উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -২২+২৩

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_22
#Writer_Fatema_Khan

অফিসের সব কাজ শেষ করে কথা সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। সাথে কিছুটা বিরক্তও বটে। কাব্য কে সে এখানে একদম আশা করে নি, কিন্তু এখন সারাক্ষণ কাব্য তার চারপাশে ঘুরঘুর করবে। এতে দুইজনের কাজেই বিঘ্ন ঘটবে এটা কথা খুব ভালোই বুঝতে পারছে। কথা দেখলো নীলিমা খান বের হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সাথে কাব্য নেই। তিনি অফিসের বাইরে চলে গেলেন। কথা আবারও সব ফাইল আর নিজের ব্যাগ গুছাতে থাকে। তখনই কথার সামনে থাকা ফোন বেজে উঠলো। কথা ফোন রিসিভ করলে কাব্য তাকে কাব্যর কেবিনে আসতে বলে। কথা কিছু না বলেই কল কেটে দেয়।
—এই কাব্য এখন আমাকে জ্বালিয়ে মারবে। না গিয়েও উপায় নেই। সব কাজ তো শেখার এখন আমাকে ডাকার মানে কি সেটাই বুঝলাম না। আর ম্যামের সামনে কি করে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো। পুরো লজ্জায় ফেলে দেয় আমাকে। আর ম্যাম কি বাচ্চা নাকি যে কিছু বুঝে না। ওনার ছেলের আচরণ দেখলে যে কেউ বলতে পারবে এই ছেলের মনে কি চলে। এমন করতে থাকলে অফিসের সবাই বুঝতে বেশি দিন বাকি নেই।

কথা বিরক্ত হলেও নিজের টেবিলের সব কিছু সেভাবেই রেখে কাব্যের কাবিনের দিকে এগিয়ে যায়।
__________
কনকের কলেজ শেষ হয়ে গেছে প্রায় ৩০মিনিটের মতো সময় হবে। কনক এখনো কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে অপেক্ষা করছে আয়ানের। কিন্তু আয়ানের খোঁজ খবর নেই আসার। এদিকে কনকের টিউশনের লেইট হচ্ছে। তাই আজকেও মন খারাপ একটা রিকশায় উঠে পরলো।
—আচ্ছা, আয়ান কি আমাকে ভুলে গেছে এই কয়দিনেই? কি এমন করেছি আমি যে উনি এভাবে আমাকে ভুলেই গেলেন। উনি বুঝেন না সত্যি আমি ওনাকে খুব মিস করি। কে বলেছিলো আমার পেছন পেছন ঘুরতে আর এখন পুরাই গায়েব হয়ে গেছে। এটার কোনো মানে ছিলো না আয়ান। আপনি আমার সাথে এমনটা না করলেও পারতেন।

চোখের কোণে জমে থাকা পানিটুক মুছে রিকশা থেকে নেমে যায় কনক। ভাড়া মিটিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে পরে।
________
এক গাদা ফাইল সামনে নিয়ে বসে আছে কথা। কিছুক্ষণ আগে কাব্য রুমে ডেকে তাকে এসব ফাইল দিয়ে বলে,
—এই ফাইল গুলো দেখো আর সব কাজ কমপ্লিট করো।

—কিন্তু আমার আজকের সব কাজ শেষ করেছি আমি তাহলে এগুলো কেনো?

