কাঠগোলাপ এবং তুমি পর্ব ৬

#কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ৬

নীশু ছেলেটার সাহস দেখে অবাক হচ্ছে। আবার নিজের সাহস দেখে আরও বেশী অবাক হচ্ছে। ইংগেজমেন্ট অনুষ্ঠানের শেষে রাজ্য স্ট্রিকলি বলে দিয়েছে বিয়ের আগে যেন আর বাইরে বেরোনো না হয়। কিন্তু নীশুর মনটা ভালো ছিল না বিধায় আজ ভার্সিটি রওনা হয়েছিল। রাস্তায় অনেকটা সময় রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রিক্সা না পেয়ে হাঁটতে শুরু করে। তখনই নীড় রিক্সা নিয়ে হাজির। আর সে এমন ভাবে রিকোয়েস্ট করলো সে না উঠে পারল না। ছেলেটার জন্য তার মায়া হয়। কত ভালো বন্ধু ছিল তারা! যদি নীড় তাকে প্রপোজ না করত তাহলে হয়তো এখনো বন্ধুত্ব থাকতো। আর আগে যদি জানত রাজ্যের মতো ফাজিল ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক হবে তাহলে ভুলেও নীড়ের সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করত না। নীশু ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে নীড়ের কথায়। নীড় খামখেয়ালি সুরে বললো,

“কথা বলছো না কেনো নীশু?? বর কি বারণ করে দিয়েছে??”

“বারণ করবে কেনো?? কি যে বলো তুমি??”

নীড় ব্যাগ থেকে একটা চকলেট এগিয়ে দিয়ে বললো,

“আগে তো রোজ চকলেট না দিলে আমার মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে। শেষ বারের মতো আজ চকলেট টা খাবে??”

নীশু খানিকটা সময় মুচকি হেসে তার থেকে চকলেট নিয়ে খেতে শুরু করে দেয়। নীশুকে বশ করার মন্ত্র চকলেট। চকলেট হলে তার আর কিছু চাই না। নীশু আপনমনে চকলেট খাচ্ছে। আর নীড় তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। নীশুর চকলেট খাওয়া শেষ হলে নীড় বললো,

“তোমার বর তো তোমায় খুব ভালোবাসে। বিয়ের আগেই ভার্সিটি তে সবাই কে বলে দিয়েছে কেউ যেন তোমার দিকে চোখ তুলে না তাকায়।”

নীশু মুখ টা ছোট করে উত্তর দেয়,

“এখানে ভালোবাসার কি দেখলে??”

“ও মা! ভালোবাসে না বলছো?? ভালো না বাসলে এমন করে কেনো??”

নীশু নীড়ের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করে। তার উপর হটাৎ রিক্সা থেমে যাওয়ায় টাল সামলাতে না পেরে নীড়কে আঁকড়ে ধরে। আবছা চোখে দেখতে পায় রাস্তা ব্লক করে রাখা সাদা গাড়ি টাকে। গাড়িটা চিনতে তার এক মুহুর্ত দেরি হয়নি। রাজ্য গাড়ি থেকে নেমে নীশুর সামনে এসে দাঁড়ায়। ব্যস। এইটুকুই মনে আছে তার। তারপর চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আপনাআপনি। আর যখন চোখ মেলে তখন সে রাজ্যের গাড়িতে। মাথা তখনও ভারী লাগছিল। গাড়ি থেকে নেমে দেখে গাড়িটা একটা হসপিটালের সামনে। নীশুর বুকটা ধক করে উঠল। নীড় বা রাজ্যের কি কিছু হয়েছে?? সে মনে করতে পারছে না কিছুই। হটাৎ সেন্সলেস হওয়ার কারণ কি তাও জানে না। নীশু দৌড়ে হসপিটালে যায়। রিসেপশনে গিয়ে রাজ্যের নাম না পেলেও নীড়ের নাম ঠিকই পায়। নীরবের কেবিনে গিয়ে দেখে সে বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে। তার পায়ে, মাথায় আর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যান্ডেজ করা। নীড়কে দেখে সে পুরোপুরি ঘাবড়ে যায়। তার চোখ দুটো ছলছল করে উঠে।
নীশুকে দেখে নীড় করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

“নীশু, কাউকে সাহায্য করা কি খারাপ?? আমি তো তোমাকে শুধুই সাহায্য করতে চেয়েছি। তাতে তোমার বর আমাকে এভাবে মারতে পেরেছে??”

নীড়ের কথার নীশুর মাথায় গোটা আকাশটাই যেন ভেঙে পড়েছে। সে রাজ্যকে এতদিন শুধু ছেলেমানুষ ভেবেছিল। কিন্তু আজ সে বুঝতে পেরেছে ছেলেটা কত বড় বাজে। একটা বখাটে। নীশু নীড়ের পাশে বসে তার হাত ধরে বলে,

“আ‘ম স্যরি নীড়। আমি একদম বুঝতে পারি নি এমন কিছু হবে।”

বলতে বলতেই নীশুর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সে আরো কিছু বলার আগেই পেছন থেকে একটা হাত এসে তাকে উঠিয়ে নেয়। নীশু না তাকিয়েই ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয়। নীশু না তাকালেও খুব ভালো করে জানে এটা রাজ্য। কাউকে মারলে সে ব্যাথা পায়। চোখ থেকে পানি বের হয়। কিন্তু রাজ্যের চোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে। তখনই চট করে তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। সে তার রুমাল বের করে নীশুর মুখ বেঁধে দেয়। নীশুর উড়ণা দিয়ে তার হাত দুটিও বেঁধে দেয়। তারপর পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে চলে যায় কেবিন থেকে। নীড় বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাদের চলে যাওয়া দেখে। নীশু নড়তেও পারছে না। খুব শক্ত করে তাকে ধরে রেখেছে রাজ্য। মুখ বেঁধে রাখার কারণে কথাও বলতে পারছে না। ছটফটানির সুযোগ টাও তাকে দেয়নি। রাজ্য হসপিটাল থেকে বেরিয়ে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায় দূরে কোথাও। শহর থেকে অনেক দূরে। তখন নীশুর আত্মাটা ধপধপ করে কাঁপছিল। রাজ্য তাকে একটা পুরোনো পোড়া বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে একটা চেয়ারে তাকে বসিয়ে হাত পা বেঁধে দিয়ে মুখ খুলে দেয়। নীশু কিছু টা সময় জোরে জোরে শ্বাস নেয়। তারপর ঝাঁজালো কন্ঠে বললো,

“ফাজিল ছেলে! আমাকে এখানে আনার মানে টা কি??”

রাজ্য সামনের চেয়ারে বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে সুখটান দিয়ে বললো,

“একটা ছেলে একটা যুবতী মেয়েকে কেনো এমন জায়গায় নিয়ে আসে তা তো তোমার অজানা নয়!”
.

.

.
(চলবে)

~ জান্নাত মাহ্জাবীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here