এক শহর ভালোবাসা পর্ব ৩৩+৩৪

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৩
#সুরাইয়া_নাজিফা

সকাল থেকে শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে।হয়তো কাল রাতের জন্য।প্রচন্ড মাথাব্যথা করছে।
তারপর আবার হাঁচি দিতে দিতে আমার অবস্থা পুরো খারাপ।শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর একটার পর একটা টিস্যু এগিয়ে দিচ্ছে। নাক মুছতে মুছতে আমার নাক লাল হয়ে গেছে আর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি আড় চোখে শানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি এখনও একই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“কি হলো এতো রাগ করার কি আছে কোনো মানুষ কি জীবনে অসুস্থ হয় না? ”

উনি চোখ পাকিয়ে তাকিয় বললেন,
“হয় কিন্তু কেউ তোমার মতো ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ হয়না। কালকে রাতে কতবার বলেছিলাম পা তুলে বসো ঠান্ডা লাগবে শুনেছিলে আমার কথা? শুনোনি।শুনবে কেন আমার কথা শুনলে তো তোমার বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে। এইবার ভোগ করো। ”

“আমি বুঝেছি নাকি শরীর এতটা খারাপ হয়ে যাবে। ”

কথাটা বলতে না বলতেই আমি আবার হাঁচি দিলাম। উনি পারে না চোখ দিয়ে আমাকে ভর্ষ করে দেয়। উনি উঠে চলে গেলেন আমার পাশ থেকে। আমিও উনার পিছু পিছু গেলাম,

“কি হলো ওখান থেকে উঠে আসলেন কেন? ”

উনি কোনো কথা বলছিলেন না আমার সাথে। আমার সামনে থেকে সরে আবার বেডে গিয়ে বসলেন। আমিও বেডে ওনার সামনে বসে বললাম,
“কি হলো আমাকে দেখতে পাচ্ছেন না নাকি? আমি আপনার সাথেই কথা বলছি মুখ অন্যদিকে ঘুরাচ্ছেন কেন। ”

উনি কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে আছে। না আমার দিকে তাকাচ্ছে আর না কোনো কথা বলছে। উনার এতো রাগ দেখে এখন আমার নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছো। উফ তখন যদি উনার কথা শুনতাম তাহলে আজকে আমাকে এতো কষ্ট পেতে হতো না আর না উনি আমার উপর রাগ করে থাকতেন। এখন এই মহারাজের রাগ কি করে ভাঙাবো। আমি উনার সামনে বসে দুই হাত দিয়ে উনার মুখটা আমার দিকে ফিরালাম। উনি আবার উনার মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলেন। আমি আবার উনার মুখটা আমার দিকে ফিরালাম উনি আবারও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। বেশ কয়েকবার এমন করার পর উনি রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন,

“উফ এতো বিরক্ত করছো কেন? ”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
“বিরক্ত করতে ভালো লাগে তাই করি। ”

উনি আবারও বিছানা থেকে উঠে গিয়ে সোফায় বসলেন। আমিও আবার উনার পিছু পিছু গেলাম।উনার পাশে বসে বললাম,
“উফ এতো রাগ কোথায় রাখেন বলেন তো? ”
শান কোনো কথা বললো না। তখনই শানের ফোনে কল আসল।শান ফোন রিসিভড করতেই ঐপাশ থেকে একটা সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসলো।
“স্যার আজ একটা জরুরী মিটিং আছে আপনি কখন আসবেন? ”
“আমি….। ”
শান বলার আগেই আমি শানের হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলাম আর বললাম,
“আপনাদের স্যার আজকে অফিসে যাবে না। অফিসের থেকে বাসায় উনার একটা বেশী জরুরী কাজ আছে। মিটিং আরশ ভাইয়া জয়েন করে নিবে ওকে।”

কথাটা বলেই আমি ফোনটা কেঁটে দিলাম। ভাগ্যিস ফোনটা স্পিকারে দেওয়া ছিল যার কারণে আমি শুনতে পেয়েছিলাম। নাহলে উনি এখনি এতো এতো রাগ নিয়ে অফিসে চলে যেতেন আর সারাদিন আমার অস্থিরতায় কাঁটতো।

“কি হলো ফোনটা নিলে কেন আমাকে না বলে?”
“আমার বরের ফোন আমি নিতেই পারি সেটা আপনাকে বলে নিবো নাকি?”
“ফোনটা দেও? ”
“না দেবো না। ”
উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“সোহা ফোনটা দেও বিরক্ত করো না আমার ইমপরটেন্ট কাজ আছে। ”
“আমার থেকেও কি ইমপরটেন্ট কাজ শুনি। ”
উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“ফোনটা দেও। ”
আমিও আগের ভঙ্গিতেই বললাম,
“দেবো না। ”
“এখন যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু করি তাহলে আমাকে বলতে এসো না। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“যা খুশি করুন আমি আপনাকে ভয় পাই নাকি?”

কথাটা বলতেই উনি রেগে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। হায় হায় এখন আমাকে মারবে নাকি। আমি একটু পিছনে যেতেই পায়ে পা ভেজে হুট করে সোফায় গিয়ে পড়লাম।আমি পড়তেই উনি আমার দিকে একটু ঝুকে এলো আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম সেই সুযোগে উনি হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলেন। আমার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসল। আমি একটু মুখ ফুলালাম। উনি আবার ফোন ডায়েল করতে শুরু করল। আমি গিয়ে আবার উনার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলাম,

“কাকে ফোন করছেন আবার? ”
“আমি অফিসে যাবো। ”
“মিথ্যা বলছেন কেন?আমি জানি আপনি অফিসে যাবেন না। ”
উনি ভ্রু কুচকে বললো,
“তোমাকে কে বললো?”
আমি হেসে উনার পাশে বসে উনার বুকে মাথা রেখে উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম,
“কেউকে বলতে হবে কেন? আমি জানিতো আমাকে এই অবস্থায় রেখে আপনি কখনো অফিসে যেতেই পারবেন না। ”
উনি একটু অভিমান নিয়ে বললো,
“হুম সব জানো বলেই এবাবে তিলে তিলে আমাকে কষ্ট দিতে তোমার সুবিধা হয়। ”
আমি মন খারাপ করে বললাম,
“স্যরি তো।”
“ছাড়ো আমাকে। ”
“ছাড়বো না। ”
“বলছি তো ছাড়ো। ”
“বললাম না ছাড়বো না। যতক্ষন আপনার রাগ না কমবে ততক্ষন আপনাকে এভাবেই জড়িয়ে থাকবো।”

এভাবে কিছুটা সময় যাওয়ার পর। একটু পর উনি নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। উনাকে জড়িয়ে ধরতে দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল।

