#চেকমেট
#পর্ব-৪
যথারীতি পরদিন সকালে সৌরভ থানায় গেল। ওসি তখনও এসে পৌছায় নি, তবে দারোগা সাহেব ছিলেন। সারার মোবাইল টা হাতে আসার পর সৌরভ মোবাইল টা ঘেটে দেখলো কিছু সময়। তেমন কিছু পেল না, কয়েকটা কন্টাক্ট নাম্বার ছাড়া। থানায় বেশী সময় থাকলো না। সারার ফ্যামিলির ডিটেইলস টা নিয়ে বেরিয়ে গেল। লাবণীকে কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে এসে অপেক্ষা করতে বলেছে। সেখান থেকে দুজন একসাথে যাবে। তাছাড়া লাবণীর থেকেও কিছু ইনফরমেশন জানার দরকার আছে।
লাবণীকে সেজেগুজে বের হতে দেখে প্রিয়ন্তি সন্দিহান গলায় বলল,
“কোথায় যাচ্ছিস লাবু?”
লাবণী শুকনো গলায় বলল, একটু কাজ আছে আপু।
“আচ্ছা। তা কখন ফিরছ?”
“ফিরতে একটু দেরি হবে।”
“নিশ্চয়ই ব্যোমকেশের অজিত হতে যাচ্ছ। ”
প্রিয়ন্তির স্বাভাবিক কথা বলার ধরনে লাবণী হেসে বলল, প্লিজ তুমি রাগ করো না।
প্রিয়ন্তি আর কিছু বলল না। লাবণী বেরিয়ে এলো।
লাবণী হেটে বড় রাস্তা অবধি আসতে না আসতেই প্রিয়ন্তি ফোন করলো। বলল, লাবু আমিও যাব তোমার সাথে। একটু ওয়েট করো।
****
রেস্টুরেন্টে ঢুকে সৌরভের চক্ষু চড়কগাছ। লাবণীর সাথে প্রিয়ন্তিও আছে। প্রিয়ন্তি কে দেখে মনে হলো এখন বেশ স্বাভাবিক। অবশ্য সেটা বুঝতে সুবিধা হলো সাজগোজের কারনে। প্রিয়ন্তি সবসময় সেজেগুজে থাকে। এমনকি বাসায় থাকা অবস্থায়ও দেখে মনে হয় কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে।
সৌরভ প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আর ইউ ওকে?”
প্রিয়ন্তি দায়সারা উত্তর দিলো, ইয়েস আই এ্যাম এবস্যুলেটলি ফাইন।
সৌরভ খাবার অর্ডার করলো। প্রিয়ন্তির সামনে কেসের ব্যাপারে কথা বলা ঠিক হবে না ভেবে চুপ করে রইলো। কিছু সময় বাদে প্রিয়ন্তি নিজেই বলল,
“আমি এখানে আছি বলে কী তোমরা হেজিটেড ফিল করছ? একচুয়েলি আমি যেহেতু এই কেসটায় ইনভলব হয়ে গেছি, আই মিন আমাকে জড়ানো হয়েছে সেহেতু মনে হলো আমাকে তোমাদের দরকার হতে পারে।
সৌরভ খুশি খুশি গলায় বলল, ভেরি গুড। আমারও মনে হয় তোমার সাহায্য পেলে সুবিধা হবে। ইনফ্যাক্ট সারা তাবাসসুম সম্পর্কে তুমি আর লাবণী ভালো ধারণা দিতে পারবে।
প্রিয়ন্তি খোঁচা মেরে বলল, আমার তো মনে হয় আমাদের চেয়ে তুমি বেশ ভালোভাবে ওই ভদ্রমহিলা কে চিনো।
সৌরভ এই কথার জবাবে কিছু বলল না, কিন্তু লাবণী ঠোঁট টিপে একটু হাসলো।
গাড়িতে বসে সৌরভ প্রিয়ন্তির উদ্দেশ্যে বলল,
“প্রিয়ন্তি তুমি এখন থানায় যাবে। তোমার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করা হবে। যেহেতু প্রথম আই উইটনেস তুমি তাই তোমার স্টেটমেন্ট লাগবে। ”
প্রিয়ন্তি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।
প্রিয়ন্তি কে থানার সামনে নামিয়ে দিয়ে সৌরভ লাবণীকে নিয়ে মালিবাগের দিকে যেতে লাগলো।
মগবাজারের বিশাল জ্যামে বসে লাবণী বলল,
“ভাইয়া তোমার কী মনে হয়?”
“কোন ব্যাপারে?”
“প্রিয়ন আপু হঠাৎ তোমাকে হেল্প করতে চাইলো কেন?”
সৌরভ ঠোঁট উল্টে বলল, আই ডোন্ট নো।
লাবণী একটু ভেবে বলল, আই থিংক আপু তোমার প্রেমে পড়েছে।
সৌরভ হেসে ফেলল। বলল,
“এই বুদ্ধি নিয়ে তোপসে হওয়া যাবে না। তোমার বোন নিজের স্বার্থেই ইন্টারেস্ট দেখিয়েছে। এবার বলো তোমার বাবা মায়ের কী খবর?
