উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -২৮+২৯

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_28
#Writer_Fatema_Khan

অনেকক্ষণ যাবত দুইজনেই দাঁড়িয়ে আছে। সাথে ছোট একটা পুল আছে যার উপর একটা ছোট্ট ব্রিজ। কথা আর কাব্য সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য কথার হাত ধরে তার সাথে নিয়ে যায় সেই ছোট্ট ঘরটির দিকে। সেখানের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে যায়। কথা দেখতে পায় রুমের মাঝে একটা টেবিলের উপর কেক রাখা যেখানে হ্যাপি বার্থডে টু কথা লেখা আছে। কাব্য কথাকে কেকের সামনে নিয়ে দাড় করায়।
—এবার কেক কাটো আর মাত্র ১০ মিনিট বাকি আছে তোমার জন্মদিনের। তারপর ১২ঃ০১ বেজে যাবে৷

কাব্য কথার পাশে দাঁড়ায়। কথা কাব্যকে বলে,,
—আপনিও আসুন।

কাব্য যেনো এই কথার অপেক্ষায় ছিলো। কাব্য সাথে সাথে কথার হাতে ধরে। কথা ক্যান্ডেল নিভিয়ে দেয়। তারপর কেক কাটে। কাব্য কথার হাত থেকে ছুরি নিয়ে কিছুটা কেক কেটে কথাকে খাইয়ে দেয়। কথাও কাব্যকে কেক কহাইয়ে দেয়। কাব্য কখনো আশা করে নি কথা নিজে থেকেই কাব্যকে কেক খাইয়ে দিবে। তারপর কথার হাত ধরে কাব্য বাইরে নিয়ে আসে। বাইরে বাগানের মাঝে একটা টেবিল বসানো। যা এতক্ষণ ছিলো না। টেবিলে সাজানো রয়েছে অনেক ধরনের খাবার। কাব্য কথাকে সেখানে নিয়ে যায়। কথা পুরাই অবাক হচ্ছে কাব্য এসবের আয়োজন কখন করলো তা ভেবেই। একটা চেয়ার টেনে কথাকে বসতে ইশারা করলো কাব্য। কথা বসে পরে চেয়ারে। পাশের চেয়ার টেনে কাব্য নিজে বসে পরে। কাব্য নিজেই সার্ভ করছে কথাকে আবার নিজের প্লেটেও খাবার নিচ্ছে। কাব্য একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে আর কথা শুধু হু বা হা তেই জবাব দিচ্ছে। কথা কাব্যের দিকে তাকিয়ে ছিলো এক দৃষ্টিতে। এটা কাব্যের নজর এড়ায় নি। কাব্য কথার অনেকটা কাছে গিয়ে বললো,
—আমাকে দেখার জন্য পুরো লাইফ পরে আছে। বিয়ের পর সারাদিন সামনে বসিয়ে রেখো। এখন তো খাবার টা আগে শেষ করো প্রেয়সী আমার।

কাব্যের কথায় সে লজ্জা পায় আর তাড়িতাড়ি চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে আর আমতা আমতা করতে থাকে।
—আমি কখন তাকালাম আপনার দিকে, আমিতো খাবার খাচ্ছিলাম আর আপনি কি না কি বলছেন।

—আচ্ছা আমি ভুল দেখেছি, তুমি এবার খাও নাকি আমার হাতে খাওয়ার ইচ্ছা। তাহলে আমি খাইয়ে দিব?

—আরে না আমি নিজেই খেতে পারি।

তারপর দুইজনেই নিজেদের খাওয়া শেষ করলো। কাব্য এবার কথাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে তাই তারা যেদিকে বাইক আছে সেদিকেই যাচ্ছে। কথা কাব্যকে বললো,
—সবকিছুর জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি কখনো ভাবতেই পারিনি আপনি এভাবে কিছু করবেন। আর গিফটের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমার খুব ভালো লেগেছে সবকিছু।

—ধন্যবাদ তো আমার দেওয়া দরকার তোমাকে। তুমি আমাকে আজ অনেক টাইম দিলে। কথা..

— হুম। কিছু বলবেন?

—আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। সেই পাঁচ বছর আগে তোমাকে প্রথম দেখে আমার যেমন ফিল হয়েছিলো কখনো কোনো মেয়েকে দেখে হয়নি। জানিনা বিশ্বাস কিরছো কিনা তবে যা বলছি সব মন থেকে বলছি। ওইদিন ট্রেন থেকে দুইজন আলাদা হয়ে যাওয়ার পর আমি দেশের বাইরে চলে যাই। তোমার আর কোনো খোঁজ পাই নি আমি। তারপর অনেক কষ্টে আমার বন্ধুদের দিয়ে তোমার খোঁজ করে খুঁজে পাই তোমাকে। তারপর তারাই তোমার সব খবর আমাকে দিত। আমি যখন দেশে আসলাম তোমাকে দেখার জন্য ছটফট করছিলাম জানো তুমি। আমি সন্ধ্যার পর তোমার বাসার নিচে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তুমি ওইদিন একটা বই নিয়ে বারান্দায় পড়ছিলে। কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও তোমাকে আর দেখতে পাই নি। তারপর চোরের মত তোমার বারান্দায় যাই। আর দেখি তুমি ঘুমিয়ে ছিলে আর পাশে সেই বইটা পরে ছিলো। আমি তোমার পাশে বেশ কিছু সময় বসে ছিলাম কথা বলছিলাম তোমার সাথে। তারপর তোমাকে কোলে তুলে বিছানায় দিয়ে আসি।

—মানে ওই রাতে আপনি আমার বারান্দায় এসেছিলেন আর আপনিই আমাকে রুমে দিয়ে এসেছিলেন। আর আমি ভাবতেছি আমি ঘুমের ভেতর হয়তো বিছানায় চলে গেছি।

—হা হা হা! আমিই ছিলাম ওইদিন।

—এভাবে একটা মেয়ের ঘরে ঢুকা কোন ধরনের আচরণ শুনি?

—আমি যেতে চাই নি কিন্তু মন মানছিলো না। এতদিন পর দেখলাম তাও একটু করে। তাই আর কি একটু বেশি করে দেখার জন্য উপরে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ বসেই তো ছিলাম তাই না অন্য কিছু কিন্তু করি নি। বিদেশে থাকলেও মনটা তোমার কাছেই ছিলো। আর দেশে থাকলে তোমার শ্বাশুড়িকে এতদিনে দাদী বানিয়ে দিতাম। কি বলো ঠিক বলি নি আমি?

—আপনার মুখে কথা আটকায় না, কি সব বলছেন এগুলো?

—এ বাবা এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আমি দেশে থাকলে বুঝি এতদিন তোমাকে বিয়ে না করব থাকতাম নাকি? আর বিয়ে হলে দু চারখানা বাচ্চা হবে এটাও স্বাভাবিক তাই না। আমি আবার গল্পের নায়কদের মত না বুঝলা, যে বউ এক রুমে থাকবে কিন্তু আমি সোফায় ঘুমাব। একই খাটে জড়িয়ে ধরে ঘুমাব। তাই ভাবছি বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেলি কি বলো? আর তোমার ভাইয়াও কাল আসছে, আমি কালকেই তোমার বাসায় এসে কথা বলে বিয়েটা ঠিক করে ফেলি।

—কিহ্! আপনি ঠিক আছেন তো, নাকি মাথা কাজ করছে না আপনার?

— মজা করছিলাম তোমার সাথে। আর তুমি যখন চাইবে তখনই আমাদের বিয়ে হবে। আমি তোমার উপর কোনো রকম চাপ দিতে চাই না। আমি চাই তুমি নিজে থেকে আমাকে ভালোবেসে আমার কাছে আসো। দেখেছো আমি কত বকবক করি। তুমি মনে হয় খুব বিরক্ত হও। আর বিরক্ত হলেও কিছু করার নেই প্রসঙ্গ যখন আমার ভালোবাসার তখন তোমাকে সব শুনতেই হবে।

কথা কাব্যের কথায় হেসে দিলো।
—আমিতো শুনছি আপনি বলুন। আর আমরা কিন্তু বাইকের কাছে চলে এসেছি এবার বাসায় যাওয়া যাক।

— হুম। কিন্তু তুমি কিছুই বললে না ভালো করে খালি কি যেনো ভাবলে। আচ্ছা কি ভাবছিলে?