“কিভাবে কি করলে কার রাগ খুব সহজে ভাঙাতে পারবে সেটা খুব ভালোই জানো দেখছি। ”
আমি উনার বুকে মাথা রেখেই উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“যদি বর নাকের ডগায় সবসময় এমন রাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাহলে রাগ ভাঙানোর পদ্ধতিটা তো আয়ত্তে আনতেই হয়। ”

আমার কথা শুনে উনি ঠোঁট কামড়ে একটা মুচকি হাসি দিলেন। আমি হা করে একদৃষ্টিতে উনার দিকেই তাকিয়ে আছি। কেন জানি উনি হাসলে কখনোই উনার উপর থেকে আমি চোখ সরাতে পারিনা। শুধু মনে হয় দেখেই যাই। হঠাৎ উনি আমার সামনের চুল গুলো পিছনে গুজে দিয়ে বললেন,

“তাকিয়ে আছো যে? ”
“দেখছি?”
“কি?”
“আপনাকে।আপনার হাসিটা এতো সুন্দর মাঝে মাঝে মনে হয় খেয়ে নি। ”
উনি আমার কথা শুনে আমার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকালেন,
“নাকের সাথে সাথে মাথাটাও গেছে নাকি? কি আবোল তাবোল বলছো বলোতো। ”
“আবোল তাবোল বলবো কেন আমার যেটা মনে হয়েছে সেটা বলেছি। ”
“হাসি আবার খায় কি করে এটা কি খাওয়ার জিনিস?”
“ধ্যাত এতো প্রশ্ন করবেন না তো জানি না আমি। ”
আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হেসে দিলেন,
“প্লিজ এবাবে হাসবেন না। আপনাকে এবাবে হাসতে দেখলে আমার এইখানে লাগে। ”

আমি বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে দেখালাম।আমি নিজেও বুঝতে পারছি না আজকে আমার কি হয়েছে এতো অনায়াসে ওনাকে কথা গুলো বলে দিচ্ছি। এতোটুকু দ্বিধাবোধ কাজ করছে না মনে। শুধু মন চাইছে মনে যা আছে সব বলে দিতে উনাকে।উনি আমার কানের কাছে এসে বললো,
“আজকে কি হয়েছে সোহার বলোতো? এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে? ”
আমি উনার বুকে মুখ খুজে বললাম,
“জানি না হয়তো আপনার মতো প্রেম রোগে ধরেছে। ”
শান মুচকি হেসে আরো শক্ত করে আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল।


কিছুক্ষনের মধ্যে বাড়ির সব মানুষ আমার রুমে এসে হাজির। আমি মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো বসে আছি। এমন মনে হচ্ছে অসুস্থ হয়ে কোনো বড় ভুল করে ফেলেছি।
মা আমার কপালে হাত দিয়ে বললেন,
“গা গরম গরম লাগছে জ্বর উঠলো নাকি। ”
বাবা বললো,
“মেডিসিন নিয়েছিস? ডক্টর ডাকবো। ”

সাম্য ভাইয়া বললো,
“ওকে কি জিজ্ঞেস করছো বাবা তুমি ডাক্তারকে ফোন করো।এইসময় জ্বর উঠলে আরেক কেলেঙ্কারি বাজবে। ”

ভূমিকা আপু বললো,
“কি শান আমি তোমার থেকে এটা আশা করিনি তুমি তো জানোই ওর সহজে ঠান্ডা লেগে যায় তারপরও তুমি থাকতে ও এতটা অসুস্থ হলো কি করে?”

শান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার কথা সে শুনে?যতক্ষন তারসাথে রাগারাগি করা যায় ততক্ষন ভালো তারপর আবার যেই সেই।কি বলবো ওকে? ”

সবার কথা শুনে আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“উফ তোমরা এতো অস্থির হচ্ছো কেন কিছু হয়নি আমার ভালো আছি আমি। ”
শান আমাকে ধমক দিয়ে বললো,
“একদম কথা বলবে না চুপচাপ হয়ে বসো। ”
রহিমা আন্টি আমার জন্য খাবার নিয়ে এলো।মা বললো,
“নে খাবার গুলো খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নে।কি যে করিস না তোরা শুধু শুধু বড়দের চিন্তায় ফেলিস। ”
আমি নাক উঠিয়ে বললাম,
“একটু পরে খাই। আমার এখন ভালো লাগছে না। ”
এতক্ষন পুষ্প চুপ থাকলেও এখন বলে উঠলো,
“আমি কিন্তু তোমার উপর খুব রেগে আছি মিষ্টি কেন তুমি এমন বাচ্চাদের মতো করো বলোতো। ”

পুষ্পর কথা শুনে আমি পুরা হা হয়ে গেলাম।
“একটা বাচ্চা মেয়ে বলছে আমি বাচ্চাদের মতো বিহেভ করি। ”
আমার জাস্ট কথা বলার মতো ভাষা নেই। পেট ফেঁটে হাসি আসছিলো। শান বললো,
“খুব ভালো করে বকে দেও তো প্রিন্সেস একদম কারো কথা শুনে না। ”
পুষ্প বড় মানুষের মতো মুখ করে বললো,
“হুম বলবোই তো। দেখি হা করো আর এই পুরো খাবারটা শেষ করো। ”

পুষ্প আমার মুখের সামনে খাবার ধরলো। যদি পিছন থেকে শান প্লেটটা ধরে ছিলো। আমি হা করতেই পুষ্প আমাকে আস্তে আস্তে ওর ছোট ছোট হাত দিয়ে খাইয়ে দিতে লাগল। কিছুটা খাওয়ার পর আমার আর খেতে ইচ্ছা করছিলো না তাই বললাম,
“আর খাবো না। ”
পুষ্প কপাল চাপড়ে বললো,
“উফ এতো বাহানা করে মেয়েটা খেতে আসলে একে নিয়ে আর পারি না। ”

পুষ্পর কথা শুনে এবার বাড়ির সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। মা আগে আমাকে খাওয়ানোর সময় যে কথা গুলো বলতো একদম তেমন তেমন বললো।মনে হচ্ছে এটা যেন আমার ছোট মা। আমি পুষ্পকে কোলে তুলে ওর গালে একটা কিস করলাম। ভূমিকা আপু বললো,
“কি বুঝলে সোহা তোমার ছোট মা এসে গেছে দেখছো তো?আর আমাদের কি দরকার ও একাই একশ। ”
আমি হেসে বললাম,
“তাই তো দেখছি।”

