমি এখন যাই তুমি বরং ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরো। আজ সারাদিন কম ধকল যায়নি বলো। কালও তো আরও ধকল যাবে তোমার উপর।

—ঠিক আছে।

—তবে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ফ্রেশ হয়ে এসব কাপড় চেঞ্জ করে ঘুমাবে। তাহলে ভালো ঘুম হবে।

— আচ্ছা।

কাব্য উঠে দাড়ালো নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে পকেটে রাখে সে। তারপর কথাকে দাড় করিয়ে দুই গালে হাত রেখে কপালে একটা চুমু দেয়। চুলগুলো চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে,
—আমি আসছি ঠিক আছে। কাল আবার আসবো সাথে করে তোমাকে নিয়ে যেতে। ততক্ষণ আমাকে ছাড়াই থাকো। আরেকটা রাত তুমি হীনা থাকতে হবে আমাকে। এই কষ্ট তোমাকে আমি কখনোই বুঝাতে পারব না। এতদিনের অপেক্ষার থেকেও যেনো আজ রাতের অপেক্ষা বেশি মনে হচ্ছে আমার।

—সাবধানে যাবেন আর আপনি না আসা অবদি আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব কাল।

কাব্য যেনো এই কথা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। কথাকে জড়িয়ে ধরে কাব্য তারপর আবার কপালে অধর ছুইয়ে দেয় আর বারান্দা দিয়ে দেয়াল টপকে নিচে নেমে যায়। কথা কাব্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কাব্য গাড়ির কাছে এসে কথাকে হাত নেড়ে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত গাড়ি চোখের আড়াল না হয় কথা সেদিকেই তাকিয়ে থাকে।
________
কনে সাজে রুমের মধ্যে বসে আছে কথা। কনক আর রোজা কিছুক্ষণ পর পর রুমে আসছে আর বের হচ্ছে। শিলা কথার পাশেই বসে নিজের সাজ আয়নায় পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত। কথার মুখ কাল হাসি মাখা থাকলেও আজ সেখানে আধার নেমে এসেছে। সবাই ভাবছে কথার বিয়ে হয়ে যাবে তাই হয়তো মন খারাপ কিন্তু কথাই জানে তার মনে এখন চলছে। কিছুক্ষণ পর নিচে থেকে আওয়াজ আসছে বর এসেছে বর এসেছে। বর এসেছে শুনে শিলাসহ যারা কথার রুমে আছে সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সবাই রুম থেকে যাওয়ার পর কথা উঠে দরজা ভেতর থেকে আটকে দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here