উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -৩৪+৩৫

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_34
#Writer_Fatema_Khan

—আমাকে ক্ষমা করবেন কাব্য আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না ৷ আমি যানি আপনি আমাকে আমার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন কিন্তু আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি নিজেও চেয়েছিলাম আপনার সাথে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে। কিন্তু আমি নিয়তির কাছে বাধা। আপনার মনে এখন হাজারো প্রশ্ন আসছে হয়তো যেখানে আমি নিজেই আপনার সাথে সারাজীবন থাকতে চেয়েছি তাহলে সেখানে আমিই কেনো আপনাকে বিয়ে করবো না বলছি এটারও অনেক বড় কারণ আছে। ভাবতে পারেন বউ সেজে বসে থাকা একটা মেয়ে যেখানে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করার কথা ছিলো সেখানে আমি বউ সেজে আপনাকে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কথা বলছি। আপনি সবসময় জানতে চেয়েছেন পাঁচ বছর আগে ওই বয়স্ক মহিলা আমাকে কোথায় নিয়ে গেছিলো। জানেন আজ অবদি সেই কথা আমি কাউকে বলি নি। এমনকি রাহিমা খালা আর কনককেও না। ওইদিন আপনার থেকে বিদায় নিয়ে উনি আমাকে একটা গাড়িতে নিয়ে উঠায়। এখানের সবকিছুই আমার কাছে অচেনা। জানতামই না কোথায় যাচ্ছি, কেনই বা যাচ্ছি, ওনাকে বিশ্বাস করে ঠিক করলাম নাকি ভুল কিছুই ভেবে দেখি নি। ওই যে আমি #উদ্দেশ্যহীন_কথা। নিজের জীবনের কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যই নেই। যখন একটা উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে যাচ্ছি তখন আরেক বাধা। আচ্ছা সেসব বাদ দিন ওইদিনের কথাটাই বলি। জানিনা আপনি আমাকে কতটুকু বিশ্বাস করবেন তবে আপনার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো আর আমি কেনোই বা বিয়ে ভেঙে দিচ্ছি সেই জন্য আপনার সবটাই জানা উচিত।

৫বছর আগে,,
ওই মহিলা গাড়িটা একটা গলি দিয়ে ঢুকিয়ে নিয়ে গেলো। জায়গাটা কেমন যেনো লাগছিলো আমার। গাড়ি থেকে নামলে ওইখানের সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছিলো। এতে আমার একটা খারাপ লাগছিলো না কারণ সবাই মেয়ে ছিলো। একটা বাড়িতে আমাকে নিয়ে গেলো ওইখানেও অনেক মহিলা ছিলো। কেউ কম বয়সী কেউ বা একটু বয়স্ক। অনেকে আমার বয়সী আরও কম বয়সের মেয়ে ছিলো ওইখানে। কিন্তু এখানে কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। যে যার যার কাজ করছিলো। আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
—আমরা কি এখানেই থাকব?

— হুম

আমার সাথে আর কোনো কথাই বললো না উনি। একটা মেয়েকে ডাক দিলো মেয়েটা তাড়াতাড়ি ওনার কছে এসে দাড়ালো।
—কি হয়েছে ম্যাডাম

— ওকে খালি একটা রুমে নিয়ে যা।

সাদামাটা একটা সুতির শাড়ি পরা একটা মহিলাকে এই সুন্দর মেয়েটা ম্যাডাম ডাকছে। কেমন যেনো ব্যাপারটা ভালো ঠেকছে না। মনে মনে এসব ভাবছি তবে কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করছি না। আমাকে একটা রুমে দিয়ে আসলো। রুমের ভেতর একটা খাট আছে, একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা সোফা আছে। আর কিছুই নেই। তবু্ও খারাপ কি আমার জন্য। এই সময় এটাই অনেক। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলাম। একরাতেই চেহারা কেমন যেনো হয়ে গেছে আমার। রুমের সাথেই একটা ওয়াশরুম আছে। সেটাতে গেলাম। ওয়াশরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। পিচ্ছিল হয়ে আছে ফ্লোর মনে হয় এখুনি পরে যাব। সাবধানে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। বের হয়ে দেখি ওই মেয়েটা হাতে একটা জামা নিয়ে দান আছে। হয়তো আমার অপেক্ষাই করছিলো। মেয়েটা আমার হাতে কাপড় গুলো দিয়ে বললো,
—ম্যাডামকে আপনি কই পেলেন

—ট্রেনে দেখা হয়েছিলো। কেনো?

