খেয়া ঘাটের প্রেম পর্ব ১+২+৩

#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#সূচনা_পর্ব

“”শিমুলপুর গ্রামের ঘাটের কিনারায় একটা নৌকা এসে থামলো। নৌকাটা বেশ বড় আছে৷ ঘাট পারাপারের কাজে নিয়োজিত থাকে নৌকা গুলো। এই গ্রামের মানুষজন এই ঘাট পার হয়ে তবে শহরে যায়৷ তিন সুদর্শন যুবক বেশ উল্লাস নিয়ে আসছে গ্রামে। কারণ এটা তাদের প্রথম গ্রামে আসা৷ তাই উৎসাহের শেষ নেই তাদের। আয়ান নৌকা থেকে নামার জন্য সবে ঘাটের কিনারায় পা রেখেছে। তখনই কাদার মাঝে পা পড়ে পিছলাই ধপাস 🤭। আয়ানকে ধরতে গিয়ে সাথে রিক আর তুর্যও পড়ে গেছে কাদার মধ্যে। সাথে সাথে খিলখিল করে হাসার শব্দ তাদের কানে আসে “”।

— হাসির শব্দ অনুসরণ করে তারা সামনে তাকিয়ে দেখে ঘাটের পাড়ের সাথে বড় একটা পেয়ারা গাছ আর সেই গাছে উঠে বসে আছে তিন রমনী৷ থ্রি পিস পড়নে উড়নাটা কোমরের সাথে গিট দিয়ে বাধা। আর নিচে আছে আরো কিছু মেয়ে দাড়িয়ে। গাছের উপর থাকা তিন রমনীকে দেখে তিনজনের চোখ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।তারা কোথায় আছে সেটা যেনো খেয়ালই নাই তাদের।

— মুগ্ধ হয়ে দেখবা না কেনো। গ্রামের সব থেকে সুন্দরী তিন কন্যা যে তাদের সামনে। কতজনে তাদের মন পাওয়ার আক্ষেপে বসে থাকে সে খোজ কে রাখে। তার উপর গ্রামের জমিদার পরিবারের মেয়ে এই তিন কন্যা। হাসির শব্দের ধ্বনি আরো বেড়ে যায় আর তখনই আয়ান,রিক,আর তুর্যের হুস ফিরে। আর তখনই রাগী লুক নিয়ে তাদের দিকে তাকায় তারা। নৌকাতে থাকা বাকিরাও হেসে দেয় তাদের কাজে। কিন্তু তারা সবাই মুখ চেপে হাসছে।

“” গাছ থেকে তাসনু, অনু,আর নুসরাত নেমে এসে আয়ানদের সামনে দাড়িয়ে বলে। একদম কাদা মাখা ভুত লাগছে আপনাদের। আহারে বেচারারা গ্রামে এসে কাদার সাথে বন্ধুত্ব করার সখ জেগেছে। আয়ান রিক তুর্য বেশ লজ্জা পায় তাদের কথায়। প্রথম গ্রামে এসে এমন পরিস্থিতিতে পরতে হবে তারা ভাবেনি।

– তখনই রিক বলে এই যে মিস এই ভাবে দাত না কেলিয়ে একটু সাহায্য করতেও তো পারেন। আমরা আপনাদের গ্রামের মেহমান আর আমাদের বিপদে আপনারা এই ভাবে হাসছেন। তুর্য বলে শুনেছিলাম গ্রামের মানুষরা নাকি অনেক ভালো হয়। কিন্তু এতো দেখি যা শুনেছি সব ভুলরে দোস্ত আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে।

– “তখনই নুসরাত বলে, এই এই খবরদার গ্রাম নিয়ে একদম বাজে কথা বলবেন না৷ আমাদের গ্রামের মানুষ খুব ভালো আর সহজ সরল বুঝলেন। আপনাদের শহরের মতো এতো বাজে আর ধোকাবাজ না হু। আয়ান বলে সেতো আমরা দেখতেই পাচ্ছি কত ভালো তারা। মানুষ যে বিপদে পড়ছে কোথায় সাহায্য করবেন তা করে করে হেসে যাচ্ছেন আপনারা।

– তাসনু বলে তা কি করতে হবে আমাদের শুনি। রিক সাথে সাথে বলে বেশি কিছু না আপু আমাদের হাত ধরে টেনে তুললে হবে৷ আমরা উঠতে পারছি না একা। একটা অসহায় ফেস করে বলে রিক কথাটা। তাসনু একটু ভাব নিয়ে বলে আমরা গ্রামের মানুষ যে এখনই তার প্রমাণ দেব। তাউ বলে অনু আর নুসরাতকে ইশারা করে তাদের তোলার জন্য। তারপর তিনজন হাত বাড়িয়ে দেয়। তাসনু আয়ানকে, নুসরাত তুর্যকে আর অনু রিককে। যখনই ওরা তিনজন হাত বাড়িয়ে সাথে সাথে আয়ান রিক তুর্য তাদের হাত টেনে ওদের সাথে কাদার মাঝে ফেলে দেয় তারপর উচ্চ স্বরে আয়ান রিক তুর্য হাসতে শুরু করে। তাসনু নুসরাত অনু তারা বোঝার চেষ্টা করে কি হলো এটা তাদের সাথে। বোকার মতো চেয়ে আছে তারা। তাই দেখে আয়ানরা আরো হাসতে শুরু করে। তারপর আয়ান বলে এবার হাসুন মিস সুন্দরী মন খুলে হাসুন। আমাদের বেলায় খুব হাসি পেয়েছিল তাই না।