—কিছু না চলুন এবার।

কাব্য আর কথা বাইকে উঠার পর কাব্য বাইক স্টার্ট দেয়।
_______
দরজায় হঠাৎ কড়া ঘাতের শব্দ শুনে চমকে যায় মিলি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঘড়ির কাটা একটা ছুই ছুই।
—এত রাতে কে এলো! মা নাকি ভাইয়া? খুলে দেখি কে আছে

মিলি বিছানার উপর পড়ছিলো। উঠে গিয়ে দরজা খোলে। দরজার বাইরে তূর্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। মিলি হাসি দিয়ে তূর্যকে ভেতরে আসার জন্য দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।
—আরে ভাইয়া তুই, আয় না ভেতরে। কিছু দরকার ছিলো নাকি এত রাতে আসতে হলো?

তূর্য ভেতরে এসে খাটের উপর বসলো।
— হুম তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার। ভেবেছিলাম খাবার টেবিলেই বলব কিন্তু আমার দেরি হয়ে গেলো আর তার আগেই তুই খেয়ে রুমে চলে এসেছিস।

—খুব সিরিয়াস কথা নাকি?

— হুম। মায়ের সাথে কথা বলেছি আমি তোর সাথে বলার জন্যই আসলাম। তুই আমার বন্ধু অয়নকে তো চিনিস তাই না?

— হ্যাঁ চিনি তো অয়ন ভাইয়াকে। কি হয়েছে ভাইয়ার?

—অয়ন তোকে পছন্দ করে আর সে জন্য আমার অফিসে এসেছিলো আর তোর কথা বললো আমাকে। আমি কিছুই বলিনি অয়নকে। ভাবলাম আগে তোর আর মায়ের সাথে কথা বলে নেই তারপর না হয় অয়নকে হ্যাঁ বা না একটা বলা যাবে।

—মা কি বললো ভাইয়া?

—মা তো খুব খুশি শুনে। কারণ মা আমার সব বন্ধুদের চিনে আর ওরা খুব ভালো এটাও মা জানে এখন তোর সিদ্ধান্ত কি আমাকে জানালেই আমি অয়নকে বলে দিতে পারব আর কি। তোর তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। তুই ভেবে সিদ্ধান্ত নে তুই অয়নকে বিয়ে করতে চাস কিনা? আমরা তোর উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিব না।

তূর্যের কথা শুনে মিলির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো। সে ভাবতেও পারে নি তূর্য এই কথা বলার জন্য এসেছে। এদিকে মিলি যে নিবিরকে ভালোবাসে তার কি হবে? মিলি চুপ করে আছে দেখে তূর্য বললো,
—তুই টেনশন নিস না। তোর সময় নে তারপর তোর উত্তর বলিস আমাকে। ঠিক আছে এখন ঘুমিয়ে পর।

তূর্য রুম থেকে চলে গেলো। মিলি দরজা চাপিয়ে ফ্লোরে বসে কান্না করে দিলো। তার মনে হচ্ছে যেনো তার সবকিছু এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।
________
কথার বাসার সামনে এসে বাইক থামলো। কথা নেমে গেলো আর কাব্যও নামলো। কিন্তু রাত ১ঃ৩০ বাজে এখন গেইট বন্ধ আর দারোয়ান এই সময় কথাকে একটা ছেলের সাথে দেখলে খারাপ ভাববে। কথা কাব্যের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
—ওইদিনের মত পাইপ দিয়ে রুমে যেতে হবে।

—অসম্ভব! এই শাড়ি পরে কোনো মতেই আমি পাইপে উঠব না।

—এখানে চেঞ্জ করার জায়গা কই যে চেঞ্জ করে তারপর উঠবে তুমি।

—আমি কি বলেছি যে এখন চেঞ্জ করব।

তারপর কথা নিজের শাড়ির আচল কোমরে পেচিয়ে নিচ্ছিলো আর কাব্য তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
—কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

—দেখছি বিয়ের পর এভাবে শাড়ির আচল কোমরে পেচিয়ে গিন্নির মত কাজ করবে তুমি

—ইস আপনার শখ কত। এখন চলুন।

কাব্য কথার কোমরে হাত রাখতেই কথার উন্মুক্ত জায়গায় কাব্যের হাত পরলো। কাব্য তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে আরেকটু নিচে ধরলো আর কথা কাব্যের গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর দুইজনেই উপরে উঠতে লাগলো। কাব্য বলে উঠলো,
—জন্মদিন তোমার ছিলো আর তখন থেকে গিফট আমি পাচ্ছি।

—মানে?

