ওই_আকাশটা_আমার_ছিল পর্ব ১

“একরাতের জন্যে যদি একলাখ দিই তাহলে তুমি রাজি হবে?”
“মিস্টার অয়ন আমাকে দেখে কি আপনার তাই মনে হয় টাকার জন্যে আমি আমার সতীত্ব বিসর্জন দিব?দেখুন আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু আমাদের কাছে আমাদের ইজ্জত অনেক দামী!আপনি আমার মাকে বাঁচিয়েছেন তারজন্যে আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ !তবে আমি দুঃখিত আপনার এই অনুরোধ টুকু রাখতে পারলাম না।ক্ষমা করবেন আমাকে।”

অয়ন এবার কিছুটা হাসার ভঙ্গিমা করে হাতে থাকা মদের গ্লাসটি টি-টেবিলের উপর রাখে। মাথাটা চেয়ারের উপর এলিয়ে দিয়ে বলে,

“তোমাকে আমার ভালো লেগেছে তাই তোমাকে এতবার রিকুয়েষ্ট করেছি।নাহলে এই মিস্টার অয়ন যা তা মেয়েদের সাথে রাত কাঁটায় না মিস পৃথী!”

পৃথী এ’কথার প্রতিউত্তর করলো না।সে ব্যস্ত ভঙ্গিতে তার হাত ঘড়িটির দিকে তাকায়।রাত ন’টা ছুই ছুই!
“দেখুন অনেক রাত হয়ে গেছে।এবার আমাকে বাসায় ফিরতে হবে!”
“হুম,বাসায় ত ফিরবে।এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই।”
বলেই খানিকটা থামে অয়ন।তারপর আয়েশ জড়ানো গলায় বলে,
“তবে তুমি চাইলে অসম্ভবের কিছু না!মাত্র কয়েক ঘন্টার ই ত ব্যাপার তাই না!তাছাড়া,এখানে মজা পাবার ত একটা ব্যাপার আছে।মজাটা আমি যেমন পাবো, সেইম তুমিও!ভেবে দেখো!”

এবার পৃথীর ধৈর্য্যের বাঁধ যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে।মন চায় এখুনি এই লোকটির গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিয়ে মুখের উপর বলে দিতে,”কী ভেবেছেন আমাকে?আমি পতিতা?পতিতাদের মতন রাত কাঁটিয়ে মানুষদের থেকে টাকা নিই!ছিঃ এতটা নোংরা ভাবলেন কি করে আমাকে?ঘৃণা করি আপনাকে এবং আপনার এই নেরো মনমানসিকতাকে!”
কিন্তু পৃথী তা পারলো না।তার মাকে “বি পজিটিভ” রক্ত ডোনেট করে তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে এই লোকটি।তার মার হৃদরোগ হয়েছে।রক্ত শূন্যতায় একেবারে বাঁচার হার প্রায় ৪০% ছিল বৈ কি।কিন্তু ডোনার খুঁজে পায়নি।হাসপাতালে “বি পজিটিভ”রক্তের ডোনার খুঁজতে খুঁজতে যখন পৃথী প্রায় হিতাহিতজ্ঞান শূন্যে তখন আল্লাহর কৃপায় মিস্টার অয়ন হাসপাতালের করিডোরে প্রবেশ করে।অয়ন এসেছিল তার বন্ধু ডাঃ ফাহাদের সাথে দেখা করতে!দেখা করতে এসেই দেখে একটা মেয়ে ” বি পজিটিভ “রক্তের ডোনার খুঁজতে খুঁজতে সারা হাসপাতাল পাগল বেশে ছোটাছুটি করছে।অয়নের রক্তের গ্রুপের সাথে ম্যাচিং হওয়ায় সে নিজ থেকে ডোনেট করতে এগিয়ে আসে।কিন্তু লোকটির এতটা দয়ায় তার জীবনে যে এমন কাল হয়ে দাঁড়াবে ভাবতেই পৃথীর যেন এবার কান্না পেয়ে যায়।পৃথী গাঁয়ের ওড়নার আঁচল খুব শক্ত করে চেপে চোখের পানির বাঁধ সংযত করার চেষ্টা করে।তারপর লম্বা একটা হাঁক ছেড়ে দৃঢ় গলায় বলে,

“আমাকে অন্যসব মেয়েদের মতন ভাববেন না মিস্টার অয়ন!আমি অন্যসব মেয়ের মতন না!তাই কান্ডলি এগেইন রিকুয়েষ্ট আপনি প্লিজ এই টপিকটা ইগনোর করুন!আমার মাকে ডোনেট করেছেন সেই দুই ব্যাগ রক্তের দাম দিতে এখানে এসেছি।এই নিন টাকাটা……!”

