তুই হৃদহরণী পর্ব ৪

#তুই_হৃদহরণী
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ৪

তুরফার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের মতো এগিয়ে আসছে আহরার। তুরফা পিছিয়ে যেতে যেতে যখন কাঁচের দেওয়ালের সাথে বারি খাবে তখনি আহরার তুরফার কোমর টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
“আপনাকে বলেছিলাম জাস্ট আমার সাথে বিছানা শেয়ার করতে। আর আপনি? আপনি সোজা আমার গালে চর দিয়ে দিলেন? একবার ভাবলেনও না একটা ছেলের গালে চর দেওয়ার ফল কি হতে পারে?”

“পারলে আরেক টা চর দিতাম। ইচ্ছা হচ্ছে তাই করি আপনাকে। হিতে বিপরীতের ভয়ে দমে গেলাম।”
কথা টা ভেবেই তুরফা নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ে যায়। আহরার আরো শক্ত করে চেঁপে ধরেছে তাকে। তুরফা নিজেকে যতই ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে আহরার ততই শক্ত হচ্ছে।
“আরে মিস তুরফা সাপের মতো না নড়ে একটু স্থির হয়ে দাঁড়ান।”
“…..
“তো মিস হৃদহরণী আবারো বলছি বেড শেয়ার করবেন?”
তুরফা রেগে আগুন। কিন্তু তবুও পারছে না এই হাতির কাছ থেকে নড়তে।
“আহ মিস হৃদহরণী আপনি চাইলেও আহরারের বাঁধন ছেড়ে যেতে পারবেন না। অলরেডি আপনি ফেঁসে গেছেন।”
“…..
“মাই হৃদহরণী।”
আহরার হুট করেই তুরফার মুখ থেকে পর্দা টা সরিয়ে ফেলল। আহরার হা করে তাকিয়ে আছে। চোখ যেন তার ঝলসে যাচ্ছে। অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে আছে নির্বোধের মতো। তুরফা এক ধাক্কা দিয়ে আহরার কে নিজের থেকে সরায়। নেকাব টা মুখে দিয়ে মৃদু অথচ তীক্ষ্ণ সুরে বলল,
“মিস্টার আপনি যদি এই কোম্পানির মালিক হন। যদি আমার বস হন, পরশু আপনাকে চর দেওয়ার অপরাধে আমাকে সেক করতে হবে না আপনার। এমন টা হলে আমি নিজেই এই জব ছেড়ে দিব।”
তুরফা এক সেকেন্ড দাঁড়াল না। হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

আহরার যেন এখনো নিজের মাঝে নেই। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের পাতা টা এখনো পরছে না। আহরার যেন দিশেহারা হয়ে গেল। এটা কি দেখল? একটা মানুষ এমন হয় কি করে? আহরারের ভেতর টায় এখনো সেই অজানা অনুভূতি হচ্ছে। আহরার বেশ বুঝতে পারছে তার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে খুব। আহরার দুই পা পিছিয়ে যায়। বুকের বা পাশে তাকিয়ে ডান হাত সেখানে রাখল। আহরারের চোখের সামনে সেই চোখ ধাঁধালো মুগ্ধকর দৃশ্য ভেসে উঠছে। মেয়ে যেন মুগ্ধকারিনী। তুরফার সেই শীতল স্নিগ্ধ মুখ টা আহরারের চোখের সামনে বারংবার ভাসছে। সেই ঘন কালো চোখ। একদম মনে হচ্ছে নূরের মতো চেহারা। কত টা স্নিগ্ধকর। ডাগরডাগর চোখের সেই তীক্ষ্ণ চাওনি। হাল্কা আভা যুক্ত সেই ঠোঁট। কালো কিচকিচে সেই ঠোঁটের উপরে নাকের নিচ বরাবর তিল টা। এক কথায় তার হৃদহরণী। আহরারের চোখের পাতায় যেন পরিণত হলো সেই নূরের মতো মুখ। আহরার চোখ বন্ধ করল। কয়েক টা নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে তাকাল। তাড়াতাড়ি করে নিজের চেয়ারে বসে টগটগ করে পানি খেয়ে নিল।

