একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব -০৭

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৭.
#writer_Mousumi_Akter

কি অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে আমার বলার মত নয়।তরীর দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বললাম, ‘তরী তুমি না বললে যে এই ওয়াশ রুমে দাদা যায়।’
‘আমি তো তাই ই জানতাম,বাট আজ ভাইয়া গেলো কেনো?’
‘উনাকে তো যেতেই হবে,উনি না গেলে আমার সাথে অঘটন টা ঘটতো কিভাবে।বাই দ্যা ওয়ে তোমার ভাইয়ার কি টয়লেট ক্লিয়ার হয়েছে নাকি আমার ডাকাডাকিতে বেরিয়ে এসছে।’
‘ভাবি ভাইয়া যে লজ্জা আজ পেয়েছে তাতে টয়লেট চিরদিনের জন্য আটকে গিয়েছে কিনা কে জানে।এমন লজ্জা জীবনে পেয়েছে কিনা সন্দেহ আছে।আর আমিও লজ্জায় ভাইয়ার সামনে যেতে পারব না কোনদিন।’
‘ধুর! এ কি কোনো ঘটনা নাকি।উচিত ছিলো দরজা খুলে হাত ধরে বের করে আনা।’
তরী আবার ও হাসল আমার কথা শুনে।এই হাসিটা ওর ভেতর থেকে এসেছে।মানুষ মন থেকে হাসলে চেহারায় অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।সেই সৌন্দর্য্যর কাছে পৃথিবীর সব সৌন্দর্য বেমানান।তরিকে হাসতে শেখাবো, বাঁচতে শেখাবো নিজের জন্য,অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শেখাবো,লেখাপড়া শেখাবো।তরীকে নারীর সম্পূর্ণ রুপে তৈরি করে ছাড়ব।এর জন্য আমাকে অনেক ছলনা আর মিথ্যার আশ্রয় ও নিতে হতে পারে কারণ ছলনা যারা করে তাদের সাথে ছলনা ই করতে হয়।ক্ষমা করো আল্লাহ তরীর জন্য আজ থেকে আমাকে নামতে হবে মিথ্যা আর ছলনার যুদ্ধে।
তরীর হাসি মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম,

‘তরী হাত ধুয়েছো এসো খেতে হবে।’

‘আমি খেয়ে নিবো আপনি যান।ভাইয়া অপেক্ষা করছে খাওয়ার জন্য।দাদার হুকুম আপনাদের একসাথে খেতে হবে।এক সাথে না খেলে প্রেম বাড়ে না।’

‘করুক অপেক্ষা,তোমার ভাইয়াকে একটা প্রেমের শহর বেটে গিলালেও তার মাঝে প্রেম ট্রেম ফিলিংস আসবেনা। আগে তোমার খেতে হবে।আজ আমি তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো বেবি।’

‘আমাকে আপনি খাইয়ে দিবেন।’

‘হ্যাঁ দিবো তো!এক বোন কি আরেক বোন কে খাইতে দিতে পারেনা।’

‘আচ্ছা ভাবি পরে দিয়েন,আজ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’

‘আজ ই মানে এক্ষুনি, চলো রান্নাঘরে।’

দুজনে হাত ধুয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করলাম।ডায়নিং থেকে রোশান স্যার আর আমার খাবার লুকিয়ে রান্নাঘরের ভেতরে নিলাম।খাবার দেখে তরী বলল,

‘ভাবি এসব তো আপনাদের দুজনের খাবার।’

‘চুপ তুমি এসব খাবে আর রোশান স্যারের জন্য তোমার জন্য রাখা খাবার নিয়ে যাবো।খাবার নিয়ে গিয়ে বলব উনার মা আমাদের জন্য এসব খাবার রেখেছে।’

‘কেনো ভাবি এমন করবেন?আম্মা তো আপনাকে ভালবাসেন।’

