উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -৩০+৩১

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_30
#Writer_Fatema_Khan

তূর্য একটা চেয়ারে বসে আছে আর পাশের চেয়ারটায় রোজা বসে কান্না করছে। তূর্য রোজাকে টিস্যু দিচ্ছে চোখের পানি মোছার জন্য। আর এদিকে রোজা তার ভাইকে না পেয়ে ভয়ে কান্না করা থামাচ্ছেই না।
—প্লিজ আপনি কাদবেন না আর আপনি এখানে কি করে এলেন এটাও তো বলছেন না।

—আপনি কে, আর এইখানে আপনি কেনো?

—মানে! এটা আমার অফিস আমি থাকব না তো কে থাকবে

—তাহলে ওই লোকটা কেনো বললো এখানে আমার ভাইয়া থাকবে

—কোন লোকটা?

দরজায় হঠাৎ নক করার শব্দে তূর্য আর রোজা দরজার দিকে তাকালো। তূর্য চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। আর বাইরে থাকা লোকটাকে ভেতরে আসতে বললো। লোকটা ভেতরে আসার পর রোজা দেখলো এটা ওই লোকটা যে তাকে বলেছিলো এটা আয়ানের রুম। রোজা বসা থেকে উঠে বললো,
—এই যে শুনুন এই চাচা টাই আমাকে বলেছিলো যে এটা আমার ভাইয়ার রুম।

—কি, রহমান সাহেব আপনি বলেছেন এটা ওনার ভাইয়ার রুম?

—আসলে আমার একটু ভুল হয়ে গেছে আর কি। ও আমাদের আয়ান স্যারের বোন। আমি ওকে বলেছিলাম যে লিফট থেকে নেমে অফিসের ভেতরে সোজা রুমটাই আয়ান স্যারের কিন্তু এটা বলতে ভুলে গেছি যে বা পাশের টা আয়ান স্যার আর ডান পাশের টা আপনার।

—আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার। আপনি এক কাজ করুন আয়ানের রুমে ওনাকে নিয়ে আয়ানের রুমে নিয়ে যান। উনি ওনার আয়ান ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছিল আমার জন্য কান্নাকাটি করে তার অর্ধেক মাটি হয়ে গেলো।

—আচ্ছা স্যার। রোজা আসো আমার সাথে আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমার ভাইয়ার কাছে।

—জি চলুন।

রহমান সাহেব রুম থেকে আগে বের হয়ে গেলেন। তার পেছনে রোজা যাচ্ছিলো তখন তূর্য রোজাকে বললো,
—আপনি তাহলে রোজা। খুব সুন্দর নাম।

রোজা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। তূর্য রোজার অনেকটা কাছে গিয়ে দাড়ালো। রোজা ভয়ে মাথা নিচু করে আছে। তূর্য রোজার থুতনিতে ধরে মাথা তার মুখোমুখি রাখলো। তারপর টেবিল থেকে একটা টিস্যু নিয়ে রোজার চোখের পানি মুছে দিলো। রোজার চোখ দুটি বন্ধ তূর্য রোজার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুসময়। কান্না করে চোখ দুটো ফুলে গেছে কিছুটা। চোখের পাপড়িগুলো ভেজা এখনো। বাসন্তী রঙের চুড়িদার পরা সাথে ম্যাচিং ছোট একজোড়া পাথরের দুল। এক পাশে সিথি করা খোলা চুল যা থেকে খুব সুন্দর সুগন্ধি আসছে, তূর্য নিজের মুখটা রোজার চুলের কিছুটা কাছে নিয়ে তার সুঘ্রাণ নিলো। তারপর তূর্য রোজাকে বললো,
—চোখের পানি নিয়ে আপনার ভাইয়ার সামনে গেলে ভাবতো আমি আপনাকে বকেছি তাই মুছে দিলাম৷ আর আমার নাম তূর্য।

রোজা চোখ খুললে দুজনের মুখ খুব কাছাকাছি ছিলো আর দুজনের চোখে চোখ পরে যায়। তূর্যকে নিজের এতটা কাছাকাছি দেখে রোজা সরে দাঁড়ায়।
—আমি আসছি রহমান চাচা হয়তো বাইরে অপেক্ষা করছে।

