এক শহর ভালোবাসা পর্ব ৩১+৩২

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩১
#সুরাইয়া_নাজিফা

শান্ত বিকালে সূর্যের লালচে আলোয় ছাদের এককোণে কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে দুটো মানব মানবী।সূর্য অস্ত যাবে যাবে এমন অবস্থা। চারদিকে ফুরফুরে হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিচ্ছে মেয়েটার চুল। ছেলেটা সেই দিকে অপলক চেয়ে রইল। আর মেয়েটা ছেলেটার কাঁধ থেকে হালকা মাথাটা উঁচিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল। কারো চোখেরই পলক পড়ছে না যেন কত বছরের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।চুলগুলো উড়ে এসে বারবার মেয়েটার মুখে পড়ছে বিধায় ছেলেটা আলতো হাতে মেয়েটার চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিল।

ঐশী মুচকি হেসে বললো,
“কি দেখছো অমন করে? ”

তিমির খানিকটা হেসে বললো,
“তোমাকে? ”

“কেন আগে দেখোনি নাকি কখনো?”

“দেখেছি তো তবে আগে তো কখনো এতো কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি তাই এখন দেখছি মনভরে। ”

ঐশী তিমিরের কাঁধ থেকে মাথা তুলে বললে,
“ভালোবাসো?”

“কি মনে হয়?”

“মনে তো অনেক কিছুই হয় তবে আমি শিউর হতে চাই তাই তো জিজ্ঞেস করলাম। ”

“প্রতিটা মূহূর্ত তোমাকে অনুভব করি, তোমাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারিনা, তোমার হাসি মুখ দেখলে ভালো থাকি, কষ্টে থাকলে নিজে দ্বিগুন কষ্ট পাই এসব যদি ভালোবাসা হয় তাহলে ভালোবাসি। ”

ঐশী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তিমিরের দিকে কি অমায়িক ব্যবহার মানুষটার।এতটা ভালো মানুষ এতো ভালোবাসা কি ডিজার্ভ করত ও বুঝতে পারছে না। হয়তো জীবনে কোনো এক পূন্যের জোরে তিমিরের মতো এমন একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে। ঐশীর চোখ ছলছল করে উঠল,

“এই পাগলি এতো চুপ হয়ে গেলে কেন হঠাৎ? ”
“কেন ভালোবাসো এতোটা? ”

হঠাৎ ঐশীর প্রশ্ন শুনে অবাক হলো তিমির পরক্ষনেই হাসি মুখে জবাব দিলো,
“তুৃমি মানুষটাই এমন যাকে ভালো না বেসে থাকাই যায় না তাই ভালোবাসি।

ঐশী অন্যদিকে চেয়ে বললো,
“আচ্ছা আমি তোমার ভালোবাসা ডিজার্ভ করি না তিমির বলো?”

তিমির রাগান্বিত হয়ে বললো,
“এইবার কিন্তু বেশী বেশী হচ্ছে ঐশী। এসব কথা বললে কিন্তু এখন আমি এখান থেকে উঠে চলে যাবো। ”

ঐশী আতকে উঠে বললো,
“এতো রাগ করছো কেন আমার মনে শুধু কিছু প্রশ্ন ছিল তারই উত্তর খুজছি। ”

তিমির ঐশীর পাশে বসে ঐশীর মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,
“আমার ভালোবাসা তুমি ছাড়া অন্যকেউ ডিজার্ভ করে না তাই আমি তোমাকে ভালোবাসি। কেন নিজেকে ছোট ভাবছ? ”

ঐশী কিছুক্ষন চুপ করে রইল তারপর আবার বললো,
“তুমি জিজ্ঞেস করবে না আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা? ”

তিমির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“না। ”

ঐশী সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“কেন?”

“কারণ আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো।যে মানুষটা সারাজীবন নিজেই ভালোবাসা হীনতায় ভুগেছে সে যখন সত্যিকারে ভালোবাসার স্বাদ পেয়েছে তখন কি কখনো তার ভালোবাসার মায়াজাল ছেড়ে যেতে পারে। এতটুকু তো বিশ্বাস থাকাটা প্রয়োজন দুজন দুজনার মধ্যে। তাই আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তোমার আছে হয়তো আমি তোমাকে এতটা ভরষা এখনো দিতে পারিনি যার ফলে তোমার মনে এই প্রশ্ন গুলো জাগছে। ”

ঐশী ছলছল চোখে বললো,
“এভাবে বলো না তিমির বিশ্বাস করি তো নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করি তোমাকে।আমার জীবনে এখন যদি কোনো ভরষার, ভালোবাসার জায়গা থাকে সেটা শুধুই তুমি। এটা আমার সন্দেহ না নিজের সাথে নিজের একটা যুদ্ধ যেটা লড়তে লড়তে আমি আজ ক্লান্ত হয়ে গেছি। তুমি তো জানো আমি কতটা একা তাই পাশে কাউকে পেলে ভয় হয় হারাবার। ”

তিমির ঐশীর কপালে একটা চুমু দিয়ে ঐশীর চোখের পানি মুছে দিলো। তারপর ঐশীকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো,
“এখন আর তুমি একা নও আমিও আছি তোমার সাথে বুঝেছো জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে পাশে পাবে কথা দিচ্ছি। ”

ঐশীও তিমিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কখনো না ছাড়ার প্রতিজ্ঞায়।কিছুক্ষন দুজনে ওভাবেই রইল। তারপর ঐশী তিমিরের বুকের উপর থেকে মাথা তুলে কিছুটা ইতস্তত করে বললো,

“তিমির তোমাকে একটা কথা বলার আছে। ”
“বলো না কি বলতে চাও? ”
ঐশী একটু ভীত কন্ঠে বললো,
“ভুল বুঝবে না তো?”
তিমির ঐশীকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
“কখনো না।বলো? ”

ঐশী কিছুক্ষন চুপ করে রইল। বুকের ভিতর ডিপডিপ করছে। যদি কথাটা শুনার পর তিমির ওর পাশে না থাকে যদি ছেড়ে দেয়। তাহলে ও তো বাঁচতে পারবে না। কিন্তু ঐ কথাটা তো লুকাতেও পারবে না তাহলে তিমিরকেই ঠকানো হবে। মনের ভিতর যে বোঝাটা আছে সেটাও যাবে না। আর না জীবনে কখনো শান্তি থাকবে। তাই বলাটাই শ্রেয় মনে করল ঐশী।

তিমির ঐশীকে ইশারায় বললো,
“বলো?”
ঐশী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে বললো,
“আমি শানকে ভালোবাসতাম। শানকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখতাম। কি করবো একাকিত্ব জীবনে না ছিল বাবা মা বা আত্মীয়-স্বজনদের ছায়া না ছিল বন্ধু বান্ধব। যার কারণে শানকে পেয়ে ওকেই আকড়ে ধরেছিলাম। শান আমার একা জীবনে প্রথম বন্ধু ছিল। কিন্তু এটা আমার ভুল ছিল যে শানের বন্ধুত্বের হাতকে আমি ভালোবাসার হাত ভেবেছিলাম। ”

