গাঙচিল পর্ব ১০+১১

#গল্পের_নাম: ||গাঙচিল ||
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_____১০

১৬.

রোদ্দুর ক্ষীপ্র কন্ঠে বিদ্যুৎকে ডাকলো।কনস্টেবল বিদ্যুৎ তৎক্ষনাৎ কেবিনে ঢুকে সালাম দিল।রোদ্দুরের দু চোখ কম্পিউটারের মনিটরে নিবদ্ধ।বাম হাত কীবোর্ডের উপর নড়াচড়া করছে।ডান হাত থেকে থেকে কম্পিউটারের মাউস এদিক সেদিক ঘুরিয়ে ক্রমাগত কিছু খুঁজে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।ভেতরে ভেতরে উসখুস করছে সে।রোদ্দুর স্যার প্রায়ই তাকে ডেকে দাঁড় করিয়ে রাখে।এর কর্মকান্ড সব অদ্ভুত।মাঝে মাঝে তো ডেকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করে।এই কিছুদিন আগে ফ্রি টাইমে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল,

—“আচ্ছা বিদ্যুৎ!তুমি কি বিবাহিত?”

বিদ্যুৎ অতিশয় বিনয়ের সহিত বলেছিল,

—“না স্যার!”

—“তোমার কি পছন্দের কেউ আছে?মানে কাউকে ভালোবাসো এমন কেউ আছে?”

খুবই ব্যক্তিগত প্রশ্ন।তবুও বিদ্যুৎ হাসিমাখা মুখে বলেছিল,

—“জ্বি স্যার!ছোটবেলা থেকে একজনকে ভালোবাসি।ও আমার ক্লাসমেট ছিল বারো বছর।আমরা সমবয়সী!কলেজ পাস করে আমি চাকরিতে ঢুকলাম।ও অনার্সে পড়াশোনা করছে।ওর পড়া শেষ হলে বিয়ে করবো দুজন।”

—“বাহ!ইন্টারেস্টিং!কিন্তু ধরো,মেয়েটা গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে তার মতো অন্য কোনো গ্রাজুয়েটকে বিয়ে করলো।তখন কি করবে?”

বিদ্যুৎয়ের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠেছিল।ঠিকই তো!যদি তার ভালোবাসা হেরে যায়?নাহ!তা কখনো হবে না।জলি তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।সে তাকে রেখে অন্য কারো হতেই পারে না।বিদ্যুৎ মন খারাপ ভাব লুকিয়ে বলেছিল,

—“এমন হবে না স্যার!জলি আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে।”

—“কি কিউট!এদিকে দেখো!আমি যাকে ভালোবাসি সে অদ্ভুত একটা মেয়ে।জগতের সব রহস্য যেন তার মধ্যে বিদ্যমান।আমার সাথে সবসময় লুকোচুরি খেলছে।তোমাকে একটা গোপন কথা বলি।তুমি কিন্তু কিছু মনে করবে না বিদ্যুৎ।আসলে তোমাকে ‘মাই ডেয়ার’ টাইপ ভাবি!”

—“জ্বি স্যার!জ্বি স্যার!বলুন!”

রোদ্দুর স্যার টেবিলে পিরিচ দিয়ে ঢেকে রাখা গ্লাসের পানি এক নিঃশেষে শেষ করে বলেছিল,

—“আমি একটা মেয়েকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।কিভাবে এত ভালোবেসে ফেললাম নিজেই জানি না।এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে তাকে ছাড়া আমার এক সেকেন্ডও ঠেলাগাড়ির মতো ঠেলে ঠেলে নিতে হয়।বাকি জীবনটা কিভাবে নিবো বলতে পারো?”

—“বিয়ে করে ফেলুন স্যার।যত দ্রুত সম্ভব তাকে বিয়ে করে ফেলুন।”

—“সেখানেই তো সমস্যা বিদ্যুৎ।সে আমাকে কোনো একটা কারণে বিয়ে করতে চাচ্ছে না। কারণটা কিছুতেই বলছে না।অনেক চেষ্টা করেছি এবং করছি।বলছে না সে!কিন্তু এতদিন তার আচার আচরণে অনেক পজিটিভ সাইন ছিল যা দেখে বুঝতে পেরেছি সেও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।একদিন রাতের বেলা তো ফট করে আমার দু গালে দুটো চুমুও দিল।”

বিদ্যুৎতের লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছিল।চুমুর কথাও বলতে হবে?এই প্রসঙ্গটা না বললে কি হতো!রোদ্দুর স্যার নিজের খেয়ালে নেই।একটুপর বেশ চিন্তিত গলায় বলেছিল,

—“কিন্তু এখন আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে না।বুঝতে পারছো বিষয়টা?আমাকে অসুস্থ করে এখন আমার দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না।তার বাবা-মা, ভাই সবাই রাজি।শুধু সে বেঁকে বসেছে।”

—“স্যার জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলুন।”

—“ভেবে দেখছি কি করা যায়।”

তারপর আর কথা হয়নি।আজ আবার কেন ডাকলো কে জানে!বিদ্যুৎ নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকালো।সকাল এগারোটা বেজে তেরো মিনিট।সবগুলো বিজোড় সংখ্যা!সে এক পলক রোদ্দুরের দিকে চেয়ে গলা খাঁকারি দিল।নিজের উপস্থিতি বুঝানোর জন্য।

কিছুক্ষণ পরেই রোদ্দুর ঝটপট উঠে দাঁড়ালো।কম্পিউটার শাট ডাউন করে বলল,

—“বিদ্যুৎ ইমিডিয়েটলি বের হতে হবে আমাদের।মগবাজারের যে দম্পতি গতকাল ছেলের মিসিং কেস ফাইল করলো তার হদিস পা-ওয়া গেছে।ছেলেটার ফোন মহাখালীর ওদিকে যে বড় রেস্টুরেন্টে আছে ওখানে ট্রেস করা হয়েছে।মিনিট বিশেক আগে অন ছিল।কারো সাথে দুই মিনিট কথা বলেছে।এখন আবার ফোন বন্ধ।লেটস গো!”

—“ইয়েস স্যার!”

রোদ্দুর কাচের টেবিল থেকে চাবিটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বের হলো দ্রুত।বিদ্যুৎ তার পেছন পেছন গেল।চারজন কনস্টেবল আর ড্রাইভার নিয়ে রোদ্দুর পুলিশের গাড়িতে উঠলো।গাড়ি মহাখালীর দিকে ছুটতেই ফোনে টুং করে শব্দ হলো।সে এক হাতে ফোন বের করে চেক করলো।অহি মেসেজ পাঠিয়েছে।এতটুকু শব্দের।বাংলা ফ্রন্টে লিখেছে,

“বিকেল চারটার সময় লঞ্চঘাটে অপেক্ষা করবো।কথা আছে,আপনি আসবেন কিন্তু!”

