তুমিময় বেদনা পর্ব -০১

২৫ জানুয়ারি রাত ১২ টা।

বেশ কয়েকটা কালো গাড়ি ছুটে আসছে, গাড়ির তীব্র আলো চোখে পড়তেই চোখটা বন্ধ হয়ে আসে মেয়েটার। সামনের কালো গাড়ি টা এসে আচমকাই ব্রেক করে। সামনের গাড়ি থামতে দেখে একে একে পিছনের পাচটা গাড়ি থেমে যায়। পিছনের পাচ গাড়ি থেকে কালো কোট প্যান্ট পরা বেশ কয়েকটা লোক বন্ধুক হাতে বেরিয়ে এসে সামনের গাড়ি টাকে কভার করে ফেলে যাতে কেউ আক্রমণ করতে না পারে। সামনের গাড়িতে বসে থাকা জিসান খান রাগান্বিত কন্ঠে বলে।

“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

ড্রাইভার কোন উত্তর দেয়না জিসানের কথায়। বাইরে থেকে এক বডিগার্ড বলে।

” স্যার রাস্তার মাঝখানে একটা মেয়ে পরে আছে।”

জিসান বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে পকেটে হাত ভরে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। একটা মেয়ে বডিগার্ড ডালিকে ইশারায় চেক করতে বলে। ডালি রাস্তায় পরে থাকা মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে তুলে দেখে এখনো শ্বাস নিচ্ছে তার মানে বেঁচে আছে শুধু জ্ঞান হারিয়েছে। ডালি বলে,,

“স্যার মেয়েটা বেঁচে আছে জ্ঞান হারিয়েছে মনে হচ্ছে। মাথা থেকরক্তও পড়ছে।”

“পানি দাও চোখে মুখে।” (গম্ভীর গলায় বলে জিসান)

এক বডিগার্ড গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে ডালির হাতে দেয়, ডালি পানি নিয়ে মেয়েটার চোখে মুখে ছিটিয়ে কিছুটা পানি খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা পিট পিট করে তাকায় তার চারিপাশে এতো কালো ড্রেস পরা লোক দেখে ভরকে যায় মেয়েটা। ঝটপট উঠে দৌড়ে গিয়ে সামনে থাকা মানুষ টাকে জড়িয়ে ধরে। ডালি সহ বাকি বডিগার্ড হা হয়ে যায় মেয়ের এমন কান্ডে। এক বডিগার্ড তার পাসের বডিগার্ড কে ফিসফিস করে বলে।

“আজ মেয়েটা শেষ।”

জিসান বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তখন মেয়েটা বলে উঠে।

“প্লিজ প্লিজ আমাকে বাচান কালা মিয়া প্লিজ আমাকে বাচান। ”

মেয়ের মুখে কালা মিয়া শুনে বডিগার্ড গুলো ভয়ে চুপসে যায়। এক বডিগার্ড ডালির কানে ফিসফিস করে বলে।

“আরে আমাদের স্যার তো সাদা মিয়া এই মেয়ে কালা মিয়া বলছে কেনো? ”

“চুপ কর।” (ডালি আসতে করে ধমকে বলে)

জিসান মেয়েটা কে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে। গায়ে বিয়ের সাজ দেখেই মনে হচ্ছে বিয়ের পিড়ি থেকে ভেগেছে এই মেয়ে। দেখতে অনেক কিউট জিসান কিছুক্ষণ তাকিয়েই থাকে মেয়েটার মুখের দিকে। মেয়েটা ভ্রু কুচকে জিসানের দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বলে।

“আমি জানি আমি অনেক সুন্দরী কিউটের ডিব্বা তাই বলে এমন করে দেখতে হবে নাকি কালা মিয়া।”

মেয়েটার কথায় জিসান ভ্রু কুচকে তাকায় তবে এখনো চুপ করেই আছে জিসান। জিসানকে কোন কথা বলতে না দেখে মেয়েটা বলে।

“এই কালা মিয়া আপনি কি বোবা? কথা বলতে পারেন না? ইশশ এতো সুইট একটা লোক কথা বলতে পারে না ব্যাপারটা দুক্কুজনক। ”

