চেকমেট পর্ব ১+২

#চেকমেট
#পর্ব-১-২
#সাবিকুন_নাহার_নিপা

“আপনি কী সৌরভ আহমেদ চৌধুরী বলছেন?”

সৌরভ ঘুম ঘুম চোখে বলল, হু।

“আপনি কী সারা তাবাসসুম কে চিনেন?”

সৌরভের ঘুম ঘুম ভাব টা কেটে গেল। লাফিয়ে উঠে বসলো। ব্যস্ত গলায় জানতে চাইলো,
“কোন সারা তাবাসসুম? ”

“আপনি ক’জন সারা তাবাসসুম কে চিনেন? ”

সৌরভের কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পড়লো। সারা তাবাসসুম একজন ই, যার সাথে ওর ইউনিভার্সিটি তে পড়া অবস্থায় সম্পর্ক ছিলো। প্রেমের সম্পর্ক। তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। সারার বিয়ে হয়ে গেছে ইউনিভার্সিটিতে শেষ হবার আগেই।

সৌরভের কোনো সাড়া না পেয়ে ফোনের ওপাশে গম্ভীর পুরুষ কন্ঠটি বলল,

“আপনি কী শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো। ”

“জি বলুন।”

“সারা তাবাসসুম এর কললিস্টে আপনার নাম্বার পাওয়া গেছে। গত চৌদ্দদিনে আপনাদের মোট সতেরো মিনিট কথা হয়েছে।

সৌরভের মেরুদণ্ড বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। কপাল ভিজে উঠেছে ঘামে। শুকনো ঢোক গিলে ভয়ার্ত গলায় বলল,

“সারার কী হয়েছে?”

“রহস্য জনক ভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। তার হাজবেন্ড ও মারা গেছে। কিন্তু ছেলেটা বেঁচে আছে।

সৌরভ শুকনো ঢোক গিলল। কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। গমগমে পুরুষ কন্ঠটি বলল,

“আপনি এখনই একবার তেজগাঁও থানায় চলে আসুন। আপনার জন্য আরও চমক অপেক্ষা করে আছে”।

সৌরভ কোনোরকমে হ্যাঁ বলল।

ফোন রেখে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলল। গলা শুকিয়ে গেছে। বিছানার পাশের বেড টেবিল থেকে পানির বোতল টা নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নিলো।

সারা তাবাসসুম নাম টা একসময় জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তারপর হঠাৎই সারার বিয়ে, ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দেয়া সবকিছুর সাথে সাথে নাম আর মানুষ টা’ও গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। মাস দুয়েক আগে একদিন দেখা হয়েছিল প্রিয়ন্তি দের বাসার গ্রাউন্ড ফ্লোরে। একসময়ের উথাল পাথাল প্রেমিকাকে দেখে সৌরভ ধাক্কা খেলেও চটজলদি নিজেকে সামলে নিয়েছে। তারপর একদিন রাতে অপরিচিত নাম্বার থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বর পেয়েই কথা বলেছিল।

সৌরভ গোসল করতে সময় নিলো চারমিনিট তেতাল্লিশ সেকেন্ড। এতো তাড়াতাড়ি শেষ কবে গোসল করছে মনে পড়ছে না। গোসল সেড়ে ফ্রিজ থেকে নুডলসের বক্স ওভেনে দিয়ে চুলোয় পানি গরম করতে দিলো কফির জন্য।

নুডলস গরম হলে গপাগপ পেটে চালান দিয়ে কফি খেতে খেতে পত্রিকার পাতা উল্টালো। যেহেতু ওকে ফোন করেছে দশটা নাগাদ, সেই হিসেব অনুযায়ী লাশ আরও আগে পাওয়ার কথা।

খবরের কাগজে তেমন কিছু পাওয়া গেল না। কফি শেষ করে জামা, কাপড় পরে বাইরের উদ্দেশ্য রওনা হলো সৌরভ। যেতে যেতে হঠাৎই একটা প্রশ্ন মাথায় এলো, খবর টা কী প্রিয়ন্তির কানে অলরেডি চলে গেছে! প্রিয়ন্তি যদি সারা আর সৌরভের কথা জেনে থাকে তাহলে ওর রিয়াকশন কী হবে!

