এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ১৯

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
১৯.
ফজরের আজান কানে ভেসে আসতেই ইফতেখার উঠে বসে।একবার সাখাওতকে ডাকে।তারপর ওয়াসরুমে চলে যায়।ওযু করে এসে জায়নামাজে বসে।তার জীবনের ভুলগুলো সে শুধরাতে চায় মন থেকে।ক্ষমা চায় আল্লাহর কাছে।এটা সে প্রতি সকালেই করে।আজ সে খুব খুশি।মনের মাঝে এক আনন্দ বিরাজ করছে।নামাজের বিছানায় সাফার জন্যও তিনি দোয়া করেছে আজ।নামজ শেষে রুমের বাহিরে চলে আসেন তিনি।সকালের নাস্তা বানাবে। আজ শুক্রবার।তাই সবাই বাসায় থাকবে।সবার পছন্দের খাবার নিজ হাতে বানাবে ইফতেখার। যদিও সব সময় ইফতেখারই রান্না করে তবে আজকের দিনটা একটু আলাদা।
.
.
সাফা নামাজ পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলো আজকে।শুক্রবার মানেই ঘুম আর ঘুম।সাফার ঘুমের একবিস্তর রেকর্ড আছে।সে ঘুমালে এক ঘুমে সারা দিন রাত শেষ করতে পারে।সকালের মিষ্টি রোদ জানালা ভেধ করে সাফার চোখে মুখে পড়ে।সাফা বিরক্তির সাথে মুখ কুঁচকায়। সাফার পাশেই বই পড়ছে রাফা।এখন প্রায় সাতটা বাজে।প্রথম কড়া কিরণটাই সাফার মুখে পড়ছে।সাফার মুখ কুঁচকানো দেখে রাফা হাসে।মনে মনে ভাবে মেয়েটা সত্যিই মিষ্টির দোকান একটা।কি সুন্দর টোলটা।অদ্ভুত ভাবে শুধু মুখ কুঁচকালেই এই টোল দৃশ্যমান হয়।তার উপর কালো ভ্রু জোড়া কুঁচকালে তা আরো কালো লাগে।তখন সাফাকে সত্যিই মারাত্মক কিউট একটা মেয়ে লাগে।এমনেতেই এত কিউট একটা মিষ্টির দোকান।সাদা সুন্দর তো অনেকেই হয় কিন্তু চেহারায় মায়া মাধুর্য, আর আবেগ থাকাটা আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।চাইলেই সবাইকে আল্লাহ এত মায়া দিয়ে দেয় না।তবে ভালো মানুষের চেহারায় মাধুর্য আল্লাহই দেয়।রাফা সাফার মুখের চুলগুলো সরিয়ে দেয়।তারপর কাঁথাটা গায়ে টেনে দেয়।কিছুক্ষণ পরে না হয় ডাকবে ভেবে।
.
.
অভ্রর ইদানীং ঘুম হয় না।মনের তীব্র ব্যথা তাকে ঘুমাতে দেয় না।সব সময় মনটা কেমন খালি খালি লাগে।কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেনো তার মাঝে নেই।সব সময় মনকে বুঝাতে সে ব্যস্ত। বিছানায় উপুত হয়ে সাফার সেদিনের ছবিটা দেখে অভ্র।কেনো যেনো দেখতে ভালো লাগে।হারানোর বেদনা তাকে গ্রাশ করে।তবুও ভালো লাগে।একটা স্নিগ্ধ চেহারার বাচ্চা মেয়ে।দরজায় ধাক্কার শব্দ হয়।সাথে সাথে চোরের মত সে ফোনটা বালিশের নিচে চাপা দেয়।পিছন ফিরে দেখার জন্য মাথা উঁচু করে।দেখে নিভ্র দাড়িয়ে আছে।নিভ্রকে দেখে যেনো তার মনে ধরা পড়ার ভয় হয়।তাই একটু দ্রুত উঠে বসে।নিভ্রর গায়ে সাদা টাউজার আর সাদা গেঞ্জি। কানে ইয়ার ফোন।মাথা ভর্তি ঘাম।একপাশের চুলগুলো লেপটে পিছনে সেট করা।সামনের চুলগুলো সিল্কি আর লম্বাটে।তাই কিছুক্ষণ পরপর তা কপাল ছুঁয়ে যায়।নিভ্র চুল সরায়।গালের চাপা দাড়িতে একবার হাত বুলিয়ে হাসে।নিভ্রর গোপন কিছু হাসি আছে।তা সে তার গোপন মানুষ অভ্রর সামনেই হাসে।নিভ্রর হাসি দেখে অভ্রও হাসে।হেঁসে প্রশ্ন করে……..
—-“কিরে সূ্র্য কি ভুলদিকে নিজেকে উদিত করেছে নাকি???”

