চেনা রোদে বসন্ত পর্ব -০৪

#চেনা_রোদে_বসন্ত
#পর্ব_৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

“এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড? দুই বছর সম্পর্কের পর আমরা বিয়ে করেছি মানে? কী বলতে চাইছেন আপনি? বিয়ের আগে তো আমাদের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না! আমাদের তো এরেঞ্জ ম্যারেজ ছিল!”

সঙ্গে সঙ্গেই তরুন অতিরিক্ত চটে বসলেন! নমনীয় কন্ঠনালীতে টইটম্বুর জেদ ফুটিয়ে উচ্চ আওয়াজে বললেন,,

“এই পাগল হয়ে গেছ তুমি হ্যাঁ? পাগল হয়ে গেছ? ভুলে গেছ? সেই দুই বছর আগেও আমরা প্রেমিক/প্রেমিকা ছিলাম। অনেক সংগ্রামের পর আমরা এক হয়েছি! দুই পরিবারের সবাইকে বিয়েতে রাজি করিয়েছি! এখন তো মনে হচ্ছে তুমিই আমার সাথে অভিনয় করছ! প্রতারণা করছ তুমি আমার সাথে! আমাকে বাড়ির সবার চোখে খারাপ এবং হীন প্রমাণ করার চেষ্টা করছ!”

হতভম্ব আমি! নিস্তব্ধ, নির্বিকার, নির্লিপ্ত! কী বলছেন কী এসব তিনি? তাঁর সাথে আমার দীর্ঘ দুই বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল মানে? অনেক সংগ্রামের পর আমরা বিয়ে করেছি মানে? ওহ্ আল্লাহ্! কী হচ্ছে কী এসব? এসবের কিছুই তো আমার মাথায় ঢুকছে না! লোকটি নিজেও তো পাগল হচ্ছে হচ্ছেই সাথে আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়ছে! ইতোমধ্যেই তরুনের তেজী কন্ঠস্বর আমার অপ্রতুল ভাবনা চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটাল! উচ্চ আওয়াজে চিৎকার করে তিনি পুনরায় শুধালেন,,

“কী হলো? এখন কথা বলছ না কেন হুম? কথা বলছ না কেন? আমাকে সবার চোখে খারাপ প্রমাণ করতে চাইছ তুমি তাই তো? কী ভেবেছ তুমি? সবার চোখে খারাপ প্রমাণ করলেই আমি তোমাকে ছেড়ে দিব? এতো সহজ আমার থেকে মুক্তি পাওয়া? আমার বাচ্চাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া? ঐ রাফায়াত না টাফায়াত তার সাথে তুমি নতুন করে সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখছ না তো তুমি? তাকে বিয়ে করতে চাইছ তুমি?”

আর নয়! এই পর্যায়ে এসে লোকটিকে আর একরত্তি সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না আমার পক্ষে! সব ঠিক ছিল তবে মাঝখান থেকে লোকটি রাফায়াত ভাইয়ার বিষয়টি টেন এনেই আমাকে অত্যধিক রাগিয়ে দিল! শ্রদ্ধা করি আমি রাফায়াত ভাইকে। যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই সম্মান করি। অতীতে উনার প্রতি আমার যেই সুখকর অনুভূতি গুলো কাজ করত? এখন আর সেই অনুভূতি গুলো কাজ করে না! এখন আমি বিবাহিতা। তরুনের সন্তান আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে। সেই জায়গা থেকে তরুনের একদমই ঠিক হয় নি আমাদের সাংসারিক সমস্যার মধ্যখানে নির্দোষ রাফায়াত ভাইকে অযথা টেনে আনা! জবান এবার খুলতে হবেই আমার। তরুনকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে তবেই মনকে শান্ত করতে হবে আমার! ভাবনা চিন্তা ভেঙে আমি অশান্ত দৃষ্টিতে ক্রোধ জড় করলাম! রূঢ় গলায় প্রত্যত্তুরে বললাম,,