—আপনি কিন্তু সাবধান থাকবেন ম্যাডাম মোটেও সুবিধার না। আর আজ রাতেই আপনাকে…..

—কিরে কি কথা বলছিস এর সাথে তুই?

দরজার বাইরে থেকে কেউ বলে উঠলো কথাটা। মেয়েটা সাথে সাথেই চুপ হয়ে গেলো। এদের কিছুই আমার মাথায় আসছে না। বাইরের মহিলাটি ভেতরে আসলো। খুব সুন্দর একজন মহিলা। লম্বা, দুধে আলতা গায়ের রঙ, ঘন চুল কোমরের নিচ অবদি। ঢুকেই মেয়েটাকে বের হতে বললো। মেয়েটা তাড়াতাড়ি চলে গেলো। মহিলাটি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো,
—কাপড়টা পরে নে মেয়ে। এই ভারি পোশাকে আর কতক্ষণ থাকবি?

তারপর উনি চলে গেলেন। আমার হাতে থাকা সুতি জামাটি আমি পরে নিলাম। পুরোনো একটা জামা তবে খারাপ না।

রাত অনেক হয়েছে তবে দুপুরের পর আর কেউ আমার কাছে আসেনি। খাবার দিয়েই চলে গেছে। খুব খিদা লাগছে কিন্তু কেউ আসছে না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে আমি দরজার দিকে তাকালাম। আমাকে এখানে যে এনেছে উনি দাঁড়িয়ে আছেন। ওনার হাতে একটা প্লেট আর অন্য হাতে একটা ব্যাগ। আমার কাছে এসে বসলেন উনি।
—কিরে মেয়ে তোর খিদা লাগে নি বুঝি? আমাকে কাউকে দিয়ে খবর পাঠালেই আমি চলে আসতাম তোর কাছে। জানিস ই তো কত কাজ থাকে আমার।

— খিদা তো লেগেছে কিন্তু কাকে বলব সেটাই বুঝতে পারি নি।

উনি নিজেই প্লেটের ভাত মাখিয়ে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলেন। আমিও কিছু না বলে সব খাবার খেয়ে নিলাম। উনি হাতের প্যাকেট টা আমাকে দিয়ে বললেন এটা পরে নিতে। তারপর উনি চলে গেলেন। প্যাকেট টা একটু ফাক করে দেখলাম ভেতরে একটা লাল রঙের শাড়ি আছে। সাথে কিছু অর্নামেন্টস। আমি ব্যাগটা কাছে রেখে ভাবতে লাগলাম এত রাতে আমি এসব পরব কেনো? আর উনিই বা এমন উদ্ভট কাপড় পরে আছেন কেনো? ওনার শরীরে অর্ধনগ্ন কাপড় রয়েছে। যা ওনার হাটুর একটু নিচে আর গলা এতোটাই বড় যে ওনার বক্ষদেশের ভাজ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। যা খুবই দৃষ্টিকটু। চুলগুলো খোলা কালার করা। দিনের বেলায় বাধা ছিলো বলে বুঝা যায় নি। হাতে পাথরের আংটি। হাতে পায়ের নখে নেইলপলিশ, উচু একজোড়া জুতা পায়ে। সব মিলিয়ে কেমন যেনো ওনার চলাফেরা। আমার ওই মেয়েটার কথা মনে পরছে আমাকে সাবধান হতে বলেছিলো। আমি কিছু না ভেবে দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম। সামনে কাউকেই দেখতে পেলাম না। তাই তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কেউ আমার হাত খপ করে ধরে ফেললো। সামনে তাকিয়ে আমি একজন লোককে দেখতে পাই৷ কিন্তু সারাদিন আমি একজন পুরুষ মানুষকে দেখতে পেলাম না। এখন কোত্থেকে এলো? তারপর উনি আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে এসে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকতে লাগলো। ওনার ডাক শুনে ম্যাডাম ছাড়াও অনেকেই বের হয়ে এলো। আমি সবাইকে দেখে অবাক। দিনের বেলায় যাদের গায়ে কমদামি কিছু পোশাক ছিলো তারা এখন দামি কাপড় পরে আছে আর সাথে আছে ভারি মেকআপ। ম্যাডাম ওনার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
—কি হয়েছে আপনার এভাবে সবাইকে বিরক্ত করার মানে কি? আপনার তো আমার কাছে আসার কথা ছিলো, সেখানে না এসে এখানে কি?

