এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব -১০

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_১০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

শীতের রাত,সাথে গরম ধোঁয়া ওঠা চা’।পারার মোরে আড্ডা জমেছে বেশ’।মাঝে মাঝে শব্দ করে হাসির আওয়াজে শোনা যাচ্ছে।ইফাদ গিয়ে সবার সাথে যোগ দিল।অনেক দিন পর ইফাদকে পেয়ে সবাই ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো।ইফাদ সবার সাথে কুশল বিনিময় করে রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরলো।তানহা শুইয়ে শুইয়ে বই পড়ছিল।ইফাদ’ কে দেখে উঠে বসল।

–তোমার ভাইয়ের সাথে যে,দেখা করতে গিয়েছিলে।কার অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলে।আমার সাথে যে,তোমার বিয়ে হয়েছে।আমাকে স্বামী বলে মানো তো’ নাকি।যদি না’ মানো আমার বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে যত ভাই আছে।তাদের সাথে ঘুরে বেড়াবে আমি কিছু বলবো না।

–বিশ্বাস করুন আমি যেতে চাই নাই।

–কার অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলে।তোমার সামান্য লজ্জা থাকলে,যে ছেলে কাল তোমাকে ভরা রাস্তার মধ্যে মারল।আর আজকে তুমি তার সাথে দেখা করতে চলে গেলে’।একটাবার আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলে না।

–এমন ভুল আর হবে না।

–আবিরের সাথে যাওয়া’র অনুমতি কে’ দিয়েছে তোমাকে।একা যাওয়া’র সাহস তো’ তোমার হবে না। এটা আমি জানি।চৈতালি দিয়েছে।

–না আম্মা দিয়েছে।ইফাদ একটু অবাক হয়ে বলল আম্মা।কোনো কথা না বলে সোজা রোকেয়া বেগমে’র রুমে চলে আসলো ইফাদ।রোকেয়া বেগম পায়ে তেল দিচ্ছিলেন।ইফাদ’কে দেখে বলল।

–আয় বাবা ভেতরে বস।সারাদিন কোথায় যাস বল তো’।

–আম্মু তুমি তানহাকে আবিরের সাথে পাঠানোর আগে আমার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে ছিলে।আমি যে,তানহার স্বামী।আমার সাথে তানহা’কে বিয়ে দিয়ে নিয়ে আসছো।এই কথাটা তোমার মনে আছে।না-কি এটা-ও ভুলে গেলো’।

–ইফাদ আসলে..

–আম্মু তোমার বিবেক বাঁধা দিল না।যে,ছেলেটা ভরা রাস্তার মধ্যে তানহার গায়ে হাত তুললো।লোকে তানহা’কে নিয়ে আড়ালে কত বাজে কথা বলল।তুমি সেই ছেলের সাথে কিভাবে যেতে দিলে।ছেলেটা যদি তানহা’র কোনো ক্ষতি করে ফেলতো।তখন কি’ করতে তুমি।তানহা’র সন্মানের সাথে আমার সন্মান জড়িয়ে আছে।তানহা’কে নিয়ে কোনো কথা উঠলে-ই আগে আমার নাম চলে আসবে।এমনিতে-ই প্রবাসী ছেলেদে’র বউয়ের দুর্নামের অভাব নেই।বিকালে যখন আমি আবির আর তানহা’কে একসাথে দেখলাম আমি সহ্য করতে পারছিলাম না আম্মু।তানহা’কে আমি ভালোবাসি না মানছি।কিন্তু তানহা আমার বউ অন্য পুরুষের সাথে নিজের বউকে দেখলে না চাইতে-ও ভেতর থেকে কষ্ট অনুভব হয়।আমার ইচ্ছে করছিল।তানহাকে রাস্তার মধ্যেই কয়টা থাপ্পড় বসিয়ে দেই।কিন্তু আমি পারিনি আম্মু।মেয়েদের গায়ে হাত তোলা আমার স্বভাবে নেই।একদিন তানহা’কে মেরেছিলাম।ঘটনাটা এখনো আমাকে কষ্ট দেয়।আবির আর তানহা’কে দেখে চলে আসছিলাম।আমি কিছু বলতে পারি নি।কারন বিয়ে করে আমি তানহা’কে রেখে চলে গিয়ে ছিলাম।কোনো খোঁজ-খবর রাখি নাই।বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে।কখনো জানতে চাই নাই।এখন হঠাৎ করেই অধিকার ফলাতে যাই।তানহা যদি বলে উঠে আপনার এই অধিকার দুই বছর আগে কোথায় ছিল।বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি কখনো জানতে চেয়েছেন।দুই বছর পরে অধিকার ফলাতে এসেছেন।তখন আমি কি’ উত্তর দিতাম আম্মু।এই কথা গুলো ভেবে কষ্টটা বুকে চাপা দিয়ে হেসে তাদের সামনে দিয়ে চলে আসছি।আমি না হয় তানহা’র পাশে ছিলাম না।কিন্তু তোমরা তো’ ছিলে।তাহলে তুমি কেনো ঐ’ বেয়াদব ছেলের সাথে তানহা’কে পাঠালে বলো’।আমি এসব দেখার জন্য দেশে আসছি।আমার কষ্টটা না বাড়িয়ে দিলে-ও পারতে।প্রবাসে কারো ভালোবাসা না পাই।দিনশেষে রাতে শান্তি মতো নিরিবিলি ঘুমাতো পারি।প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারি।এসব অশান্তি পোহাতে হয় না।