—সেটা আমিও জানি। এগুলো হলো কাল লেইট করে আসার জন্য।

বতমানে কথা ফাইল নিয়ে বসে আছে। কথার খুব রাগ হচ্ছে এখন। কথা খুব ভালো করেই বুঝে কাব্য তার সামনে বসিয়ে রাখার জন্য কথাকে নতুন কাজ দিচ্ছে। কথার কিছুই করার নেই সে তাই ফাইল গুলো চেক করা শুরু করলো। আর কাব্য তার চেয়ার থেকে উঠে কথার পাশাপাশি থাকা চেয়ারটাতে বসে পরে। খানিকটা হাটুর উপর হাতের ভর রেখে তার মধ্যে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। কাব্য কথার চোখ, মুখ, ঠোঁট, চুল সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত হয়ে পরে। চুলগুলো ছোট ক্লিপ দিয়ে আটকানো। কিছু চুল মুখের সামনে পরে আছে। মাঝারি আকারের চোখে কাজল আঁকা, যা খুব ব্যস্ত কখন সব ফাইল চেক করে এখান থেকে কথাকে মুক্তি দিতে। কাব্য আনমনেই হাসলো নিচের দিকে তাকিয়ে। ডিসেম্বরের শেষের দিক ভালোই ঠান্ডা পরছে। তার মাঝে কথার গায়ে শীতের কোনো কাপড় নেই, তবে সকালে কথার গায়ে চাদর মোড়ানো ছিলো এখন তা নেই। হয়তো খুলে রেখেছে। কিন্তু এখন শীতের কাপড় পরে আসা দরকার ছিলো কথার। তার পাতলা ঠোঁট জোড়া কাপছে ঠান্ডায়। কাব্য রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো, কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এলো হাতে ছিলো কথার গায়ের চাদরটা। কথার সেদিকে খেয়াল নেই সে কাজেই ব্যস্ত। কাব্য পেছনে গিয়ে কথার গায়ে চাদরটা দিতেই কথা তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।
—একি আপনি কি করছিলেন? আর আমার পেছনেই বা আপনার কি কাজ? দেখুন কাব্য আমার এসব একদম পছন্দ না। আপনি আমার বস, আমি আপনাদের অফিসের ছোট একজন কর্মচারী মাত্র আর এতটুকুতেই আমাকে থাকতে দিন। আপনি এভাবে হুটহাট আমার কাছে আসবেন এটা আমি কখনোই সহ্য করব না।

কাব্য হা করে তাকিয়ে আছে কথার দিকে তার এসব কথা শুনে। আর মনে মনে ভাবে কথা তাকে এতটা নিচু মন মানুষিকতার ভাবে।
—তুমি ভাবলেও কি করে তুমি আমার অফিসে কাজ করো বলে আমি তোমার কাছে হুটহাট চলে আসব, সুযোগ পেলেই তোমার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করবো? কথা শোনো আমি তোমাকে ভালোবাসি ঠিক, কিন্তু তাই বলে তোমার সুযোগ নিব এটা কখনো ভাববে না। আর রইলো তোমার এত কাছে আসা আর তোমার পেছনে কি জন্য ছিলাম তা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারতে। সত্যি তোমার থেকে এসব কথা আশা করি নি, তুমি আমাকে এমনটা কিভাবে ভাবতে পারো?

বলেই কাব্য সেখান থেকে সরে রুমের অন্যদিকে চলে গেলো। কাচের গ্লাসের উপর হাত রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে কাব্য। কথা কাব্যের কথা শুনে নিচে তাকিয়ে দেখে কথার গায়ের চাদরটা নিচে পরে আছে। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না কাব্য কেনো তার এত কাছে এসেছিলো। কথা চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিজের কাজে মন দিলো। সব ফাইল চেক করা শেষ হলে কথা বুঝতে পারে ফাইলে করার মতো কোনো কাজই নেই আগে থেকেই সব কাজ করা ছিলো আর সব কাজ কাব্য নিজেই করেছে। কথাকে নিজের কাছে কিছু সময় বেশি রাখার জন্যই কাব্য তাকে ফাইল চেক করতে
বলেছে। কথা কাব্যের দিকে একবার তাকালো, সে এখনো বাইরের দিকেই তাকিয়ে আছে। এই সময়ে কথা সব ফাইল আর কাগজ গুছিয়ে নিয়েছে। কথা কাব্যের কাছে গিয়ে বলে,
—স্যার

— হুম বলো

—সব চেক করা শেষ। কোনো রকম ভুল নেই ফাইলে আমি সব কিছু চেক করেছি।

—আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমি যাও আর কোনো কাজ নেই আজকের জন্য।