—তুমি বড্ড বুড়ি হয়ে গেছো ম্যাডাম তবে তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি। আজ একটু টেস্ট পালটাতে মন চাইছে। আজকের রাতের জন্য আমার এই মেয়েটাই চাই। তার জন্য তোমাকে এক্সট্রা পেমেন্ট করব আমি।

ওনার কথা শুনে ম্যাডাম হেসে দেয় আর ওনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় আর আমাকে টেনে রুমে নিয়ে আসে। আসার সাথে সাথেই আমার গালে একটা চড় মেরে দেয়। কেনো রুম থেকে বের হয়েছি তা জিজ্ঞেস করতে থাকে। কিন্তু আমি তার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেই না কারণ আমার এতক্ষণে বুঝা হয়ে গেছে আমি কোথায় আছি আর আমার সাথে কি হতে চলছে। খুব সুন্দর করে আমাকে সাজিয়ে রুমের মধ্যে রেখে চলে গেলো উনি। কিছুক্ষণ পর ওই পুরুষ মানুষটা এলো। এসেই দরজা বন্ধ করে দেয় আর আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। আমি তাড়াতাড়ি ওঠে দাড়াই। উনি আমার সাথে অনেক জোরাজোরি করতে থাকে। একসময় কিছুই করতে না পেরে আমি ওনাকে খুব জোরে ধাক্কা মারি আর উনি গিয়ে খাটের উপর পরে আর ওনার মাথা খাটের কোণায় গিয়ে পরে যার কারণে এনার মাথা ফেটে যায়। আর আমি সেই সুযোগে পালিয়ে যাই। কোথায় যাচ্ছি তার হদিস নেই ছুটেই যাচ্ছি। সামনে পুলিশ স্টেশন দেখে যেনো বুকে অনেক সাহস পেলাম। তাড়াতাড়ি সেখানে গেলাম আর ডিউটি অফিসারকে সব খুলে বললাম। উনি আমাকে নিয়ে সেখানে গেলেন। সবাইকে না পারলেও যাদের পেরেছেন এরেস্ট করেছেন। বাকিরা গা ঢাকা দিয়ে ফেলেছে। ম্যাডাম আর ওই লোকটাও ধরা পরে। কিন্তু অফিসার লোকটাকে দেখার পর কাকে যেনো কল দিতে দিতে বাইরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর উনি ভেতরে আসলেন আর সাথে আরেকজন লোক ছিলো। উনি এসে অফিসারের সাথে ওনার বিজনেসের লস হয়ে যাবে এমন কিছুই বলছিলেন। অনেকক্ষণ কথা বলার পর পুলিশ ওই লোকটাকে ছেড়ে দিলেন৷ কিন্তু বাকিদের ছাড়লেন না। লোকটা মাথায় হাত রেখে বললেন আমাকে ছাড়বেন না। তারপর চলে গেলো। আমিও বের হয়ে গেলাম আবার কোনো উদ্দেশ্যহীন পথে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আমার পিছনে কেউ আছে। আর তারা আমার পিছু নিয়েছে৷ আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি ৫-৬ জন লোক আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আর তাদের পেছনে মাথায় ব্যান্ডেজ করা লোকটা। আমি দৌড়াতে লাগলাম, আর তারাও আমার পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলো। অনেকটা দূরে গিয়ে আমি হোচট খেয়ে পরে যাই। তারা আমাকে ধরে ফেলে তারপর একটা বাড়িতে নিয়ে যায় আর ওইখানে আবার আমার সাথে জোরাজোরি শুরু করে। আমি টেবিলে থাকা ফুলদানিটা হাতে নিয়ে পর পর দুইটা বারি মারি তার মাথায়। ওনার ফাটা জায়গায় আবার আঘাত পাওয়ার পর গলগল করে রক্ত পরতে থাকে। আমি ভয় পেয়ে যাই খুব৷ বাইরে থেকে বাকি লোকগুলো ভেতরে এসে ওনাকে ধরাধরি করে উঠায় আর গাড়ির দিকে নিয়ে যায়। আমি আর কিছু না ভেবে পালাতে থাকি। ওইখানের কেউ একজন হয়তো আমার পেছনে কাউকে আসতে বললো আর আমাকে ধরতে বললো। আমি সেইদিকে না তাকিয়ে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছি। কতটুকু গিয়েছি জানিনা কিন্তু আমার আর পা চলছে না হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পরলাম। তারা আমার সামনেই ছিলো হয়তো নাকি ছিলো না জানিনা। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি ধীরে ধীরে চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসে আমার। চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালে দেখতে পাই। আর নিজের সামনে রাহিমা খালাকে দেখতে পাই৷ তারপর থেকেই আমি আশ্রমে থাকি।