নিভ্র আবার হাসে।হেসে এসে অভ্রর পাশে বসে।তারপর জবাবে বলে……….
—-“না ঠিক ভাবেই উঠেছে ইংলিশ টিচার।তবে তুই আজ মর্নিং ওয়ার্কে গেলি না কেনো??অসুস্থ নাকি??

বলেই অভ্রর কপালে হাত দেয়।অভ্র হাসে। তারপর বলে…….
—-“না তেমন কিছু না।নামাজ পড়েই ঘুমিয়ে ছিলাম।”
—-“আমার মনে হয় তুই অসুস্থ(ভ্রুকুঁচকে প্রশ্ন করে নিভ্র)

অনমনেই জবাব দেয় অভ্র……..
—-“হয়তো।

নিভ্র থমকায়।চোখ পড়ার চেষ্টা করে।তবে অভ্রর চোখও তার মত।পড়া ওতো সহজ না।দুভাই গল্পে মাতে।এদের গল্প মানেই ভিন্নতা।আকাশ চুম্বী গল্প।পরিবার থেকে পেশায়।তারপর দেশ তারপর পৃথিবী আর শেষ একদম মহাবিশ্ব থেকে পরকালে চলে যায়।
.
.
সাফা ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা করে।তারপর বাগান দেখতে যায়।এই বাসায় আসার পর থেকে তেমন ঘুরে দেখা হয়নি তার।তাই সে বাহিরে পা রাখে।একপাশ জুড়ে বাগান।বাগানে ফুলের সাথে ফলের গাছও আছে ভরপুর। সাফা খুটিঁয়ে খুটিঁয়ে দেখতে লাগে।গোলাপ থেকে শুরু করে কৃষ্ণচূড়া,কদম গাছও আছে।সাফা গোলাপে হাত রাখে কত সুন্দর পাপড়ি গুলো।নরম তুলতুলে।আর এদের রংও ভিন্ন। সাফার মনে হয় কেউ তাকে দেখছে।তার পিছনে কেউ আছে।তাই একটু আড়াআড়ি চোখে তাকিয়েই সম্পূর্ন ঘুড়ে দাড়ায়।নিভ্র দাঁড়িয়ে আছে।সাফা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ নিভ্রর ঘামে ভেজাঁ চুল গুলো দেখে।মনে অদ্ভুত ইচ্ছে জাগে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম নিভ্রর।সাফার মনের আঠারো জাগে।মন চায় ছুঁয়ে দিতে।ডান হাতে মুছে দিতে।গায়ের উড়নাটা তুলে একটু কপাল স্পর্শ করতে।আর বাম হাতের চিকন আঙ্গুল দিয়ে সিল্কি চুলগুলো চোখের কোনা থেকে সরিয়ে দিতে।একটু নাড়িয়ে পানি ঝড়াতে।কিন্তু চাইলেই সব করা যায় না।কথাটা মনে করে সাফা নিজেকে সামলায়। নিভ্র চোখ ছোট করে।তাকে দেখে সাফার প্রথমের সেই চমকতা বিলিন হয়।নিভ্র সাফাকে পর্যবেক্ষণ করে।গায়ে তার সুতির থ্রিপিজ। গলা জড়িয়ে গায়ে বিশাল উড়না।চুলগুলো বরাবরের মত খোঁপা করা।তবুও কিছু ছোট অবাদ্ধ চুল এলোমেলো হয়ে চোখের খোটে ঠোঁটের উপর আঁছড়ে পড়ে আছে।নিভ্র হাত বাড়ায়।সরিয়ে দেয় চুলগুলো কোমল ভাবে তবুও তাতে প্রকাশ পায় ইর্ষা।প্রকাশ পায় অধিকার বোধ।আমি ছাড়া তোদেরও ছোঁয়ার অধিকার নেই।কথাটা মনে মনে আউড়ায়। সাফা হাবার মত তাকিয়ে থাকে।অদ্ভুত মোহনিয়তা ঘীরে ধরে তাকে।নিভ্র স্বাভাবিক। তার মাঝে বিচলিতের ছিটে ফোটাও নেই।যেনো যা করছে ভুল কিছু না।সাফা ভাবে সে কল্পনার রাজ্যে আছে।তাই হাত বারিয়ে চিমটি কাটে।নিজের হাতে না নিভ্রর হাতে।নিভ্র মৃদূ আওয়াজ করে।রাগী চোখে তাকায় সাফার দিকে।তারপর বলে………
—-“চিমটি দিচ্ছ কেনো??”
সাফা বুঝে স্বপ্নে নয়।সত্যিই হচ্ছে সব।মুহূর্তে লজ্জারা তাকে গ্রাশ করে।চোখে মুখে লাল আভা ফুটে উঠে।ঠোঁটজোড়া হালকা প্রশারিত করে নরম সুরে সাফা বলল…….
—-“স্যরি।তবে আপনি এখানে কেনো??”