রোকেয়া বেগম মাথা নিচু করে আছেন।ছেলের কথাতে-ই বুঝেছেন।ছেলে টা’ গভীর ভাবে কষ্ট পেয়েছে।ছেলে মানুষ কষ্টটা’কে খুব সহজে-ই আড়াল করতে পারে।ইফাদ ছেলে না হয়ে মেয়ে হলে,এখন-ই রোকেয়া বেগম’কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিত।রোকেয়া বেগম উপলব্ধি করতে পারছে।সে,কতবড় ভুল করে ফেলছে।

–তোর কথায় যুক্তি আছে ইফাদ।ছেলেটা আজকে আমাদের বাসায় এসে,এত ভালো ব্যবহার করেছে।না,চাইতে-ও বিশ্বাস করে ফেলছি।

–তোমরা মেয়েরা এমন কোনো কেউ একটু ভালো করে কথা বললে-ই গলে পানি হয়ে যাও।আজ তানহা’র কিছু হয়ে গেলে।

রোকেয়া বেগম চুপ করে আছেন।ইফাদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ধ্যাত বলেই নিজের রুমে চলে আসলো।তানহাকে উদ্দেশ্য করে বলল।

–শুনো মেয়ে তুমি আমার বাড়িতে আমার পরিচয়ে থাকো।তাই এখন থেকে কোনোকিছু করার আগে আমার থেকে অনুমতি নিয়ে করবে।যদি মনে করো।আমার থেকে অনুমতি নেওয়া’র প্রয়োজন নেই।নিজের ইচ্ছে মতো চলবে।তাহলে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে করবে।তুমি চাইলে আমার থেকে ডিভোর্স নিতে পারো।

–একদম বাজে কথা বলবেন না।অন্যায় করেছি একটা সেজন্য চুপ করে আছি।তারমানে এই না যে,আপনি যা-তা বলবেন।আমি সব চুপচাপ সহ্য করে নিব।আমি যদি মরে পঁচে-ও যাই।তবু্-ও আপনাকে ছাড়বো না।এই নিন আপনার ফোন আর আপনার মালা আপনি রাখুন।দু’টো জিনিস নিয়ে এত কথা শুনতে পারবো না।বলেই চলে গেলো তানহা।

–নিজে অন্যায় করেছে।আবার নিজেই রাগ দেখাচ্ছে।আর কোনোদিন দেখি খালি।বাসা থেকে একদম বের করে দিব।

তানহা চৈতালির রুমে আসলো।চৈতালি পড়তে বসেছিল।তানহা’কে দেখে বলল।

–কিছু বলবে ভাবি।

–তোমার ভাই আমার ওপরে রাগ করেছে।এখন আমি কি’ করবো।আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে।