তারপর পুষ্প আমার কোনো বায়না শুনল না। সব গুলো খাবার খাওয়ালো। বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে রুম থেকে চলে গেল। পুষ্প আমাকে খাওয়ানোর পর নিজের হাতে মেডিসিন খাইয়ে দিলো। কিছুক্ষন পর ভূমিকা আপু একটা পাত্র কিছুটা গরম পানি নিয়ে আসলো।এনে আমার সামনে রাখলো,

“নেও একটু সেক নিয়ে নেও ভালো লাগবে। ”
আমি উঠে বসলাম। ভূমিকা আপু পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“বেবী চলো এখন আমরা পরে আসবো আবার মিষ্টি এখন একটু রেস্ট নিক। ”
পুষ্প ওর মাকে বললো,
“উফ মা আমাকে বেবী বলো না আমি এখন বড় হয়ে গেছি না। ”

ওর কথা শুনে আবারও আমরা সবাই হেসে দিলাম। ভূমিকা আপু বললো,
“দিনদিন বড্ড পাকা হয়ে যাচ্ছো চলো এবার। ”

তারপর ভূমিকা আপু পুষ্পের হাত ধরে বেরিয়ে গেল। শান আমার সামনে বসে বললো,
“মাথাটা সামনে আগাও এবং আরেকটু নিচু করে রাখো। ”
উনার কথা মতো আমি মাথাটা নিচু করলাম। পানির থেকে গরম ভাপ উঠছে। শান আমার মাথার উপর একটা কাপড় দিয়ে দিলো।
“এইবার কিছুক্ষন এবাবে থাকো আর আস্তে আস্তে শ্বাস নেও। ”

উনার কথা মতো সবটা করলাম। নাহলে যদি আমার রেগে যায়। কিছুটা সময় যাওয়ার পর আমি বললাম,
“হয়েছে আর লাগবে না। ”
“লাগবে আরেকটু সময় থাকো। ”

এইবার আমি বিরক্ত হয়ে মাথার উপর থেকে কাপড়টা ফেলে বললাম,
“উফ আপনি সবসময় আমার সাথে এমন বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করেন কেন বলেন তো বললাম তো হয়েছে।”
“বাচ্চাদের সাথে মানুষ বাচ্চার মতোই বিহেভ করে। পুষ্প এইমাত্র বলে গেল শুনোনি। ”
শান আমার সামনে বসে ছিল। আমি রেগে গরম পানির পাত্রটা নিচে নামিয়ে বললাম,
“একদম না।আর এরপর থেকে আমাকে এমন বাচ্চাদের মতো ট্রিট করবেন না। ”

শান চোখে মুখে দুষ্টমির রেখা ফুটিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে উনার বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আমার ঠোঁটে স্লাইড করে বললো,
“আচ্ছা তাহলে বড়দের মতো ট্রিট করি। ”

বলেই আমার দিকে এগিয়ে এলো আমি উনার কাছ থেকে দূরে সরে লজ্জা পেয়ে বললাম,
“না এমন ট্রিটের প্রয়োজন নেই। ”

আমার কথা শুনে উনি মুখ ঘুরিয়ে বললেন,
“কি সুইটহার্ট মুখে বলো বাচ্চা না কিন্তু বিহেভ করো তেমনিই তাহলে তোমাকে কি বলা উচিত। এইবার বেশী কথা না বলে সুয়ে রেস্ট নেও। ”

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“তো এতে কি প্রমাণ হয়? নেক্সট টাইম একদম আমাকে বাচ্চা বলবেন না। ”
“স্যরি মানতে পারলাম না। তুমি এখন পর্যন্ত আমার সাথে বড়দের মতো কোনো বিহেভ করোনি যে তোমাকে আমি বড় বলতে পারি। ”

উনি কথাটা বলতে না বলতেই আমি উনার কলার ধরে উনাকে আমার দিকে টেনে আনলাম আর উনি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি উনার ঠোঁটটা নিজের দখলে নিয়ে নিলাম। তবে কিছু সময় পর দ্রুত উনার থেকে দূরে সরে গেলাম।

শান এখনও আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়তো উনি এই শক থেকে এখনো বের হতে পারছে না।শান ভাবতেই পারেনি কথাটা বললে এতো সহজে কাজ হয়ে যাবে। লজ্জায় আমি মাথা তুলতে পারছি না। ছি ছি এটা আমি কি করে করতে পারলাম। আমি উনার সামনে থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই উনি আমার হাত টেনে আমাকে উনার কোলের উপর বসিয়ে দিলেন আর পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
“এটা কি সত্যিই সোহা ছিল? ”

আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম। উনার কথা শুনে আরো বেশী শিহরিত হচ্ছি আমি। উনি আবারও বললেন,
“এখন এতো লজ্জা পেয়ে কি লাভ যা করার করেই তো দিয়েছো। মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা অনুভুতি গুলো প্রকাশ হতে দেও কারণ আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি কিন্তু এই স্মৃতিগুলো সারাজীবন থেকে যাবে। ”
উনার এতো আবেগময় কথা শুনে চোখে জল চলে এলো।
উনি আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,
“কিন্তু আমার যে আবার রিপিড টেলিকাস্ট দেখতে মনে চাইছে। ”
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“না। ”
উনি আমার ঘাড়ে উনার থুতনি রেখে বললেন,
“আমি বলেছি যখন হ্যাঁ তখন হ্যাঁ।”

কথাটা বলে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি উনার বুকে মুখ লুকালাম।


বিকালে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পড়ে চুল খোলা দিয়ে হালকা জুয়েলারির সাথে চোখে গাড় কাজল দিয়ে সিম্পলভাবে সাজলাম। আজ আব্বু, আম্মু আসবে আমার শ্বাশুরবাড়ী আপু আর আরশ ভাইয়ার বিয়ের কথা বলতে এজন্যই রেডি হচ্ছিলাম।

আয়নায় আরেকবার নিজেকে ভালো করে দেখে নিলাম সব ঠিক আছে কিনা। তখনই হঠাৎ কোমরে কারো স্পর্শ পেতে খানিকটা কেঁপে উঠলাম কিন্তু ভয় পেলাম না কারণ আমার এই ছোঁয়াটা যে বড্ড পরিচিত।শান আমাকে পিছনে জড়িয়ে ধরে উনার থুতনি আমার ঘাড়ের উপর রেখে বললেন,

“এতো দেখোনা সুইটহার্ট তোমায় এতো সুন্দর লাগছে যে আয়নারও না নজর লেগে যায়। ”