তূর্য দুই পকেটে দুই হাত রেখে মুচকি হাসে আর বলে,
— হুম আপনার এখন যাওয়া দরকার।

রোজা তূর্যের দিকে একবার তাকিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যায়। আর তূর্য দরজার দিকেই তাকিয়ে থাকে আর হালকা হেসে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে আর কাজে মনোযোগ দেয়।
এদিকে আয়ান বসে বসে কাজ করছিলো সেই সময় কেউ তার রুমে প্রবেশ করে তাও কোনোরকম নক করা ছাড়া এটা সে ভালো করেই বুঝতে পারে। কে এসেছে তা দেখার জন্য আয়ান কাজ বন্ধ করে উপরের দিকে তাকায়। আর সামনে রোজাকে দেখে সে পুরাই অবাক।
—রোজা তুই এখানে কিভাবে আর আমার অফিসেই বা কি করে এলি?

—উফ ভাইয়া কত প্রশ্ন করো তুমি আগে একটু বসতে দাও।

—আচ্ছা আগে বস।

রহমান সাহেব বললো,
—স্যার আপনারা কথা বলুন আমি আসছি তাহলে।

—ঠিক আছে আপনি যান।

রোজা খাবারের ব্যাগ টা টেবিলের উপর রেখে একটা চেয়ারে বসে পরলো৷ তারপর বললো,
—বাহ্! তোমার অফিসটা তো ভারি সুন্দর।

— হুম তোর পছন্দ হয়েছে আমার অফিস তাহলেই হলো। কি খাবি বল?

—তোমার সাথে দুপুরের খাবার খাব। এই দেখো মা কি রান্না করেছে আজ সব তোমার পছন্দের খাবার। আমরা দুইজনে একসাথে খাব বলে নিয়ে এসেছিলাম।

—তাহলে দেরি কেনো আমি হাত ধুয়ে আসি তুই সার্ভ কর।

—ঠিক আছে।

তারপর আয়ান আর রোজা একসাথে তাদের দুপুরের খাবার শেষ করলো। তারপর রোজা সবকিছু গুছিয়ে আয়ানকে বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেলো। লিফটের কাছে গিয়েই আবার তূর্যের সামনাসামনি হতে হলো তাকে। তূর্য রোজাকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলো৷ রোজাও দাঁড়িয়ে আছে। তারপর বললো,
—দুঃখিত তখন এভাবে কান্নাকাটি করার জন্য। আসলে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম ভাইয়ার যায়গায় আপনাকে দেখে।

—আমি নিজেই খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। প্রথমে আপনাকে আমার রুমে দেখে তারপর আপনি এভাবে কান্না করে দেওয়াতে। বুঝতেই পারছিলাম না আপনি কোত্থেকে এলেন আর আমাকে দেখে কান্না কিরছিলেন কেনো? যাক কেমন কাটলো ভাইয়ার সাথে সময় কাটিয়ে?

—জি, ভাইয়ার পছন্দের সব খাবার তৈরি করেছিলো মা। আর ভাইয়া তো দুপুরে থাকে না তাই ভাবলাম আমিই অফিসে এসে ভাইয়াকে সারপ্রাইজ করে দিব।

—আচ্ছা আপনার নাম তো রোজা তাই না?

—জি আমি রোজা।

—আমি তূর্য।

—আজ তাহলে আসি আমি

—ঠিক আছে। আবার পরে দেখা হবে আপনার সাথে।

রোজা লিফটের ভেতরে ঢুকে গেলো। তূর্যের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানায় আর তূর্যও হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো।
__________
২দিন পর,
কথা নিজের বাড়িতে এসেছে আজ দুইদিন হলো। পরশুদিন সকালে রিয়ান ঢাকায় যায় আর বিকালের দিকে কথাকে নিয়ে বাড়িতে আসে। কথাদের বাড়িতে যেনো এই দুইদিন উৎসব চলছে। বাড়ির প্রতিটি কোণা থেকে যেনো সবার হাসির খিলখিল শব্দ শুনা যাচ্ছে। কথাও মজে আছে সবার সাথে। কনকের সাথে কথা হয়েছে সকালে। তারপর মোবাইল চার্জে দিয়ে রেখেছে উপরে নিজের রুমে। আর সে নিচে সবার সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। এদিকে কাব্যের সাথে কাল দুপুরের পর আর কথা হয়নি। সবার সাথে থাকার কারণে কাব্যকে কল করতে পারছে না। এদিকে কাব্য অনবরত কল করেই যাচ্ছে। কাল থেকে একবারও কল রিসিভ করছে না। কাব্য রেগে মোবাইলটা খাটের উপর ছুরে মারে। দরজা খোলা থাকায় কাব্যের মা যাওয়ার পথে কাব্যকে রেগে মোবাইল খাটের উপর ছুরে ফেলতে দেখে নেয়। তাই তিনি রুমের ভেতর ঢুকে যায় কাব্যের কি হয়েছে জানার জন্য।
—কাব্য হঠাৎ কি হলো তোর এভাবে রেগে আছিস কেনো?

