তুমিময় বেদনা পর্ব -০৩

#তুমিময়_বেদনা~
#Mst_Nafisa~
#Part_3

সকালে উঠে জিসান রেডি হয়ে নিচে আসে,, নাস্তা করেই বেরিয়ে পরবে তার রোজ কার কাজে। মিহু আজ নাস্তা বানিয়েছে সব টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। জিসান তারা দিয়ে টেবিলে বসে।

“রুম্পি(কাজের মেয়ে) আমার নাস্তা জলদি দে বের হতে হবে কাজ আছে।”

মিহু হুট করেই বলে উঠে।

“আজ আবার কিসের কাজ? আজ না শুক্রবার কাজ বাদ দিয়ে নামাজ পড়তে যাবেন।”

জিসান বিরক্ত নিয়ে বলে।

“এখন কি তুমি আমাকে বলে দিবে আমি কোন দিন কি করবো না করবো? ”

“আমি বলার কে যেটা সত্যি কথা সেটাই বলেছি, এখন আপনি শুনবেন কি শুনবেন না সেটা আপনার বিষয়।”

“শাট আপ স্টুপিড! থাকতে দিয়েছি বলে মাথায় চরে বসো না, আর তুমি ভুলে যাবে না কার সঙ্গে কথা বলছো।” (রেগে বলে জিসান)

“পাপি লোক একটা, পাপের কাজেই তো ডুবে আছে নামাজ পড়ার সময় কই?” (মিহু মনে মনে বলে)

মুখ ফুটে মিহু আর কিছু না বলে বড়ো একটা মুখ ভেংচি দিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। জিসানের আম্মুর জন্য সুপ বানাচ্ছে আর জিসানের ৩৬ টা বাজাচ্ছে মিহু।

“বাসায় থাকতে দিয়েছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি, আর কি বলে হ্যাঁ ‘তুমি ভুলে যাবে না কার সঙ্গে কথা বলছো ‘ হুহহ কোন লাটসাহেব রে তুই যে তোর সঙ্গে কথা বলতে পারবো না।”

নিজে-নিজে বাক-বাকুম করছে আর সুইপ বানাচ্ছে মিহু,, সুইপ বানা শেষ হলে সেটা নিয়ে যায় মাহিরা খানের রুমে। রুমে প্রবেশ করে দেখে জিসান বসে আছে মারিরা খানের পাসে জিসানের হাতে তার আম্মুর হাত। মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কোন কথা বলছে না,, মিহু রুমের বাইরে গেলো আবার হুট করে তো আর যাওয়া যায়না ভিতরে। বাইরে গিয়ে নক করলো মিহু। জিসান পিছনে তাকিয়ে দেখে মিহু খাবার হাতে, মিহু কে দেখে জিসান ব্রু কুচকে বলে।

“তুমি এখানে?”

মিহু মুখ ভার করে অন্য দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়।

“ডালি আপু আন্টির দেখা শুনার জন্যে আমাকে রেখেছে।”

মিহুর কথা বলার ভঙ্গি দেখে অবাক হলো, জিসানের কাছে এই মেয়েকে অনেক আজব মনে হচ্ছে। আজ পর্যন্ত যত মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছে জিসান সব মেয়ে গুলাই হা করে তাকিয়ে থেকেছে জিসানের দিকে আর এই মিহু কি না জিসান কে রাগ দেখাচ্ছে? এতো সাহস পাচ্ছে কই সেটাই বুঝতে পারছে না জিসান।।। মিহু দেখে জিসান তার দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সেটা দেখে মিহু আরেক দফা মুখ ভেংচি দিয়ে দেয়। জিসান এবার উঠে দাঁড়ায় মিহু কিছুটা ভয় পায় কিন্তু প্রকাশ করে না। জিসান মিহুর অনেকটা কাছে চলে যায় মিহুর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতে লাগে তবুও মুখের ভাব ডোন্ট কেয়ার টাইপ। জিসান কিছু না বলেই মিহুর পাস কেটে চলে যায় বাইরে মিহু যেনো ফাপ ছেরে বাচে। সুইপের বাটি নিয়ে মারিরা খানের কাছে গিয়ে বসে। সুইপ খাইয়ে দিতে দিতে মিহু বকবক করে।

