চেনা রোদে বসন্ত পর্ব -০৮ ও শেষ

#চেনা_রোদে_বসন্ত
#পর্ব_৮ (অন্তিম পর্ব)
#নিশাত_জাহান_নিশি

“ছেলেটি কী করছে আমাদের বাড়িতে হ্যাঁ? কী করছে? ছেলেটিকে বলে দাও রিয়াশা তুমি আমার সাথেই থাকবে। আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।”

(শেষের কথাগুলো পড়ার অনুরোধ রইল।)

অনর্গল কথা গুলো বলেই তিনি মুখের উপর দরজাটি বন্ধ করে দিলেন! ঘটনার আকস্মিকতায় চোখ জোড়া খিঁচে বুজে নিলাম আমি। রাগে ফোঁস ফোঁস করে তিনি আমাকে নিয়ে বিছানায় পাশাপাশি বসে পড়লেন! আমাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে তিনি হাঁটু গুজে আমার পায়ের কাছে এসে বসলেন। দু’পায়ের হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে তিনি শান্ত গলায় শুধালেন,,

“কেমন আছো তুমি? ভালো ছিলে আমাকে ছাড়া?”

কম্পিত গলায় আমি জবাবে বললাম,,

“নানানা।”

ম্লান হাসলেন তিনি। আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম,,

“আমি জানতাম, তুমি আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না!”

প্রসঙ্গ পাল্টে আমি তৎপর গলায় শুধালাম,,

“খেয়েছেন আপনি?”

“তোমাকে ছাড়া কখনও খেয়েছি?”

“চলুন খাবেন। খাওয়ার পর ঔষধ খেতে হবে!”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি! হাঁটু থেকে মাথা উঁচিয়ে নিথর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। কেমন যেনো বিদ্রুপাত্নক গলায় বললেন,,

“ঔষধ খাওয়ার আর প্রয়োজন কী? আমি তো এখন সুস্থ হয়ে গেছি!”

ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুচকে নিলাম আমি! বিস্মিত গলায় শুধালাম,,

“মানে?”

তাৎক্ষণিক মাথা নুইয়ে নিলেন তিনি! স্মিত হেসে বললেন,,

“আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ রিয়াশা! অতীতের সব স্মৃতি এমনকি বর্তমানে আমার সাথে যা যা কিছু ঘটছে সবকিছুই এখন আমার কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার! অতীত মনে রেখে আমি আমার বর্তমান নষ্ট করতে চাই না! আমার অনাগত বাচ্চার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাই না!”

হতবাক আমি! আশ্চর্যে বশীভূত। আমার এহেন হটকারি ভাব ভঙ্গি দেখে তরুন মাথা উঁচিয়ে নিমগ্ন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন! হাত দুটো আঁকড়ে ধরে তিনি শান্ত গলায় বললেন,,

“রিয়াশার খোঁজ নিয়েছি আমি! রিয়াশা ভালো আছে। তাঁর হাজবেন্ডের সাথে সুখে-শান্তিতে সংসার করছে! রিয়াশা যদি তাঁর নতুন জীবন নিয়ে সুখী থাকতে পারে তবে আমি কেন পারব না বলো? আমিও তোমার সাথে সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারব! তাছাড়া আমি বাবা হতে চলেছি। তুমিই হলে আমার বাচ্চার মা। সামনে আরও সুখকর জীবন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সেই জীবনের অপেক্ষাতেই আমি আছি।”

আনন্দ অশ্রু ঝড়ে পড়ছে আমার দু’চোখ থেকে! আনন্দে হতবিহ্বল হয়ে আমি তরুনকে ঝাপটে ধরে বললাম,,

“আপনি সব সত্যি বলছেন তো তরুন? মন থেকে বলছেন তো সব? আপনি সত্যিই আমাকে এবং আমার বাচ্চাকে মন থেকে মেনে নিচ্ছেন?”

“উঁহু। শুধু তোমার বাচ্চা নয়। আমাদের বাচ্চা। আমি তোমাদের দুজনকেই মন থেকে মেনে নিচ্ছি।”

“রিয়াশার খবর কীভাবে পেলেন?”

“রিয়াশার বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে।”

“মনে পড়বে না কখনও রিয়াশাকে?”

“উঁহু! আমার এই রিয়াশা হলেই চলবে!”

