এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ২৫

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-২৫♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

ক্যাম্পাসের এক কোণায় গুটিসুটি হয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে তিন-বান্ধবী। কেউ গালে হাত দিয়ে, কেউ কপাল চেপে ধরে, কেউ বা মাথা নিচু করে। তাদের ওপর ক্রমান্বয়ে উত্তাপ ছড়িয়ে চলেছে রক্তরাঙা সূর্যটা। সে কি নিদারুণ আলো তার! খা খা মাঠ ফেটে উপচে পড়ছে শুনশান নীরবতা। মাঝেমধ্যে একটু পর পর ডেকে চলেছে কাক! তাদের “কা..কা!” ডাকেই নীরবতা থেমে থেমে কেটে আবারও গুমোট বেঁধে পড়ছে হঠাৎ করেই। কি করা যায়, কিই বা হবে এর পরিণতি ভেবেই কূল-কিনারা খুঁজে পাওয়া হয়ে উঠছে না কারো।

সবাই যখম ঘুমন্ত কুম্ভকর্ণের ন্যায় ঝিম ধরে বসা এমন সময় নীরবতার জাল ছিন্নভিন্ন করে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠল শিখা। চোখ-মুখ ইতিমধ্যে গরমের উত্তাপে লালচে-ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে তার। শিখার মৃদু স্বরে করা আওয়াজে গালে হাত রেখেই আড়চোখে তাকালো বাবলী। অন্বিতা মাথা নিচু রেখেই হতাশাগ্রস্ত শ্বাস ফেললো। শিখা কপালের ঘাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছতে মুছতে বললো,

—- হবেনা হবেনা, তোদের দ্বারা কিচ্ছু হবে না। যা করার এবার আমাকেই করতে লাগবে। চল উঠ সবাই, আজ যদি নিশু ভাইয়ের শিশু বের না করছি তাহলে আমার নামও শিখা নয়!

শিখার কথায় মাথা উঁচু করে ভ্রু কুঁচকালো অন্বিতা, বাবলী হতভম্ব হয়ে বোকাবোকা গলায় বললো,

—- কি বলছিস এসব? কি করতে চাইছিস তুই? জানিস না নিশান্ত ভাইয়া ছেলে? ওর আবার শিশু বের করবি কিভাবে তুই?

শিখা আবারও বিরক্তিতে কপাল চাপড়ালো। অধৈর্য্য গলায় বলে উঠল,

—- আবে মোটু, কথার কথা বললাম, বুঝিস না কেন! ধুর! আগে ভাবতাম তুই স্রেফ দেখতে শুনতে মোটা বাট এখন দেখছি তুই মাথাতেও মোটা!

বাবলী চটপট উঠে দাঁড়ালো। প্রতিবাদী গলায় বলল,

—- পাতলুর বাচ্চা, যেমন কথা বলেছিস, তেমনই প্রশ্ন করেছি। নিজের ভুল স্বীকার করতে শেখ! সেই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে খালি ম্যাগনিফাইন গ্লাস নিয়ে আমার পিছেই পড়ে আছিস! নিজে মনে হয় ধোঁয়া তুলসীপাতা!

বিনিময়ে আবারও তেতে উঠল শিখা। এক পর্যায়ে এসে কথা কাটাকাটি থেকে শুরু হলো তুমুল ঝগড়া! শিখা-বাবলীর এরকম শাঁকচুন্নিদের মতো চুল ছিঁড়াছিঁড়ি দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অন্বিতা। এতো এতো দুঃশ্চিতার মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত সব ক্যাচাল বিষের মতো ঠেকছে তার। একে নিজের মনের এমন অদমনীয় অনুভূতি তার ওপর হাড়কাঁপানো ভয়। এতোসব শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বান্ধবীদের অদ্ভুত অদ্ভুত সব রিয়াকশনে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠছে তার। যার দরুন ঘাড়ে ব্যাগ তুলে বিরক্তির বেড়াজালে ক্ষুব্ধ হৃদয় নিয়েই গটগট করে হেটে চললো সে।
অন্বিতা যখন ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে ফুচকাওয়ালা মামার দোকান পর্যন্ত পৌঁছেছে এমন সময় হুশ ফিরল দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর। একে অপরের সাথে ঝগড়ায় এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে অন্বিতার অগোচরে বেরিয়ে যাওয়াটা চোখে ধরাই দিতে পারেনি তাদের। নিজেদের বোকামির দরুন নিজেদের ওপরই ক্ষিপ্ত হলো শিখা-বাবলী। অন্বিতাকে থামাতে এক ছুটে পগারপার হলো তারাও।

