তুমিময় বেদনা পর্ব -০২

#তুমিময়_বেদনা~
#Mst_Nafisa~
#Part_2

(এই গল্প পুরাই কাল্পনিক বাস্তবের সঙ্গে মিলাবেন না।)

চোখ খুলে চারিদিক দেখে খুব অচেনা মনে হলো মিহুর কাছে, এই রুম আগে কখনো ও দেখেনি। এতো বড়ো রুম চোখ বড়ো করে দেখছে মিহু।

“আরে বাস এই রুম দেখি অনেক বড়ো ফুটবল ও খেলা হবে। কিন্তু এই বাসা কার? কে নিয়ে এলো আমাকে এখানে?”

মিহু ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়ায় বেড থেকে, উঠেই নিজের দিকে খেয়াল করে দেখে গায়ে একটা টি-শার্ট আর টাওজার। চমকে উঠে মিহু কারণ তার খুব ভালো করে মনে আছে গতরাতে মিহু বিয়ের সাজে পালিয়েছিল আর নিজে সে এগুলা পরে নি। তাহলে কি মিহুর সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে? ভেবেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে মিহু, তখন খেয়াল করে মাথায় ও ব্যান্ডেজ করা। আসতে আসতে কাল রাতের কথা মনে করতে থাকে মিহু। মাফিয়া জিসান খানের সামনে পরেছিল তার পরে না বুঝেই অনেক কথা শুনিয়ে ছিলো জিসান কে। জিসানের পরিচয় জানার পর মিহু জ্ঞান হারায় তাহলে কি জিসান এসেছে মিহুকে তার বাসায়? আর নিয়ে এসে নিজে ড্রেস পালটে দিয়েছে ভেবেই কান্না পাচ্ছে মিহুর।

“না আমি কান্না করবো না, এই জিসান খানকে আমি ছারবো না আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে। মাফিয়া বলে কি যা নয় তাই করবে নাকি দেখাচ্ছি মজা।”

এসব নিজে নিজে বলেই মিহু উঠে দাঁড়ায়, রুম থেকে বেরিয়ে আরও একটু চমকে যায়, এ তো বিশাল বড়ো বাড়ি। এতো বড়ো বাড়িতে তো অনেক রুম জিসান কোন রুমে থাকবে কি করে বলবে মিহু চিনবে কি করে?

“আরে বাবা, এতো অনেক বড়ো বাড়ি আমি তো হারিয়ে যাবো এই বাড়িতে একা ঘুরলে। ”

মিহু দেখে অনেক কাজের লোক কাজ করছে, কেউ ঘর পরিস্কার করছে কেউ রান্না করছে। মিহু বুঝতে পারছে না এতো রুমের মধ্যে কোন রুম জিসানের হবে।

“আমাকে যেহেতু নিচের রুমে রেখেছে সেহেতু এই জিসানের রুম ওপরে হবে। মালিকরা তো ওপরেই থাকে বুঝেছি এখন যাই।”

মিহু এসব ভেবে ওপরের যাওয়ার জন্য পা বারায়। ওপরে গিয়ে পরে আরেক ঝামেলাই, ওপরেও তো অনেক রুম কোন রুমটা জিসানের হবে এবার। মিহু এক এক করে সব রুম চেক করে কিন্তু একটা রুমের কাছে গিয়ে দেখে রুম টাই তালা লাগানো। মিহু বুঝলো না সব রুম খোলা অথচ এই রুমে কেন তালা লাগানো? তালা টা দেখে মনে হচ্ছে রোজ এই রুম খোলা হয়, কারণ অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকলে তালা টাই জং ধরে থাকতো কিন্তু এই তালায় জং নেই চকচকে হয়ে আছে। তারমানে এই রুম রোজ খোলা হয়, কিন্তু তালা কেন দিয়ে রেখেছে বুঝতে পারছে না মিহু। মিহু ব্যাপার টা না ভেবে জিসানকে খুঁজতে লেগে পরে। তালা বন্ধ রুমের পাসের রুমটা জিসানের। মিহু চুপি-চুপি ভিতরে যায়,, পুরো রুম অন্ধকারে আচ্ছন্ন। মিহু চুপি-চুপি
এগিয়ে যেতে লাগে জিসানের দিকে। কিন্তু ফ্লরে কিছু পরে ছিলো তাতে পা আটকে মিহু ধপাস করে পরে বেডে।