—মা কথা বাড়িতে গেছে দুই দিন হলো আর কাল দুপুরের পর সে আমাকে একবারের জন্যও কল দেয় নি। আর আমি যে এত্তগুলা কল দিলাম একটা কলও রিসিভ করে নি। না আমার মেসেজগুলো সিন করেছে।

—মাথা ঠান্ডা কর ও বাড়িতে গেছে একটু ব্যস্ত থাকতেই পারে তাই না বাবা। ফ্রি হলে তোকে কল করে নিবে। এখন একটু রেস্ট নে তুই।

—মা বাবা কবে আসবে দেশে?

—তোর বাবার আর কিছুদিন লেইট হবে।

—বাবার সাথে কথার ব্যাপারে তুমি আলাপ করেছিলে, আমি তো তোমাকে সব খুলেই বললাম কথার ব্যাপারে। আর আমরা বিয়ে করতে চাই।

—তোর বাবাকে আমি বলেছি। তোর বাবার কোনো আপত্তি নেই তবে কথার ফেমিলি কি বলে আগে তা জানতে বলছে।

—ওহ তাহলে তো ভালোই। আর কথা তো বললোই সে বাড়িতে গিয়েই সবার সাথে কথা বলবে আমাদের নিয়ে।

—কি বলে আমাকে জানাবি কিন্তু। খুব তাড়াতাড়ি আমি আমার ছেলের বউকে ঘরে নিয়ে আসতে চাই।

—কথা আর তোমরা সাথে থাকলেই হলো। কিন্তু আমার কেনো যেনো খুব ভয় হচ্ছে। জানিনা কি কারণে তবুও খুব ভয় করছে। মনে হচ্ছে সব পেয়েও আমি সব হারিয়ে ফেলব।

—কিছুই হবে না। একবার যখন কথা রাজি হয়েছে সব ঠিক হবে আর আমার ছেলের জীবনে রাণী হয়ে আসবে। আচ্ছা আমি যাই আমার একটু কাজ আছে অফিসে তুই তো কাজ টাজ ফেলেই বাসায় চলে আসলি এক কথা নেই বলে তাই আমাকেই যেতে হবে।

—ওহ, আমার কি যেতে হবে তোমার সাথে?

—না তুই থাক বাসায় আমি যাই। আর তুই গেলেও আমার যেতে হবে তাই তুই বরং বাড়িতেই থাক।

—ঠিক আছে মা তুমি যাও।
_________
বসার ঘরে সবাই বসে আছে। সবাই কথার দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে কি বলার জন্য সবাইকে ডেকে আনলো। কথার বাবা বললো,
—কি বলবি মা তুই বল?

—বাবা আমি একজনকে বিয়ে করতে চাই আর সে আমাকে খুব ভালোবাসে।

—এটা বলার জন্য কি তুই সবাইকে এখানে ডেকেছিস?

