ডেন্জারাস_ভিলেন_হাজবেন্ড পর্ব ১১

#ডেন্জারাস_ভিলেন_হাজবেন্ড

#লেখিকা_তামান্না

#পর্ব_১১

জারা বাসার মধ্যে নিজের পা রাখতেই চিৎকার দিয়ে উঠে। তার চিৎকার ফায়যানের কান অব্দি পৌঁছনোর আগেই মেহরান জারাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দে।

ফ্লোরে হিচকে গিয়ে পড়লো সে। ফায়যান একবার দরজার দিকে তাকাতেই মেহরানকে দেখতে পেল। কিন্তু সে জারাকে দেখতে চেয়েছিল। মেহরান দাঁত কেলিয়ে দরজা বন্ধ করে দে। ফায়যান চোখ ঘুরিয়ে সানগ্লাস খুলে ঠিক করে আবার পড়ে নে।

মেহরান দরজা বন্ধ করেই জারার দিকে শয়তানের মতো হেসে হেসে তাকায়। ফায়যান গাড়ি স্টাট দিয়ে নিজের অফিসের জন্যে রওনা দে।

মেহরান জারার কাছে এসে দাঁড়িয়ে তাকে দেখতে থাকে। পুরো ফ্লোর রক্তাক্ত হয়ে গেছে। জারাকে মেহরান কষ্ট দেওয়ার জন্যে এমন নিষ্ঠুরতার ব্যবস্থা করেছে। যা জারার ভাবতেও কষ্ট লাগছে। সে তো মেহরানকে নিজের বোনের মতোই ভাবে কিন্তু মেহরান তো নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝে নাহ।

—“কি কেমন লাগছে কষ্ট হচ্ছে নাকি? উহহ কিছু হবে না। এগুলো তো সিম্পল ব্যথা তুই যে আমার চুলের উপর হত্যাচার করেছিস এর জন্যে তো আরো বড় শাস্তি দিবো। এখনো তো সিম্পল কিছু হুল তোর পায়ে ভেতর ঢুকেছে। এতে তো কিছুই যায় আসে না। আগে আগে দেখ তোর এই সুন্দর সুন্দর ফর্সা চামড়ার কি অবস্থা করি।

জারার ব্যথায় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে আসছে। তার নিজের বোন না হয়েও একজন বোনের মতো আপুকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে ভেবে জারার মন ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছে।
সে ছলছল নয়নে মেহরানের দিকে তাকিয়ে বলে।

—“কেনো এমন করছো? আমি যা করেছি তার সমাধান এখন তো সামনেই তুমি আগের চেয়ে বারো সুন্দর করে নিজের চুলকে ঠিক করেছো।

মেহরান শুনে রেগে বলে।

—“ওহহ তার মানে আগে আমি খুব খারাপ দেখতাম। বাহ আসল কথা মুখ থেকে বের হলো বুঝি! ভালো…..খুব…. ভালো টাইম তো আজ এলোই। তোমার সাথে গেইম খেলার। এতো দিন আমার সাথে গেইম খেলেছিলে। এবার একটু তোমার সাথে গেইম খেলব কি বলো? গালে হাত দিয়ে মেহরান জারার দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে।

জারা ভেবে পাচ্ছে না কেউ এতো নিষ্ঠুর কেমনে হয়।
সে যতোই মেহরানকে দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে কারণ মেহরানের মনে একটুও দোয়া হচ্ছে না তার বোনটার প্রতি। সে উল্টো টেবিলের উপর পায়ের উপর পা রেখে বসে আছে।

—“কি ভাবছো আমাকে দেখে? ওহ ভাবছো তোমাকে কিছু খেতে দিচ্ছি না নিজেই আপেল ( চাবিয়ে চাবিয়ে) খাচ্ছি। দেবো দেবো তোমাকে খেতে দেবো।

মেহরান পুরো আপেলটা খেয়ে আপেল এর শেষ অংশটা টেবিলের উপর রাখে। সে এক ঢোকর দিয়ে হাই তুলে বলে।