— তাসনু এবার রাগে আয়ানের গলা চেপে ধরে। আয়ান এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তাসনুর কাজে নুসরাত অনু রিক তুর্য সবাই অবাক হয়ে যায়। তারপর অনু তাসনুকে ছাড়াতে চেষ্টা করে। তারপর সবাই উঠে দাঁড়ায়। অনু নুসরাত তাসনু তো রেগে বোম আয়ানরে উপর। আর রিক তুর্য আয়ান মিটিমিটি হাসছে তাদের মুখ ভঙ্গি দেখে।

— তাসনু অনু নুসরাত এবার এক সাথে বলে দেখো নেব আপনাদের। কার সাথে পাংগা নিতে এসেছেন বুঝাই দেব শহরে বিড়াল। আয়ান বলে বিড়াজ কি সিংহ সেটা না হয় পরে দেখা যাবে আগে আপনাদের অবস্থাটা দেখুন৷। কেমন পেত্নী লাগছে সব গুলোকে। তাসনু এবার আরো রেগে যায় আর রেগে গিয়ে আবার আয়ানের গলা টিপে ধরতে যায় কিন্তু আয়ান এবার সরে যায়। তারপর রিককে বলে চল পালায় বাঘিনী খেপেছে৷ তুর্য নুসরাতকে উদ্দেশ্য করে বলে আবার দেখা হবে মিস কাদা সুন্দরী তাই বলে তারা চলে যায়। আর তাসনুরা ওইখানে দাড়িয়ে রাগে ফুসতে থাকে আর ওদের চলে যাওয়া দেখতে থাকে।

— আসুন এবার সবার পরিচয়টা দিয়ে নিই আপনাদের। গল্পের নায়িকা তাসনিম সুলতানা জমিদার পরিবারের বড় আর ভীষণ পাজি একটা মেয়ে।সারাদিন দুস্টামি করা তার প্রধান কাজ। কিন্তু সবার খুব আদরের। দেখতে মাশাল্লাহ গ্রামের সকলের চোখ মন কাড়া সুন্দরী। সবাই তাকে তাসনু বলে ডাকে আর সবাই খুব ভালবাসে তাদের যদিও গ্রামের সবাইকে জ্বালিয়ে মারে তারা।

— তাসনুর ছোট চাচার মেয়ে নুসরাত জাহান। সেও দেখতে মাশাল্লাহ। তাসনুর মতো দুস্টু আর চঞ্চল। সবাই বলে তাসনুর জন্য নাকি নুসরাতের এই স্বভাব পাওয়া। আরেকজন তার নাম অনন্যা ইসলাম সবাই ছোট করে অনু বলে ডাকে। এই মেয়েটা সবার প্রিয় আর কিউট একটা মেয়ে। যদি জমিদার পরিবারের কেউ না অনু৷ কিন্তু ছোট থেকে জমিদার পরিবারে মানুষ আর সবাই তাকে জমিদার বাড়ির মেয়ে বলে জানে।

— সারাদিন পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ানো এদের প্রধান কাজ। আর গ্রামের মানুষের গাছের ফল চুরি করা। বাধা গরু খুলে দেওয়া। ফসল নষ্ট করা সব রকমের অকাজ করে থাকে তারা। আর প্রতিদিন প্রায় শশ নালিশ এই তিনজনের নামে জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করে। এদের জন্য জমিদার বাড়ির সবাই বেশ অতিষ্ট। জমিদার বাড়ির সবাই এই তিনজনকে খুব ভালবাসে এক কথায় এই তিনজন জমিদার বাড়ির চোখের মণি। তাই তেমন ভাবে কিছু বলে না তাদের৷ যারা নালিশ নিয়ে যাই তাদের হয় ক্ষতিপুরন দিয়ে বিদায় করে দেয় তারা। তবে ব তিনজনের মন টা সচ্ছ আর সরল। মানুষকে খুব সহজে তারা আপন করতে পারে তাই গ্রামের সবাই তাদের ভালবাসে।

** পড়াশুনোতে কারোরি মন নেই৷ এই নিয়ে জমিদার বাড়ির সবার আক্ষেপের শেষ নেই। তারপরও তাদের টেনে টুনে কলেজ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে তারা। কিন্তু কলেজ মুখি তাদের কেউ করতে পারে না৷ যদিও একদিন যাই তো কলেজের ছেলেদের গিয়ে র‍্যাগিং করে আর ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ আসে তখন জমিদার বাড়িতে। আর স্যারদের কথাতো বাদই দিলাম।

