কর্নেল_সাহেব পর্ব ২

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২

তবুও ইমানের মন মানলো না।ও মিমকে ছেড়ে এলো বাগান বাড়ির গেটে।কিছুদূর এগিয়ে আসার পর ইমানের মনে হলো যেন,
ওকে কি একা ছেড়ে আসা উচিত হলো মায়ের কাছে? রায়হান সাহেব এসে ছেলেকে বলেন,
– চল বাবা গিয়ে দেখে আসি বউমাকে।মিম গিয়ে দরজা ঠেলে মিসেস এনা খানের ঘরে ঢুকতেই সে একটু ভয় পেয়ে দেওয়ালের এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে জিজ্ঞেস করে,
– কি তুই বৌমানুষ? কি করতে এসেছিস আমার কাছে? যা যা চলে না নয়তো আমি।আমি এই লাঠি দিয়ে মারবো তোকে।মিম বেড সাইডের টেবিলে খাবারের প্লেট টা রেখে মৃদু হেসে ফ্লোরে বসে মিসেস এনাকে বলে,
– আমি তোমার মেয়ে মা।তোমার ছেলের বউ? মিসেস এনা বেশ অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে মিমের দিকে।তারপর আস্তে আস্তে হাতের লাঠি টা ফ্লোরে রেখে ওর পাশে এসে বলে,
– তুই আমার ছেলের বউ? আমার ওই অতটুকুনি ছেলে বড় হয়ে গেছে? মিম হাসতে হাসতে মিসেস এনার মাথায় হাত রেখে বলে,
– হ্যাঁ মা,দেখ কত গয়না আর শাড়ি দিয়েছে আমাকে? ফুলজান বেগম মিমকে ঘরের মধ্যে দেখে বেশ ভয় পেয়ে বলে,
– হায় হায়,নতুন বউ ছোটো মালকিনের কাছে কেন এসেছে? তাকে চিন্তিত দেখে ইমান জিজ্ঞেস করে,
– আরে ফুলখালা যে? কি হয়েছে? সে দুশ্চিন্তা করে বলে,
– আমার তো ভয় হচ্ছে বাবা? তোমরা মা না আবার নতুন বউয়ের কপাল ফাটিয়ে দে? সাথেসাথে রায়হান সাহেব এবং ইমান ছুটে এসে দেখে,
যে মিম নিজের হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দিচ্ছে মিসেস এনা খানকে।আশ্চর্য!
দু’জনে কত হেসে খেলে কথা বলছে একসাথে।মিসেস এনা খান মানতেই চাইছে না তার ছেলেটা বিয়ে করেছে।বারবার মিমের গলায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করছেব,
– এই গয়না কি আমার ছেলে তোকে গড়িয়ে দিয়েছে? মিম হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে,
– হ্যাঁ মা,তুমি পরবে? মিসেস এনা খান মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– তুই দিবি আমাকে? মিম তখন ফুলজান বেগম কে ডেকে নির্লিপ্ত ভাবে নিজের গায়ের সব গয়না খুলে মিসেস এনা খানকে পরিয়ে দিতে বলেছে।মিসেস এনা খান ফুলজান বেগম কে দেখিয়ে বলে,
– এই দেখ? দেখ না? আমার ছেলের বউ? আমার ছেলে নাকি বিয়ে করেছে? ফুলজান বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন,
– হ্যাঁ ছোটো মালকিন,দেখতেই তো পাচ্ছি বাড়িতে আবার লক্ষী এসেছে।মিম খেয়াল করে দেখে মিসেস এনা হঠাৎ করে খুব লজ্জা পাচ্ছে।অবচেতন মনে নিজেই নিজের শাড়ির আঁচল ঠিক করে ঘোমটা দিয়ে লজ্জা পাচ্ছে।মিম বাহিরে তাকিয়ে দেখে রায়হান সাহেব এবং ইমান ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে।ইমান ভেতরে ঢুকে মিসেস এনা খানকে জিজ্ঞেস করে,
– মা তোমার ছেলের বউ পছন্দ হয়েছে? মিসেস এনা আবারো মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে মিমের গাল টেনে দিয়ে বলে,
– ও তো আমার সোনা মা? কত লক্ষী মেয়ে? আমার একটা ছোটো চাহিয়া মেয়ে আছে না? ও কোথায় গেছে? রায়হান সাহেব ভেতরে ঢুকে স্ত্রী কে কোলের মধ্যে টেনে নিয়ে সামনের চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলেন,
– রিক্ত নানাবাড়ি বেড়াতে গেছে।কালকে আমাদের বাড়িতে বউ ভাত না? ও চলে আসবে কাল ওর নানাবাড়ি থেকে। আচ্ছা এনা,তুমি খুশি হয়েছ বউ মা কে দেখে? মিসেস এনা রায়হান সাহেবের সাথে রাগ করে বলে,
– আপনি কেন আসেননা আমার কাছে? আমি রাগ রাগ করেছি।