****

লাবণী সমানে সৌরভ কে ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু সৌরভ ফোন টা তুলছে না। আজ প্রিয়ন্তির জন্মদিন। দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করার কথা, হয়তো সেকথা বলার জন্যই ফোন করছে। সৌরভ ফোন টা কেটে দিলো। লাবণী প্রিয়ন্তির খালাতো বোন। দুজনেই একসাথে থাকে। লাবণী ইতিহাস নিয়ে পড়ছে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। আর প্রিয়ন্তি একটা মার্কেট রিসার্স কোম্পানির আইটি সেক্টরে কাজ করছে। দুজনেই ফ্ল্যাট নিয়ে একসাথে থাকে। সৌরভের বড় ভাইয়ের একমাত্র শালি প্রিয়ন্তি। সৌরভের ভাইয়ের ইচ্ছে সৌরভ প্রিয়ন্তিকে বিয়ে করুক৷ সৌরভের ও তেমন ইচ্ছে আছে মনে মনে। কিন্তু প্রিয়ন্তির সামনে ভাব করে থাকে যে ওকে একদম ই পছন্দ করে না।

সৌরভ লাবণীকে টেক্সট করলো,
“লাবু আমার আসতে একটু দেরি হবে। প্রিয়ন্তি কে বলবে যেন মাইন্ড না করে। ”

লাবণী এক মিনিটের মাথায় পাল্টা ম্যাসেজ দিলো,

“সৌরভ ভাইয়া প্রিয়ন আপুকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। নিচের ফ্ল্যাটের তুশির বাবা, মায়ের মার্ডার চার্জে।”

সৌরভের মাথায় যেন একটা ভাজ পড়লো। প্রিয়ন্তি কে এরেস্ট করেছে সারার মার্ডারের জন্য!

****

প্রিয়ন্তির আজ জন্মদিন ছিলো। অথচ ওর সকাল টা শুরু হয়েছে খারাপ ভাবে। ফোনটা’ও নিয়ে গেছে, কাউকে যে ফোন করবে সেই উপায়ও নেই। অবশ্য লাবণী হয়তো এতক্ষণে সবাইকে খবর দিয়েছে। সবাই বলতে কেবল সৌরভ ই। তাছাড়া খবর দেয়ার মতো কেউ নেই। এটা একটা ভরসার কথা। সৌরভ যদি খবর পায় তাহলে আর টেনশন নেই।

পুলিশ অফিসার বিশ্রী শব্দ করে চা খাচ্ছে। প্রিয়ন্তীর গা জ্বলে যাচ্ছে। শব্দটা খট করে গিয়ে মাথায় লাগছে। প্রিয়ন্তী শব্দটা এড়াতে কান চেপে ধরলো।

অফিসার খেয়াল করে ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলল,

“আপনার আশিক কে খবর দেয়া হইছে। সে আসতেছে। ”

প্রিয়ন্তি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সৌরভ আসলেই এই ঝামেলা থেকে রেহাই পাবে।

প্রিয়ন্তী কে নিশ্চিন্ত হতে দেখে পুলিশ অফিসার বলল, এতটা খুশি হওয়ার কারণ দেখছি না। প্রমাণ আপনার বিরুদ্ধে। স্পটে আপনার ওড়না পাওয়া গেছে।

প্রিয়ন্তী বিরক্ত গলায় বলল, আপনাকে কতবার বলব যে আমার ওই ওড়না টা দিন পনেরো আগে হারিয়ে গেছে।

পুলিশ অফিসার খ্যাঁক করে হেসে উঠে বলল, এসব কমন এক্সকিউজে কাজ হবে না ম্যাডাম। আপনার বিরুদ্ধে আরও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রিয়ন্তি কৌতূহলী হয়ে বলল, কী প্রমাণ?

অফিসার কোনো জবাব দিলো না। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কান চুলকাচ্ছে। প্রিয়ন্তি অনেক কষ্টে ধৈর্য্য ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সকালের ব্যাপার টা ভাবতেই বারবার মেজাজ টা বিগড়ে যাচ্ছে। সোসাইটির মানুষজনের সামনে যখন পুলিশ তুলে এনেছে তখন সবাই কতো বাজে কথা বলেছে। কতটা ফেস লস হলো!

