কর্নেল_সাহেব পর্ব ৩

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৩

“ওরে দুষ্টু,আমি যেন ওনাকে দেখিনি বালিস লুকোতে?” ইমান মিটিমিটি হেসে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– কি হয়েছে? এভাবে কেন তাকিয়ে আছো আমার দিকে? মিম দুষ্টু হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আমার বালিশ টা তো বিছানায় ছিল কোথায় গেছে? ইমান হাসতে হাসতে প্রসঙ্গ বদলাতে বলে,
– দেখো হয়তো বেলি ফুলের পাপড়ি ওয়ালা চাদর ফেলে দিলে না? তার সাথে গেছে?
– শুনুন,আমি না এতো টাও কানা নই ঠিক আছে? বিছানায় তো ছিলো তো? নেমে খুঁজে দেখি তো কোথায় গেছে? ইমান ওর হাত টেনে ধরে বলে,
– খবরদার তুমি নামবে না বিছানা থেকে।মিম নিজের হাসি সামলে নিয়ে বলে,
– আমার কেন যেন মনে হচ্ছে বালিশ টা বিছানার তলেই আছে? তখন হঠাৎ কেউ এসে দরজা নক করে বলে,
– নতুন বউ আমি কি শুতে পারি তোমাদের কাছে? মিম দরজা খুলে দেখে রিক্ত দু’হাতে বালিশ জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে।ইমান মৃদু হেসে মিমের হাত ধরে বলে,
– তুমি কিছু মনে কোরো না।ছুটিতে এলে রিক্ত মাঝেমাঝে ঘুমায় আমার কাছে।মিম হাসতে হাসতে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
– কি আশ্চর্য?
আগে আপনার কাছে ঘুমাতো এখন ঘুমাবে আমাদের দু’জনের কাছে।আমার রিক্ত সোনা এতো টাও বড় হয়ে যায়নি যে সে ঘুমতে পারবেনা আমার সাথে।মিম ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– সোনা তুমি দাদাভাইয়ের কাছে বসো।আমি তোমার জন্যে দুধ গরম করে আনছি ঠিক আছে? রিক্ত বেশ চিন্তিত হয়ে বলে,
– তুমি একা-একা কি করে নিচে যাবে গো? অন্ধকারে ভয় পাবে।
– কিছু হবে না সোনা,আমি এই গেলাম আর ই এলাম ঠিক আছে? রিক্ত মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ইমানকে বলে,
– নতুন বউ টা অনেক সুন্দর দাদাভাই।
– তুমি খুব পছন্দ করো তাকে?
– জানি না,তবে আমার খুব ভালোলাগে তাকে।মিমের দুধ গরম করতে করতে বলে হলো যেন কেউ ওর গা ঘেঁষে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।ও বিরক্তির ভাব নিয়ে পিছনে ফিরে ইশান কে দেখে বলে,
– কি সমস্যা কি আপনার? এতো রাতে এসে ফাজলামো শুরু করছেন নিজের ছোটো ভাইয়ের বউয়ের সাথে? ইশান দু’হাত দিয়ে মিমের গাল আলতো করে চেপে ধরে হাসতে হাসতে বলে,
– নাহ!
অবাক হয়ে দেখছি।তুমি কত নাটকবাজ? আমি কোয়াইট ইমপ্রেসড তোমাকে দেখে।মিম রেগে গিয়ে ইশানকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
– ভুলে ও এই আশা রাখবেন না যে আমি ভালোবাসি আপনাকে।আপনার সাথে আমার যে টুকুনি ছিল তা শেষ হয়ে গেছে আরো ছ’মাস আগে এখন আপনি আমার ভাসুর আর আমি আপনার ছোটো ভাইয়ের সহধর্মিণী ঠিক আছে? ইশান যেতে যেতে মিমকে চোখ মেরে বলে,
– তুমি কখনো সুখী হতে পারবেনা ইমানের সাথে।কারণ তুমি তো জানোই না যে আমার কথায় আমার ভাই বিয়ে করেছে তোমাকে।মিম ইশান কে গ্রাহ্য না করে ঘরে চলে আসে।তারপর রিক্ত কে ঘুম পারিয়ে ইশানের ব্যাপার টা মিম খুলে বলে ইমানের কাছে।ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– ও হয়তো এখনো ভুলতে পারছেনা তোমাকে? মিম ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– যে লোক হবু বউয়ের অনুপস্থিতিতে তার বড় বোনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে আমি কাপুরুষ ছাড়া কিছু বলে মনে করিনা তাকে।আচ্ছা আপনি কি চাননা সারাজীবন ধরে রাখতে আমাকে? ইমান বেড সাইডের টেবিল ল্যাম্প টা অফ করে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কেন চাইবো না? তুমি আমার স্ত্রী।আমি ভালোবাসি তোমাকে।

সকালে,
রায়হান সাহেব বেশ চিন্তিত হয়ে সবাইকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
– রিক্ত কোথায়? সকালে এসে দেখতে পেলাম না মেয়ে টাকে? নিজের ঘরে তো নেই রেজিনা কি ওকে এনার কাছে নিয়ে গেছে? তখন ও হঠাৎ দৌড়াতে দৌড়াতে এসে রায়হান সাহেবের পেছনে লুকিয়ে বলে,
– নাহ!
