চাঁদ হয়ে রবো পর্ব ১৩

” চাঁদ হয়ে রবো”
~খাদিজা বিনতে হক
পর্ব-১৩
কলিং বেলের শব্দে পৌষী ধরফর করে উঠলো।
ও ভেবেছে তুষার এসেছে।
তুষার অফিসের কাজে সপ্তাহ খানেকের জন্য চট্টগ্রাম গেছে।
তনয়ও বাড়ীতে নেই।কেনো নেই কেউ জানে না।
ও কখন কি করে নিজে ও অথবা জানে না।
,
চুল গুলো হাত খোপা করে বেরিয়ো এলো রুম থেকে।ড্রইং রুমের সোফাতে উলটো হয়ে বসে একটা ছেলে।মুখটা দেখা যাচ্ছে না।
লিজা বেগম বেস খাতিল করে তার সাথে কথা বলছে।
ছেলেটাও হাসি হাসি মুখ করে কথা বলছে।
পোষী এগিয়ে যেতেই চমকে গেলো।
রেশ সোফাতে হেলান দিয়ে কথা বলছে।
অমায়িক সেই হাসি।
যেই হাসির দাপটে ও পালিয়ে এসেছিলো।
ওর মাতাল করা হাসি।যেনো কারো জীবন উলট পালট করে দিতে পারে।পৌষী এতক্ষণ এক ধ্যনে দেখছিলো।রেশকে।
সেদিনের আগে মানে পূর্ব পরিচিত ওরা এটা মনে হয় ওর।তবে কিছুতেই মনে করতে পারছে না।পৌষী রেশকে কোথায় দেখেছে ও।
,
লিজা বেগম বলল।
“আমাদের এপার্টমেন্টে।পাঁচ তলার নতুন ভাড়া টিয়া ওর মা আমার কাছে ওদের ফ্লাটের চাবি রেখে গেছে।আমার রুমের ড্রয়ারে চাবীটা।আছে ওটা নিয়ে আসো”
রেশ লিজা বেগমকে কারো সাথে কথা বলতে দেখে তাকে দেখার উৎসাহ নিয়ে পিছনে ঘুরে তাকালো।
পৌষীকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
পৌষীকে ও আবার দেখতে পাবে ভাবতে পারেনি।
ভেবেছিলো।অনেক বছর আগের ঝরের মতো আবার হারিয়ে ফেলেছে।
ওকে পাওয়ার কোনো আশা রাখেনি মনে তবে এখন এক চিলতি আশা দেখতে পাচ্ছে।গভির ভাবে তাকিয়ে দেখছে।
,
পৌষী ওর দৃষ্টি উপক্ষা করে লিজা বেগমের রুম থেকে চাবির গুচ্ছটা এনে দিয়ে চলে গেলো
রেশ মাথা নিচু করে তখনও বসে
আরও একবার বেহায়ার মতো মাথা তুলে ওকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।পরক্ষনে ইচ্ছে দাবিয়ে নিলো।
,
তনয় বিথীর বেনি করা চুল হাফ কেটে দিয়েছে।
সেই নিয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে।মেয়েটার হাটু ছুই ছুই চুল গুলো।এখন অর্ধেক।হয়ে।
পৌষী অনেক বুঝালো তাতে কোনো লাভ হয়নি।
বাচ্চাদের মতো কান্না করেই চলেছে।
কাঁদতে কাদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
,
ফোনের রিং কানেই যাচ্ছে না।পৌষীর।
ব্যলকনিতে।বেতের চেয়ারে দু পাতুলে তার মাঝে নিজের মুখ গুঁজে আধ সোয়া হয়ে বসে রইলো।
আন মনে কিছু একটা ভাবছে।
সে তুষারকে কি বললে।আমি আবার কলেজ যাই।
আরতো দুটো বছর।কয়েক মাস পরই তার ফাইনাল এক্সাম।দিলে।পরে ফাইনাল ইয়ারের।তারপর।শেষ।
ও তখন ট্রেইন একজন ভালো নার্স হতে পারবে।
অবস্য তুষারের যখন মন ভালো থাকবে তখনই।কথাটা তুলবে।না হলে ভালোর থেকে খারাপ হবে
,
বিথীর কাছে ফোন দিয়ে তুষার রাগি গলায় বলল।
“তোদের হয়ছেটা কি কেউ ফোন তুলিস না কেন?”
বিথী বেকুব বনে বলল।
“ভাই কার রাগ কার উপর ঝারছিস বলতো।আমি তো একবারেই ফোন তুললাম”
“চোপ।খালি মুখে মুখে তর্ক জানিস না।আমি পছন্দ করি না”
বিথীর গলারস্বর মিয়িয়ে গেলো।চুপ করে তুষারের কথা শুনছে?
“তো তোদের সে বাসার মহারানী কোথায়?
ফোন তুলছে না কেনো?”