“আপনার ছেলেটা না বড্ড আজব,, কখন কি করে বুঝাই যাইনা। আচ্ছা আপনার ছেলে এতো কম কথা বলে কেন বলুন তো? কথা বলতে যানে না নাকি? সব সময় মুখটা বাংলা সাতের মতো করে থাকে। আমি বলে রাখছি আন্টি আপনার কপালে বউমা জুটবে না। আরে এমন খারুশ মারকা ছেলেকে কোন মেয়ে বিয়ে করবে বলুন তো। দেখতে সুন্দর হলে কি হবে মুখে তো সব সময় তিতা তিতা কথা। আচ্ছা ছারেন আপনার ছেলের কথা, আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন তো। আমার মনে হয় কি আপনার ছেলের আপনাকে খুব প্রয়োজন আপনার ভালোবাসার খুব প্রয়োজন। আপনার ছেলের তো অনেক টাকা এখনো আপনাকে ঠিক করতে কেন পারলো না বুঝছি না। গত ১২ বছর ধরে কেউ এমন হয়ে পরে থাকে? সময়টা একটু বেশি হয়ে গেলো না মেডিসিনের কি কাজ করে না নাকি?”

মিহু এমন হাজারো কথা বলতে থাকে কিন্তু ওপর পাস থেকে কোন উত্তর আসে না শুধু ফ্যান ফ্যান করে তাকিয়ে থাকা দুটো চোখ ছাড়া। মিহু এই চোখের ভাষা বুঝতে পারে এই চোখে অনেক মায়া ভালোবাসা কষ্ট আফসোস লুকিয়ে আছে। মিহুর মনে হয় মাহিরা খানের এই চোখ অনেক কিছু জানে দেখেছে,, সুস্থ হয়ে উঠার আফপ্রান চেষ্টা কিন্তু উনি সুস্থ হয়ে উঠছে না। মিহু সুইপ খাওয়া শেষ করে মুখ মুছে দিতে দিতে বলে।

“আমি আপনাকে সুস্থ করে তুলবো দেখবেন, একদিন আপনিও হেটে বেরাবেন অনেক অনেক কথা বলবেন আমার মতো। আচ্ছা আমি যে আপনার কাছে এসে এতো বকবক করি আপনার বিরক্ত লাগে না? কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে আপনি এখন আমার বকবক শুনুন আপনি সুস্থ হবেন দিয়ে আমি আপনার বকবক শুনবো পাক্কা। ”

মিহুর এসব কথা শুনে চোখ থেকে এক ফোটা পানি গরিয়ে পরে মাহিরা খানের মিহু বুঝতে পারলো না এই চোখের পানি কষ্টের নাকি সুখের। মিহু পরম যত্নে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে।

“এই চোখে পানি মানায় না আন্টি। আচ্ছা আমি আপনাকে মামনি বলি? আন্টি আন্টি করতে আমার কেমন জানি লাগে, আচ্ছা মামনি ই বলি। তো মামনি এবার মেডিসিন টা মেয়ে নিন তো। ”

মিহু মামনিকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে ভালো করে কম্বল গায়ে দিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়। তখনই বাইরে দরজার সামনে থেকে কেউ শরে গেলো মনে হলো মিহুর। মিহু তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে এদিক সেদিক দেখলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো, তাহলে মিহুর মনের ভুল নাকি সত্যিই কেউ লুকিয়ে দেখছিলো তাকে? বড্ড রহস্যময় লাগছে মিহুর কাছে এই বাড়িটা কেন মনে হচ্ছে এই বাড়িতে কিছু একটা চলছে সবার চোখের আরালে। এমনকি জিসান খান ও যানে না এই বিষয়ে। কি হতে পারে কি এই বাড়ির রহস্য??