– এবার আসি গল্পের নায়কদের পরিচয়ে। গল্পের নায়ক আয়ান চৌধুরী। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আর একটা ছোট বোন আছে। বোনের নাম সামিরা জান্নাত সবাই সামু বলে ডাকে তাকে। আয়ান পড়াশুনা শেষ করে এখন ব্যবসা দেখবেন নিজেদের কিন্তু তার আগে সে মুক্ত ভাবে ঘুরতে চায়। তাই প্রথম তার মিশন গ্রাম নানুর বাড়ি। আয়ান এই প্রথম তার নানু বাড়ি আসছে। আয়ান এতদিন জানতেনও না তার নানু বাড়ি কোথায় বা কারা৷

— আয়ানের মায়ের সাথে আয়ানের নানুদের কোনো সম্পর্ক নেই কোন এক কারণে আস্তে আস্তে জানতে পারবেন কারণটা। আয়ান অনেক জোরাজোরি করার কারনে মিসেস আঁখি চৌধুরী ( আয়ানের মা) তার বাবার বাড়ি সম্পর্কে আয়ানকে জানাই৷ আয়ান জানা মাত্র গ্রামে পাড়ি জমাই তার নানুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। যদিও সে জানে না তার নানু বাড়ির সবাই তাদের গ্রহণ করবে কি না। এবার আসি বাকিদের পরিচয়ে। রিক আর তুর্য হলো আয়ানের জানের দোস্ত। তিনজন যেনো তিনজনের জানে জিগার৷ সব জায়গা এদের এক সাথে পাওয়া যাবে। এদের বন্ধুত্ব দেখে অনেকে আবার হিংসেও করে।

– রিক বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান৷ তাই খুব আদরের সে মা বাবার। তুর্য আরো একটা ভাই আছে জমজ নাম তুহিন। কিন্তু সে তুর্যের মতো এমন চঞ্চল না। বেশ চুপচাপ আর অনেক মেধাবী সে। সব সময় বইয়ে মুখ গুজে রাখা তার প্রধান কাজ। কিন্তু দুই ভাইয়ের মধ্যে বন্ধুর মতো সম্পর্ক।

— বাকিদের সবার সাথে আরো পরিচয় হবেন এবার গল্পে আসা যাক। আয়ান রিক তুর্য এসে থামে জমিদার বাড়ির সামনে।৷ বাড়িটা বেশ পুরনো কিন্তু অনেক সুন্দর। চারপাশ সুন্দর সুন্দর গাছপালা দিয়ে বেষ্টিত। সাথে একটা পুকুর বাধানো আছে। তাসনুদের জন্য মুলত এটা করা৷ কারণ জমিদার বাড়ির মেয়েরা বাইরে নায়ে আসবে এটা মানা যায় না৷ যদিও তাসনুরা চুরি করে গ্রামের মেয়েদের সাথে ঘাটে সাঁতারের প্রতিযোগিতা করে। আর জমিদার রায়হান শেখ সেটা জানতে পেরে তাদের খুব বকাও দেয়৷

— তাসনু আর নুসরাতের দাদু জমিদার রায়হান শেখ। বেশ গম্ভীর স্বভাবের একটা মানুষ। এই গম্ভীরতা তার আগে ছিল না। একমাত্র মেয়ের থেকে আঘাত পেয়ে সে এমন গম্ভীর রুপ ধারন করেছেন। রায়হান শেখের দুই ছেলে আর এক মেয়ে। বড় ছেলে আফজাল শেখ আর ছোট ছেলে আসরাফ শেখ। আফজাল শেখ তাসনুর বাবা৷ তাসনুর মা অনেক আগেই মারা গিয়েছে তারপর আর বিয়ে করেননি সে।তাসনুকে নিয়ে সে বেচে আছে। আসরাফ শেখের মেয়ে নুসরাত। নুসরাতের মা নাহিদা বেগম। সেই নুসরাত আর তাসনুকে মানুষ করেছে। দুজনকে তার মেয়ে মনে করে নাহিদা বেগম আর সাথে আছে অনু । তিনজনের মা জেনো নাহিদা বেগম বলতে গেলে। আর রায়হান শেখের একমাত্র মেয়ে আঁখি ছিল সবার চোখের মণি। বাবা ভাইদের। কিন্তু আঁখি পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা সাধারণ ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে করে সেটা জমিদার বাড়ির কেউ মেনে নিতে পারেনি যার জন্য তাদের কাছে আঁখি মৃত বলে আচ্ছাদিত।……….
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_২

–আয়ান রিক তুর্য সবাই বেশ ক্লান্ত হয়ে আছে৷ একে তো কাদার মধ্যে পড়ে সেই অবস্থা তার উপর জমিদার বাড়ি আসতে তাদের খুব বেগ পেতে হয়েছে। এখন তাদের বাড়িতে ঢুকতে দিলেই হলো৷ নাহলে ফিরে যাওয়া তাদের এখন কোনো ভাবেই সম্ভব না। আয়ান বাড়ির ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কেউ আছে নাকি। তখনই আয়ানের চোখে পড়ে একজন বয়স্ক মহিলা বসে আছেন আর তার চারপাশে কিছু মহিলা আর পুরুষ ও আছে৷ সম্ভবত তারা কাজের লোক এই বাড়ির। বয়স্ক মহিলাটি তাদের কি দেখিয়ে দিচ্ছে যেনো। আয়ানের চিনতে একটু ও কষ্ট হলো না এই বৃদ্ধ মহিলাটা কে।