কথা কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে আসলো। কথা চলে যাবার পর কাব্য বাইরে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ভেতরে তাকায় আর ঘুরে টেবিলের দিকে আসে। এসে নিজের মোবাইল নিয়ে সেও বেড়িয়ে পরে। নিচে এসে কাব্য দেখে কথা এখনো নিচে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো গাড়ি পায়নি তাই দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য নিজের বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। কথা একবার কাব্যের দিকে তাকিয়ে আবার রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো গাড়ির জন্য। অনেকক্ষণ ধরে কথা দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কোনো গাড়িই পাচ্ছে না। কাব্য কথার কাছে এসে দাঁড়ায় আর বলে,
—চলো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। এমনিতেই অনেক লেইট করে দিয়েছি তোমার।

— প্রয়োজন নেই এসবের আমি নিজেই যেতে পারব। আর আপনাকে এতটাও ভাবতে হবে না আমার জন্য। আর তখনকার ব্যবহারের জন্য সত্যি আমি দুঃখিত। আসলে হঠাৎ আপনি কাছে আসাতে আমি ভয় পেয়ে যাই তাই এভাবে না বুঝেই কথাগুলো বলে ফেললাম। আর আপনাকে নিয়ে আমার কোনো খারাপ ধারণা নেই। আপনি আমার কথায় প্লিজ কষ্ট পাবেন না।

—আমি কি একবারও বলেছি আমি কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু তুমি আমার সম্পর্কে এরকম ভাবো এতটা নিচু ভাবো আমাকে এটা মানতে পারছি না। আমার মনে কখনো এসব আসবে না এতটুকু তোমাকে নিশ্চিত করতে পারি।

— হুম তখন আমার বুঝার ভুল ছিলো, আপনি তো আমার আরামের জন্যই চাদরটা আমাকে দিচ্ছিলেন কিন্তু আমিই উলটা আপনাকে কথা শুনিয়ে দিলাম।

— ঠিক। তুমি আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই কথা শুনিয়েছো। তাই তোমার একটা শাস্তি পাওয়া দরকার।

— কি শাস্তি দিবেন?

—আমি তোমাকে তোমার বাড়ি অবদি পৌঁছে দিয়ে আসব। তাই আমার বাইকে চড়েই তোমাকে বাড়ি যেতে হবে। বলো রাজি কিনা?

— ওকে রাজি আমি।

কাব্য বাইকে উঠে হেলমেট পরে নেয় তারপর কথাকেও একটা হেলমেট দিলো। কথা হেলমেট পরে কাব্যের পেছনে বসে পরে। কথা না চাইতেও কাব্যের কাঁধের উপর হাত রাখে। কাব্য একবার কথার হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট করে।
_________
কনক মাত্র টিউশন শেষ করলো। এখন সে বাসায় যাবে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে ঠিক সেই সময় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার উপর নজর পরতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এই সময় সামনে এ কাকে দেখছে কনক!
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_23
#Writer_Fatema_Khan

কনক সামনে আয়ানকে দেখে খুব অবাক হয়। এই সময় তো আয়ানের এখানে থাকার কথা নয়। কনক সামনের দিকে এগিয়ে যায় আর আয়ানএ কনকের দিকে এগিয়ে আসে।
—আপনি এই সময় এখানে?

—আমি আসাতে খুশি হওনি বুঝি

—সেকি কথা আমি খুশি না হবার তো কোনো কারণ দেখছি না, আর আমি সত্যি চাইছিলাম আপনার সাথে দেখা করতে কিন্তু ওইদিন আপনি আমার কলেজের সামনে দিয়ে গেলেন কতগুলো ডাক দিলাম আমি কিন্তু আপনি তো বাইক চালিয়ে চলেই গেলেন। একবারের জন্যএ পেছনে তাকালেন না। কেউ তো পেছনে আপনাকে ডাকতেও পারে তাই না

—তুমি আমাকে ডেকেছিলে?

— হুম অনেক বার ডেকেছি কিন্তু ততক্ষণে আপনি অনেক দূরে চলে গেছিলেন।

—আমি সত্যি দুঃখিত। বুঝতেই পারি নি তুমি আমায় পেছবে ডাকছিলে। আচ্ছা তোমার সাথে কয়েকবার দুইটা ছেলেকে দেখলাম কলেজের সামনে ওরা কি তোমার আত্মীয় নাকি?

—নাতো, ওরা হলো কাব্য জিজু আর তূর্য ভাইয়া।

—মানে?