“ভাই এই মেয়ের আজ শেষ দিন এতো কথা কি করে বলছে চিনে না নাকি জিসান স্যার কে?” (এক বডিগার্ড ফিসফিস করে বলে আরেকজন কে)

“এই কালা মিয়ার দল-বল আপনারা তো কথা বলতে পারেন নাকি? কিছু তো বলুন এতো কিউট একটা মেয়ে হেল্প চাইছে আর আপনারা চুপ করে আছেন।”

জিসান ডালি কে ইশারায় বলে মেয়েটা কে আর এতো রাতে এখানে কি করে জিজ্ঞেস করতে। জিসানের কথায় ডালি মেয়েটার কাছে এসে বলে।

“এই মেয়ে তোমার নাম কি? আর এখানে এতো রাতে কি করছো? ”

ডালির কথায় মেয়েটা কাদো কাদো হয়ে বলে।

“আপু কি বলবো দুক্কুর কথা,,” (মেয়েটাকে থামিয়ে ডালি বলে)

“ওটা দুক্কু না দুঃখ হবে।”

“একি ব্যাপার তো শুনেন আপু আমার দুক্কুর কথা, আমার আব্বু আম্মু নেই সেই ছোট বেলায় আমাকে একা রেখে চলে গেছে। ছোট থেকেই মামা মামির কাছে মানুষ হয়ছি জানো আপু আমি মামির সব কাজ করে দিতাম তারপরে আমায় খেতে দিতো তাতেও আমার কোনো আপত্তি ছিলো না গো আপু। কিন্তু এখন টাকার লোভে এক বুইড়া বেডার লোগে আমার বিয়া দিয়া দিছিলো গো। অনেক কষ্টে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে এসেছি আমি কোনো দিন ওই বাড়িতে যাবো না। গেলেই বুইড়ার লগে ধইরা বান্ধা বিয়া দিয়া দিবে। আচ্ছা আপু তুমিই বলো আমার মতো কেউট সুইট মেয়েকে বিয়ে করার অধিকার কি ওই টাকলা বুইড়ার আছে? তুমিই বলো?”

ডালি কি উত্তর দিবে কিছুই বুঝতে পারছে না তবুও বলে।

“না নেই!”

“হ্যাঁ তুমি ঠিক বলছো আপু ওই বুইড়ার অধিকার নাই আমার মতো সুন্দরী বিয়ে করার,, আমার জামাই হওয়ার অধিকার তো এই খাম্বা চিকনার মতো ছেলের আছে। ” (শেষের কথাটা লজ্জা লজ্জা ভাবে আর জিসান কে দেখিয়ে বলে মেয়েটা)

মেয়েটার কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় জিসান তো বিরক্ত হয়ে সব দেখছে শুনছে। ডালি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে।

“তোমার নাম কি? আর তোমার মাথা ফাটলো কি করে?”

“আমার নাম মিহু আর আমি যখন প্রাণ পনে পালাচ্ছিলাম তখন রাস্তায় পড়ে যাই তখন মাথা ফেটে গেছে। ”

“তো মিস মিহু এখন কি করবেন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরাবেন?”

মিহু চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে কালা মিয়া কথা বলছে, অবাক হয়ে বলে।

“ওমা কালা মিয়া আপনি কথা বলতে পারেন? আপনি বোবা না?”

জিসান বিরক্ত চোখে তাকায় মিহুর দিকে। ডালি নিজের মনের প্রশ্ন চেপে না রাখতে পেরে এবার বলেই দেয়।

“মিহু তুমি স্যার কে কালা মিয়া বলছো কেন? স্যার তো যথেষ্ট ফর্সা।”

“আরে দেখো না পায়ের জুতা থেকে সান গ্লাস পর্যন্ত সব কালো পরে আছে সঙ্গে এতো গুলা লোককেও কালো পরিয়ে রাখছে তাই ওনার নাম কালা মিয়া সুন্দর তাই না?”

“শাট আপ!! অনেকক্ষণ ধরে এই মেয়ের বকবক শুনছি একে,,,,(জিসান আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই মিহু বলে)

” ওই মিয়া ওই ধমকান কাকে? আমি কি ভয় পায় নাকি হুহ?”