ভাত মাখিয়ে তরীর মুখে গুজে দিয়ে বললাম,

‘আমাকে ভালবাসে বলে আমি কি করব।না মানে আমাকে কি করতে বলছো।ওই মহিলার সাথে মিশে তোমাকে অত্যাচার করব।আমার কি জীবনের ভালবাসার অভাব পড়েছে যে ওই সুযোগ সন্ধ্যানি রওশন জামিল মহিলার ভালবাসায় গদগদ হয়ে যাবো।এসব খারাপ মানুষের ভালবাসা আমি চাইনা বুঝলে।তুমিতো শ্বাশুড়ি কে ভীষণ ভালবেসেও তার মন পেলে না।এবার শ্বাশুড়ি বুঝবে ভালবেসে মন না পেলে কেমন লাগে।শ্বাশুড়ি আমাকে পর্যাপ্ত ভালবেসেও যখন মন পাবেনা তখন উনার মন ডেকে বলবে এর চেয়ে তরী হাজার গুন ভাল ছিলো।এর পরেও যদি ভাবে না বেটার বউ দুইটাই খারাপ সে ওশানের প্রেমিকাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসবে,দেখবে ওশানের প্রেমিকাকে আমি এর চেয়ে বেশী খারাপ তৈরি করব।উনাকে আমি বুঝিয়েই ছাড়ব উনি ভুল।উনার মুখে স্বীকার করিয়ে ছাড়ব তরী ই ভাল ছিলো। ‘

এরই মাঝে আমাদের ঘর থেকে এক মেয়ের হাসির বিকট শব্দ ভেষে আসছে।কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করছি মেয়েটা কি বলাবলি করছে।ভ্রু উঁচিয়ে তরীর কাছে জিজ্ঞেস করলাম,

‘তরী কে এসছে।’

‘ভাবি আম্মার ভাতিজি।ভাইয়াকে পছন্দ করে।আম্মার খুব ই ইচ্ছা ছিলো জিনাত আপুর সাথে ভাইয়ার বিয়ে দেওয়ার কিন্তু ভাইয়া রাজি হয়নি।আর দেখবেন এ বাড়িতে এসে নিজের ফুফুর দাপটে কি বাজে ব্যবহার করে আমাদের সাথে।কথায় ইংরেজি বলে শুধু।’

‘ওকে মাথায় রাখলাম।’

তরীর খাওয়া শেষ। ওর কেমন কাঁন্না পাচ্ছে।কাঁন্না আটকে বলল,

‘আজ কতবছর পর কেউ ভালবেসে খাইয়ে দিলো।আমার জীবনের আগন্তক হয়েই কি তুমি এসছো।’

‘এসব বলতে নেই।শোনো আমি তো নতুন বউ লজ্জা থাকা উচিত আমার নাহলে পাড়ার মানুষ সমালোচনা করবে।তুমি আমাদের এ খাবার গুলো আমাদের রুমে দিয়ে আসো।আমি একটু লজ্জা নিয়ে তোমার সাথে প্রবেশ করছি ভেতরে।’

তরীর সাথে নিজেদের রুমে প্রবেশ করেই চোখ গেলো জিনাত এর দিকে।পায়ের উপর পা তুলে বসে গল্প করছে রোশান স্যারের সাথে।আমি ঘরে ঢুকতেই রোশান স্যার আড়চোখে তাকালেন আমার দিকে।জিনাত কে বললেন,
‘ওর নাম সারাহ! তোমার ভাবি।’
জিনাত কেমন করে যেনো বিদ্রুপের দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে।আমার পা-থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে থেকে দেখে বলল,

‘সো বিউটিফুল, বাট।’

‘কি বাট।’

‘হাইট এ কম। ‘

‘কোথায় ঠিক ই তো আছে।এর থেকে আর কত হাইট লাগবে।’

‘লুক এট মি!’

এরই মাঝে তরী বলল, ‘ভাইয়া খাবার খেয়ে নিন, ‘

জিনাত আপু আসেন আমরা বাইরে যায়।ভাইয়া আর ভাবি এখন খাবার খাবে।’

‘দ্যাটস হুয়াই বাইরে যেতে হবে।’

‘হ্যাঁ দাদার হুকুম।’

‘আমি রোশান ভাইয়ার রুমেই থাকব।এই যে নতুন ভাবি আমাকে দেখে জেলাস ফিল করোনা।আমি তোমার বর কে কেড়ে নিবোনা।’

যাক এবার কথা বলার সুযোগ তো পেয়েছি অন্তত।অমায়িক হাসি দিয়ে বললাম,

‘আপনাকে দেখে হিংসা ফিলিংস হচ্ছেনা আমার।আর সে প্রশ্নই বা আসছে কেনো?’

‘না হতেই পারে,ভাবতে পারো আমার হাজবেন্ড এর রুমে এসে একান্তে হাজবেন্ড এর সাথে কথা বলছে কাহিনী কী?’

