কাঠগোলাপ এবং তুমি পর্ব ৯

#কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ৯

রাজ্য ঘুম থেকে উঠে নীশুকে দেখতে পায়নি। কাল রাতের কথা মনে হতেই তার খুব অসস্থি লাগছে। খুব খারাপও লাগছে। তার আগে সব কিছু যাচাই করে নেওয়া উচিত ছিল। ওরা তো বন্ধু ছিল। বন্ধুদের মাঝে তো এমন কিছু হতেই পারে। এখন নিজের উপরও রাগ হচ্ছে রাজ্যের। ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজে চড় মারতে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না সে জানে। শেষবার নীশু যখন তাদের বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল তখনও তার ভীষণ রাগ হয়েছিল নিজের উপর। তখনও নিজের গালে নিজে চড় মেরেছিল। কিন্তু ব্যাথা পায়নি। আর এখন মারলেও ব্যাথা পাবে না। তাই সে ব্যর্থ চেষ্টা করেও নি। উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। নিচে নেমে দেখে নীশু সবার সাথে গল্প করছে। রাজ্যের বন্ধুরা সহ বাড়ি ভর্তি মেহমান। রাজ্য আড্ডা স্থলে যেতেই নীশু উঠে চলে যেতে চায়। রাজ্যের ছোট ভাই কাব্য নীশুর হাত ধরে বললো,

“কোথায় যাও ভাবী??”

“আমি একটু আসছি। তোমরা আড্ডা দাও।”

রাজ্য শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নীশুর চলে যাওয়ার দিকে। রাজ্য সারাদিন চেষ্টা করেও নীশুর সাথে কথা বলতে ব্যর্থ হয়। শেষ বিকেলে ঘরে দিয়ে দেখে নীশু ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ্য এই সুযোগটারই অপেক্ষা করছে।
সে পেছন থেকে টু শব্দ না করে চুপিসারে নীশুর কাছে যায়। নীশুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। নীশু কেঁপে ওঠে পেছনে তাকায়। রাজ্যকে দেখে তার হাতটা সরিয়ে বলে,

“এসব করার জন্য রাত আছে তো।”

বলেই নীশু চলে যায় এখান থেকে। রাজ্যের বুকে তীরের মতো কথাটা গিয়ে বিঁধেছে। নীশু চলে যাওয়ার আগেই তার হাত ধরে বলে,

“আমি কাপুরুষ না নীশু। আজ থেকে তুমি মুক্ত। আমি তোমাকে কখনো কোনো ব্যাপারে জোর করবো না। তুমি যা চাও তাই হবে।”

রাজ্য কথাটা বলে বাইরে চলে যায়। নীশু বোকার মত তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। সে কি ভেবেছিল আর কি হলো! এত দ্রুতই হার মেনে নিলে চলে নাকি! আরো কিছু দেখতে হবে তাকে। আরো অনেক কিছু। এরপর থেকে রাজ্য আর নীশুর সামনেই আসেনি। নীশু রাজ্যের জন্য অপেক্ষা না করে রাতে শুয়ে পড়ে। শুয়ে পড়লেও ঘুম আসছে না তার চোখে। ছটফট করছে মনটা। রাজ্য কি বাড়িতে নেই?? বাড়িতে থাকলে এখনো আসছে না কেনো?? নীশু ভাবতে না পেরে উঠে বসে। তারপর সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখলো। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। ছেলেটা কি সত্যিই তার উপর রাগ করে বাড়ি আসবে না?? নীশু গুটিগুটি পায়ে ছাদে যায়। তার শেষ সম্বল ছাদ। আজ রাজ্য না আসলে সে ছাদেই কাটিয়ে দেবে। তারাদের সাথে গল্প করবে। তাদের জানাবে তার কত বাজে একটা ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে। কিন্তু সে গুড়ে চিনি বালি মিশিয়ে দেয় রাজ্য। পেছন থেকে ধমকে বলে ওঠে

“এত রাতে ছাদে কি করছো??”