কথা গুলো বলার সময় ঐশীর গলা ধরে আসছিলো। ঐশী কথা গুলো চোখ বন্ধ করেই বলছে ওর চোখ থেকে জরজর করে পানি পড়ছে পারবে না তিমিরের চোখে চোখ রেখে এসব বলতে। ঐশী কিছুক্ষন থেমে আবার বলা শুরু করল,

“কিন্তু শান আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে ও শুধুই আমার বন্ধু ছিল ভালোবাসার মানুষ নয়। যদিও শান চাইলেই আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আমাকে ইউজ করতে পারত তবে সে সেটা না করে আমাকে সত্যির মুখোমুখি হতে সাহায্য করেছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে শানের প্রতি ভিতর থেকে সম্মান বোধ জাগ্রত হয়। কিন্ত যাই হোক না কেন বলে না মানুষ প্রথম ভালোবাসা কখনো ভুলে না হয়তো শান আমাকে ভালোবাসেনি কিন্তু আমি তো শানকে ভালোবেসেছি তাই ভুলতে পারিনি তবে….।”

ঐশীর কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে তিমির বললো,
“তবে তুমি এখন আমাকে ভালোবাসো সেটা তোমার বলার প্রয়োজন নেই আমি বুঝি। তোমার ডিপ্রশনের কারণ শানের থেকে পাওয়া রিজেকশন ছিল সেটাও আমি জানি। তুমি শানকে কতটা ভালোবাসতে সেটা তোমার ডায়েরীর প্রতিটা পাতা বলে আমাকে। তবে সেটা তোমার অতিত ছিল। আর আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে তোমার অতীতকেও ভালোবাসি। তাতে কোনো সাফাইয়ের প্রয়োজন নেই। আর যদি তোমার কথা ধরি তাহলেও এখনি তুমি নিজেই শিকার করেছো তুমি শানকে ভালোবাসতে তারমানে এখন তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি কখনো তোমায় বলব না যে তুমি শানকে পুরোপুরি ভুলে যাও। বরং আমি তোমাকে এতটা ভালোবাসবো যে কংনো তোমার অতিত তোমার মনেই পড়বে না। আমার শর্ত শুধুই একটা জীবনে যতদিন বাঁচবে শুধু আমাকেই ভালোবাসবে। আমিই থাকবো তোমার সাথে আর কিছু না। ”

ঐশী এখনো চোখ বন্ধ করে ছিল। তিমিরের বলা প্রতিটা কথায় কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এতে ওর অপরাধবোধ আরো বাড়ছে।মানুষটা কতটা সহজে বুঝে গেল ওর কথা গুলো।এতটা তো ঐশীও গুছিয়ে বলতে পারত না। এতটা বুঝতে আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি ঐশীকে। তিমির ঐশীর মুখটা নিজের দুইহাতের মধ্যে নিয়ে ঐশীকে স্লো ভয়েসে বললো,

“চোখ খোলো?তাকাও ঐশী আমার দিকে। ”
তিমিরের কথা শুনে ঐশী ধীরে ধীরে নিজের চোখ খুলে তিমিরের চোখের দিকে তাকালো তিমির মিষ্টি করে হেসে বললো,

“এভার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো আমার চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছো?”

ঐশী মাথা নাড়িয়ে বললো,
“হুম। ”
“ব্যাস তাহলে এসব কথা গুলো আর কখনোই তুলবে না আর না নিজেকে ছোট ভাববে। আমি সব পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থেকে তোমায় আগলে রাখব। সবসময় তোমার পাশেই থাকব। ”
তখনই ঐশী হুট করে বলে উঠলো,
“বিয়ে করবে তিমির। ”
তিমির হেসে বললো
“ধুর পাগলি বিয়ে করবো বলেই তো ভালোবাসি। ”
“তাহলে আমাকে বিয়ে করে নেও আজই এখনি পারবে?”
তিমির একটু আশ্চর্যান্বিত,
“এখনই? ”
“হুম কেন পারবে না?তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। আমি তোমাকে হারাতে চাই না তিমির। ”
তিমির একটা লম্বাশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো আর ঐশীর হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বললো,
“চলো আমার সাথে।”
ঐশী অবাক হয়ে বললো,
“কোথায়? ”
“কেন তুমিই তো বললে বিয়ে করবে। তো দেরী করে লাভ কি। আর কতকাল একা থাকবো এখন তো বিয়ে করে নেওয়া উচিত তাই না। ”

তিমিরের কথা শুনে ঐশীর মুখে হাসি ফুটল। আজ ওর ও একটা স্বপ্ন পূরণ হবে নিজের একটা সংসার হবে নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে এরচেয়ে বেশী জীবনে আর কি লাগে।


শান যাওয়ার পরে আমিও রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। নিচে যেতেই আগে আপুর সাথে দেখা,
“আরে বাহ আমার বোনটাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে তো?ওয়াও বেলী ফুলের মালা কে দিলো হুম।রুমে তো ছিল না। ”

আপু চোখের ইশারায় বললো। আমি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসলাম। আপু আবারও বললো,
“হুম হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে গিফটটা স্পেশাল কেউ দিয়েছে তাই তো লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেছে। ”

আরশ ভাইয়া আপুকে থামিয়ে বললো,
“আহা স্মৃতি কেন মেয়েটাকে লেগ-পুলিং করছো। ”
আপু আরশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তো কি করব সারাজীবন অন্যেরটাই দেখে যাবো কেউ তো আর আমাকে দেবে না। ”

আরশ ভাইয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
“সিরিয়াসলি কতগুলো চাই তোমার। বেলী ফুলের মালা দিয়ে প্রতিদিন সকালে সাজিয়ে দেবো শুধু বিয়েটা হতে দেও। ”

এদের কথা বার্তা শুনে আমি একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,
“যেকোনো জায়গায় শুরু হয়ে যেও না প্লিজ। আমি আছি এখানে। ”

আরশ ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“হুম দেখতো পাচ্ছি এভার চলো নাহলে সবাই আমাদের তিনজনকে খোঁজার জন্য এখনি হারানো বিজ্ঞপ্তি দিবে। ”

বসার রুমে সবাই বসে বসে টুকটাক কথা বলছে। আমি শুধু বসে বসে ভাবছি আপুদের বিয়ের কথাটা কখন উঠবে। আধোও শান সবাইকে ম্যানেজ করতে পারবে তো। যদিও শানের উপর আমার পুরো ভরষা আছে এর আগেরবার ও শানের জন্যই আপুদের ব্যাপারটা সফটলি মিটে গেছিলো। এবার নিশ্চয়ই মিটে যাবে তারপরও নিজের মনের অস্থিরতা দূর করতে শানকে ফিসফিসিয়ে বললাম,