– ক্ষমা করে দাও প্লিজ,আমার ভুল হয়ে গেছে।ছেলের বিয়ে ছিলো না।তাই ব্যস্ত তার কারনে আসতে পারিনি তোমার কাছে।তুমি তো জানো আমি তোমাকে কত ভালোবাসি? ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম তোমাকে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– বাবা আমি ডাক্তার দেখাতে চাই মা কে।
– আমি কি দেখাইনি মা? অবস্থা আরো খারাপ ছিলো তার তবে আমার রিক্ত,আমাদের মেয়ে হওয়ার পর ও অনেক টা সুস্থ হয়ে গেছে।
– তবুও বাবা প্লিজ অনুমতি দাও আমাকে।ইমান মিমের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
– আমার মা পাগল না বাবা।তুমি শুধু অনুমতি টা দিয়ে দাও ওকে।রায়হান সাহেব মিমের মাথায় হাত রেখে বলে,
– তুই যা ভালো বুঝিস তাই কর মা।আমি কখনো বাঁধা দেবো না তোকে।রাতে মিম ইমানের জন্য কফি করে নিয়ে এসে দেখে,
ও মন খারাপ করে বারান্দায় নীলকন্ঠ ফুল গাছ গুলোর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।মিম আমচকা ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের পেছনে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে? বাবা বললো তো রিক্ত চলে আসবে নানুবাড়ি থেকে? ইমান হঠাৎ মিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি পারবে মা কে সুস্থ করে দিতে? মিম ইমানের মাথা টা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– আপনার চোখে জল একটুও ভালো লাগছেনা আমার কাছে।আমি একলা কি করে পারবে? আপনাকে ও আমার সঙ্গী হতে হবে।রায়হান সাহেব নিজের মা রুমকি বেগমের হাত ধরে বলে,
– জানো মা? আমার বাড়িতে লক্ষী এসেছে।কেন যেন কাওকে দেখে হঠাৎ রুমকি বেগমের চোখ দু’টো বড় হয়ে গেছে? রায়হান সাহেব পেছনে ফিরে দেখে কেউ নেই আশেপাশে।তবে তার স্থির বিশ্বাস,রুমকি বেগম যেন চোখের ইশারায় কিছু বলতে চাইছে তাকে?

সকালে,
মিসেস হৃদিকা এহসান মিমকে সাজিয়েছে নিজের হাতে।মিম যখন সিঁড়ি বেয়ে অধরার হাত ধরে নিচে নামছিল,তখন ও খেয়াল করে দেখে ইমান একভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ইশান মিমকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– মিথ্যেবাদী তুমি,কখনো ভালোবাসনি আমাকে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– হাদীসে পরেছি “দেবর মৃত্যু সমান।” আর আপনি এখন পরপুরুষ আমার কাছে।ছ’মাস তো বিয়ের হয়ে গেলো এখনো কি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি আপনি আপনার স্ত্রী কে? ইমান এসে মিমের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
– নিচে চলো,তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি সবার সাথে।তার মধ্যে হঠাৎ সাত বছর বয়সী রিক্ত ছুটে এসে রায়হান সাহেব কে বলে,
– বুড়ো আব্বু? দাদাভাই নাকি বিয়ে করেছে? মিম ওর আসন ছেড়ে উঠে এসে বলে,
– আমার রিক্ত সোনা টা কোথায় গেল? দেখতে পাচ্ছিনা তো তাকে? রিক্ত এর পেছনে ওর পেছনে লুকোতে লুকোতে হঠাৎ মিমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তোমাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।মিম অবচেতন মনে রিক্ত কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেছে।ইমান মিমের খুশির কথা ভেবে মিসেস এনা কে অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছে।হৃদিকা এহসান একটু রেগে গিয়ে রায়হান সাহেব কে বলে,
– ছোটো এই অনুষ্ঠানে কেন এসেছে? রায়হান সাহেব বিরক্ত হয়ে বলে,
– আমার ইচ্ছে,তোমার কোনো সমস্যা আছে? কিছুক্ষণের মধ্যে মাহি আলম চৌধুরী এবং সায়ান চলে এসেছে।মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলেন,
– বাব বাহ!