–কেনো কি করেছো তুমি’।

তানহা দু’দিনের সব ঘটনা চৈতালি’কে খুলে বলল।

–আমার ভাইটা কতো ভালো।আমি হলে রাস্তার মধ্যেই কয়টা লাগিয়ে দিতাম।তোমার ভাইয়ের সাহস কম না।আম্মু এমন ভুল কি’ করে করলো।এখন যদি তোমার ভাই যদি বলে,আমাকে তানহার সাথে বিয়ে দিয়ে দিন।আম্মু কি’ তাই দিয়ে দিবে।খুব রাগ হচ্ছে আম্মু ওপরে।তোমার ভাই জানে না তুমি বিবাহিত।জেনেও এমন অন্যায় আবদার করে।কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিতে পারলে না।

–আম্মাকে কিছু বলো না চৈতালি।উনি কষ্ট পাবেন।তোমার ভাই আম্মাকে অনেক কথাটা শুনিয়েছে।কেনো যে,গেলাম।আমার-ই আসলে লজ্জা নেই।যে,ছেলে আমাকে মারলো আমি তার সাথে চলে গেলাম।

–তোমার’ও দোষ আছে ভাবি।এভাবে আর কখনো কোনো ছেলের সাথে আলাদা করে কথা বলতে যাবে না।আমার-ই খুব রাগ হচ্ছে।না জানি ভাইয়া’র কেমন লাগছে।ভাইয়া নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে পারে না।ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যায়।

–এখন আমি কি করবো চৈতালি।

–ভালোবেসে ভাইয়া’র রাগ ভাঙাবে।তুমি না ভাইয়া’র বউ।সবাই ভালোবাসার কাঙাল গো’ ভাবমনি বুঝছো।একটু ভালোবেসে বোঝালে ভাইয়া ঠিক বুঝবে।

–উনাকে দেখলে-ই আমার বুকের মধ্যে ধুকপুক ধুকপুক করে।কথা হারিয়ে যায়।হাত-পা কেমন অবশ হয়ে আসে।

–ঝগড়া করার সময় তো’ তোমার বুকের ভেতরে ধুকপুক ধুকপুক করে না।ফুল এনার্জি নিয়ে ঝগড়া করো’।

–রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না।মাথায় যা’ আসে বলে দেই।মাথা ঠান্ডা হলে যখন উপলব্ধি করতে পারি।তখন নিজেই বেশি কষ্ট পাই।

–আমার কাছে না থেকে নিজের বরের কাছে যাও।দেখো গিয়ে রাগ ভাঙাতে পারো কি’ না।কালকে আমার ক্লাস পরীক্ষা আছে।তানহা উঠে নিজের রুমে আসলো।ইফাদ ফ্লোরে শুইয়ে শুইয়ে ভিডিও দেখছে।তানহা ধীরে পায়ে এগিয়ে গিয়ে,ইফাদের মাথা কাছে বসলো’।ইফাদের বিপরীত পাশে রাখা ফোন আর ফুলে মালা নিয়ে বললো’।

–আমার কিপ্টা জামাই দুই বছর পরে,আমার জন্য কিছু নিয়ে আসছে।সেটা আমি নিব না তাই কখনো হয়’।ইফাদ শুনে-ও না শোনার ভান ধরে ফোনে মনোযোগ রাখলো।

–শুনুন না একটা কথা বলবো।

ইফাদ অন্য দিকে কাত হয়ে শুইয়ে পড়ল।তানহা একটু এগিয়ে গিয়ে ইফাদে’র হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নিল।

–সমস্যা কি’ তোমার এভাবে বিরক্ত করছো কেনো’।

–আপনি আমার সাথে কথা বলেন না কেনো’?আমার কি’ আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।সারাদিন বাসায় একা একা কাজ করে সময় পার করি’।

–তোমার কথা বলার মানুষের অভাব নেই।আমাকে আমার ফোন ফিরিয়ে দাও।

–আগে বলে কি’ করলে আপনার রাগ ভাঙবে।

–একটা কাজ করো দু’টো ইট নিয়ে এসো।আমার মাথায় বারি দাও।সারাজীবনের জন্য আমার রাগ কমে যাবে।

–খালি বাজে কথা বলেন।আপনি ফোনে সারাদিন কি’ করেন আমি দেখবো’।ফোনের পাসওয়ার্ড বলুন।

–বলবো না।

–কেনো’?