দেখতে দেখতে ১৫ দিন কেটে যায় মিহুর জিসানের বাড়িতে। এর মধ্যে জিসানের সঙ্গে টুকটাক কথা কাটাকাটি হয়েছে সামনে পরলে। মিহু এখন মামনির রুমেই সময় কাটায় বেশি,, মিহুর এখনো মনে হয় কেউ নজর রাখে তার ওপর যখনি মামনির রুমে যায় মিহু। আচ্ছা এই মামনির রুমে কি আছে? আর কেই বা নজর রাখছে যা মিহুর চোখে এখনো পরছে না। এর মধ্যে মিহু জিসানকে খেয়াল করেছে বড্ড চুপচাপ দরকার ছাড়া কথা বলে না। মিহুর মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে এই লোক কিনা মাফিয়া বিনা দোষে খুন করে একের পর এক। কিন্তু মিহুর কেনো মনে হয় জিসান যা করছে তা বাধ্য হয়ে। জিসানকে কান্না করতে দেখেছে মিহু মামনির হাত ধরে। জিসান পুরো কলকাতার মানুষের কাছে যতটা ভয়ংকর ততটা না জিসান। মনের মধ্যে অনেক কষ্ট তার সেটা মামনির কাছে আসলেই বুঝা যায়।

।।

“মিস্টার রাসেল একজনের পুরো ডিটেইলস চাই আমার।”

“কার পি.এ?”

“আরিয়ান খানের, জিসান খানের ছোট আব্বু আরিয়ান খান। এর পুরো ডিটেইলস আমাকে দাও আর খুব জলদি দাও।”

“ওকে কাজ হয়ে যাবে।”

।।

আকাশে ঘন কালো মেঘ উঠেছে মনে হয় বৃষ্টি হবে,, ছাদে কাপড় শুকাতে দেওয়া আছে মিহু ছাদে গিয়ে এক এক করে সব কাপড় তুলে নিয়ে নিচে নামতে লাগে। এর মধ্যে অনেক জোরে গর্জে উঠে মেঘ,, মিহু তাড়াতাড়ি শিরি দিয়ে নিচে নামতে লাগে। তারাহুরোই কারও সঙ্গে ধাক্কা লাগে মিহুর, তাকিয়ে দেখে জিসান। চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে লাল হয়ে আছে চোখ মিহু কথা বারালো না পাস কাটিয়ে নিচে যেতে লাগে। যেতে যেতে একবার পিছনে তাকিয়ে দেখে জিসান ও ছাদে চলে যাচ্ছে। মিহু নিচে এসে কাপড় গুলো রাখতেই খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। মিহুর মনে পরে জিসান তো ছাদে বৃষ্টি হচ্ছে তাও নিচে আসছে না কেন? মিহু একটা ছাতা নিয়ে আবার ছাদে চলে যায়। ছাদে গিয়ে দেখে জিসান ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো জোরে বৃষ্টি পরছে তাও লোকটা আকাশের দিকে কি করে তাকিয়ে আছে বুঝলো না মিহু। মিহু ছাতা নিয়ে জিসানের পাসে দাঁড়ায়। নিজের ওপর বৃষ্টির পানি পরছে না দেখে চোখ খুলে পাসে তাকায় জিসান। পাসে মিহুকে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্রু কুচকায়। মিহু বলে,,

“বৃষ্টি পরছে জোর হবে আপনার চলুন রুমে।”

জিসান মিহুর কথায় জবাব না দিয়ে মিহুর হাতে থাকা ছাতাটা এক ঝটকায় ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মিহু বৃষ্টির পানিতে ভিজে চুপচুপ হয়ে যায়। মিহু বলে,,,

“এটা কি করলেন পুরো ভিজে গেলাম তো,, চলুন নিচে।”

কথা টা বলেই মিহু জিসানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগে কিন্তু এক চুলো নরাতে পারলো না জিসানকে মিহু। উল্টো জিসান মিহুকে এক টানে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে। মিহু কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না জিসানের চোখের দিকে তাকিয়ে। জিসান মুখ খুলে,,,

“আই নিড কেয়ার, আই নিড লাভ। ভালোবাসা চাই আমার অনেক বেশি ভালোবাসা।”

জিসানের এই এলো মেলো কথা কিছু বুঝতে পারলো না মিহু তবে কথা শুনে মিহু বুঝলো জিসান ড্রিংক করেছে। যা বলছে সব নেশায় বলছে। জিসান মিহুকে আরও একটু কাছে এনে বলে।

“আজ জ্যামে আটকা পরেছিলাম রাস্তাই তখন আমি কি দেখেছি যানো? ” (নেশা ওলা কন্ঠে বলে জিসান)

“ক….কি?(মিহু)

” এক সুখী পরিবার, ভদ্রলোক তার প্রিয়সি ও তার ফুটফুটে এক মেয়ের হাত খুব যত্নে ধরে রাস্তা পার করছে। আমার কোম্পানি তে সামান্য স্টাফ ও সুখী, ভালবাসার মানুষের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে আমার কাছে ছুটি নেয় সেই দিনের আমি দেখেছি সেই স্টাফের লজ্জা ও প্রাপ্তি মাখা মুখ। সবার ভালোবাসার মানুষ আছে আমার কেন নেই? পৃথিবীর সবাই সুখী আমি কেন সুখী নয়? কি নেই আমার টাকা বাড়ি গাড়ি সব আছে কিন্তু আমি কেন শান্তি পাচ্ছি না?”