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে প্রিয়ন্তি চোখ তুলে তাকালো। সৌরভ এসেছে। কয়েক সেকেন্ড দুজনের চোখাচোখি হলো। সৌরভের পাশে লাবণীও আছে। ভীত চোখে প্রিয়ন্তি কে দেখছে।

সৌরভ অফিসারের উদ্দেশ্য বলল,

“অফিসার আপনার কাছে প্রমাণ কী যে প্রিয়ন্তি ইসলাম ই এই কাজ টা করেছে। ”

অফিসার আগের ভঙ্গিতে কান চুলকাতে চুলকাতে বলল, প্রমাণ হলো ওনার ওড়না পাওয়া গেছে স্পটে। তাছাড়া সোসাইটির সবাই জানে যে ওনার সাথে ভিক্টিমের ঝামেলা ছিলো।

“ব্যস এতেই আপনি বুঝে গেলেন যে প্রিয়ন্তি খুন করে ফেলেছে। এতো নড়বড়ে মোটিভ?”

অফিসার আগের মতোই গা ছাড়া ভাব। দায়সারাভাবে জবাব দিচ্ছে। বলল,

“মোটিভ নড়বড়ে হবে কেন? মোটিভ বেশ শক্তই আছে। সারা তাবাসসুম আপনার প্রাক্তন ছিলো না? আপনার প্রাক্তন কে আপনার বর্তমান হিংসার বশবর্তী হয়ে সরিয়ে দিয়েছে। মোটিভ এবার শক্ত হলো না?”

প্রিয়ন্তি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে। নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।

সৌরভ মনে মনে সারাকে একটা গালি দিলো। এই মেয়ে যে কোনো একটা কান্ড করতে দ্বিতীয়বার সৌরভের জীবনে এসেছে তা ও বুঝেছিল। কিন্তু এভাবে প্রিয়ন্তিকে ফাঁসতে হবে সেটা বুঝতে পারে নি।

#পর্ব-২
সৌরভ এতক্ষন যার সাথে কথা বলছিল তিনি এই থানার দারোগা। অথচ হাবভাব এমন ছিলো যেন উনিই অফিসার গোছের কিছু। সৌরভ প্রথমে নরম ভাবে কথা বললেও শেষকালে নিজের খোলশে ফিরে এলো। গমগমে গলায় বলল,

“একটা ওড়না পেয়েছেন বলে আপনি ওনাকে এরেস্ট করে নিয়ে এসেছেন? এটা কোন লজিকে করেছেন আপনি? ”

জবাবে আগের মতোই দায়সারা উত্তর। বলল,

“এসব ক্রিমিনাল অনেকদিন ধরেই দেখে আসছি। তাই আমাদের চোখ ভুল করে না।”

প্রিয়ন্তি কিছু একটা বলতে যাবে তখনই সৌরভ বলল, ওহ আচ্ছা তাই বুঝি। আপনার মতো অভিজ্ঞ লোকের তো এখানে না, অন্য কোথাও থাকা উচিত। তা আপনি কোথায় যেতে চান বলুন? খাগড়াছড়ি নাকি বান্দরবান?

দারোগা সাহেব সৌরভের কথার টোনে ভরকে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই সৌরভ আই কার্ড বের করে দেখালো। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দারোগা বেলুনের মতো চুপসে গেল। আমতা আমতা করে বলল,
“না আসলে স্যার…..
সৌরভ হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি আপনার সঙ্গে আর কিছু বলব না। আমি কথা বলব এই থানার ওসির সাথে। ”

দারোগা সাহেবের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। এই কথার পর তার বয়স যেন আরও দশ বছর বেড়ে গেল। শুকনো মুখে বলতে চাইলো, স্যার দয়া করে বউ বাচ্চাসমেত ওই মুল্লুকে পাঠাবেন না। কিন্তু সেটা বলতে পারলো না।

***
সৌরভ প্রিয়ন্তি আর লাবণীকে নিয়ে যখন বের হলো তখন প্রায় আড়াই টা বাজে। বাইরে রোদের তাপমাত্রাও বেশী। চোখে লাগলে চোখ কড়কড় করে।

সৌরভ প্রিয়ন্তির দিকটা তাকিয়ে বলল,
“প্রিয়ন্তি তুমি হয়তো না খেয়ে আছ। চলো কিছু একটা খেয়ে নেয়া যাক। ”