—জি বাবা। যে ভুল আমি পাঁচ বছর আগে করেছি সেই ভুল আমি আবার করতে চাই না। তোমাদের সবার দোয়া নিয়েই জীবনে এগিয়ে যেতে চাই।

—তোমার একার ভুল না আমাদেরও অনেক ভুল ছিলো। আর আমরা এবার সবাই তোমার সাথে আছি। আর তুমি যাকে পছন্দ করো তার সাথেই তোমার বিয়ে সেখানেই হবে।

কথার বিয়ে হবে এই কথায় সবার খুশি যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেলো। সবাই কথার খুশিতেই খুব আনন্দিত। কথার মা কথার মাথায় চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কথা তার মায়ের চোখের পানি মুছে সেও জড়িয়ে ধরলো।
রাতের খাবার খেয়ে কথা নিজের রুমে গেলো। সকালের পর আর রুমে আসা হয়নি। রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে তাতে কাব্যের এতগুলা মিসডকল আর মেসেজ দেখলো। সে তাড়াতাড়ি উঠে বসলো তারপর কাব্যের ফোনে কল করলো। আর তার পাশে মোবাইলের স্ক্রিনে লাইট জ্বলে উঠলো। কথা পাশে তাকিয়ে দেখে কাব্য খাটে বসে আছে।
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_31
#Writer_Fatema_Khan

কাব্যকে নিজের সামনে দেখে কথা পুরোই অবাক। কথার কানে এখনো মোবাইল রাখা রিং বেজেই চলছে আর কথা কাব্যের দিকেই তাকিয়ে আছে।
—কাব্য আপনি এখানে কি করে এলেন আর আমার গ্রামের বাড়িই বা কি করে চিনলেন?

—কি করব বলো তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো এখানে এসে। কতগুলো কল করেছি বলো সারাদিনে, একটা কল রিসিভ করার সময় কি ছিলো না তোমার কাছে?

—আমি আসলে রুমেই আসতে পারি নি সবাইকে অনেক দিন পর পেয়ে সেখানেই ছিলাম তাই কল দেখতে পাই নি।

—তাই নাকি

— হুম।

—আচ্ছা কান থেকে মোবাইলটা নামিয়ে কল আসছে সেই কল রিসিভ করো আগে

—কল এসেছে আমি তো খেয়াল অবদি করি নি।

কান থেকে মোবাইলটা নামিয়ে স্ক্রিনের উপর কাব্য নাম দেখে কথা পুরাই অবাক। কাব্য তো তার সামনেই ছিলো তাহলে কাব্য কেনো তাকে আবার কল দিবে এই ভেবে কথা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার সামনে কেউ নেই।
—কাব্য তো কোথাও নেই তাহলে আমি এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলাম? আমি কি কাব্যের কথা সারাদিন ভাবছিলাম বলেই কাব্যকে কল্পনা করছি। যাই হোক আগে কল রিসিভ করি সে হয়তো অনেক রেগে আছে।

কথা তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে কাব্য বলে উঠলো,
–সারাদিন কোথায় ছিলে তুমি আমি কতগুলো কল দিয়েছি একবারও তুমি চেক করেছো আর এখন নিজে কল দিয়ে কথা বলছো না আর আমি ব্যাক করার পর রিসিভ করতে এত টাইম লাগে?

—আপনি এভাবে রেগে আছেন কেনো আমি সবার সাথে ছিলাম তাই কল রিসিভ করতে পারি নি।

—তুমি নিজে কল দাও না আমি দিচ্ছি সেটাও রিসিভ করছো না আর এখন বলছো তুমি সবার সাথে ব্যস্ত ছিলে। এই কথাটা একটা বার মেসেজ করেই বলে দিতে তাহা আমার এতটা টেনশনে পরতে হতো না।

—সরি কাব্য আমি আসলেই বুঝতে পারি নি যে আপনি এতটা চিন্তায় পরে যাবেন না হলে আপনাকে আমি কখনোই এতটা চিন্তায় পরতে দিতাম না। আমি কথা বলতে না পারলেও আপনাকে একটা মেসেজ করে দিতাম।

—আচ্ছা সমস্যা নেই আমিও একটু বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছি।

—আপনাকে আমার কিছু বলার আছে কাব্য।

—কি বলবে, সিরিয়াস কিছু?

— হুম

—কি বলো? আমার টেনশন হচ্ছে কিন্তু

—আমি বাসায় আপনার কথা বলেছি আমি যে আপনাকে বিয়ে করতে চাই আর আপনি আমাকে খুব পছন্দ করেন৷

—তারপর সবাই কি বলেছে তোমাকে? রাজি হয়েছে তো নাকি রাজি হয়নি?