–আমার ফোনের পাসওয়ার্ড তোমাকে কেনো দিব’?

–আমি আপনার বউ তাই দিবেন।

–আবিরের সাথে দেখা করার আগে মনে রাখা উচিৎ ছিল।তোমার একটা জামাই আছে।তার-ও তোমার সবকিছু জানার অধিকার আছে।

–স্যরি আর হবে না।

–আমি’ও স্যরি পাসওয়ার্ড দিব না।

–বুঝেছি আপনি অনেক গুলো রিলেশন করেন।হাজার হাজার মেয়েদের সাথে কথা বলেন।সেজন্য আমাকে ফোনের পাসওয়ার্ড দিবেন না।

–বুঝেছো এখন আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করো’।তানহা মন খারাপ করে ইফাদের ফোন দিয়ে দিল।ইফাদ ফোন নিয়ে শুইয়ে পড়ল।তানহা আগে ন্যায় বসে রইলো।একটু পরে তানহা উঠে চলে গেলো’।

রাতে সবাই খেতে বসেছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।থমথমে পরিবেশ।ইফাদ খেয়ে উঠে চলে গেলো’।রোকেয়া বেগমে’র সাহস হচ্ছে না ছেলের সাথে কথা বলার।ছেলের অভিমান খুবই তিব্র।সবাই যে,যার মতো খেয়ে চলে গেলো’।

আবির নিজের রুমে বসে ডায়েরিতে কিছু একটা লিখছিল।তখন-ই হাসনা বেগম আবিরে’র রুমে প্রবেশ করে।

–আজকে তানহা’র কাছে গিয়েছিলি।

–হ্যাঁ গিয়েছিলাম।

–কিছু করতে পারলি’।

–আম্মু এখান থেকে যাও তো’।মেয়েটা ভালো আছে।মেয়েটা’কে ভালে থাকতে দাও।এভাবে আমার মাথায় আর বিষ ঢালবে না।

–তানহা আমাদের ঠকিয়েছে।

–তানহা আমাদে’র ঠকায়নি আম্মু’।তুমি তানহা’কে ঠকিয়েছো’।তানহার নামে মিথ্যা কথা বলে,আমার কাছে,কেনো ভালো সাচ্ছো আম্মু।তোমার মুখে মিথ্যা কথা মানায় না আম্মু’।

হাসনা বেগমে’র মুখ চুপসে গেলো।হঠাৎ করে ছেলের কি হয়ে গেলো।ছেলে উল্টো সুর গাইছে।বিষয়টা খুব করে ভাবাচ্ছে হাসনা বেগমকে।হাসনা বেগম আবিরের রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।

–তোমাকে বলে ছিলাম না।মায়া সারাজীবন থাকে না।একটা সময় ঠিক কেটে যায়।এখন তানহা’র প্রতি আবিরে’র মায়া কেটে গিয়েছে।তুমি চাইলে-ও আবিরে’র মনে বিষ ভরতে পারবে না।

–তোমার ছেলের মধ্যে গোলমাল আছে।বলেই চলে গেলো হাসনা বেগম।মাহতাব সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল তোমার ছেলের মধ্যে ভেজাল আছে হাসনা।তোমার ছেলে ভালোবাসতে জানে না।তুমি যদি জানতে।

আবির তানহার ছবির দিকে তাকিয়ে বলল।

–শূন্যস্থান কখনো শূন্য থাকে না।ধুলাবালি দিয়ে হলে-ও তা’ পরিপূর্ণ হয়ে যায়।তুই আমার সেই শূন্যতা যা’ অনেক আগেই পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।তবু্-ও কেনো এত পাগলামি করি।দূরে থাকলে মন বলে তুই ভালো থাক।সামনে আসলে সবকিছু এলোমেলো যায়।তোর গল্পে আমি খারাপ থাকি।তবু্-ও তুই ভালো থাক।(“আবির”)

চলবে…..