বুড়ো আব্বু।আমি তো রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম নতুন বউয়ের কাছে।নতুন বউয়ের একটা সুন্দর নাম দেওয়া দরকার নতুন বউ টা ঠিক যাচ্ছে না তার সাথে।মিমের বড় চাচা শশুর আহমেদ সাহেব খবরের কাগজ ভাঁজ করতে করতে বলেন,
– আচ্ছা মা বল তো কি নাম দেওয়া যায় তাকে? সাত বছরের রিক্ত বিজ্ঞের মতো জবাব দেয়,
– আমি কতগুলো চিরকুটের মধ্যে নাম লিখে কন্টেইনারে ফেলবো।বুড়ো বাবা তার মধ্যে একটা নাম তুলে নেবে ঠিক আছে? ওই চিরকুটে যে নাম টা থাকবে।আমি সেই নাম ধরে ডাকবো আমাদের বাড়ির নতুন বউ টাকে।মিম এসে সবাইকে চা কফি দিতে দিতে বলে,
– বুঝতে পারলাম না।রিক্ত কেন বাবাকে বুড়ো বাবা বলে ডাকে? রায়হান সাহেব হাসতে হাসতে মিমকে পাশে বসিয়ে বলেন,
– বুঝলি মা? আমার মতো আধ চুল পাকা লোক যে ওর বাবা? সেটা মানতে কষ্ট হয় ওর কাছে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– মোটে ও না।ও একটা নাম দিয়েছে তোমাকে।রিক্ত সুন্দর করে চিরকুট লিখে এনে রায়হান সাহেব কে বলে,
– বুড়ো বাবা তাড়াতাড়ি একটা কাগজ ওঠাও এখান থেকে? অনেক ভেবেচিন্তে রায়হান সাহেব একটা চিরকুট তুলে সেটা খুলে দেখে ভেতরে “রাঙা মা” লেখা আছে।নাম টা শুনে ইমান হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে,
– “রাঙা মা?” বেশ সুন্দর নাম তো? কিন্তু তুমি রাঙা মা নাম দিয়েছ কেন তাকে? রিক্ত মিমের কাছে এগিয়ে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– কারণ লাল শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগে ওকে।মিম কিছুটা লজ্জা পেয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
– যাই আমি একটু দেখা দিয়ে আসি মায়ের (এনা) সাথে।হঠাৎ ফুলজান বেগম বাগান বাড়ি থেকে ছুটতে ছুটতে এসে মিমকে বলে,
– কোথায় তুমি নতুন বউ মা? একটু চলো আমার সাথে।তোমার শাশুড়ী সকালে উঠে তোমাকে না দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করছে “আমার ছেলের বউ কোথায় গেছে?”