—সবাই রাজি কাব্য তাই আপনার টেনশনের কোনো কারণ নেই।

— সত্যি! সবাই রাজি।

—- হ্যাঁ সবাই বলেছে আমি যেখানে চাইবো সেখানেই আমাকে বিয়ে দিবে।

— ওহ কথা তোমার প্রতি সারাদিনের রাগ আমার এক নিমিষেই দূর হয়ে গেলো সত্যি এখন আমি ঘুমাতে পারব। আর আমি তো মাকে আগেই তোমার কথা বলেছিলাম মা তো তোমাকেই আগে থেকেই পছন্দ করে। মা বাবার সাথে তোমার ব্যাপারে কথা বলেছে।

—কি বলেছেন উনি?

—বাবার কোনো আপত্তি নেই। ফাইনালি তুমি আমার হবে কথা। আমি খুব খুশি। তুমি খুশি তো?

—আমিও চাই সবকিছু ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আর আমার আর আপনার বিয়েই হলো এগিয়ে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ কি করে খুশি না হই বলুন তো।

—আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি কথা সারাজীবন আগলে রাখব কথা দিলাম।

আরও কিছুক্ষণ কথা চললো মুঠোফোনে। ভোরের আজানের শব্দ শুনা যাচ্ছে এদিকে জানালার পাশে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে কথা। ফোন ছেড়েছে প্রায় আধা ঘন্টার মত হবে কিন্তু কথার চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই। তার ভাবনা একটাই সবকিছু ঠিক মত হবে তো আর কোনো ঝড় আসবে নাতো তার জীবনে। কাব্যের মত এমন একজনকে নিজের জীবনে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার যে কিনা এত বছর একতরফা ভালোবেসে গেছে তাকে। কথা উঠে দাঁড়ায়। অজু করে জায়নামাজে নিজের সকল চিন্তা ছেড়ে দিলো। নামাজ শেষ করে বারান্দায় কফি নিয়ে সূর্য উদয় দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ব দিগন্তে রক্তিম লাল সূর্য উঁকি দিচ্ছে কথাও নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় আজ এই সূর্যের সাথেই করছে। আর কোনো পিছুটান পুরোনো কোনো স্মৃতি মনে করে কষ্ট পাবে না।
__________
এক সপ্তাহ পর,
চারদিকে হই হুল্লোড়। বাচ্চাদের নাচ গান, বড়দের ব্যস্ততা। তার মাঝে কথা আর শিলা একটা জায়গায় বসে সবার কাজ দেখছে কে কি করে। পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে ঠিক পাঁচ বছর আগের মতোই। কথা বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে কটা বাজে। আজ আয়ান, রোজা, কনক, আয়ানের মা আর রাহিমা খালার আসার কথা গ্রামে। কথা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে তাদের জন্য এদিকে তাদের কোনো পাত্তাই নেই। কল দিলেও রিসিভ করছে না কেউ। কথা বিরক্ত হয়েই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ঠিক সেই সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। কলিং বেলের শব্দে কথা থেমে যায়। শিলার মা গিয়ে দরজা খুলে দিলে সামনে আয়ানরা সবাই দাঁড়িয়ে আছে। কথা ও বাকিরাও তাদের দেখে এগিয়ে যায়। কথা কাছে গেলেও চুপ করে থাকে কারো সাথেই কোনো রকম কথা বলে না। সবাই সবার সাথে কথা বলে নেয়। রিয়ানের বাবা আর মা আয়ানকে বলে,
—আয়ান বাবা তোর জন্য আমাদের জীবনে আবার সুখ ফিরে এলো। তোর কাছে আমরা অনেক ঋণী হয়ে থাকব।

—আরে আন্টি কি বলো তুমি এসব। কথা কি একা রিয়ানের বোন আমার বোন না। আমার কাছে রোজা আর কথা একরকম এটা তো তোমরা ভালো করেই জানো।

