চেকমেট পর্ব ৩

#চেকমেট
#পর্ব-৩
প্রিয়ন্তিদের বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে সৌরভ টং দোকানে বসে দু’কাপ কড়া লিকারের চা খেল। মাথার মধ্যে ঝট পাকিয়ে গেছে। কিছু প্রশ্ন ঘুরছে মাথার মধ্যে। ফোন বের করে দারোগা সাহেব কে ফোন করলো।

দারোগা সাহেব ফোনের ওপাশে বেশ কোমল গলায় বলল,
“হ্যাঁ স্যার।”

“আপনার কাছে ভিক্টিমদের মোবাইল গুলো আছে? ”

“স্যার শুধু একজনের টা আছে।”

সৌরভের ভ্রু কুঁচকে গেল। শুধু সারার ফোন টা আছে, অথচ অন্য ফোন টা নেই। বলল,

“আচ্ছা ফোন টা তো পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড, তাই না? তাহলে এতো কম সময়ে….

দারোগা সাহেব কথা শেষ করতে দিলেন না। বললেন, স্যার ফোনে স্ট্রং পাসওয়ার্ড ছিলো না। যে কেউ লক খুলতে পারবে।

সৌরভের কাছে ব্যাপার টা কেমন যেন একটু অদ্ভুত ঠেকলো। বলল,
“আচ্ছা ওই ফোন টা এখনো আপনার কাছে আছে তো?”

“হ্যাঁ স্যার।”

“ফোনটা আমার লাগবে। ”

“স্যার পাঠিয়ে দেব কি?”

“না। কাল যখন আসব তখন দেখব।”

“স্যার একটা ইম্পরট্যান্ট কথা বাদ পড়ে গেছে। ”

“বলুন।”

“সারা তাবাসসুম কিন্তু প্রিয়ন্তি ম্যাডামের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছিল। ”

সৌরভ অবাক হলো। এই বিষয় টা ওর জানা নেই। প্রিয়ন্তির সাথে টুকটাক কথাবার্তা যা হয়, তাতে কখনো বলেনি যে ওর সাথে সারার ঝামেলা হয়েছিল।

সৌরভ ফোন রেখে কিছু একটা ভাবলো। তারপর আবারও দারোগা সাহেব কে ফোন করলো। বলল,

“ভিক্টিমের ফ্যামিলিদের ডিটেইলস টা পাঠাবেন। ”

দারোগা সাহেব সম্মতি জানিয়ে ফোন রাখলেন।

সৌরভ ঘড়ির দিকে তাকালো। ছয়টা বাজতে চলল। সারার পরিবারের সঙ্গে আজকে দেখা করা উচিত হবে না। প্রাথমিক শোক টা কাটিয়ে নেবার সময় দেয়া উচিত অন্তত। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসা অবধি কিছু করা সম্ভব না।

****

ঘরে ফিরতে সৌরভের আজ অনেক দেরি হয়ে গেল। সারাদিনের ছোটাছুটি আর প্রায় অভুক্ত অবস্থায় থাকার দরুন বাইরের পোশাক না ছেড়েই খেতে বসলো। রান্নার লোক রোজ রান্নাবান্না করে ফ্রিজে রেখে যায়। সৌরভ খাওয়ার সময় শুধু সেটা গরম করে নেয় ওভেনে। আজ খাবার গরম করার সময়টুকুও নিলো না, ফ্রিজ থেকে বের করে প্লেটে নিতে নিতেই খেতে শুরু করলো। খাওয়া দাওয়া শেষে প্রিয়ন্তি আর লাবণীর কথা মনে পড়লো। ফোন টা হাতে নিয়ে লাবণীর নাম্বারে ডায়াল করলো।

“হ্যালো লাবু কী অবস্থা?”

লাবনী ফিসফিস করে বলল, বাসায় বাবা মা এসেছে।

“আচ্ছা। আর প্রিয়ন্তি কী এখনো আপসেট?”

“হ্যাঁ খাওয়া দাওয়া তেমন করে নি। মা একটু জোর করে খাইয়েছে।”

সৌরভের মন টা খারাপ হয়ে গেল। প্রিয়ন্তি এমনিতে স্মার্ট, চটপটে ধরনের। কিন্তু এই ধাক্কাটা সামলাতে হয়তো সময় লাগবে।
সৌরভ কে চুপ করে থাকতে দেখে লাবণী বলল,

“ভাইয়া আছ?”

“হ্যাঁ বল। ”

“একটা রিকোয়েস্ট আছে। প্লিজ প্লিজ না করতে পারবে না।”

সৌরভ মৃদু হেসে বলল, আমার এসিট্যান্ট হতে চাইছ?