—“যাক পেটটা শান্তি করলাম এখন শাস্তি দিতে তো আরো মজা আসবে। জানো আজ না তোমার সাথে খেলা করার প্লেনটা কে বানিয়েছে ? চোখজোড়া সরু করে জারার দিকে তাকিয়ে বলে। ওহ জানবা কিভাবে? তুমি তো তোমার প্রিয়া দোস্তের সাথে আড্ডা মারছিলে পরে আমার সাথে করা কান্ডে হাসতে ছিলে(দাঁত কটমট করে বলে)। এখন না……..আমার হাসার পালা। আজ আম্মুকে তোমার করা বিরাট প্লেনের কথা বলেছি। তাই আম্মু তোমাকে স্পেশাল শাস্তি দিবে খুববববব স্পেশাল। হাহাহা হেসে হেসে সে পাশে থাকা ফুলদানি থেকে ফুল ছিঁড়ে জারার উপর ছুঁড়ে মারছে।

জারার থেকে মেহরানের প্রতিটা কথা বিষাক্ত লাগছে। এক এক কথা যেনো তার হৃদয়ে ছুরিকাঘাত করছে। কিন্তু সে নিরুপায় কিছুই যে সে করতে পারছে না। শুধু দুই চোখজোড়া দিয়ে দেখছে। না পারছে চিৎকার দিয়ে কাউকে সাহায্য এর জন্যে ডাকতে আর না পারছে নিজে কোনো ব্যবস্থা করতে। কারণ তার পায়ের মধ্যে তিনটা হুল ঢুকে পায়ের কাহিল অবস্থা করেছে মেহরান। সেখান দিয়ে জারা হুলগুলো বের করতে চেয়েও পারল না তার আগে মেহরান জারার হাত পিছের দিকে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে দে সাথে মুখে কাপড় পেঁচিয়ে দে যেনো কোনো ধরনের আওয়াজ না করতে পারে।

ব্যথায় কাতরে জারার হৃদয় নিস্তদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার হৃদয়টা কোনো ভাবে স্পন্দন হচ্ছে আবার প্রসারণ হচ্ছে। স্পন্দনটা এমনভাবে হচ্ছে যেনো তার হৃদয় চিৎকার করে কাঁদছে। কিন্তু দেখার জন্যে কেউ নেই।

—“ও আল্লাহ ও…..আল্লাহ আমার সাথেই কেনো এমন হয়? ছোট থেকে এতিম বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছো এখন কি সেভাবেই কষ্ট দিয়ে পৃথিবী থেকে কেড়ে নিবে। আজিই কি আমার শেষদিন? হয়তো হ্যাঁ কেউ নেই আমার জীবনটা শুধরিয়ে সুন্দর ভাবে সাজানোর। তাই তো তুমি আমাকে ডাকছো। জানো যদি সত্যিই আজ তুমি আমাকে ডাকছো তাহলে আমি নিষেধ করব না। আমি চলে আসব তোমার কাছে…….ভেবে জারার চোখের অশ্রু পরা আরো বেড়ে গেল। কিন্তু মুখে নেই কোনো আওয়াজ শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে।
ও…..ও আল্লাহ হয়তো আজ আমার শেষ পরীক্ষা হয়তো তোমার এই বান্দীকে তুমি নিজের কাছে নিয়ে যাবে। আমার একটাই শেষ আশা ভালোবাসা আল্লাহ। আমার ভালোবাসার মানুষটা যে কে শুধু একবার তাকে দেখতে চাই। ও আল্লাহ সহায় হও আল্লাহ। জারার ভাবনা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে শুরু করে।
লা….ইলা…হা…ইল্লাহ…আন…তা সুবহান্নাকা ইন্নি…কুনতু মি…নাজ জালেমীন। ঠোঁটের উপর পড়েই জারার চোখ মিনমিন করছে বন্ধ হওয়ার পথে তার নয়নজোড়া।

