চৈতালি পূর্ণিমা পর্ব -১৩+১৪+১৫+১৬

#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-১৩

ক্লান্ত অপরাহ্নের শেষ প্রহর। হরিদ্রাভ আকাশটি আবৃত সিঁদুর রাঙা মেঘে। বায়ু চলাচলের অভাবে বাড়ির সাথে লাগোয়া কাঠগোলাপের গাছটি নিষ্প্রাণ প্রায়। মাঝে মধ্যে দুই-একটা পাখি উড়াল দিতেই প্রাণোচ্ছল মনে দুলিয়ে উঠছে সে। অকস্মাৎ প্রশান্ত, নিস্তব্ধ পরিবেশটা বিক্ষুব্ধ করলো কেউ। চারদিক কম্পিত করে গাড়ির হর্ণ বাজলো। জানান দিল কারো আগমনের, অপেক্ষার প্রহর যেন তখনই ভাঙলো। হর্ণের আওয়াজ শুনে স্পর্শী মাথায় কাপড় টেনে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। স্থিরচিত্তে এগিয়ে গেল বৈঠকখানার দিকে। কয়েক কদম চলে থমকালো সে, পর্যবেক্ষণিক দৃষ্টিতে চোখ বুলালো আশেপাশে। সবই অপরিচিত মুখ। তবুও অপরিচিত মানুষের ভীড়ে আনমনে খুঁজে বেড়ালো পরিচিত সেই মুখ। অবশেষে অগণিত মানুষের ভীড়ে ক্ষুদ্র ফাঁকের মধ্য দিয়ে দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির। পরক্ষণেই ঠোঁটের কোনে ঠাঁই পেল সরু এক হাসি, বুক চিরে বেরিয়ে এলো স্বস্তির নিঃশ্বাস।

দিনশেষে রাদিন সাহেবকে সাথে নিয়ে ফিরেছে নির্বাণ। আশেপাশের মানুষদেরও খোঁজ এখনই মিললো। অবশ্য ছোটরা আগেই ফিরে এসেছিল তবে স্পর্শীর ঠিকমতো কথা বলা হয়ে উঠেনি কারো সাথেই। দুপুরের এক ঝলক নির্বাণের মা নিলুফার সাথে দেখা হলেও পরবর্তীতে আর হয়নি। কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য এসে ফ্রেশ হয়ে, সকলের জন্য বৃহৎ আকৃতির টিফিনবক্সে খাবার পুরে নিয়ে যান। এখনই ফিরেন সবার সাথে। উৎকন্ঠা, ব্যগ্রতা, ক্লান্তি স্পষ্ট সকলের মুখপানে। রাদিন যে এই বাড়ির অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মান্য-গণ্য ব্যক্তি তা বুঝার বিকল্প নেই। রাদিন মাথা হেলিয়ে শুয়ে আছেন সোফায়, পাশেই বয়স্ক এক ব্যক্তি গাম্ভীর্যপূর্ণ দৃষ্টি তাকিয়ে আছেন নিচের দিকে। স্পর্শী একপলক তাকালো তার পানে। ভেবে নিল তিনি সম্ভবত নির্বাণের নানাজান। হঠাৎ ভরাট কন্ঠে তিনি বলে উঠেন,

— কাল রাত থেকে সকলেই অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছ, এখন দিয়ে রেস্ট নাও। আর রাদিনকে ওর রুমে শুয়ে আসো।

ভীড়ের মাঝেই একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি বলে উঠেন, “আচ্ছা আব্বা।”

বয়স্ক ব্যক্তিটি উঠে নিজ রুমে চলে যেতেই বাকিরাও ধীরে ধীরে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। নির্বাণ, নাহিদ ও আরও একজন মিলে রাদিনকে নিজ পৌঁছে দিলেন। স্পর্শী সবই রুমের এককোনে দাঁড়িয়ে দেখলো কিন্তু কোন শব্দ করলো না৷ আসলে এই মুহূর্তে তার কি বলা বা করা উচিৎ বুঝে উঠতে পারলো না। কিছু মুহূর্ত নীরবেই কেটে যেতে নিলুফা এসে দাঁড়ান স্পর্শীর নিকটে। হাতের তর্জনী দিয়ে নাকের ডগা থেকে চশমাটা পিছনের দিকে ঠেলে দিয়ে মন্থর কন্ঠে বলে,

— তখন তাড়ায় ছিলাম বলে খোঁজ-খবর নিতে পারিনি। তোমার এইখানে থাকতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো? খাওয়া-দাওয়া করেছ ঠিক মত?

স্পর্শী হ্যাঁ-সূচক মাথা দুলিয়ে বলে, “জি মা।”

“জানি সবই অচেনা তোমার। তবে পরিবেশটা এখন প্রতিকূলে বুঝতে পারছো। সব ঠিক হোক আমি ধীরে-সুস্থে সকলের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দিব।”

স্পর্শী নিচু কন্ঠে বলে, “সমস্যা নেই মা। আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে, আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।”

“হুম যাচ্ছি। তুমিও এখন রুমে যাও।”

স্পর্শী আলতোভাবে মাথা নাড়লো। নিলুফা চলে যেতেই স্পর্শীও ঘুরে দাঁড়ালো। এগিয়ে গেল তার জন্য বরাদ্দ করা রুমের দিকে।

_______________

বিছানার উপর পা তুলে বসে আনমনেই ফেসবুক স্ক্রোল করছে স্পর্শী। কখনো বা ইন্সটাগ্রামে চক্কর দিয়ে ইউটিউবে ঢুকছে। মন বসছে না কিছুতেই। অবশেষে বিতৃষ্ণায় ‘চ’ উচ্চারণ করার মত শব্দ করে পাশে ফোনটা ফেলে দিল স্পর্শী। পরিচিত মানুষগুলোও আজ নামের পাশে সবুজ বাতিটি জ্বালাতে নারাজ, সময় যেন আজ এগুতেই চাইছে না। স্পর্শী বিরক্তিতে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো, গভীর দৃষ্টিতে তাকালো ওয়াশরুমের দরজার দিকে। ভিতর থেকে এখনো টাপুরটুপুর পানির শব্দ আসছে। স্পর্শী দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখলো একবার, প্রায় এক ঘন্টার বেশি হতে চললো নির্বাণ ওয়াশরুমে। বের হওয়ার নাম গন্ধ নেই তার। স্পর্শী বিরবির করলো,

“এই মানুষটা এতক্ষণ লাগিয়ে ওয়াশরুমে করছেটা কি? সোনারতরী খুঁজে পেয়েছে নাকি ভিতরে? এত সময় তো মেয়েদেরও লাগে ন..”

কথাটা শেষ হওয়ার পূর্বেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে নির্বাণ বেরিয়ে এলো। সিক্ত গায়ে কালো রঙের টি-শার্টটি আঁটসাঁট হয়ে আছে। মাধুর্য বাড়াচ্ছে স্নিগ্ধ মুখের। চিবুক গড়িয়ে আধো ভেজা চুলগুলো থেকে পানি পড়ছে টিপটিপ করে। একহাতে তোয়ালে ধরে কোনরকম চুলগুলো মুছে নিচ্ছে সে। হাব-ভাব এমন কোনমতে এই কার্যক্রিয়া শেষ করে বিছানায় যেতে পারলেই হয়। নির্বাণ কোনরকম চুলগুলো মুছে তোয়ালেটা সাইডে রাখা একটা চেয়ারের উপর মেলে দিল। অতঃপর কোনদিক না তাকিয়ে সোজা স্পর্শী পাশে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। দৃষ্টিতে ক্লান্তি ভর করা মাত্র আঁখিপল্লবের কপাট বন্ধ করে নিল। হঠাৎ নির্বাণ পাশে এসে শুয়ে পড়তেই স্পর্শী কিছুটা ভড়কে উঠে। পরক্ষণে স্বাভাবিক হয়ে বলল,

“আপনার জন্য আলিয়া মামী একগ্লাস শরবত দিয়ে গিয়েছিলেন। এনে দেই,খাবেন?”

নির্বাণ চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় বলে, “এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। আমার জায়গায় না-হয় তুমি খেয়ে নাও।”

“আমি খেয়েছি। দুইজনের জন্যই দিয়ে গিয়েছিল।”

নির্বাণ ক্লান্ত স্বরে উত্তর দেয়, “অহ আচ্ছা। তুমি দুপুরে খেয়েছিলে?”

“হুম! আপনি খেয়েছিলেন?”

“না।”

স্পর্শী অবাক হয়ে বলে, “এখনো খান নি কেন?সেই সকালে খেয়েছিলেন তো।”

নির্বাণ ছোট করে বলে, “সময় পায়নি।”

“তাহলে কিছু খেয়ে না-হয় ঘুমান।”

“উহু!”