রোদ্দুরের মুখে ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা দিল।

১৭.

বিকেল চারটা বাজার বারো মিনিট আগে রোদ্দুর শত মানুষের ভিড় ঢেলে আজমেরী গ্লোরী নামের বাসে উঠেছে।ইচ্ছেকৃত ভাবে বাইক নিয়ে আসেনি।আজ সে অহির সাথে পায়ে পা ফেলে হাঁটবে ঢাকার ব্যস্ততম শহরে!এই সুযোগটা দেয়ার জন্য সে অলরেডি অহিকে লক্ষ কোটি বার মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

তার বুকের ভেতর উথাল পাথাল ঢেউ খেলে যাচ্ছে।সাথে ঝড়ের আশংকা করছে।অহি তাকে কেন ডাকছে ঠাওর করতে পারছে না।অহির বাড়ি থেকে সে এসেছে আজ সতেরো দিন হলো।আর যাওয়া হয়নি।যাওয়া হয়নি বলতে যেতে পারেনি।অহির কড়া নিষেধ।ও বাড়িতে গেলে নিজের ক্ষতি করে ফেলবে সে।নিজেকে কষ্ট দিবে।রোদ্দুরের আর সাহস হয়নি!যদি সত্যি সত্যি যদি অহি নিজের ক্ষতি করে ফেলে!

সব ঠিকঠাক ছিল।অহির মাও বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিয়েছিল।অহি তখন কোনো উত্তর দেইনি।লাজুক হেসেছিল।সবাই বুঝে গিয়েছিল অহির মত আছে।রোদ্দুর চরম খুশি।সেদিনই তার মাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে বাড়িতে নিয়ে গেল।সার্বক্ষণিক সেবার জন্য নতুন একজন মহিলা নিযুক্ত করলো।দু একদিনের মধ্যে বিয়ে।হঠাৎ সেদিন অহি তাকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠাল।রোদ্দুরের আনন্দ ধরে কে!বাইক ছুটিয়ে অতিদ্রুত অহিদের বাড়িতে পা রাখলো।গিয়েই দেখে সবার থমথমে মুখ।কিছু জিজ্ঞেস করতে অহি রুদ্রমূর্তি রূপে তাকে জোর গলায় বলে সে যেন আর এ বাড়িতে না আসে।কারো সাথে যোগাযোগ না রাখে।তার কথা না শুনলে সে বিষ টিষ খাবে।

রোদ্দুর ভয় পেয়ে গেছিল।আর সাহস হয়নি ও বাড়ি যাওয়ার।তবে এ কয়েকদিন সে মেসেজে অহিকে বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।কিসের জন্য বিয়ে করতে চায় না সেটা জানতে চেয়েছে।অহি শুনতে নারাজ,মানতে নারাজ!ফোন দেওয়ায় বিরক্ত হয়ে তো তার নাম্বারও ব্লকলিস্টে রেখেছিল।অহির হঠাৎ এত পরিবর্তন রোদ্দুরের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

সদরঘাটে তিন রাস্তার মোড়ে রোদ্দুর বাস থেকে নামলো।বাস থেকে নামার পরেই বুঝতে পারলো আজ আকাশ মেঘলা।সাথে মাতাল করা বাতাস।বাতাসে মুহুর্তে তার ভেতর বাহির শীতল হয়ে গেল।আকাশের দিকে তাকালো সে।টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।যখন তখন বিনা নোটিশে বর্ষিত হবে যেন।

রোদ্দুরের মন পুলকে ভরে গেল।হাতঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে সে দ্রুতপায়ে লঞ্চ ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল।

রোদ্দুরকে দেখে অহি শান্ত স্বরে বলল,

—“দাঁড়িয়ে আছেন কেন?বসে পড়ুন।”

রোদ্দুর নিজের হুশে নেই যেন।সে সাপের মতো পলকহীনভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনে বসে থাকা রমণীটির দিকে।অহি শাড়ি পড়েছে আজ।সোনালি পাড়ের সবুজ তাঁতের শাড়ি।সাথে চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে।বাতাসে তার চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।ঘন পল্লব ঘেরা চোখ দুটোতে যেন মায়ার বহর।তাকে কেমন বউ বউ লাগছে।রোদ্দুরের বউ!

রোদ্দুর বুকের বা পাশে হাত দিয়ে চেপে বিড়বিড় করে বলল,

—“ও মাই গড!”

অহি রোদ্দুরের কর্মকান্ডে চরম বিরক্ত হলো।এক পলক আশপাশে তাকালো।আজ বিকেল হওয়ার পরো লঞ্চঘাট খালি।মানুষজন তেমন নেই।পাশেই ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান হচ্ছে।সবাই সেখানে ভিড় জমিয়েছে হয়তো!

সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—“আপনাকে হ্যাংলার মতো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আসতে বলেছি?বুক থেকে হাত সরিয়ে পাশে বসে পড়ুন।দরকারি কথা আছে।”

রোদ্দুর তৎক্ষনাৎ অহির পাশে বসে পড়লো।তবে তার থেকে বেশ দূরত্ব রেখে।এই মেয়ের শরীর থেকে কেমন যেন একটা মেয়েলি গন্ধ এসে নাকে লাগছে তীব্র ভাবে।সে গন্ধে রোদ্দুর পাগল হয়ে যাচ্ছে।

—“আপনাকে বারণ করার পরো বাড়ির আশপাশে ঘুরঘুর করেন কেন?”

অহির কাঠ কাঠ গলায় রোদ্দুর ভড়কে গেল না।চোখ বন্ধ করে সে বড় বড় শ্বাস নিল কিছুক্ষণ।এই মেয়ে তাকে এখন কথার প্যাঁচে পিষে ফেলবে।নিজেকে স্থির করে সে বলল,

—“তোমার বাড়ির আশপাশে ঘুরঘুর করতে যাব কোন দুঃখে?ওখানে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হারিয়ে ফেলেছি।সেটা খুঁজতে প্রতিদিন একবার হলেও যাই।”

অহি আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,

—“কি হারিয়ে ফেলেছেন?”

—“আমার মন!”

অহি নিভে গেল।উসখুস করে এদিক ওদিক তাকাল। রোদ্দুর ফের বলল,

—“তুমি তো বুদ্ধিমতী মেয়ে।তোমাকে একটা প্রশ্ন করি।একটা মেয়ে আমাকে পাগল করে,আমার ভালোবাসাকে উস্কে দিয়ে,জোর করে ধরে বেঁধে চুমু টুমু খেয়ে আমাকে অসুস্থ করে এখন বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।আমি সিদান্ত নিয়েছি তাকে কঠোর শাস্তি দিবো।তুমি বলো,তাকে কঠোরতম কি শাস্তি দেয়া যায় বলোতো?”