“বলছি আপুদের বিয়ের ব্যাপারটা কখন বলবেন? ”
শান আমাকে ইশারায় বললো,
“এখনি বাবা বলবেন অপেক্ষা করো। ”

উনার কথা শুনে আমি একটু অবাক হলাম বাবা বলবে মানে?বাবার সাথে উনি এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন? তাহলে আমাকে বললো না কেন?উনি এমন কেন কখনো কোনো কাজ আমাকে বলে করে না অদ্ভুত।

কিছুক্ষন পর আমার শ্বশুর মশাই বললেন,
“আচ্ছা আজকে যে জন্য আমাদের এখানে আসা সেটা আগে বলা প্রয়োজন। ”

শ্বাশুড়ী মা উনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। উনার তাকানো দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনিও কিছু জানে না।

শ্বশুর মশাই আবার বললেন,
“আমরা দুইবাবা মিলে ঠিক করেছি আরশ আর স্মৃতির বিয়ে দেবো। ”

কথাটা শুনে সবাই কম বেশী অবাক হলো আমার মা বলে উঠলেন,
“বিয়ে?”
বাবা বললেন,
“হুম বিয়ে, দেখো স্মৃতি আর আরশের পালানো নিয়ে প্রথমত কম ছোট হতে হয়নি দ্বিতীয়ত ওরা যখন ফিরে এলো তখন তো মানুষের কাছে মুখ দেখানোই দায় হয়ে যাচ্ছে। সবাই বলছে মেয়ে মুখ পুড়িয়ে এসেছে। ওরা কেন পালিয়ে ছিল সেটা আমি আর তুমি জানলে সবাই তো বিশ্বাস করছে না। সবাই স্মৃতির চরিত্র নিয়েই কথা বলছে। তাই স্মৃতি আর আরশের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই স্মৃতিকে ওরা ওদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চাইছে।”

বাবার কথা টেনে শ্বশুর মশাই বললেন,
“আর তাছাড়া স্মৃতির তো আমাদের বাড়ির বউ হওয়ার কথা ছিলোই হয়তো শানের তবে এখন যখন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে তাহলে স্মৃতির সাথে আরশের বিয়েটা নাহয় আবার উৎযাপন করা হোউক। ”

দুই মা কিছুক্ষন চুপ থেকে একে অপরের দিকে তাকালো তারপর নিজের মধ্যে কিছু কথা বলে দুজনেই একসাথে হেসে বললো,
“তোমরা তাহলে বিয়ের ব্যবস্থা করো আমাদের কারো কোনো আপত্তি নেই। ”

মায়ের কথা শুনে আমি এতটা খুশি হয়ে গেছিলাম যে খুশির চোটে চিৎকার দিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম,
“ইয়ে আজকে আমি অনেক অনেক হ্যাপি। এরপর থেকে আমরা দুইবোন একসাথে থাকবো আমি তো জাস্ট ভাবতেই পারছি না। আমাদের দুইবোনকে এখন আর কেউ আলাদা করতে পারবে না। ”

আপুও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আমার কথা শুনে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। আমি নিজেই নিজের কাজে লজ্জা পেয়ে চুপচাপ আবার আপুর পাশে বসে গেলাম।

“আচ্ছা স্মৃতি তুই আর আরশ আলাদা করে একে অপরের সাথে কথা বলে নে । তারপর তোদের মতামত জানা। ”

আপু আর আরশ ভাইয়া মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি লাফিয়ে বলে উঠলাম,
“তাহলে আমি নিয়ে যাই দুজনকে।”

আম্মু স্মমতি দিয়ে বললেন
“যা। ”

আমি আপু আর ভাইয়াকে আমাদের রুমে নিয়ে আসলাম দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম দুজনের মুখেই কি অমায়িক হাসি দেখলেও মন জুড়িয়ে যায়।আজ দুজন ভালোবাসার মানুষকে মিলাতে পেরে অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে যদিও এর ক্রেডিট সব শানের। একটা স্পেশাল থ্যাংক্স তো বলাই যায়।কি হতে পারে সেটা? আমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।

“আমাদের এতো বছরের সম্পর্কটা আজ সত্যিকারে অর্থে পূর্ণ হলো।এরমধ্যে জীবনে কত চড়াই উৎরাই গেলো। ঝগড়া -ঝামেলা, ভুল বুঝাবুঝিও কম যায় নি তারপরও কখনো কেউ কাউকে ছেড়ে যাইনি। কারণ আমাদের সম্পর্কে ভালোবাসা ছিল সত্যিকারে ভালোবাসা যেটা কখনো আমাদের দূরে যেতে দেয়নি। ”

আরশ ভাইয়া আরেকটু থেমে বললো,
“তোমার মনে আছে স্মৃতি যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হয় সেদিন শুধু আমাদের বন্ধুত্ব হয় তারপর একে অপরকে সব শেয়ার করা আস্তে আস্তে ভালোবাসা। আমি ফার্স্টে ভেবেছিলাম তোমাকে কথাটা বলবো কিভাবে? অনেক ভয় পাচ্ছিলাম যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি আসলে সেদিন ভুল ছিলাম সেদিন যদি সাহস নিয়ে না বলতাম তাহলে হয়তো আমাদের পথটাই আলাদা হতো। তাই আমার মনে হয় কেউ যদি কাউকে সত্যিকারে ভালোবাসে সেটা প্রকাশ করা উচিত জানো দেরী না হয়ে যায়।”

এইবার আরশ সোহার সামনে গিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি জানো সোহা আমার ভাইয়া একজন অমায়িক মানুষ যে মেয়েদের সবসময় সম্মান করেছে। বিচক্ষণতা দিয়ে সব কঠিন এমুহূর্ত গুলো নিকের আয়ত্তে এনেছে। ভাইয়া কখনো জোর-জবরদস্তির সম্পর্কে বিশ্বাসী ছিল না।ভালোবেসে কাছে টানায় বিশ্বাস করতো কারণ কেউ সত্যিকারে ভালোবেসে একবার কাছে আসলে কখনো ছেড়ে যায় না। ভার্সিটিতে কতো মেয়ে ভাইয়ার জন্য পাগল ছিলো।হাত পা কেটে একাকার অবস্থা কিন্তু ভাইয়া কখনো সেসব মেয়েদের দিকে কখনো ফিরেও তাকায়নি। চাইলেই এডভান্টেজ নিতে পারতো কিন্তু সেটাও করেনি। এডভান্টেজ তো দূর কাউকেই নিজের হাতটা ধরার ও সুযোগ কখনো কাউকে দেয়নি। সব ভালোবাসা শুধু নিজের বউয়ের জন্যই তুলে রেখেছে যাতে তার ভালোবাসায় কখনো কম না পড়ে। ”