প্রিয়ন্তি চোখমুখ শক্ত করে লাবণীর দিকে তাকিয়ে বলল, লাবু আমি বাসায় যাব এখন।

সৌরভ আর কিছু বলল না। আরও কয়েকদফা ঝাল সহ্য করার জন্য রেডি হয়ে রইলো মনে মনে।

বার্গারে কামড় বসিয়ে সৌরভ বলল,
“লাবু এবার সব টা বলো তো কী হয়েছে।”

লাবণী একটু কোক খেয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিলো। প্রিয়ন্তি কিছুই ছুঁয়ে দেখলো না। শুধু পানি খেয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা রেখে বসে আছে। বেচারির উপর দিয়ে বড়সড় একটা ঝামেলা গেল।

লাবণী বলল,
ভোরবেলা প্রিয়ন দরজায় অনেক জোরে শব্দ পেয়েছে। তখন আযান হয়ে গেছে। সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন করেও কোনো রেসপন্স পায়নি। আপু দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। তখনই দরজার সামনে সারা আপুর ছেলেটাকে দেখতে পেল।

সৌরভ জিজ্ঞেস করলো, সারার কী একটাই ছেলে?

“হ্যাঁ। তুশল। ”

প্রিয়ন্তি চোখ খুলে সৌরভের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার বুঝি অজানা ছিলো! বাহ!

সৌরভ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই তো কেবল শুরু, আরও কতো গঞ্জনা যে সইতে হবে!

লাবণী আবারও বলতে শুরু করলো।

“তুশি কে দেখে মনে হলো কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে। ওদের ঘরের দরজা খোলা। আপু ওকে নিয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখলো ওর বাবা, মা মানে সারা আপু আর তার হাজবেন্ড দুজনেই ফ্লোরে রক্তাক্ত অবস্থায় শুয়ে আছে। আপু চিৎকার করলো। সেই চিৎকার শুনেই সবাই ছুটে এসেছিল। তারপর পুলিশ, তুশির দাদাবাড়ি, নানাবাড়ি সব জায়গার লোকজনকে খবর দেয়া হলো।

সৌরভ পানির বোতল থেকে এক চুমুক পানি খেল গলা ভেজানোর জন্য। তখনই মোবাইলে রিং হলো। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে দারোগা সাহেব বললেন,

“স্যার আমার কথাটা শুনুন একটু। আসলে অনেক ক্রাইম শো তে দেখা যায় যে খুনীর দিকে যেন সন্দেহের তীর না আসে তাই খুন করে লোকজন কে ডাকে। আমিও সেটাই ভেবেছিলাম। ”

“লাশ কী সুরতহাল এর জন্য পাঠানো হয়েছে?”

“জি স্যার।”

“আপনি এক কাজ করুন, একজন কনস্টেবল কে পাঠিয়ে দিন। ভিক্টিম যে জায়গায় খুন হয়েছে সে জায়গাটা একবার দেখে আসি। ”

“স্যার আপনি কী এই কেস টা” ….

“যেহেতু আমি এই কেসটায় জড়িয়ে গেছি সেহেতু ব্যাপার টা একটু দেখা প্রয়োজন ফরিদ সাহেব। ”

দারোগা সাহেবের নাম ফরিদ-উর রহমান। ফরিদ সাহেব নরম গলায় বলল, স্যার আমার ব্যাপার টা…

সৌরভ বলল, ওসি সাহেবের সাথে কথা হয়েছে। উনি দুই একদিন পর ছুটি কাটিয়ে আসবেন।

কথাটা শেষ করে সৌরভ ফোন টা কেটে দিলো। গাড়ি ততক্ষণে নাখালপাড়া পৌছে গেছে। সৌরভ লাবণীকে বলল, প্রিয়ন্তিকে নিয়ে ফ্ল্যাটে যেতে। ও বেচারি এমনিতেই অনেক আপসেট হয়ে আছে।

প্রিয়ন্তিদের ফ্ল্যাট আর সারাদের ফ্ল্যাট একই ফ্লোরে। ফার্স্ট ফ্লোরে। প্রিয়ন্তিদের ফ্ল্যাট টু এ তে, আর সারাদের ফ্ল্যাট টা টু বি তে। কাছাকাছি দুটোই। সৌরভ অপেক্ষা করলো কনস্টেবল আসা অবধি। এই সময় টা’কে কাজে লাগানোর জন্য সিকিউরিটি গার্ডের সাথে কথা বলল। কিন্তু তেমন কিছু পেল না কারন উনি ডে শিফটে থাকে। নাইট শিফটে অন্য একজন।