বর্তমান,,,
আপনি জানেন কাব্য ওই লোকটাকে কে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছিলো? আমার সাথে এতবড় অন্যায় করতে যাচ্ছিলো ওই লোকটা আর ওনাকে পুলিশদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলো কে? আপনার বাবা রায়হান খান। ওনাকে আমি ওইদিনের ঘটনার জন্য কি করে ক্ষমা করি বলুন তো? উনি যদি নিজের বিজনেসের লাভের জন্য ওনাকে না ছাড়াতো তাহলে আমার সাথে ওই রাতে এতকিছু হত না। সে যাই হোক আপনি হয়তো আমার কথাগুলো বুঝবেন। ভালো থাকবেন কাব্য সারাজীবন। ওহ হ্যাঁ আরেকটা কথা ছিলো এসব বলতে গিয়ে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো, আপনাকে ছেড়ে যেতে আমার যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না কিন্তু আমার কিছুই করার নেই৷ আর আপনাকে আমি ভালোবাসি কাব্য। ভুলে যাবেন আমাকে দয়া করে। আর আমার পরিবারকে হয়তো আমি সবসময় কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারব না। তাদের বলবেন পারলে তাদের এই স্বার্থপর মেয়েকে ক্ষমা করে দিতে।

ইতি
#উদ্দেশ্যহীন_কথা

কাব্যের হাত থেকে চিঠিটা পরে গেলো। কথা তাকে ছেড়ে কি করে চলে যেতে পারে? কাব্য নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে কথাকে কথা এটা জানা সত্ত্বেও কি করে এমনটা করতে পারে? কাব্য যেনো নিজের মধ্যে নেই কান্নায় ভেঙে পরলো। কাব্যের মা আর বাবা কাব্যকে বুঝাচ্ছে কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই। কথার মা বাবার অবাস্থা করুণ। কাব্য তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
—বাবা সেই জায়গায় কথা বা অন্য কোনো মেয়ে না হয়ে যদি তোমার মেয়ে হত তাহলে তুমি কি নিজের বিজনেসের কথা ভাবতে নাকি নিজের মেয়ের কথা?