স্পর্শী আর কথা বাড়ালো না, নীরব থাকলো। অতঃপর বাহির থেকে স্পর্শীর জন্য নিলুফার ডাক পড়তেই স্পর্শী একপলক নির্বাণের পানে তাকিয়ে স্থিরচিত্তে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

__________________

রাতে খাবারের পর্ব আজ দ্রুতই চুকে গিয়েছে। সকলে ক্লান্ত থাকায় আগে ভাগেই খেয়ে ঘুমোতে চলে গিয়েছে। নিলুফা আজ চাইছিলেন সকলের সাথে স্পর্শীর পরিচয়টা ভালোভাবে করিয়ে দিতে কিন্তু সকলের অবসন্ন, বিষণ্ণ ভাব দেখে দমে গেলেন তিনি। ভাবলেন, পরিস্থিতি ঠিক হলে এইসব করা যাবে। শুধু সবাইকে এতটুকুই জানালেন স্পর্শী তার বড় বউ। অতঃপর নির্বাণের কাজিন মাহিনের বিয়ে নিয়ে আলোচনা উঠে৷ রাদিন সাহেবের সুস্থ হতে কিছুটা সময় প্রয়োজন বিধায় তারা কনে পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বিয়েটা পিছিয়ে নেন। সকল গুরুত্বপূর্ণ কার্যলাপ শেষ করে ক্লান্ত শরীর নিয়েই যে যার রুমে ছুটে সামান্য বিশ্রামের আশায়।

দ্রুত ঘুমানোর অভ্যাস না থাকায় স্পর্শী নিজের মুঠোফোনে দৃষ্টি স্থির করলো। নির্বাণ তার প্বার্শেই শুয়ে আছে। মাঝে মধ্যে এপাশ-ওপাশ করে মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর বিরক্তিতে মৃদু শব্দ করছে৷ স্থির থাকতে চাইছে কিন্তু কোন এক কারণ বসত পারছে না। নির্বাণের এমন কার্যক্রম স্পর্শীর দৃষ্টিতে ধরা দিতেই স্পর্শী মুঠোফোনটা বন্ধ করে বালিশের পাশে রেখে দিল। মিইয়ে যাওয়া স্বরে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার কি মাথা ব্যথা করছে?”

নির্বাণ অস্ফুটস্বরে বলে, “হু!”

কথাটা বলে বেশ কিছুক্ষণ নিভৃতে কেটে যাওয়ার পরমুহূর্তেই নির্বাণ স্পর্শীর দিকে ঘুরে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো। আধো আধো কন্ঠে বলে, “মাথা ধরেছে খুব, চুলগুলো একটু টেনে দিবা?”

নির্বাণের এহেন কান্ডে স্পর্শী চমকালো। বেশ চমকালো। সর্বাঙ্গ জুড়ে বয়ে গেল অজানা শিহরণ, হিম হয়ে আসলো হাত-পা। ঈষৎ কাঁপনও ধরলো। মুখের খেই হারিয়ে শুধু ড্যাবড্যাব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তবে নির্বাণের আদুরে আবদারটি মনে সূঁচের ন্যায় বিঁধলো। নাকচ বা উচ্চবাক্য ব্যবহার করতে পারলো না নির্বাণের বিপরীতে৷ খানিকটা ইতস্তত করেই নীরবে হাত টেনে নিয়ে গেল নির্বাণের চুলের দিকে, খুব সপ্তপর্ণে চুলগুলো টেনে দিতে লাগলো। মাথায় নরম হাতের স্পর্শ পেতেই নির্বাণের ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো কিঞ্চিৎ হাসির রেখা। আনমনেই প্রস্তুতি নিল প্রগাঢ় তন্দ্রায় ডুব দেওয়ার।
#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-১৪

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে কিঞ্চিৎ প্রহর পূর্বে। হিম অনলে স্নিগ্ধ পরিবেশ। পাখির কিচিরমিচির শব্দ গুঞ্জিত হচ্ছে বৃক্ষের আঁকেবাঁকে। সাধারণ দিনকার তুলনায় আজ ঘুমটা আগেই ছুটে গেল স্পর্শীর। নিজ থেকে নাকি পাখির মিষ্ট ধ্বনিতে তা বলা মুশকিল। চোখ ভর্তি ঘুম নিয়েই পিটপিট করে চাইলো সে। ঈষৎ নড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে অনুভব হলো সে কারো দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ। ভ্রু কুঁচকে এলো তার, চোখ টানটান করে তাকালো৷ নির্বাণ বিগত রাতের ন্যায় ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। গভীর তন্দ্রায় বিভোর সে। নির্বাণকে নিজের নিকটে দেখে মুহূর্তেই এক মুঠো রক্তিম আভা ছেঁয়ে গেল স্পর্শীর মেদহীন গালে। লজ্জায় দৃষ্টি নত করলো সে। নীরবেই একবার নিজের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করলো। কাল নির্বাণের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে বসে থাকা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল তার জানা নেই। মাথাটা বোধহয় দীর্ঘ রাত্রী যাবৎ একপাশে হেলেই ছিল। যার দরুন এখন মেরুদণ্ড ও ঘাড়ের চারিপাশে সুক্ষ্ম ব্যথার আবির্ভাব হতে শুরু করেছে। স্পর্শী এক্সারসাইজ করার মত আলতো ভাবে কয়েকবার ঘাড় দু’দিকে কাত করলো। ব্যথা কমলো না, আগের ন্যায় রইলো। স্পর্শী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো নির্বাণের পানে। ঘুমন্ত অবস্থাতে বড্ড নিষ্পাপ লাগছে তার মুখখানি। আদুরে বাচ্চাদের মত ঠোঁট ফুলিয়ে আছে সে। ঘন চুলগুলো প্রচন্ড এলোমেলো। ঘুমের মাঝেই চোখের পাতা ঈষৎ নড়ছে। স্পর্শী নিভৃতেই মুচকি হাসে। আনমনেই হাত বাড়িয়ে নির্বাণের এলোমেলো চুলগুলো বিন্যস্ত করার ক্ষীণ চেষ্টা চালালো। অকস্মাৎ নির্বাণ নড়েচড়ে উঠে স্পর্শীকে আরও নিবিড়ভাবে ছুঁয়ে দিতে সে অনুভূতির শিহরণে পুরো জমে গেল। প্রখর কাঁপন ধরলো সর্বাঙ্গে। লজ্জায় কুঁকড়ে গেল মন,হৃদয়। বেশ কিছুক্ষণ সময় শব্দহীন কেটে যাওয়ার পর স্পর্শী স্বাভাবিক হয়। আপন ভাবনায় ডুব দিল সে, মিলাতে চেষ্টা করলো কিছু সমীরণ। অবাক হলো নিজের কর্মকাণ্ডেই। যেখানে রুদ্রের সাথে রিলেশনে থাকাকালীন সে কখনো রুদ্রকে তার হাত পর্যন্ত ধরতে দেয়নি। রুদ্র হাত ধরতে চাইলে স্পর্শী কড়া বাক্য শুনাতে পিছ পা হতো না, সেখানে আজ এই মানুষটা তাকে এইভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে তাও সে টু শব্দ পর্যন্ত করছে না। কেন? উত্তর পেল না স্পর্শী। তবে সে বেশ বুঝতে পারছে আজ তার হৃদয় অজানা এক ভালো লাগায় বন্দী। রুদ্রের সাথে থাকাকালীন কখনোই তার এইরকম অনুভূতি হয়নি যেমনটা নির্বাণের সাথে হয়। নির্বাণের নামমাত্র এখন তার হৃদস্পন্দন তড়িৎ বেগে লাগাতে শুরু করে। ভালো লাগা যেন জোয়ার বয়ে আনে। নিজের মধ্যে পরিবর্তনগুলী দেখে স্পর্শী নিজেও বিস্মিত, বিমূঢ়,হতবাক। তার নিজের কাছে করা প্রশ্ন অনেক, কিন্তু উত্তর নেই একটিরও। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো সে। কিছুক্ষণ নির্বাণের পানে তাকিয়ে থেকে জানালার বাহিরে তাকালো। সূর্যের উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে, বেলা বাড়ছে। স্পর্শী এইবার খুব সতর্কতার সাথে নির্বাণের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। খেয়াল রাখলো কোনভাবে যেন নির্বাণের ঘুম না ভাঙ্গে। মানুষটাকে আরও কিছু প্রহর শান্তিতে ঘুমাতে দিতে চাইছিল নাকি এমন অবস্থায় তার সামনে বিড়ম্বনায় পড়তে চাইছিল না বলে এই চাওয়া পোষণ করা সেটা স্পর্শীই ভালো জানে।
নির্বাণকে পাশে শুয়ে দিয়েই বিছানা ছাড়লো স্পর্শী। ঢিলে হয়ে আসা হাতখোপাটা খুলে পুনরায় ভালোমত হাতখোপা করে নিল। নিজের জামাকাপড় ঠিকঠাক করে চলে গেল ওয়াশরুমে।

