তুই যে শুধুই আমার পর্ব ৭

#তুই_যে_শুধুই_আমার [❤You are only mine❤]
#Part_7
#Writer_Tanzin_Islam_Ishika

আমি যখন আরুশকে দেখতে ব্যস্ত তখন কেউ আমার নাম ধরে ডাকে,, আমি সামনে তাকিয়ে
আমার বাবা মা দাড়িয়ে আছে,, আমি তাদের দেখে স্টেজ থেকে নেমে গিয়ে তাদের জরিয়ে ধরি,, তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর আমার শ্বাশুড়ি মা এসে তাদের নিয়ে যায়,, আমিও ঘুরে যেই স্টেজে যেতে নিব তখন একজনের উর্কর্শ কণ্ঠে থেমে যাই,,, ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়,, আমি পিছে ঘুরে দেখি রুহান,, তাকে দেখে কিছুটা ভয় হলেও পরক্ষনে নিজেকে সামলে নেই,, সে আমার কাছে এসে বলে,,

রুহানঃ ভালোই তহ আছো তাহলে,,

সায়রাঃ খারাপ থাকার কথা বুঝি,,

রুহানঃ কত দিনই বা ভালো থাকবে শুনি,, আমি ভালো করেই জানি আরুশ তোমাকে কেন বিয়ে করেছে,, তাই এত ভালো থাকার অভিনয় করে লাভ নেই,,

সায়রাঃ কে বলেছে আমি অভিনয় করছি,, আমি সত্যি আরুশের সাথে অনেক ভালো আছি,, কেন না ও যে আমার পাশে আছে,,,

রুহানঃ হাসালে,, ও তোমার পাশে থেকেও পাশে নেই তা তুমিও জানো আর আমিও,, কেন না ওর মনে তোমার জন্য যে বিষ আছে তা কোন দিনও কমবে না,, ও কখনোই তোমায় আপন করে নিবে না,,

আমি মুচকি হেসে বলি,,
সায়রাঃ ভালবাসা বলতে একটা জিনিস আছে,, যার জোর কিনা অনেক বেশি,, আর সেই জোরেই আমি আজ আরুশের বউ,, এইসকল বিষ সেই ভালবাসার কাছে হার মানতে বাধ্য,, আমার ভাগ্য যে আরুশের সাথে জড়িত তা তুমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারবে না,, কেন না এর প্রমান তুমি নিজেই,,

রুহানঃ আমিও দেখবো এই ভালবাসার জোর কতদিন চলে,,, তোমাদের তহ আমি কোনদিনও এক হতে দিব না,,,

আমি আবার আরেক গাল হেসে বলি,,
সায়রাঃ তুমি কি মনে করসো আমি এখন সেই আগের মত তোমার কথায় ভয় পেয়ে যাব,, মোটেও না,, তখন আমি হেল্পল্যাস ছিলাম কিন্তু এখন নই,, তাই যা করার করো,, আর হ্যাঁ এসেছ যখন খাবার খেয়ে যেও কিন্তু,,

এই বলে আমি স্টেজে উঠে বসি,, আর পিছে তাকাই না,, যদি তাকাতাম তাহলে হয়ত রুহানের সেই পৈচাশিক হাসিটা দেখতে পারতাম,,

এইদিকে আরুশ ওর কিছু রিলিটিভের সাথে কথা বলছিল,, হঠাৎ তার সায়রা এর কথা মনে পড়তেই সে সায়রাকে খুঁজতে থাকে,, অতঃপর চোখ যায় স্টেজের সামনে বধু সাজে সায়রার দিকে,, কার সাথে যেন কথা বলছে,, ভালো মত দেখতেই বুঝে সে রুহানের সাথে কথা বলছে,, তাও আবার মুচকি হেসে,, তা দেখেই আরুশের মাথায় রক্ত উঠে যায়,,সে সায়রাকে রুহানের সাথে একদম সহ্য করতে পারছেনা,, সে রাগে নিজের হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়,, আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে,,
সায়রা স্বরে যেতেই রুহানের নজর আরুশের দিকে পড়ে আর সে আরুশের চেহারে দেখেই বুঝে যায় আরুশ বেশ রেগে আছে,, আর কেন তা রুহানের অজানা নয়,, তাই তহ সে এক পৈচাশিক হাসি,, রুহান এইবার ধীর পায়ে আরুশের দিকে যায়,,