___________________________

চারদেয়ালের মাঝে বন্দী জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নিশান্ত। বিষন্ন মনে জানালার বাহিরেই দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা তার। ভেবেছিল ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে সবার সাথে আলোচনা করে পড়াটা এগিয়ে রাখবে কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি আজ। আফসানা বেগমের এক বাক্যে করা নিষেধে থমকে যেতে হয়েছে তাকে। তার সাফ সাফ কথা “পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার পূর্বে বাড়ি থেকে কেনো বিছানা থেকেও এক চুল পরিমাণ নড়া যাবে না নিশান্তের!” মায়ের এমন উদ্ভট টাইপ সংবিধানে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চলেছে নিশান্ত। প্রাকৃতিক চাপটা কি তবে বিছানাতেই সারতে হবে এই ভেবেই দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে মন।
তবে উপায় নেই, যার দরুন মায়ের এই অদম্য জেদের পরিহাসে ভার্সিটিতে না গিয়ে চার দেয়ালের মাঝেই সীমানা বিস্তৃত হয়ে রয়েছে তার।

নিশান্ত বই ফেলে বালিশে ঠেস দিয়ে বসলো। পিঠের জ্বালাপোড়া আগে তুলনায় বেশ খানিকটা প্রশমিত হয়েছে অবশ্য। হঠাৎই প্রকান্ড চিৎকারে বেজে উঠলো ফোন। নিশান্ত ভ্রু কুঁচকে পায়ের পাশে পড়ে আর্তনাদ করতে থাকা মোবাইলটার দিকে তাকালো। দূর থেকেই বোঝা গেল নম্বরটা পরিচিত নয় “আননউন!” যার দরুন জখম ধরা শরীরটা চালিয়ে ফোনটা হাতে তুলতে ইচ্ছে হলো না আর। নিশান্ত কপালে ভাঁজ ফেলে চোখদুটো বুজে রইলো, ফোনটা ক্লান্ত হয়ে নিশ্চুপ হতেই আবারও আর্তনাদ করে উঠলো মুহুর্তেই। নিশান্তের কপালের ভাঁজ দৃঢ়তার সাথে ফুটলো আবারও, একরাশ বিরক্তি নিয়ে হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে তুলে রিসিভ করে লাউডে দিল সে। তৎক্ষণাৎ ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন গলায় ভেসে আসতে লাগলো চিরচেনা কন্ঠস্বর,

—– ওই ব্যাট্টা ফোন ধরস না কেন? বয়ড়া হলু নি?

নিশান্ত অলসতা ভরা কন্ঠে বালিশে হেলান দিয়েই বলল,

—– সিম কিনছোস জানতাম কেমতে? বল কি বলবি!

রিভানের হাত থেকে ফোনটা একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে সানি হন্তদন্ত হয়ে বলল,

—– এক্কেরে কেলেংকারী হয়ে গেছে মামা! সব শেষ হয়ে গেছে! বাঁচন যাইবো না আর মাম্মায়ায়ায়া…!

সানির চিৎকারে চোখ-মুখ কুঁচকালো নিশান্ত। বা হাতে ফোনের ভলিউমটা কমিয়ে তেতে উঠে বলল,

—– আবে…শালা! কানটা কি নিজের বাপের সম্পত্তি পাইছোস? চিল্লাইয়া মার্কেট ফাওন যাইবো না, কি হইছে সাফ সাফ ভ্যাঙ্গানো বাদ দিয়া কয়া ফেলা ব্যাট্টা!

—- পরশুর পরশুদিন থেইকা ফাইনাল এক্সাম শুরু…..!

সানির মুখ থেকে “ফাইনাল এক্সাম” শব্দটা কানের পর্দা অবধি পৌঁছতেই বুকটা ধক করে উঠলো নিশান্তের। ঘোড়ার বেগে লাফাতে শুরু করলো হৃদপিন্ডটা তৎক্ষণাৎ! নিশান্তের নীরবতার মাঝেই রিভান পাশ থেকে বলে উঠলো,

—- খাইছে কাম! এই চ্যাংড়াই নিউজটা শুইন্না ফিউজ হয়া পড়ছে তাইলে আমাগো কি হইবো? আমরা তো পৃথিবী ছাইড়া চান্দে যাইয়া সুইসাইড করমু রে সানি লিওন!