___________________

সকালের নাস্তা শেষে ড্রয়িংরুমে বাড়ির মধ্যস্থ,যুবতী,কিশোরীর দল গোল করে বসলো স্পর্শীকে ঘিরে। বিভিন্ন কথার আসর বসেছে ওকে নিয়েই। স্পর্শী নম্রতার সাথেই সকল প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। সকালে উঠার পর পরই নিলুফা বেগম ধীরে ধীরে সকলের সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। যার দরুন, কিছু ঘন্টার ব্যবধানেই সে কৌতূহলের বস্তু হয়ে উঠেছে ছোট-বড় সকলের জন্য। দীর্ঘ সময় তাদের মাঝে থাকার পর, তাদের কথার প্রেক্ষিতে স্পর্শী যতটুকু জেনেছে তা হলো,

নির্বাণের মা নিলুফা বেগমরা চার ভাইবোন। তিনি বংশের তৃতীয় সন্তান। বড় দুইজন ভাই হচ্ছেন রাদিন আর রাসেল। ছোট জনের নাম ইমদাদুল। তিন ভাই একত্রেই বউ,বাচ্চা নিয়ে তাদের বাবা সমীর শেখের ছায়াতলেই থাকেন। তাদের মা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর পূর্বেই। ছোটজন চাকুরীজীবী হলেও বাকি দুইজন সমীর শেখের সাথেই হটেলের ব্যবসায় নিয়জিত। অবশ্য, নিলুফাও তার বাবা এবং ভাই রাদিনের সাথেই ব্যবসায় আছেন। সেই সূত্রে কয়েকটি রেস্তোরাঁর মালিকানা এখন তারই হাতে। তবে, নির্বাণের বাবাকে নিয়ে কেউ তেমন কিছু তথ্য দেয় নি। কথায় কথায় নির্বাণের বাবাকে কথা উঠলেও মুহূর্তেই তা নিলুফা সুক্ষ্মভাবে নিজের কথার ভাঁজে ঘুরিয়ে ফেলেন। অর্ধ-আর্ধ তথ্যে স্পর্শী পড়ে যায় ধোঁয়াশায়। সাথে কিছুটা সন্দেহ হয় নিলুফা কিছু লুকাচ্ছেন। কিন্তু পরবর্তী আর আমলে নেয় না বিষয়টা। অন্যদের দিকে মনোযোগ স্থির করে।

আড্ডা মাঝে ইমদাদুলের স্ত্রী রোকেয়া কিছুটা ঠেশ্ দিয়েই বলেন, “মেয়ে দেখতে মাশাআল্লাহই তবে গায়ের রং একটু চাপা। আমার ভাইয়ের মেয়ের কথা বলেছিলাম না তোমায় নির্বাণের জন্য? ওর চামড়া এর চেয়ে বেশ পরিষ্কার ছিল। দেখতেও তো পরীর চেয়ে কম ছিল না। কিন্তু তুমি গুরুত্ব দিলা না। ওকে কিন্তু আমাদের নির্বাণের পাশে ভালোই মানাতো।”

কথাটা কর্ণপাত হওয়া মাত্র মন ক্ষুণ্ণ হলো স্পর্শীর। আঁধার নামলো মুখে। খুবই কষ্টে ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা সৌজন্যমূলক হাসিটুকু বিলীন হতে দিল না। স্থীর রাখলো। তার গায়ের রঙ অতিরিক্ত চাপা না হলেও ছোট থেকে প্রায় সই এই নিয়ে ব্যঙ্গার্থ উক্তি শুনতে হয়েছে। তখন খনিকের জন্য মন খারাপ হলেও এতটা খারাপ লাগেনি যতটা না আজ লাগছে। এত মন খারাপের উৎস সে জানে না৷ হতাশা জড়িত নিঃশ্বাস ফেলে সে আড়চোখে তাকালো নিজের শ্বাশুড়ি নিলুফার দিকে। নিফুলার মুখে ছেঁয়ে আছে কাঠিন্য ভাব। হাতের তর্জনী উঠিয়ে নাকের ডগা হতে চশমাটা পিছনের দিকে ঠেলে দিয়ে স্বগতোক্তি কন্ঠে বলল সে, “আমার ছেলে তো আর অসাধারণ বা চাঁদের টুকরা না যে পরীর মত বউ আনবো। অতি সাধারণ একজন। তাই ওর সাথে মানানসই অতি সাধারণ বউ-ই ঘরে তুলেছি।”

নিলুফার কথার সুক্ষ্মতায় কারো মুখে আর খেই রইলো না। নীরব হলো পরিবেশ। স্পর্শীও বিস্মিত নয়নে দেখলো নিলুফাকে। সাথে তার পক্ষ নেওয়ায় কিছুটা খুশিও। এই কিঞ্চিৎ সময়ের ব্যবধানে সে বুঝে গিয়েছে তার শ্বাশুড়ি মোটেও কোন নরম ব্যক্তির মানুষ নন। অত্যান্ত প্রখর,সূঁচালো ব্যক্তিত্বের অধিকারী সে। কখন কাকে কিভাবে মোক্ষম জবাব দিতে হয় তা ভালো করেই জানেন সে।
নিলুফার কথায় রোকেয়া কিছুটা নিভে গেলেও প্রকাশ করলো না। বরং কথা ঘোরানো জন্য বলল, “আপা আমি তো এইভাবেই বলেছিলাম কথাটা। কিছু মনে করবেন না।”

নিলুফা কিছু বললেন না। নীরবেই তার অভিব্যক্তি নরম করলেন। পুনরায় সকলে কথাতে মশগুল হলো। হঠাৎ স্পর্শীর চোখ গিয়ে আটকালো দরজার দিকে। নির্বাণ আর নাহিদ একত্রে বাসার ভিতর ঢুকছে, হাতে কিছু ঔষধ-পত্র আর টুকটাক জিনিসপত্র। দুই ভাইকে আসতে দেখে বৈঠকখানার আসর ভাঙ্গে৷ বড় কয়েকজন উঠে নির্বাণের থেকে জিনিস বুঝে নিয়ে চলে রান্নাঘরের দিকে। অন্যরা চলে যায় নিজ নিজ কাজে বা রুমে। ছোটরা ছুটে পিছনের বাগানতলীতে। থেকে যায় শুধু নিলুফা, স্পর্শী আর এই বাড়ির বড় বউ হামনা। রাদিনের স্ত্রী। নির্বাণ তারই কাছে এসে ঔষধের ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে ঔষধের সময়সূচিগুলো সম্পর্কে অবগত করতে থাকে।
নাহিদ টেবিলের উপর পলিথিনে মোড়ানো ব্যাগটি রেখে ধপ করে বসে স্পর্শীর পার্শ্বেই। গলার কাছে টি-শার্টটি সামনের দিকে টেনে ধরে বুকে মধ্যে ফুঁ দিতে দিতে বলে, “আল্লাহ! কি গরম। গরমে তো শিক কাবাব হতে গেলাম। ঠান্ডা পানি দিতে বলো তো মা।”

নিলুফা নাহিদের কথা শুনে বলে, “তোর মেজো মামী শরবত বানাতেই গিয়েছে। অপেক্ষা কর।”

নাহিদ বা হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে কপালে সোজা টান দিয়ে ঘামটুকু একবারে ঝেড়ে ফেলে৷ ক্লান্তিমাখা কন্ঠে বলে, “আচ্ছা।”

অতঃপর স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বিস্তৃত হেসে বলে, “তা ভাবী কি খবর? কালকে তো আপনার সাথে কথাই বলা হলো না। আমাকে চিনেছেন তো?”

স্পর্শী হালকা হেসে বলে, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আর চিনবো না কেন? আপনি নাহিদ ভাইয়া তাই না?”