— আসুন আগে পরিচয় দিয়ে নি বয়স্ক ব্যক্তিটির৷ ইনি হলেন আয়ানের নানু নুরজাহান বিবি। জমিদার রায়হান শেখের স্ত্রী। দেখতে বৃদ্ধ হলেও এখনো বেশ স্ট্রং আছেন আর সুন্দরী। দুধে আলতা গায়ের রঙ তার এখনো। নুরজাহান বিবি পান খেতে খুব ভালবাসে৷ কেউ যদি তার পান নিয়ে প্রশংসা করে তাহলে সে আমার কাছে প্রিয় হয়ে যায়। সবাই প্রায় তার এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে থাকে যদি কখনো নুরজাহান বিবি কোনো কারণে কারো উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তো।

— আয়ান নুরজাহান বিবিকে দেখা মাত্র তার মুখে হাসি ফুটে উঠে। তারপর দৌড়ে ভেতরে চলে আসে সে। আয়ানের কাজে রিক তুর্য হতভম্ব হয়ে যায়। তারপর তারাও আসে পিছে পিছে। আয়ান এসে নুরজাহান বিবির সামনে দাঁড়ায়। নুরজাহান বিবি আয়ানকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে। তখনই আয়ান উল্লাসেস সাথে বলে নানু আমি তোমার মেয়ে আঁখির ছেলে। কথাটা শোনা মাত্র নুরজাহান বিবি চমকে উঠে দুচোখ ভরে উঠে তার।। এতদিন পর তার মেয়ের খোজ পেয়েছে সে। তার মেয়ের সন্তান তার সামনে ভাবতেই পারছে যেনো।

“” নুরজাহান বিবি আনন্দে আয়ানকে জড়িয়ে ধরতে যায় কিন্তু আয়ান দূরে সরে যায় তাতে নুরজাহান বিবি অবাক হয়ে তাকায়। আয়ান বলে আরে নানু কি করছো তুমি আমার শরীরের অবস্থা দেখো৷ কাদা লেগে। আমাকে ধরলে তোমারও কাদা লেগে যাবে। নুরজাহান বিবি এতখনে খেয়াল করে আয়ানের শরীরে কাদায় ভরা। তারপর বলে তোর শরীরে এমন কাদা হলো কি করে। আয়ান একটা কিউট ফেস করে বলে তোমার গ্রামে আমাদের কাদা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে নানু৷ আয়ানের কথায় নুরজাহান বিবি হেসে উঠে। তারপর পিছে তাকিয়ে বলে ওরা কারা৷ আয়ান বলে আমার বন্ধু তারপর পরিচয় করিয়ে দেয় এদের সাথে।

— আয়ান বলে কতখন এই ভাবে থাকবো নানু ভেতরে তো যেতে দাও৷ নুরজাহান বিবি বলে হ্যাঁ হ্যাঁ চল তখনই একজন বলে উঠে দাড়াও৷ আয়ান সহ সবাই চমকে উঠে আর থেমে যায়৷ নুরজাহান বিবি মানুষটা কে দেখে মুখে হাসি নিয়ে তার কাছে গিয়ে বলে ওগো দেখো কে এসেছে। আমাদের আঁখির ছেলে। কত সুন্দর হয়েছে দেখতে। আমার মেয়েটা কে কতদিন দেখি নাই। তখনই রায়হান শেখ বলে এতে এতো উল্লাসের কিছু নেই। আমাদের কোনো মেয়ে নেই আর না ওরা আমার কেউ। ওদের চলে যেতে বলো এক্ষুনি।

— আয়ান বলে নানুভাই তখনই রায়হান শেখ গর্জে উঠে বলে কে তোমার নানুভাই৷ তোমাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই৷ চলে যাও এক্ষুনি তোমাদের মুখও দেখতে চায়না আমি। আয়ান ঠিক এই ভয়টা পেয়েছিল। তার মা বলেছিল ওই বাড়িতে তাদের কেউ থাকতে দিবে না। আয়ান তাও তার মাকে আশা দিয়ে এসেছে সব ঠিক করে তবে সে আসবে৷ আর এখন যদি সত্যি ফিরে যেতে হয় তাহলে কি জবাব দেবে তার মাকে৷ আর মা যে আরো কষ্ট পাবে৷ তাছাড়া আয়ানদের এখন ফিরে যাওয়া কোনো ভাবে সম্ভব না৷ বেশ ক্লান্ত তারা। সব মিলাই একটা ভয় জেপে ধরে তাদের। রিক তুর্য তাদের সেম অবস্থা।

— বাইরের শোরগোল শুনে আফজাল শেখ আসরাফ শেখ সহ নাহিদা তাসনু অনু নুসরাত সবাই বের হয়ে আসে৷ তাসনুরা আয়ানদের দেখে অবাক হয়। ওরা এখানে কি করছে ভাবতে থাকে৷ তাসনু অনু নুসরাত তিনজনই তিনজনের মুখ দিকের তাকায় কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না। আয়ানরাও বেশ অবাক হয়েছে তাসনুদের এখানে দেখে।।