রিভানের সাথে গলা মিলিয়ে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলো সানিও। নিশান্ত দু-হাতে চুল খামচে ধরলো, চিৎকার মেরে বলল,

—- ধুরো ব্যাটারা থামা তোগো ভ্যাটকাইন্না মার্কা কান্না! আমি এক্সামের জন্যে আকাশ থেকে পড়িনি। এটা বুয়েট! হুট করে সারপ্রাইজের মতো এক্সাম হওয়ার রের্কড মেলা দিনের। মাগার কথা হচ্ছে আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হইনি! এখন আল্লাহ আল্লাহ কর যেন হাতটা ভালো হয়া যায় জলদি জলদি, নাইলে গোল্লা আর্ট করে আসবো এন্সার পেপারে।

সানি-রিভান টেনশনে থরথর করে কাঁপছিল, নিশান্তের কথায় কিছুটা হলেও আস্বস্ত হয়ে একসাথে গলা মিলিয়ে বলল,

—- দোস্ত, তুই খাঁড়া আমরা এক্ষুনি ব্যাগ-বস্তা বাইন্দা আইতাছি! আইজ থেইকা তোর বাড়ি আর আমাগো বাড়ি এক!

______________________________

অন্বিতা বাসায় ফিরেছে বহুক্ষণ, সেই তখন থেকে ফুলিয়ে রাখা মুখ নিয়ে চুপচাপ বসে আছে সে। তাকে হাসাবার আর কোনো পথ বাকি আছে নাকি জানা নেই শিখা-বাবলীর। এই পর্যন্ত কম করে হলেও ১০-১২ টার মতো বুদ্ধি বের করে এপ্লাই করেছে তারা। কিন্তু আফসোস! শত চেষ্টার পরও কোনো পজিটিভ ফলাফলের মুখদর্শন অবধি হয়নি তাদের। শিখা-বাবলী একে-অপরের দিকে আহত চোখে তাকালো। দূর মসজিদ থেকে ভেসে আসতে লাগলো মাগরিবের আযান। বাড়ি ফেরার সময় অতি নিকটে, আর ১ মিনিটও অতিরিক্ত হাতে নেই তাদের হাতে। আগামীকালই আবার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। কোনোরকমে হামাগুড়ি দিয়ে পাশ হলেই বিজয়ী হবে তারা, এরকম ইনটেনশন নিয়েই আপাতত গা ছাড়া ভাব তাদের। “একদিনে বই পড়ে কে পন্ডিত হয়েছে” এরকম একটা ভাবনা নিয়ে পড়াশুনো ফেলে অন্বিতাতে মগ্ন হয়েছিলো তারা। কিন্তু এখন যে আর দেরি করা যাবে না। বাড়ির দরজা তাদের ডাকছে অতি সন্নিকটে।
, যার দরুন বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো দুজনই। অন্বিতার মেঘে ঢাকা গোমড়া মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শিখা বলল,

—- অন্বি বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেছে। এখন যা বলছি তা মনোযোগ দিয়ে শুন, এটা তোর লাইফ, তোর ডিসিশন। তুই তোর জীবনটাকে কীভাবে সাজাবি সেটা সম্পূর্ণ তোর ওপর। এখন তুই নিশান্ত ভাইয়াকে নিজের মনের কথা বলনি কি না সেটাও তোর ওপরই। আমরা তোর বান্ধবী, হয়তো পাশে থেকে তোকে অভয় দিতে পারবো। কিন্তু ভাইয়ার মুখোমুখি তোকেই হতে হবে।

শিখার কথার মাঝেই অন্বিতার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল বাবলী,

—- অন্বি বোন আমার, এতো ভয় পাস না প্লিজ। দেখ ভাইয়ার মনে কি চলছে সেটা যেমন তুই জানিস না সেরকম ভাইয়া যে নেগেটিভ রিপ্লাইই দিবে এটারও তো কোনো শিওরিটি নেই তাইনা? আর তোর বর্ণনা শুনে আমার যা মনে হলো, জিজুও কিন্তু তোর প্রতি দূর্বল। আমি বলি কি, তুই আর নিজের মনে কথা চাপিয়ে রেখে ভেতর থেকে ক্ষত-বিক্ষত হোস না। যা হওয়ার তা হবেই, তুই বল দে ভাইয়াকে। অহেতুক অপেক্ষা করার কোনো মানেই হয়না।

অন্বিতা ছলছল চোখে মুখ তুলে তাকালো। উত্তেজনায় রীতিমতো ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে চলেছে তার মন। অসহায়ত্ব ভর করছে বহুগুণ! যার দরুন কাঁপাকাঁপা গলায়ই অস্ফুট স্বরে সে জবাব স্বরূপ বলল,

—- কিন্তু আমি কি করে বলবো রে বাবলী? আমি তো মেয়ে, মেয়েরা কি কখনোও আগ বাড়িয়ে নিজের মনের কথা কাউকে বলে নাকি?