—আমার সাথে যে থাকে আমার ফ্রেন্ড কথা ওকে কাব্য জিজু খুব ভালোবাসে কিন্তু কথা তো কিছুতেই রাজি হচ্ছে না বুঝলেন তাই আর কি আমার সাথে দেখা করে কথার খবর নেয়। আর জিজুর সাথে ওনার বন্ধু তূর্যও আসে।

আয়ান নিজেকেই নিজে বকতে থাকলো মনে মনে,
—ছিঃ ছিঃ আমি কিনা কনককে ভুল বুঝলাম আর সে কিনা তার বন্ধুর জন্য তাদের সাথে কথা বলতো। আমি এতটা নিচু মন মানুষিকতার কি করে হতে পারি?

—এই যে আয়ান কি ভাবছেন আপনি?

—কই নাতো কিছু না। আচ্ছা কনক আমি যদি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেই তোমার কি কোনো আপত্তি থাকবে?

কনক কিছুটা সময় ভেবে বলে,
—ঠিক আছে চলুন।

আয়ান এক গাল হেসে বাইকে গিয়ে বসে আর কনকও গিয়ে তার পেছনে বসে।

সূর্য এখনো ডুবে নি। তবে ডুবে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। কথা কাব্যের বাইকে করে বাড়ি যাচ্ছে। কাব্য বারবার গ্লাসে কথাকে দেখছে। কাব্য যতবার কথাকে গ্লাসে দেখছে কথার চোখ দুটি বন্ধ করে আছে। কাব্য এই দেখে আনমনেই হাসছে। অপরদিকে আয়ানের বাইকে কনক। কনক খুব খুশি আয়ানের বাইকে তার পেছনে বসতে পেরে। সূর্য যেনো আজ পারি জমিয়েছে আজ এই জুটির সাথে।

কাব্যের বাইক এসে থামে কথার বাসার সামনে। কথা বাইক থেকে নেমে দাড়ায়। কাব্যও নেমে দাঁড়িয়ে থাকে। কথা হেলমেট টা কাব্যের হাতে দিয়ে বলে,
—আমাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

কাব্য চুপ করে কথার দিকে তাকিয়ে আছে।
—কি হলো আপনি চুপ করে আছেন কেনো? বাসায় আসুন এক কাপ চা বা কফি খেয়ে যান।

কাব্য মাথা নিচু করে চুলে হাত দিয়ে মাথা চুলকে কিছু একটা ভেবে বাইকে বসে পরলো,
—কোনো এক সময় আসব। সেদিন আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য বা সৌজন্য বজায় রাখতে চা বা কফি অফার করতে হবে না। মন থেকে ডেকে নিয়ে যাবে যেদিন সেদিন না হয় ডিনার করে যাব।

তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। কথা কাব্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। একটা উদাস মুখের হাসি দিয়ে নিজেই বলে উঠলো,
—হয়তো আপনার কাঙ্খিত দিন টা কখনোই আসবে না কাব্য। আমি যে আপনাকে ভালোবাসতে পারব না।

চোখ থেমে টুপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। কথা নিজের গালে স্পর্শ করে বুঝতে পারে তার গাল ভেজা।
—তাহলে কি আমি আপনার প্রতি কিছুটা হলেও দূর্বল হয়ে পরছি, কিন্তু এটা কি করে হতে পারে? আমি যে এখনো বিহানকেই ভালোবাসি। আমি তার মায়া এখন অবদি ত্যাগ করতে পারিনি যে। চেনা করিনি বললে ভুল হবে, অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু তার দেওয়া ভালোবাসা তার দেওয়া আঘাত আমাকে কিছুই ভুলতে দেয় না। আপনার জীবন টাকে আমি কিছুতেই নষ্ট হতে দিতে পারি না কাব্য। আমাকে ক্ষমা করবেন আপনি। আমি আপনার ভালোবাসা বুঝেও তাকে গ্রহণ করতে পারছি না। অনেক সময় লেগেছে পাথর হতে, এখন আর মাটি হতে চাই না। আবার যদি ভেঙে যাই আর নিজেকে সামলাতে পারব না আমি

কথা হাত দিয়ে চোখের পানি ভালো করে মুছে ভেতরে চলে গেলো।
_________
এদিকে আয়ান কনককে বাসায় না নিয়ে কনককে একটা পার্কে নিয়ে গেলো৷ বাইক থামালে কনক চারপাশে তাকিয়ে বলে,
—আমার বাসা এখানে নাতো, আরেকটু দূরে আছে এই সামনেই তো আপনি চেনেন তো কয়েকবার গেলেন না?

