তুমিময় বেদনা পর্ব -০৪

#তুমিময়_বেদনা~
#Mst_Nafisa~
#Part_4

“আরিয়ান খানের ডিটেইলস পেয়েছি পি.এ।”

“গুড! এখন বলো জলদি আমাকে বাসায় ফিরতে হবে।”

“আরমান খান মানে জিসানের আব্বুর সৎ ছোট ভাই আরিয়ান খান। আরিয়ান খান সব সময় দেশের বাইরে থাকে মাঝে মধ্যে কলকাতা আসে জিসানের সঙ্গে দেখা করতে। জিসান এই আরিয়ান খান কে অন্ধের মতো বিশ্বাস ভরসা করে,, আমার জানা মতে এই আরিয়ান খান সুবিধার মানুষ নন। আরিয়ান জিসানকে ব্যাবহার করছে বোকা জিসান বুঝতেও পারছে না এতো বড়ো মাফিয়া হয়েও। আরেকটা কথা আরিয়ান খানের একটা মেয়ে আছে নাম জেসিকা জেসি।”

সব কথা ঠিক বললেও শেষের কথাটা মানতে পারলো না পি.এ। ব্রু কুচকে বলে পি.এ,,

“আরিয়া খান বিয়েই করেনি মেয়ে আসবে কই থেকে মিস্টার রাসেল?”

“না উনি বিয়ে করেছে আমি যেই গোয়েন্দা টিমকে তার ওপর নজর রাখতে বলেছিলাম তারা নিজের চোখে দেখেছে এবং জেসি যেই খানে জব করে সেখানেও খবর নিয়ে দেখেছে জেসির আব্বুর নাম আরিয়ান খান।”

“এই আরিয়ান খানের দিকে নজর রাখেন মিস্টার রাসেল,, এই আরিয়ান খান বিয়ে করার শর্তেও জিসান খানের থেকে লুকানো কেন? আর নিজের মেয়েকেই বা কেন লুকিয়ে রেখেছে। সব সময় আরিয়ান খানের দিকে নজর রাখেন,, এই সব কিছুর পিছুনে আরিয়ান খান আছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। আচ্ছা আমি এখন যায় বেশি বাইরে থাকা যাবে না আমার আল্লাহ হাফেজ। ”

কথা গুলো বলেই চলে যায় পি.এ।

।।

“এই মামা টমেটো কত করে?”

“২০ টাকা কেজি আফা।”

মিহু চোখ গরম করে বলে।

“ওই দোকানটা তে তো ১৫টাকা কেজি দিচ্ছিলো আর তুমি পাচ টাকা বেশি নিচ্ছো?”

“আমার টমেটো টাটকা তাজা আফা। ”

“তাতে কি হয়েছে? ৫০ টাকাই পাচ কেজি ভোরে দাও। বেশি দামাদামি কইরো না মামা এমনেই বেশি দিতাছি টাকা।”

সবজি ওলার সঙ্গে অনেক তর্কাতর্কি করে মিহু ৫০ টাকাই পাচ কেজি টমেটো নিলো। টমেটো নিয়ে অন্য দোকানে যেতে লাগে ঠিক তখনই গুলির শব্দ পাওয়া যায়। গুলির শব্দে বাজারের সব মানুষ এদিক থেকে ওই দিক ছুটে যাচ্ছে। মিহু বুঝতে পারছে না কি হলো হটাৎ, যেদিক থেকে গুলি করার আওয়াজ এসেছে সেদিকে মিহু যায়। গিয়ে দেখে একটা লোক মাটিতে পরে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করছে কিন্তু কেউ একিয়ে এসে সাহায্য করছে না। মিহু হাতে থাকা টমেটোর প্যাকেট রেখে লোকটার কাছে যায়।

“কি হয়েছে আপনার? কে মারলো আপনাকে? চলুন আপনাকে হস্পিটালে নিয়ে যাচ্ছি। আরে আপনারা তাকিয়ে কি দেখছেন সাহায্য করুন আমাকে লোকটা মরে যাবে হস্পিটালে নিয়ে যেতে হবে সাহায্য করুন না প্লিজ।”

মিহু এতো করে ডাকছে আসেপাশের লোককে কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না। তখন একজন বলে উঠে।

“এর বাচার কোন অধিকার নেই।”

মিহু পিছনে তাকিয়ে দেখে গাড়ির সামনে হাতে গান নিয়ে বসে আছে জিসান। মিহু উঠে জিসানের কাছে এসে বলে,,

“কার বেচে থাকার অধিকার আছে কার নেই এইটা বলার আপনি কে? জন্ম মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে আপনি কেউ না।”

“দেখতে চাও আমি কি কি করতে পারি?”