উনার কথা শুনে হাসলাম,
“তাই তাহলে নজর কাঁটিয়ে দিন। ”
“সিরিয়াসলি তাহলে আমার পদ্ধতিতে নজর কাঁটাই। ”
“জ্বী না মশাই।এসবের টাইম নাই। কিছুক্ষন বাদেই আব্বু আম্মু আসবে নিচে যেতে হবে। তাছাড়া আমি আপনার পদ্ধতিতে নজর কাঁটাতে বলিনি সত্যিকার অর্থে নজর কাঁটাতে বলেছিলাম।”

শান আমাকে ছেড়ে দূরে সরে গেল,
“ধ্যাত তুমি না একদমই আনরোমান্টিক।সবসময় মুডের বারোটা বাজিয়ে দিতে প্রস্তুত। ”

উনার কথা শুনে আমি আবারও হাসলাম। কিছুক্ষন পর হঠাৎ আমার মাথায় দুষ্টমিরা খেলতে আরম্ভ করল। তাই একটু হেসে উনার সাথে মজা করেই বললাম,

“আমার না আবার বিয়ে করতে মন চাচ্ছে।”
কথাটা বলতেই শান সরু চোখে আমার দিকে তাকালো,
“আবার বিয়ে করবে মানে? ”
আমি একটু মজা করেই বললাম,
“বিয়ে করব মানে বিয়ে করব।”

শান হঠাৎ করে আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকে উনার কাছে নিয়ে গেল আর রাগান্বিত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“এই কথা মুখে আনলে কি করে তুমি?আমি ছাড়া দ্বিতীয় কারো কথা যদি কখনো মাথায় আসে তাহলে এইমাথাটা আর মাথার জায়গায় থাকবে না মনে রেখ। প্রথমে তোমাকে মারব তারপর নিজেই মরে যাবো।”

উনার কথা শুনে আমি খিলখিলিয়ে হেসে দিলাম আর উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম,
“এতো জেলাসি ঠিক নয় মিস্টার। অতিরিক্ত রাগ মানুষকে ধব্বংসের পথে নিয়ে যায় তাই কন্ট্রোল করুন। ”

“তোমার জন্য আমি কোন সীমা পর্যন্ত যেতে পারি সেই সম্পর্কে কোনো আইডিয়াই নেই তোমার। শুধু একবার তোমার সীমা অতিক্রম করে তো দেখো। ”

“আচ্ছা আপনি না বুঝে এতো রাগ দেখাচ্ছেন কেন আমি বলেছি বিয়ে করব কিন্তু দ্বিতীয়বার বিয়ে করব সেটা কি একবারও বলেছি?”

শান আমার চুল থেকে হাত সরিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“মানে? ”
আমি হেসে বললাম,
“মানে আমি আমার বিয়ে করা বরকে আবার বিয়ে করতে চাই। ”

কথাটা বলতেই উনার মুখে হাসি ফুটে উঠলো,
“তাই বলো আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।”

“এতো ভয় পান কেন?আপনার মনে হয় আমি আপনাকে কখনো ছাড়তে পারবো। ”

“সেটা তো তুমি চাইলেও পারবে না। ”

“হুম।”

“তো হঠাৎ আবার বিয়ে করতে মন চাইলো কেন?”

আমি হাসতে হাসতেই বললাম,
“না চাওয়ার কি আছে?আমার আর আেু সবসময় ইচ্ছা ছিল একই সাথে একই স্টেজে আমাদের বিয়ে হবে। বাট প্রথমবার যা হলো।বিয়ে ছিল না যুদ্ধ বুঝতেই তো পারিনি।আর বিয়েতে একটু মজাও করতে পারলাম না। শুধু টেনশনে ছিলাম বিয়েটা আরশ ভাইয়ার সাথে না হয়ে যায়।কিসের মধ্যে কি হলো বুঝার আগেই বিয়ে শেষ। এবাবে কার বিয়ে হয়। ”

“ওহ এই কথা ওকে আমার সুইটহার্টের যখন ইচ্ছা হয়েছে তাহলে সেটা অবশ্যই পূরণ করব আমি। ”

বিকেলবেলা আব্বু আম্মু আর আপু চলে এসেছে। সবাই জোড়ায় জোড়ায় পাশাপাশি বসেছে। পুষ্প নিজের রুমে খেলা করছে। এখন এখানে সব বড়রা রয়েছে। বিয়ের কথা বার্তা চলছে। কার কি কাজ সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় কথা বার্তা বলে সব ঠিক করেই নিয়েছে। বিয়ে পনেরো দিন পর হবে। এর মধ্যে কার্ড বিতরণ, কেনাকাটা, ডেকোরেশনের ব্যবস্থা সব কমপ্লিট করতে বলেছে শ্বশুর মশাই। উনি একদমই দেরী করতে চাইছেন না বিয়ের ব্যাপারে। কারণ এই বিয়ের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনদের একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত।

বিয়ের কথা কমপ্লিট হতেই আমি নিজের হাতে সবাইকে মিষ্টি মুখ করালাম। বাবা আর শ্বশুর মশাই কোলাকোলি করলেন দ্বিতীয় বার বেয়াই হওয়ার সুবাদে। তখনই শান বলে উঠল,
“বাবা আমি একটা কথা বলতে চাই। ”
শানের কথা শুনে শ্বশুর মশাই বললো,
“কি কথা বলবি?”
“বলছিলাম আরশ আর স্মৃতি সাথে আমার আর সোহার বিয়েটাও হলে কেমন হয় একদম প্রথমবারের মতো। আসলে প্রথমবার বিয়েটা কিভাবে হলো সেটা তো জানোই সবাই তেমন একটা মজাও করতে পারিনি তাই বলছিলাম। ”

শানের কথা শুনে আমি বিষম খেয়ে গেলাম। আমি তো মজা করে বলেছিলাম উনি এটা এতো সিরিয়াসলি নিয়ে নেবে কে জানতো। এখন সবাই কি ভাববে? আমার গলা দিয়ে মিষ্টিটা আর নামছে না।

কিছুক্ষন পর আমার বাবা বলে উঠলো,
“হুম কথা ঠিক। যদি তোমরা একে অপরকে পছন্দ করতে তবুও তোমাদের বিয়েটা তো ঠিকঠাক হয়নি আমারও মনে হয় তোমাদের বিয়েটাও আবার হলে ভালো হয়। ”

শ্বশুর মশাই উল্লাসিত হয়ে বললো,
“হ্যাঁ আগের বার ভুল জুটির বিয়ে দিতে চাইছিলাম। তবে আবার ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দিবো কিন্তু এইবার ঠিকঠাক জোড়ার সাথে। ”

কথাটা শুনে সবাই খুশি হয়ে গেল। আপু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল,
“সব কিছু এতো ভালো ভালো হচ্ছে যে বিশ্বাসই হচ্ছে না। অবশেষে আমাদের দুইবোনের ইচ্ছাটা পূরণ হচ্ছে কি বলিস। ”

আমিও হেসে বললাম,
“হুম। ”

আমি আপু পাশে দাঁড়িয়ে শানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ শান আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো। আমি একটু আশেপাশে তাকালাম কি করতে চাইছেন উনি?