“হ্যাঁ! আপনার কুটুশখানি মিষ্টি একটা দেবর। আমাকে ভুলা চলবে নট বুঝলেন।”

স্পর্শী কিঞ্চিৎ হেসে মাথা দুলিয়ে বলল, “বুঝলাম।”

নাহিদ নিদারুণ এক হাসি উপহার দিয়ে বলে, “এইতো আমার কিউট ভাবীটা আমায় বুঝেছে। তা ভাবী, ভাইয়া আপনার উপর অত্যাচার করে না তো? টিচার মানুষ বুঝেনই, রাগ নাকের ডগায় নিয়ে ঘুরে। ভুল হইলেই তো চটাশ চটাশ বেতের বারি বসিয়ে দেয়। ডেভিল একটা! সো বি সেফ ভাবী।”

স্পর্শী কিছু বলতে যাবে তার আগে নির্মাণ নাহিদের দিকে চোখ রাঙ্গানি দিয়ে বলে, “আমি কিন্তু এইখানেই আছি।”

নাহিদ নির্বাণ এর দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বলে,
” তো? তুই সামনে আছিস বলেই কি আমার তোর তারিফের ফুলঝুরি বর্ষণ করতে হবে? সত্য বলা ফরজ। এখন সামনে যেই থাকুক।”

নির্বাণ তার সামনে সোফার উপর রাখা কুশনটা নাহিদের মুখের উপর ছুঁড়ে মেরে স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে, “নিজের সত্য কথা নিজের কাছে রাখ। কেউ শুনতে চাই নি।”

অকস্মাৎ বালিশটা ছুঁড়ে মারায় নাহিদ আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়নি। যার দরুন কুশোনটা এসে তার নাকে বারি খায়। নাহিদ ডান হাত দিয়ে নিজের নাক ঘষে বলে, “আমি আগে থেকেই জানতাম তোর আমার উঁচু নাক পছন্দ না। আজ প্রমাণ হয়েই গেল। বালিশ ছুঁড়ে আমার নাক চ্যাপ্টা বানানোর ষড়যন্ত্র করতে লজ্জা করে না তোর?”

নির্বাণ রোষাগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো নাহিদের দিকে। আনমনে বিরবির করলো, “এমনেই আমি তার অপ্রিয়। এর মধ্যে এই অপদার্থটায় আবার আগুনে ঘি ঢালার কাজ করতাসে।”

এইদিকে দুই ভাইয়ের কাহিনী দেখে স্পর্শীর দম ফেটে হাসি পেলেও কোনমতে ঠোঁট দু’টো চেপে বসে রইলো। নিলুফা নাহিদকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “নাহিদ বেশি হচ্ছে।”

নাহিদ এইবার বাধ্য ছেলের মত চুপ হয়ে যায়। তবে বিরবির করে কিছু একটা বলল, কিন্তু কারো কান অবধি সেটা পৌঁছালো না। কথার ফাঁকে আবার রোকেয়া বেগম শব্দহীন ভাবেই জায়গাটি প্রস্থান করেছেন। নির্বাণ এইবার নিলুফার পাশে বসে বলে,

“মা, তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।”

“বল।”

“আমি মাত্র তিনদিনের ছুটি নিয়েছিলাম ভার্সিটি থেকে। সে ছুটি তো ফুরিয়ে আসছে, আমি তাহলে এখন ফেরত যাই? কাজ আছে হাতে প্রচুর। পরে অনুষ্ঠানের সময় না-হয় ব্যাক করবো।”

নিলুফা স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে, “জিনিসটা ভালো দেখায় না,নির্বাণ। তার উপর বড় ভাইজানও এখন অসুস্থ, বড় ছেলে হিসেবে তোমাকেই সব দেখতে হবে। ছুটি বাড়িয়ে নাও, একবারে আমাদের সাথেই যাবে তুমি। আর কাজ থাকলে এইখান থেকে সেটা করার ব্যবস্থা করো।”

নির্বাণ প্রত্যুত্তর করলো না কোন। বাধ্য ছেলের মত নিজের মায়ের মতামত মেনে নিল। স্পর্শী সবটাই সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলো। দুই ভাইয়ের মধ্যে তেমন মিল না থাকলেও একটা দিক দিয়ে বেশ মিল। দুইজনই নিজ মায়ের ভীষণ বাধ্য এবং তাকে প্রচন্ড মান্য করে। ভালো লাগলো বিষয়টা স্পর্শীর নিকট।

নির্বাণ এইবার নিজ জায়গায় থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঘামে অর্ধভেজা শরীর নিয়ে এগিয়ে গেল রুমে দিকে। ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন তার। নির্বাণ রুম থেকে প্রস্থান করতেই আলিয়া দুই গ্লাস ঠান্ডা শরবত নিয়ে হাজির হন। এক গ্লাস নাহিদকে ধরিয়ে দিয়ে চারদিকে চোখ বুলান নির্বাণের খোঁজে। নিলুফা তা দেখে বলেন, “স্পর্শী মা, নির্বাণের জন্য শরবতটা ওর রুমে নিয়ে যাও।”

স্পর্শী মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। অতঃপর গ্লাস ভর্তি লেবু শরবত নিয়ে। রুমে আসতেই দেখতে পায় নির্বাণ কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে৷ তৎক্ষনাৎ সে বলে উঠে, “শরবতটা খেয়ে ফ্রেশ হতে যান।”

নির্বাণ পিছন ঘুরে তাকায়। স্পর্শীর হাতে গ্লাস দেখে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলে, “দাও।”

স্পর্শী গ্লাসটা বাড়িয়ে দেয়। নির্বাণ এক চুমুকে অর্ধেক শরবতটুকু খেয়ে বাকিটা স্পর্শীর দিকে এগিয়ে দেয়। স্পর্শী মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে, “আর খাবেন না? অর্ধেকটা খেলেন যে?”

“বাকিটা তুমি খাবে।”

শান্ত কন্ঠে বলল কথাটা নির্বাণ। অতঃপর স্পর্শীকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে গ্লাসটা ওর ধরিয়ে দেয় আর নিজে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে হঠাৎ নির্বাণ বলে উঠে, “এখন থেকে আমার সবকিছুতে তোমার সমান অধিকার আছে৷ তাই পরবর্তীতে আমি না বললেও নিজের অধিকার আদায় করে নিবে।”

কথাটা বলেই নির্বাণ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। আর স্পর্শী হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেই পানে। অতঃপর ঘটনাক্রমে বুঝতে পেরে স্মিত হাসি ফুটে উঠে অধর দু’টির কোলজুড়ে।

__________________

রাদিন কিছুটা সুস্থ হতেই বিয়ের ঢাক-ঢোল আবার বাজতে শুরু করলো। অনুষ্ঠানের দিন-কাল পুনরায় নির্ধারিত হলো। যার দরুন সকাল থেকে সম্পূর্ণ ঘরময় ব্যস্ততার লাইন লেগেছে। পরেরদিনই মাহিনের হলুদসন্ধ্যা, এরপর বিয়ে,বউভাত। ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। বাড়ির ছোট-বড় সকলেই কিছু না কিছু করতে ব্যস্ত। ছোটরা খেলাধুলা করতে ব্যস্ত তো বাড়ির ছেলেরা অনুষ্ঠানের বাহ্যিক কাজে। মেয়েরা ব্যস্ত সাজগোছ আর রান্না নিয়ে। স্পর্শীও যোগ দিয়েছে মেয়েদের দলেই।

সারাদিন প্রায় নিলুফার সাথে রান্নাঘরে কাটিয়ে সন্ধ্যার দিকে একটি রুমের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় রাব্বি সাহেবের ছোট মেয়ে মিশ্মিকে দেখতে পেল স্পর্শী। বিছানার এককোনে চোখে-মুখে আঁধার নামিয়ে বসে আছে সে। হাতে এক ভাঁজে ছোট মেহেদীর কোণটি নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, আর বিরবির করে কিছু বলছে সে। তা দেখে স্পর্শী এগিয়ে গেল ওর দিকে। স্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ করে বসে আছো যে?”

মিশ্মি দৃষ্টি তুলে অভিযোগের সুরে বলে, “দেখ না ভাবী। সবাই ওইরুমে একেক করে মাহিন ভাইয়ের হলুদের জন্য মেহেদী দিচ্ছে। আমাকেও দিয়ে দিতে বলেছিলাম মেহেদী কিন্তু ওরা ছোট মানুষ বলে আমাকে রুম থেকে ভাগিয়ে দিল।”

“তুমি মেহেদী দিতে চাও?”

মিশ্মি হ্যাঁ-সূচক দুই দিকে মাথা নাড়ালো। স্পর্শী তা দেখে মিষ্টি হেসে বলে, “আমি দিয়ে দেই তাহলে তোমায়?”

কথাটা শোনামাত্র মিশ্মি চোখ দু’টি চকচক করে উঠলো। উৎফুল্ল সুরে বলল সে, “সত্যি তুমি আমায় দিয়ে দিবে? তুমি মেহেদী দিতে পারো?”

“হ্যাঁ পারি। দিয়ে দিব?”