নিভ্র তাকিয়ে থাকে সাফার গালে,চোখে, ঠোঁটে আর খুঁজে টোলটা।না পেয়ে মন ক্ষুন্ন হয়।তবে শান্ত ভঙিতে বলে…….
—-“বাগান যেহেতু আমাদের আমি তো আসতেই পারি।তা কি দেখছো??এত সকাল সকাল।
—-“ফুল।কত সুন্দর তাই না।আপনাদের বাগান সুন্দর খুব।কত কত গাছ।অনেক ফুলের নাম জানি না আমি।”
—-“আমিই না হয় বলে দিবো।চলো ঘুরে দেখাই।

সাফা খুশি হয়।নিভ্রর পাশে এসে দাঁড়ায়। সাথে সাথে চুড়ির ঝুমুড়ঝুমড় শব্দ নিভ্রর কানে বাজে।নিভ্র একবার ঘাড় কাত করে সাফার হাতের দিকে তাকায়।সাফা হলুদ চুড়ি পড়েছে।সাফার চুড়ির প্রতি পাগলামি দেখে নিভ্র মনে মনে হাসে।চুড়ি প্রেমি না হলে তো আর কেউ সকাল সকাল চুড়ি পরে ঘুড়েনা।নিভ্র ঠোঁট বাঁকায়। সাথে এক ভালো লাগও কাজ করে।সাফার পায়ে এখনো তার দেওয়া সে পায়েল আছে।নিভ্রর কেমন যানি সব নিজের নিজের মনে হয়।হলুদ চুড়ি সাদা হাতে মিশে আছে।পায়ের প্লাজুর নিচে কালো পাথরের পায়েলটা দেখা যাচ্ছে। বেশ মানিয়েছে।সাফা যে পায়েলটা খুলে ফেলেনি এটা দেখে নিভ্রর মনে খুশিরা দৌল খায়।মন বলে প্রতি সকাল এভাবেই শুরু হলে হয় না??একটা মিষ্টি সকাল। সাফা লাজুক হাসে।নিভ্র অবাক হয়ে সে হাসি দেখে।মেয়েটার মাঝে সব আছে। টক, ঝাল,মিষ্টি টাইপের সভাব।কখনো সে চাঞ্চল্যতায় ভরা কিশোরী,কখনো আবার আবেগি মেয়ে,কখনো বুঝের কথায় নিজেকে ফুটিয়ে তুলে কখনো আবার লাজুকলতার মত লজ্জায় লাল হয়।সাফা হাঁটে নিভ্রর পাশ দিয়ে।নিভ্রও হাঁটে।সবুজ ঘাসে দুজনেই হেঁটে চলেছে।কিছুদূর গিয়েই মালির সাথে দেখা।নিভ্রদের পুরানো মালি এনি।গাছ কাটা থেকে শুরু করে গাছে পানি দেওয়া এনার কাজ।আকবর চাচা বলে ডাকে সবাই।নিভ্রকে সাফার সাথে বাগানে দেখে তিনি যেনো রাতে সূর্য দেখেছে সেভাবে চমকায়।হা করে প্রশ্ন করে…….
—–“নিভ্র বাবা নি??তুমি এহানে কেমতে??