“হ্যাঁ প্লিজ। তাছাড়া তোমার এসিট্যান্ট তো আপাতত নেই।”

“কিন্তু তোমার জন্য ব্যাপার টা রিস্কি হয়ে যাবে লাবু। ”

লাবণী অনুনয় করে বলল, ভাইয়া প্লিজ। তাছাড়া আমি তো সারা তাবাসসুম সম্পর্কে জানি। আমি তোমাকে হেল্প করতে পারব।

সৌরভ হেসে বলল, খুব চালাক না!

“ভাইয়া প্লিজ।”

“আচ্ছা দেখছি। ”

“কাল তাহলে তোমার সাথে যাচ্ছি। ”

সৌরভ হেসে বলল, আমি তোমাকে টেক্সট করে টাইম টা জানিয়ে দেব।

লাবণী বিশ্বজয়ী হাসি দিয়ে ফোন টা রাখলো। কখন সকাল হবে এই উত্তেজনায় হয়তো ঘুম ই হবে না।

লাবণীর সাথে কথা শেষ করে এক মগ আগুন গরম কফি নিয়ে সৌরভ স্টাডি টেবিলে বসলো। পর পর ঘটনাগুলোকে মেলানোর চেষ্টা করছে। অনেক গুলো খটকা আছে এই কেসে।

প্রথম খটকা, সারা কিভাবে ওই নাম্বার টা কালেক্ট করেছে? কাছের মানুষজন ছাড়া ওই নাম্বার কেউ জানেনা। সিম টা যেহেতু নতুন নেয়া হয়েছে তাই ইউনিভার্সিটির কমন ফ্রেন্ডরাও এখনো পায় নি। তাছাড়া সৌরভের জানামতে, সারার কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই।

দ্বিতীয় খটকা, সারা আর প্রিয়ন্তির ঝগড়া একটা তুচ্ছ ঘটনা কে কেন্দ্র করে। এরকম ঘটনা আরও অনেকের সাথে ঘটেছে। সিকিউরিটি গার্ডের কাছ থেকে জেনেছে যে সারার আচরন খুব খারাপ ছিলো। একটু বেশী সময় ধরে তাকিয়েছিল বলে বাপের বয়সী লোক কে থাপ্পড় মেরেছিল। এমনকি নিচের ফ্ল্যাটের ভদ্রমহিলাও বলেছে যে তার বাচ্চার সাথে খেলতে গিয়ে সারার ছেলে ব্যথা পেলে তারজন্যও নাকি অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। তাহলে ধরেই নেয়া যায় যে মোটামুটি সবার সাথেই তার শত্রুতা।

তৃতীয় খটকা, প্রতিটি ফ্লোরের সিসিটিভি ফুটেজ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা হয়েছে। সারাদের ফ্ল্যাটে লাস্ট ঢুকেছিল ওর হাজবেন্ড। তাও আগেরদিন সন্ধ্যেবেলা। তারপর আর কেউ আসেনি, যায়ও নি। তাহলে ব্যাপার টা কখন ঘটলো!

চার নম্বর খটকা হলো, সারার বাসার দেয়ালের ছবিগুলো। পুরো দেয়ালভর্তি শুধু ওর আর বাচ্চার ছবি। পুরো ঘরে একটা ছবিতেও বাচ্চার বাবা নেই।

এই খটকাগুলো আপাতত সৌরভের চোখে পড়েছে। খুঁজলে হয়তো আরও লিস্ট বাড়বে। সৌরভ আর কিছু ভাবতে চায় না। একটা ভালো ঘুম দরকার তাই বিছানায় শুয়ে পড়লো।

বিছানায় শু’তেই প্রিয়ন্তীর কথা মনে পড়লো। খুব ইচ্ছে হচ্ছে ওর সাথে এখন একটু কথা বলতে। এই ইচ্ছেটা প্রায় রাতেই ঘুমাতে যাবার আগে হয়। এটা ওটার বাহানায় মাঝেমধ্যে ফোন ও দেয়। কিন্তু আজ সেটা সম্ভব না। হাত বাড়িয়ে বেড টেবিল থেকে ফোন টা নিয়ে রেকর্ডিং ফোল্ডারে ঢুকলো। কল রেকর্ড অন করার সুবিধার কারনে ইচ্ছেটা পূর্ন হলো। হঠাৎ ই সৌরভের খেয়াল হলো। সারার রেকর্ডিং গুলোও তো আছে!

চলবে….
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here