— হুম আমি জানি। এখানে আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি কিছু কথা বলার জন্য। আশা করি তুমি বুঝবে।

—কি কথা! কোনো জরুরি কথা নাকি?

— অনেক জরুরি কথা। আচ্ছা কনক তুমি এখানে বসো ওই বেঞ্চটাতে আমি দুই মিনিটের ভেতর আসছি।

—আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবেন।

আয়ান মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো আর সেখান থেকে চলে গেলো৷ কনক বেঞ্চে বসে রইলো আর রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্য যেনো পুরো আকাশে আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে তার রক্তিম আভায়। কনক মুগ্ধ নয়নে সেই দিকে চেয়ে আছে। আয়ান এসে দাঁড়িয়েছে কিছুক্ষণ হলো। কিন্তু কনক যেনো প্রাকৃতিক সেই দৃশ্য দেখতেই ব্যস্ত। আয়ান যে পাশে আছে সেই দিকে তার খেয়াল নেই। আয়ান কনকের পাশে বসে পরে। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে কনক পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ানও তার ন্যায়ের আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
—আপনারও কি কথার মতোই আকাশ দেখতে ভালো লাগে? সেতো সূর্য উদয় হওয়া কখনো মিস করে না সাথে আমাকেও করাবে। তাই এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। কিন্তু কি জানেন সূর্যাস্ত তেমন দেখা হয় না। আজ খুব ভালো লাগছে এভাবে সবকিছু দেখতে পেয়ে।

—আমার তেমন একটা সময় হয়ে উঠে না এসব দেখার। পড়ালেখা অবস্থায় থাকতে এই সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে থাকতাম আর এখন তো আরও আগেই সময় হয় না।

—ওহ আচ্ছা।

— হুম! তোমাকে আমার কিছু বলার ছিলো কনক তাই এখানে আনা। না হলে বাসায় পৌঁছে যাবে আসতাম।

—কি বলবেন?

কনক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে আয়ানের তখনও আকাশের দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ। আকাশের দিকে তাকিয়েই বললো সূর্যাস্ত দেখো আগে এটা মিস হয়ে না যায়। কনকও আবার আকাশের দিকে তাকালো। সূর্য ধীরে ধীরে অস্ত গেলো কনকের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে এক চিলতে হাসি। কনক আয়ানের দিকে ফিরে দেখে আয়ান তার দিকেই তাকিয়ে আছে৷
—এবার বলুন।

—কনক এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে আমার কথা বলতে ভালো লাগে না। যা বলি সরাসরি বলে দিচ্ছি। আসলে আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি। তবে এখন থেকে না অনেক আগে থেকেই। তাই তোমাকে অনেক খুজেছি কিন্তু পাই নি। তারপর একদিন তোমাকে লেকের কাছে দেখতে পাই, তারপর আবার তোমার বাসার সামনে। সেখান থেকে তোমাদের বাসার দারোয়ান থেকে তোমার সম্পর্কে জানি। তারপরের দিন তুমি নিজে থেকেই কথা বললে। আমি ভাবতেই পারছিলাম না তুমি আমার সামনে ছিলে। তারপর আবার আরেক ছুতো মিলল ত্রিশ টাকা। ওইটা নিয়েও দুই তিনদিন তোমার সাথে দেখা করতে গেলাম। বিগত কিছু দিনও আমি তোমার সাথে দেখা করতে যাই কিন্তু তোমার সাথে তূর্যকে দেখেই মাথা গরম হয়ে যেতো। সে তোমার সাথে এভাবে হাসাহাসি করে আমার সত্যি সেসবে খুব জেলাস ফিল হতো। আমি ভাবতে লাগলাম তোমরা হয়তো রিলেশনে আছো, তবুও তোমার সাথে কথা বলা জরুরি তাই রোজ যেতাম কিন্তু তূর্য কলেজের সামনেই থাকতো তাই রাগে দেখা না করেই চলে আসতাম।