জিসানের এমন কথায় মিহু কি উত্তর দিবে খুঁজে পাচ্ছে না। জিসান আবার বলে,,

“আম্মু, আমার আম্মু কেন সুস্থ হচ্ছে না মিহু? এতো বছর ধরে তো আমি কম চেষ্টা করিনি তবুও কেন ঠিক হচ্ছে না? আম্মু বুঝে না তার ভালবাসা আমার খুব দরকার। সেই দিন টা কেন এলো আমার জীবনে কেন কেন? আমার কাছ থেকে আমার আব্বুকে কেরে নিলো আমার আম্মুর ভালবাসা কেরে নিলো। আমার সপ্ন কেরে নিলো সব সব কেরে নিয়েছে আমার সেই দিন টাই।”

জিসান কান্না করছে অনেক বেশি কান্না করছে,, মিহু ভাবতেও পারেনি এতো গভীর একটা লোকের মনে এতো কষ্ট আছে। টাকা বাড়ি গাড়ি থাকলেই শুধু সুখী হওয়া যায় না,, কপালে সুখ থাকলে রুশকা চালাকের ঘরেও সুখ থাকবে আর না থাকলে কোটিপতি হলেও আসবে না। মিহু জিসানকে কোন মতে ধরে জিসানের রুমে নিয়ে আসে। অনেক বুঝিয়ে মিহু জিসান কে কাপড় পালটাতে বলে কিন্তু জিসান শুনছেই না।

“আরে এই ভেজা কাপড় পরে থাকলে আপনার জোর হবে বুঝেন না কেন?”

“তার আগে তুমি বলো তুমি এতো কিউট কেনো?

জিসানের এহেম কথায় চোখ বড়ো করে তাকায় মিহু যে জ্ঞান থাকতে মিহু কে দেখতেই পারে না সে কিনা মিহুকে কিউট বলছে ভাবা যায়?

” হ্যাঁ আমি জানি আমি অনেক কিউট এখন আপনি চেঞ্জ করেন।”

“তুমি করিয়ে দাও।”

“নাউজুবিল্লাহ! আমি পারবো না আপনি নিজে করেন।”

“তাহলে থাক এভাবেই শুয়ে পরি।”

“এই না না প্লিজ আচ্ছা ওয়েট আমি করে দিচ্ছি। ”

মিহু জিসানের টি-শার্ট আর টাওজার নিয়ে আসে অনেক কষ্ট করে ভিজা জামাটা খুলে শুকনো টি-শার্ট পরিয়ে দেয়।

“প্লিজ আপনার পায়ে পরি এবার নিজে টাওজার টা পরুন।”

মিহুর মুখের দিকে তাকিয়ে বোকা মারকা একটা হাসি দিয়ে বলে জিসান।

“আচ্ছা”।

জিসান ড্রেস চেঞ্জ করে নেয় মিহু খাবার এনে বলে,

” খেয়ে নিন।”

“না।”

“না মানে? খেয়ে লেন জলদি না খেয়ে ঘুমাবেন না।”

“খেতে পারি যদি তুমি খাইয়ে দাও।”

মিহু কথা বারালো না কারণ জানে জিসান হুশে নেই কথা মানবে না। জিসান কে খাইয়ে দিয়ে শুতে বলে জিসান ও গুড বয়ের মতো চুপটি করে বেডে শুয়ে পরে। মিহু জিসানের গায়ে চাদর দিয়ে চলে যায় নিজের রুমে। রুমে গিয়ে সব কিছু মিলাতে লাগে। জিসানের ভিতরের কষ্ট থেকে মামনির ঠিক না হওয়া, জিসানের সপ্ন কি ছিলো সব কিছু।

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here