লাবণী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আর বোলোনা, সকালে যেই দেখলো আপু ঠিকঠাক অমনি দুজন মিলে ঢাকা শহর চষতে বেরিয়ে গেছে।
সৌরভ হাসলো। লাবণী নিজেও হেসে দিলো।
****
সৌরভ আর লাবণী যে বাড়িটায় এসেছে সেটা মালিবাগ বাজারের শেষ মাথার শেষ বাড়িটা। কিছুটা নিরিবিলি বাড়ি বলা যায়। বাড়িটা পুরোনো আমলের। সিড়িগুলো রেলিংবিহীন ছোট। সিড়ি বেয়ে ওঠার সময় লাবণীর বেশ ভয় লাগল।
কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলল এক ভদ্রমহিলা। খড়খড়ে গলায় বলল,
“কাকে চাই?”
সৌরভ বলল, আমি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে এসেছি। সারা তাবাসসুম এর কেস ইনভেস্টিগেট করছি।
ভদ্রমহিলার চেহারা দেখে মনে হলো বেশ বিরক্ত। নির্লিপ্ত গলায় বলল,
“আসুন। ”
সৌরভ বসতে বসতে বলল, আপনাদের বাড়িতে কে কে আছে? সবার সাথেই কথা বলতে হবে।
ভদ্রমহিলা কোনো জবাব না দিয়ে ভিতরে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর এক ভদ্রলোক এলেন। বয়স পয়ত্রিশ, চল্লিশের মতো হবে। ভদ্রলোকের কপাল কুচকানো। স্বাভাবিক ভাবে দেখেই মনে হচ্ছে উনিও বিরক্ত।
সৌরভ কিছু বলার আগেই ভদ্রলোক অনুনয় করে বলল,
“অফিসার আগেই একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করে নেই। আমাদের সাথে সারার সম্পর্ক কেবল নামকেওয়াস্তে ছিলো। তাই ওর জীবন যাপন, শত্রু, মিত্র কারও ব্যাপারেই আমরা আমি কিছু বলতে পারছি না। ”
“ওহ আচ্ছা। সেজন্যেই বুঝি খুব একটা শোক তাপ নেই আপনাদের। ”
“কষ্ট যে হচ্ছে না, তা না। তবে হাত, পা ছড়িয়ে কান্নাকাটি করতে হবে এমন অবস্থা হয় নি।”
“আপনাদের বাসায় কে কে আছে?”
“আমার স্ত্রী, ছেলে আর মেয়ে। ”
“আপনার মা, বাবা?”
“বাবা বেঁচে নেই। মা আছেন, উনি আমার ছোট বোন নীরার সাথে থাকেন।”
“তারা কোথায় থাকেন?”
“নুরজাহান রোডে আমার মায়ের ফ্ল্যাট আছে সেখানে থাকে। ”
“সারার ছেলেটাও কী ওখানেই আছে এখন?”
“জি।”
“সারার সাথে আপনার সমস্যা কী নিয়ে ছিলো? ”
ভদ্রলোক বিরক্ত গলায় বলল, সারা নিজেই একটা সমস্যা ছিলো। সবসময় ই ক্যাচাল করার স্বভাব। বাবা মারা যাবার পর সম্পত্তি ভাগ করে নিজের টা নিয়ে ভেগেছিল তবুও বলছে আমরা ওকে ঠকিয়েছি।”
“ভেগেছিল মানে?”
“মানে চলে গিয়েছিল।”
“কোথায় চলে গিয়েছিল?”
“অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল।”
“ফিরে এসেছিল কেন?”
“জানিনা। স্বামীসহ ফিরে এসেছিল। এসে দাবি করলো তাকে সম্পত্তির ভাগ হিসেবমতো দেয়া হয় নি। আমি আর নীরা টাকাটা কাজে লাগিয়ে বাড়িয়েছিলাম সেটা দেখে বলছে যে আমরা বেশী নিয়েছি। ”
“তারপর? ”
“তারপর আর কী। এই নিয়ে মামলা মোকদ্দমা করেছিল বটে কিন্তু কিছু করতে পারে নি। পারবে কী করে! মা তো ছিলো সব ভাগ বাটোয়ারা করার সময়ে। ”
“মামলা মোকদ্দমার পর ই কী আপনাদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে?”
“হ্যাঁ। আমার বাসায় টোট্যালি ওর এন্ট্রি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে মায়ের কাছে যাতায়াত ছিলো। ”
“আচ্ছা। আপনার স্ত্রী কে একবার ডাকুন তো, ওনার সাথে একটু কথা বলি। ”
“আমি যা বলেছি এর থেকে বেশী কিছু আর বলবে না। ”
“তবুও ডাকুন ওনাকে।”
ভদ্রলোক ভিতরে যেতেই সৌরভ লাবণীকে বলল, কী বুঝলে?
“ভদ্রলোক আর ওনার স্ত্রী পুরো আনসোশ্যাল। ”
“কীভাবে? ”
“আমরা এতক্ষন বসে আছি অথচ চা, কফি কিছু অর্ডার করলো না!”
সৌরভ হেসে ফেলল। ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠলো।
দারোগা সাহেব ফোন করেছে। এইমাত্র থানায় এক মহিলা এসে আকাশ, পাতাল কান্না জুড়ে দিয়েছে। বলছে সারা তাবাসসুম এর স্বামী জাহাঙ্গীর কবির নাকি তার স্বামী।
ফোন রেখে সৌরভ সারার ভাইকে জিজ্ঞেস করলো,
“সারার কী এটা দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো? ”
“না তো।”
“তাহলে সারার হাজবেন্ডের কী আগে বিয়ে ছিলো? ”
“না। সারাকে তো দেখেশুনে বাবা বিয়ে দিয়েছিল। ”
সৌরভের মনে হলো কেস টা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
চলবে….