নিভ্র হেঁসে দুষ্টুমির সুরে বলে…….
—-“এমতে এমতে।
আকবর অবাক হয়।এই হাসি ছোটবেলায় দেখেছে সে আর দেখা হয়নি।আজ অনেক বছর পরে নিভ্র বাগানে এসেছে।বাগানের সামনে দিয়ে বাড়িতে ডুকলেও বাগানে সে কখনোই ডুকেনি।আকবর চাচা বললেন…….
—-“বাবা কিছু কি লাগবো??
—-“তেমন কিছু না।বাগান ঘুড়তে এসেছি।আর তোমার সাথে দেখা করতেও।আর একে তো চিনোই।চাচা এখন কি ফুল বা ফল হয় বাগানে??সময়টা কি???
আকবর হেঁসে বলে…….
—–“বর্ষাকাল এহন।তাই শীতকালের ফুল বাদে প্রায় সব ফুলই ফাইবা।
.
নিভ্র হেসে আরো দুইচারটি কথা বলে তারপর হাঁটে।সাথে সাফাও।সাফার ভালো লাগছে নিভ্রর স্বাভাবিক রূপ।হঠাৎই তার কাল রাতের কথাগুলো মনে পরে।সাফার মন খারাপ হয়।নিভ্রর প্রতি তার এক অদ্ভুত মায়া লাগানো অনুভুতি হয়।নিভ্র থামে সাথে সাফাও।একটা বিশাল গামলার দিকে হাত উঁচিয়ে বলে……..
—-“চিনো এই ফুলগুলো??
—-“হুম পর্তুলিকা ফুল এগুলো।আবার নয়টার ফুলও বলা হয়।
—-“তুমি তো দেখি অনেক ফুলই চিনো।সাদাটা কেমন লাগে।
—-“আরে পর্তুলিকা সাদা হয় না??আপনি যানেন না??
নিভ্র হাসে।তারপর সাফার আগে আগে হেঁটে একটু সামনে যায়।একটা জায়গা দেখিয়ে বলে……
—-“শুধু সাদা না লাল,কমলা, হলুদও হয় আবার রংবেরঙ এরও হয়।
সাফা অবাক হয়ে ফুলগুলো দেখে।কি সুন্দর ফুল।তাদের বাসার সামনে লাগিয়ে ছিলো তবে সবই মেজেন্ডা রং এর।কিন্তু এখানে এতো রংয়ের ফুল সে ভাবতেই পারছে না।সাফা হাটুগেড়ে বসে।চুড়ির ঝনকানি আবার নিভ্রর কানে আসে।সাফা নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে……..
—-“ছিঁড়ি কিছু ফুল??
—-“তুমি যানো না ফুল হাতে নয় গাছেই সুন্দর!!”(মৃদু হেঁসে বলে নিভ্র)
সাফা মুখ বাঁকিয়ে বলে…….
—-“পুষ্প আপনার জন্যে ফুটে না।অন্যের জন্য ফুটে বুঝলেন।তাই আমি নিতেই পারি।দুই তিনটে পর্তুলিকা।