(একটা গল্প সবার মনের মতো হবে না স্বাভাবিক।এটা নিয়ে কেউ অযথা বিতর্কে জড়াবেন না ধন্যবাদ।পেজে ফলোয়ার বাড়ছে না।যারা এখনো ফলো দেন নাই।সবাই দ্রুত ফলো দিন।অন্যরা আমার গল্প কপি করে টপ এ উঠে গেলো।আমার পেজ কেউ চিনে না।কেমন ডা লাগে।😒)#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_১০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

শীতের রাত,সাথে গরম ধোঁয়া ওঠা চা’।পারার মোরে আড্ডা জমেছে বেশ’।মাঝে মাঝে শব্দ করে হাসির আওয়াজে শোনা যাচ্ছে।ইফাদ গিয়ে সবার সাথে যোগ দিল।অনেক দিন পর ইফাদকে পেয়ে সবাই ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো।ইফাদ সবার সাথে কুশল বিনিময় করে রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরলো।তানহা শুইয়ে শুইয়ে বই পড়ছিল।ইফাদ’ কে দেখে উঠে বসল।

–তোমার ভাইয়ের সাথে যে,দেখা করতে গিয়েছিলে।কার অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলে।আমার সাথে যে,তোমার বিয়ে হয়েছে।আমাকে স্বামী বলে মানো তো’ নাকি।যদি না’ মানো আমার বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে যত ভাই আছে।তাদের সাথে ঘুরে বেড়াবে আমি কিছু বলবো না।

–বিশ্বাস করুন আমি যেতে চাই নাই।

–কার অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলে।তোমার সামান্য লজ্জা থাকলে,যে ছেলে কাল তোমাকে ভরা রাস্তার মধ্যে মারল।আর আজকে তুমি তার সাথে দেখা করতে চলে গেলে’।একটাবার আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলে না।

–এমন ভুল আর হবে না।

–আবিরের সাথে যাওয়া’র অনুমতি কে’ দিয়েছে তোমাকে।একা যাওয়া’র সাহস তো’ তোমার হবে না। এটা আমি জানি।চৈতালি দিয়েছে।

–না আম্মা দিয়েছে।ইফাদ একটু অবাক হয়ে বলল আম্মা।কোনো কথা না বলে সোজা রোকেয়া বেগমে’র রুমে চলে আসলো ইফাদ।রোকেয়া বেগম পায়ে তেল দিচ্ছিলেন।ইফাদ’কে দেখে বলল।

–আয় বাবা ভেতরে বস।সারাদিন কোথায় যাস বল তো’।

–আম্মু তুমি তানহাকে আবিরের সাথে পাঠানোর আগে আমার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে ছিলে।আমি যে,তানহার স্বামী।আমার সাথে তানহা’কে বিয়ে দিয়ে নিয়ে আসছো।এই কথাটা তোমার মনে আছে।না-কি এটা-ও ভুলে গেলো’।

–ইফাদ আসলে..