— আফজাল শেখ এসে বলে কি হয়েছে বাবা এতো চিৎকার চেচামেচি কেনো এখানে। নুরজাহান বিবি বলে দেখ কে এসেছে বাবা তোর একমাত্র বোনের সন্তান আয়ান। কিন্তু তোর বাবা তাদের চলে যেতে বলছে। আফজাল শেখ বলে বাবা তো ঠিকই বলেছে মা। আমার কোনো বোন নেই না ওদের সাথে কোনো সম্পর্ক আছে। তাই ওদের চলে যেতে বলো। কিন্তু আসরাফ শেখ বেশ খুশি হয় আয়ানকে দেখে। সেও চাই তার একমাত্র বোন আবার তাদের কাছে ফিরে আসুক৷ সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাক। কিন্তু বাবা আর ভাইয়ের জন্য কিছু বলতে পারে না সে।

— আফজাল শেখ আঁখিকে অনেক ভালবাসতেন। একটা বোন হওয়ায় কোনো ইচ্ছে অপুর্ণ রাখেনি কখনো তার। কিন্তু আঁখির এমন কাজে রায়হান শেখ আর আফজাল শেখ মানতে পারে নাই আর সব থেকে বেশি আঘাত তারা পেয়েছে৷ তাই তাদের এতো কঠোর হওয়া।

— ভালবাসা আর ঘৃণা এই দুটি নিয়ে মানুষের জীবন বিদ্যমান। যদি কোথাও ভালবাসা থাকে তাহলে সেখানে ঘৃণার কোনো স্থান নেই৷ কিন্তু ভালবাসা না থাকলে সেখানে ঘৃণা এসে অবস্থান করে। তাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বেশি ভালবাসাটা এখন তাদের ঘৃণা ক্ষোভ জেদে পরিনত হয়েছে।

–তাসনুরা এতখনে বুঝতে পারে ব্যাপারটা। আয়ান হলো তাদের একমাত্র ফুফির ছেলে ভাবতেই পারছে না। তাসনুরা কখনো তাদের ফুফিকে দেখেনি কারণ তার কোনো স্মৃতি এই বাড়িতে রাখা হয়নি৷ তাই তাদের দেখার সুযোগও হয়ে উঠেনি। কিন্তু তার দাদিমাকে প্রায় কান্না করতে দেখেছে তার ফুফির জন্য। আজ তার ফুফির খোজ পাওয়া গেছে এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে তাদের।

— নুরজাহান বিবি এবার আয়ানকে ইশারা করে বলে ভয় না পেতে সে দেখছে। আয়ান ইশারা বুঝতে পেরে মুখে হাসি এনে হ্যাঁ জানাই। তখনই নুরজাহান বিবি শাড়ীর এক আঁচল মুখে চেপে কেঁদে উঠে। তার কাজে উপস্থিত সবাই বেশ ঘাবড়ে যায়। আয়ান তো বেশ অবাক তার নানু এমন করবে ভাবেনি। তারপর নুরজাহান বিবি বলে।। তোমাদের জেদের জন্য আমার মেয়েটা আমার থেকে এতদিন দূরে আছে।। কেমন আছে একটা খোজ ও নিতে পারিনি। তোমাদের রাগ জেদ আমার একটা সন্তানকে দূরে করে দিয়েছে৷। আমার সন্তান থেকেও আজ সে না থাকা। আর আজ যখন আমি আমার মেয়ের খবর পেয়েছি। আমার মেয়ের সন্তানকে পাশে পেয়েছি। তাও তোমরা আছো তোমাদের জেদ রাগ ক্ষোভ নিয়ে।

— আমার কষ্ট তোমাদের চোখে পড়ে না। আমি যে কতটা হাহাকার নিয়ে থাকি আমার মেয়ের জন্য সেটা তোমরা দেখতে পাওনা৷ থাকো তোমরা তোমাদের জেদ নিয়ে আমার কথা তোমাদের ভাবতে হবে না। এবার সত্যি সত্যি নুরজাহান বিবি কেঁদে দেয় কথা গুলো বলে। রায়হান শেখ হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে। তিনি খুব ভালবাসেন তার স্ত্রীকে। তার কান্না তার সহ্য হয়না৷ উপস্থিত সবাই বেশ থমথমে ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

— রায়হান শেখ বলে ঠিক আছে তুমি যখন চাচ্ছো ওরা এখানে থাকবে তো থাকতে পারে। তবে হ্যাঁ ওদের বলে দিবে আমার সামনে বা আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা যেনো না করে। তাহলে কিন্তু এই বাড়িতে সেদিনই তাদের শেষ দিন হবে। আফজাল শেখ বলে কিন্তু বাবা। রায়হান শেখ বলে কোনো কিন্তু নয়।যা বলার বলে দিয়েছি আমি। তারপর চলে যায় সেখান থেকে তিনি আফজাল শেখ একটা গগম্ভীর লুক দিয়ে সেও চলে যায়। তখনই আসরাফ শেখ ভাগিনা বলে জড়িয়ে ধরে। আয়ান তো অবাক৷ যাক অন্তত একজন তার দিকে আছে ভেবেই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে।