তারপর আগুমে ঘি ঢালার কাজ শুরু করে দেয়,,

রুহানঃ দেখলি তহ তোর বউ আমায় দেখে কথা বলার জন্য কিভাবে স্টেজ থেকে নেমে আসলো,, কোন কিছু চিন্তা করলো না,, বলি কি নিজের ওয়াইফকে একটু দেখে রাখিস,, কখন ফুৎ করে আবার কাছে চলে আসে তা তহ বলা যায় না,, যে একবার তোকে আমার জন্য ছাড়তে পারে,, সে দ্বিতীয় বার ও তোকে ছাড়তে পারে,, তাই একটু দেখে রাখিস বুঝলি,,

আরুশ এইবার রাগে দাতে দাত চেপে বলে,,

আরুশঃ তার টেনশন তোকে করতে হবে না,, তুই আপাতত তোর টেনশন কর,, আর আমি তোর বন্ধু নয় যে তুই আমার সাথে এইভাবে কথা বলবি,, আমি তোর অফিসের ৬০% শেয়ারের মালিক,, মানে তোর বস,, সো বি ইন ইউর লিমিটস,,

রুহানঃ ঠিক আছে বস,, এইটা আপনার লাইফ আপনি এই বুঝবেন,, কিন্তু আগে থাকতে সাবধানতো অবলপন করা ভালো,, বাকি আপনার ইচ্ছা,, আর হ্যাঁ বিয়ের জন্য শুভকামনা রইলো,, আমার এখন কাজ আছে,,আমি তাহলে এখন আসি,,

বলেই এক মুচকি হাসি দেয় রুহান,,,
যা দেখে আরুশের গা জ্বলে যায়,,, কিন্তু এখন ফাংকশন চলছে বলে কিছু করতেও পারছে না,, নিজের রাগকে কান্ট্রোল করার চেষ্টা করছে,,,


এইদিকে রুহান বেড়িয়ে এসে এক প্রশান্তির শ্বাস নেয়,,

রুহানঃ আগুন তহ আমি লাগিয়ে দিয়েছি,, এখন শুধু দেখা বাকি এতে কে কতটুকু জ্বলে পুড়ে,, তুই কোন দিনও জানবি না আরুশ আসল সত্যিটা কি,, সেই দিন তুই সামনে ছিলি বলে কিছু বলতে পারি নি,, কিন্তু এখন তোর সামনেই সব করবো কিন্তু তুই কিছুই বুঝতে পারবি না,, আমাকে অপমান করার ফল তুই পাবি,, তাও খুব জলদি,,
এই বলে হু হু করে হেসে উঠে,,,




প্রায় ৩০ মিনিট আগে বাসায় এসে পৌঁছেছি আমরা,, আরুশ কিছু না বলেই ফ্রেশ হয়ে ছাদে চলে যায়,, আমিও ফ্রেশ হয়ে এসে ছাদে চলে যাই,, আজ যেভাবেই হোক আরুশকে সত্যিটা জানাতে হবেই,,,
আরুশের ছাদের এক কোনারে দাড়িয়ে আছে,, তার মাথায় এখন খালি রুহানের সেই কথা গুলোই ঘুর ঘুর করছে,, নিজের রাগকে কান্ট্রোল করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,, এমন সময় পিছন থেকে কেউ আরুশ কে জরিয়ে ধরে আরুশ জানে কে সে,,সে পিছনে না ঘুরেই উপলব্ধি করতে পারে এটা সায়রা,, কিন্তু তার মাথায় যে এখন রাগ ভর করেছে,, সে এক ঝারি দিয়ে সরিয়ে দেয় সায়রাকে,,
তারপর সে সায়রার বাহু শক্ত করে ধরে রেগে দাতেঁ দাতঁ চেপে বলতে লাগে,,

আরুশঃ কেন করলি এমন তুই আমার সাথে কেন,,কেন আমার জীবনকে তুই এইভাবে অগোছালো করে দিলি,,, কেন আমায় তুই এমন ধোঁকা দিলি,,, কেন।।।
আমি তো শুধু তোকে ভালোবেসে ছিলাম তোকে পেতে চেয়েছিলাম আর তহ কিছু নয়,, কিন্তু তুই কি করলি ধোঁকা দিলি আমায়,, তাও আবার
ওই রুহানের সাথে মিলে আমায়,, আমার ভালবাসাকে তুচ্ছ করলি,,, বিশ্বাসঘাতকতা করলি,,,


