চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব -০৯

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৯
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা

স্পর্শ এমন করে বিয়ে কথা কেন বলছে আমি বুঝতে পারছি না। আমাদের বিয়ে তো আরো কিছুদিন পর হ‌ওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন শুনি আব্বু আর স্পর্শ নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের আকাদ আপুর সাথে হবে। রেজিস্ট্রি আর বিয়ে পরিয়ে রাখবে আমি তারপর এইখানেই থাকবো আমার এইচএসসি পরীক্ষার পর বড় করে অনুষ্ঠান করে তুলে নেওয়া হবে।
এমন সিদ্ধান্ত নাকি আপুর বিয়ের দুই আগেই নিয়েছে দুই পরিবার কিন্তু হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার যথাযথ কারণ আমি জানতে পারলাম না। তা আমার অগোচরেই র‌ইল। আপুর বিয়ে পরানো হলো তারপর আমাকে আর স্পর্শ কে আলাদা এক রুমে বসিয়ে আমাদের দুই পরিবারের সামনে আমাদের বিয়েটাও হলো। আমি স্পর্শকে পছন্দ করি এখন ভালো ও বাসি কিন্তু এই ভাবে আমাকে সবাই বাদ দিয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমার খুব অভিমান হলো। আমার পরিবার সব সময় আমাকে দূর-দূর করে রাখে। আমার জীবন আমার বিয়ে সেখানে আমার কোন সিদ্ধান্ত নেয়। আমি তার আগা গোড়া কিছুই আগে থেকে জানতে পারি না। সবসময় হঠাৎ করে সব কিছু আমার জীবনে আসে কেন? এই বিয়ের কথাটা আগে থেকে জানালে আমি কি মানা করে দিতাম। বাবা মা কেন আমাকে আমার জীবনের কোন সিদ্ধান্ত নিতে দেয় না‌। হুট করে চাপিয়ে দেয়।
আজ আমি কল্পনা ও করিনি আমার বিয়ে থাকতে পারে কিন্তু থাকলো হয়ে ও গেল। আমি পুতুলের ন্যায় সব করলাম। আমার মতামত কি কখনো কার্যকর হবে না। স্পর্শের সাথেও কাল কতোটা সময় ছিলাম হলুদ পর্ব নিয়ে। তিনি ও আমাকে কিচ্ছুটি জানান নি। এখন তো আগের থেকে অনেকটা কথা বলে তাহলে এই বিয়ের কথা আমাকে জানালে কি হতো। অভিমানে আমার অক্ষি দুটি জলে ভড়ে উঠলো। আপুর বিদায় নিয়ে সবাই কান্না কাটি করছে। আমি দরজা আটকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাদের দেখছি আর অশ্রু ফেলছি।

কারো কাছে আমার কোন মূল্য নেই। আপুর কাছে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে ও পারছি না। এই দিনেই আমার সাথে আবার আরেকটা ঘটনা ঘটে গেল। আমি কোন দুঃখে অশ্রু বিসর্জন দেব বুঝতে পারছি না। আমার জীবন কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত নাই সব সিদ্ধান্ত অন্যের। স্পর্শের প্রথম আগমনে ও আমার মনটা বিক্ষিপ্ত ছিল। ভেঙে পরেছিলাম। অবুঝ মনে আমি আঘাত পেয়েছিলাম। তবুও তাকে নিয়ে আমি আমার স্বপ্ন গুলো সাজাতে চেয়েছিলাম আবার। কিন্তু তিনি আমাকে আঘাত করলো।

আপুরা অনেক ক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে আছে। আমাকেই খুঁজছে বোধহয়। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
এদিকে স্পর্শ নিচেই ছিল সবাই মারিয়াকে খুঁজছে। তাই দেখে ও স্পর্শ ও খুঁজতে খুঁজতে উপরে চলে এলো। স্পর্শ মারিয়ার রুমে আসলো খুঁজতে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখে বুঝতে আর বাকি থাকলো না মারিয়া কোথায় আছে। স্পর্শ বাইরে থেকে মারিয়াকে ডাকতে লাগল। আমি স্পর্শের শব্দ পেয়ে ও খুলছি না। কিন্তু স্পর্শের ধাক্কা আর ডাকাডাকি তে মনে হচ্ছে দরজা না খুললে ভেঙেই ডুকবে। আমাকে বাধ্য হয়ে দরজা খুলতেই হলো,

‘ আপনি দরজা ভেঙে ফেলার মতলব করেছেন নাকি। এমন করে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছেন কেন দেখছেন না আমি খুলছি না।’

স্পর্শ আমার হাত ধরে ফেলল ফট করে আর বলল,

‘ রাগ করেছো ভালো কথা। কিন্তু তার জন্য নিজের বোনকে কষ্ট দিচ্ছ কেন? সে যে তোমার জন্য শশুর বাড়ি যাচ্ছে না। তাকে বিদায় দিয়ে নাও আগে। তারপর রাগ করে দরজা আটকে বসে থেকো।’

‘ আমি কারো সাথে দেখা করতে পারবো না। ছাড়ুন আমার হাত।আমি কোথাও যাব না।’ আমি স্পর্শের হাত থেকে আমার হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতেছি।

স্পর্শ হাত ছাড়ার বদলে আরো শক্ত করে ধরে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। আপু আমাকে দেখেই জাপ্টে ধরলো। আমি না চাইতেও কান্না করে দিলাম আপুকে ধরে।