“মুখ সামলে কথা বলুন তরুন। এবার কিন্তু আপনি আপনার সীমা লংঘন করছেন! কতটুকু জানেন আপনি আমার সম্বন্ধে হ্যাঁ? আমার রাফায়াত ভাই সম্বন্ধে? আমরা দুজনই দুজনের বিবেকের কাছে যথেষ্ট স্বচ্ছ! আমাদের মধ্যে এমন কোনো রসালো সম্পর্ক তৈরী হয়ে উঠে নি যে আপনি আমাদের মাঝখানে অকারনে রাফায়াত ভাইকে টেনে হেছড়ে আনবেন! এখন আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনার কুরুচিপূর্ণ ব্যবহারের জন্যই রাফায়াত ভাই বাধ্য হয়েছিলেন আপনার সাথে রূঢ় আচরণ করতে! গলা উঁচিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে। আপনি নিজের দোষেই নিজের সম্মান হারিয়েছেন! বাড়ির সকলের সামনে আপনার নিচ মন মানসিকতার জন্যই আপনি সকলের চোখে খারাপ হয়েছেন। স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলেই এখন আপনি আমার রাফায়াত ভাই সম্বন্ধে যা নয় তাই বলছেন! আপনার সাথে ছলনার আশ্রয় নেওয়া তো দূর আপনার সাথে এখন সংসার করাই আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাগল হয়ে গেছেন আপনি বুঝেছেন? ম্যান্টালি সিক আপনি!”

রাগে ফোঁস করে উঠলেন তরুন। ঠিক বিষধর জংলী সাপেদের ন্যায়! আমার কথা সম্পূর্ণ শেষ হতেই তরুন হিংস্র বাঘের ন্যায় আর্তনাদ করে কিছু বলার পূর্বেই আমি ঠাস করে কলটি কেটে দিলাম! এর মধ্যেই হঠাৎ রাফায়াত ভাই খাবারের থালা হাতে নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। রাফায়াত ভাইকে দেখা মাত্রই আমি হেচকি তুললাম! বিছানার চাঁদর খামচে ধরে ডুকরে কেঁদে বললাম,,

“তরুন পাগল হয়ে গেছে রাফায়াত ভাই! আমার মন বলছে তরুন পাগল হয়ে গেছে! তাই যা তা ব্যবহার করছে আমার সাথে। আগে কখনও তরুন আমার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করে নি রাফায়াত ভাই! তরুন সত্যিই পাগল হয়ে গেছে!”

মুহূর্তের মধ্যেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন রাফায়াত ভাই। ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে তিনি খাবারের থালাটি ডেস্কের উপর রেখে তড়িৎ বেগে আমার পাশে এসে বসলেন! অস্থির চক্ষু জোড়ায় তিনি অপার শঙ্কা নিয়ে ভগ্ন গলায় শুধালেন,,

“কী হয়েছে? তরুন আবারও তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?”

হেচকি তুলে কেঁদে উঠলাম আমি! মাথা নুইয়ে কান্নাজড়িত গলায় বললাম,,

“হ্যাঁ রাফায়াত ভাই। তরুন আবারও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। আবারও নিজের নিচ মন-মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে! যা নয় তা বলেই চলছে! আর সহ্য হচ্ছে না এসব আমার। তিতা তিক্ত হয়ে উঠেছি।”

রাফায়াত ভাই দ্বিগুন চিন্তিত হয়ে উঠলেন। আমার মুখের দিকে খানিক ঝুঁকে এসে তিনি শান্তনা সূচক গলায় বললেন,,

“শান্ত হ তুই। প্লিজ শান্ত হ। এভাবে কান্নাকাটি করলে সমস্যা কখনও সমাধান হবে না। আই থিংক তরুন মানসিকভাবে কোনো কারনে পেরেশানিতে ভুগছে! অফিসের কাজ কর্ম নিয়ে হয়তো ফাস্ট্রেটেড হয়ে আছে। মাঝে মাঝে এমন হয়। মানসিক অবসন্নতায় ভুগলে এমন বিধ্বস্ত অবস্থা হয়। তুই বিষয়টিকে এতো জটিল ভাবে না দেখে স্বাভাবিক ভাবেও ভেবে নিতে পারিস! কিছুদিন সময় দে নিজেদের। দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। সংসার জীবনে এমন অনেক টুকটাক মনোমালিন্য হয়েই থাকে। তবে ধৈর্য্য ধরে সব পরিস্থিতি সামলে নেওয়াই হলো প্রকৃত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক!”

মাথা উঁচিয়ে আমি নিমগ্ন দৃষ্টিতে রাফায়াত ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কান্না থামিয়ে কিছুটা শান্ত হয়ে এলাম! কিন্তু বেশিক্ষন সেই শান্ত ভাব বজায় রাখতে পারলাম না আমি! পুনরায় ডুকরে কেঁদে শুধালাম,,

“তুমি আমাকে মিথ্যে শান্তনা দিচ্ছে রাফায়াত ভাই? তরুনের পক্ষ নিয়ে কথা বলছ? এখন বুঝি আমি তোমার পর হয়ে গেলাম? তরুন এতো আপন হয়ে গেল?”