আমি ভয়ে কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে বলতে লাগি,,
সায়রাঃ আরুশ আমার কথা টা শুনো আমি সব খুলে বলছি আমি কেন এমন করেছি আমাকে একটা সুযোগ দাও প্লিজ,, আমি যে এইসব করতে বাধ্য ছিলাম,,,

আরুশ রেগে সায়রার বাহু আরো শক্ত করে বলতে লাগে,,,
আরুশঃ চাইনা শুনতে তোর কথা তুই একটা মিথ্যা বাদি,,তুই শুধু মানুষকে ঠকাতে পারিস আর মানুষের ভালোবাসা নিয়ে খেলতে পারিস,,,
আমি চাইনা কিছু শুনতে,,

বলেই সায়রাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে পিছনে ঘুরে যায় সায়রা নিচে পরে যায় আর তার হাত এক পাথরের উপর গিয়ে পড়ে,,হাতে পাথর গেথে গিয়ে রক্ত পড়া শুরু করে,, সায়রা ব্যথায় কুকড়িয়ে উঠে,,,
সেখানে বসে হাত ধরে মুখ ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে কান্না করতে লাগে,,
আরুশ বেশ কিছুসময় ধরে কোন সারা শব্দ না পেয়ে পিছনে ঘুরে,,,
ঘুরে দেখে সায়রা হাত ধরে কান্না করছে তার হাত থেকে রক্ত জোড়ছে তা দেখে আরুশ তারাতারি করে সায়রার কাছে যেয়ে তাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যায় আর বেডে বসিয়ে পাগলের মত করে ফাস্টএইড বক্স খুজঁতে লাগে,, তা খুজে এনে সায়রার সামনে এসে নিচে বসে তার হাত ধরে সেখানে ঔষধ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,,তার চোখে মুখে বেশ অস্তিরতা যেন কষ্টটা সায়রা না আরুশ নিজে পাচ্ছে।আর বার বার বলছে

আরুশঃ সরি আমি ইচ্ছে করে করিনি,,,খুব লেগে গেছে,, কষ্ট হচ্ছে খুব,, সরি আমি তোকে আঘাত করতে চাই নি,, রাগের বসে এমন করে ফেলেছি,,, ইসস কত রক্ত পড়ছে,, তুই চিন্তা করিস না এখনই রক্ত পড়া অফ হয়ে যাবে,,

সায়রা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এ তার কেমন ভালোবাসা,,,একটু আগে যাকে সয্য করতে পারছিলো না আর এখন তার কষ্টে দেখে নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছে তার কষ্ট কমাতে,,

আরুশ বার বার নিজের ঠোঁট ছোয়াচ্ছে সায়রার হাতে আর “সরি “বলছে,,
সায়রা কিছু না বলে আরুশকে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখে,, আর কান্না করতে থাকে,, আরুশও একে আলগা ভাবে জরিয়ে ধরে,, তারপর আরুশ সায়রা এর মুখ উঁচু করে নিজের দিয়ে ঠোঁট দিয়ে সায়রা এর চোখের পানি শুষে নেয়,, পরে ওর ঠোঁট দুটোতে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ায়,, সায়রা কেপে উঠে,, আরুশ কিছু পর স্বরে এসে ওকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে,, সায়রাও পরম আয়েশে আরুশের বুকে মুখ লুকায়,,,