—এই যে দেখো তুমি আমার কত কাছাকাছি। নিজে থেকে কখনো আসতে এতটা কাছে আমার?

কথা চুপ করে রইলো। কি উত্তর দিবে বুঝতে পারল না। বারান্দায় এসে কথাকে ছেড়ে দিলো কাব্য।
—যাও ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পরো তাড়াতাড়ি ঠিক আছে। আমি যাই

—কাব্য এক মিনিট। একটা কথা

—কি বলো?
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_29
#Writer_Fatema_Khan

কাব্য যেনো কথা কি বলবে তা শোনার জন্য বেকুল হয়ে আছে।

—কাথা কি বলবে তুমি আমাকে?

—কাব্য আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?

—কিহ্! তুমি কি বললে আমি বুঝতে পারছি না।

—আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন? এই যে কত ভালোবাসার কথা বলেন সারাদিন এসবের মানে আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন। তাই আমি চাই নিজেকে একটা সুযোগ দিতে।

কাব্য যেনো কথার বলা কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না। সে অবাক চোখে কথার দিকে তাকিয়ে আছে।
—কি হলো আপনি কিছু বলছেন না যে? ওহ্ বুঝেছি বিয়ের কথা বলাতেই ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো। আমিও বোকা আপনার সবকিছু কে সত্যি ভেবে নিয়েছি।

—তুমি যে দুই লাইন বেশি বুঝো এটা আমি আগেই জানতাম। আজ তার প্রমাণ দিয়ে দিলে। তোমার কথা শুনে আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি নিজে থেকেই আমাকে বিয়ের কথা বলছো?

— হুম। আমাকে সবাই অনেক বুঝিয়েছে আর আমিও ভাবলাম নিজের জীবন টাকে আরেকটা সুযোগ দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার। তাই আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আপনার থেকে আমার জন্য ভালো আর কে হতে পারে। কারণ সময়ের খাতায় পরে থাকে অতীতের সব স্মৃতি। প্রবাহমান জীবনের সাথে এগিয়ে যেতে হয়।বহমান সময়ের নিয়ম মেনে আমরা এগিয়ে যাই। তাই আমিও এগিয়ে যেতে চাই আপনার হাত ধরে।

কথার বলা কথাগুলো শুনে কাব্য কথাকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ কাব্যের এভাবে জড়িয়ে ধরাতে কথা দুই কদম পিছিয়ে যায়। দেয়ালের সাথে গিয়ে কথার পিঠ ঠেকে যায়। কিছুটা সময় যাওয়ার পর কথা কাব্যের পিঠে আলতো করে হাত রাখে। নিজের পিঠে কথার হাতের স্পর্শ পেয়ে কাব্য কথাকে আরও টাইট করে জড়িয়ে ধরে। অনেকটা সময় যাওয়ার পর কথা কাব্যকে বলে,
—এবার ছাড়ুন কাব্য। অনেকটা সময় হয়ে গেছে আপনার যাওয়া দরকার এখন। রাত কম হয়নি কিন্তু। এত রাতে বাইক চালিয়ে বাসায় যাবেন তাও এমন কুয়াশায় আবছা রাস্তা দিয়ে।

কাব্য কথাকে ছেড়ে দেয় তারপর বলে,
—আচ্ছা আজ তাহলে আমি যাই। কাল অফিসে তো আসবেই ওইখানে কথা হবে। আর আমি মায়ের সাথে কালকেই কথা বলব। আর বাবা তো দেশের বাইরে আছেন ওনাকে ফোনে বলব। তুমিও তোমার ফেমিলিকে আমার ব্যাপারে বলবা কিন্তু।

— হুম বলব।

—আচ্ছা আমি দেখতে কি খুব খারাপ নাকি বলতো?