কনক খুব মনযোগ দিয়ে সব শুনছে। তার নিজেরও খুব অবাক লাগছে এসব শুনে।
—তারপর কি হলো বলুন

—তারপর আজ ভাবলাম একবার কথা বলেই নেই৷ তাই চলে আসা আর কি। এত কথা বলেও লাভ নেই মেইন পয়েন্টে আসি। এখন মেইন কথা হলো আমি তোমাকে ভালোবাসি কনক, খুব ভালোবাসি। তুমিও যদি আমার জন্য তেমন কিছু ফিল করে থাকো আমাকে জানিও। এত জলদি করার কিছুই নেই আমি অপেক্ষা করব সমস্যা নেই।

—আমার দেরি হচ্ছে বাসায় যাওয়া দরকার।

—ঠিক আছে চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।

আয়ান আশাহত হলো কনকের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে। তবে কনক নাও বলে এটাও একটা ভরসার স্থান। আয়ানের শুকনো উদাস মুখটা কনকের চোখ এড়ায় নি। বাইক এসে থামলো কনকের বাসার সামনে। কনক নেমে গেলো বাইক থেকে। কিছুটা যাওয়ার পর কনক আবার আয়ানের কাছে ফিরে আসে। আয়ান তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি চঞ্চল কাঙ্খিত কিছু শুনতে পারবে সেই জন্য।
—আয়ান আপনাকে আমার ভালো লাগে কিন্তু ভালোবাসি কিনা জানি না আমি নিজেও। তাই কোনো কিছু বলে আপনাকে মিথ্যে আশ্বাস দিতে চাই না আমি। আশা করি আপনি বুঝতে পারবেন আমি কি বলতে চাইছি।

— হুম বুঝতে পারছি। আমিতো বললাম তুমি টাইম নাও আমার সমস্যা নেই।

—আচ্ছা এখন তাহলে আসি। আল্লাহ হাফেজ।

— ওকে আল্লাহ হাফেজ।

কনক কিছুটা এগিয়ে গেলে আয়ান আবার পেছন থেকে ডাক দেয়। কনক পেছনে ফিরে দেখে আয়ান তার দিকে এগিয়ে আসছে।
—তখন তোমাকে বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে যেটা আনতে গেলাম সেটাই দিতে ভুলে গেছি। আসলে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। প্রথম কাউকে ভালোবাসার কথা বললে যা হয় আর কি।

আয়ান একটা লাল গোলাপ কনকের সামনে এনে ধরলো।
—আমার আসলে ফিল্মী স্টাইলে কিছুই করা হলো না সবকিছুই কেমন সাদামাটা তবুও যদি এই গোলাপটাকে গ্রহণ করো আর কি।

কনক মুচকি হাসলো আর আয়ানের হাত থেকে ফুল টা নিয়ে বললো,
— অনেক ধন্যবাদ। আর ভালো থাকবেন কাল দেখা হবে।

তারপর কনক ভেতরে চলে গেলো। কাল দেখা হবে কথাটি শুনেই আয়ানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সেও সেখান থেকে নিজের বাসায় চলে গেলো।
_________
আয়ান রাতের খাবার খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে নিজের রুমে। অফিসের কিছু কাজ করছিলো ঠিক তখন তার কনকের বলা কথাগুলো মনে পরছিলো। সূর্যাস্ত সূর্য উদয় নিয়ে তার বন্ধু কথা। সাথে সাথেই আয়ানের চেন্স জাগ্রত হলো।
—কনকের বন্ধুর নাম কথা। আর কনক তো আশ্রমে থাকত। কিন্তু এই কথা কে? একটা কল করে জিজ্ঞেস করব কি কনককে কথার ব্যাপারে। ও যদি আমাদের কথা হয় তাহলে?

আয়ান নিজের মোবাইল নিয়ে বারান্দায় গেলো। কনকের নাম্বারটা স্ক্রিনে আনলো। কি করবে ভাবছে , কল কি দিবে নাকু দিবে না?

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here