গোধূলি বেলায় তুমি পর্ব -১৮

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_১৮
.
.
আভিয়ান কফিতে এক চুমুক দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,, আর বেশি দিন নেই। সত্যিটা তোমার নিজের কাছেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন তুমি বুঝতে পারবে যা হয়েছে তাতে আমার কোন দোষ ছিল না। আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম,,,,,,,,,

আভিয়ান রিয়াদকে ( আভিয়ানের ডান হাত) কল দেয়। কল দেওয়ার সাথে সাথে রিয়াদ কল রিসিভ করে। আভিয়ান ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে তোকে যেই কাজ দিয়েছি তা কত দূর।

রিয়াদ মুচকি হেসে বলে,,,, মেয়েটির খোঁজ পেয়ে গেছি। তোকে এখনি আমি কল দিতাম।কখন আসতে পারবি বল??

আভিয়ান ব্যস্ত হয়ে বলে,,, আমি এখননি আসছি।তুই কোথায় আছোস্ তা ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দে্?

ঠিক আছে। তুই তাড়াতাড়ি আয়,,,,,,

হুমম,আসছি। আর কিছু না বলে আভিয়ান কল কেটে দেয়। সে দ্রুত রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে।

প্রায় ২০ মিনিট পরে রিয়াদের সাথে দেখা হয়। আভিয়ান গাড়ি থামিয়ে তাকে গাড়িতে তুলে নেয়। রিয়াদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সে বাড়িতে পৌঁছে যায়। ২-৩ নক করার পরে একটি মহিলা এসে দরজা খোলে। মহিলাটি এখনো আভিয়ানকে দেখে নি সে আড়ালে লুকিয়ে আছে।

দরজায় রিয়াদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,, কে আপনি? আমার হাসবেন্ড এখন বাড়িতে নেই। আপনি পরে আসতে পারেন।আপনার পরিচয় দিয়ে যান ওনী আসলে ওনাকে বলে দিবো,,,,,

রিয়াদ শান্ত স্বরে বলে,,, দরকারটা আপনার সাথে।

মহিলাটি ভ্রু কুঁচকে বলে,,, আমার সাথে আবার কি দরকার। আপনাকে তো আমি চিনি না।

আভিয়ান তখনি আড়াল থেকে সামনে এসে বলে,,, আমাকে তো নিশ্চয়ই চিনো,,,,

আভিয়ানকে দেখা মাত্র মহিলাটির মুখের রঙ কালো হয়ে যায়। সে ভয়ে দ্রুত দরজা বন্ধ করতে নেয় কিন্তু তার আগেই আভিয়ান ভিতরে ঢুকে পরে। তা দেখে মহিলাটি আমতা আমতা করে বলে,,,, কি চাই?

মহিলাটির কথা শুনে আভিয়ান বাঁকা হাসে। আমার তোমার কাছে একটা হেল্প চাই নয়না। আমি জানি তিন বছর আগে তুমিও বাধ্য হয়ে আমার মানে মিথ্যা কথা বলেছো। আজ তোমাকে সব সত্যিটা স্বীকার করে নিতে হবে।

আভিয়ানের কথা শুনে নয়নার চোখ – মুখে ভয়ের ছাপ ফোঁটে উঠে।মনে মনে সে সাফিনের কথা ভাবতে থাকে। সাফিন তাকে সেদিন বাধ্য করেছিল আভিয়ানের নামে মিথ্যা কথা বলতে। সেদিন আভিয়ান সব কিছু জানতো কিন্তু সে কিছুই করতে পারে নি। সে ভয়ে ভয়ে বলে,,,, আপনারা এখান থেকে যান। আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়,,,,,

আভিয়ান তাকে আশ্বস্ত করে বলে,,,, তোমার কোন ভয় নেই।সাফিন কিছু করতে পারবে না। ওর ব্যবস্থা আমি করে এসেছি।

নয়না বুঝতে না পেরে বলে,,, মানে?