কথা ভ্রু কুচকে বললো,
— হঠাৎ এই কথা কেনো?

—না তোমার ফেমিলি মানবে তো আমাকে? তোমারই যা সময় লেগেছে তাও আমাকে এখনো ভালোবাসি বলো নি তুমি।

—আমি নিজের দিক দিয়ে শতভাগ চেষ্টা করব কাব্য আপনি আমার সাথে থাকলেই হলো।

—আমি সবসময় তোমার পাশেই থাকব। তুমি একদম চিন্তা করবে না।

তারপর কাব্য কথার দুগালে হাত রেখে কপালে তার ঠোঁট জোড়ার উষ্ণ পরশ দিয়ে দেয়। কাব্যের ছোয়া নিজের কপালে পেয়ে কথা চোখ বুঝে নেয়।
—তোদের হয়েছে কথা?

হঠাৎ কারো গলার কন্ঠ শুনে কাব্য কথা দুইজনেই দূরে সরে যায়। আর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কনক দাঁড়িয়ে হাসছে।
—আরে বাবা আমি কনক আসছি এভাবে দূরে সরে যাওয়ার দরকার নেই। আর তোদের লজ্জা লাগলে আমি ভেতরে চলে যাই।

—আরে শালী সাহেবা তুমি থাকো, তোমার সামনে কিসের লজ্জা। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে রাজি করিয়েছি লজ্জা সরম সব সাইডে এখন।

—এতে আমারও ক্রেডিট কম না বুঝলেন জিজু। আমিই নিজ দায়িত্বে খালা আর আয়ানকে বলেছি তারপর ওনারাও কথাকে বুঝিয়েছে।

—এই তোরা কি শুরু করেছিস কটা বাজে খেয়াল আছে? এখন চল ঘুমাতে চল আর কাব্য আপনিও বাসায় চলে যান।

—আচ্ছা তাহলে আমি ভেতরে শুতে যাই। তোরা কথা বলে আয় ঘুমাতে।

তারপর কনক ভেতরে চলে গেলো।
—কথা আমি এখন যাই। কাল অফিসে দেখা হবে, তুমি ঘুমিয়ে যেও তাড়াতাড়ি।

— হুম ঘুমিয়ে পরব এখন। আপনি সাবধানে বাইক চালাবেন আর বাসায় গিয়ে আমাকে একটা কল দিবেন।

—আচ্ছা।

তারপর কাব্য পাইপ বেয়ে নিচে নেমে গেলো। বাইকে উঠে কথাকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো কথাও হাত নেড়ে কাব্যকে বিদায় জানালো কাব্য বাইক স্টার্ট করে নিমিষেই কুয়াশা ভরা রাস্তায় মিলিয়ে গেলো। কথা কিছুক্ষণ রাস্তার দিকে তাকিয়ে থেকে রুমের ভেতর চলে আসে। ফ্রেস হয়ে শাড়ি পালটে নেয়। শাড়িটি রাখার সময় কথার ঠোঁটের কোণে ফুটে ছিলো এক চিলতে হাসি। যা কনকের দৃষ্টি এড়ালো না।
—আরে কথা শাড়িটি খুব সুন্দর। বারবার তাকিয়ে মুচকি হাসলে শাড়ির সৌন্দর্য কমে বা বেড়ে যাবে না।

—তুই বেশিই বুঝিস। আমি শাড়ি দেখে হাসতে যাব কেনো? আমি এমনিতেই হাসছিলাম।

—হ্যা ঠিক বলেছিস আমি বেশিই বুঝি। কি করব বল আমাকে তো আর কেউ এত রাতে এসে চুমু খাবে না।