নিভ্র আবার হাঁসে।তারপর একটু পাশ ঘেঁষে বসে বলে……
—-“ভাব_সম্প্রসারন।আমিও পড়েছি।তবে এটার মিনিং ভিন্ন কিন্তু।
—-“তো কি হয়েছে।একভাবে বুঝলেই হয়।
সাফার কথায় নিভ্র চুপ করে।তারপর নিজেই একটা সাদা পর্তুলিকা ফুল ছিঁড়ে নেয়।সাফার দিকে বাড়িয়ে বলে……..
—–“সাদাটা বেশি সুন্দর। এটা নেও।”
সাফা তাকায়।তারপর হেঁসে হেঁসে বলে……
—-“নিজেই প্রথমে জ্ঞান দিলেন আবার নিজেই ছিঁড়লেন।কষ্ট করে জ্ঞান দিলেন কেনো তাহলে???
—“কি আর করার পুষ্প আপনার জন্য ফুটে না অন্যকে সুভাষ দিতে আর সৌন্দর্যে মন্ডিত করতেই ফুটে। তোমর যুক্তি মেনে নিলাম।তাই ছিঁড়ে দিলাম।”

সাফা মুচকি হাঁসে। ফুলটা নিজ হাতে নেয়।কানের একপাশে গুঁছে দেয়।নিভ্র তাকিয়ে দেখে।সাফার চেহারাটাই তার কাছে একটা পর্তুলিকা মনে হচ্ছে। পুতুলের মত।সাফার স্নিগ্ধ মুখে হাসি ফুটে।নিভ্র পলক বিহিন তাকিয়ে তা দেখে।তারপর আবার হাঁটে।অনেক ফুলের সাথে পরিচায় করিয়ে দেয় নিভ্র সাফাকে।গাছ ভর্তি কদম দেখে সাফা তাকিয়ে থাকে কিছুসময়।মনে মনে ভাবে নিভ্র যদি বলতো…..”একগুচ্ছ কদম হাতে ভিজাতে চাই তোমার সাথে”
ইশশ্ সাফা লজ্জিত হয় নিজের ভাবনায়।নিভ্র এই লজ্জার মানে বুঝতে পারে না।কিছুসময় তাকিয়ে দেখে সে লজ্জা।সব ফুলের মাঝে নিভ্র বুঝতে পারে সাফার লাল কৃষ্ণচূড়া আর সাদা গোলাপ প্রিয়।ফুল নিয়ে নিভ্রর মনে তেমন আবেগ ছিলো না।তাই তার প্রিয় ফুল বলতে তেমন কিছু নেই।নিভ্র আকবর চাচাকে ডাকে।তাকে বলে…….
—-“চাচা সাদা গোলাপ ছিঁড়ে নিয়ে আসেন।একগুচ্ছ লাগবে।”
—-“আচ্ছা।
সাফা এই দিকে নেই ওই দিকে হেঁটে হেঁটে সে দেখছে।পেঁয়ারা গাছে ঠাসা পেয়ারা ধরে আছে।তার গাছে উঠতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু নিভ্র যদি চোর ভাবে তাই আর উঠেনা।দুজনেই বাগানের সামনে চলে আসে।অভ্র পাশের খোলা জায়গায় চা হাতে দাঁড়িয়েছিলো।তাদের দিকে এগিয়ে আসে এবার।সাফার কানে ফুল দেখে কিছুক্ষণ থমকে থাকে।আকবর চাচা একগুচ্ছ সাদা গোলাপ নিভ্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে……
—“সবচাইতে সুন্দর ডি আছে এহানে বাবা।
—“ধন্যবাদ চাচা।”