আমার মেয়ে তো পাক্কা গিন্নি হয়ে উঠেছে? মিমের ভাবি নোহা হাসতে হাসতে বলে,
– মা আমার ননদের জামাইয়ের আদর পেয়ে রূপ খুলেছে।মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– যাহ! কি যে বলো না তোমরা? আমি এখন থেকে বেশি মিস করছি বড় ভাইয়া এবং ভাবি কে।তখন আনান সায়ানের কাছে ভিডিও কল করে বলে,
– বোন আমি খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসবো তোর ভাবির সাথে।লিরা পাশ থেকে বলে,
– সেটাই তারপর না হয় তোকে আরেকবার বিয়ে দেবো দুলাভাইয়ের সাথে? মিমের লজ্জায় মুখ টা লাল হয়ে গিয়েছে।আদিব সাহেব অনুষ্ঠানে এসে চুপ করে তাকিয়ে আছে ছোটো মেয়ের মুখের দিকে।তবে মিম একবারো কথা বলেনি তার সাথে।অনুষ্ঠান শেষে ইমান নিজ দায়িত্বে মিসেস মাহি,সায়ান,নোহা এবং ওদের ছেলেকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে।রাতে ইমান ঘরে এসে দেখে,
ওর মামাতো এবং খালাতো ভাইবোনেরা গেট ধরে আছে।এলমা হাসতে হাসতে বলে,
– ভাইয়া আবারো তোমাদের বাসর সাজিয়েছি টাকা দাও নয়তো যেতে দিতাম না ভাবির কাছে।ইমান কোনো ভণিতা ছাড়াই দশ হাজার টাকা দিয়ে সবাইকে বিদায় করে ঘর থেকে।ঘরে পা রাখতেই বেলি ফুলের গন্ধে ওর মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করেছে মিম তখন ধরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয় ওকে।মিম হন্তদন্ত হয়ে বিছানায় ছুটে গিয়ে দেখে চাদরে বেলি ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে।মিম তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে চাদর টা তুলে ফেলে দেয় বাড়ি ভর্তি লোক সব অবাক হচ্ছে নতুন বউয়ের কাণ্ড দেখে।এলমা,আনিস ওরা ভয় পেয়ে বলে,
– ভাবি আমরা জানি ভাইয়ার বেলি ফুলে এলার্জি।আমরা অন্তত এই কাজ টা করিনি ওর সাথে।মিম গিয়ে ঠাসঠাস করে মিহাকে দুটো চর মেরে বলে,
– তোর সমস্যা আমার সাথে।তুই আমার স্বামীকে টেনে আনছিস কেন আমাদের মাঝে? রায়হান সাহেব একটু ও মিমের বিপক্ষে কথা বলেননি কারণ উনি বেলিফুল নিজে দেখেছেন মিহার হাতে।ইশান রেগে গিয়ে বলে,
– বাবা তুমি কিছু বলছ না কেন ওকে?
– আমি যেটা নিজের চোখে দেখেছি,সেটা নিয়ে কি করে কথা শোনাবো ওকে? তুমি ববং গিয়ে সামলাও নিজের স্ত্রীকে।মিম ছুটে ইমানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আপনি ঠিক আছেন ডাক্তার ডাকতে হবে? ইমান মনেমনে বলে,”কি করে বলি? তোমার স্বামী তোমার ভালোবাসা দেখে অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেছে?” মৃদু হেসে বলে,
– না থাক ঠিক আছে।বাবা তুমি যাও,আমরা দরজা লাগিয়ে দিচ্ছি ভেতর থেকে।রায়হান সাহেব মৃদু হেসে পা বাড়ায় বাগান বাড়ির দিকে।তিন ঠিক করেছেন এখন থেকে বেশ কয়েক দিন থাকবেন মিসেস এনার কাছে।ইমান মিমের কোলের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে আছে তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে এসে ওর গহনা খুলে দিতে দিতে পিঠে চুমু খেয়ে বলে,
– আজ খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।এতো লোকের ভিড়ে একটু ও চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে হলো না তোমাকে।মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– শুয়ে পরুন অনেক রাত হয়েছে।ইমান মিমের বালিশ টা লুকিয়ে বলে,
– আরেকটা বালিশ খুঁজে পাচ্ছি না।তুমি চাইলে শুতে পারো আমার ডান হাতে।মিম লজ্জা পেয়ে কথা না বাড়িয়ে আষ্টেপৃষ্টে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে।ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– ভালো হয়েছে আরেকটা বালিশ নেই।এই দেখো তুমি আমার কত কাছে? মিম মনেমনে বলে,”ওরে দুষ্টু,আমি যেন ওনাকে দেখিনি বালিস লুকোতে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here