“ও সেই কথা।মনে হয়।টায়ার্ড হয়ে শিয়ে পরেছে”
“এতো টায়ার্ড হওয়ার কি হয়েছে”
“সারাদিন কাজ করলে তো এমন ই হবে”
“কেন আমি যে আসার আগে নতুন সার্ভেন্ট ঠিক করে এলাম”
,
তুষার পৌষীর সারাদিন এতো কাজ একা একা করতে দেখে একজন মেটসার্ভেন্ট ঠিক করে রেখে এসেছিলো।যাতে পৌষীর কষ্ট না হয়।
,
বিথী বলল
“খালা মনি আসতে বারন করেছে।তিনি বলেছেন আমাদের বাড়ীতে মেট প্রয়োজন নেই।যেটুকু কাজ বাড়ীর বউই করতে পারবে।না পারলে মেয়ে মানুষ হয়েছে কেন।মেট ও তো একজন মেয়ে।মেয়ে মানুষের,,,”
এরপর কিছু বলল না।ওর মতে বলা উচিৎ না তাই বলল না।
তুষার চুপ করে শুনছে।
“তুষু ভাই ভাবিতো রুমে নেই”
“ওয়াসরুমে অথবা ব্যলকুনিতে দেখ”
বিথী ওয়াসরুম চেক করে ব্যলকনির দিকে পা বারালো।
“ভাই ওয়াস রুমেও নাই।”
“আর ব্যলকনিতে”
মূহূর্তে তুষারের হার্ট বিড ফাস্ট রান করা শুরু করেছে।চিন্তা পোকা মাথায় কুটকুট করে কামড়ানো শুরু করেছে।মেয়েটার আবার কোথাও ভাবতে পর কানে বিথীর হাসির ধ্বনি পৌঁছালো।
,
বিথী ব্যলকনিতে গিয়ে শব্দ করে হো হো হেসে দিলো।
“কিরে তুই হাসছিস কেনো”
“ভাই ফোনটা কেটে ইমুতে একটা কল দে”
“কেন”
“একটা জিনিস দেখাবো”
“বলবি তো।কি?পৌষীকে পেলি”
“কল দে তারপর বলছি”
ফোনটা কোটে সঙ্গে সঙ্গে কল দিলো তুষার।
ফোনটা রিসিভ করে ঘুমন্ত পোষীর দিকে ফিরিয়ে বলল
“দেখো তোমার মহারানী অবস্থা”
গুটিসুটি মেরে সুয়ে থাকতে।দেখে তুষার ফিক করে হেসে দিলো।বিথীকে ফোনটা।টেবিলের উপর রাখতে বলে ওখান থেকে চলে যেতে বলল।
চোখ ভরে দেখবে ও ওর ঘুমপরী কে।
কখনও সে ভাবে দেখা হয় না।পৌষীর সামনাসামনি হলো কি কবাব দিবে।
সেই জন্যই হয় তো দেখে না।
মেয়েটার আবার ঘুম পাতলা।
টুক টাক শব্দে ঘুম ভেঙে যায়।
বিথী আছতে করে ফোন রেখে চলে গেলো।
তুষার কোনো এক মাতাল হওয়া প্রমিকের মতো ওকে দেখছে।দেখেই চলছে দেখার শেষ হবে না মনে হয়।তবে পৌষীর ঘুম কিছুতেই ভাঙলো না।
কাজের জন্য আবার বেরিয়ে যেতে হলো ওকে।
কথা হলো না।তুষারের ওর সাথে।
,
কয়েক দিন যাবত কম ঘুম হওয়ায় চোখ জ্বালা করছিলো তাই একটা ঘুমের পিল খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।
বেস ভালো একটা ঘুম হচ্ছে ওর।
রাতে ফোন দিয়েও পায়নি তুষার ওকে।
বিথী জানিয়েছে।সে একবার উঠেছিলো।
শুধু ব্যলকনি থেকে রুমে বিছানায় এসে সোবার জন্য।চেয়ার থেকে উঠে হেলে দুলে এসে আবার ঘুম।তুষার আরো একবার ভিডিও কল দিয়ে ওকে দেখে ঘুমিয়ে পরলো।
হঠাৎ এতো ঘুমানোর জন্য ওর চিন্তা হচ্ছে রাতে আবার ওই সব অদভুত ঘটনা হলো।
ভেবেই আবার ভিডিও কল দিয়ে।সারা রাত তাকিয়ে রইলো পৌষীর মুখের দিকে।
হঠাৎ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে।না।
পৌষী শুলে ওর জামা উঠে যায় তবে এবার এটা হলো না।পায়ের কাছে কম্বলটা টেনে গায়ে জরিয়ে দিলো।মুরি দিয়ে দিলো।ও বেকুবের মতো তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল
“এটা কি হলো”
তুষার আর ওকে দেখতে পেলো না।শুধু কতক্ষণ তাকিয়ে কম্বল দেখে ফোন কেটে দিলো।
তুষার ফোন রাখতে একটা বিড়াল পৌষীর কোলের ম্যধে ঢুকে শুয়ে পরলো।
হাতে তুলতুলে নরম কিছু অনুভব করাতে।
পৌষী লাফ দিয়ে উঠলো।
বিড়ালটা লাফিয়ে নিচে নেমে চলে গেলো।
,
ধরফর করে উঠে বুক কাপছে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।বেড সাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে।মুখের সামনের ওড়না ভিজে ফেললো।
,
বড় বড় চোখ নিয়ে সামনে তাকিয়ে রইলো।
হৃদস্পন্দন দ্রুত বারছে।চোখের সামনে সব কিছু সাদা হয়ে আসছে।সাদার মাঝে সাদা অবয়ব দেখতে পেলো।সেটা ধীরে ধীরে ওর দিকে এগোচ্ছে,,,
,
,
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here