—আমি বুঝতেই পারি নি যে আমার বিজনেস পার্টনার এমন কিছু করতে পারে, আর সেই সময় আমি পার্টনারশীপ শেষ করতেও পারতাম না এমন একটা ডিল ছিলো। আর সে জেলে গেলে আমাদের কোম্পানি পুরো ডুবে যেতো। তাই নিজেদের কোম্পানির কথা ভেবেই আমি সেদিন তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম। তার জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি আমি কথার কাছেও ক্ষমা চাইবো। শুধু তুই ওকে একবার ফিরিয়ে নিয়ে আয়।

—আমি ওকে ফিরিয়ে আনব বাবা, ওকে যে ফিরে আসতেই হবে আমার কাছে। আর যখন একবার কথা স্বিকার করেছে সে আমাকে ভালোবাসে তাহলে কি করে তাকে ছেড়ে দেই। তার নিজের মনমতো যে সবসময় হবে এমনটা নাও হতে পারে। আমি এখুনি যাব তাকে ফিরিয়ে আনতে।

কাব্য বাড়ির বাইরে গিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে পরলো সাথে তূর্য, আরাফ, অয়ন, রিয়ান আর আয়ানও গেলো
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_35
#Writer_Fatema_Khan

বারবার কথার মোবাইলে কল করেই যাচ্ছে কাব্য। ওইপাশে রিং পরছে তবে কেউ রিসিভ করছে না। সবাই কথাকে খুজতে ব্যস্ত। একেকজন একেক জায়গায় খুজতেছে। কিন্তু কোথাও কথাকে পাচ্ছে না। ট্রেন স্টেশন, বাস স্ট্যান্ডস সব জায়গায় লোক পাঠানো আছে যাতে কথা গ্রামের বাইরে না যেতে পারে। কথা বাড়ি থেকে গিয়েছে যে সময়ে ততক্ষণে বেশিদূর যাওয়ার কথা না। কাব্য আবারও কল করে কথাকে। আবারও রিং বাজতে বাজতে কেটে যায়। এদিকে কথা মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে। স্ক্রিনে বারবার কাব্যের নামটা দেখছে আর ছুয়ে দিচ্ছে। লাল রঙের লেহেঙ্গা গায়ে জড়িয়ে একটা গাছের নিচে বসে আছে। গ্রামের কিছুটা দূরেই আছে একটা পুরোনো স্কুল। এই স্কুলে এখন আর পড়ানো হয় না। সেখানেই একটা গাছের নিচে বসে কাদছে কথা। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে যাবে ঠিক সেই সময় কথার হাত কেউ ধরে ফেলে৷ কথা তার হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার সামনে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে। কথা কাব্যকে দেখে আরও জোরে কেদে দেয়। কাব্য কথাকে জড়িয়ে ধরে। কথা বলে উঠলো,
—আমি যেতে পারি নি কাব্য আপনাকে ছেড়ে। আপনাকে ছেড়ে যেতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। আপনি আমাকে এতটা ভালোবাসেন আমি কি করে আপনাকে ছেড়ে যেতে পারি বলুন। আপনার বাবা যেটা করেছে ওনার বিজনেসের জন্য উনি ওইখানেই বলেছেন। আমার তো ওই লোকের কথাই মনে ছিলো আপনার বাবাকে আমার মনেই ছিলো না তাই বারবার সামনে আসার পরেও আমি তাকে চিনতে পারি নি। আপনাকে এতটা কষ্ট দেওয়ার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আবার আমার পরিবারকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম সাথে আপনাকে আর আপনার বাবা মাকেও।

—চুপ আর কাদে না। এভাবে কাদলে আমার বউয়ের সব সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তখন সবাই কি বলবে জানো? বলবে কাব্য তোর বউ এমন দেখতে কেনো কাজল, লিপস্টিক, সব মেকআপ নষ্ট হয়ে আছে। দেখতে কি বাজে৷ তখন আমার কতটা খারাপ লাগবে বলো৷

