কাঠগোলাপ এবং তুমি পর্ব ৩

#কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ৩
~ জান্নাত মাহজাবীন

দুই ঘন্টা হতে চলল নীশু ওয়াশরুমে বসে আছে। সে আজ কিছুতেই বের হবে না। না না নাহ্! নীশুর বের না হওয়ার কারণ রাজ্য। সে রাজ্যের গলা শুনেই ওয়াশরুমে ডুকে গেছে। কান পেতে সে রাজ্যের এ বাড়িতে আসার কারণ টাও জেনে নিয়েছে। রাজ্য এখানে এসেছে নীশুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার এক বন্ধুর পার্টিতে। কিন্তু পৃথিবী উল্টে গেলেও নীশু তার সাথে যাবে না। দরকার হলে সে এখানেই সারাদিন কাটিয়ে দেবে। রাজ্যের হাত থেকে বাঁচার জন্য শুধু সারাদিনই না সারাজীবনই এখানে থাকতে পারবে। ক্ষিধে পেলে পানি খাবে, হাওয়া খাবে। অনেক বছর কেটে গেলে তার রূপান্জেলের মতো লম্বা চুল হবে। তারপর ঘোড়ায় চড়ে তার রাজকুমার আসবে। সে তার লম্বা চুলের গুচ্ছ দিয়ে রাজকুমার টাকে নিয়ে আসবে। তখন রাজকুমার তাকে ঘোড়ায় চড়িয়ে নিয়ে যাবে নিজের রাজ্যে। ভাবতেই নীশুর সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল। কিন্তু অপেক্ষা করার মতো মহৎ কাজ করার ধৈর্য সবার থাকে না। নীশুর ও নেই। সে ভাবলো রাজ্য হয়তো এতক্ষণে‌ চলে গেছে। তাই সে শরীরে টাওয়াল জড়িয়ে বের হয় ওয়াশরুম থেকে। আর বেরিয়ে যা দেখে তাতে তার চোখ ছানাবড়া। মনে হচ্ছে এক্ষুণি তার চোখ টুপ করে বেরিয়ে মারবেলের মতো চলে যাবে রাজ্যের পায়ের কাছে। রাজ্য নীশুর বেডে বসে ফোন টিপছে। নীশু নিজের অবস্থা খেয়াল হতেই চিল্লাতে থাকে। রাজ্য দ্রুত ফোন রেখে নীশুর কাছে আসে। নীশুর মুখ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“এই মেয়ে, চুপ! আমি তেলাপোকা না। সাধারণ মানুষ। ভ্যাঁ করে চিৎকার করে আঙ্কেল আন্টিকে শোনাচ্ছো??”

নীশু কথা বলছে ঠিকই। তবে তার মুখ থেকে শুধু গোঙানির আওয়াজ হচ্ছে। তার কারণটাও পরিষ্কার। রাজ্য তার মুখ খানিকটা জোরেই চেপে ধরেছে। বুঝতে সময় লাগলেও রাজ্য ব্যাপটারটা বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দেয়। নীশু দুই হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। রাগী সুরে রাজ্যকে বললো,

“আপনার সাহস হয় কি করে এই ঘরে আসার?? বেরিয়ে যান এক্ষুণি।”

“তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে। আর তাছাড়া একটা সময়ের পর ঘরটা আমারও হবে।”

“আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার সাথে যাবো??”

“তুমি যেভাবে ভেবেছিলে ওয়াশরুমে বসে থাকলে আমি চলে যাব।”

“দেখুন, আপনি প্লিজ যান এখান থেকে। আমি ড্রেস চেঞ্জ করব।”

রাজ্য আবার গিয়ে বেডে বসে পড়ে। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

“তো করো।”

নীশু চোখ কপালে তুলে বললো,

“করো মানে কি?? আপনার মতো বাজে লোকের সামনে আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো ভাবলেন কি করে?? আমি আপনার সাথে কোথাও যাচ্ছি না। আপনাকে বিয়েও করছি না।”

রাজ্য দাঁড়িয়ে নীশুর দিকে অনিমেষ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললো,

“যাবে না??”

নীশু ঢোক গিলে হালকা মাথা নাড়ায়। রাজ্য মুচকি হেসে নীশুর দিকে এগিয়ে আসলে নীশু দুই পা পিছিয়ে যায়। বিপদ সবার সামনে থাকলেও নীশুর বিপদ পেছনে। দেয়ালে যে তার পিঠ ঠেকে গেছে। সে সাইডে সরে যেতে চাইলে রাজ্য তার কাঁধ বরাবর দেয়ালে হাত ঠেকায়। নীশু করুন দৃষ্টিতে তাকায় রাজ্যের দিকে। রাজ্য মুচকি হেসে বলে,

“যাবে না আমার সাথে??”

নীশু কাঁদকাঁদ সুরে বললো,

“যাবো।”

“গুড! দশ মিনিট সময় দিচ্ছি রেডি হওয়ার জন্য।”

রাজ্য বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করছে। নীশু বকাতে বকাতে রাজ্যের গুষ্টি উদ্ধার করছে আর রেডি হচ্ছে। সে সুযোগ পেলে রাজ্যের চুল ছিড়ে আকাশে উড়াত। নীশু সাদা টপস্ আর জেগিন্স পড়ে বাইরে যায়। রাজ্য তাকে দেখে বিরক্তিকর শব্দ করে তার হাত ধরে টানতে টানতে আবার রুমে নিয়ে আসে। তারপর আলমারি খুলে একটার পর একটা কাপড় বের করতে থাকে। সব কাপড় বের করা শেষ হলে খুঁজে খুঁজে একটা সাদা আর গোলাপি মিশ্রণের সালোয়ার স্যুট দিয়ে বলে চেঞ্জ করার বলে। নীশু ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে,

“আমি আপনার কথা চলব নাকি?? পারব না এখন আবার চেঞ্জ করতে।”

“ঠিক আছে। করতে হবে না।“

রাজ্য ড্রেসটা তুলে নেয়। তারপর নীশুর সামনে এসে বলে,

“যেহেতু তুমি করবে না তো আমিই করিয়ে দেই চেঞ্জ।”

রাজ্য কথাটা বলে নীশুর দিকে হাত বাড়াতেই নীশু লাফিয়ে দূরে সরে যায়। রাজ্য মুখ কুঁচকে বলে,

“কি হলো??“

নীশু আমতা আমতা করে বলল,

“আল্লাহ্ আমাকে ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য দুটো হাত দিয়েছে। আপনি কেন কষ্ট করে চেঞ্জ করিয়ে দেবেন?? আমায় দিন। আমি পারব।”

“সিউর?? নাকি বাংলা সিরিয়ালের ভিলেনদের মতো নতুন ফন্দি আঁটবে??”

নীশু মুখ ছোট করে মাথা দোলায়। রাজ্য ড্রেসটা হাতে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

.
.
.

(চলবে)

~ জান্নাত মাহ্জাবীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here