–আম্মু তোমার বিবেক বাঁধা দিল না।যে,ছেলেটা ভরা রাস্তার মধ্যে তানহার গায়ে হাত তুললো।লোকে তানহা’কে নিয়ে আড়ালে কত বাজে কথা বলল।তুমি সেই ছেলের সাথে কিভাবে যেতে দিলে।ছেলেটা যদি তানহা’র কোনো ক্ষতি করে ফেলতো।তখন কি’ করতে তুমি।তানহা’র সন্মানের সাথে আমার সন্মান জড়িয়ে আছে।তানহা’কে নিয়ে কোনো কথা উঠলে-ই আগে আমার নাম চলে আসবে।এমনিতে-ই প্রবাসী ছেলেদে’র বউয়ের দুর্নামের অভাব নেই।বিকালে যখন আমি আবির আর তানহা’কে একসাথে দেখলাম আমি সহ্য করতে পারছিলাম না আম্মু।তানহা’কে আমি ভালোবাসি না মানছি।কিন্তু তানহা আমার বউ অন্য পুরুষের সাথে নিজের বউকে দেখলে না চাইতে-ও ভেতর থেকে কষ্ট অনুভব হয়।আমার ইচ্ছে করছিল।তানহাকে রাস্তার মধ্যেই কয়টা থাপ্পড় বসিয়ে দেই।কিন্তু আমি পারিনি আম্মু।মেয়েদের গায়ে হাত তোলা আমার স্বভাবে নেই।একদিন তানহা’কে মেরেছিলাম।ঘটনাটা এখনো আমাকে কষ্ট দেয়।আবির আর তানহা’কে দেখে চলে আসছিলাম।আমি কিছু বলতে পারি নি।কারন বিয়ে করে আমি তানহা’কে রেখে চলে গিয়ে ছিলাম।কোনো খোঁজ-খবর রাখি নাই।বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে।কখনো জানতে চাই নাই।এখন হঠাৎ করেই অধিকার ফলাতে যাই।তানহা যদি বলে উঠে আপনার এই অধিকার দুই বছর আগে কোথায় ছিল।বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি কখনো জানতে চেয়েছেন।দুই বছর পরে অধিকার ফলাতে এসেছেন।তখন আমি কি’ উত্তর দিতাম আম্মু।এই কথা গুলো ভেবে কষ্টটা বুকে চাপা দিয়ে হেসে তাদের সামনে দিয়ে চলে আসছি।আমি না হয় তানহা’র পাশে ছিলাম না।কিন্তু তোমরা তো’ ছিলে।তাহলে তুমি কেনো ঐ’ বেয়াদব ছেলের সাথে তানহা’কে পাঠালে বলো’।আমি এসব দেখার জন্য দেশে আসছি।আমার কষ্টটা না বাড়িয়ে দিলে-ও পারতে।প্রবাসে কারো ভালোবাসা না পাই।দিনশেষে রাতে শান্তি মতো নিরিবিলি ঘুমাতো পারি।প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারি।এসব অশান্তি পোহাতে হয় না।

রোকেয়া বেগম মাথা নিচু করে আছেন।ছেলের কথাতে-ই বুঝেছেন।ছেলে টা’ গভীর ভাবে কষ্ট পেয়েছে।ছেলে মানুষ কষ্টটা’কে খুব সহজে-ই আড়াল করতে পারে।ইফাদ ছেলে না হয়ে মেয়ে হলে,এখন-ই রোকেয়া বেগম’কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিত।রোকেয়া বেগম উপলব্ধি করতে পারছে।সে,কতবড় ভুল করে ফেলছে।

–তোর কথায় যুক্তি আছে ইফাদ।ছেলেটা আজকে আমাদের বাসায় এসে,এত ভালো ব্যবহার করেছে।না,চাইতে-ও বিশ্বাস করে ফেলছি।

–তোমরা মেয়েরা এমন কোনো কেউ একটু ভালো করে কথা বললে-ই গলে পানি হয়ে যাও।আজ তানহা’র কিছু হয়ে গেলে।

রোকেয়া বেগম চুপ করে আছেন।ইফাদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ধ্যাত বলেই নিজের রুমে চলে আসলো।তানহাকে উদ্দেশ্য করে বলল।

–শুনো মেয়ে তুমি আমার বাড়িতে আমার পরিচয়ে থাকো।তাই এখন থেকে কোনোকিছু করার আগে আমার থেকে অনুমতি নিয়ে করবে।যদি মনে করো।আমার থেকে অনুমতি নেওয়া’র প্রয়োজন নেই।নিজের ইচ্ছে মতো চলবে।তাহলে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে করবে।তুমি চাইলে আমার থেকে ডিভোর্স নিতে পারো।

–একদম বাজে কথা বলবেন না।অন্যায় করেছি একটা সেজন্য চুপ করে আছি।তারমানে এই না যে,আপনি যা-তা বলবেন।আমি সব চুপচাপ সহ্য করে নিব।আমি যদি মরে পঁচে-ও যাই।তবু্-ও আপনাকে ছাড়বো না।এই নিন আপনার ফোন আর আপনার মালা আপনি রাখুন।দু’টো জিনিস নিয়ে এত কথা শুনতে পারবো না।বলেই চলে গেলো তানহা।

–নিজে অন্যায় করেছে।আবার নিজেই রাগ দেখাচ্ছে।আর কোনোদিন দেখি খালি।বাসা থেকে একদম বের করে দিব।

তানহা চৈতালির রুমে আসলো।চৈতালি পড়তে বসেছিল।তানহা’কে দেখে বলল।

–কিছু বলবে ভাবি।

–তোমার ভাই আমার ওপরে রাগ করেছে।এখন আমি কি’ করবো।আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে।