—“কি শাস্তি দিতে চান?”

—“জোর করে বিয়ে করবো।তারপর বাসর হবে রিমান্ডে।উল্টো করে বেঁধে নাকে গরম পানি ঢালবো।হাতের আঙুলে আঙুলে সুঁচ ফুটাব।মাথা ন্যাঁড়া করে দিবো,পিটিয়ে হাত পা ভেঙে হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখবো যাতে আর পালাতে না পারে!আমাকে ডজন ডজন চুমু খাওয়ার শাস্তি পেতে হবে না?”

অহি অবাক হয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।নীল শার্টে কি সুন্দর মুখোশ্রী!সে চোখ ছোট ছোট করে বলল,

—“কি মিথ্যুক আপনি এসআই!ডজন ডজন চুমু খেয়েছে কে আপনাকে?”

—“তার একটা চুমুতেই আমার দফারফা হয়ে যায়।হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।তার একটা চুমু ইক্যুয়াল টু এক ডজন চুমু!আমার জন্য আর কি!”

অহি সামনে তাকাল।সিঁড়ির উপর থেকে সামনের নদীর কুচকুচে পানি চোখে আসছে।সাথে কেমন একটা হালকা গন্ধ নাকে এসে লাগছে।ঘাটে এখনো বেশ কয়েকটা লঞ্চ বাঁধা।

কিছুক্ষণ দুজন চুপচাপ থেকে অহি নিজে থেকে বলল,

—“এভাবে জীবন চলে না এসআই।আপনার জীবন এক রকম,আমার জীবন অন্যরকম।বলতে গেলে আমরা দুজন পৃথিবীর দুই মেরুর মানুষ।আমাদের দেখা হওয়াটা কোনো সুস্থ ভাবে হয়নি।একটা দূর্ঘটনার মধ্য দিয়ে আলাপ-পরিচয় হয়ে দুজনের জীবন একসাথে জুড়ে দেয়া হবে আরেকটা দূর্ঘটনা।একের পর এক দূর্ঘটনা আমরা ঘটতে দিতে পারি না।”

—“অজান্তা,তুমি আস্তো একটা হেকঅ্যাক!তোমাকে কাছে পাওয়ার পর তোমার প্রতিটা অবহেলার শোধ তুলবো আমি।না হলে আমার নাম রোদ্দুর হিম নয়।আমার জীবন জুড়লে একমাত্র তোমার সাথে জুড়বে,অন্য কারো সাথে না!”

অহি দাঁত চেপে নিজেকে সামলালো।ইমোশনাল হলে চলবে না।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সে বলল,

—“আপনাকে একটা গল্প বলি এসআই!আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন বান্ধবী ছিল।পরিবারের বড় মেয়ে সে।তার জন্মের বছর দুই পর একটা ভাই হয়।মেয়েটার খুশি ধরে কে!ওতটুকু শরীর নিয়েই ছোট ভাইকে কোলে নিবে,আদর করবে!সে কি খুশি!এরপর আমার বান্ধবীর বয়স যখন এগারো বছর তখন তাদের ঘর আলো করে ফুটফুটে আরেকটা বোন আসে।জোসনার মতো দেখতে ছিল সে বাচ্চা।রাতের অন্ধকারে আলোর মতো জ্বলতো।কি ভয়ানক সুন্দর ছিল!আমার সেই বান্ধবী আর তার ছোট ভাই মিলে পিচ্চি বোনটার নাম রাখে শিউলি।কারণ পিচ্চিটার গা থেকে সবসময় শিউলি ফুলের মতো গন্ধ ছড়াতো।তারা অবশ্য শিউলি ফুলের গন্ধ চিনতো।কারণ তাদের কলপাড়ে তখন ঝাঁকড়া একটা শিউলি গাছ ছিল।প্রচুর ফুল ফুটতো তাতে।বাড়িটা তখন দুই শিউলি ফুলে সারাক্ষণ গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকতো।তারপর হঠাৎ করেই একটা ঘটনা ঘটে!”

অহি থেমে যায়।তার বুক কাঁপে।শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে সামনে এনে শক্তহাতে তা ধরে রাখে।তার চোখ দুটো অস্থির।রোদ্দুর অধির আগ্রহে তান পরবর্তী অংশ শোনার জন্য বসে আছে।ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে সে।অহির নিরবতা সহ্য করতে না পেরে বলেই ফেলে,

—“তারপর?তারপর কি হলো অজান্তা?”

অহি নিজেকে৷ শক্ত করে বলে,

—“পিচ্চি শিউলির বয়স তখন সাত মাস বারো দিন চলছে।সবেমাত্র বসা শিখেছে সে।সাথে অদ্ভুত মিষ্টি স্বরে সবসময় আ আ করে আর খিলখিল করে হাসে।কি সুন্দর লাগে দেখতে!একদিন বিকেল বেলা আমার বান্ধবী তাকে কোলে নিয়ে খেলার ছলে দুহাত উঁচু করে উপরের দিকে ছুঁড়ে আবার ধরে ফেলছিল শিউলিকে।পাশেই তার ভাই হাতে তালি দিচ্ছিল।আর শিউলি সে কি খুশি!প্রতিবার উঁচু করে ছুঁড়ে আবার ধরে ফেলতেই সে খিলখিল করে হাসছিল।চারিদিকে তখন হাসির শব্দ শুধু।সাথে শিউলি ফুলের গন্ধ।আমার বান্ধবী মেতে উঠেছে যেন ছোঁড়াছুড়ি খেলায়।কিন্তু সপ্তম বারে কি যেন হয়ে গেল।সে শিউলিকে উপরের দিকে ছুঁড়লো ঠিকই কিন্তু ধরতে পারলো না আর।বাচ্চা শিউলি ফুল আর্ত চিৎকার দিয়ে মাটিতে ছিটকে পড়লো।সঙ্গে সঙ্গে নাক মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হওয়া শুরু হলো।”

অহির গলা ধরে এসেছে।তার সম্পূর্ণ শরীর কাঁপছে আতঙ্কে।মনে হচ্ছে সে দৃশ্যটা চোখের সামনে দেখছে।রোদ্দুরের বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হয়।সে এগিয়ে এসে চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে শক্ত হাতে অহির বাম হাত চেপে ধরে।শিউলি কে তা রোদ্দুরের অজানা নয়।শিউলি অহির ছোটবোন।বাচ্চা বয়সে সে মারা গেছে শুধু সেটা জানতো।কিভাবে মারা গেছে সেটা জানা ছিল না।সে অহির হাত নিজের হাঁটুর উপর নিয়ে দুহাতে চেপে ধরে বলে,

—“তোমার বান্ধবীর কথা শুনবো না।অন্যকিছু বলো!কিছু বলতে না পারলে আমি বলি তুমি শোনো!আজকে কি হয়েছে জানো?বাড়ি থেকে স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাওয়া একটা ছেলেকে আজ ধ………”