ফ্ল্যাটের সামনে যেতেই লাবণীর সঙ্গে দেখা। লাবণী বলল,
“ভাইয়া আমিও একটু তোমার সাথে ভিতরে যেতে চাই।”

“প্রিয়ন্তি? ”

“স্লিপিং পিল খেয়ে শুয়েছে।”

“কিছু খেয়েছে? ”

“ওষুধ খাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে খেয়েছে। ”

সৌরভ আর কিছু জানতে চাইলো না। প্রিয়ন্তি এমনিতে শক্ত ধাচের, তবুও ব্যাপার টা ওর জন্য শকিং। হাউজিং এ ঢোকার সময়ও কয়েকজন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েছিল।

***
২৪ শ’ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট। বেশ বড় ড্রইং, ডাইনিং। ডায়নিং টেবিলে আধ খাওয়া খাবারের প্লেট। সৌরভ লাবণীকে জিজ্ঞেস করলো,

“বডি কোথায় পাওয়া গেছে?”

লাবণী আঙুল উঁচিয়ে ডায়নিং টেবিল থেকে খানিক দূরে দেখিয়ে দিলো। সৌরভ কনস্টেবল কে নির্দেশ দিলো খাবার টা পরীক্ষা করতে পাঠাতে।

ডায়নিং থেকে হেটে গেল মাস্টার বেডরুমের দিকে। বেডরুম একদম টিপটপ সাজানো। বাকী দুটো রুম ও তেমন।

এবার দুজন গেল রান্নাঘরের দিকে। রান্নাঘরের ঝুড়িতে দুটো ডিমের খোসা আর কিছু আলুর খোসা ফেলে রাখা। গ্যাসের উপর ফ্রাই প্যান। সৌরভ রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে বাথরুমের দিকে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বেরিয়ে এসে বলল,

“চলো লাবণী। আর কিছু দেখার নেই। ”

লাবণী অবাক হলো। এইটুকু সময়ে সব দেখে ফেলল!

ঘরে ফিরে লাবণী সৌরভ কে বলল,

“কী বুঝলে ভাইয়া?”

সৌরভ হেসে বলল, তার আগে বলো, তুমি কিছু বুঝতে পেরেছ কি না?

“খাবারে বিষ ছিলো? ”

“আর?”

লাবণী অধৈর্য্য হয়ে বলল, ভাইয়া প্লিজ বলো না।

সৌরভ বলল, কেস টা খুব জটিল লাবণী। যে খুন করেছে সে ওদের পরিচিত কেউ। এবং সে খুব ই স্মার্ট।

“কী করে বুঝলে?”

“পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসলে শিওর হয়ে বলতে পারব”।

লাবণী অনুনয় করে বলল, ভাইয়া প্লিজ এখন একটু বলো না কী আন্দাজ করতে পারলে?

“খুন করা হয়েছে খুব সম্ভবত ছুড়ি দিয়ে। অথচ মেঝেতে রক্ত থাকলেও দেয়ালে এক ফোটা রক্ত নেই। সেটা কেন!

“কেন?”

সৌরভ সেটার জবাব না দিয়ে বলল, তুশি কী কিছু বলেছে?”

“ও তো কথা বলতে পারে না। ”

সৌরভ বিস্মিত হলো। বলল,
“কী বলছ! ”

“হ্যাঁ। ”

“ও তোমার স্টুডেন্ট ছিলো না?”

“হ্যাঁ আগে আঁকা শেখাতাম। ”

সৌরভ কিছু একটা ভাবলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“লাবু প্রিয়ন্তির আপডেট দিও। আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বুঝেশুনে জবাব দিও। আর আমাকে প্রতি ঘন্টায় আপডেট জানাবে কিন্তু। ”

“ওকে। কিন্তু তোমার অন্য নাম্বার টা’ও দিয়ে যাও। অফিশিয়াল ফোন টা তো প্রায় ই বিজি থাকে। ”

লাবণীকে নাম্বার দিতে গিয়ে সৌরভের মনে পড়ে গেল যে নতুন সিম টা রিসেন্ট নেয়া হইছে। এই নাম্বার টা এখনো বাইরের কেউ জানে না। অথচ সারা এই নাম্বারে ফোন করেছিল। কীভাবে সম্ভব!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here