শান আমার কাছে এসে পাশ ঘেসে যাওয়ার সময় আমার কানে ফিস ফিস করে বললেন,
“বলে ছিলাম না তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করব। শুধু একবার মুখ ফুটে তো বলো। ”

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন।শুধুমাত্র আমার খুশির জন্য উনি এতটা করলেন ভেবেই আমার চোখে পানি চলে এলো। শান চলে যাচ্ছি আমি পিছন ঘুরে আবার উনার দিকে তাকালাম হঠাৎ শানের চোখে চোখ পড়তেই আমি চোখ পড়তেই আমি হালকা হাসলাম। শান আমাকে ঠোঁট দিয়ে ইশারায় কিস করতেই আমি লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলাম।

তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠল তানিশার কল ছিলো। তানিশার কল দেখে আমি একটু অবাক হলাম মনে মনে বললাম,
“এতোদিন পর কি ব্যাপার? ”

আমি ফোনটা নিয়ে ওদের থেকে একটু আড়ালে গিয়ে রিসিভড করলাম। রিসিভড করতেই ওপাশ থেকে তানিশা বলে উঠল,
“কিরে বিয়ের পর তো পৃথিবীতে সবকিছুই ভুলে বসে আছি জামাই বুঝি বেশী ভালোবাসছে? ”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“ফালতু কথা বাদ দিয়ে যেটা বলতে ফোন দিছিস সেটা বল।”

তারপর ও যেটা বললো সেটা শুনে আমার মাথা ঘুরতে লাগল। আমার সব শেষ। আমার এতো প্লান, প্রোগ্রাম, হাসিখুশি সব শেষ করে দিলো। এখন আমার কি হবে। আমি ফোনটা কেটে হনহন করে ড্রয়িংরুমে এগিয়ে গেলাম। আর গিয়েই মন খারাপ করে বললাম,

“এই বিয়েটা হবে না। ”
.#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৪
#সুরাইয়া_নাজিফা

আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এতো খুশির মধ্যে এমন কথা হয়তে কেউ মানতে পারেনি।
শান আমার কাছে এসে বললো,
“হঠাৎ এমন কথা বলছো কেন?কি হয়েছে?”
“কি হয়নি তাই বলেন বিয়ে নিয়ে এতো প্লান প্রোগ্রাম করার পর যখন এমন একটা খবর শুনতে হয় তখন কতটা বিরক্ত লাগে শুনলে বুঝতে পারবেন।”

আমার কথা শুনে শান মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“কি হয়েছে আগে সেটা তো বলো?”
“আরে তিনদিন পর থেকে আমার প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ”

কথাটা বলেই আমি মেঝেতে বসে মরা কান্না কাঁদতে শুরু করলাম বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে। আমার কথা শুনেই সবাই হাফ ছাড়ার মতো একটা নিঃশ্বাস ফেললো।

শ্বশুর মশাই আমার পাশে এসে বসে বললো,
“তাই বল তুই যেভাবে বলেছিলি আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম যে এই শেষ মুহূর্তে এসে আবার কি অঘটন ঘটে গেল। ”

আমি করুণ চোখে তাকিয়ে বললাম,
“অঘটনের আর বাকি আছে কি?আপুর বিয়ে অথচ আমিই থাকতে পারবো না। কত কিছু প্লান করে রেখেছিলাম। ”

আমার কথা শুনে শান আমার পাশে বসে মুচকি হেসে বললো,
“সো স্যাড সুইটহার্ট। ”

উনার কথা শুনে মনে হলো উনি কথাটা দিয়ে আমাকে একটু ব্যাঙ্গ করলেন আমি উনার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,
“আপনার অনেক মজা লাগছে বুঝি। ”

শান চোখ বড় বড় করে বললো,
“মজা লাগবে কেন?আমি তো তোমার কষ্টটা ভাগাভাগি করতে চাইছিলাম কেন ভুল বুঝছো। ”

“আপনার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে বিশ্বাস করুন আপনার কথা গুলো বিশ্বাস হচ্ছে না। ”

আমার কথা শুনে শান সহ বাকি সবাই খিলখিলিয়ে হেসে দিল। আর আমি মাঝে মুখ কাচুমাচু করে বসে রইলাম। আমার বাবা বললো,
“তাহলে এখন বিয়ের কি হবে পিছিয়ে দিবো সময় আরো?”

শ্বশুর মশাই বললেন,
“হুম এটা ছাড়া তো আর উপায় দেখছি না। ভাগ্যিস খবরটা আগেই পেয়েছি নাহলে যদি এমন হতো কার্ড বিলি হওয়ার পর এমন খবর আসতো তখন কি হতো। ”

আমার জন্য আপু আর আরশ ভাইয়ার বিয়েটা পিছিয়ে যাবে মেনে নিতে পারছিনা। বেচারারা কতো অপেক্ষা করেছিল এইদিনটার জন্য। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
“বাবা বলছিলাম কি আমার জন্য বিয়েটা পিছানোর কোনো দরকার নেই।আমার জন্য কেন আপুদের বিয়েটা পিছানো হবে। তোমরা তোমাদের মতো আয়োজন করো আমি নাহয় মাঝে মাঝে এটেন্ড করে নেবো। ”

আপু আমার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো,
“বিয়ে হয়ে গেছি বলে বড় হয়েছিস নাকি ? তোকে ছাড়া আমি বিয়ে করব ভাবলি কি করে। বিয়ে তোর পরীক্ষার পরেই হবে। ”

আমি মন খারাপ করে বললাম,
“কিন্তু…।”
আরশ ভাইয়া বললো,
“কোনো কিন্তু না বড়রা যেটা বলছে সেটাই হবে তুমি মন দিয়ে পরীক্ষা দেও বুঝেছো। ”


সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে বসে আছি আমার মাথা ঘুরছে এতো এতো পড়া দেখে।এজন্যই বলা হয় সময়ের কাজ সময়ে করা ভালো। জমিয়ে রাখলে শুধুই বোঝা বাড়বে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তিনদিন পর আমি খাতায় কি লিখবো জানি না। না নোটস গুলো ঠিকঠাক আছে আর না আউটলাইন গুলো। কোনো উপায় না পেয়ে তানিশাকে ফোন দিলাম,

“ঐ পরীক্ষা আছে বলে খালাস হয়ে গেলি আমাকে নোটস গুলো কে দিবে। আমার কাছে তো অনেকগুলোই নেই। ”