সাফা অবাক হয়ে ফুলগুলো দেখে।কি সুন্দর দেখতে। এই বাগান ঘুড়লেই তার হবে আর পৃথিবীতে ফুলের সন্ধানে যেতে হবে না তার।সাদা গোলাপ তার খুবই প্রিয়।নিভ্র ফুলগুলো সাফার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে…….
—-“এগুলো তোমার।
সাফা খুশিতে লাফিয়ে উঠে।দুইহাত একসাথে মুঠোয় বন্ধি করে চেঁচিয়ে বলে……
—-“সবগুলো আমার??”
—আমি চারপাশে আপাতোত কাউকে দেখছিনা।তাই এগুলো তোমার।
সাফা অভিমানির সুরে বলে……
—-“দেখলে বুঝি তাকেই দিতেন??
সাফার এমন বাচ্চাদের মত কথা শুনে নিভ্র মাথা ঝাঁকিয়ে হাঁসে।অভ্রও হাঁসে সাথে।অভ্রর দিকে তাকায় দুজনেই।অভ্র এগিয়ে আসে আরো একটু, হাসি মুখে বলে……
—-“সমস্য কি তোমাকে না দিলে তুমি মারবেল ফেলে নিভ্রর কোমড়ও ভেঙে দিও।

সাফা জিহ্বায় কামড় দেয়।জোড় পূর্বক হেঁসে বলে…….
—-“স্যরি বলছি না স্যার।ওটা আপনার জন্য ছিলো না ভুল করে আপনি চলে এসেছেন।

নিভ্র অবাক হয়।সে দুয়ে দুয়ে চার করে।তারপর অভ্রর দিকে একবার আর সাফার দিকে একবার তাকায়।বুঝতে পারে অভ্রর কোমড় সাফাই ভেঙেছে।নিভ্র কিছু ভাবে আবার নিজের মনকে নিজেই ঝাঁড়ে।অভ্র সাফার সাথে কথা বললেই তার রাগ হয়।কেনো যেনো তার মোটেও ভালো লাগে না।অদ্ভুত একটা জ্বালা কাজ করে।এই অদ্ভুত ফিলিংসের সাথে নিভ্রর আগে কখনোই পরিচায় হয়নি।তাই সে খুদ্দ নিজের প্রতি।প্রিয় ভাইয়ের সম্পর্কে এমন ফিলিংস হওয়া তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।সাফা খপ করে নিভ্রর হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে নেয়।নিভ্র অবাক হয়।সাফা হেসেঁ বলে……
—–“নিয়ে নিলাম।এখন এগুলো আমার।তাই আমার জিনিস আপনি চাইলেও কাউকে দিতে পারবেন না।ঠিক বলেছিনা ইংলিশ স্যার।

অভ্র হাসে।তারপর নিভ্রর সবুজ চোখের দিকে তাকিয়ে বলে……..
—–“যা তোমার তা কেউ কেড়ে নিতে চাইলেও নিতে পারবে না।যাকে তৈরি করাই হয়েছে তোমার জন্য সে চাইলেও তোমার না চাইলেও তোমার।যেমন গোলাপ গুলো সাফা, তোমার জন্যই ফুটেছে তাই তোমার হাতেই জায়গা পেয়েছে।তোমার মনের ঘরেই তার ঠাই হয়েছে।”

নিভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অভ্রর ঘন কালো চোখের দিকে।চশমাটা বেধ করেও সেই চোখ দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। এ যেনো অদ্ভুত গোলকধাঁধা। হঠাৎ করেই নিভ্রর মনে হচ্ছে তার আনকমন সবুজ চোখের চাইতে এই ডাগর কালো আঁখিই বেশি সৌন্দর্যে মন্ডিত। কি অদ্ভুত চোখ অভ্রর।এত বছরের জীবনে তার এই প্রথম এই কথাটা মনে হচ্ছে। সাফা উচ্চশব্দে বলে……
—-“সেটাই।যা আমার হবে বলে ভাগ্যে আছে তা আমারই হবে। আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী।তবে এখান থেকে একটা ফুল আপনারও।শতো হোক আপনার ভাই দিয়েছে বলে কথা।ভাগ আছে আপনার।”