বলেই পৃথী অয়নের দিকে পাঁচশো টাকার আঁটটা নোট এগিয়ে দেয়!পৃথীর হাতে টাকা দেখে অয়ন এবার আর নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলো না!তার পায়ের তলার রক্ত একদম মাথায় উঠে যায়!এই মেয়ের এত সাহস?এই মেয়ে তাকে সামান্য পাঁচ হাজার টাকার গরম দেখিয়ে তাকে অপমাণ করছে?বিষয়টি অয়নের খুব আত্মসম্মানে লাগে।দাঁতে দাঁত চেপে কাঠিন্য গলায় বলে উঠে,

“এতক্ষণ কিছু বলি নি বিধায় ভেবেছিস যা ইচ্ছে তা করে যাবি?আরেহ ওই পাঁচ হাজার এই অয়ন প্রতি মিনিটে মিনিটে উড়ায়!তুই যে আমাকে পাঁচ হাজার দিতে এসেছিস ওই পাঁশ হাজার জোগাড় করতে তোর ক’দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে গিয়ে হিসেব করে দেখ!এই অয়ন তোর মাকে দয়া দেখিয়ে ব্লাড ডোনেট করেছে টাকার বিনিময়ে না!আর শুধু যে তোর মাকেই ডোনেট করেছি তা না আমি এরকম অনেক রোগীকেই ব্লাড ডোনেট করি!তাই এই পাঁচ হাজার যেখান থেকে বের করেছিস সেখানে রেখে দে!আর সেকেন্ড পয়েন্ট-আমি প্রতি রাতেই রুমডেট করি! হাজারো মেয়ে আমার সাথে রাত কাঁটাতে লাইন বাই লাইন দিয়ে থাকে,পাত্তা পায় না।আর তোকে এক পয়সাও বেচা যাবে না তুই আসছিস আমাকে তোর শরীরের দেমাক দেখাতে!এই তুই নিজেকে কি ভাবিস?কি আছে তোর?কি আছে?কিছুই নাই!”

“জ্বী,আমার কিছুই নেই! আর তা নিয়ে আমার একদম মাথাব্যথাও নেই! প্লিজ এবার আমায় যেতে দিন!”

অয়ন নিজেই বুঝতেছে না তার রাগ কোন পর্যায়ে যাচ্ছে!এই মেয়েকে একদম কুচিকুচি করলেও মনে হয় না এখন তার ভেতরটা ঠান্ডা হবে!তারপরও সে আর তর্কাতর্কি তে গেলো না!সে জানে এদের মতো দুই পয়সার মেয়েদের সাথে তর্কে জড়ানো মানে বেগার লস!কাজেই কেঁটে পড়া শ্রেয়!সে চোখ খিঁচে গলা উঁচিয়ে তার পি.এ কে ডাকতে থাকে,

“রিফাত?রিফাত?রিফাত!”

রিফাত দ্রুতপদে এগিয়ে আসে।বিনীত গলায় বলে,
“জ্বী ভাই, বলুন?”
“একে তাড়াতাড়ি বাসায় ছেড়ে দিয়ে আসো।নাটক-ফাটক দেখাতে আসছে এখানে!যত্তসব!”
শেষ দুই বাক্য বিড়বিড় করে বলেই অয়ন স্থান ত্যাগ করে অন্যত্রে চলে যায়।রিফাত ক্ষীণ গলায় বলে,

“এই যে ম্যাডাম?”