— আয়ান বলে আরে ছোট মামা কি করছো ছাড়ো৷ আমার শরীররে কাদা লেগে তোমার ও লেগে যাবে৷ আসরাফ বলে আরে ধুর৷ এতদিন পর ভাগিনাকে পেয়েছি কাদার ভয়ে দূরে রাখবো নাকি। তাই বলে হেসে দেয়৷ আয়ান বলে আচ্ছা তুমি এমন কিন্তু ওই দুজন এমন সিংহ হয়ে কেনো৷ আমার তো ঘাম ছুটে গিয়েছিল এতখন৷ আসরাফ হেসে বলে ওরাও ঠিক হয়ে যাবে সময় দে একটু আর তুই তো আছিস পারবি না সব ঠিক করতে। আয়ান একটা রহস্য হাসি দিয়ে বলে তোমার ওই দুই সিংহকে যদি বস না করতে পেরেছি তাহলে আমার নাম ও আয়ান না৷ তখনই তাসনু বলে এমনিতেও আয়ান নাম বেশিদিন থাকবে না তোমার শহরে বিড়াল।

— আয়ান বলে আচছা এই কাদা সুন্দরী এখানে কি করে। নুরজাহান বিবি বলে এটা তোর বড় মামা আফাজলের মেয়ে। নুসরাতকে দেখাই বলে এটা আসরাফের মেয়ে আর অনুও আমাদের বাড়িরই মেয়ে। আর নাহিদাকে দেখাই বলে এটা তোর ছোট মামি৷

তাসনু এবার খেপে গিয়ে বলে আমার বাড়ি আর আমাকে বলে এখানে কি করি। নিজের তো জায়গা হচ্ছিল না৷ যেই না থাকার সুযোগ দিয়েছে অমনি সব নিজের ভাবা শুরু হয়ে গেছে না৷ নাহিদা বেগম তাসনুকে থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাসনু কি আর শুনে। মেহমান মেহমানের মত থাকবে বুঝেছো। তখন নুরজাহান বিবি বলে আচ্ছা তোরা কি চিনিস একে অপরকে। আয়ান বলে চিনব না আবার যে দস্যু মেয়েনা একটা । যেমন বাপ তেমন মেয়ে। তাসনু তো এবার রেগে সেই অবস্থা। খবরদার আমার বাবার নামে বাজে কথা বলবে না৷ আমার বাবা খুব ভালো তাসনু বলে।

— রিক বলে ভাই এই ভাবে আর কতখন। আসরাফ শেখ বলে চলো চলো তোমাদের ঘর দেখিয়ে দিই তারপর ফ্রেস হবে তোমরা তারপর বাকি কথা হবে। আয়ান বলে হ্যাঁ চলো মামা এখান থেকে যেতে পারলে বাচি নাহলে পেত্নীতে আবার ঘাড় মটকে দেবে। তাই বলে চলে যায় আয়ান আর তাসনু রাগে ফুসতে থাকে। রিক অনুর সাথে এসে বলে তো মিস সুন্দরী আবার দেখা হয়েই গেলো।।অনু একটা ভেংচি কাটে তা দেখে রিক হেসে চলে যায়৷ তুর্য নুসরাতকে বলে পরে দেখা হচ্ছে আবার তাই বলে চলে যায় আর নুসরাত হা করে তার চলে যাওয়া দেখে আর ভাবতে থাকে কি বলে গেলো। তখনই তাসনু বলে দেখলি কি বলে গেলো ব্যাটা।। ওর বারোটা যদি না বাজিয়েছি তো আমার নাম ও তাসনু না হু……………..
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_৩

“” আঁখি বসে কাঁথা সেলাই করছিল। সে সেলাই করতে ভীষণ ভালবাসে কিন্তু আয়ান আর তার স্বামী আমজাদ চৌধুরীর ( আয়ানের বাবা) তাদের জন্য হয়ে উঠে না। কেউ পছন্দ করে না আঁখি কাঁথা সেলাই করুক। কারণ আঁখির একে তো কোমরে সমস্যা তার উপর আবার চোখে জ্বালা পোড়া আছে। কিন্তু আঁখি গ্রামের মেয়ে হওয়ার সুবাদে অনেক রকম সেলাই সে জানে। বাসায় তার তেমন কোনো কাজও নেই। সব আজ সার্ভেন্টরা করে। তাই সে অবশর সময় কাঁথা নিয়ে পার করে। এর জন্য বকা ও শুনতে হয় তাকে তার স্বামী সন্তানের কাছে। এখন কেউ বাসায় নাই সেই সুযোগে সে বসে পড়েছে কাঁথা নিয়ে।

— সামিরা এসে বলে মা তুমি আবার কাঁথা নিয়ে বসেছো। বাবা যদি জানতে পায় তাহলে কিন্তু আবার রাগ করবে। তোমার না কোমরে সমস্যা তাও তুমি কেনো করো এই গুলো। আঁখি বলে কি করব সারা দিন বসে। কোনো কাজ নেই শুধু বোর লাগে তাই এটা দিয়ে সময় পার করি। তোরও তো সময় নেই আমার সাথে একটু বসে গল্প করার। কলেজ থেকে এসে একটা সংসার নিয়ে বসে পড়িস।সামিরা বলে আমার ফোনের উপর তোমার এতো রাগ কিসের বলো তো। কি হবে শুনি এতো কাঁথা দিয়ে। এখন তো এই গুলো চলেও না। আঁখি বলে যতই মর্ডান হয়ে উঠুক না কেনো কাঁথার সাধ কখনো কিছুতে পাবি না।