“আচ্ছা অপেক্ষা কর আমি পিক তুলে সেন্ড করছি ঐগুলা দেখে পড়। ”

আমি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,
“এই না না পিক না কালকে মিট কর ফটোকপি করে নিবো। ”

তানিশা ধমক দিয়ে বললো,
“আস্তে চিল্লা কান ফাঁটিয়ে ফেলবি নাকি। ওকে কালকে নিস এখন ফোন রাখ নিজে পড় আমাকেও পড়তে দে। ”

কথাটা বলে তানিশা ফোনটা কেঁটে দিলো। গত একঘন্টা যাবৎ একটা টপিক নিয়ে বসে আছি মনে হচ্ছে শুধু পড়ছি কিন্তু পড়াটা আর মাথায় যাচ্ছে না। শান রুমে নেই জানি না কোথায় আছে।হয়তো নিচে সবার সাথে গল্প করছে, মজা করতেছে । আর আমি বসে বসে নিজের চুল ছিড়ছি।ধ্যাত ভাল্লাগে না! আমি বিরক্ত হয়ে টেবিলের উপর মাথা রেখে দিলাম। বই সামনে দেখলেই আমার প্রচুর ঘুম আসে।

হঠাৎ টেবিলের উপর ধুম করে একটা আওয়াজ হতে লাফিয়ে উঠে বসলাম। এমন মনে হলো টেবিলের উপর বাজ পড়ল। আমি পাশে তাকাতেই দেখলাম শান দাঁড়িয়ে,
“টেবিলটা কি পড়ার জায়গা নাকি ঘুমানোর। ”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“পড়ছি তো। ”
“কি যে পড়ছো সেটা তো দেখাই যাচ্ছে।পড়া কতটুকু হয়েছে আর এখন কি পড়ছো? ”

শান আমার পাশের চেয়ার টেনে বসলো। আমি নিজের নখ কামড়াতে লাগলাম চিন্তিত ভঙ্গিতে। এখন কি বলবো? কিছুই তো পড়িনি। শান আবার ও টেবিলে একটা বারি মারতেই আমি থতমত খেয়ে উনার দিকে তাকালাম।
“কই হারিয়ে গেছো কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো আমি। ”

আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“এই তো ‘সাইন্টিফিক ম্যাথড’ পড়ছি এখন। ”
“আগে কি পড়েছো। ”
আমি খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বললাম,
” এই তো এটাই পড়ছি। ”
শান অবাক হয়ে বললো,
“এই দুইঘন্টা যাবৎ শুধু একটা অধ্যায় পড়তেছো বাকি গুলা কখন পড়বে?ফাজলামি পাইছো? ”
“ধ্যাত আমার আর পড়াশোনা ভালো লাগছে না।
“পড়াশোনা কারোই ভালো লাগে না তারপরও পড়তে হয়। আর আমার বউ মাত্র ইন্টার পাশের স্টুডেন্ট হবে সেটা তো আমি মেনে নেবো না। সো পড়তেই হবে পড়ো চুপচাপ। ”
আমি কান্না কান্না মুখ করে বললাম,
“কিছু মাথায় ঢুকছে না। ”
“সারাদিন আবোল তাবোল কথা মাথায় ঢুকালে পড়া মাথা ঢুকবে কেমনে? ”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“উফ আমার কাছে কোনো নোটই নেই। বিয়ের পর এতো সব ঝামেলার মাঝখানে পড়তেই তো পাড়লাম না।আর এর আগে যা পড়েছি সব ভুলে গেছি কি যে করব বুঝতেছি না। আমার মনে হয় এইবার আমি ফেইল করব। ”
শান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“বাহ বাহ খুব ভালো কথা যাওনা আরেকটু গিয়ে অন্যের বিয়ের ঘটকালি করো তাহলেই পাশ করবে। ”

উনার কথা শুনে নিজের মাথায় নিজেরই বারি মারতে মন চাইছে মানে প্রত্যেকটা কথার জবাব উনার কাছে আছে। এমন ভাবে বলছে যেন আমি অন্যের বিয়ের ঘটকালি করছিলাম। কোথায় আমাকে শান্তনা দেবে তা না কথা শোনাচ্ছে ফাজিল লোক একটা।

“মনে মনে আমাকে বকাঝকা না করে পড়াশোনায় মন দেও কাজে দেবে। ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“আপনি জানলেন কি করে আমি আপনাকে কিছু বলছি। ”
“সেটা জানতে হবে কেন তোমার মুখে এক্সপ্রেশনই বলে দিচ্ছে।এইবার দ্রুত পড়া রেডি কর আর পড়া দেও আমাকে। ”

উনার কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পড়ল।উনি এখন আমাকে পড়াবে নাকি ইম্পসিবল মাথা খারাপ নাকি যে উনার কাছে পড়ব। ক্লাস টেনের কথা মনে হলে আমি এখনও ভয়ে কেঁপে উঠে। উনার কাছে ম্যাথ পড়েছিলাম। সেই একটা বছর এতো অত্যাচার করেছে। রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা শুধু পড়া আর পড়া। উনার জন্য আমার শ্বাস ফেলারও জো থাকত না।একবার তো এই পড়ার চক্করে জ্বর পর্যন্ত উঠে গেছিলো আমার।যদিও এরপর একটু স্বাধীনতা দিয়েছিল আর অনেক খেয়াল রেখেছিল আমার কিন্তু সুস্থ হতেই আবার উনার থিওরি এপ্লাই করা শুরু করেছেন। সেই একই পরিস্থিতি আমি আর সামলাতে পারবো না।

আমি ভয়ে আঁতকে উঠে বললাম,
“না। ”
আমাকে এবাবে চিল্লাতে শুনে শান ভ্রু কুচকে বললো,
“কি সমস্যা তোমার? ”
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“না মানে আপনি তো আমার ডিপার্টমেন্টে না আমাকে কিভাবে পড়াবেন?”
“তো কি হয়েছে? পড়া বুঝাতে না পারি।বুঝার দায়িত্ব তোমার।কিন্তু পড়া নিতে তো পারব। কোনো তাল বাহানা না করে চুপচাপ পড়।”
আমি উনার দিকে ছলছল করে তাকিয়ে রইলাম আর বিরবির করে মনে দুঃখে বললাম,
“যান না এতো পড়ানোর শখ যখন নিজের ছেলে মেয়েকে পড়ান না আমার পিছনে পরে আছেন কেন? ”