——আপনি আমার সাথে খুব রাগ করেছেন তাই না। আমি সত্যি বুঝতে পারছিলাম না কি করব আমাকে ক্ষমা করে দিন কাব্য।

—আমি একটুও রাগ করে নেই তোমার উপর আর আমি তোমার দিকটা বুঝতে পারি। যে কোনো মেয়ের পক্ষেই এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না যার সাথে তার বিয়ে হবে তার বাবা যদি তার কোনো খারাপ অতীতের পেছনে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত থাকে৷ তাই আমি রাগ করে নেই তবে অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম যদি আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলি। আমার প্রেয়সীকে ছাড়া যে আমি নিঃস্ব হয়ে যেতাম।

—আমি হারাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনার ভালোবাসা আমায় আটকে রেখেছে। কোথাও যেতে দেয় নি।

—এখন তাহলে চলো এমনিতেই তোমার বড্ড দেরি হয়ে গেলো মিসেস কাব্য হতে। আর সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি চলো।

—জি চলুন।

কাব্য কথার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনে এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে। তারপর তারা কথার বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে থাকে।
_________
মিলি বারবার নিবিরকে কল করছে কিন্তু কল নট রিচেবেল আসছে।
—কাল কলেজের সামনে কথার বিয়ের কথা শোনার পর কোনো রিয়েক্ট করলো না, ইভেন কোনো একটা শব্দ ও বের হয়নি মুখ দিয়ে। স্যারের মনের অবস্থা এখন কেমন আছে কে জানে? এদিকে স্যারের ফোনে কলও যাচ্ছে না। কি করছে বুঝতেই পারছি না। ভালোবাসার মানুষ যখন অন্য কাউকে ভালোবাসে এটার চেয়ে কষ্টকর বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। আর আমার চেয়ে এই অনুভূতি সম্পর্কে আর কে ই বা ভালো জানবে।

তখনই গাড়ির শব্দ শুনে মিলি বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে কাব্যের গাড়ি ভেতরে আসছে আর বাকি গাড়িগুলোও পেছনে আসছে।
—কাব্য ভাইয়া কি কথা কে খুঁজে পেলো? এত তাড়াতাড়ি চলে এলো যে!

গাড়ি থেকে কাব্য প্রথম নামলো তারপর কাব্য কথার হাত ধরে গাড়ি থেকে বের করলো। বাড়ির সবাই যেনো কথাকে দেখে প্রাণ ফিরে পেলো। কথার মা দৌড়ে গিয়ে কথাকে জড়িয়ে ধরলো। রায়হান খান আর নীলিমা খানও কথার কাছে গিয়ে দাড়ালেন। রায়হান খান কথাকে গিয়ে বললেন,
—কথা মা আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি কখনোই এটা ভাবি নি আমার বিজনেস পার্টনার এতটা নিচু মনের হবে। তাকে ছাড়ানোর পর সে যে আবার তোমাকে তুলে আনবে আমি ভাবতেও পারি নি। এমনটা জানলে আমি কখনোই তাকে ছাড়াতাম না। আমার বিজনেসের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো শুধুমাত্র এই কারণে আমার তাকে ছাড়াতে হয়েছে।

—দয়া করে আপনি ক্ষমা চাইবেন না। আমারও ভুল ছিলো আপনার দিকটাও আমার ভাবা দরকার ছিলো। কিন্তু এমন একটা ঘটনার পর আমার সবাইকেই আমার দোষী মনে হয়েছে। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন এভাবে আপনাকে বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য। সত্যিই আমি খুব লজ্জিত।

—না মা তোমার দিক দিয়ে তুমি ঠিক আছো। কোনো মেয়েই এটা মানবে না। তবে আমার জন্য আমার ছেলেকে শাস্তি দিও না আমার ছেলেটা তোমাকে বড্ড ভালোবাসে।