সাফা একটা গোলাপ অভ্রর দিকে এগিয়ে দেয়।অভ্র সেই ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুসময়। নিভ্ররও চোখ আঁটকে আছে সেই ফুলে।অভ্র হাত বারিয়ে নেয় সে ফুল। মুচিক হেঁসে বলে……..
—–“আমার ভাইয়ের সব কিছুতে আমার অধিকার থাকলেও তার ভাগ্যে কিন্তু আমার অধিকার নেই।”
—-“তাতে কি সব সময় অধিকারে বিশ্বাসী হতে হবে নাকি??কখনো ভালোবাসা আর বন্ধনে বিশ্বাসী হতে হয়।বুঝলেন???(সাফা সরল গলায় বলে)
—-“হুম বুঝলাম।
সাফা নিভ্রর দিকে একটা ছোট কলি যুক্ত ফুল এগিয়ে দিয়ে বলে…….
—-“আপনার ভাগ্য ভালো। একটার সাথে দুটো ফ্রি।তবে কলিটা বেশি সুন্দর। এই নেন।এটা আপনার।কিছু দিলে কিছু পেতেও হয়।

নিভ্রর গম্ভীর ভাব কাঁটে।ফুলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সে ভাবে হয়তো সত্যিই ভাগ্য ভালো।নিভ্র অনমনেই হাত বারিয়ে নেয় সে ফুল।হাতে কাঁটা গেঁথে যায়।নিভ্রর হাত কাঁটে একটু।তবুও ফুল ছাড়েনি সে।সাফা উত্তেজিত হয়ে বলে…….
—-“গোলাপে কাটাঁ থাকে আপনি জানেন না??আজব কেটেঁ গেছে তো। এখন কি হবে??ফুলটা আমাকে দিয়ে দেন।আর হাতে স্যাভলন লাগান।চলেন??”
—-“সকল সৌন্দর্যে দাগ থাকে।তা নাহলে সেটা সৌন্দর্য হিসেবে বিবেচিত হয় না।গোলাপের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাটাঁ। ফুলের সৌন্দর্য ছুঁয়ে দেখতে হলে কাটাঁর সাথে আলাপ তো হবেই।প্রকৃত সৌন্দর্যের খোঁজ পেতে হলে কাটাঁ খাওয়া উত্তম।এবার বলো তুমি বুঝলে??

নিভ্রর কথায় সাফা হাঁসে। অভ্রও হাঁসে। নিভ্রর কথাগুলো তার মনের।কিন্তু তা তার অগোচরেই বাহিরে আসছে।হয়তো একদিন নিজ ইচ্ছায় কথাগুলো তার মুখ দিয়ে আসবে।অভ্র এতে বিশ্বাসী।
.
.
#চলবে___________🍁
এই যে শুনে যান।আপনাদের কিছু বলার আছে..🍁

আসলে ধন্যবাদ কথাটা বলার আছে।অনেকেই গল্পে কমেন্ট করেন। ভাবেন লেখিকা পড়ে কি না??আমি পড়ি কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো গল্প লেখা বাদে আমার টাইপিং করতে ভালো লাগে না।আর আপনারা এত সুন্দর করে একগুচ্ছ অনুপ্রেরণা ঢেলেদেন কমেন্টে আমি কি বলে আপনাদের ধন্যবাদ দিবো ভেবে পাই না।তাই বলাও হয় না।আমি আগে ভাবতাম কমেন্ট করে কি আর হয়।কিন্তু এখন বুঝি কমেন্ট আসলেই অনুপ্রেরণার খোরাক।তাই আপনাদের ধন্যবাদ 🍁🍁

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন________________🍂

1 COMMENT

  1. অনেক সুন্দর গল্পটা আমার খুব ভালো লাগছে। আপু এরকম গল্প আরো চাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here