আভিয়ান তাকে সব কিছু খোলে বলে। আভিয়ানের কথা শুনে নয়নার চোখ- মুখে খুশির ঝলক দেখা যায়। এত দিন সে প্রতিটি মুহূর্ত অপরাধ ভোগে ভুগেছে। যদিও সে বাধ্য হয়েছিল সেদিন এমনটা করতে তবুও সব কিছুর জন্য সে নিজেকে দোষী মনে করে। সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বলে,,, আমি যাবো।

আভিয়ান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। পাঁচ মিনিট পরে সে আভিয়ানের সাথে গাড়িতে গিয়ে বসে। আভিয়ান দ্রুত ড্রাইভ করছে। জায়গাটা অনেকটা দূরে। আজ সময় এসেছে আদিজাকে সব সত্যিটা জানানোর। তার কাছে মনে হচ্ছে রাস্তাটা আজ শেষ হবে না।মাঝ রাস্তায় আসতেই দেখে রাস্তায় অনেক জ্যাম। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে সে জ্যামে আটকে আছে।জ্যাম ছাড়তেই আভিয়ান আবারও ড্রাইভ করতে শুরু করে,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,

বিকালের দিকে আদ্রিজা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুতেই সে তার জীবনের সমীকরণ মিলাতে পারছে না। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে সে নিচে চলে যায়। এত বড় বাড়িতে একা একা সে বিরক্ত হচ্ছে। সে টিভি অন করে শুধু চ্যালেন চেঞ্জ করছে। দেখার মতো কিছু পাচ্ছে না। আভিয়ানকে মনে মনে খোঁজছে। সে থাকলে ঝড়গা করে হলেও সময় কেটে যায়। হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে আদ্রিজার ধ্যান ভাঙে। সাভেন্ট দরজা খোলে দেয়। আভিয়ানকে আসতে দেখে হঠাৎ করেই তার ভালো লাগা কাজ করে কিন্তু পরের মুহূর্তে তার সাথে নয়নাকে দেখে তার বুকের ভিতরটা ছ্যাঁট করে উঠে। একরাশ আভিমান আর রাগ তার মনের মাঝে ভর করে।

আদ্রিজা বসা থেকে উঠে তাদের সামনে এসে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। রাগে তার চোখ- মুখ লাল হয়ে আছে। সে কর্কশ স্বরে আভিয়াকে বলে,,, দেখিয়ে দিলেন তো নিজের আসল রুপ। খুব তো বলেছিলেন আমি ছাড়া আপনার জীবনে অন্য কোন নারী নেই। আপনি চরিত্রহীন নন। তবে এই মহিলা এখানে কেন? ও হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গেছিলাম ওনী তো আপনার প্রথম স্ত্রী। আপনার সন্তানের মা। আপনার উপর আর আপনার বাড়িতে থাকার আমার থেকে বেশি তো ওনার৷ এতোই যখন ভালোবাসেন ওনাকে তবে আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলেন? কেন আবার ফিরে এলেন আমার জীবনে? আমি তো আপনাকে চাই নি?

আদ্রিজা আভিয়ানকে কোন সুযোগই দিচ্ছে না কথা বলার। আভিয়ান তাকে থামিয়ে বলে,,, আগে আমার কথা গুলো শুনো। পরে তোমার যা খুশি বলো,,,

আদ্রিজা চিল্লিয়ে বলে,,, আমার আর কিছু শুনার নেই। যা বুঝার তা আমার বুঝা হয়ে গেছে। আমি আর এক মুহূর্তও এখানে থাকবো না। আপনি খুব খারাপ,,,

আভিয়ান তার দুই কাঁধে ধরে বলে,,, প্লিজ তুমি শান্ত হও। তোমাকে সব সত্যিটা জানাতে ও এসেছে।

আদ্রিজা আভিয়ানকে নিচের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বলে,,,ছুঁবেন না আমাকে। এই হাতে আমাকে একদম স্পর্শ করবেন না। আজকে কিছুতেই আপনি আমাকে আঁটকে রাখতে পারবেন না,,,,