তুরফা কে নিজের ডেস্কে দেখলে ফিরাতে সেখানে গেল জটফট করে।
“তুরফা আহরার কি করেছে আপনার সাথে?”
“….
“তুরফা?”
“জ্বি?”
“আগে বলুন আহরার কি করল আপনার সাথে? বাজে কিছু…”
“আল্লাহর রহমতে কোনো সুযোগ পায় নি উনি। আমায় বলবেন স্যার উনি এই অফিসের কে?”
“তুমি জানো না?”
“বলুন।”
“আমাদের কোম্পানির মালিক।”
“যা ভেবেছি তাই।”
“কি?”
“কিছু না।”
“যাক আহরার কিছু করে নি এতেই যথেষ্ট।”
“….
“তুরফা আমার কোনো বোন নেই তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে। আমার বোন হবে তুমি?”
“ওকে স্যার।”
“তবে আমায় স্যার নয় ভাইয়া বলবে আর তুমি করে ডাকবে।”
“আচ্ছা ভাইয়া।”
“আমার বোন টা। কাজ করো কোনো দরকার হলে আমার কেবিনে যেও। ”
“আচ্ছা।”
ফিরাত চলে গেল। তুরফা মনে মনে বলল,
“ভাইয়া আমার দিন এখানে শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়েছে।”

ফিরাত আহরার কে দেখে চমকে গেল। কি অবস্থা একটুক্ষণেই হয়ে গেল। উষ্কখুষ্ক দেখাচ্ছে তাকে। মনে হচ্ছে বিধ্বস্ত হয়ে আছে সে। এক নজরে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতা পরছে না। মুখ টা কেমন দেখাচ্ছে। ফিরাত দৌড়ে আহরারের কাছে গেল।
“আহরার? এই আহরার?”
“…
“আহরার কি হয়েছে তোর?”
“হ্যাঁ?”
“ভাই আহরার কি হয়েছে তোর? এমন দেখাচ্ছে কেন?”
“ও নয় আমি ফেঁসেছি।”
“কি বলছিস এইসব?”
“…
“আহরার ভাই ঠিক আছিস তুই?”
“না।”
“কি হয়েছে ইয়ার?”
“বুকে তীর বিঁধেছে।”
“কি আবোলতাবোল বলছিস?”
“আমি ওর রূপে ওর মায়ায় মরেছি।”
“আহরার দেখ আমার কিন্তু এখন রাগ উঠছে। কিছুই বুঝতে পারছি না।”
আহরার ফিরাতের দিকে তাকায়।
“তুরফা!”
“তো?”
“তুরফা অর্থ বিরল বস্তু। আসলেই ও তাই।”
“কিসব বকছিস তুই?”
“ওর ফাইল টা কোথায়? কন্ট্রাক্ট পেপার ফাইলে আছে?”
“না। আমার কেবিনে।”
“নিয়ে আয়।”
“কেন?”
“যা বলছি তাই কর। নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি।”
ফিরাত কথা মতো চলে গেল। আহরার ফাইল দেখে বলল,
“তুরফা, বিরল বস্তু। দুটোই পারফেক্ট। নড়চড়ে নয়। কিন্তু মিস তুরফা আপনি আমার মনের ঘরে ঢুকে গেছেন। এখান থেকে এত সহজে যে আপনার ছাড় নেই।”