–কেনো কি করেছো তুমি’।

তানহা দু’দিনের সব ঘটনা চৈতালি’কে খুলে বলল।

–আমার ভাইটা কতো ভালো।আমি হলে রাস্তার মধ্যেই কয়টা লাগিয়ে দিতাম।তোমার ভাইয়ের সাহস কম না।আম্মু এমন ভুল কি’ করে করলো।এখন যদি তোমার ভাই যদি বলে,আমাকে তানহার সাথে বিয়ে দিয়ে দিন।আম্মু কি’ তাই দিয়ে দিবে।খুব রাগ হচ্ছে আম্মু ওপরে।তোমার ভাই জানে না তুমি বিবাহিত।জেনেও এমন অন্যায় আবদার করে।কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিতে পারলে না।

–আম্মাকে কিছু বলো না চৈতালি।উনি কষ্ট পাবেন।তোমার ভাই আম্মাকে অনেক কথাটা শুনিয়েছে।কেনো যে,গেলাম।আমার-ই আসলে লজ্জা নেই।যে,ছেলে আমাকে মারলো আমি তার সাথে চলে গেলাম।

–তোমার’ও দোষ আছে ভাবি।এভাবে আর কখনো কোনো ছেলের সাথে আলাদা করে কথা বলতে যাবে না।আমার-ই খুব রাগ হচ্ছে।না জানি ভাইয়া’র কেমন লাগছে।ভাইয়া নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে পারে না।ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যায়।

–এখন আমি কি করবো চৈতালি।

–ভালোবেসে ভাইয়া’র রাগ ভাঙাবে।তুমি না ভাইয়া’র বউ।সবাই ভালোবাসার কাঙাল গো’ ভাবমনি বুঝছো।একটু ভালোবেসে বোঝালে ভাইয়া ঠিক বুঝবে।

–উনাকে দেখলে-ই আমার বুকের মধ্যে ধুকপুক ধুকপুক করে।কথা হারিয়ে যায়।হাত-পা কেমন অবশ হয়ে আসে।

–ঝগড়া করার সময় তো’ তোমার বুকের ভেতরে ধুকপুক ধুকপুক করে না।ফুল এনার্জি নিয়ে ঝগড়া করো’।

–রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না।মাথায় যা’ আসে বলে দেই।মাথা ঠান্ডা হলে যখন উপলব্ধি করতে পারি।তখন নিজেই বেশি কষ্ট পাই।

–আমার কাছে না থেকে নিজের বরের কাছে যাও।দেখো গিয়ে রাগ ভাঙাতে পারো কি’ না।কালকে আমার ক্লাস পরীক্ষা আছে।তানহা উঠে নিজের রুমে আসলো।ইফাদ ফ্লোরে শুইয়ে শুইয়ে ভিডিও দেখছে।তানহা ধীরে পায়ে এগিয়ে গিয়ে,ইফাদের মাথা কাছে বসলো’।ইফাদের বিপরীত পাশে রাখা ফোন আর ফুলে মালা নিয়ে বললো’।

–আমার কিপ্টা জামাই দুই বছর পরে,আমার জন্য কিছু নিয়ে আসছে।সেটা আমি নিব না তাই কখনো হয়’।ইফাদ শুনে-ও না শোনার ভান ধরে ফোনে মনোযোগ রাখলো।

–শুনুন না একটা কথা বলবো।

ইফাদ অন্য দিকে কাত হয়ে শুইয়ে পড়ল।তানহা একটু এগিয়ে গিয়ে ইফাদে’র হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নিল।

–সমস্যা কি’ তোমার এভাবে বিরক্ত করছো কেনো’।

–আপনি আমার সাথে কথা বলেন না কেনো’?আমার কি’ আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।সারাদিন বাসায় একা একা কাজ করে সময় পার করি’।

–তোমার কথা বলার মানুষের অভাব নেই।আমাকে আমার ফোন ফিরিয়ে দাও।

–আগে বলে কি’ করলে আপনার রাগ ভাঙবে।

–একটা কাজ করো দু’টো ইট নিয়ে এসো।আমার মাথায় বারি দাও।সারাজীবনের জন্য আমার রাগ কমে যাবে।

–খালি বাজে কথা বলেন।আপনি ফোনে সারাদিন কি’ করেন আমি দেখবো’।ফোনের পাসওয়ার্ড বলুন।

–বলবো না।

–কেনো’?