স্পর্শ দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের কান্না কাটি দেখছে। আপুরা বিদায় নিয়ে চলে গেল।
থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এখন বিয়ে বাড়িতে‌। আমার শাশুড়ি ননদ সীফা সবাই আমার কাছে এসে বিদায় নিলো ওই রাতেই। আব্বু আম্মু অনেক থাকার অনুরোধ করলো তাদের কিন্তু তারা থাকবে না বললো। অনেকদিন থেকেছে এখন বাসায় যাওয়া উচিত।
আমি তাদের হাসি মুখে বিদায় দিলাম। মনের যে অবস্থায় থাক না কেন তাদের সাথে আমি খারাপ বিহেভ করতে পারব না। সীফা আমার কাছে এসে বলল,

‘ এবার তো তুমি আমার পার্লামেন্ট ভাবি হয়ে গেছো। কিন্তু আফসোস তানহা আপুর মতো তোমাকে বিদায় নিয়ে আমাদের সাথে যেতে হচ্ছে না। হলে খুব ভালো হতো তাই না ভাবি।’

আমি সীফার কথার প্রেক্ষিতে শুধু হাসলাম। সীসা আবার বলল,

‘ ভাইয়া কতোটা হ্যাপি আজ জানো তুমি। বিয়ে ঠিক হয়েছে তবুও ভাইয়া সব সময় সংকায় থাকতো থাকতো তোমাকে নিয়ে। হারিয়ে ফেলার ভয়ে। কিছু আছে থেকে। আর সেই ভয় ভাইয়াকে পেতে হবে না‌। আমার খুব ভালো লাগছে ভাইয়ার আনন্দে। এবার তোমাকে একেবারে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। আজকের এই সিদ্ধান্তে তোমাদ আব্বুকে রাজি করাতে কতো কাঠখোড় পুরাতে হয়েছে একমাত্র ভাইয়া জানে।সব ভালোই ভালোই মিটে গেছে এতেই শান্তি।’

সীফা একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে আমি নিরব শ্রোতা হয়ে সব শুনছি। ওর হ্যা তবে হ্যা মিলিয়ে যাচ্ছি।

সেই মুহূর্তে স্পর্শ এলো ওখানে আর সীফাকে কি বলে যেন তারালো।

রুম জুড়ে পিনপিনে নিস্তব্ধতা। আমি বিছানায় এক কোনে বসে ছিলাম সেই ভাবেই আছি স্পর্শ রুমে আছে তার উপস্থিতি টের পাচ্ছি কিন্তু কথা বলছে না। আমি মাথা নিচু করে নিজের আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছি নিশ্চুপ। মাথা উঁচু করে স্পর্শ এর দিকে তাকানোর ইচ্ছে হচ্ছে না। অন্য সময় হলে আমি আড়চোখে স্পর্শ কে দেখতাম কিন্তু আজ দেখছি না। স্পর্শ আমার পাশে বসেছে আমি টের পাচ্ছি। তিনি খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,

‘ কাল তোমার পরিক্ষা আছে তাই রাগ করে পড়া বাদ দিয় না। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে। আজেবাজে কথা ভেবে নিজেকে অসুস্থ করো না।’

আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে শক্ত হয়ে বসে আছি। স্পর্শের একটা কথাও আমার ভালো লাগছে না। লোকটাকে অসহ্য লাগছে বিরক্ত লাগছে। স্পর্শ আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আমি বুঝতে পারছি আছি ফট করেই চোখ তুলে তাকালাম। স্পর্শ আমার আচমকা তাকানোতে থতমত খেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো আর আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এলো। আমার তা দেখে আজেবাজে অনেক কথায় মাথায় এলো। এখন‌ তো স্পর্শ আর আমার হবু বর না বিয়ে করা স্বামী হয়ে গেছে। আমার উপর স্পর্শ এর অধিকার আছে। এইভাবে আমার দিকে স্পর্শ এগিয়ে আসছে কেন? উনি কি কিছু করতে চাইছে। আমার গা কাটা দিয়ে উঠলো,

আমি হাত দিয়ে স্পর্শ কে থামতে দেখিয়ে বললাম,

‘একদম এডভান্টেজ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিয়ে করেই কাছে আসার চেষ্টা করছেন।‌এতোদিন তো ভালো করে কথা ও বলতেন না। এইজন্য ই কি বিয়ে করেছেন এতো হাতে পায়ে ধরে যাতে অধিকার খাটাতে পারেন।’

স্পর্শ আমার‌ কথার তোয়াক্কা করলো না। আমার কাছে এসে টেনে দাড় করালো। তারপর ফট করেই আমার দুগালে হাত রেখে কপালে চুমু খেলো তারপর একটা কথা বলেই হনহনিয়ে চলে‌ গেল।

আমি স্টাচু হয়ে ওইখানেই দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। স্পর্শের কথাটা ছিল,

‘ তোমার সাথে কিছু করতে চাইলে সেটা অনেক বছর আগেই করতে পারতাম। কিন্তু আমি চাইনি অধিকার ছাড়া তোমাকে ছুঁয়ে অপবিত্র করতে। তোমার গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগাতে। তুমি আমার কাছে সদ্য ফোঁটা গোলাপের মতো শুদ্ধ পবিত্র। আমার প্রিয় জিনিসে আমি দাগ লাগাতে পছন্দ করিনা।’

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here