তুরফা একটু পর গটগট করে আহরারের রুমে ঢুকল। কোনো রকম অনুমতি ছাড়া। আহরারের সামনে এসে কাগজ টা টেবিলে ফেলল। আহরার উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আপনার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি তুরফা। আপনি আপনার বসের কেবিনে কোনো রকম পারমিশন ছাড়াই ঢুকে পরছেন?”
মুখ টা একটু এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আপনার সাহস খুব বেশি তাই না?”
“যেখানে আমি এই অফিসে জবই করব না সেখানে কিসের বস আর কিসের পারমিশন?”
আহরার দূরে গিয়ে বলল,
“কি বলতে চাইছেন?”
“পেপার টা দেখুন। আমি রিজাইন লেটার দিয়েছি।”
আহরার হাসল দাঁত বের করে।
“হাসালে হৃদহরণী। তুমি কি এখানে সাইন করার আগে সব টা দেখে করো নি? নাকি ভুলে গেছো?”
তুরফা ভ্রুকুটি করে আহরারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মানে?”
আহরার ফাইল টা তুরফার সামনে ধপাং করে ফেলে দিয়ে বলল,
“জাস্ট সী।”
তুরফা কৌতূহল নিয়ে ফাইল উল্টাল। সব টা পড়ে অবাক হয়ে তাকায় আহরারের দিকে। আহরার রাজ্যজয়ের হাসি দিয়ে বলল,
“জ্বি তুরফা তুমি আমার মানে আমার কোম্পানির সাথে ৫ বছরের কন্ট্রাক্টে আছো। এই ৫ বছরে তুমি চাইলেও এখান থেকে যেতে পারবে না। মানে আমি যতক্ষণ না বলব ততক্ষণ এখানে জব করতে হবে তোমায়।”

তুরফা বুঝতে পারছে সে ভুল করেছে। মারাত্মকভাবে আসলেই সে ফেঁসে গিয়েছে। কি করবে সেটাই ভাবছে।
“হৃদহরণী তুমি মন কোঠরে ঢুকে গিয়ছো। বের হওয়ার দরজা লক করা। আমার অনুমতি ছাড়া অসম্ভব।”
রাগে তুরফার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ফুসফুস করছে সে। চোখ মুখ শক্ত করে তাকাল আহরারের দিকে।
“তুর এভাবে তাকিও না মরন হবে নিশ্চিত।”
তুরফা হনহন করে বের হয়ে গেল। আহরার মুচকি হাসল।

কাজে কিছুতেই মন বসছে না তুরফার। কোন বিপদে তাকে ফেলল আল্লাহ? এই রকম একটা মানুষের সাথে….
ফিরাত একগাদা ফাইল নিয়ে আসল তুরফার ডেস্কে। এনে বলল,
“তুরফা মাই লিটল সিস্টার ফাইল গুলি চেক করে আহরারের রুমে দিয়ে এসো।”
ফিরাতের চলে যাওয়ার পথে তুরফা ডাক দিল।
“ভাইয়া।”
“বলো।”
“আমি এই জব টা করব না।”
“কেন কি হয়েছে?”
“….
“তুমি আহরার কে ভয় পাচ্ছো?”
“উনি বাঘ নয় উনাকে ভয় পাবো। উনার স্বভাব..”
“দেখো তুরফা সব কিছুরই তো কারণ থাকে বলো? আহরার এমন ছিল না ছোট বেলা থেকেই খুব ভালো ছিল। তবে একটা ঘটনা তাকে এমন করে দিয়েছে। আহরারের কাছ থেকে সাবধানে থেকো। আর তুমি চাইলেও এটা ছেড়ে যেতে পারবে না। তাই বলছি আহরারের রাগ না উঠিয়ে কাজ করো। আর ওর থেকে দূরে থেকো। তবে আহরার ওমন হলেও ওর মন কিন্তু খুব ভালো।”
তুরফা বসে পরল। ভ্রুকুঞ্চন করে চিন্তা করল, কিসের কারণ? কি ঘটনা?

চলবে….
(চাইলে শেয়ার দিবেন কিন্তু কপি করে কোথাও পোস্ট করবেন না। এনি আইডিয়া কি হতে পারে কারণ?)

Sabriha Sadi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here