বুকের ওপর ভারি কিছু পরতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় জিসানের হাত বারিয়ে রুমের লাইট অন করে। বুকের ওপর কোনো মেয়েকে পরে থাকতে দেখে জিসান। মুখটা ভালো করে দেখে কাল রাতের মেয়েটা মুখের মেক আপ নেই, চুল গুলো এলো মেলো ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে মাহিরের কাছে কিছুক্ষণ এক ভাবেই তাকিয়ে থেকে কি যেনো ভেবে এক ঝটকায় দূরে ফেলে মিহুকে জিসান। জিসানের ধাক্কায় মিহু বেডের নিচে পরে আর ব্যাথায় আহহ বলে উঠে। জিসান রেগে বলে,,

“এই মেয়ে তুমি এই রুমে কি করছো? সাহস কি করে হয় তোমার আমার অনুমতি না নিয়ে আমার রুমে প্রবেশ করার।”

“এই আপনি চুপ করেন তো, আল্লাহ গো আমার কোমর টা গেলো গো। এতো জোরে কেউ ধাক্কা দেয় দেখেন আমার কোমর ভেঙ্গে গেলো। এখন আমাকে কোন হান্ডসাম ছেলে বিয়ে করবে না সেই মামির পছন্দ টাকলা কাকুরে বিয়ে করতে হবে। না এ হতে পারে না তার আগেই আমি নিজেকে শেষ করে দিবো চিনি খেয়ে।”

“শাট আপ স্টুপিড!! তোমার কি ভয় করছে না তুমি জানো তুমি কার রুমে এসে এসব ফালতু কথা বলছো?”

“আপনার লজ্জা করছে না রাতে একটা মেয়ের সর্বনাশ করে এখন ন্যাকা সাজছেন।”(মিহু রেগে তেরে এসে বলে)

” হোয়াইট সর্বনাশ? কিসের সর্বনাশ আর কার সর্বনাশ?”( কনফিউশন হয়ে জিজ্ঞেস করে জিসান)

“কার মানে কি? আমার, আমার রাতে আপনি আমার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছেন আবার এই ড্রেস ও পালটে দিয়েছেন বুঝি না ভেবেছেন আমি। এখন আমার কি হবে কে বিয়ে করবে আমাকে।”

জিসান এবার বুঝলো মিহু কোন সর্বনাশের কথা বলছে। রেগে জিসান মিহুর কাছে এসে বলে।

“স্টুপিড একটা, তোমার মতো মেয়ের সঙ্গে এই মাহির ওইসব করবে হাও ফানি। তোমার এই ড্রেস ডালি চেঞ্জ করে দিয়েছে আর এই মাথায় ব্যান্ডেজ ডালিই করে দিয়েছে। আমি জাস্ট তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে আসার পারমিশন দিয়েছি এর বাইরে তুমি মরলে বাচলে এতে আমার কিছু যায় আসে না মাইন্ড ইট? বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে এর পরে আমার রুমে আসার সাহস দেখাবে না গো।”

জিসানের এমন রাগ নিয়ে কথা বলায় মিহু মুখ ফুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজে নিজে বলে।

“এ আসছে দেখো, আমার রুমে আসার সাহস দেখাবে না একশো একবার যাবো অনেক বার যাবো কি করবি কর শালা।”

বির-বির করতে-করতে নিচে নেমে আসে মিহু এই জিসানের ওপর খুব রাগ লাগছে তার। রুমেই তো গেছে চুরি তো করতে যায়নি। জিসানের চৌদ্দগুষ্টির ষষ্ঠী পূজা করছিলো ঠিক তখন কেউ একজন বলে।

“কি মিহু এখন কি অবস্থা কেমন আছো?”

মিহু তাকিয়ে দেখে ব্লাক কোট প্যান্ট পরা এক মেয়ে, মিহু মনে করার চেষ্টা করলো এই মেয়েকে? তখনি মনে পরেও গেলো এই ডালি। মিহু মুখে হাসি নিয়ে বলে,

“এই তো আপু ভালো কিন্তু আমাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে আপু?”