ভেবেছি শান শুনবে না কিন্তু আমার ধারণা মিথ্যা করে দিয়ে কিছুক্ষন পর শান মুচকি হেসে বললো,
“ছেলে মেয়ে যখন পৃথিবীতে আসবে তখন নাহয় ওদের পড়াবো আগে ওদের মাকে পড়িয়ে তো মানুষ বানাই। পড় দ্রুত। ”

আমি আবার বইয়ের দিকে তাকিয়ে পড়তে আরম্ভ করলাম।


আধা ঘন্টা হলো পড়ছি আর কিছুক্ষন বাদে বাদে আড়চোখে শানকে দেখছি। উনি এক নজরে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো রাগ লাগছে কেমন জামাই পাইছি বুঝতেছি না। কোথায় সবে সবে প্রেম হলো এখন একটু চুটিয়ে প্রেম করবে তা না দেখো নিজে কাজের মধ্যে ব্যস্ত আর অন্যদিকে বউকে পড়ার মধ্যে ব্যস্ত করে রেখেছে।চোখের সামনে এমন সুন্দরি বউ রেখে সে কাজে মগ্ন। আবার আমাকে বলে আমি নাকি আনরোমান্টিক। ব্যাটা আনরোমান্টিকের সিল তো তোর গায়ে লাগানো উচিত। কথা গুলো মনে মনে বিরবির করতে করতে আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম।

আমার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। শানের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বইয়ের পাতায় তাকাতেই মাথার মধ্যে একটা দুষ্টমি বুদ্ধি খেলে গেল শানকে বিরক্ত করার। আমি বইয়ের দিকে তাকিয়েই পড়ার অভিনয় করে আমার এক পা দিয়ে আস্তে করে শানের পায়ে একবার স্লাইড করে পা টা সরিয়ে নিলাম।

হঠাৎ এমন হওয়ায় শান একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকায় বুঝতে পারেনি আসলে কি হলো। প্রখর দৃষ্টি নিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু সোহার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারল সোহা পড়ছে তাহলে কি হলো?শান নিজের মনের ভুল ভেবে আবার কাজে মন দিলো।

শান চোখ সরাতেই আমি আবারও শানের পায়ে আলতো করে স্লাইড করলাম করেই সরিয়ে নিলাম শান আবার চমকে উঠলো।কিন্তু কিছু বললো না। আবারও কাজের দিকে মন দিতেই আমি আবারও সেইম কাজ করলাম কিন্তু এইবার আর শান কোনো রিয়েক্ট করল না। চুপ করে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ শানের এখন আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এটা সোহার কাজ শানকে বিরক্ত করার জন্য। শান কিছু না বলে পা টা সরিয়ে নিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে একটু হাসলো।

শানকে কোনো রিয়েক্ট করতে না দেখে রাগ হলো।না আমাকে এমন বিরক্ত করে নিজে শান্তিতে কাজ করবে এটা তো হতে দিতে পারি না।আর এছাড়া আমার এখন পড়তেও ইচ্ছা হচ্ছে না। শানের আকর্ষন আমার দিকে ঘুরানোর জন্য আমি এইবার চেয়ারটা শানের আরেকটু কাছে নিয়ে বসলাম। আবারও উনার পায়ে স্লাইড করতে লাগলাম তবে এইবার উনার দিকে চেয়ে ঠোঁটের কোনো মুচকি হাসি নিয়ে। উনার হাতের উপর হাত রাখলাম আর শক্ত করে ধরলাম। শান আমার একবার আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আমার চোখে চোখ রাখল।শানের চোখ আমার উপর পড়তেই শানকে একটা চোখ টিপ মারলাম আর সাথে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গিমা তো আছেই।

শান আমার দিকে তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“কি করতে চাইছো বলোতো?”
আমি মুচকি হেসেই বললাম,
“বুঝেন না আপনি? ”
শান ল্যাপটপটা পাশে সরিয়ে রেখে আমার আরেকটু কাছে এসে বললো,
“তুমিই বুঝিয়ে বলো?”
আমি একই ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“প্রেম করতে চাইছি। ”
আমার কথা শুনে শান নিজের নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,
“তাই বুঝি তা হঠাৎ ম্যাডামের এতো পরিবর্তন?”
“পরিবর্তন আগেই হয়েছে আপনারই চোখে পড়েনি। ”
শান চোখ বড় বড় করে মাথাটা একটু এদিক ওদিক নাড়িয়ে বললো,
“ওহ। তা আপনার পড়া কতটুকু হয়েছে বলেন তো ম্যাম ?”
আমি নিজের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়েই উনার মুখের আরেকটু কাছে গিয়ে উনার গালে হাত রেখে বললাম,
“বিয়ের পর কি আর এতো পড়াশোনা ভালো লাগে বলুন। তখন তো মনে শুধু স্বামী সংসার আর প্রেম ভালোবাসার কথাই ঘুরে। ”
শান আমার সামনে আসা চুল গুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“তো আমি কি করতে পারি আপনার জন্য? ”
আমি নিজের দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে বললাম,
“আপনি চাইলে আমি পড়াশোনাটা বন্ধ করে দিতে পারি। এতো পড়াশোনা করে কি হবে বলুন আমার বাবা বা স্বামীর তো কিছু কম নেই তাই না । আপনারা তো আর জব করতে দিবেন না আমাকে তাহলে শুধু শুধু এতো কষ্ট করে কি লাভ। সংসার সামলানো আর বাচ্চা কাচ্ছা মানুষ করার জন্য যেটুকু পড়াশোনা করেছি সেটাই যথেষ্ট তাই না তাই বলছি কি পড়াটা ছেড়ে দি কেমন। ”

শান খানিকটা টেনে বললো,
“ওহ তাই বলো।”

আমি টেবিলে এক হাত রেখে আরেক হাত একগালে রেখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি আমার কাছে আরেকটু এগিয়ে এলেন আমি হাসলাম তাহলে কাজ হয়েছে। পরক্ষনেই এগিয়ে এসে আমার কপালের মাঝ বরাবর উনার হাত দিয়ে জোরে একটা টোকা মারলেন। আমি “আহ” শব্দ করে কপালে হাত দিলাম। আর উনার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে কপাল ঢলতে ঢলতে বললাম,

“এটা কি করলেন আপনি? ”
উনি ধমক দিয়ে বললো,
“যখন রেমান্স করতে বলি তখন তো এসব আসে না শুধু পড়তে বসলেই যতসব শয়তানি বুদ্ধি মাথায় আসে তাই না। তুমি কি ভেবেছো আমাকে সিডিউস করে পড়া থেকে বেঁচে যাবে। ফালতু আইডিয়া আসে কি করে মাথায়? ”