‘আপনার কি সেই ক্ষমতা আছে উনাকে কেড়ে নেওয়ার।যা বিয়ের আগে পারেন নি তা বিয়ের পরে কিভাবে সম্ভব।এত ওভার কনফিডেন্স কিভাবে আসে।’

‘বিয়ের আগে পারিনি মানে?’

‘কথাটা আপনি ই তুলেছেন তাই আমি বললাম।’

‘ওহ আমি তো ফান করেছি,বাট তুমি সরিয়াস হয়ে যাচ্ছো।’

‘আপনি আমার মাঝে সিরিয়াস এর কি দেখলেন,আপনি মজা করেছেন আমিও মজা করেছি।আল্লাহ ইংরেজি আপা আপনি মজা ও বোঝেন না। ‘

‘ইংরেজি আপা হুয়াই?’

‘আপনার প্রতি লাইনে লাইনে ইংরেজি বলার জন্য,আমি ভালবেসে নামটা দিলাম।’

‘ওহ তা তোমরা বেডে ঘুমোও নি কাল রাতে।’

‘খাটে না খাটের নিচে ঘুমিয়েছি।’

‘বাট হুয়াই।’

‘ফুলসজ্জার রাতে ক্রিকেট খেলতে।আপনি জানেন না, ফুলসজ্জার রাতে ক্রিকেট খেলতে হয়।আমরা সারারাত ক্রিকেট খেলেছি খাটের নিচে গিয়ে।’

রোশান স্যার চোখ বড় বড় করে তাকালেন আমার দিকে।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে অস্বস্তি ফিল হচ্ছে ওনার।তরী মুখে চেপে হাসছে।জিনাত একটা শুকনো কাশি দিয়ে বলল,

‘অসভ্য মেয়ে একটা।ওয়াশ রুম টা কোনদিকে যেনো।’

‘এ ঘরে টয়লেট,বাথরুম সব আছে কিন্তু ওয়াশ রুম নেই।’

‘মানে?’

‘মানে এ কোনো শিল্পপতির ঘর নয় যে ওয়াশরুম থাকবে এখানে টয়লেট আছে।
টয়লেট কে ওয়াশরুম,ঘর কে রুম, খাট কে বেড, এগুলা আপনাদের মত শিক্ষিত আর বড়লোক রা বলে আমরা না।আমার আর তরীর সামনে এসে এসব বলবেন না।আর আমাকে অসভ্য বললেন কেনো?অন্যর ব্যাক্তিগত ওয়াশ রুম কেনো ইউজ করবেন শুনি।সভ্যতা নেই না।’

‘দেখলেন রোশান ভাইয়া আমাকে কিভাবে বলল অকারণে।’

‘আচ্ছা তোমরা বাইরে যাও আমি দেখছি।’

তরী আর জিনাত বাইরে চলে গেলো।রোশান স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘জিনাত তো খারাপ কিছু বলেনি।এরকম ইংলিশ তো টুকটাক তুমিও বলো।আর পা পাড়িয়ে ধরে ঝগড়া করলে কেনো?’

‘কেনো আপনার খুব লেগেছে তাইনা?’

‘কেনো আমার লাগবে কেনো?’

‘আপনার পুরণো প্রেমিকা বলে কথা।’

‘এটাও জেনে গিয়েছো।’

‘কিহ!সত্যি আপনার প্রেমিকা।’

‘না, ও আমাকে লাইক করে আরকি।’

‘ঠিক এ কারণেই ঝগড়া টা করলাম।যদি চুল ধরে টানতে পারতাম আরো শান্তি পেতাম।’

‘কিহ!এই মেয়ে তুমি এত সাংঘাতিক কেনো?আর তোমার প্রব্লেম ই বা কি?তুমি তো আর আমাকে ভালবাসো না।অন্য কেউ বাসলে প্রব্লেম কি?’

‘আমার কথা হলো আমি প্রেম করব না কিন্তু অন্য কারো সাথে করতেও দিবোনা।এর আগে যারা আমার পিছে ঘুরেছে না ও বলিনি হ্যাঁ বলিনি বিকজ অন্য কারো সাথে প্রেম করুক সেটা আমি হতে দেইনি।আপনার ব্যাপার টাও সেইম। আমি কাছে আসব না অন্য কাউকে আপনার পাশে ঘেষতেও দিবোনা।’

চলবে?..

(সবাই রেসপন্স করো, রেসপন্স দেখে এক্সট্রা পার্ট দিবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here