–আমার ফোনের পাসওয়ার্ড তোমাকে কেনো দিব’?

–আমি আপনার বউ তাই দিবেন।

–আবিরের সাথে দেখা করার আগে মনে রাখা উচিৎ ছিল।তোমার একটা জামাই আছে।তার-ও তোমার সবকিছু জানার অধিকার আছে।

–স্যরি আর হবে না।

–আমি’ও স্যরি পাসওয়ার্ড দিব না।

–বুঝেছি আপনি অনেক গুলো রিলেশন করেন।হাজার হাজার মেয়েদের সাথে কথা বলেন।সেজন্য আমাকে ফোনের পাসওয়ার্ড দিবেন না।

–বুঝেছো এখন আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করো’।তানহা মন খারাপ করে ইফাদের ফোন দিয়ে দিল।ইফাদ ফোন নিয়ে শুইয়ে পড়ল।তানহা আগে ন্যায় বসে রইলো।একটু পরে তানহা উঠে চলে গেলো’।

রাতে সবাই খেতে বসেছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।থমথমে পরিবেশ।ইফাদ খেয়ে উঠে চলে গেলো’।রোকেয়া বেগমে’র সাহস হচ্ছে না ছেলের সাথে কথা বলার।ছেলের অভিমান খুবই তিব্র।সবাই যে,যার মতো খেয়ে চলে গেলো’।

আবির নিজের রুমে বসে ডায়েরিতে কিছু একটা লিখছিল।তখন-ই হাসনা বেগম আবিরে’র রুমে প্রবেশ করে।

–আজকে তানহা’র কাছে গিয়েছিলি।

–হ্যাঁ গিয়েছিলাম।

–কিছু করতে পারলি’।

–আম্মু এখান থেকে যাও তো’।মেয়েটা ভালো আছে।মেয়েটা’কে ভালে থাকতে দাও।এভাবে আমার মাথায় আর বিষ ঢালবে না।

–তানহা আমাদের ঠকিয়েছে।

–তানহা আমাদে’র ঠকায়নি আম্মু’।তুমি তানহা’কে ঠকিয়েছো’।তানহার নামে মিথ্যা কথা বলে,আমার কাছে,কেনো ভালো সাচ্ছো আম্মু।তোমার মুখে মিথ্যা কথা মানায় না আম্মু’।

হাসনা বেগমে’র মুখ চুপসে গেলো।হঠাৎ করে ছেলের কি হয়ে গেলো।ছেলে উল্টো সুর গাইছে।বিষয়টা খুব করে ভাবাচ্ছে হাসনা বেগমকে।হাসনা বেগম আবিরের রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।

–তোমাকে বলে ছিলাম না।মায়া সারাজীবন থাকে না।একটা সময় ঠিক কেটে যায়।এখন তানহা’র প্রতি আবিরে’র মায়া কেটে গিয়েছে।তুমি চাইলে-ও আবিরে’র মনে বিষ ভরতে পারবে না।

–তোমার ছেলের মধ্যে গোলমাল আছে।বলেই চলে গেলো হাসনা বেগম।মাহতাব সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল তোমার ছেলের মধ্যে ভেজাল আছে হাসনা।তোমার ছেলে ভালোবাসতে জানে না।তুমি যদি জানতে।

আবির তানহার ছবির দিকে তাকিয়ে বলল।

–শূন্যস্থান কখনো শূন্য থাকে না।ধুলাবালি দিয়ে হলে-ও তা’ পরিপূর্ণ হয়ে যায়।তুই আমার সেই শূন্যতা যা’ অনেক আগেই পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।তবু্-ও কেনো এত পাগলামি করি।দূরে থাকলে মন বলে তুই ভালো থাক।সামনে আসলে সবকিছু এলোমেলো যায়।তোর গল্পে আমি খারাপ থাকি।তবু্-ও তুই ভালো থাক।(“আবির”)

চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here