— তখনই আমজাদ চৌধুরী আসে আঁখিকে উদ্দেশ্য করে বলে। তুমি আয়ানকে তোমাদের গ্রামে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছো কেনো আঁখি। তাকে কেনো জানিয়েছো নানুর বাড়ির কথা। তুমি জানো না তারা আমাদের সাথে কখনোই সম্পর্ক রাখতে চাইনা। তাহলে কেনো আয়ানকে যেতে দিলে। যদি আয়ানকে তারা থাকতে না দেয়। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় তাহলে তোমার ভালো লাগবে বলো।

— আঁখি বলে আর কতদিন গোপন রাখতাম ওদের থেকে। তাছাড়া ছোট থেকে তারা কখনো নানু বাড়ির আদর ভালবাসা কিছু পাইনি। সব সময় আমাকে জিজ্ঞেস করতো সবার নানু বাড়ি আছে তাদের নেই কেনো। ছোট ছিল বুঝিয়েছি কিন্তু এখন তারা বড় হয়েছে আমজাদ। এখন অবশ্য কোনো ভোলানো কথা তারা মানবে না। তাই আমি সব বলে দিয়েছি আয়ানকে। আর আয়ান আমাকে কথা দিয়েছে সে সব ঠিক করে দেবে। কতদিন বাবা মা ভাইয়াদের দেখি না। আঁখির চোখ ভরে উঠে এবার। আমার প্রতি সব ভালবাসা এখন তাদের ঘৃণা হয়ে ফিরে এসেছে। আমারও তো ইচ্ছে হয় বাবা মায়ের কোলে মাথা রাখতে। মনের কথা বলতে। কেমন আছে তারা জানতে। মরার আগে অন্তত….বাকিটা আর বলতে পারে না আঁখি তার আগে আমজাদ মুখে হাত দিয়ে বাধা দেয় আঁখির।

— তোমাকে না বলেছি এই সব কথা বলবে না। আমার কষ্ট হয় বুঝো না। সামিরা এবার চলে আসে ওইখান থেকে৷ বাবা মায়ের মান অভিমানে না থাকায় ভালো তার। আঁখি এবার আমজাদ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলে। আর কতদিন এমন থাকবে বলতে পারো। আমি কি কোনদিন তাদের সামনে আর যেতে পারব না। আমাকে কি মাফ করে কাছে নেওয়া যাই না বলো না আমজাদ। তাই বলে কেঁদে উঠে আঁখি। আমজাদ চৌধুরী মাথায় হাত রেখে বলে। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো৷ আমরা সবাই এক সাথে হবো একদিন৷ তাছাড়া আয়ান যখন গেছে দেখো একটা ব্যবস্থা করে তবেই আসবে।।জানোই তো তোমার ছেলে তার মাকে যা কথা দেয় তাই রাখে। এবার আঁখির মুখে হাসি আসে। আমজাদ চৌধুরী আঁখির কপালে ঠোঁট ছুয়ে দেয়।

——————————-

–আয়ানরা ফ্রেস হয়ে বিশ্রাম করে। বেশ ধকল গিয়েছে তাদের। এতোটা পথ হাটা লেগেছে৷ কখনো এমন হাটেনি তারা। আয়ান একাই একটা রুমে আছে । রিক আর তুর্য একসাথে আছে। সবাইকে তখন খাবারের জন্য ডাকা হয়। আয়ান রিক তুর্য খাবার ঘরে যাই। আয়ানদের দেখে রায়হান শেখ উঠে দাড়িয়ে যায় তারপর নুরজাহান বিবিকে বলে ওরা এখানে কি করে।। নাহিদা বলে খাবার জন্য ডাকা হয়েছে বাবা। দুপুরের খাবার তো এক সাথে খাই সবাই। রায়হান শেখ বলে আমাদের বাড়ির মানুষ একসাথে খাই বউমা৷ বাইরের মানুষ না তাই বলে চলে যায় সে। আয়ানের মন খারাপ হয় এবার। সাথে রিক তুর্যর ও।

— নুরজাহান বিবি বলে দাড়িয়ে কেন ভাইজানরা বস৷ তোর নানাভাইয়ের কথায় কিছু মনে করিস না৷ আয়ান বলে না না নানু কিছু মনে করিনি রিক তুর্য ও মাথা দুলায়। তারপর তারা খেতে বসে৷ তাসনুরাও আছে টেবিলে। তারা এতখন দর্শক হয়ে সব দেখছিল।