অহি রোদ্দুরকে থামিয়ে দেয়।নিজেকে সামলে বলে,

—“আমার বান্ধবীর মা তখন রান্নাঘরে ছিল।শিউলির কান্নায় বাইরে বের হয়েই চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে।শিউলিকে তুলে বুকে জড়িয়ে নেয়।মুহূর্তে চারপাশে বেশকিছু মানুষ জুটে যায়।শিউলির মাথায় পানি ঢেলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।সন্ধ্যার সময় শিউলিকে তার বাবা কোলে করে নিয়ে বাড়ি ফেরে।শিউলি ততক্ষণে অন্য জগতে চলে গেছে।সারাজীবনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে।

সর্বদা হাসি লেগে থাকা বাড়িটা মরা বাড়িতে পরিণত হয়।আমার বান্ধবী যেন পাথর হয়ে গেছে।সে কাঁদতে ভুলে যায়।তার চোখের সামনে একটা চিত্রই বার বার ভেসে উঠে।শিউলির রক্তভেজা মুখ।রাতের আঁধারেই শিউলিকে কবর দিয়ে আসা হয়।হাসিখেলায় মেতে থাকা বাড়িটা সেইদিন থেকে শশ্মানবাড়ি হয়ে যায়।বান্ধবীর মা একসাথে দুটো সন্তানকে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলে।তার মৃত সন্তান আর তার মৃত সন্তানের হত্যাকারী মেয়েকে।সেদিন থেকে আমার বান্ধবীর প্রতিটা দিন,প্রতিটা রাত একেকটা বিভীষিকাময় হয়ে উঠে।তার মা ভুলেও তার দিকে তাকাতো না,মায়ের দৃষ্টিতে তার জন্য সবসময় ঘৃণা জমে থাকতো।কোনোদিন দুটো ভালো কথা বলে না,মা ডাকলে শোনে না!প্রায়ই বিলাপ করে কাঁদে!সেই সন্তান হারানোর কান্না!যেখানে প্রতিটি জলের বিন্দু হাহাকার বয়ে আনে বান্ধবীর জন্য।

অযত্ন,অবহেলায় বড় হতে থাকে আমার বান্ধবী।মায়ের ছায়াতল হারিয়ে কেমন পাথর হয়ে যায়। দম বন্ধ ভাব কাটানোর জন্যই সে স্কুলে আসা যাওয়া করে।কলেজটা কোনো রকমে পাস করে আর পড়াশোনা করা হয় না।আমার বান্ধবীর বয়স এখন তেইশ।সে মায়ের ভালোবাসা হারিয়েছে এক যুগ হলো।কারণ সে হত্যাকারী যে!খুনী সে!খুনী!খুনীর সাথে কেউ জীবন জুড়াতে পারে না।”

অহি বহু বছর পর একজনের সামনে কাঁদছে।মানুষের সামনে সে কাঁদতে পারে না।কিন্তু কেন জানি তার পাশে বসে থাকা মানুষটাকে সে ভরসার স্থান ভাবে।প্রিয়জন ভাবে।তার সামনে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

অহির চোখের জল দেখে রোদ্দুরের পাগলপ্রায় অবস্থা।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।হুট করেই প্রচুর বাতাস শুরু হয়েছে।বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে যেন।রোদ্দুর শক্ত করে অহির হাত চেপে বলল,

—“অজান্তা, একদম কান্না করবে না।কান্না করলে কিন্তু সামনের কুচকুচে কালো জলে ঢিল দিয়ে ফেলে দিবো।”

অহির কান্না থামছে না।রোদ্দুর আরো একটু কাছ ঘেঁষে বসলো অহির।সান্ত্বনার সুরে বলল,

—“দেখো অজান্তা! এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট।প্রতিটা মৃত্যুর পেছনে ব্যাখ্যা করার মতো একটা কজ লাগে।আর সেটা প্রকৃতি সুনিপুণ ভাবে পূরণ করে।দেখো,প্রতিটা মানুষের মৃত্যুর পেছনে আলাদা আলাদা কারণ থাকে!কেউ জ্বরে,কেউ ক্যান্সারে,কেউ টাইফয়েডে,কেউ বা বৃদ্ধ হয়ে মারা যায়।প্রকৃতির প্রতি যেন মানুষের রহস্য না জন্মে সেজন্য একটা উছিলায় মৃত্যু দেয়।শিউলির মৃত্যু দূর্ঘটনা বৈকি কিছুই নয়।নিজেকে দোষী ভাবা বন্ধ করো।”

অহি কিছু বললো না।কান্নার কারণে তার শরীর কাঁপছে।কয়েক সেকেন্ড পরেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি শুরু হলো।বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা গায়ে পড়তে দুজন শিউরে উঠলো। কিন্তু উঠে ছাউনির নিচে গেল না।রোদ্দুর বলল,

—“অজান্তা!প্রকৃতিও চায় তুমি এই ব্যাপারে আর কান্না যাতে না করো।সেজন্য তোমার চোখের জল অন্য মানুষের আড়ালে রাখতে নিজেই জল বর্ষণ শুরু করলো।”

অহি ধরা গলায় বললো,

—“একজন খুনীকে আপনি কিছুতেই বিয়ে করতে পারেন না।”

—“এটা তো বিরাট অবিচার হয়ে যাবে অজান্তা।বিয়ে করতে পারবো না মানে?খুনিকেই বিয়ে করে আমার কারাগারে তুলে রোদ্দুর হিমের স্টাইলে তাকে শাস্তি দিবো।”

অহি উঠে দাঁড়ালো।বৃষ্টির বেগ বেড়ে যাচ্ছে।সামান্য বৃষ্টিতে ভিজলে তার জ্বর আসে।আজ নির্ঘাত হাঁড় কাঁপিয়ে জ্বর আসবে।রোদ্দুরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে সে হাঁটা ধরলো।দশ-পনেরো মিনিট জোরে জোরে হাঁটলে বাড়ি পৌঁছে যাবে সে।

রোদ্দুর তার পাশাপাশি হাঁটা শুরু করলো।আজ বৃষ্টিতে ভিজতে তার অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে।ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করছে।কেমন প্রেম প্রেম পরিবেশ। সে গুনগুন করে অহির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

“আগে কত বৃষ্টি যে দেখেছি শ্রাবণে….
জাগে নিতো এতো আশা ভালোবাসা এ মনে….”

অহি ঘুরে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে বলল,

—“আজই আমাদের শেষ দেখা।আপনাকে যেন আর সদরঘাট এলাকায় না দেখি।ভুলেও কিন্তু আর আমার বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করবেন না মি. রোদ্দুর হিম!”