“জিসান স্যার, তুমি খুব লাকী মিহু এই প্রথম জিসান স্যার কোনো মেয়েকে তার বাসায় নিয়ে এসেছে। এমনকি থাকার অনুমতিও দিয়েছে..,, ” (ডালি আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওপর থেকে জিসান বলে)

“থাকতে দিয়েছি এর মানে এই না বসে বসে খাবে, এই বাড়িতে থাকতে হলে এই বাড়ির কাজে হাত লাগাতে হবে এমনি এমনি তো আর কাউকে খাওয়াতে পরাতে পারবো না। ডালি তাকে বাড়ির সব কাজ বুঝিয়ে দাও।” (বলেই রুমে চলে যায় জিসান)

“এতো বড়ো মাফিয়া হয়েও কি কিপটামি করছে রে বাবা।” (মিহু মনে মনে বলে)

“স্যার কি বললো দেখলেই তো পারবে তুমি কাজ করতে?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ পারবো মামির বাসায় তো আমিই সব কাজ করেছি আমি অনেক ভালো রান্না পারি।”

“রান্না ছারাও তোমাকে আরেকটা কাজ করতে হবে।”

মিহু ব্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে “কি কাজ?” ডালি মিহু কে বলে, “আমার সঙ্গে এসো”। ডালি মিহু কে নিয়ে একটা রুমের দিকে যেতে লাগে মিহু বুঝতে পারছে না ডালি কথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে। একটা রুমের কাছে গিয়ে দরজা খুলে ভিতরে যায় ডালি মিহু। ভিতরে গিয়ে দেখে বেডে একটা মহিলা শুয়ে আছে মিহু বুঝলো না এই মহিলা কে? মিহু প্রশ্ন ভরা চোখে ডালির দিকে তাকায় ডালি বলে।

” এটা স্যারের আম্মু মাহিরা খান উনি প্যারালাইস কোনো এক দুর্ঘটনায় এমন হয় ওনার। কথা বলতে পারে না কিন্তু সব কথা শুনতে পারে বুঝতে পারে। হাটা চলা করতে পারে না। এই রুমেই সারাক্ষণ পরে থাকে কিছু দিন আগে স্যার আমাকে বলেছিল ম্যামের জন্য ভালো কাউকে নিয়ে আসতে যাতে দেখা শুনা করতে পারে ভালো করে। আমার মনে হয় তুমি এই কাজ ভালো পারবে তো তুমি কি ম্যামের দেখাশুনা করতে চাও?”

মিহু এক বৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো জিসানের আম্মুর দিকে, ডালির কথায় মিহু বলে।

“পারবো আন্টির সব কিছু আমি করবো আজ থেকে।”

মিহুর কথায় ডালি মুচকি হাসে।

।।

জিসান খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করছে মিহু কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে, তখনি একটা লোক আসে।

“হেই জিসান।”

“ছোট আব্বু তুমি কখন এলে আসো নাস্তা করো।”(মাহির হালকা হেসে বলে।)

জিসানের ছোট আব্বু আরিয়ান খান,, জিসান এই আরিয়ান খান কেই অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। আরিয়ান খান যা বলে তাই মেনে চলে জিসান। আরিয়ান খান একটা চাইর টেনে বসে জিসান কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চোখ পরে মিহুর দিকে। ব্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।

” এই মেয়েটা কে? আগে তো দেখিনি।”

“ম্যামের দেখাশনা করার জন্য এসেছে।” (জিসানের আগে ডালি বলে কথাটা)

“ওহহ!” (মিহুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে আরিয়ান)

মিহুর কাছে এই আরিয়ান খানের হাফভাব ঠিক মনে হলো না। জিসান আরিয়ান নাস্তা করছে আর টুকটাক কথা বলছে কিছু একটা নিয়ে। খাওয়া শেষে জিসান আরিয়ান ডালি বেরিয়ে যায়। বাকি কাজের লোক সব কিছু গুছাতে বাস্ত হয়ে পরে এই সুজগে মিহু আবার জিসানের রুমের দিকে পা বারায়।

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here