পৃথী রিফাতের দিকে তাকায়।রিফাতকে খুব ঝাপসা দেখাচ্ছে।সে তরহর করে তার ওড়নার কোণা টেনে চোখের পানি মুছে নেয়।সে নিজেও জানে না সে কখন অয়নের সামনে চোখের পানি ফেলে দিয়েছে!ক্ষীণ গলায় রিফাতকে বলে,

“আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসতে হবে না!আমি নিজেই বাসায় যেতে পারবো!”
“কিন্তু স্যার যে বললো আপ…!”
“তার প্রয়োজন নেই!আর টাকাটা এখানে রেখে গেলাম!আপনার ভাইকে বলবেন কারো দয়ায় ঋণী হয়ে থাকার ইচ্ছে এই পৃথীর নেই।আসি।থ্যাংকস!”

বলেই পৃথী রিফাতকে পাশ কেঁটে দ্রুত অয়নের মস্ত বড় রাজমহল থেকে বেরিয়ে আসে পৃথী।

১.
অয়ন তার রুমে ঢুকে।বিছানার কাছে যেতেই বিছানা তাকে খুব সযত্নে ডাকে।আজ কয়েক গ্লাস একটু বেশি হয়ে গেছে তাই মাথাটা প্রচন্ড ঘুরছে।কিন্তু কেনজানি এখন রেস্ট নিতেও তার ইচ্ছে করছে না!করিমকে ডাক দিয়ে আরো তিন-চারটা মদের বোতল আনায়।আজ সারারাত বসে বসে মদ গিলবে।ঘুমাবে না!বেলকনির বেতের চেয়ারে বসে একের পর এক বোতল সাবাড় করতে থাকে!তার এত খাওয়ার পরিমাণ দেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা করিম বার বার ঢোকর গিলে।সে আগে কখনো তার স্যারকে এত বেশি খেতে দেখে নি।পার্টি বা অন্য কোনো এরেন্জে সংস্কৃতি বজায় রাখতে হাইস্ট গেলে এক গ্লাস হাতে নিত!কিন্তু আজ!

“স্যার,ওই মেয়ে চলে গেছে দেখে কি হয়েছে!লালী ম্যাডাম আছে।লালী ম্যাডামের সৌন্দর্য্যের কাছে ওই মেয়ে পান্তাভাত!লালী ম্যাডামের জ্যাফলিনার মতো ফিগার,আয়তলোচন চোখ,চিকন ঠোঁট,বগের মতো ধবধবে সাদা শরীর আহা দেখলেই খালি…!”

বলেই করিম তার পান খাওয়া লাল লাল সবগুলো দাঁত বের করে হেসে দেয়।
“ইউ’র জাস্ট শ্যাটআপ!গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার!গো!”

করিম মুহূর্তে হাসি থামায় ফেলে।স্যারের রাগ রাগ মুখের দিকে একফোঁড় তাকিয়ে থেকে তারপর নতজানু ভঙ্গিতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়!হয়তো এটা এখন তার স্যারের জন্যে বেয়াদবি হয়ে গেল!করিম রুম থেকে বেরুনোর পর রিফাত ভেতরে ঢুকে।
“ভাই আছেন?”

অয়ন সেদিকে তাঁকায়।

“ভাই ওই মেয়ে আমাদের গাড়ি করে যায়নি।টাকাটাও নেয়নি।আমাকে বলেছে আপনাকে টাকাটা দিয়ে দিতে।উনি নাকি কারো কাছে ঋণী হয়ে থাকবেন না!”

রিফাতের কথা শুনে অয়ন প্রথম দফায় চুপ করে থাকে। দ্বিতীয় দফায় হাতে থাকা মদের গ্লাসটি শরীরের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নিচে আচাড় মারে।সাথে সাথে গ্লাসের টি কয়েক ভাগে পুরো বেলকনিতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়!তারপর ঠোঁটের কোণে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে মাতাল মাতাল গলায় বলে,

“আমার সাথে পাঙ্গা?তাও মিস্টার অয়নের সাথে!মিস পৃথী এই অয়ন তোমাকে দেখে নিবে!তিন তিনটা তাঁজা অপমাণ হজম করার মতো অয়ন পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করে নি!”

চলবে…

ওই আকাশটা আমার ছিল
সূচনা পর্ব
রোকসানা আক্তার

(গল্পটা একটু অন্য টাইপ হবে।আশা করি সবাই পাশে থাকবেন।আর হ্যাঁ আপনাদের মতামত জানাবেন।হ্যাপী রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here