নীশু রাজ্যকে দেখে ঘাবড়ে যায়। খানিকটা ভয়ও পায়। ভুত-টুত নয় তো আবার! বলা যায় না। হতেও পারে। নীশু নিজের সাহস আটকিয়ে রাখার অদম্য চেষ্টায় নেমেছে। চোখ বন্ধ করে বললো,

“ভুতের বাচ্চা ভুত! তুই কি ভেবেছিস?? আমি তোকে ভয় পাবো?? কখনোই না। আমি তো মহা বাজে একটা ভুতের সাথে সংসারই করি।”

কথাগুলো বলে চোখ মেলে দেখে রাজ্য হাওয়া। তার মানে রাজ্যের ভুতটা ভয় পেয়েছে তাকে। সে খুশি তে খুব জোরেই হেসে ফেলে। তবে তার হাসি দীর্ঘ স্থায়ী হলো না। ছাদের রেলিং এর কাছে রাজ্যের মত অবয়বটা এখনো আছে। নীশু ঢোক গিলে বললো,

“তুই এখনো যাসনি ভুতের বাচ্চা??”

তার কথা শুনে সবে রাজ্য তার দিকে ফিরতে যায় তখনই নীশু চোখ বন্ধ করে পড়ে যায়। যেন সে অজ্ঞান হয়ে গেছে ভেবে চলে যায়। কিন্তু তার প্লানে জল ঢেলে রাজ্য তার কাছে আসে। তারপর তাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়। নীশু এতক্ষণে নিশ্চিত হলো এটা রাজ্য।
কিন্তু সে চোখ খুলে নি। চোখ বন্ধ করেই বিছানায় মরার মত শুয়ে থাকে। তারপর একসময় ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।

রাজ্যের ঘুম ভেঙ্গে যায় মাঝরাতেই। তার কারণ নীশু তাকে ডাকছে। রাজ্য ঘুম ঘুম চোখে বললো,

“কি হয়েছে নীশু?? ডাকছো কেন??”

“এক কাপ কফি খাওয়াবেন, প্লিজ!”

রাজ্য নীশুর দিকে অবাক চোখে তাকায়। মেয়েটার মাথা খারাপ হয়ে যায়নি তো! তা না হলে এত রাতে কফি খেতে চাইছে কেনো?? স্বপ্নেও তো বলছে না। কারণ নীশুর চোখ দুটো খোলা। রাজ্য ফিসফিসিয়ে বলল,

“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, নীশু।”

নীশু কাঁদকাঁদ সুরে বললো,

“আমি জানতাম আপনি কখনো পরিবর্তন হবেন না। তাহলে শুধু শুধু কেনো তখন কথা দিতে গেলেন??”

রাজ্য নীশুর কথা শুনে না গিয়ে পারলো না। সে বেশ বুঝতে পারছে নীশু সুযোগের ব্যবহার করছে। রাজ্য কফি বানাতে গিয়ে এক ভয়ংকর ঘটনার সম্মুখীন হলো। রান্নাঘরে প্রথমে তাকে চোর সাব্যস্থ হতে হয়েছে। তার কারণ রহিম চাচা এখনো ঘুমায় নি। তিনি রাজ্যকে দেখে ফেলেন। তারপর ফিসফিসিয়ে বলেন,

“কি ব্যাপার?? রাজ্য বাবা। এত রাতে চোরের মত রান্না ঘরে ক্যান আসছো??”

“আমি চোরের মত আসবো কেনো, রহিম চাচা?? আমি তো কফি বানাতে আসলাম।”

কথাটা শুনে রহিম চাচা হো হো করে হেসে উঠে বলেন,

“হয় হয়! সদ্য বিয়া করলে এমনেই হয়।”

রাজ্যের তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে কফি বানাতে হয়েছে। সে কষ্ট করে কফি বানিয়ে আনলো। আর এসে দেখে নীশু ঘুমাচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে গরম কফিটা নীশুর মুখে ঢেলে দিতে। সে করতে পারছে তার নিজেরই দেয়া কথার জন্য।

(চলবে)

~ জান্নাত মাহ্জাবীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here