আরশ ভাইয়র কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম হঠাৎ এসব কথা আমাকে বলছে কেন?কিছু সন্দেহ করেছে নাকি?আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।আরশ ভাইয়া আবার বললো,

“আমি কি বলছি বুঝতে পারছো সোহা।সব বুঝেও অবুঝ থেকো না। নিজের মনে যা আছে সব বলে দেও জীবনে তোমার জন্য ভালো কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে।বেষ্ট অব লাক। ”

আমি এখনও পলকহীন ভাবে আরশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া একটু হেসে বললো,
“যাইহোক কি বলে যে তোমাদের শুকরিয়া আদায় করব সোহা জানি না। তুমি আর ভাইয়া না থাকলে আজ আমাদের ভালোবাসায় পূর্ণতা হয়তো পেতোই না। থ্যাংক্স আ লট। ”

আমি হালকা হেসে বললাম,
“আমি আসছি তোমরা কথা বলো। ”

কথাটা বলেই আমি বেরিয়ে আসলাম রুম থেকে। বারবার আরশ ভাইয়ার বলা কথা গুলো আমার কানে বাজছে। আমার যে হ্যান্ডসাম বর সত্যিই যদি সময় থাকতে না বলে যদি শানকে হারিয়ে ফেলি। অন্যকেউ শানকে নিয়ে নেয় তখন কি হবে। ভাবতেই আতকে উঠলাম না না এমনটা কখনোই হবে না শানকে আমি ভালোবাসি ওকে হারাতে চাই না। ভালোবাসার কথা সবসময় ছেলেরাই আগে বলবে এটা তো কোনো নিয়ম না মেয়েরাও বলতে পারে আর সেটাই আমি করব।

রাতে খাওয়া দাওয়া করে আমরা বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু বাহিরে যেতেই শানের কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি। শান বাবা, মা, আরশকে আমরা যে গাড়িটা নিয়ে এসেছিলাম সেটাতে পাঠিয়ে দিলো। আর আমাকে যেতে দিলো না সাথে নিজেও দাঁড়িয়ে রইল। আমি রেগে বললাম,

“এটা কি হলো? এখন আমরা যাবো কিসে? ”
“অপেক্ষা করো দেখতেই পাবে। ”

বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শীতে কাপছি আর মশার কামড় খাচ্ছি। এতো রাগ হচ্ছে বলার বাহিরে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই দেখলাম ড্রাইবার আঙ্কেল আরেকটা গাড়ি নিয়ে আসছে। গাড়িটা আমাদের সামনে এসে দাঁড় করিয়ে চাবিটা উনার হাতে দিয়ে দিলো। উনি চাবিটা নিয়ে বললো,

“ধন্যবাদ আঙ্কেল এতটা হেল্প করার জন্য।”
“কি যে বলো না বাবা এটা তো আমার কাজই।”
“নো আঙ্কেল তারপরও আমার কথায় এতো রাতে এসেছো সেটাও বা কম কিসে। তুমি একটা টেক্সি ধরে চলে যাও। ”

শান উনার হাতে কিছু টাকা দিয়ে আমাকে নিয়ে গাড়ি কাছে এলেন। উনার কর্মকান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম উনি গাড়িতে উঠো বসে বললেন,
“কি হলো এখনো হা করে তাকিয়ে আছো কেন উঠো। ”
“আমরা তো ঐ গাড়িতেই সবাই মিলে যেতে পারতাম নতুন একটা গাড়ি আনার কি দরকার ছিলো। ”
“বলবো আগে গাড়িতে উঠে বসো লেইট হচ্ছে। ”

আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
“বলুন না ওদের সাথে না গিয়ে আলাদা কেন যাচ্ছি? ”
শান মুচকি হেসে বললো,
“কারণ আমরা বাড়িতে যাচ্ছি না। ”

উনার কথা শুনে আমি আশ্চর্য্য হলাম বাড়িতে যাচ্ছি না মানে? তাহলে এতো রাতে কোথায় যাচ্ছি আমারা?
.#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩২
#প্রোপোজ_স্পেশাল_২
#সুরাইয়া_নাজিফা

“এই সত্যি করে বলুন তো কোথায় যাচ্ছেন এতো রাতে? ”
“লং ড্রাইভে যাচ্ছি ।”
উনার কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
“মজা করছেন কেন? ”
উনি রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে বললো,
“আমার কথা শুনে মজা করছি মনে হলো তোমার ?তোমাকে বলেছিলাম না আমি যদি স্মৃতিদের হেল্প করি তাহলে তোমাকে আমার সাথে লং ড্রইভে যেতে হবে ভুলে গেছো সেটা? ”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“সেটা আগে বলতে পারেননি আমি একটু পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম। ”
শান ভ্রু কুচকে বললো,
“এখানে পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়ার কি আছে রেডি তো আছোই। ”

আমি বিরবির করে বললাম,
“উফ ভেবেছিলাম আজকে আপনাকে আমার ভালোবাসার কথাটা বলবো কত সুন্দর একটা সুযোগ ছিল একটা পূর্বপ্রস্তুতির দরকার তো ছিলই। ”

শান আমার হাতের উপর হাত রেখে বললো,
“কি বিরবির করছো বলোতো শরীর ঠিক আছে তো? ”
আমি মাথা নাড়িয়ে কাচুমাচু মুখ করে বললাম,
“হুম ঠিক আছে। ”

তারপর আমরা দুজনেই চুপ করে রইলাম কিছুক্ষন। হঠাৎ শান বলে উঠলো,
“তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই তাই না? ”
উনার কথা শুনে আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”
“মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম। ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
“আছে তো। ”

কথাটা শুনেই উনি গাড়িটা থামিয়ে দিলেন। আমি উনার দিকে সোজা ফিরে বললাম,
“কি হলো গাড়ি থামালেন কেন?”
উনি রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন,
“মিথ্যা বলছো কেন। আমি জানি তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই। ”
আমি এইবার কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম,
“জানেনই যখন তাহলে জিজ্ঞেস করলেন কেন?”
শান হাফ ছেড়ে বললো,
“শিউর হয়ে নিলাম। ”
“তাতে আপনার লাভ? ”
“অনেক আছে পরে বলবো। বাট আমার একটা কথাই মাথায় আসছে না যদি তোমার বয়ফ্রেন্ড না থাকে তাহলে তুমি ফুলসজ্জার রাতে মিথ্যা কথা বললে কেন যে তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে? ”
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
“আপনিও তো বলেছিলেন আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে তো আমি কেন ছোট হবো আপনার কাছে তাই আমি বলেছি আমার বয়ফ্রেন্ড আছে দ্যাট’স ইট। ”

আমার কথা শুনে শান খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো তারপর আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো,
“তুমি না কখনো শুদ্রাবেনা। ”

আমি একদৃষ্টিতে উনার হাসির দিকে তাকিয়ে ছিলাম কি সুন্দর করে উনি হাসে। উনার এই হাসির প্রেমেই আমি বারবার পড়ি। ছেলেদের হাসি এতো সুন্দর হওয়া উচিত নয়। আমি চোখ সরিয়ে উনাকে মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“হুম জানি আমি। ”

উনি আবারও হাসলেন। আমি চুপচাপ বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। অনেকরাত হয়ে গেছে সেটা বাহিরের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ি হনহনিয়ে পাশ কেঁটে হাইওয়ে ধরে চলে যাচ্ছে। সোডিয়াম আলোয় রাতের রাস্তাটা কোনো কাল্পনিক শহর বলে মনে হচ্ছে।গাড়ি চলছে আর আমি একদৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ করে শানকে প্রশ্ন করলাম,
“আচ্ছা আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?”