“বেশি বলে ফেলছো তুমি।” (রেগে জিসান)

“আমি বেশি বলছি না আমি ঠিক বলছি আরেকটু হলে আমাকে গাড়িতে চাপা দিয়ে মেরে ফেলতো আবার আসছে দেখো বড়ো বড়ো কথা বলতে।”

“তুমি জানো তুমি কার সঙ্গে কথা বলছো?”

“আমি জেনে কি করবো আপনি কোন লাটসাহেব হ্যাঁ? ”

“মিহু চুপ করো স্যার রেগে গেলে তোমাকে আস্তো রাখবে না।”(পাস থেকে ডালি মিনমিন করে বলে)

” কে এই লোক আমাকে আস্তো না রাখার?”

“আহনাম জিসান খান “।

” ওই যে ঢিসঢিস করে গুলি করে মানুষ মারে ওই লোক টা?”

“হ্যাঁ। ”

“ওহ আচ্ছা,,,,,, কিহহহহ???”

মিহু ভয়ে জিসানের দিকে তাকায় জিসান রাগি চোখে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। মিহু মুখে জর করে হাসি আনার চেষ্টা করছে কিন্তু হাসি আসছেই না। মাথাটা এবার ঝিমঝিম করা শুরু করেছে চারিপাশ আরও বেশি অন্ধকার লাগছে। জিসান কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহু ধলে পরে জিসানের বুকে।

।।

২৫ জানুয়ারি রাত ১১ টা ৩০ মিনিট।

” শিকার এইদিকে এগিয়ে আসছে আপনি পারবেন তো পি.এ?”

“বিশ্বাস রাখুন স্যার এই কাজ যখন আমি নিয়েছি ঠিক করে দেখাবো।”

“আহনাফ জিসান খানের চোখ ফাঁকি দেওয়া এতো সোজা হবে না পি.এ। পুরো কলকাতা এক নামে ভয়ে কাঁপে, সেটা হলো জিসান। আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমান কেউ জোগার করতে পারেনি, যেই তার বিরুদ্ধে গেছে সেই লাশ হয়ে ফিরে এসেছে। আপনি এই কাজে নতুন এসে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা খুব রিস্কি হয়ে যাবে আপনার জন্য। আপনার থেকে বড়ো বড়ো খেলুয়ার আহনাফ জিসান খানের হাতে মারা পড়েছে আপনি কি এখনো চান তার বিরুদ্ধে যেতে?”

পি.এ দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে জবাব দেয়।

” হ্যাঁ যেতে চাই, এই জিসান খানের শেষ আমি দেখতে চাই এতে আমার মৃত্যু হলেও হবে। পুরো কলকাতার মানুষকে ভয় থেজে মুক্তি করতে চাই, কতো শত মায়ের বুক খালি করার প্রতিশোধ নিতে চাই আমি। কলকাতা কোনো মাফিয়ার ভয়ে থাকবে না কলকাতা থেকে এই জিসান নামক মাফিয়ার ট্যাগ মুছে দিতে চাই আমি।”

পি.এ রাগান্বিত হয়ে কথা গুলো বলে,, তার যেনো একটাই কাজ এই জিসান কে শাস্তি দেওয়া। ফোনের ওপর পাস থেকে মিস্টার রাসেল বলে উঠে।

“ওকে পি.এ জিসান খান কিছুক্ষণের মধ্যে আসবে। আপনি সাবধানে থাকবেন মনে রাখবেন জিসান খানের কাছে ধরা পরা মানে মৃত্যু। আমরা আপনাকে সাহায্য করবো।”

” ওকে স্যার আমি ফোনটা এখানেই রেখে দিচ্ছি আপনি এসে নিয়ে যাবেন।”

বলেই পি.এ ফোনটা সেখানে রেখে দেয় নিজেকে আরও একবার দেখে নেয় সব ঠিকঠাক আছে কি’না। আর নিজে নিজে বলে,,

“মিস্টার জিসান খান! তুমি যত বড়োই মাফিয়া হও না কেনো আমার হাত থেকে তোমাকে কেউ বাচাতে পারবে। সব পাপের শাস্তি তুমি এবার পাবে,, জাস্ট ওয়েট আন্ড সি।”

চলবে কি?

#তুমিময়_বেদনা~
#Mst_Nafisa~
#Part_1 (সুচনা)

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here