উনার ধমক খেয়ে আমি মাথা নিচু করে রইলাম। উনি আবার বললো,
“তোমাকে কে বলেছে মানুষ শুধু পড়াশোনা জব পাওয়ার জন্য করে। এসব চিন্তা ভাবনা করে পড়াশোনা করলে কখনোই জীবনে কিছু করতে পারবে না। পড়াশোনা করার মূল লক্ষ্য হলো জ্ঞান অর্জন করা। জ্ঞানের সর্বোচ্চ শেখরে আহরণ করা বুঝেছো। পড়াশোনা করে একজন উপযুক্ত উচ্চতর জ্ঞান, বুদ্ধি, মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মানুষ হওয়াটাই বড় কথা সেটা ভেবে পড়াশোনা করা উচিত।আমি চাই না কেউ কখনো তোমার উপর আঙ্গুল তুলুক। তুমি আমার ওয়াইফ সুতরাং আমার সম্মানের জন্য হলেও তোমাকে পড়তে হবে বুঝতে পেরেছো। ”

আমি “হ্যাঁ সূচক” মাথা নাড়ালাম। কিন্তু মনে মনে অকথ্য ভাষায় গালি দিলাম উনাকে।এই পড়াশোনা আমার কোনো কালেই ভালো লাগতো না। ভেবেছিলাম বিয়ের পর পড়ালেখা ছেড়ে দেবো কিন্তু কি করার ভাগ্য যদি খুব খারাপ হয় তাহলে এমনই রুড হাজবেন্ড কপালে জোটে।

উনি আমার থেকে বইটা কেড়ে নিয়ে বললো,
“দেখি পড়া দেও। আগে সাইন্টিফিক মেথডের স্টেজ গুলো বলো?তারপর বিশ্লেষণ করবে। ”

আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম। কি পড়েছি সবই তো গুলিয়ে ফেলেছি ওনার ধমক শুনে এখন উপায়?

শান আবার বললো,
“এবাবে কি দেখছো যেন জীবনে নামই শুনোনি। পড়া বলো জলদি? ”
আমি পাংশু মুখ করে বললাম,
“বলছি? ”
তারপর আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“ডিফাইন দ্যা প্রবলেম, রিভিউ দ্যা লিটারেচার, ফরমুলেটিং এন্ড টেস্টাবল হাইপোথিসিস, সিলেক্ট আ রিসার্চ ডিজাইন কালেক্ট এন্ড অ্যানালাইজ ডাটা survey-ethnography-experiment- existing sources, ডেভেলপ দ্যা কনক্লুশন, দ্যান প্রিপেয়ার…..। ”

এতটুকু বলার পর ভুলে গেছি উফ এতো পড়া থাকতে ওটাই কেন ধরতে হলো ওনাকে। আমি একই ওয়ার্ড দুইতিনবার বললাম বাট মাথায় আসছে না। শান রেগে বললো,
“প্রিপেয়ার এর পরে আর কিছু নেই নাকি একই ওয়ার্ড এতোবার বলছো?”

আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম,
“মনে আসছে না তো। ”

শান বইটা আমার সামনে রেখে বললো,
“পড়া রেখে যতসব ফাউল চিন্তা করলে মনে আসবে কিভাবে দ্রুত পড় আজকে মোট তিনটা চ্যাপ্টার কম্প্লিট করে তারপর উঠবে এখান থেকে। ”

আর কি আবারও পড়তে শুরু করলাম। উফ পড়ছি না ঝুরছি জানি না। এরমধ্যে একবার গেছিলাম ডিনার করতে যদিও ডিনারের আগে ওনাকে পড়া দিয়ে যেতে হয়েছে। ডিনার শেষে আবার এসে পড়তে বসলাম।

শান বিছানায় বসে আছে আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে রাত প্রায় বারোটার ঘরে।
“বারোটা বাজছে ঘুমাবো। পড়া শেষ করো কালকে পড়বে আবার।এখন ঘুমাতে এসো।”

আমি এমন ভাব করলাম যেন ওনার কথা শুনতেই পাইনি। আমি নিজের পড়া পড়তে লাগলাম। এতগুলা বকা শুনেছি পড়ার জন্য এখন আবার আল্লাদ বেড়ে গেছে। শান আবারও বললো,
“কি বললাম শুনতে পাওনি। ”

আমি এইবার বিরক্ত হয়ে বললাম,
“আপনার ঘুমানো আপনি ঘুমান না আমার সাথে চিল্লাচ্ছেন কেন অদ্ভুত।আমার পড়া বাকি আছে এখনও। ”

উনি কিছু বললো না। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পড়তে শুরু করলাম। হুট করে উনি এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি হাত পা ছোটা ছুটি করতে লাগলাম,
“এটা কেমন ব্যবহার ছাড়ুন আমাকে আমার পড়া আছে। ”
“পড়ার সময় পড়া ঘুমানোর সময় ঘুমানো।এখন ঘুমের সময় তাই চুপচাপ ঘুমাও। ”

উনি আমাকে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলেন। আমি উঠে গিয়ে বললাম,
“ঘুমাবো না আমি ছাড়ুন। ”

কথাটা বলে নিচে নামতে যাবো তৎক্ষণাৎ উনি টেনে আমাকে উনার বুকের উপর ফেললেন,
“এতো রাগ করছ কেন হুম তুমি পড়লে কি আমার লাভ হবে। আমি তো তোমার ভালোর জন্যই বলেছিলাম। আমাদের বাড়ির সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত সেখানে তুমি ইন্টার পর্যন্ত পড়লে কেমন হবে। তোমার ভালো লাগবে কারো কাছে ছোট হতে? ”

আমি মাথা নিচু করে রইলাম।উনি আমার মুখটা উচু করে আমার নাকের সাথে উনার নাক স্লাইড করে আমার ঠোঁটে ছোট করে একটা কিস করলেন,
“তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম হয় না।তুমি পাশে না থাকলে অসস্থি হয় প্রচন্ড। আমার ভালোবাসার কাছে তোমার রাগ কখনো টিকতে পারবে না তারপরও কেন এমন খামখেয়ালি করো সুইটহার্ট।”

উনার এই নেশাক্ত চাহনীর দিকে তাকানোর ক্ষমতা আমার নেই। অদ্ভুত শিহরণে শিহরিত হই বারবার। তাই নিচেই তাকিয়ে রইলাম। শান বললো,
“ঘুমাও। ”

কথাটা বলেই উনি আমাকে পাশে শুয়ে দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে উনার বুকের সাথে ধরে ঘুমিয়ে পড়লেন। আর আমিও মুচকি হেসে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। সত্যিই উনার এসব পাগলামির কাছে আমার অভিমান কখনোই টিকতে পারবে না।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর আপনাদের অনুভূতি জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here