আমার কথা শুনে শান আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো হয়তো ভাবতেই পারেনি আমি এমন কিছু বলবো। আমিও নিজের প্রশ্নে নিজেই থতমত খেয়ে গেলাম একটু দম নিয়ে বললাম,
“আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না। ”

কথাটা বলেই আবার বাহিরের দিকে তাকালাম। হুট করে উনার বলা কথা কানে এলো,
“না নেই। ”

আমি উনার কথা শুনে অনেকটা খুশি হয়ে গেলাম। যদিও জানতাম উনি আমাকে ভালোবাসে তারপরও শিউর হতে তো ক্ষতি নেই।

আমি একটু মজা করেই বললাম,
“সত্যি?বিশ্বাস হয় না? ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেন?”
“কেন আবার দেখুন আমি সত্যিটা স্বীকার করতে ভয় পাই না ওকে এর অন্যকোনো মানে বের করবেন না। আপনি তো দেখতে শুনতে ভালোই মানে হ্যান্ডসাম, ড্যাশিং, কেয়ারিং, সুইট, কিউট আরো আছে যাইহোক মেয়েরা যেমন চায় তেমনই তাহলে আপনার গার্লফ্রেন্ড নাই এটা আমি কেন কেউই বিশ্বাস করবে না বললে।”

কথাটা আমি এক নিঃশ্বাসে বলে থামলাম।উফ বলাটা কি খুব জরুরি ছিল এখন কি ভাববে। উনি আমার দিকে পানির বোতল বাড়িয়ে দিলো।

“পানিটা খেয়ে নেও। প্রশংসা নিজের বরের করলে অথচ এমন ভাব করছো যেন অন্য কারো বরের প্রসংশা করেছো এখন সে জানলে তোমাকে শুলে চড়াবে অদ্ভুত মেয়ে তুমি। কখনো তো নিজের অধিকারটা নিজে আদায় করে নেও। ”

আমি উনার হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে নিলাম। বোতলের ছিপি খুলে কয়েক ডোক পানি খেয়ে নিলাম। আবার বাহিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। আজ হঠাৎ এতো খুশি খুশি লাগছে কেন জানি না। তবে উনি পাশে থাকলে প্রতিটা দিন আমার আনন্দময় কাঁটে সেটা বেশ বুঝতে পারছি। আমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,
“নিবো তো খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে নিজের করে নিবো শুধু কিছুক্ষনের অপেক্ষা।”


কিছুক্ষন পর গাড়িটা একটা শুনশান জায়গায় এসে থামল। গাড়িটা এখানে থামার আগেই উনি গাড়ির কাঁচটা তুলে দিয়েছিলেন আমি জিজ্ঞেস করতেই উনি বলেছিলেন বাহিরে খুব ঠান্ডা পড়ছে জানালা না খোলা রাখাই ভালো। উনার কথা শুনে খুব রাগ হলো তাই উনার সাথে কথা না বলে গোমড়া মুখে বসে ছিলাম। এজন্য আমি বুঝতে পারছি না জায়গাটা কোথায়।আমি উনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,
“এটা কোন জায়গা? ”
উনি নিজের সিট বেল্টটা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“একটু পর বুঝতে পারবে এইবার পিছন ঘুরোতো। ”

উনার কথায় আমি অবাক হয়ে বললাম,
“পিছন ঘুরবো কেন?”

উনি আর কথা না বলে নিজেই আমাকে ধরে পিছনে ফিরিয়ে দিলেন হঠাৎ আমার চোখ একটা কালো কাপড় দিয়ে উনি বেঁধে দিলেন। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না।উনি গাড়ির দরজা খুলে আমার হাত ধরে বাহিরে বের করে নিয়ে আসলেন। তারপর উনি আমার একটা হাত ধরলেন আর উনার আরেকটা হাত দিয়ে আমার কাঁধে আকড়ে ধরে আমাকে নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে।উনি অনেক যত্নসহকারে আস্তে আস্তে আমাকে নিয়ে হাঁটছে যাতে আমি ব্যাথা না পাই। কিন্তু উনার এহেন কর্মকান্ড দেখে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।

“কি করছেন এসব বলবেন কি? চোখ বাঁধলেন কেন? এখন আবার কই নিয়ে যাচ্ছেন? ”
“তুমি না বড্ড কথা বলো আমার উপর বিশ্বাস নেই নাকি দুই মিনিট চুপ করে থাকো না। ”

আমি বেশ বুঝতে পারলাম উনি আর এখন কিছু বলবে না তাই আমি চুপচাপ উনার সাথে তাল মিলাতে থাকলাম। কিছুক্ষন পর মনে হলো উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমার এখন কেমন যেন একটু একটু ভয় করছে।মনের মধ্যে অজানা শিহরণে শিহরিত হচ্ছি। আমি উনাকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,

“কি হলো কোলে নিলেন কেন?”
“তোমার ওজন কত হয়েছে সেটাই মাপছি। ”
উনার কথা শুনে আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম,
“এভাবে কারো ওজন মাপা যায় নাকি?”
“কে বললো যায় না এই যে আমি বেশ মাপতে পারছি। দিন দিন কোনো কাজ না করে বসে থাকতে থাকতে ছোট খাটো একটা হাতির বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো। ”

উনার কথা শুনে আমি রেগে উনার বুকে একটা কিল মারলাম,
“একদম বাজে কথা বলবেন না। আমার ওজন একদম পারফেক্ট আছে আমি অনুযায়ি। ”

আমার কথা শুনে উনি আরো জোরে হেসে উঠলো। শুনশান জায়গা হওয়ার উনার হাসির শব্দটা আরো বেশি জোরে এসে কানে লাগছে। উনার এই হাসিটা আমি নিতে পারছি না। আচ্ছা উনি কি আমাকে উপহাস করছে?ভাবতেই রাগ বেড়ে যাচ্ছে। উনি হাসি থামিয়ে বললেন,