—তা ঠিক। তুই ছোটবেলা থেকেই কথাকে রিয়ানের মতোই ভালোবেসে এসেছিস।

—আচ্ছা এবার সবাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। সেই সকালে বের হয়েছিস অনেক খিদে লেগেছে না। রিয়ান তুই আয়ানকে নিয়ে ওর রুম দেখিয়ে দে। শিলা মা তুই আপা(আয়ানের মা) আর রাহিমা আপাকে ওনাদের রুমে নিয়ে যা।
তারপর সবাইকে রুমে নিয়ে যেতে বলে। কথাকে কথার মা রোজা আর কনককে নিজের রুমে নিয়ে যেতে বলে। কথা নিজের রুমের দিকে চলে গেলো পেছন পেছন কনক আর রোজা। রুমে এসে কথা খাটের উপর বসে পরে। কনক নিজের ব্যাগ রেখেই কথাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—ফাইনালি বান্ধুবি সবকিছু ঠিক হয়ে গেলো তোর লাইফে।

—ছাড় আমাকে তুই একদম কথা বলবি না আমার সাথে।

রোজা বললো,
—কেনো কথা আপু এভাবে বলছো? পুরো রাস্তা কনক আপু তোমার কথাই বলছিলো জানো।

—তুইও কথা বলবি না। তোদের সবার এখন আসার সময় হলো আর আমি সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করছি। আমিতো ভেবেছিলাম তোরা দুই একদিন আগেই চলে আসবি।

—আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ডের আজ গায়ে হলুদ আমি কি করে দেরি করে আসতে পারি। কিন্তু দুই একদিন আগে সম্ভব হয় নি। আসতে মন চাইলেও আসা সম্ভব ছিলো না রে। আর এখন মাত্র সকাল ১১টা বাজে আর কত সকালে আসব? তুই বললে উড়ে আসতাম আর কি। তা এসব বাদ দে, এখন বল জিজু কল দিয়েছিলো?

— হুম সে তো সারাদিনই কল দিতেই থাকে।
বলেই কথা জিভে কামড় দেয়। এখন ওকে সবাই মিলে পচাবে।

—ওহহো তাহলে এই ব্যাপার সারাদিনই কল দেয় তারমানে সারাদিন কথা হয়৷ কি কি বলে জিজু মানে কতটা রোমান্টিক

—ছিঃ। তোদের মাথায় আর মনে সারাদিন এসব চলে তাই না।

—তাহলে এখন আর কি থাকবে বল, জিজু কল দেওয়া মানেই রোমান্টিক আলাপ।

—তোরাই তোদের জিজুকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর কি ধরনের রোমান্টিক আলাপ হয় আমাদের।

—তা আর বলতে, অবশ্যই জিজ্ঞেস করব।

—হয়েছে হয়েছে। এখন দুইজনে ফ্রেশ হতে নে তারপর কিছু খেয়ে নে।

—আচ্ছা আসছি।

তারপর রোজা ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর রোজা বের হলে কনক ওয়াশরুমে চলে যায়। কনক বের হলে তিনজনে মিলে নিচে চলে যায়।
_________
দুপুর ২ঃ৩০টা,
মিলি দাঁড়িয়ে আছে কলেজের গেইটের সামনে। নিবির কলেজ থেকে বের হয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন মিলির দিকে নজর পরে। তার হাতে কিছু একটা নিয়ে সে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিবির তার কাছে এগিয়ে যায়। মিলি নিবিরকে তার কাছে আসতে দেখে তাই হাতে থাকা কাগজটার দিকে আবার তাকায়। নিবির কাছে এসে দাড়ালে মিলি বলে,
—আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম স্যার।

—আমার জন্য! কিন্তু কেনো? কিছু কি বলবে?

হাতে থাকা কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
—এটা আপনার জন্য স্যার।

—এটা কি?

—কথার বিয়ের কার্ড। আজ কাব্য ভাইয়া আর কথার গায়ে হলুদ কাল বিয়ে। আমরা আজ বিকালেই বের হবো গায়ে হলুদের উদ্দেশ্যে। তাই ভাবলাম আপনাকে বিয়ের কার্ড টা দিয়ে দেওয়া দরকার।

নিবির যেনো স্তব্ধ হয়ে আছে। তার মুখে কোনো ভাষা নেই বলার। মিলি কার্ড দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। না চাইতেও নিবিরের চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। তারপর নিজের গাড়িতে উঠে চলে গেলো। এদিকে মিলি রিকশার হুড উঠিয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে কাদছে৷ অঝোর ধারায় তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছিলো। দুই দিকে দুইজন তাদের ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার বেদনায় কাতর। আর অপরদিকে মিলনের খুশির জোয়ার বইছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here