__________________

ফায়যান ঠোঁটের উপর বাঁশি বাজিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে গানের সাউন্ডও একটু বাড়িয়ে দিয়েছে। সে গাড়ির দরজার চার গ্লাসও ওপেন করে দিয়েছে। সে আরো হাই স্পিড দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।
সে কোনো মজার জন্যে এমন করছে না। সে নিজেকে শান্ত করার জন্যে এমন করছে।

জারাকে পৌঁছনোর পর সে ড্রাইভিং করে নিজের অফিসের দিকে যাচ্ছে ঠিকিই কিন্তু তার মন – রুহ যেনো অফিসে যেতে বারণ করছে। অফিসের থেকে ফায়যানের গাড়ি আর তেমন একটা বেশি দূরে নয়। এখন শুধু একঘণ্ঠা লাগবে পৌঁছাতে।

সে গাড়ি চালাচ্ছে তো চালিয়েই যাচ্ছে থামার বিন্দুমাএ নাম নিচ্ছে না।

—“উফফ হচ্ছেটা কি? এতোক্ষণ ধরে সব ঠিক ছিল তাহলে এখন কেন এমন লাগছে? বার বার জারার কথায়ই কেন মাথায় আসছে! জারার কোনো বিপদ হয়নি তো ? উওেজিত হয়ে যায়। ওহ না কিভাবে বিপদ হবে সে তো তার বাসার মধ্যেই আছে তাহলে বিপদ হওয়ার কথা না আমি শুধু শুধু একটু বেশিই ভাবছি।

ফায়যান ভেবে নিজের মাথা ঝাকুনি দিল।

—“হয়তো এগুলো সব আমার ভ্রম এর বেশি কিছু না…… মানে না। সে মুখ ফুসকে গাড়ি চালাতে চালাতে বলে।

এভাবে সে অফিসের দিকে আনমনে গাড়ি চালিয়ে আসছে। হাই রোডে এসে যখন ট্রাফিকে রেড লাইট পড়লো তখন ফায়যান গাড়ি থামাল না। বেখেয়ালি ভাবে গাড়ি চালিয়ে যায়। তার সামনেই এক মালবাহী ট্রাক এগিয়ে আসতে থাকে যেই ট্রাক বিপরীত রোডে যাবে।

মালবাহী ট্রাকের ড্রাইভার খেয়াল করল গাড়িটাকে। সাথে সাথে সে হর্ন বাজানো শুরু করে। ফায়যান হর্নের সাউন্ড শুনে।

—“ওহহহ নোওওও। গাড়ি তড়িঘড়ি ডান দিকে করে ব্রেকআপ মারে।

গাড়িটা একটা পাথরের কাছে এসে লেগে থেমে যায়। সে গাড়ি বন্ধ করে জোরে জোরে দীর্ঘশ্বাস নে।

—“ওহ আল্লাহ তুমি তো মহান আলহামদুলিল্লাহ বাঁচিয়েছো। উফ কি যে করব আল্লাহ? আমি যে কোন খেয়ালে পড়ছি এখন তো শুধু জারা জারা মনের মধ্যে ঘুরে। না আর পারছি না জারাকে যতোক্ষণ কাছ থেকে দেখব না ততক্ষণ শান্তি পাব না। গাড়ি ব্যাক করে জারার বাসায় যাবোইই। ওয়েট ওয়েট কিভাবে যাবো? আন্টি আর উনার মেয়েকে কি বলব কোনো বাহানা তো খুঁজা লাগ……(ফায়যান বলতে বলতে ডান পাশে মুখ ঘুরে তাকাতেই দেখল ডান সিটের নিচে জারার ব্যাগ পড়ে আছে ) বে…..আর খুঁজা লাগবে না খাঁজানা পেয়ে গেছি ডাইরেক্ট উম্মামমমাহ্। ফায়যান জারার ব্যাগটাকে জোরে মুখে চেপে ধরে চুমু দিল।