“আচ্ছা তোমরা মেয়েরা এমন কেন বলোতো কেউ তোমাদের ওয়েট বেশী বললে তোমরা এতো রেগে যাও কেন? ”

আমি মুখ ঘুরিয়ে অভিমান নিয়ে বললাম,
“এমন অবান্তর কথা বললে মানুষ কি রাগবে না। যাই হোক আমাকে নামিয়ে দিন।হাতির বাচ্চা কোলে নিতে কষ্ট হচ্ছে আপনার। আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না । ”

“কেন তুমি বলার পর কোলে নিয়েছি নাকি যে নামিয়ে দিবো। নিজের ইচ্ছায় যখন নিয়েছি যখন ইচ্ছা হবে নামিয়ে দিবো এখন বকবক না করে চুপ থাকো।”

আমি উনাকে মুখ ভেঙিয়ে চুপ করে রইলাম। তবে দেখতে না পেলেও অনুভব শক্তি দিয়ে উনি যে হাসছে সেটা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলাম।


কিছু সময় পর মনে হলো আমরা বোটে আছি। কারণ বোট চলার স্পষ্ট আওয়াজ কানে আসছে। চারদিক থেকে প্রচন্ড হাওয়া আসছে। যেটা আমার শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। এতো শীত লাগছে বলার বাহিরে।হাত, মুখ ঠান্ডা হয়ে গেছে। একটু ভালোভাবে চারপাশটা অনুভব করতে চেষ্টা করলাম চারপাশ থেকে নদীর পানির কলকল শব্দ আসছে। তাহলে কি আমরা নদীতে।মানে এটা কি করে সম্ভব।উনাকে কি প্রশ্ন করব না থাক উনি বলবে না তারচেয়ে বরং চুপই থাকি চোখ খুললে তো দেখতেই পাবো। উনি তখনও আমাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে বোট চলার শব্দটা মিলিয়ে গেল। বুঝলাম থেমে গেছে। উনি আবার চলতে লাগলো। এইবার আর নিজের কৌতুহল থামাতে পারলাম না,

“কোথায় এসেছি বলবেন কি?”

উনি এবার আর কোনো কথা বললেন না। হুট করে আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। আমার বুকের মধ্যে ডিপডিপ শব্দ করছে। উনি আমার চোখের বাধনটাও খুলে দিলেন। এতোক্ষন চোখ বাঁধা থাকার পর এখন চোখ খুলতেই কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। সামনে মৃদু আলোর দিকেও তাকাতে পারছি না। চোখ একবার খুলে আবার বন্ধ করে নিলাম। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে একটু ম্যাসাজ করে সামনের দিকে তাকালাম আর তাকাতেই আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।

আমি মাঝ নদীতে দাঁড়িয়ে আছি একটা জাহাজের উপর। আমার মাথার উপর একফালি চাঁদ উঠে আছে যেটা চারদিকে আলো ছড়িয়ে আলোকিত করছে। নদীর পানি গুলো ঢেউ খেলে যাচ্ছে। চাঁদের আলো পানিতে পড়ে পানি চিকচিক করছে।মাঝরাতে কেমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেটা হয়তো চোখে না দেখলে বুঝা সম্ভব নয়। খুশিতে আমি হাসতেও ভুলে গেছি। চোখ বড় বড় করে শুধু চারপাশে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষন পর চোখ ঘুড়িয়ে জাহাজের ভিতর তাকাতে আরো অবাক হলাম যদিও খুব একটা আলো নেই তবে মৃদু আলোতে যেটুকু দেখা যাচ্ছে চারপাশটা ছোট ছোট ফেরী লাইট আর নানান ধরণের ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে। আমার সামনে একটা গোল টেবিল রয়েছে।আর দুইপাশে দুটো চেয়ার। টেবিলের উপর আমার পছন্দের একগুচ্ছ অর্কিড ফুল দিয়ে সাজানো।আর মাঝে একটা রেড ভেলভেট কেক রাখা আছে।একদম সবটা আমার পছন্দ মতো সাজানো। চারদিকে ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না আমি এটা চোখের সামনে দেখছি। হঠাৎ আমি সামনের দিকে তাকিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শানকে ছুতে চাইছিলাম। কিন্তু পাশে হাত দিতেই উনাকে খুজে পেলাম না। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমার বুকে ধক করে উঠলো শান কোথায় গেল। আমি দ্রুত সামনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকাতেই আরো বড়সর শক খেলাম। আটোমেটিক আমার মুখ ইংরেজি “ও” বর্ণের মতো হয়ে গেল আর হাত আপনাতেই গালের দুইপাশে চলে গেল।

শান আমার সামনে হাটু গেড়ে একটা রিং নিয়ে বসে আছে। আর কতো সারপ্রাইজড হবো বুঝতে পারছি না। শান আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসলো তারপর বলতে শুরু করল,

“আমাদের প্রথম দেখাটা একটা ম্যাজিক্যাল সাক্ষাৎ ছিল আমার জন্য জানো তো। যেই আমি সবসময় ভাবতাম বিয়ের আগে কোনো মেয়ের জন্য মনে ফিলিংস আনবো না একবারে বিয়ের পর বউয়ের সাথে প্রেম করব কিন্তু সেই প্রথম আমি আরিয়ান আরেফিন শান নিজের কথা থেকে সরে গেলাম এক পলকে যেদিন তোমায় দেখেছিলাম। এক পলকে থমকে গেছিলাম তোমার ওই ডাগর ডাগর চোখ গুলো দেখে।তোমার ঐ বাচ্চা বাচ্চা স্নিগ্ধ মুখের মায়ায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম। যতোই নিজেকে তোমার থেকে সরিয়ে নিতে চাইলাম ততোই যেন তুমি আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলে তোমার দিকে। তোমার অবুঝের মতো কথা, তোমার পাগলামি গুলো, তোমার ইচ্ছাকৃত ঝগড়া গুলো, সব থেকে যেটা বেশী কাছে টানত তোমার চোখের চাহনী যেটা দেখলে আমি আর নিজেকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরাতেই পারতাম না। আস্তে আস্তে তোমাতে আশক্ত হয়ে পড়লাম। বুঝতে পারলাম আমাকে প্রেমরোগে ধরেছে। আমি নিজেই নিজের কাছে অবাক হলাম যে শেষ পর্যন্ত এতো মেয়ে দেখে শেষে কিনা একটা বাচ্চার প্রেমে পড়লাম। ভাবতেই প্রচন্ড হাসি পেত। তোমাকে আগলে রাখার চেষ্টা করতাম সবসময়। কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলে সহ্য করতে পারতাম না। ভয় হতো এত ছোট্ট বয়সে কোনো ভুল না করে ফেলো। আমি তোমাকে হারালে বাঁচতে পারবো না। সবসময় শুধু ভাবতাম কবে বড় হবে আমার পরীটা যাতে তাকে একদম নিজের মনে খাঁচায় বন্ধ করতে পারি। সময়গুলো যেন কাঁটতেই চাইতো না। তোমাকে কাছে না পেয়ে দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম তোমার জন্য। তোমার জন্য এতোদিন যাবৎ বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা জমিয়েছি শুধু তোমাকে দিবো বলে। ভেবো না এটা কোনো মোহ বরং তোমার ঐদিনের বলা আত্মীক ভালোবাসা। যেটা আজ থেকে নয় অনেক বছর আগে থেকে শুধু কখনো বলা হয়নি। আজ বলছি তোমাকে ছাড়া একটা দিন থাকা আমার জন্য কষ্টকর, তুমিবিহীন নিজেকে কল্পনা করা মৃত্যুর সমান, তোমাতে হারাতে চাই হাজার বার যেখানে হারালে কোনো আক্ষেপ থাকবে না শুধু থাকবে ভালোবাসা। হুম আমি ভালোবাসি তোমাকে। শুনতে পাচ্ছো ভালোবাসি তোমাকে আমার বেখেয়ালি।