সূর্যের মিষ্টি আলো সায়রা এর উপর পরতেই সায়রা এর ঘুম ভেংগে যায়,, ঘুম ভাংতেই সে পাশে ঘুরে দেখে আরুশ ওকে জরিয়ে ধরে ওর গলায় মুখ গুজে শুয়ে আছে,, ঠোঁট গুলো একদম বাচ্চাদের মত উল্টিয়ে রেখেছে,, ওর সিল্কি চুলগুলো অগোছালো হয়ে কপালের সামনে এসে পরেছে,, সায়রা এর বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে এই চুল গুলো নিয়ে খেলতে,, তাই সে এক হাত দিয়ে আরুশের চুল গুলো আরেকটু অগোছালো করে দেয়,, এতে আরুশ কিছুটা নড়ে উঠে,, আর ঘুমের ঘরে সায়রাকে আরও গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে,, সায়রা তা দেখে মুচকি হাসে,, আর কালকের কথা মনে করতে থাকে,, কাল আরুশ সায়রাকে একবারের জন্য নিজের করে নিয়েছে,, ওকে আপন করে নিয়েছে,, সায়রা কাল পুরোপুরি ভাবে আরুশের হয়ে গিয়েছে,, এখন সায়রা আর আরুশ এক,, আরুশ সায়রাকে নিজের স্ত্রী এর মর্যাদা দিয়েছে,,, এসব ভাবতেই সায়রা লজ্জায় আরুশের উম্মক্ত বুকে মুখ লুকায়,,
এর মধ্যে আরুশ নড়ে উঠে,, তা দেখে সায়রা বলে,,

সায়রাঃ গুড মর্নিং মি. ডাফার,,

আরুশঃ গুড মর্নিং মিস বুচি,,,

সায়রা এইবার মুচকি হেসে বলে,,

সায়রাঃ থেংকিউ আমাকে আপন করে নেওয়ার জন্য,,আমাদের সম্পর্শটাকে নতুন ভাবে শুরু করার জন্য,,সব ভুলে নতুন ভাবে সম্পর্কটাকে নাম দেওয়ার জন্য,, আমাকে নিজের করার জন্য,,

এই কথা শুনে আরুশ শব্দ করে হাসতে লাগে,, সায়রা আরুশের এমন হাসির পিছনের কারন খুজঁতে পায় না,, সে তহ কোন মজার কথা বলে নি,,তাহলে আরুশ হাসছে কেন,,সে আরুশের দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে থাকে আরোশ নিজের হাসি থামিয়ে বলতে লাগে,,

আরুশঃ সিরিয়াসলি সায়রা,,তোর মনে হয় আমি তোকে আপন করে নিয়েছি,,

বলেই আবার আগের মত জোরে জোরে হাসতে লাগে। সায়রা আরুশের দিকে ড্রাব ড্রাব করে তাকিয়ে আছে আরোশ আবার বলতে লাগে,,

আরুশঃ আমাদের মধ্যে কাল রাতে যা হয়েছে তা শুধুই একটা নাটক ছিল,, কাল আমি যা করেছি শুধু তোকে নিজের কাছে রাখার জন্য,, এর চেয়ে বেশি আর কিছুই না,,

সায়রা কাপাকাপা গলায় বলতে লাগে
সায়রাঃ মা…মা…মা,,নে,,নে,,

আরুশ সায়রার গালে হাত রেখে বলতে লাগে,,

আরুশঃ আমি তোকে নিজের সাথে বেধেঁ রাখতে কাল তোকে আপন করে নিয়েছি যাতে তুই আমাকে ছাড়ার চিন্তা ও না করতে পারস,,
সারাজীবনের জন্য আমার কাছে বন্ধি থাকস,, আর ওই রুহানের কাছে না যেতে পারস,,
তুই কি ভেবেছিস আমি সব ভুলে গেছি,,
না কখনো না আমি কিছু ভুলিনি আমি আমার প্রতিশোধ নিবো,,,যতটা কষ্ট তুই আমাকে দিয়েছো ততটাই কষ্ট এবার তুই পাবি৷

এইসব বলে আরুশ বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় আর সায়রা থম মেরে সেখানেই বসে থাকে,,,
সায়রাঃ আরুশ এসব কি বলছে,,
কাল রাতের সব কিছু মিথ্যা ছিলো,,
কাল রাতে তার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো,,শুধু আমাকে আটকানোর জন্য এসব করছে যাতে আমি তাকে ছেড়ে না যাই,,

এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ দিয়ে অনাবরত পানি পড়তে থাকে,, একসময় সে ডুকরে কেদে উঠে,,
সে আরুশ এর কাছ থেকে এমন কিছু কখনই আশা করেনি,, সে ভাবতেও পারছে আরুশ এমন কিছুও করতে পারে,, সায়রা এইবার বালিশে মুখ গুজেঁ কাদঁতে লাগে,,,



#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here