“” আয়ান তাসনুর সামনে রিক অনু আর তুর্য নুসরাতের সামনে বসে। আয়ান তাসনুর দিকে তাকালে তাসনু একটু ভেংচি কাটে তাই দেখে আয়ান হাসে৷ তারপর খাওয়া শুরু করে সবাই। এর মাঝে আয়ান রিক তুর্য খাওয়া বন্ধ করে থেমে যায় তারপর তিনজন সবার মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে আর তাসনুরা মিটিমিটি হাসে। আবার খাওয়া শুরু করে সবাই আয়ান এবার জোরে চিৎকার করে দাড়িয়ে যায়৷ সবাই সাথে উঠে পড়ে আর তাসনু রা বসেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে। নুরজাহান বিবি বলে কি হয়ছে নানুভাই। আয়ান বলে নানু একটা দেশি বিড়ালে পায়ে খামচি দিয়েছে। তাই বলে তাসনুর দিকে তাকাই।

— রিক তুর্য বলে আমাদের ও মনে হয় বিড়ালই সুড়সুড়ি দিতে ছিল। কি কিউট বিড়াল বাবা। তাসনুরা এবার রাগী লুক নিয়ে তাকায়। অনু বলে তাসনুকে৷ দেখেছো আপু আমাদের বিড়াল বলে তাও দেশি বিড়াল কত বড় সাহস। নুসরাত বলে বেটাদের যদি নাকানিচুবানি না খায়েছি তো আমাদের নামও তাসনু অনু নুসরাত না৷ কি বলো গায়েস৷ তাসনু এবার নুসরাতের দিকে তাকায় তারপর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে চুপ থাক মায়া ভুলভাল বকিস না। ওরে তো আমি খাইছি পরে।

— নুরজাহান বিবি বলে আমাদে বাসায় বিড়াল কই থেকে আসলো। রহিম ( কাজের মানুষ) এই দিকে আই দেখি দেখতো বিড়াল কোথায় থেকে আসলো ডাইনিংএ। আয়ান বলে নানু থাকনা৷ অযথা ওই বেচারাকে কষ্ট দেওয়া। এতো দিনে যখন তোমরা বিড়াল চিনতে পারোনি আজো পারব না। তবে অনেক বড় বিড়াল কিন্তু আর সুন্দরী সাথে৷ রিক তুর্যরা হাসে মিটিমিটি নুরজাহান বিবি বলে কি বলিস এই সব বিড়াল বড় সুন্দর আয়ান বলে ও কিছু না নানু তুমি বসো তো৷ সবাই আবার বসে খাওয়া শেষ করে।

“”তাসনুরা আগেই উঠে গেছে।

–দুপুরের খাবার খেয়ে যে যার ঘরে চলে যায় উদ্দেশ্য এবার একটা লম্বা ঘুম দেওয়ার। আয়ান এসে ধপাস করে বিসানায় শুয়ে পড়ে আবার সাথে সাথে উঠে দাড়িয়ে যায়। তারপর সারা বিসানা হাত দিয়ে চেক করে দেখে পুরো বিসানা ভিজে জবজবে হয়ে আছে। কাজ টা কার বুঝতে আর বাকি নেই তার। প্রচুর রাগ লাগছে তার তাসনুর উপর। ওই মেয়েকে যদি মজা না দেখিয়ে তাহলে তার শান্তি নেই। বজ্জাত মায়া।জীবনে জামাই জুটবে না দেখি মনে মনে বলে আয়ান তারপর একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে তার উপরেই শুয়ে পড়ে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে।।

— রিক তুর্যর একই অবস্থা। রিক বলে কত বড় ফাজিল মায়া দেখছিস৷ একটু শান্তি দিবে না ভাই ওরা যা ভাব। কোনো বিপদে পড়ালাম রে ভাই৷ এখন কিনা এই ভেজা বিসানায় ঘুমাতে হবে শরীর তো আর চলে না। তুর্য বলে সব দোষ ওই শালা আয়ানের৷ এর জন্য আজ আমাদের এই দশা তাই বলে কপাল চাপড়াই। এইদিকে অনু নুসরাত ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ। নুসরাত বলে দেখো চান্দু কেমন লাগে৷ সবে তো শুরু আমাদে পিছে লাগা বুঝবে ঠেলা।

— তাসনু আয়ানের ঘরে এসে গুনগুন করে গান গায় আর হাতের নখে মাঝে মাঝে ফু দেয়। তারপর বলে কেমন লাগছে ভাইয়া এমন আপ্যায়ন পেয়ে।।নিশ্চয় বেশ মজা করছেন৷ আয়ান বলে অনেক সুন্দর আর দারুণ মজা। তবে রেডি থেকো তুমিও মজার স্বাদ নেওয়ার জন্য। আমি আবার কারো রিন রাখি না। তাই সুদে আসলে ফিরাই দিব কাদা সুন্দরী। তাসনু বলে শহরে বিলাইর দৌড় আমার জানা আছে হু। এই তাসনু কি জিনিস এখনো বুঝোনাই সোনা। বেশি পিছনে লাগতে এসো না পরে পস্তাবে বুঝলে তাই বলে চলে যায় আয়ানের ঘর থেকে।

— আয়ান আবার শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করে।

“” তাসনু বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ওয়াসরুমে যায় তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকারে দিয়ে উঠে জোরে……………

চলবে………

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here