—“আমাকে আজ কেন ডেকেছিলে?এসব বলার জন্য?”

—“আমি একটা কুফা!আজ পর্যন্ত আমার সাথে ভালো কিছু হয়নি।আমার জন্মই হয়েছে দুঃখ পাওয়ার জন্য এবং অন্য মানুষকে দুঃখ দেয়ার জন্য।আমার জন্মের সময় মায়ের মৃত্যুপ্রায় অবস্থা হয়েছিল।বাবা জেলে গেল!শিউলি চলে গেল।আরো বহু কিছু ঘটেছে।আমি মানেই খারাপ,আমি মানেই কুফা!আমার সাথে যে থাকবে সেও কষ্টের সাগরে হাবুডুবু খাবে।আমার জীবনে আপনাকে জড়াব না।আপনাকে ডেকেছিলাম এটা বলার জন্য যে অন্য কাউকে বিয়ে করে আমার জীবন থেকে সরে যান।দূরে,বহুদূরে! ”

—“হুঁ যাবো তো!কিছুদিন পর সিঙ্গাপুর মিশনে যাব।”

অহির বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো।ছলছল চোখে রোদ্দুরের দিকে এক নজর চেয়ে চোখ সরিয়ে নিল।যদি তার চোখের ভাষা পড়ে ফেলে মানুষটা!রোদ্দুর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

—“সিঙ্গাপুর মিশনে যাব ঠিকই কিন্তু তার আগে বিয়ে করে যাব।আর বিয়েটা করবো তোমাকে।শুধু তোমাকে।

—“বললাম তো আমি আপনার জন্য যোগ্য নই।বিয়ে করতে পারবো না আপনাকে।”

—“আমার গাট ফিলিংস বলছে তুমি অন্য কোনো জোরালো কারণে আমাকে বিয়েটা করতে চাচ্ছো না।কেউ কি তোমাকে বিয়ে না করার জন্য প্রেশারাইজ করছে অজান্তা?আমায় নির্দ্বিধায় বলো!আমি সব সলভ করে দিবো।”

—“কেউ কিচ্ছু করেনি।আপনাকে আমি পছন্দ করি না।মানুষ হিসেবে আপনি বিরক্তিকর এবং জঘন্য একজন ব্যক্তি।”

—“বেশ!এই বিরক্তিকর এবং জঘন্য মানুষটাকে নিয়েই তোমার বাকিটা জীবন কাটাতে হবে।আমি তার ব্যবস্থা করছি।”

বলেই রোদ্দুর হনহন করে বৃষ্টির মধ্যে চলে গেল।অহি টালমাটাল চোখে তার গমনপথের দিকে চেয়ে রইলো।দু ফোঁটা অশ্রু চোখ বেয়ে গড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেল।

১৭.

দুদিন হলো অহির জ্বর।সেদিন বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসেছে।গতদিন তো বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছিল না।আজ একটু কম!নিজে নিজে উঠে ওয়াশরুমে গেল সে।

ওয়াশরুম থেকে হাতে মুখে হালকা পানি দিয়ে বের হলো।জানালার বাইরে অন্ধকার।সন্ধ্যা হয়েছে কিছুক্ষণ হলো।হাত মুখ মুছে ফের বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়তেই বাইরে থেকে রোদ্দুরের কন্ঠ কানে আসলো।তার বাবাকে বলছে,

—“চাচাজি!চট করে একটা কাজি ধরে নিয়ে আসুন তো!আজকেই বিয়ে করবো।এক্ষুনি বিয়ে করবো!”

(চলবে)#গল্পের_নাম: ||গাঙচিল||
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_____১১ (বোনাস পার্ট)

—“চাচাজি!চট করে একটা কাজী ধরে নিয়ে আসুন তো!আজই বিয়ে করবো!এক্ষুণি বিয়ে করবো।”

রোদ্দুরের কথায় জলিল মোল্লা ঘন ঘন মাথা দোলালেন।এই প্রস্তাবটা তার পছন্দ হয়েছে।দারুণ পছন্দ হয়েছে।হঠাৎ করে তার নজর পড়লো রোদ্দুরের মায়ের উপর।ছাই রঙের একটা শাড়ি পরিহিত মধ্য বয়স্কা নারী!রোদ্দুরের চেহারার সাথে কিঞ্চিৎ মিল।সাথে মাঝবয়সী আরেকটা মহিলা।তার হাতে কিছু ব্যাগ ধরা।জলিল দেখেই বুঝতে পারলো এটা কাজের লোক হবে হয়তো।সে ব্যস্ত হয়ে বলল,

—“আপনারা ভেতরে আসেন।বসেন!রেখা!কোথায় গেলে?এদিকে এসো তো!”

রোদ্দুরের মা থামিয়ে বলল,

—“এত ব্যস্ত হবেন না।আমরা ঠিক আছি।ফুলবানু কোথায়?”

জলিল আমতা আমতা করে মাথা চুলকে রোদ্দুরকে বলল,

—“ফুলবানু কে আবার?”

রোদ্দুর হেসে ফেলল।মাকে নিয়ে শফিকের রুমে বসে পড়লো।তার দু হাত ভর্তি বিয়ের বাজার।নাজমার হাতেও কিছু কিছু!রোদ্দুর দুহাতের সব শফিকের বিছানায় নামিয়ে রেখে বলল,

—“চাচাজি,মা অজান্তাকে ফুলবানু বলে ডাকে।”

—“অহ! খুবই ভালো।আমি দেখি অহিকে ডেকে দিই।”

জলিল চলে যেতে নিতে রোদ্দুর থামিয়ে দিয়ে বলল,

—“চাচাজি!শফিক কোথায়?অনেক কাজ করতে হবে।সাক্ষী লাগবে।আমি অবশ্য একজনকে আসতে বলেছি।আরো অনেক কাজও তো আছে।”

—“শফিক তো টিউশনিতে।এসে পড়বে বাবাজীবন!তুমি টেনশন কইরো না।বিয়ে হবে!সব হবে!আমি এতদিন চুপ করে ছিলাম এটা ভেবে যে তুমি কবে গর্জে উঠবে।কবে তুমি বঙ্গবন্ধুর সুরে সুর মিলিয়ে বলবে,আমার যা আছে আমি তাই নিয়ে প্রস্তুত।”

জলিলের মুখোভঙ্গিতে রোদ্দুর আবারো হেসে ফেলল।আজ তার খুশির দিন।তার সর্বোচ্চ হাসির দিন।তার মা সুস্থ হয়ে গেছে।আজ তার বিয়ে!তার অতি প্রিয় এবং ভালোবাসার মানুষটির সাথে।আজ সে হাসবে,যেখানে হাসা সমীচীন নয় সেখানেও হেসে গড়াগড়ি খাবে।

জলিল হন্তদন্ত হয়ে চলে গেল বাজার করতে।রান্না করতে হবে তো।আসার পথে কাজী সাহেবকে সাথে নিয়ে ফিরবে।সে চলে যেতে রোদ্দুর মায়ের হাত ধরে বলল,

—“মা গো!ফুলবানু তোমার মায়ের নাম না?”