ফিক করে হেসে উঠলেন রাফায়াত ভাই! অশান্ত দৃষ্টি আমার মুহূর্তের মধ্যেই শান্ত হয়ে উঠল! কী অপূর্ব লোকটির হাসি। কেমন যেনো স্নিগ্ধময়, মোহময়, নিমগ্নতায় ভরপুর! হা করে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মতো মোহিত! গাল দুটো কেমন যেনো দু’দিকে নেচে নেচে উঠছে। ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ প্রসারিত হয়ে উঠছে। লাইটের তীর্যক আলোতে শুভ্র মুখের আদলটি সমগ্র মুখমন্ডল জুড়ে লাল আভা ছড়াচ্ছে! নিচের ঠোঁটের ঠিক মাঝখানে থাকা কৃষ্ণ রঙের তিলটিও দ্বিগুণ ব্লাশ করে উঠছে! রেশমি চুল গুলোও উন্মুক্ত জানালা দিয়ে আসা মাঝ রাতের স্নিগ্ধ এবং কোমলমতী বাতাসের প্রভাবে বিশৃঙ্খল ভাবে হেলে দুলে উঠছে। দেখতে অমায়িক সৌন্দর্যের অধিকারী লাগছে। দৃষ্টিতে অপার মুগ্ধতা ভর করে উঠতেই আমি তাৎক্ষণিক দৃষ্টি নুইয়ে নিলাম! কিছুতেই দ্বিতীয় বারের মতো লোকটির এই মুগ্ধ করা সৌন্দর্যে নিজের দেহ এবং মনকে ভাসিয়ে দেওয়া চলবে না! এখন আমি বিবাহিতা। সম্প্রতি বাচ্চার মা হতে চলেছি। এই চিরন্তন সত্যি গুলোই এখন আমার মাথায় রাখতে হবে! এর বাইরে সব অতীত কিংবা কিছু মুহূর্তের জন্য আকর্ষণীয় সত্যি গুলোকেও আমার তুচ্ছ জ্ঞান করতে হবে।

হাসি থামালেন রাফায়াত ভাই। ডেস্কের উপর থেকে খাবারের থালাটি নিঃশব্দে হাতে তুলে নিলেন। তাৎক্ষণিক থালাটি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে তিনি হাসোজ্জল গলায় বললেন,,

“খাবারটা আগে খেয়ে নে। এরপর না হয় খুব সময় নিয়ে আমার উপর যতো অভিযোগ আছে সব এক এক করে বলবি! বিশ্বাস কর সব মনযোগ দিয়ে শুনব আমি। একটুও বিরক্তবোধ হব না!”

খাবারের প্লেইটটি হাতে তুলে নিলাম আমি। মাথা নুইয়েই নিম্ন আওয়াজে রাফায়াত ভাইকে শুধালাম,,

“তুমি খেয়েছিলে?”

“না। কয়েক দিন যাবত ডায়েটে আছি। রাতে খুব কম সময়ই খাওয়া হয়। তুই খেয়ে নে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব ক্ষুধার্ত তুই। চোখ-মুখ কেমন চুপসে গেছে। নিরাগ নিরাগ দেখাচ্ছে। এই সময়ে খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অধিক যত্নশীল হতে হয়। পুষ্টি জাতীয় খাবার খুব বেশি বেশি করে খেতে হয়। তাই তোকেও এক্ষেত্রে যথেষ্ট যত্নশীল হতে হবে।”

মাথা উঁচিয়ে আমি অপলক দৃষ্টিতে রাফায়াত ভাইয়ার দিকে তাকালাম! অতঃপর ম্লান হেসে বললাম,,

“তুমি এখনও ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছ রাফায়াত ভাই! সেই আগের মতোই বিনা কারণে এখনও আমাকে গাইড করেই চলছ। বিনা স্বার্থে আমার ভালো-মন্দের খেয়াল রাখছ। কতো যত্ন নিচ্ছ আমার বলো? তুমি কী কখনও বদলাবে না রাফায়াত ভাই? সবসময় ঠিক এই রকমই থাকবে?”

তব্ধ শ্বাস ছাড়লেন রাফায়াত ভাই। তাৎক্ষণিক আমার পাশ থেকে উঠে সোজা দাঁড়িয়ে পড়লেন! মাথা নুইয়ে তিনি প্যান্টের পকেটে দু’হাত গুজে নিচু গলায় শুধালেন,,

“বদলে গেলে কী খুব খুশি হবি তুই? তখন সহ্য করতে পারবি তো আমার হঠাৎ এই বদলে যাওয়া? তখন কিন্তু সহ্য করতে পারবি না! হৃদয় পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। কাছের মানুষদের হঠাৎ পরিবর্তন কিন্তু মেনে নেওয়া খুব বেশি একটা সম্ভব হয় না। এরচেয়ে মৃত্যুকে মেনে নেওয়া হয়তো খুব বেশি সহজ। যেমন তরুনের হঠাৎ পরিবর্তনও তুই সহ্য করতে পারছিস না!”