তরুনও শক্ত হাতে ঝাপটে ধরলেন আমায়! দুজনই খুশিতে আত্মহারা। তরুনকে বুকে নিতেই বুঝতে পেরেছি আমি তরুন যা বলেছে মন থেকে বলেছে। কোনো ছলনা নেই তাঁর কথায় এবং অন্তরে। আজ থেকে আমার নতুন জীবন শুরু। সুখী বিবাহিত জীবন, সুখী সাংসারিক জীবন।

,
,

কেটে গেল মাঝখানে তিন বছর! তরুন এবং আমার ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। তার বয়স চলছে আড়াই বছর! দেখতে একদম তরুনের মতো হয়েছে। সবার নয়নের মনি আমাদের মেয়ে “তাবাসসুম বিনতে তুলন।” তরুন তো সারাক্ষণ তার মেয়েকে চোখে চোখে হারায়! মেয়ে হয়েছে পুরো বাবা অন্ত প্রাণ! বাবা ছাড়া যেনো তার দুনিয়া অন্ধকার। আমার প্রতি তরুনের ভালোবাসাও দিন দিন বেড়ে চলছে! চোখের আড়াল হলেই লোকটি প্রায় মরিয়া হয়ে ওঠে!

দুই বছর হলো রাফায়াত ভাই আবারও লন্ডন ব্যাক করেছেন! তিনি এখনও অবিবাহিত রয়ে গেছেন। এই জীবনে বিয়ে করবেন না বলে পণ করে রেখেছেন! যদিও জানি এর একমাত্র কারণ আমি! আমাকে ছাড়া তিনি এই জীবনে কারো হতে পারেন নি, না কখনো পারবেন! মাঝে মধ্যেই ফোনে কথা হয় আমাদের। দুজন দুজনের হালচাল জিজ্ঞেস করি। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই লোকটি নিখুঁতভাবে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান! বুঝেও তখন কিছু বলার থাকে না আমার। কারণ জীবন কখনও নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে চলে না। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার আছে নিজের ইচ্ছে মতো জীবন চালনা করার। তাদের দলে হয়তো রাফায়াত ভাইও পড়েন! যদি কখনও উনার সম্বিত ফিরে তো তিনি দেশে ফিরে বিয়ে করবেন নয়তো এভাবেই একলা জীবন কাটিয়ে দিবেন। আমাদের সমাজে এমন অনেক রাফায়াত ভাই আছেন যারা নিঃসঙ্গতায় কাটিয়ে দেন সারাটি জীবন। হয়তো কারো প্রেমে ধোঁকা খেয়েছে নয়তো কাছের মানুষদের করা বিশ্বাসঘাতকতায়!

পরের বছর যখন রাফায়াত ভাই আমার কথায় দেশে ফিরলেন তখনি ঘটিয়ে বসলাম এক কান্ড! ধরে বেঁধে রাফায়াত ভাইকে বিয়ে পড়িয়ে দিলাম আমারই ছোট বোন রামিশার সঙ্গে! মাত্র কিছুদিন আগেই জানতে পেরেছিলাম রামিশা প্রায় অনেক বছর আগে থেকেই রাফায়াত ভাইকে মনে মনে ভালোবাসত! তবে কখনও মুখ ফুটে তা প্রকাশ করে নি! সেদিন রাফায়াত ভাইকে মাথার দিব্যি দিয়ে বলেছিলাম হয় বিয়ে করো নয় আমার সাথে সারা জীবনের জন্য যোগাযোগ বন্ধ করে দাও। শুধু তাই নয় আমার পাশাপাশি রাফায়াত ভাইয়ার মাও অনেক জোরাজুরি করে উনাকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছিলেন!

বিয়ের প্রায় দুই বছরের মাথায় এসে রাফায়াত ভাই মন থেকে রামিশাকে মেনে নিয়েছিলেন! রামিশার পাগলামীপূর্ণ ভালোবাসায় এক প্রকার তিনি বাধ্য হয়েছিলেন রামিশাকে মন থেকে মেনে নিতে। এখন তাঁরা দুজনই তাদের বিবাহিত জীবনে খুশি! দিব্যি সুখে চলছে তাদের সংসার। তাদের সুখে আমিও বেশ সুখী! তরুন এবং আমার বিবাহিত জীবনও বেশ সুখে শান্তিতেই কাটছে!

#সমাপ্ত

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here