রোদ্দুরের মা রাহেলা মাথা দুলে বলল,

—“হ্যাঁ!তুই তোর নানির নাম জানিস না রোদ্দুর?কি কান্ড ছেলের!”

—“মা জানি জানি!নাম তো জানি!এখন কথা হচ্ছে তুমি তোমার মায়ের নাম মুখে নিবে তাতে নানি কষ্ট পাবে না? তোমার বৌমাকে ফুলবানু বলে ডাকবে সর্বক্ষণ এতে কেমন যেন হয়ে যায় ব্যাপারটা!”

নাজমা তড়িঘড়ি করে বলল,

—“হেইডাই তো আফা।আপনে মা-জননীর নাম মুখে লইবেন ক্যান?পাপ হবে তো!”

—“তাই তো!তওবা তওবা!সবসময় এভাবে তো মায়ের নাম মুখে আনা যাবে না।পাপ হবে!বৌমার নাম কি করে রোদ্দুর?”

—“মা, ওর নাম অজান্তা অহি।ডাকনাম অহি।”

—কি সুন্দর নাম রে!এখন বল,আমার বেয়াইন সাহেবা কই?অহি কোথায়?নাজমা আমার সাথে আয় তো।”

রাহেলা উঠে গেল।সাথে নাজমা খালাও!রোদ্দুর ভেতর থেকেই দেখলো তার মা হবু শ্বাশুড়ির রুমে ঢুকেছে।ভেতরে ঢোকার সময় দেখেছে তার হবু শ্বাশুড়ি নামায পড়ছে।এতক্ষণে শেষ হয়তো।

রোদ্দুর শফিকের বিছানায় রাখা বিয়ের শাড়ির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সে তার মনের মানুষের সাথে সারাজীবন থাকার সুযোগ পাবে।এক ছাদের নিচে থাকবে তারা।একদম কাছাকাছি, পাশাপাশি!রোদ্দুরের লজ্জায় এখুনি মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

সে লুকিয়ে শফিকের রুম থেকে বের হলো।অহির রুমের দরজা ভেড়ানো শুধু।রুমের দরজায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো সে।তারপর চট করে ভেতরে ঢুকে গেল।ভেতরে ঢুকে দরজা আগের মতো সাবধানে ভিড়িয়ে দিল।এখন আর ভয় নেই।কিছুক্ষণ বাদেই অহির নামের সাথে, অস্তিত্বের সাথে রোদ্দুর হিম জুড়ে যাবে।

অহি গলা পর্যন্ত কাঁথা টেনে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।মাথার একরাশ চুল এলোমেলো ভাবে বালিশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।মুখটা অনেক শুকিয়ে গেছে।অহির জ্বরের খবর রোদ্দুরের কানে গেছে সেদিনই।অহির অসুস্থতার খবর শুনে সে ছটফট করছিল।না কাছে আসতে পারছিল,না কিছু করতে পারছিল!কি করবে কিছুই মাথায় ঢুকছিল না।

রোদ্দুর আস্তে করে অহির বিছানার এক পাশে মাথার কাছে বসলো।কাঁথার নিচ দিয়ে বের হওয়া অহির হাতটা নিজের কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে স্পর্শ করলো।

অহি সজাগ।রোদ্দুরের স্পর্শ পেতেই ডান হাতে বিছানার চাদর চেপে ধরলো।সে কিছুতেই চোখ খুলবে না।রোদ্দুরকে বিয়েও করবে না।তাকে ঘুমিয়ে পড়ার অভিনয় করতে হবে।

রোদ্দুর কিছুক্ষণ মুখটা হালকা নিচু করে অহির মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।অহির গলা শুকিয়ে আসছে।রোদ্দুরের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস তার মুখে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে।যে ঢেউ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সুদূরে।সে কি চোখ খুলবে?এই ভীতু বজ্জাত আবার মুখ এত কাছে এনে কি করতে চাইছে!

রোদ্দুর সাপের মতো ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মুখ সরালো।অহির হাতে একটু চাপ দিয়ে বলল,

—“অজান্তা,আমি এতক্ষণ গভীর পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলাম তুমি জেগে আছো!তোমার চোখ পিটপিট করছে।ঘুমিয়ে পড়ার ভান ধরছো কেন?”

—“আমি অসুস্থ এসআই।চলে যান।আর আসবেন না আমাদের বাড়ি।”

অহি বন্ধ চোখেই বলল।রোদ্দুর ইতস্তত করে এদিক ওদিক কাঁপড় খুঁজলো।বিছানার এক পাশে অহির ওড়নাটা হাতে পেঁচিয়ে অহির কপাল স্পর্শ করলো।তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,

—“জ্বর তো নেই অজান্তা!”

অহি অবাক হয়ে চোখ খুলল।বিরক্ত কন্ঠে বলল,

—“হাতে কাপড় পেঁচিয়ে আপনি এসেছেন জ্বর মাপতে?আপনার বুদ্ধি দেখছি হাঁটুর নিচে।”

রোদ্দুর আমতা আমতা করে বলল,

—“ইয়ে মানে আসলে তোমাকে ছুঁয়ে দিলে কেমন যেন হয়ে যাই।হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।মনে হয় দম বন্ধ হয়ে মারা যাব।কেমন জানি ইলেকট্রিক শক লাগে।তোমার হাতের একটু স্পর্শ পেলেই উথাল পাথাল হয়ে যাই।কপাল টপাল স্পর্শ করলে নিশ্চিত স্ট্রোক করবো।”

অহির হাসি পেল।কিন্তু বাইরে মুখ গম্ভীর করে রইল।এরকম একটা পাগলাটে মানুষকে সে কিভাবে ইগনোর করবে?তাকে ছেড়ে নিজে কিভাবে থাকবে!

—“অজান্তা মা এসেছে!নাজমা খালাও এসেছে।”

অহির বুক ফেটে গেল।রোদ্দুরের মায়ের কন্ঠ সে শুনেছে।কিন্তু মানুষটার সাথে দেখা করার সাহস পাচ্ছে না।দেখা হলে কি বলবে?এটা যে সে তার ছেলেকে বিয়ে করবে না?উপর মহল থেকে তাকে নিষেধ করেছে?ভয় দেখিয়েছে তাকে?এসব!

কিছু মনে পড়ায় রোদ্দুর হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো।অস্থির পায়ে হাঁটা চলা করলো রুমে কিছুক্ষণ।তারপর এক জায়গা দাঁড়িয়ে বলল,

—“অজান্তা, তোমাকে কষে একটা চড় মারি?”