—“বাহ্ মেরি কলিজার টুকরা তুম নে তো মেরা কাম আসান কার দিয়া। হুরেএএএ এবার তোমার কোনো চৌদ্দগৌষ্ঠিও আমাকে স্টপ করতে পারবে না তোমার সাথে দেখা করতে। সেখানে আন্টি মেহরানই বা কি হাহ! দুই হাতে তালি বাজালেই তোমার সো কলড চাচি আর উনার নামের তোমার চাচাতো বোন মেহরান ডান্স করা শুরু করবে।

বিরবিরিয়ে ফায়যান বলেই ব্যাগটা নিজের গলায় জড়িয়ে নে। সে গাড়ির হ্যান্ডেলে হাত রেখে বলে।

—“বিসমিল্লাহ্ আবার আসতেছি তোমারই কাছে আমার হবু বউ🙈। ব্লাশিং হয়ে ফায়যানের মনে লাড্ডু ফুটছে। সে ভেবেই গাড়ি স্টাট দিয়ে ব্যাক রোডে নিল।

_______________

মিসেস রাহেলা চুলার সামনে দাঁড়িয়ে একটা পাঁচ মিটার লম্বা লোহার কুলি গরম করছে। তিনি কুলি গরম করছে আর উনার চোখ-মুখে ফুটে উঠছে হিংস্র মায়া।

যে মায়ায় না আছে কোনো ভালোবাসা,না আছে কোনো দরত।

—“আমার মেয়ের চুলের বারোটা বাজিয়েছিস তাই না? এবার দেখ তোর শরীরের প্রতিটা চামড়ার বারোটা না বাজালে আমার নাম রাহেলা নাহ্। আজ এই কুফা কে শেষ করে দেবো। একবার কুলিটা তোর শরীরে লাগাব ব্যস জিন্দা লাশে পরিণত রুপ হয়ে যাবি।
একদিক থেকে ভালোই হলো আজ মেহরানের বাবাও নেই অফিসের ডিউটি শেষ হতে খুব রাত হবে। এর মধ্যেই তোর কাম শেষ করে লাশের ব্যবস্থা করে দেবো।

ভেবে বিরবির করে তিনি রাগে-খুশির জোরে লোহার কুলি অতিরিক্ত গরম করছে।

—“আম্মুউই আর কতোক্ষণ লাগবে? দেখো না জারার খুব ব্যথা করছে তাড়াতাড়ি প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করো।

মেহরান ড্রাইনিং রুমের টেবিলে বসেই জোরে জোরে কথা বলে। জারাও সেখানে বাঁধা।
সে জারার দিকে তাকিয়ে বলে।

—“ওহ তোকে কিছু খেতে দেওয়ার কথা ছিল ভুলেই গেছিলাম। ওয়েট ! মেহরান তার পাশে রাখা আপেলের শেষ অংশটা নিয়ে জারার দিকে আগাতে থাকে।

জারা নিজের মুখ বাঁধা অবস্থায় না করছে এমন করতে কিন্তু মেহরান বাধ মানছে না। সে এসেই জারার মুখের উপর থেকে কাপড়টা নামিয়ে জবরদস্তি করে মুখে ঢুকিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে দে। জারা কাপড়ের আড়ালে চিৎকার করছে।

—“না যতই হোক আমি এই আপেল গিলব না। জারা কথাটা ভেবে আপেলের অংশটা মুখেই রাখে। আর্তনাদ যতই কঠোর হোক না কেনো আমি ধর্য্যহারা হবো না। সে কথাটা মেহরানের দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে বলল।

ফায়যান জারার বাসার রোডের দিকেই আসছে।

সে একহাত নিজের বুকের উপর রেখে বলে।

—“আমি আসছি জারা এতো কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসছি। হঠাৎ ফায়যানের চোখ থেকে পানি পড়ল সে হাত দিয়ে পানিটা দেখে ভ্রম ভাবে হয়তো অতিরিক্ত টেনশন নিচ্ছে তাই।

কিন্তু ফায়যান ঠিকিই বুঝতে পারছে জারার কোনো না কোনো প্রব্লেম হয়ছেই।

……….চলবে……..

রিডিং]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here