দ্রুত বেগে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলেন রাফায়াত ভাই। দরজার সন্নিকটে যেতেই তিনি হঠাৎ হাঁটার গতি থামিয়ে দিলেন! মাথাটা খানিক পেছনের দিকে ঘুরিয়ে তিনি অস্ফুটে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। অতঃপর প্যান্টের পকেট থেকে ডান হাতটি উঠিয়ে তিনি চিবুকের কাছে হাতটি রেখে গলাটা খানিক ঝেড়ে নিলেন! এরপর অস্পষ্ট গলায় আমায় লক্ষ্য করে বললেন,,

“খাবারটা খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়। বেশি রাত অবধি জাগিস না কিন্তু। শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সকালেই আবার আমাদের দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। গুড নাইট।”

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালাম আমি। খাবারের প্রথম লোকমা মুখে তুলতেই রাফায়াত ভাই তড়িঘড়ি করে ঘর থেকে প্রস্থান নিলেন। গুড নাইট বলার সময়টুকুও দিলেন না আমায়। আসলে খাবার ছেড়ে আমারও রাফায়াত ভাইয়ার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছিল না! আপাতত খুব ক্ষুধার্ত আমি! সম্ভব হলে হয়তো পুরো দুনিয়াটাই এখন এক মুঠোয় খেয়ে নিতাম আমি!

কিছুক্ষণের মধ্যেই খাওয়া দাওয়া সম্পূর্ণ করে আমি রাফায়াত ভাইয়ার কথা মতো শুয়ে পড়লাম। ডান পাশ থেকে বাঁ পাশ ফিরে শুতেই হঠাৎ রাফায়াত ভাইয়ার সেলফোনটি আমার চোখে পড়ল! ইশশশ! ভুলেই গিয়েছিলাম কথা বলার পর ঐ সময় ফোনটি রাফায়াত ভাইয়ার হাতে তুলে দিতে! ধ্যাত, কেমন ভুলো মন আমার। এক্ষেত্রে কিন্তু রাফায়াত ভাইও কম যায় না! নিজের ব্যবহার্য জিনিসের কথা নিজেই ভুলে গেলেন? এখন যদি কোনো কারনে ফোনটি দরকার হয় উনার তখন কী হবে? পাগলের মতো হয়তো খুঁজে চলবে ফোনটি। নয়তো মনে পড়লে আবার পাগলের মতো ছুটে আসবে আমার ঘরে! কী যে করে না লোকটা। এসব ভাবতে ভাবতেই ইতোমধ্যে ফোনটি আমি হাতে তুলে নিলাম! কৌতুহলের বশে পাওয়ার বাটন অন করতেই হঠাৎ চমকে উঠলাম! স্ক্রিণের ওয়ালপেপারে আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগের তোলা আমার এবং রাফায়াত ভাইয়ার একটি হাস্যকর সেলফি স্ক্রিন জুড়ে জ্বলজ্বল করছে! একটু আগেও ওয়ালপেপারের দিকে খেয়াল ছিল না আমার! আমি তো তখন ফোনের কল লগ অবধিই সীমাবদ্ধ ছিলাম। এখন হঠাৎ পাওয়ার বাটন অন করতেই ছবিটি চোখে পড়ল! কিন্তু কেন? আমার ছবি রাফায়াত ভাইয়ার ওয়ালপেপারে কেন? তাও আবার সেই তিন বছর আগের ছবি! এখন শুধুমাত্র ভোর হবার অপেক্ষা! ভোরের দিকে দেখা হলেই ভাইয়াকে আমি জিজ্ঞেস করব আমার ছবি কেন ভাইয়ার ওয়ালপেপারে!