উনার কথাটা শেষ হতে না হতেই হঠাৎ আমার পাশ থেকে কিছু একটা গিয়ে বাজির মতো আকাশে ফুটে উঠল আর সেখানে বড় বড় করে লেখা উঠল

“আই লাভ ইউ এন্ড ওয়ান্ট টু বি উইথ ইউ ফর দ্যা রেস্ট অব মাই লাইফ মাই লাভ।প্লিজ গিভ মি আ চান্স টু লাভ ইউ এন্ড কিপ সেইফ ইউ অল দ্যা টাইম। জাস্ট সে ওয়ান্স ইউ আর অনলি মাইন! ”

এতক্ষন জাহাজের মধ্যে কম আলো থাকলেও হঠাৎ সব আলো গুলো জ্বলে উঠলো। আলোয় ঝলমল করছে আমার চারপাশে। আমার কিছুটা দূরত্বেই ফুল আর ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে লাভ সাজানো আছে আর তার ভেতরেও লেখা,
“শান লাভস সোহা। ”

আমি ছলছল চোখে শানের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আচ্ছা এতো সব কিছু বাস্তবেই ঘটছে। আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি না তো।আমি নিজের হাতে নিজেই একটা চিমটি কেঁটে দেখলাম যে আমি ঘুমিয়ে নেই তো। না এটা স্বপ্ন না সত্যি। হঠাৎই আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। না এটা কোনো কষ্টের পানি না এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিনের সাক্ষী। আমার জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান একটা মানুষকে পাওয়ার প্রাপ্তি। আমার হৃদপিন্ডটা যেন চলছেই না। একদম স্থির হয়ে গেছি। কানের কাছে বারবার শানের বলা কথা গুলো বারি খাচ্ছে আর আমি শিহরিত হচ্ছি।আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। কি বলবো বুঝতেছি না।

শান আমার হাত ধরে বললো,
“কি হলো কিছু তো বলো?”
আমি তখনও চুপ করে ছিলাম। শান উঠে দাঁড়িয়ে অস্বস্থির হয়ে বললো,
“কি হয়েছে সোহা তুমি কাঁদছো কেন?তাহলে কি ধরে নেবো তুমি আমাকে ভালো….।”
উনি সম্পূর্ন কথা বলার পূর্বেই আমি উনার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম আর কান্না করতে করতে বললাম,
“আপনি জানেন আপনার মুখ থেকে এই একটা কথা শুনার জন্য আমি কতদিন অপেক্ষা করেছিলাম।ভিতর ভিতর শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম কেন বলেননি আপনি এই কথাটা এতোদিন কেন কষ্ট দিলেন এইভাবে আমাকে দূরে রেখে। ”

কথাটা গুলো বলেই আমি উনার বুকে কিল ঘুসি দিতে লাগলাম।
“আরে আরে কি করছ মেরে ফেলবে নাকি?”
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
“হুম মেরেই ফেলব। ”
উনি আমার কোমরে হাত দিয়ে আমাকে আরেকটু উনার কাছে টেনে নিলেন আর স্লো ভয়েসে বললেন,
“আমি তো কবেই মরে গেছি তোমার প্রেমে সুইটহার্ট। একজন প্রেমিককে আর কিভাবে মারবে তুমি।”

উনার এমন কথা শুনে আমার হৃদপিন্ডের গতি বাড়তে লাগল। আমি লজ্জায় উনার বুকে মুখ লুকালাম। উনিও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। কিছুক্ষন পর উনি বলে উঠলেন,
“আচ্ছা এভার তো কেকটা কেঁটে আমাদের নতুন জীবনের সূচনা করি কি বলো। ”

আমি উনাকে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। উনি আমার হাত ধরে টেবিলের কাছে নিয়ে গেলেন। তারপর আমাকে সামনে দাঁড় করিয়ে উনি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার হাতে ছুরিটা দিয়ে তার উপর উনার হাত রেখে কেঁকটা কাটলেন আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুধু উনাকেই দেখতে লাগলাম। যেনো দেখা শেষই হচ্ছে না।

“কি দেখছ ওভাবে? ”
আমি উনার দিকে ফিরে উনার গলা আমার দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে বললাম,
“আমার বরটাকে।”
“তা কি দেখছো। ”
“দেখছি আমার বরটা এতো সুন্দর কেন মাঝে মাঝে খুব ভয় হয় কখনো হারিয়ে ফেলব না তো। ”
উনি আমার ঠোঁটে এক আঙ্গুল রেখে বললেন,
“হুশ একদম বাজে কথা বলবে না তোমার বর শুধু তোমারই থাকবে। শুধু তোমারই। ”

কথাটা বলে উনি এক টুকরা কেক তুলে আমার মুখের সামনে ধরলেন আমি একটু কেক মুখে দিলাম।কিন্তু শান ইচ্ছা করে বেশ খানিকটা ঠোঁটে লাগিয়ে দিল।আমি উনার গলা ছেড়ে গাল ফুলিয়ে বললাম,
“এটা কি হলো? কেকটা খাওয়ার জিনিস লিপস্টিক লাগানোর জিনিস না। ”

কথাটা বলেই মুছতে নিবো উনি আমার হাত ধরে নিলেন আর আমাকে আবারও উনার কাছে টেনে নিলেন,
“কি সুইটহার্ট শুধু নিজে খেলে হবে? আমাকে খাওয়াবে না। ”
“খাওয়াবো তো কিন্তু আপনি আমাকে এভাবে ধরে রাখলে কি করে খাওয়াবো ছাড়ুন আমি কেক নিচ্ছি। ”
উনি চোখে মুখে দুষ্টমির হাসি নিয়ে বললো,
“উহুম আমি তো ঐ কেক খাবো না। ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“তাহলে? ”