—ছিঃ কি বাজে কথা বলিস তুই।

— হুম আমি বাজে বকি। আচ্ছা এখন ঘুমা কাল অফিস আছে না তোর।

—আচ্ছা ঘুমিয়ে পরি তাহলে। তুইও ঘুমিয়ে পর। শুভ রাত্রি।

—শুভ রাত্রি।
________
দুপুর ১২ঃ০০টা,
সিএনজি থেকে নেমে দাড়ালো রোজা। আয়ানের মা আজ তার ছেলের পছন্দের সব রান্না করেছে কিন্তু আয়ান অফিসে থাকার কারণে সেই রাতে খেতে হবে তাই রোজা আয়ানের জন্য অফিসেই খাবার নিয়ে এসেছে।
—বাহ্! ভাইয়ার অফিস তো ইয়া বড়। কিন্তু ভাইয়াকে কোথায় পাব? কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলে তো সারপ্রাইজ টাই মাটি হয়ে যাবে৷ এক কাজ করি কাউকে জিজ্ঞেস করি আয়ান ভাইয়াকে কোথায় পাওয়া যাবে। এটাই করি। আগে অফিসের ভেতরে যাই।

রোজা অফিসের ভেতরে চলে গেলো। সামনে থাকা একজন লোককে রোজা জিজ্ঞেস করলো
—এই যে শুনুন চাচা একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।

—জি বলুন?

—আচ্ছা এখানে আয়ান নামে একজন জব করে ওনাকে কোথায় পাব?

—আয়ান স্যার! ওনাকে আপনি চার তলার সোজা রুমটায় পাবেন। কিন্তু আপনি আয়ান স্যারের কে হন?

—অনেক ধন্যবাদ চাচা। আর আমি আয়ান ভাইয়ার ছোট বোন।

—ভারি মিষ্টি মেয়ে তো তুমি

—ধন্যবাদ।

তারপর রোজা সেখান থেকে লিফটে উঠে গেলো চার তলায় যাবার উদ্দেশ্যে। রোজা লিফটে উঠার পর লোকটার হঠাৎ রোজাকে ডাকতে যাবে দেখে লিফট উপরে চলে গেছে।
—ইস বলাই হলো সোজা দুইটা রুম আছে। বা পাশের টা আয়ান স্যারের আর ডান পাশের টা তো তূর্য স্যারের। থাক তেমন একটা প্রবলেম হবে না এমনিতেও তূর্য স্যার অনেক ঠান্ডা মানুষ। রেগে যাবেন না সহজে।
চার তলায় এসে লিফট থাকলে রোজা এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। অফিসে থাকা সোজা রুমটার দিকে এগিয়ে গেলো রোজা৷ ওইখানে রুমের দরজা কিছুটা খোলা থাকায় দরজা খুলে রোজা ভেতরে ঢুকে গেলো। রুমের ভেতর রোজা ঢুকে দেখলো ভেতরে কেউ কোথাও নেই। তাই সে খাবার গুলো টেবিলে রেখে দেয় আর রোজা গিয়ে যেটাতে তার ভাইয়া বসে সে চেয়ারটা তে বসলো।
—আহা! কি ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া আসছে এসি থেকে। কিন্তু ভাইয়া এই শীতের মাঝেও কেনো এসি ছেড়ে বসে আছে। আমার না একটু গরম লাগছে আমি বাইরে থেকে এসে ভাইয়াকে খুজতে খুজতে হাপিয়ে গেছি তাই।

হঠাৎ রুমের দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করলো। আর রোজা কারো শব্দ শুনে খুশি হয়ে বললো,
—ভাইয়া দেখো আমি এখানে কি কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ।

কিন্তু সামনে রোজা নিজের ভাইকে না দেখে অন্য কাউকে দেখে মুহূর্তেই মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। সে অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে কারণ সামনে থাকা মানুষটা যে আগে থেকেই রেগে আছে তা এই লোকের ফেস দেখলেই বুঝা যায়। আর সামনে থাকা লোকটি আর কেউ না তূর্য। তূর্যও যে কম অবাক হয়েছে তা নয়। এভাবে তার রুমে একটা অপরিচিত মেয়ে হুট করে ঢুকে যাওয়ার কথা না। আর এই মেয়ে সোজা তার রুমে এসে তার চেয়ারে বসে আছে সেটা আরও আশ্চর্যের। তূর্য রোজার দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময় রোজা ভয়ে কান্না শুরু করে দিলো। তূর্যর রাগ যেনো নিমিষেই দূর হয়ে গেলো রোজার কান্না দেখে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here