মিশ্মি দ্রুত মাথা দুলিয়ে হাতের ভাঁজে থাকা মেহেদীর কোণটি এগিয়ে দেয় স্পর্শীর দিকে। স্পর্শীও কিঞ্চিৎ হেসে কোণটি নিয়ে মিশ্মিকে মেহেদী পড়িয়ে দিতে শুরু করে। ঘন্টা দুই-একের মাঝেই মেহেদী পড়ানো শেষ হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে মেহেদীর ডিজাইনটি মারাত্মক সুন্দর লাগে মিশ্মির কাছে। সে প্রফুল্লচিত্তে বলে উঠে, “অনেক সুন্দর হয়েছে ভাবী। আমার অনেক পছন্দ হয়েছে মেহেদী দেওয়াটা। থেংক ইউ! দাঁড়াও আমি এখনই সবাইকে আমার মেহেদীটা দেখিয়ে নিয়ে আসি।”

স্পর্শী সম্মতি জানাতেই মিশ্মি ছুটে যায় ওর বাকি কাজিনদের কাছে। স্পর্শী সব গুছিয়ে উঠতে যাবে তার আগেই হুড়মুড় মিশ্মির কাজিনরা রুমে ভিতর ঢুকে পড়ে। সকলে একত্রে আবদার ধরে বসে মেহেদী দেওয়ার। তাদের নাকি স্পর্শীর দেওয়া মেহেদী অসম্ভব রকমের পছন্দ হয়েছে। দিলে মেহেদী এখন তার কাছেই দিবে তারা। স্পর্শী এইবার বিপাকে। মনে মনে চারদিকে চোখ বুলাতেই দেখতে পেল মেয়ের সংখ্যা ছয়-সাতজনের কম নয়। সকলের দৃষ্টির অগোচরেই শুকনো ঢোক গিললো সে। এতজনকে মেহেদী পড়িয়ে দেওয়া কষ্টসাধ্য হলেও ‘না’ করতে পারলো না স্পর্শী। রাজি হলো সকলের আবদারে। অতঃপর শুরু হলো তার রক্তিম আভায় হাত দু’টি সজ্জিত করার কাজ।

ঘন্টা পেরিয়ে গুটি কয়েক প্রহর লেগে গেল সকলের মেহেদী দিয়ে উঠতে উঠতে। ঘাড়,হাত,চোখ টনটন করছে এখন। তীক্ষ্ণ ব্যথার অনুভূতি হ্রাস করছে তাকে। স্পর্শী আড়মোড়া ভেঙে, কতক্ষণ হাত ঝাড়লো। অতঃপর একপলক তাকালো ঘড়ির দিকে। রাত এগারোটার বেশি বাজে। মাঝে বিরতি নিয়ে রাতের খাবার এর মাঝেই খেয়ে নিয়েছে সে। অন্যথায় এখন হয়তো খিদের জ্বালায় মরতে হতো তাকে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সে। এগিয়ে যায় তার জন্য বরাদ্দ করা রুমে৷ রুমে এসে আগে হাতে লেগে থাকা মেহেদীটুকু ধুয়ে নেয়। জায়গায় মেহেদীর দাগ বসে গিয়েছে। অতঃপর চোখে-মুখে পানির কয়েকটা ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে এসে বিছানার ধারে নির্বাণকে বসা দেখতে পায় সে। স্পর্শী মুখ হাত মুছে সামনে এগিয়ে যেতেই নির্বাণ বলে উঠে,

“তুমি মেহেদী দাও নি কেন?”

স্পর্শী অবসন্ন কন্ঠে বলে, “সময় পাইনি। আর আপাতত মেহেদী দেওয়ার মত আমার মধ্যে শক্তি অবশিষ্টও নেই।”

নির্বাণ স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে, “টেবিলে উপর মেহেদী রাখা আছে। যাও নিয়ে আসো, এখনই দিবে তুমি।”

স্পর্শী ভ্রু কুঁচকে তাকালো টেবিলের দিকে। সত্যি সত্যি সেখানে একটা মেহেদী পড়ে আছে। স্পর্শী হেয়ালির কন্ঠে বলে, “কাল সকালে দিলে দিব নে। এখন আর ভালো লাগছে না। ঘুমোব এখন।”

নির্বাণ কন্ঠে কাঠিন্য ভাব মিশিয়ে বলে, “কাল সকলের হাত মেহেদীরাঙ্গা থাকবে আর আমার বউয়ের হাত ফ্যাকাসে। তা হয় না! তুমি এখনই দিবে, আমার সামনে। এরপর ঘুমাবে তুমি।”

নির্বাণের পীড়াপীড়িতে স্পর্শী অবশেষে বাধ্য হলো রাজী হতে। পুনরায় বসলো মেহেদী হাতে নিয়ে। বা হাতের উল্টোপিঠে আর তালুতে খুবই সহজসরল একটা ডিজাইন এঁকে নিল সে। মেহেদী দেওয়া শেষ হতেই নির্বাণ সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে একবার দেখলো হাতটা। অতঃপর স্পর্শীর হাত থেকে মেহেদীর কোণটা নিয়ে নিল নির্বাণ। তালুর এককোনে কিছু একটা লিখার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করলো। কয়েক মিনিটে ব্যবধানে হয়তো সফলও হলো। স্পর্শী তাকালো সেদিকে। হাতে এককোনে ইংরেজিতে ক্যাপিটাল লেটারে ‘N’ লিখেছে নির্বাণ। অক্ষরটা চোখে পড়ামাত্র স্পর্শীর চোখ বৃহৎ আকার ধারণ করলো। চোখের কানায় কানায় অপার বিস্ময় ভর্তি করে তাকালো নির্বাণের পানে। নির্বাণ তখন ঠোঁটের কোনে ছোট হাসি ঝুলিয়ে বলে, “নাও পার্ফেক্ট।”

স্পর্শী এইবার অবসন্ন কন্ঠে বলে, “ঘুমোই আমি এখন?”

নির্বাণ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “আমি মেহেদী পড়াতে জানলে হয়তো তোমার কষ্টটা লাঘব পেতো।”

নির্বাণের কন্ঠে স্পষ্ট আবেগ। মুহূর্তেই স্পর্শী নির্বাক,নিরুত্তর হয়ে তাকিয়ে রইলো নির্বাণের পানে। খুঁজে পেল না সে উত্তর দেওয়ার মত কোন শব্দ।
#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-১৫

দিন শুরু হয়েছে কিঞ্চিৎ প্রহর পূর্বে। সময় গড়িয়ে রোদের প্রখরতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই বাড়ছে ব্যস্ততা। অভ্যন্তরীণ কাজে মশগুল গৃহকর্মীরা। পাড়া-পড়শীর আনাগোনা বেশ। ক্ষণিকের জন্য এসে গল্প করে খোঁজ-খবর নিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো কোন ছুঁত পেলই গুজব রটাবেন এই আশায়। পিছনে, বাগানের দিকে হলুদের জন্য সাজানো হচ্ছে স্টেজ। কাজ ঠিকমত হচ্ছে কি-না তারই তদারকি করছে নির্বাণ। স্টেজের বিপরীত মুখে খানিকটা দূরে, বাবুর্চিদের দিকে নজর রাখছে নাহিদ আর রাদিন সাহেবের ছোট ছেলে মৃদুল। বাকিরা অন্যসব কাজে নিয়োজিত। খালি হাতে বসে নেই কেউ-ই।

লাকড়ি চুলোর তাপে নাহিদের প্রায় যায় যায় অবস্থা। মাথার ঘাম ঝরছে চিবুক বেয়ে পা পর্যন্ত। উঁচু নাকের ডগায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝলমল করছে রৌদ্রের কিরণে। হাঁপিয়ে উঠার ফলে মুখমণ্ডল ধারণ করেছে রক্তিম বর্ণ। কিঞ্চিৎ আরামের আশায় গিয়ে দাঁড়ায় নিম গাছের বিশুদ্ধ ছায়ার তলে। ঠেশ্ দিয়ে দাঁড়ায় গাছের সাথে। বা হাত উঁচিয়ে বাতাস করতে থাকে। নাহিদের এমন অবস্থা দেখে মৃদুল এগিয়ে এসে বলে,

— কি ভাই? এইটুকুতেই অবস্থা খারাপ?

নাহিদ বিরক্তিকর কন্ঠে বলে, “নাইলে কি? এত গরমে চুলোর সামনে দাঁড়ানো যায়? ইতিমধ্যে হাফ তান্দুরি হয়ে গিয়েছি আমি।”

মৃদুল হেসে বলে, “বিয়ে খেতে এসেছো, খাটনি তো করতেই হবে মামু।”

“তেঁতুলের চাটনি আজাইরা খাটনি। আগে জানলে একবারে বিয়ের দিনই আসতাম আমি। কোথায় ভেবেছিলাম মাহিন ভাইয়ের বিয়েতে এসে সুন্দরী ললনাদের পটাবো, খাবো-দাবো ফুর্তি করবো। সেগুলো এখন গুড়ের বালি। গরমে মরছি এখন।”

মৃদুল সান্ত্বনা স্বরূপ নাহিদের কাঁধে দু’টো চাপড় মেরে বলে, “থাক ভাই! কষ্ট পাইও না। নিজের বিয়েতে সকল শখ-আহ্লাদ পূরণ করে নিও।”

নাহিদ ভ্রু কুঁচকে বলে, “তুই কি বলতে চাইছিস? নিজের বিয়েতে বউ রেখে অন্য মেয়েদের পিছনে ঘুরব আমি? এইসব নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা কই পাস তুই?”