—- সেটাই তো সমস্যা অন্বি! এই “লজ্জা” নামক শব্দটাই আজ অনেকে দীর্ঘশাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয়তো দেখা গেলো একটা ছেলে ও একটা মেয়ে দুজন দুজনকে ভালোবাসে ভীষণ। অথচ মুখ ফুটে কথাটার আদান-প্রদান না করায় আজ তারা আলাদা সংসারের বাসিন্দা মাত্র। আচ্ছা তুই বল, হোক ছেলে বা হোক মেয়ে, ভালোবাসা কি ছেলে মেয়ে দেখে আগে-পরে হয় নাকি? না তো! তাহলে প্রপোজ করার বেলায় কেনো হবে বলতে পারিস?

শিখার কথায় ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো অন্বিতা। বুক চিরে বেড়িয়ে এলো তার তীক্ষ্ণ দীর্ঘশ্বাস। যার উত্তাপে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়ে রইলো মন। বাবলী অন্বিতার কাঁধে হাত রাখলো, অভয় দেবার তাগিদে বলল,

—– তুই এতো টেনশন করিস না তো অন্বি! তোর মনে যা আছে তা গিয়ে ডিরেক্ট বলে বস। তোর মতো একটা সুইট-কিউট, চার্মিং লেডিকে কোনো ছেলে প্রত্যাখ্যান করার সাহস রাখে নাকি?

অন্বিতা দ্বিধা ভরা চোখে পলক ফেললো। শিখা-বাবলী একে-অপরের দিকে একবার তো একবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামা প্রকৃতিতে দৃষ্টি ফেললো। উপায় না থাকায় চটজলদি বেরিয়ে গেল দু’জনই। অন্বিতা কোল থেকে বালিশ নামিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ওযু করে ওয়াক্তের মধ্যেই নামাজ সেরে বসলো। না পারছে পড়ায় মনোযোগ স্থির করতে আর না পারছে এই অদ্ভুত সব চিন্তাধারার বেড়াজাল থেকে বেরুতে। দোমনা ভাব নিয়েই অবশেষে বই হাতে উঠে দাঁড়ালো অন্বিতা। উদ্দেশ্য নিশান্তের কাছে এক্সামের জন্য হেল্পের বাহানায় গিয়ে মনের সুপ্ত প্রেমাবেগের কথা পাড়া।

_____________________________

বোনকে পাশে পুতুল নিয়ে খেলতে বসিয়ে আগত এক্সামের প্রিপারেশন নেবার লক্ষ্যে খুবই মনোযোগ সহকারে বইয়ে মুখ গুঁজে ছিল নিশান্ত। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে কিঞ্চিৎ পরিমাণে ভ্রু কুঁচকে মুখ তুলে তাকাল সে। অন্বিতা দু-হাতে বই-পুস্তক বুকের সাথে চেপে ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কপালে তার জমেছে বিন্দুবিন্দু ঘাম। চোখে-মুখে নিদারুণ অস্থিরতা। যেনো একটু পরপরই শুকিয়ে আসছে তার গলা। সেই শুকনো গলাতেই কম্পনরত কন্ঠে অন্বিতা বলল,

—– আসতে পারি?

অন্বিতার গলা পেতেই এক ছুটে পা জড়িয়ে ধরলো নূহা। এতে যেন স্বল্প পরিসরে হলেও অস্থিরতা কমলো তার। নিশান্ত হাত থেকে বইটা পাশে রেখে মিষ্টি হেসে বলল,

—– আরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসুন আসুন।

অন্বিতা নূহার হাত ধরে বইগুলো টেবিলে রাখল। নিশান্তের বিছানার কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,

—– ইয়ে মানে, কাল থেকে তো এক্সাম শুরু তাই আরকি একটু সাজেশন চাইতে এসেছিলাম। বুঝতে পারছিনা এক্সাক্টলি কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়ব!

নিশান্ত অন্বিতাকে বসতে ইশারা করতেও নূহাও বিছানায় উঠে বসলো ভাইয়ের পাশে। নিশান্ত চিন্তিত গলায় বললো,

—– উমম…আচ্ছা আপনি এখানেই বসুন! আসলে হাটাচলা করতে একটু প্রবলেম হচ্ছে তো তাই। আমি আপনাকে সিম্পলি কিছু টাচ দিয়ে দিচ্ছি। ইন-শা-আল্লাহ কমন পড়বে।

অন্বিতা মৃদু হেসে বইগুলো বিছানায় এনে বসলো। নিশান্ত সাইড টেবিল থেকে নিজের পাতলা ফ্রেমের চশমাটা নিয়ে চোখে লাগিয়ে কলম হাতে তুলে মার্কিং করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো চটজলদি। যা একটু হলেও মনে গিয়ে লাগলো অন্বিতার। কি এমন হতো যদি আরো কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে থাকতো? এতো কিসের তাড়া ছেলেটার?