আভিয়ান কোন ভাবে আদ্রিজাকে থামাতে না পেরে তাকে জোরে ধমক দিয়ে বলে,,, সেই কখন থেকে তোমাকে বলছি চুপ করতে। আমার কথা গুলো শুনতে আর তুমি নিজের মতো বলেই যাচ্ছো। এখন একদম চুপ থাকবে কোন কথা বলবে না। যদি আর একটি কথাও বলো কবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না,,,,,,,

আভিয়ানের ধমক শুনে আদ্রিজা চুপ করে যায়। কিছুক্ষন নিরব থেকে আভিয়ান বলা শুরু করে,,,,,

ওর নাম নয়না তা তো তুমি জানোই। কিন্তু ওই দিন ও যা বলেছিল সব মিথ্যা ছিল। ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সেদিন ও যা বলেছিল সব সাফিনের কথাতে বলেছে। আর আমিও বাধ্য ছিলাম তাই তখন সত্যিটা তোমাকে বলতে পারি নি।

আদ্রিজা অবাক হয়ে বলে,,, মানে?

নয়না আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করে,,, শুনো তাহলে। আমি রাকিবকে ভালোবাসি।রাকিব আর সাফিন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তোমার বিয়ের আগের দিন সাফিন এসে আমাকে বলে,,,, আভিয়ানের নামে মিথ্যা কথা বলতে। তোমাদের বিয়ের দিন তার নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে যাতে তোমাদের বিয়েটা ভেঙে যায়। আমি প্রথমে রাজি হয়নি কিন্তু পরে বলে আমি যদি তার কথা মতো কাজ না করি তবে সে রাকিবকে শেষ করে দিবে। আমি তার কথাতে ভয় পেয়ে যাই। যদি সে সত্যিই রাকিবের কোন ক্ষতি করে তবে আমি কি করে বাঁচবো। তাই রাজি হয়ে যাই। সেদিন আমি যা বলেছিলাম তার সব মিথ্যা ছিল। আভিয়ানকে তো আমি চিনতামই না।বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে এমনটা করি নি। বাধ্য হয়েছিলাম এমনটা করতে। আমাকে ক্ষমা করে দাও,,,,,,

নয়নার কথা তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। সে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে,,, সাফিনের কি লাভ এমনটা করে? তাছাড়া আভিয়ান কেন সেদিন আমাকে মিথ্যা কথা বললো। তার তো কোন কারণ ছিল না আমাকে মিথ্যা বলার,আমার সাথে নাটক করার,,,,,

আদ্রিজার কথায় আভিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,, সাফিন তোমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো। সেদিন পার্টিতে তোমাকে দেখেই সে তোমাকে ভালোবেসে ফেলে। আমাদের দুইজনকে এক সাথে সে কোন দিনই মেনে নিতে পারে নি। তাই সে এমনটা করেছে যাতে তুমি আমাকে ভুল বুঝো আর তাকে মন থেকে ভালোবাসো। আর আমি কেন মিথ্যা বলেছি আর কেন তোমার সাথে নাটক করেছি তা তুমি নিজের চোখেই দেখবে চলো,,,,,

আভিয়ান আদ্রিজার হাত টেনে নিয়ে যেতে থাকে৷ আদ্রিজা অবাক হয়ে বলে,, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। ছাড়েন আমাকে,,,,,

আভিয়ান কোন কথা না বলে একটি রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। আদ্রিজা দেখেই চিনতে পারে এটা তো সেই রুম যেটাতে সব সময় তালা দেওয়া থাকে। কিন্তু আভিয়ান আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছে? তার ভাবনার মাঝেই আভিয়ান তালা খোলে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। আদ্রিজাও তার পিছনে পিছনে রুমের ভিতরে ঢুকে চমকে যায়,,,,,,,,,,
..
.
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here