মৃদুল কিছু বলার পূর্বেই পিছন থেকে কেউ ভরাট কন্ঠে বলে উঠে, “কাজ বাদ দিয়ে তোরা এইখানে কি করিস?”

নাহিদ চোখ তুলে সামনে তাকায়। নির্বাণকে সামনে দেখতে পেয়ে নাহিদ অবসন্ন কন্ঠে বলে, “ওইদিকে কি গরম দেখসো ভাই? দাঁড়ানো যাচ্ছে না জাস্ট। তাই এইদিকে এসে দাঁড়িয়েছি৷”

নির্বাণ ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে প্রখর কন্ঠে বলে, “যতসব কাজে ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা। যাহ! এখনই ওইদিকে। দেখ কাজ কতটুকু এগিয়েছে।”

মৃদুল ঝারি শুনে আর দাঁড়ানোর সাহস পেল না। আগেভাগেই কেটে পড়লো৷ নাহিদ মুখটা ছোট করে বিরবির করে বলে, “জল্লাদ একটা।”

নির্বাণ পুনরায় তাড়া দিতেই নাহিদ বলে উঠে, “আরেহ ভাই! যাচ্ছি তো।”

নাহিদ মুখ ঘুচিয়ে সামনের দিকে যেতে নিলে পিছন থেকে নির্বাণ ডেকে উঠে, “এই নাহিদ শুন!”

নাহিদ পিছন ঘুরে বলে, “আবার কি?”

“বাবুর্চিদের বলেছিস না, কোন খাবারে যাতে বাদাম জাতীয় কিছু বা বাদামের পেস্ট ব্যবহার না করে?”

নাহিদ আশ্বস্ত কন্ঠে বলে, “হ্যাঁ ভাই বলেছি। একবার, দুইবার না তিনবার বলেছি।”

“তাও খেয়াল রাখিস। ভুল হলে তোর খবর আছে।” শাসিয়ে বলল কথাটা নির্বাণ।

নাহিদ মাথা দুলিয়ে বলে, “ভুল হবে না। নিশ্চিন্তে থাকো। কিন্তু বাদামে এলার্জি কার? আমাদের বাসার কেউ আছে বলে তো মনে হয় না।”

নির্বাণ অকপট রাগ দেখিয়ে বলে, “তোকে এত জানতে হবে না। যে কাজ দিয়েছি সেটা কর, যা।”

নাহিদ কথা বাড়ালো না। আপন মনে বিরবির করতে করতেই নিজের স্থান ত্যাগ করলো।

_________________

দুপুরের খাবারের জন্য ডাকতে বাগানের দিকে আসলো স্পর্শী। নাহিদদের বলে ভিতরে পাঠিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল নির্বাণের দিকে। উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে নির্বাণ। ঘর্মাক্ত শরীরের সাথে লেপ্টে আছে বেগুনি রঙের শার্টটি। তারই সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে দুইটি অল্প বয়সী ছেলে। কাজে গাফলতি করায় তাদেরকেই অতি তীক্ষ্ণ কন্ঠে ঝাড়ছে নির্বাণ। কথার ধারেই কপোকাত করছে তাদের। ছেলেদের অভিব্যক্তি বেশ শোচনীয়। মনে মনে হয়ত এইটাই আওড়াচ্ছে, “ছেড়ে দে ভাই কেঁদে বাঁচি।”
স্পর্শী নির্বাণের পিছনে দাঁড়িয়ে নীরবে সবটাই দেখলো। মিনমিনে স্বরে নিজেই বলল, “এই যে এইটা হচ্ছে মানুষটার আসল রূপ। ধমকা-ধমকির ছাড়া একটা কথাও বলতে পারে না। কি হয় একটু নরম কন্ঠে কথা বললে?”

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে সাহস জুগিয়ে স্পর্শী মৃদুস্বরে ডাকলো, “এই যে শুনছেন?”

মিষ্টি কন্ঠে বলা বাণীটি নির্বাণের কর্ণগোচর হওয়া মাত্র ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায় সে। স্পর্শীকে দেখামাত্র তীর্যক দৃষ্টি হয় নরম। সে ছেলে দুইটাকে যেতে বলে স্পর্শীর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। মূহুর্তেই তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর নামিয়ে কোমল কন্ঠে বলে, “হুম বল।”

নির্বাণের কন্ঠে হঠাৎ পরিবর্তিত হতে স্পর্শী বেশ চমকায়। কিন্তু পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে বলে, “মা, আপনাকে খাবারের জন্য ডাকছেন। ভিতরে আসুন।”

“আচ্ছা, চল।”

স্পর্শী নিঃশব্দে এগিয়ে যায়। তারই পাশে নির্বাণও হাঁটা দেয়। তিন-চার কদম এগিয়ে যেতেই নির্বাণ বলে উঠে, “তোমার বা হাতটা দেখাও তো?”

স্পর্শী বিস্মিত কন্ঠে বলে, “কেন?”

নির্বাণের কন্ঠে স্পষ্ট আদেশ, “দেখাতে বলেছি।”

স্পর্শী কিছুটা মন ক্ষুণ্ণ করে থেমে দাঁড়ায়। অতঃপর বা হাতটা উঁচিয়ে নির্বাণের সামনে তুলে ধরে। নির্বাণ আলতোভাবে স্পর্শীর হাতটা টেনে ধরে নিজের সামনে ধরে। মুহূর্তেই স্পর্শী মাঝে বয়ে যায় আলাদা এক শিহরণ৷ কিছুটা সময় এভাবেই নীরবে অতিবাহিত হিতে স্পর্শী নিজেকে স্বাভাবিক করে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে নির্বাণের দিকে তাকিয়ে বলে, “দেখা হয়েছে?”

নির্বাণ ভ্রু কুঞ্চিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “তোমার মেহেদী লাল হলো না কেন? মেহেদীটা কি ভালো না?”

নির্বাণের প্রশ্ন শুনে স্পর্শী কিঞ্চিৎ হেসে উঠে বলে, “এই মেহেদীর রঙ হতে একটু সময় লাগে। চিন্তা নেই, সন্ধ্যার মধ্যে রঙ হয়ে যাবে।”

নির্বাণ ঠোঁট যুগল গোল করে বলে, “অহ আচ্ছা।”

“হুম। এখন চলুন ভিতরে।”

___________________

হলদেটে আকাশে সূর্য মহাশয় ক্ষান্ত হয়ে নিমজ্জিত হওয়া মাত্র আগমন হলো আঁধারের। জ্বলে উঠলো রঙে-বেরঙের মরিচ বাতি, সজ্জিত দেখালো শেখ বাড়ি। তবে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো আরও ঘণ্টাখানেক পরে। মেহমানের আনাগোনা বাড়তেই বাগানের কানায় কানায় দেখা দিল কোলাহল। বাড়ির ছেলেরা সব অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হয়ে গেলেও, পিছিয়ে রইলো মেয়েরা। তাদের সাজ এখনো শেষ হয়নি। ছেলেরা সব হতাশাজনক নিঃশ্বাস ছেড়ে যে যার মত লেগে পড়লো কাজে।

বাহিরে আয়োজন সব ঠিক-ঠাক আছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করে ঘরে ফিরে এলো নির্বাণ। এগিয়ে গেল নিজ রুমের দিকে। দরজা ভিজিয়ে রাখা ছিল বিধায় নক না করেই রুমের ভিতর ঢুকে পড়লো সে। অতঃপর কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনিত হলো কারো সুক্ষ্ম কন্ঠের চিৎকার। হতভম্ব হয়ে নির্বাণ পড়লো নিজ স্থানেই। দৃষ্টি বড় বড় করে তাকালো সে, স্পর্শী তখন আঁচল ঠিক করতে ব্যস্ত। কোন মতে আঁচল ঠিক করে প্রখর কন্ঠে বলে সে, “নক করে আসবেন তো নাকি?”

ঘটনাক্রমে বুঝে উঠতে নির্বাণের কিঞ্চিৎ মুহূর্ত লেগে যায়। অতঃপর ঠোঁটের কোণে সুক্ষ্ম হাসি ফুটিয়ে সে বলে, “রুম থেকে শুরু যেখানে গোটা মানুষটাই আমার সেখানে নক করার প্রয়োজন আছে কি?”