মিম সেখানে গিয়ে দেখে এনা খান সমস্ত রুম লণ্ডভণ্ড করে ফেলেছে।ও গিয়ে তাকে শান্ত করে কানধরে ওঠবস করতে করতে বলে,
– ক্ষমা করে দাও মা আমার ভুল হয়ে গেছে।মিসেস এনা খান মিমকে ভয় দেখাতে লাঠি টা দিয়ে ফ্লোরে আঘাত করতে করতে বলে,
– আমাকে না বলে কখনো চলে যাবি আমার ঘরে থেকে? ইমান ও রায়হান সাহেব দরজায় দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে শেষ মিসেস এনা খানের শাসন করা দেখে।তবুও ভেতরে ঢুকে রায়হান সাহেব তাকে বুঝিয়ে বলেন,
– থাক,নতুন বউ তো বুঝতে পারেনি ঠিক আছে? এনা খান রেগে গিয়ে রায়হান সাহেব কে লাঠি দিয়ে বলে,
– তুই বুড়ো ব্যাটা খালি শুধুশুধু জ্বালাও আমাকে? আমি আমার ব্যাটার বউয়ের সাথে রাগ করেছি তোর কি তাকে? রায়হান সাহেব চোখ কপালে তুলে বলেন,
– এই নাক মলছি,কান মলছি পারলে ক্ষমা করে দিয়ো আমাকে।তারপর কি ভেবে মিসেস এনা মিমকে বলে,
– যা যা ঘরে যা।আমার ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– কেন মা? একটু থাকি না তোমার কাছে? মিসেস এনা খান লজ্জা পেতে পেতে শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে বলে,
– যা তোরা যা,আমার জরুরী কাজ আছে বরের সাথে।মিম কিছুটা আন্দাজ করে মুখ ভাড় করে বলে,
– আমি যাবো না মা।তুমি বকা দিয়েছ আমাকে? এনা খান ওর গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,
– তুই আমার সোনা মা না? বল সোনা মা না? যা না যা তোর বিয়ে হয়েছে না আমার ছেলের সাথে।ইমান মিমকে আচমকা তাদের সামনে থেকে কোলে তুলে নিয়ে বাহিরে এসে বলে,
– কি আশ্চর্য? কিছু বোঝো না সবটা বুঝিয়ে বলতে হবে তোমাকে? মিম ইচ্ছে করে বলে,
– দেখুন আমি না শিশুবউ,পারলে একটু বুঝিয়ে বলেন তো আমাকে? ইমান হাসতে হাসতে ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে টি-শার্ট খুলতে খুলতে বলে,
– এক্ষুনি বুঝিয়ে দিচ্ছি তোমাকে? মিম তখন বিছানা থেকে উঠে দৌড়।হাসতে হাসতে বলে,
– কর্নেল সাহেব পারলে ধরে দেখান তো আমাকে? ইমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিম দুষ্টুমি করে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
– হায় আল্লাহ আমার বলিস কি করছে বেডের নিচে? ইমান ভাব ধরে বলে,
– আমি কি জানি? তুমি সন্দেহ বাতিকের মতো তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে? মিম এগিয়ে এসে ইমানকে বলে,
– একটু ঝুঁকুন তো? আমার জড়িয়ে ধরতে কষ্ট হয় আপনাকে।আপনি তো খাম্বার মতো মতো লম্বা কেন? মা কি ছোটো বেলায় কমপ্ল্যান বেশি খাইয়েছে আপনাকে? আমার এখন মন চাইছে হাতুড়ে ডক্টর হয়ে আপনার অপারেশন করে পা দুটো ক্যাঁচাত করে কেটে দিতে? ইমান হাসতে হাসতে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কেনো বলতো? লম্বা বলে ভালো লাগে না তোমার কাছে? মিম মুখ ফসকে বলে ফেলে,
– না মানে যখন তখন জড়িয়ে ধরতে পারি না আপনাকে।তারপর ইমান ওকে লজ্জা পেতে দেখে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলে,
– তাতে কি? তুমি যখন আমার বুকে মাথা রাখো খুব ভালো লাগে আমার কাছে।তুমি তো লম্বায় ঠিক আছো পাঁচ ফুট তিন এটা কি কম বলো আমাকে? মেয়ে মানুষ বেশি লম্বা হলে ভালো লাগে না মাঝারি সাইজ ঠিক আছে আর এমনি তেও আমি তোমাকে পেয়ে সুখী।আমার কোনো আক্ষেপ নেই ম্যাডাম ঠিক আছে? মিম হঠাৎ কেঁদে বলে ওঠে,
– আপনি মিশনে দেশের বাহিরে চলে গেলে আমার কি হবে? শুনুন আমি আমাদের সন্তানের মা হতে চাই।ইমান খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিমের মুখের দিকে।ও কিছু বলতে পারতো তার আগেই মেয়ে টা দৌড়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।ইমান মনেমনে বলে,”পাগল একটা,ধন্যবাদ বাবা।তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে দামী উপহার দিয়েছ আমাকে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here