_____________________________

প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ বইয়ের খুটিনাটি সব ইম্পর্ট্যান্ট টপিকগুলো নিয়ে আলোচনার পর এসে থামলো নিশান্ত। মুখ দিয়ে হাফ ছেড়ে ভ্রু চুলকে বলল,

—– যেগুলো এতোক্ষণ ধরে মার্কিং করে দিলাম সেগুলো ভালো করে দেখে যাবেন ওকে? আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থিংক! পরীক্ষার আগের দিন কখনোই হাতে-কলমে প্রাকটিস করতে যাবেন না। কজ সময় সীমিত! এইরাতের ৪-৫ ঘন্টার মাঝেই কিন্তু আপনাকে পুরো বইটা একবার রিভাস দিতে হবে। ইটস ফাইনাল! আপনি শুধু চোখ বুলিয়ে যাবেন। যেগুলো একেবারেই কঠিন বলে মনে হবে লাইক আপনার ব্রেইনে এখনোও ধরতে পারেন নি সেগুলো হাতে-কলমে করবেন, তাও শর্টকাটে, বিস্তারিত করতে যাবেন না। আর বেশি রাতও জাগতে যাবেন না ভুলেও, এক্সামের আগের রাতে প্রপারলি ঘুমোনোর প্রয়োজন ভীষণ। এইদিন বেশি চাপ নেওয়া মানেই কিন্তু আগে যা যা ব্রেইনে ছিল তা টুপ করে গিলে খাওয়া! আন্ডারস্ট্যান্ড?

অন্বিতা নিশান্তের দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে মাথা ঝাঁকাল। নিশান্ত আবারও ভ্রু কুঁচকে বলল,

—– মিস অন্বিতা, আপনি বুঝেছেন তো এতোক্ষণ কি বললাম?

অন্বিতার হুশ ফিরল তৎক্ষণাৎ। লজ্জায় মাথা কেটে পড়ে যাবার মতো পরিস্থিতি দাঁড়ালো তার। চোখ নামিয়ে মাথাটা আবারও একতরফা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল সে। নিশান্ত মুচকি হাসলো, পুতুল নিয়ে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়া নূহার দিকে পলক ফেলে চেয়ে বলল,

—– আচ্ছা তো এখন বাসায় গিয়ে ব্রেইনটাকে একটু রিল্যাক্স দিয়ে পড়তে বসুন! এতো বেশি টেনশনের কিছু নেই, বেস্ট অফ লাক!

অন্বিতা অস্ফুটস্বরে “ধন্যবাদ” বলে আবারও নীরবতায় ঝিম ধরে রইলো। অন্বিতাকে এখনোও উঠে দাঁড়াতে না দেখে কপাল কুঁচকালো নিশান্ত। সামান্য ঝুঁকে এসে মৃদুস্বরে বলল,

—– আপনি কী কিছু বলতে চাইছেন মিস অন্বিতা?

নিশান্তের প্রশ্নে মুখ তুলে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো অন্বিতা, ভেজা গলায় বললো,

—– আপনার কী কোনো তাড়া আছে এখন?

নিশান্ত ঠোঁট বাঁকালো, ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল,

—– না তেমন তাড়া নেই বাট ৩ দিন পর থেকে তো আমাদেরও ফাইনাল এক্সাম তাই আরকি চাপ চলছে ভীষণ, আপনি বলুন সমস্যা নেই আমি আছি!

নিশান্তের প্রতিউত্তরে দপ করে নিভে গেল অন্বিতার আশার প্রদীপ। এতোটা সাহস সঞ্চয় করে এসে লাভ কি হলো তবে? সেই তো মনে চাপা ক্রন্দন মিশ্রিত আবেগ নিয়েই ফিরতে হবে তাকে। কেন কেন কেন? কেন তার সাথেই এমন হতে হবে? নিশান্ত কি নিজে থেকে কখনোই বুঝবে না তার মন! জমানো আবেগের মেঘ, বৃষ্টি হয়ে কী নামবে না আর তারা? ভেজাবে না ভালোবাসার চাদরে মোড়ানো অন্বিতাকে?
.
.
.
চলবে…………………💕

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here