কথাটা বলতে না বলতেই উনি আমার ঠোঁটটা নিজের দখলে নিয়ে নিলেন। আচমকা এমন হওয়াতে আমি পুরো জমে গেলাম।প্রথম কোনো পুরুষের এতো গভীর স্পর্শে শিউরে উঠছিলাম আমি।আমার চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলছি। আমি শক্ত করে উনার কলার খাঁমচে ধরলাম।কিছুক্ষন পর উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।উনার চোখের দিকে চোখ মেলানোই দায় হয়ে যাচ্ছে। উনি আমার থুতনিতে উনার এক আঙ্গুল দিয়ে আস্তে করে মুখটা উপরে তুললেন আর স্লো ভয়েসে বললেন,

“এভাবে লজ্জায় লাল হয়ে গেলে হবে সবে তো মাত্র শুরু এখন থেকে এসব তোমাকে রোজ রোজ সহ্য করতে হবে সুইটহার্ট তাই অভ্যাস করে নেও। আমাকে এতোদিন কষ্ট দেওয়াটা সুদে আসলে উসুল করে নেবো। ”

আমি লজ্জা পেয়ে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলাম,
“অসভ্য লোক একটা। ”
উনি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বললেন,
“হুম শুধু তোমার প্রেমে। ”


আমি আর শান জাহাজের এক কোনায় বসে পা দুটো পানিতে ঝুলিয়ে বসলাম। কি ঠান্ডা পানি তারপরও কেমন অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। শান একহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে আর উনার বুকের মাঝে আমি মাথা দিয়ে নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে আছি। আমার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ আমি।

“শীত লাগছে বেশী? পা টা তুলে বসো ঠান্ডা লেগে যাবে। ”
শানের কথা শুনে আমি বললাম,
“কিছু হবে না ভালো লাগছে আমার। ”
“তাই? ”
“হুম।”

একটু চুপ থেকে আবার বলে উঠলাম,
“আচ্ছা এই কথা গুলো বলতে এতোটা সময় নিয়ে নিলেন কেন আপনি? ”
“তো কি করতাম কতবার তোমাকে আমার কাজের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করলাম বাট তুমি বুঝতে কই। পরে ভাবলাম বাচ্চা মেয়েকে ভালোবাসলে এমনই হয় আর অপেক্ষা করা যাবে না এভার নাহয় সরাসরিই বলে দি। ব্যস বলে দিলাম। ”

উনির কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম।উনি বললেন,
“আচ্ছা এভার কি তুমি বলা যায় না? ”
“না আমি আপনাকে আপনিই বলবো কারণ আপনি ডাকটা অনেক রোমান্টিক হয় এর আড়ালে অনেক ভালোবাসা আর সম্মান লুকানো থাকে আর আমি আপনাকে অনেক সম্মান করি বুঝলেন। ”

উনি একটু অভিমানি গলায় বললেন,
“বাবা বউটা আবার রোমান্টিকতাও বুঝে তাহলে শুধু আমার বেলাই অবুঝ হয়ে যায়। ”
আমি একটু হেসে বললাম,
“একটু অবুঝ হলে ভালো তাহলে বরের বেশী বেশী ভালোবাসা পাওয়া যায়। ”

উনি আমাকে চোখের ইশারায় মুচকি হেসে বললেন,
“আচ্ছা তাহলে ভালোবাসা শুরু করি? ”

আমি উনার ইশারা বুঝতে পেরে একটু দূরে সরে বললাম,
“এখন একদম দুষ্টমি নয়। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”

কথাটা বলেই আমি আবারও উনার বুকের উপর মাথা রাখলাম।শানও আমাকে দুই হাতে জড়িয়ে বললো,
“ওকে তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো। ”

আমি একটু চোখ বুঝলাম।হঠাৎ শান বলে উঠল,
“একটা কথা আছে এখন ঘুমিও না। ”

উনার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম উনার দিকে
“কি কথা? ”

“শুধু আমি একাই ভালোবাসি বললাম তুমি কিছু বললেন না।”

“এতো কিছুর পরেও বলতে হবে বুঝি?”

“মনটা যে ব্যাকুল হয়ে আছে শুনার জন্য। ”
আমি একটু মুচকি হেসে উনার বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম,
“ভালোবাসি। ”

“এতো আস্তে বললে যে শুনতেই পেলাম না। ”

আমি উনার বুকের উপর থেকে মুখ তুলে উঠে বসে চিৎকার করে বললাম,
“আজকের এই মূহূর্তকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি শান অনেক অনেক বেশী ভালোবাসি।এভার চলবে? ”

শান হেসে আমাকে উনার কাছে টেনে নিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,
“চলবে না দৌঁড়াবে। ”

উনি আমাকে উনার কোলের উপর শোয়ালেন,
“এভার ঘুমাও। ”

আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই আমি আবার চোখ মেলে তাকালাম।

শান বললো,
“কি হয়েছে? ”

আমি ধীর কন্ঠে উনার হাত আমার হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বললাম,
“একটা কথা দিবেন?”

শান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
“কি কথা? ”

আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

“যখন শহরটা ঢেকে যাবে ভালোবাসায়
তোমায় প্রতিটা ছোঁয়ায় খুঁজে পাবো তোমায়
কোনো এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় নতুন করে আবারও প্রেমে পড়ব তোমার
ফাঁকা রাস্তায় সোডিয়াম আলোর হালকা আলোতে খালি পায়ে তোমার কাঁধে মাথা রেখে হারিয়ে যাবো তোমার সাথে
তখন শুধু তুমি তোমার ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে আমার অধর ছুয়ে দিয়ে মিষ্টি করে বলো “ভালোবাসি”
তোমার শত ব্যাস্ততায় আমাদের ভালেবাসা যেন কখনো না হারায়
তুমি সবটা সময় শুধু দিবে আমায়
পুরো শহর জুড়ে ছেঁয়ে যাবে জনমানবশূন্যতায়
থাকবে না কেউ পিছু ডাকার, থাকবে না কেউ দূরে রাখার, থাকবে না কেউ আমাদের মাঝে আসার
রয়ে যাবো শুধু তুমি আর আমি
সেই শহরে লেনাদেনা হবে তোমার আর আমার
এক শহর ভালোবাসার।”

আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আর আমি উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমার উত্তরের আশায়। হঠাৎ উনি আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে উনার কপালের সাথে আমার কপাল ঠেঁকিয়ে বললো,
“কথা দিলাম। ”
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ যারা শান আর সোহার প্রোপোজ পর্বটার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আজকের পর্বটা শুধুমাত্র তাদের জন্য ডেডিকেট করলাম। কি দিয়ে কি লিখেছি জানি না। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর নিজেদের অনুভুতি জানাতে ভুলবেন না।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here