—আমার মনে থাকবে। আর বাকি সবার কাছেও আমি ক্ষমা চাইছি এমন বাচ্চামো দ্বিতীয় বার করার জন্য। কিন্তু সবসময় আপনারা আমাকে আপন করে নিয়েছেন। কিন্তু দিনশেষে আমি বুঝতে পারি ভুল আমার ছিলো। আমি মনে করি আমার মতো ভুল যেনো কেউ না করে। তাহলে আমার মতোই নিজের পরিবার থেকে দূরে যেতে হবে। নিজের অব্যক্ত কথাগুলো পরিবারকে বললেই হয়তো সহজেই তার সমাধান পাওয়া যায় কিন্তু আমার মতো বোকারাই নিজের সামান্য ভুলের জন্য আপনজনের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। আমার এ ভুলের জন্য সবাই ক্ষমা করবেন। এমন কিছু আর করবো না বলেই কোথাও যেতে পারি নি। আর কাব্য আপনাকে বলছি এই #উদ্দেশ্যহীন_কথা এবার নিজের উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছে। আর তার উদ্দেশ্য হলো এই আপনি কাব্য। এই কাব্যের কথা আমি কোথাও ছেড়ে যাব না তার কাব্যকে ছেড়ে।

কাব্য কিছু না বলে কথাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বিয়ের জন্য দুইজনকে ভেতরে নিয়ে গেলো সবাই।
__________
মোবাইলের স্ক্রিনে কথার হাস্যোজ্জ্বল মুখ ভেসে রয়েছে। ছবিটি কলেজের অনুষ্ঠানের দিন তোলা হয়েছিলো। সেটা নিবির নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেন টেক অফ করে দিবে। দেশ ছেড়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে নিবির। তার চোখ না চাইতেও ঝাপসা হয়ে আসছে। যাকে এতটা ভালোবেসে ছিলো সে আজ অন্যের হয়ে যাবে। কথা বরাবরই চুপচাপ ছিলো, কম কথা বলতো, লেখাপড়ার বাইরে কোনো কথাই শিক্ষকদের সাথে বলতো না। তাই নিবির নিজের মনের অনুভূতি কখনোই কথাকে বলতে পারে নি। তবে কথা যে তার মনের অনুভূতি বুঝতে পারতো এটা নিবির খুব ভালো করেই বুঝতে পারত। কারণ কথা ক্লাসের বাইরে অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে কথা বললেও নিবিরকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো। কিন্তু তার এখন কিছুই করার নেই। নিবির চোখের কোণের পানিটুক রুমাল দিয়ে মুছে নেয় তারপর নিজেই ভাবতে থাকে,
—আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে কথা। আর কখনো হয়তো দেখা হবে না তোমার সাথে। তবে মন থেকে চাই তুমি ভালো থেকো তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে। আমি কখনোই তোমাকে জোর করে নিজের করার কথা মাথায়ও আনতে পারি না আমি। আবার অন্যের সাথে তোমাকে দেখাও আমার পক্ষে সম্ভব না৷ তাই নিজে থেকেই দূরে সরে গেলাম।

মোবাইলে কয়েকটা মিসড কল দেখে নিবিরের মুখটা আরও শুকিয়ে গেলো,
—পারলে মিলি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি জানি আমাকে তুমি খুব ভালোবাসো, কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে আপন করে নেওয়া সম্ভব হবে না। তুমি আমার সাথে থাকলে কখনোই সুখি হবে না। আমার থেকে অনেক ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো তুমি। তাই তুমিও ভালো থেকো।

নিবিরের প্লেন আকাশে উড়াল ফিলো দূর দেশের উদ্দেশ্যে। তবে মোবাইল অফ করার আগে মিলির মোবাইলে একটা এসএমএস বেজে উঠলো। মিলি মোবাইলে নিবিরের নাম দেখে তাড়াতাড়ি মেসেজ সিন করলো। সেখানে লেখা ছিলো “ভালো থেকো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here