স্পর্শী হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায় নির্বাণের পানে৷ ঠোঁট যুগলের মাঝে আপনা-আপনি সৃষ্টি হয় দূরত্ব। সে মোটেও এমন এক উত্তরের আশা করেনি। ব্রীড়ানতা,বিমূঢ়তায় স্পর্শী খেই হারায়। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শুধু। নির্বাণ সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে, “আমার রূপ বাড়ে নি যে এইভাবে তাকিয়ে আছো।”

স্পর্শী দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। লজ্জায় মাথা কাঁটা যাচ্ছে তার এখন। মানুষটা এমন কেন? উফফ! নির্বাণ স্পর্শীর দিকে এতটা গুরুত্ব না দিয়ে দরজা ভিজিয়ে দিল। অতঃপর নিজের ব্যাগের কাছে এগিয়ে কি যেন খুঁজতে থাকে। স্পর্শী একপলক নির্বাণের দিকে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার ক্ষীণ চেষ্টা করলো৷ মনোযোগ দিল নিজ কাজে।

নির্বাণ ব্যাগ থেকে একটা চেক বইয়ের মত কিছু বের করে উঠে দাঁড়ালো। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো স্পর্শীর পানে। স্পর্শী হাতে সেফটিপিন নিয়ে পিঠের দিকে ব্লাউজের সাথে শাড়ি পিন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছে। নির্বাণ তা দেখে নিঃশব্দে এগিয়ে গেল। মুহূর্তেই স্পর্শীর হাত থেকে সেফটিপিনটা নিয়ে নিজে লাগিয়ে দিল। ঘটনাচক্রে স্পর্শী ভড়কে উঠে। আয়নার ভিতর দিয়েই গোল গোল চোখে তাকায় নির্বাণের দিকে। নির্বাণ কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে, “এদিকে ঘুরো।”

নির্বাণের একবাক্যে স্পর্শী রোবটের ন্যায় ঘুরে দাঁড়ায়। নির্বাণ ভালো মত স্পর্শীকে একবার পরোক্ষ করে নেয়। ক্ষণেই তার চোখ দিয়ে আঁটকায় নিষিদ্ধ একস্থানে। নির্বাণ দ্রুত নিজের দৃষ্টি সংযত করে দৃঢ় কন্ঠে বলে, “সেফটিপিন দাও কয়েকটা আমায়।”

স্পর্শী নির্বিকার ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে কয়েকটা সেফটিপিন নিয়ে নির্বাণকে দেয়। নির্বাণ হাতের বইটা বিছানার উপর রেখে স্পর্শীর নিকটে এসে হাটু গেড়ে বসে। স্পর্শীর কোমরের পার্শ্বে শাড়ি ঠিক মত টেনে সেফটিপিনের সাহায্যে ভালোমত এঁটে দিয়ে বলে, “শাড়ি ঠিকমত পড়তে না পারলে পড়ো কেন? যতসব মানুষের মাথা নষ্ট করার ধান্দা।”

কথাটা বলেই নির্বাণ উঠে দাঁড়ায়। বিছানার উপর থেকে বইটা নিয়ে দ্রুত গতিতে পা চালিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আর স্পর্শী পুনরায় হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। তার দিনটাই আজ বোধহয় বিহ্বলময়।
#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-১৬

চারদিকে প্রচন্ড কোলাহল। দানব আকৃতির স্পিকারগুলোয় বাজছে আড়ম্বরি গান। গানের প্রখর শব্দ কম্পন সৃষ্টি করছে প্রকৃতির মাঝে। বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে এদিক-সেদিক। বড় গুরুজনেরা বাগানের নীরব একাংশে দাঁড়িয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন নিজেদের মধ্যে। উচ্চশব্দে রাদিনের ক্ষতি হতে পারে বলে বাহিরে আনা হয়নি তাকে। রুমে রাখা হয়েছে বিশ্রামের উপর। হলুদ ছোঁয়ানোর পূর্বে বাহিরে নিয়ে আসা হবে তাকে। বাড়ির ছেলে-মেয়েরা ব্যস্ত মেহমানদের আপ্যায়ন করতে। ব্যস্ততার হাত থেকে যেন আজ কারো নিস্তার নেই।
ব্যস্ত,কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের মাঝেও এক জোড়া আঁখিপল্লব বারংবার ঘুরে ঘুরে দেখছে শ্যামময়ী এক মানবীকে। মোহগ্রস্ত সেই দৃষ্টি। যতবারই মানবটি কাজ ফাঁকি দিয়ে দেখছে মানবীকে ততবারই তার বক্ষঃস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে। মানবীর শব্দহীন হাসি যেন ঝংকার তুলছে মানবের কর্ণকুহরে। বাড়ছে মনে মানবীকে নিরন্তর দেখার তৃষ্ণা। একবারে যে এই দেখা শেষ হবার নয়। সময়ের কাটা সেকেন্ড, মিনিট পেরিয়ে ঘন্টায় পদার্পন করতেই মানবটির মনে হলো মেয়েটি যে-বারই শাড়ি পরিধান করে সে-বারই তার অবস্থা করুণ হয়। নির্মল পুরুষালী মনে কলঙ্কের শিলমোহর পড়ে। জাগ্রত হয় নিষিদ্ধ ইচ্ছে। বিচলিত, অনিয়ন্ত্রিত হয় হৃদয়। আগে তো কখনো কোন নারীকে দেখে এমন বোধ হয়নি তার, তাহলে এই মানবীর বেলায় কেন এমন হয়?
জীবনের ঊনত্রিশ বসন্ত পেরিয়েও যে মন কারো কাছে ধরা দেয়নি, কারো সৌন্দর্যের ধার মাপেনি, দুর্বল হয়নি। সেই মন কি-না সর্বশেষ হারলো চৈত্র মাসের এক অপরাহ্নে? এই এক নারীতে? সে স্থির দৃষ্টিতে তাকায় সামনে। এমন সময় পাশ থেকে মন্থর কন্ঠে কেউ বলে,

“অবশেষে বুঝি পাথরের বুকে ফুল ফুটলো?”

নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলো নির্বাণ। ক্ষণেই কন্ঠে উৎস খুঁজে বের কর‍তে সে পাশ ফিরে তাকালো। নাহিদের ভ্রু উঁচানো দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হলো তার। স্বগতোক্তি কন্ঠে বলল, “কি বলতে চাইছিস?”

“আরেহ ভাই! আর কত ঢং করবি? স্বীকার যা তুই ভাবীর প্রেমে পড়েছিস।”

কথাটা কর্ণগোচর হওয়া মাত্র নির্বাণ বিব্রতবোধ করলো। নিজের ভিতরকার অনুভূতি কোনমতে লুকায়িত করে শক্ত গলায় বলল, “এইখানে কি করিস তুই? তোকে না গেটের দিকে থাকতে বলেছি আমি? যা, এখনই ওইদিক যা।”

“কথা ঘুরাচ্ছ ভাই? আমার কাছে স্বীকার করতে এত লজ্জা?”

“মাইর না খাইতে চাইলে এখনই চোখের সামনে থেকে দূর হো।”

নাহিদ মুখ বাঁকিয়ে বলে, “স্বীকার করলি না তো? আচ্ছা, ঠিক আছে। আরেকবার খালি ভাবীর দিকে তাকা তুই, ডায়রেক্ট ভাবীকে নিয়েই তোর সামনে হাজির হবো।”

নির্বাণ রোষাগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “আমার হাতে মাইর খাস না অনেকদিন তাই না? আচ্ছা আয়, তোর পিঠটা একটু দেখে দেই।”

নাহিদ মুহূর্তেই একদম পিছিয়ে গিয়ে বলে, “মৃদুল ডাকছে আমায়। যাই আমি!”