______________________________________

ভোর পেরিয়ে সকাল প্রায় ১০:০০ টা বাজছে আমার হাত ঘড়িতে। আমি এখন রাফায়াত ভাইয়ার সাথে একই রিকশায় বসে আছি! দুজনের মধ্যখানেই দুই থেকে তিন ইঞ্চি ব্যবধান রয়েছে। গাঁ ঘেঁষাঘেঁষির মতো অবস্থা নয়! এখন দুজনেরই গন্তব্য বাগিচাগাও মাস্টার সেইফ রেস্টুরেন্টে! ওখানেই বড় আপুর ননদ ‘শিলা’ আপুকে আমি জরুরী ভিত্তিতে দেখা করতে বলেছি! অনেক জোরাজুরির পর তিনিও শেষ পর্যন্ত আমার সাথে দেখা করতে রাজি হয়ে গেলেন! রাফায়াত ভাইয়ার ফোন থেকেই আমি ভোরে বেলায় কল করেছিলাম শিলা আপুকে। অনেক টেকনিক খাটিয়ে আপুর নাম্বারটি জোগাড় করতে হয়েছে আমার! রাফায়াত ভাইয়ার ফোনটি এখনও আমার কাছেই রয়ে গেছে! কারণ, ভাইয়া এখনও ফোনটির সন্ধান করেন নি! হয়তো এখনও কোনো প্রয়োজনই পড়ে নি ফোনটির! ইতোমধ্যেই মৌণতা কাটিয়ে উঠলেন রাফায়াত ভাই। ঢুলুঢুল দৃষ্টিতে তিনি পাশ ফিরে আমার দিকে তাকালেন! অতঃপর ঘুম জড়ানো গলায় শুধালেন,,

“এই রিয়াশা? কোথায় যাচ্ছি আমরা? এই সাত সকালে গভীর ঘুম থেকে আমাকে এভাবে টেনে আনার মানে কী হ্যাঁ?”

“সাত সকাল মানে? ১০:০০ টা বাজছে এখন ঘড়িতে। আর তুমি সাত সকাল বলছ?”

“হ্যাঁ বলছি! কারণ, দুপুর ১২:০০ টার আগে আমি ঘুম থেকে উঠি না!”

“সিরিয়াসলি রাফায়াত ভাই? মানে তুমি লন্ডন যাওয়ার পর একদম নবাব হয়ে গেছ? দুপুর ১২ টা অবধিই ঘুমুতে হবে তোমার? কই আগে তো সকাল সাতটার আগেই ঘুম থেকে না উঠতে পারলে তুমি আমার কান মলে দিতে! আর এখন নিজেই ১২ টা/১ টা অবধি ঘুমাও?”

“কারণ এখন আমার সারা রাত জেগে কাজ করতে হয়! আমার ওয়ার্ক টাইমই হচ্ছে সারা রাত। জেগে জেগে কাজ করা।”

“কিন্তু কাল তো তুমি কোনো কাজ করো নি। আর সেজন্যই এতো বেলা অবধি ঘুমানোর কোনো মানেই হয় না!”

রাফায়াত ভাই বিরক্ত হয়ে উঠলেন! ডান হাত দ্বারা কপাল ঘঁষে তিনি নাক-মুখ খিঁচে বললেন,,

“উফফফ! এখন তো অভ্যেস হয়ে গেছে আমার। কাজ না থাকলেও কালও সারা রাত জেগেই ছিলাম! আর এ কারনেই এখন চোখ টেনে মেলতে পারছি না আমি! বুঝছিস না কেন বল তো?”

“উঁহু। আমি এতো কথা বুঝতে চাই না! আমরা এখন বড় আপুর ননদের সাথে দেখা করতে যাব! তুমি পাশে থাকলে আমার সাহস বাড়বে!, কোনো জড়তাও কাজ করবে না। তাই বাধ্য হয়েই তোমাকে ঘুম থেকে এভাবে ধরে বেঁধে নিয়ে আসা!”

চমকে উঠলেন রাফায়াত ভাই! তাৎক্ষণিক কপাল থেকে হাত সরিয়ে তিনি আশ্চর্যিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। লোহিত গলায় শুধিয়ে বললেন,,

“হোয়াট? তুই এখন বড় আপুর ননদের সাথে দেখা করতে যাবি? রীতিমতো অবিশ্বাস করছিস তুই তরুনকে? এই? গতকাল রাতে না তোকে বলেছিলাম? তরুন মানসিকভাবে হয়তো কোনো কারনে ডিস্টার্বড হয়ে আছে! আর এই কারনেই তোর সাথে এবং ওর বাবা-মায়ের সাথে ইনফেক্ট আঙ্কেল, আন্টির সাথেও বাজে ব্যবহার করছে! তাছাড়া তরুনের আম্মু তো বলেই গেছেন কয়েকদিনের জন্য তোকে তরুনের থেকে দূরে থাকতে! তরুনের মন মর্জি বা মানসিক সমস্যা গুলো ঠিক হয়ে উঠলেই তাঁরা তোকে ঐ বাড়ি নিয়ে যাবেন! কেন নিজে নিজে এতো পাকনামো করতে যাস হ্যাঁ?”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here