অহি অবাক হয়ে তাকালো।মানুষটার চোখ মুখ কিছুটা কঠিন হয়ে গেছে।মারার আগে কেউ পারমিশন নেয়?অহি আলগোছে বলল,

—“আমাকে চড় মারবেন কেন?মারতে চাইলে সেদিনের মতো নিজের গালে মারুন!”

রোদ্দুর বাঁকা হয়ে অহির দিকে সামান্য ঝুঁকে বলল,

—“আমার নামমাত্র বাবার ভয়ে, তার থ্রেট শুনে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইছো না সেটা আমাকে আগে কেন জানালে না?তোমাকে ওই লঞ্চ ঘাটে কতবার জিজ্ঞেস করেছি?কতবার বলেছি যে কেউ তোমায় বিয়েতে বাঁধা সৃষ্টি করলে আমায় বলো!আমি সামলে নিবো।বলো নি কেন?সেই তো আমি জেনেই গেলাম!সেই তো তোমাকে আমার বউ হয়েই বাঁচতে হবে!”

অহি চরম অবাক হয়েছে।তার দু ঠোঁট আলাদা হয়ে কিঞ্চিৎ হা হয়ে আছে।রোদ্দুরের বাবার ব্যাপারটা সে সম্পুর্ণ চেপে গেছে।কাউকে জানায়নি।তাহলে রোদ্দুরের কানে গেল কি করে?

তাছাড়া রোদ্দুরের বাবা তো ভুল কিছু করেনি।এতবড় বিজনেসম্যানের ছেলে রোদ্দুর।গভমেন্ট জব করে,দেখতে অতিশয় সুদর্শন!পড়াশোনা জানা মানুষ।আর অহি?থার্ডক্লাস তো দূরে থাক!পুরোপুরি ক্লাসলেস দরিদ্র একটা মেয়ে।রোদ্দুরের বাবা বহুদিন আগে তাকে ডেকে বিষয়টা সুন্দর মতো বুঝিয়ে দিয়েছে যে সে রোদ্দুরের সাথে খাপ খায় না।অহিও ব্যাপারটা গভীর চিন্তা করে বুঝেছে।তার মতো মেয়ের সাথে রোদ্দুর জীবন যুক্ত করলে রোদ্দুর তার থেকে শুধু কষ্ট পাবে।সেজন্য সে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রোদ্দুরের জীবন থেকে সরে যাবে এবং সেটাই করেছে।

রোদ্দুরের অহির দিকে ঝুঁকে তার চারপাশে ফোন খুঁজা শুরু করলো।চিন্তিত কন্ঠে বলল,

—“তোমার ফোন কই অজান্তা?আমি চেক করবো তুমি কতদিন বাবার সাথে কথা বলেছ!আমার তিনটে নাম্বার ব্লকলিস্টে রেখে আমার বাবার সাথে কথা বলার শিক্ষা তোমায় আমি দিবো।”

সটান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

—“ফোন কোথায়?”

অহি পিঠের নিচ থেকে বাটন ফোনটা বের করে রোদ্দুরের হাতে দিল।হঠাৎ করেই তার ভালো লাগতে শুরু করেছে।এরকম একটা পাগলাটে মানুষকে পাশে না পেলে সে দম বন্ধ হয়েই মারা যাবে।সে মনে মনে বলল,

—“প্লিজ!জোর করে আমায় বিয়ে করে নিন না!বিয়ে করে আমায় আপনার বুকের খাঁচায় আগলে রাখুন!আপনার বাবাও যেন আমার হদিস না পায়।এতটা লুকিয়ে রাখুন!”

রোদ্দুর ফোনে তার বাবার নাম্বারটা খুঁজতে খুঁজতে বলল,

—“দুদিন আগে তোমার সাথে দেখা করে বাড়িতে গিয়ে দেখি বাবাও বাড়িতে।বাবা বাড়িতে বেশি আসে না।মাকে নিয়ে আসার পর একদমই আসতো না।সেদিন কেন জানি লুকিয়ে এসেছে।মাও জানে না!এসেই নিজের রুমে ঢুকেছে।আমি ড্রয়িং রুমে যাওয়ার সময় ওনার মুখে অহি নাম শুনে থমকে যাই।মনের ভেতর ক্ষীণ সন্দেহ হয়।দরজার দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে তোমার সাথে বাবার কথোপকথন শুনেই সব বুঝতে পারি।বিশ্বাস করো!সেদিন বাড়িতে কিয়ামত ঘটিয়ে দিতাম।শুধু মা ছিল বলে,বাবার সাথে কোনো তর্কে যাইনি।কোনো কথা বলিনি।না হলে ওনাকে বুঝিয়ে দিতাম,এই রোদ্দুর হিমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস উনি পায় কি করে!”

অহি নরম গলায় বললো,

—“উনি আপনার বাবা তো!”

—“চুপ!কিছুক্ষণের মধ্যে কাজি এসে যাবে।উঠে পড়ো।তোমাকে আজই নিজের কারাগারে তুলবো।যাতে আর ফন্দি আঁটতে না পারো।”

রোদ্দুর চুপ হয়ে গেল।বাবার নাম্বারটা ব্লকলিস্টে ফেলে ফোনটা বিছানার অপর পাশে ছুঁড়ে মারলো।অহি অবাক হয়ে বলল,

—“ফোন ছোঁড়াছুড়ি করছেন কেন?যদি ভেঙে যায়?”

রোদ্দুর উত্তর দিল না।কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে ফট করে অহির কাঁথার নিচে ঢুকে গেল।অহি চমকে সরে যেতে রোদ্দুর তার হাত চেপে ধরলো।দুজন পাশাপাশি হাত ধরে শুয়ে আছে।অহির লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।রোদ্দুর বড় বড় করে ছাদের টিন দেখছে।অহি নরম গলায় বললো,

—“আপনার হাত কাঁপছে এসআই।আমার হাত ছাড়ুন!”

—“কাঁপছে কাঁপুক।শুধু হাত কেন,সমস্ত পৃথিবী নিয়ে কাঁপবো।তোমার সমস্যা আছে?”

—“নাহ নেই!হাতটা ছাড়ুন!আপনি আমার হাতসহ কাঁপছেন।”

—“ছাড়বো না মানে ছাড়বো না।কি করবে?করো!”

অহি ভড়কে গেল।সত্যি তো!হাত না ছাড়লে কি করবে সে?কিছু করার আছে?অবশ্যই আছে।অনেক কিছু করার আছে।অহি সামান্য সরে রোদ্দুরের গা ঘেঁষে আসলো।দশ সেকেন্ডের মাথায় রোদ্দুর এক লাফে চৌকি থেকে ফ্লোরে ছিটকে বসে পড়লো।হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,

—“ও মাই গড!অজান্তা,তোমার সাথে এক বিছানায় ঘুমানো জাস্ট ইম্পসিবল।আমি পারবো না।পারবো না!”