কথাটা বলেই নাহিদ উল্টোপথে হাঁটা দিল। তবে কিঞ্চিৎ মুহূর্ত না পেরুতেই নাহিদ পুনরায় ফেরত এসে বলে, “ভাবীর দিকে আর তাকাবি না। তোর দৃষ্টিতে আমার ভাবীর নজর লেগে যাবে।”

কথাটা বলে নাহিদ আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে দৌড়ে পালালো। নির্বাণ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে একনজর তাকালো স্পর্শীর পানে। অতঃপর নিজ কাজে মনস্থির করলো।

___________________

নিশীথের কৃষ্ণ আকাশে দীপ্তিময় লক্ষ নক্ষত্রে মাঝে অর্ধ-বৃত্তাংশ চন্দ্রমা অকৃপণ হাতে দ্যুতি বিলাচ্ছে। নিজের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে স্নিগ্ধ দ্যুতির ছটা দক্ষিণা জানালার শিকল পেরিয়ে হামাগুড়ি খেল মেঝেতে। একাংশ স্নিগ্ধতা গিয়ে ঠেকল বিছানায় ঘুমন্ত কৃষ্ণময়ী মানবীর চরণে৷ পায়ের সাথে লেপ্টে থাকা রুপালি পায়েল দু’টি আলোর সংস্পর্শে এসে মুক্তার ন্যায় চিকচিক করল। রুমে প্রবেশ করা মাত্র সর্বপ্রথম সেদিকেই চোখ গিয়ে আটকায় নির্বাণের। ক্লান্ত দৃষ্টিতে ছড়ায় মগ্নতা। দরজার সামনে থেকে সরে আসলো নির্বাণ, খুব সাবধানতার সহিত দরজা আঁটকে দিল। শব্দ হতে দিল না একটুও। অতঃপর দেয়াল হাতড়ে জ্বালিয়ে দিল নীলাভ আলোটি। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো স্পর্শীর পানে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মেয়েটি, চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে মুখ,গলদেশে। নির্বাণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়নের পাঞ্জাবিটা খুলে ফেলে। গা থেকে তার ঘামের তীব্র গন্ধ আসছে, গোসল করা প্রয়োজন। নির্বাণ ব্যাগ থেকে এক সেট কাপড় বের করে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
ঘন্টাখানিক বাদে নির্বাণ বেরিয়ে আসে। বা হাতে তোয়ালে ধরে ঘর্ষণ চালায় মাথায়। ভালোমতো চুলের পানি মুছে নিয়ে তোয়ালেটা চেয়ারের উপর ফেলে দেয়। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বিছানার দিকে। স্পর্শীর পাশে এসে আধশোয়া হয়ে বসে সে। কিছুটা ঝুঁকে ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে খুব সপ্তপর্ণে স্পর্শীর মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। গলদেশ হতেও সরিয়ে দেয়। মেয়েটা বোধহয় গোসলের পর ভালোমত মাথা মুছেনি। চুলে এখনো সিক্ততা বিরাজমান। স্পর্শীকে দেখতে দেখতেই ঘোর লাগলো নির্বাণের। নিজেকে নিজেকেই প্রশ্ন করলো,

“আসলেই কি আমি তোমার প্রেমে পড়েছি? এই পাষাণ হৃদয়ে কি আদৌ কাউরো জন্য ভালোবাসার অনুভূতি জন্মাতে পারে?”

হঠাৎ নির্বাণের দৃষ্টি গিয়ে স্থির হয় স্পর্শীর অধর যুগলে। কিনারে এখনো লালাভ রঙটি লেপ্টে আছে। নির্বাণ এইবার বৃদ্ধা আঙুল ছোঁয়ালো সেখানে, ধীর গতিতে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করলো রঙটি। মুহূর্তেই ঘুমের ঘোরে কেঁপে উঠলো স্পর্শী। খুব আদুরে ভঙ্গিতে নির্বাণের হাত জড়িয়ে ধরে অন্যপাশ ফিরলো সে। মুহূর্তেই নির্বাণ স্পর্শীর আরও নিকটে ঝুঁকে পড়লো। মুখশ্রী গিয়ে ঠেকলো স্পর্শীর গলদেশে। নির্বাণ ভাবলো, এইবার হয়তো মেয়েটার ঘুম ভেঙ্গেই গেল। কিন্তু না এমনটা হলো না। স্পর্শী তন্দ্রাঘোরেই নিমজ্জিত থাকলো। নির্বাণ এইবার কিঞ্চিৎ হাসলো, সেচ্ছায় পিছন থেকেই জড়িয়ে ধরলো স্পর্শীকে। বিরবির করলো আনমনেই,

“তোমাকে আমি ভালোবাসি কি-না জানি না তবে আমার তোমাকেই চাই।”

_______________

এলার্মের কর্কশ ধ্বনি কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই তন্দ্রা কাটলো স্পর্শীর। আধনিভন্ত নয়নে চোখ বুলালো চারদিকে। বালিশের পাশে হাতড়ে মোবাইলটি খুঁজে বের করে এলার্ম অফ করলো। তন্দ্রাভাব পুরোপুরি কাটতেই বিব্রতবোধ করলো সে। স্পর্শী প্রথম দিনকার মত আজও নির্বাণের পায়ের উপর পা উঠিয়ে দিয়েছে। বিষয়টা যত না স্পর্শীর নিকট লজ্জাজনক ঠেকল তার চেয়েও বেশি অস্বস্তিবোধ করলো। অতঃপর নিজের উদরে নির্বাণের বলিষ্ঠ হাত স্থির দেখে স্পর্শী ভ্রু কুঁচকে বিরবির করল, “রাতে আমি তার উপর হাত-পা ফালাই নাকি সে আমার উপর, কোনটা?”

সঠিক উত্তর পেল না স্পর্শী। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আস্তে করে নির্বাণে হাত নিজের উপর থেকে সরিয়ে উঠে পড়লো। নির্বাণ উঠার পূর্বেই আগে ভাগে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো সে। লজ্জায় নাকি সংকোচে তা বুঝা গেল না।

______________

বিয়ের অনুষ্ঠান দুপুরে হলেও দীর্ঘপথ এবং যানযটের কারণে বরযাত্রীদের নিজ গন্তব্যে এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় বিকেল ঘনিয়ে আসে। গেট দিয়ে ঢোকামাত্র কনেপক্ষের সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বরযাত্রীদের আপ্যায়নে। খাবারের সময় বহুক্ষণ পূর্বেই অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় আগেই বরযাত্রীদের খেতে বসানো হলো। মুহূর্তেই টেবিল সাজানো হলো হরেকপদের রান্নায়। কারো বুঝতে দেরি নি বরযাত্রীদের জন্য-ই বিশেষ আয়োজন। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসায় বেশির ভাগ সবাই ক্ষুধার্ত ছিল। যার দরুন খাবার আসার পর পরই সকলে আহার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
খাওয়া-দাওয়া শুরুর মিনিট দুই-এক পরেই নির্বাণ স্পর্শীর পাশে এসে বসে। মন্থর কন্ঠে বলে,

“রোস্ট খাওয়ার প্রয়োজন নেই তোমার।”

কথাটা শ্রবণ হতেই স্পর্শী ভ্রু কুঁচকে তাকায়৷ কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কেন?”

“ওটাতে বাদামের পেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে। তোমার না বাদামে সমস্যা? ওইটা বাদে বাকিগুলো তুমি খেতে পারবে।”

স্পর্শী অবাক হলো এই দেখে একবার বলাতেই নির্বাণের মনে আছে তার কোন খাবারে প্রবলেম। সেই সাথে আলাদা ভালোলাগাও করলো মনের গহীনে। সে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,
“আমি এইভাবেও রোস্ট খেতাম না, এইটাতে বাদামের পেস্ট ব্যবহার হয় আমি জানি। তবে আপনি কিভাবে জানলেন?”

“বাবুর্চি থেকে জিজ্ঞেস করে এসেছি।”

মুহূর্তেই স্পর্শীর ঠোঁটের কোনে ছেঁয়ে গেল তৃপ্তির হাসি। মানুষটার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেয়াল রাখা যে তাকে প্রতিনিয়ত দুর্বল হতে বাধ্য করছে। নিভৃতেই জায়গায় গড়ে নিচ্ছে তার বক্ষঃস্থলে। তার জন্য এতটা সাবধানতা অবলম্বন হাতে গোনা কিঞ্চিৎ মানুষজনই করেছে৷ সেই মানুষের তালিকায় আজ নির্বাণ পাকাপোক্তভাবেই জায়গায় করে নিয়েছে। স্পর্শী কিছু না মুচকি হেসে খাওয়া শুরু করে।

খাওয়া শেষে নির্বাণ কিঞ্চিৎ মুহূর্তের জন্য দৃষ্টির আড়াল হয়ে যায়। স্পর্শী চারদিকে নির্বাণকে না পেয়ে এক কিনারে গিয়ে বসে। ক্লান্ত লাগছে তার বেশ। স্পর্শী একটু ঝিমিয়ে বসে পার্স থেকে মোবাইল বের করে। অকস্মাৎ তার সামনে ছোট একটি ভ্যানিলা আইসক্রিমের বাটি তুলে ধরে কেউ। স্পর্শী পাশ ফিরে তাকায়। মুহূর্তেই দৃষ্টির মনিতে নির্বাণের মুখশ্রী ভেসে উঠে। স্পর্শী কৌতূহলী দৃষ্টিতে নির্বাণের দিকে তাকাতেই নির্বাণ মন্থর কন্ঠে বলে,

” ধরো এইটা। বাদামের জন্য পায়েস বা জর্দা কোনটাই তো খেতে পারোনি তুমি।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here