বারান্দা থেকে কারো কন্ঠ ভেসে আসলো।অতিরঞ্জিত হয়ে বলছে,

—“স্যার!আমি এসে গেছি।”

অহি মিটিমিটি হাসছে।রোদ্দুর এক পলক তার দিকে চেয়ে বলল,

—“বিদ্যুৎ এসেছে।বিয়ের সাক্ষী এসে গেছে।আমি বরং যাই!”

১৮.

অসুস্থ শরীর নিয়ে অহি বউ সেজে বসে আছে নিজের রুমে।সে একটু পর পর তার পরণের শাড়ির দিকে তাকাচ্ছে।নিজের শরীরের দিকে তাকাচ্ছে।কতগুলো বছর পর আজ তার মা নিজ হাতে তাকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।পুরোটা সময় অহি ঘোরের মধ্যে ছিল যেন।

কিছুক্ষণ পর বয়স্ক কাজি তিনজন সাক্ষী সমেত এসে তাকে যখন কবুল বলতে বললো সে অসহায় মুখে মায়ের দিকে তাকালো।মায়ের আঁচল ছেড়ে সে অন্য কারো বউ হয়ে যাবে আজ।তবুও কি তার মা আজ আশীর্বাদ করবে না তাকে?তাকে ক্ষমা করবে না?টেনে বুকে নেবে না?

কাজি সাহেব তাড়া দিতেই রেখা এসে অহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।তার গলা ধরে এসেছে।কোনো কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে।এক মেয়েকে ভেবে আরেক মেয়েকে এতটা অবহেলা সে কি করে করতে পারলো?অহির দু চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল গড়ছে।মাকে জড়িয়ে ধরার তার সাহস নেই।সে কাঁদতে কাঁদতে জগতের সবচেয়ে ভারী ‘কবুল’ শব্দটি তিনবার বলে দিল।

তার পরবর্তী জীবন সুখের হবে।মায়ের আশীর্বাদের হাত মাথায় পড়েছে যে।সে হাত বাড়িয়ে তার নতুন মায়ের হাত চেপে ধরলো।আরেক হাতে তার মাথার উপর রাখা মায়ের হাত চেপে ধরলো।

১৯.

রোদ্দুরের পরণে মেরুন রঙের পাজামা পাঞ্জাবি।সে একগোছা চাবি থেকে একটা একটা করে তালা খোলার চেষ্টা করছে।হয়তো তালার চাবি কোনটা সেটা ভুলে গেছে।তার হাত কাঁপছে।প্রতিটা চাবি সে অধীর আগ্রহে, এক বুক আশা নিয়ে তালার ভেতর দিচ্ছে যে এটাতেই হয়তো খুলে যাবে।কিন্তু খুলছে না।

অহি পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ঠিক পাশে নয়,কিছুটা পেছনে।তারা দুজন আপাতত গুলিস্তান আছে।রোদ্দুর এখানে নতুন ফ্ল্যাট ভাড়া করেছে দুদিন হলো।তার একটাই কথা!অহিকে সে বাবার বাড়ি উঠাবে না।বিয়ে করে কোথায় রাখবে সেটা নিয়ে টেনশনে ছিল।পরে ফ্ল্যাট ভাড়া করে দুদিনে মোটামুটি প্রয়োজনীয় সব ফার্নিচার কিনে ফেলেছে।এখন থেকে সে নাকি আর বাবার বাড়ি যাবে না।মাকে আর অহিকে নিয়ে এ ফ্ল্যাটে থাকবে।

অহির শাশুড়ি মা আসেনি।রাতের বেলা সে গাড়িতে চড়বে না।তাছাড়া ইতোমধ্যে রেখার সাথে, শফিকের সাথে তার বেশ ভাব জমে গেছে।সে কিছুদিন তাদের বাড়িতেই থাকবে।সাথে নাজমা খালা থাকবে।

সিঁড়ি ভেঙ্গে তিল তলা উঠেছে অহি।অসুস্থ শরীর নিয়ে বড্ড ক্লান্ত লাগছে।রোদ্দুর এখনো তালা খুলতে পারেনি।সে একটানে রোদ্দুরের হাত থেকে চাবিটা নিয়ে সে নিজে তালা খোলার চেষ্টা করলো।তৃতীয় চাবির ছোঁড়াটা ঢুকাতে তালা খুলে গেল।সে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল।

সুন্দর, ছিমছাম বাসা।অহির চোখ ভরে উঠার উপক্রম।এত সুন্দর একটা বাসায় সে আজ থেকে থাকবে?কেমন বিশ্বাস হতে চায় না।

অসুস্থ শরীর নিয়ে অহি ঘুরে ঘুরে দেখলো।দুটো বেড রুম।দুই রুমের মাঝখানে ড্রয়িং রুম।ড্রয়িং রুমের সাথে দক্ষিণ দিকে রান্নাঘর।রান্নাঘরের সাথে ছোট্ট আরেকটা গেস্ট রুম।অহি ক্লান্ত শরীরে ড্রয়িং রুমে রাখা সোফায় বসে বলল,

—“আমি কোন রুমে থাকবো?শুয়ে পড়তে হবে আমার।অসুস্থ লাগছে!”

রোদ্দুর রান্নাঘরে পানি খেতে নিয়েছিল।সবেমাত্র গ্লাসটা উঁচু করেছে। অহির কন্ঠ কানে যেতে ঠাস করে হাত থেকে গ্লাস পড়ে গেল।মুহূর্তে ভেঙ্গে খানখান।রোদ্দুর বুকে হাত চেপে বিড়বিড় করে বলল,

—“ও মাই গড!অজান্তার সাথে এক বাসায় থাকবো কি করে?নাহ!আমি আজ মরে গেলেও রান্নাঘর থেকে বের হবো না।অজান্তার মুখোমুখি হবো না!মা গো!তোমার ছেলেকে উদ্ধার করো মা গো!”

(চলবে)

এই নেন বোনাস পার্ট!রোদ্দুর অজান্তার বিয়ে তো হয়ে গেল।আপনাদের না জানিয়েই!এবার খুশি তো?দেখা যাক,রোদ্দুর+অজান্তার সংসার জীবন কেমন চলে!🙈

গতকাল আমাদের এদিকে রাস্তার গাছ কাটার জন্য সারাদিন কারেন্ট ছিল না।ফলে ফোনেও চার্জ ছিল না।সন্ধ্যার পর কারেন্ট এসেছে।তখন আর লিখতে পারিনি।খুবই দুঃখীত!😓আগে থেকে কিছু বলে রাখলে সেটা আরো হয় না।😒আর বলবো না কোনোদিন।হুটহাট বোনাস পর্ব পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here