মিহু কিছু বলার আগেই জিসান মাটিতে পরে থাকা লোক টাকে আরও তিন টা পর পর গুলি করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে লোক টা ঢলে পরে মৃত্যুর কলে। মিহু ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে জিসান মিহু কে কিছু না বলে মিহুর সামনে দিয়ে শিশ বাজাতে বাজাতে চলে যায়। মিহুর জিসানের প্রতি ঘেন্না আরও বেশি বেরে যায়।

।।

জিসান বাসায় ফিরে সোজা রান্না ঘরে যায়, ডালি ওবাক হয় আজ পর্যন্ত জিসান কে রান্না ঘরে যেতে দেখেনি। মিহু মামনির জন্য সুইপ করছিলো ঠিক তখনই জিসান এসে মিহুর হাত ধরে বাইরে নিয়ে এসে ছুরে ফেলে সোফায়। চিৎকার করে বলে জিসান।

“ডালি এই মেয়েকে ভালো করে বুঝিয়ে দাও এর পরের বার যেনো আমার কোন কাজে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।”

ডালি কিছুই বুঝলো না কি বলছে জিসান, কারণ আজ ডাকি আজ জিসানের সঙ্গে ছিলো না। মিহু বলে,,

“আপনি নিজেকে কি ভেবেছেন সবাই আপনাকে ভয় পায় বলে আমিও ভয় পাবো? কখনো না, অন্যায়কারী দের আমি কখনো ভয় পাবো না আপনাকেও ভয় পায়না আমি।”

জিসান রেগে মিহুর চুলির মুঠি ধরে কাছে নিয়ে এসে বলে।

“জিসানের সঙ্গে লাগতে এসো না পরিনাম ভালো হবে না। তোমার কপাল যে আজ আমি তোমাকে ছেরে দিয়েছি ওখানে মেরে ফেলিনি, আমার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।”

মিহু ব্যাথায় বলে।

“ছারুন আমাকে ব্যাথা লাগছে।”

জিসান আরও শক্ত করে ধরে বলে।

“লাগুক! ডালি এই মেয়ে যেনো আজ খাবার না পায় আর বেশি উরলে বলে দাও তাকে তার মামির বাসায় রেখে আসবো সঙ্গে সেই বুড়োর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে আসবো।”

এটা বলেই জিসান ওপরে চলে যায়। এই দিকে মিহু রাগে ফুসতে থাকে,, ডালি মিহুর কাছে এসে বলে।

“স্যার এমন কেন করলো মিহু কি করেছো তুমি?”

মিহু ডালিকে বলে বাজারের কথা।

“তোমার স্যার খুব বাজে আপু।”

“মিহু তুমি স্যারকে ভুল বুঝছো, স্যার কোন সাধু সন্ন্যাসী লোক কে মারেনি। এই লোক মেয়ে ব্যাবসায়ীদের লিডার, হাজার হাজার মেয়ে পাচার করে বিদেশে সেটার শাস্তিই জিসান স্যার দিয়েছে তাকে।”

“কিন্তু উনি কেনো শাস্তি দিবে? নিজের হাতে কেন আইন তুলে নিয়ে খুনি হবে। ওদের শাস্তি দেওয়ার জন্য তো পুলিশ আছে।”

“মিহু তুমি ভুলে যাচ্ছো জিসান স্যার পেশায় মাফিয়া ওনার কাজ ই খুন মারামারি।”

এটা বলেই ডালি চলে যায়, মিহু ও উঠে রান্না ঘরে চলে যায়।

।।

“স্যার এই মিহু মেয়েটাকে আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না। যেখানে কলকাতার সবাই জিসান স্যারকে ভয় পায় সেখানে এই মেয়ে স্যারের মুখে মুখে কথা বলছে স্যারের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

আগুন্তক ফোনে কাউকে এই কথা বলে, ফোনের ওই পাস থেকে কেউ বলে উঠে।

“আমি এই মেয়েকে দেখেই বুঝেছিলাম এই মেয়ে সাধারণ কেউ না, এই মেয়ের চোখে আমি প্রতিশোধের আগুন দেখেছি। তবে তুমি খবর নাও এই মেয়ে কি করতে কি কাজে খান বাড়িতে ঢুকেছে। আর যদি জিসানের থেকে এই মেয়েকে আলাদা রাখার চেষ্টা করবা। জিসান কোনভাবেই যেনো এই মেয়ের প্রতি দুর্বল হয়ে না পরে,, আজ পর্যন্ত জিসানের কাজে যে বাধা হয়েছে সে নিজের জীবন বাচাতে পারেনি এই মেয়ে এতো কিছু করেও বেচে আছে মানে জিসান এই মেয়েকে পছন্দ করে। তুমি সব রকমের খবর আমাকে দিতে থাকো বাকিটা আমি দেখছি।”

।।

মিহু কফি নিয়ে জিসানের রুমে যায়,, কোন কথা ছাড়া দরজায় নক করে মিহু।

“কামিং!(জিসান)

মিহু ভিতরে গিয়ে দেখে জিসান সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে,, মিহু কথা ছারায় কফির মগটা ঠক করে টেবিলের ওপর রাখে। এমন ভাবে কফি রাখায় জিসান অবাক হয়ে মিহুর দিকে তাকায়। মিহু মুখ ভার করে আছে জিসান বুঝতে পারে না এই মেয়ে তাকে ভয় কেন পায়না। মিহু চলে যেতে নিচ্ছিলো তখন জিসান বলে।

” দাঁড়াও।”

মিহু কিছু না বলে দাঁড়িয়ে যায়। জিসান নিজেই জানে না ও মিহুকে দাঁড়াতে কেন বললো। অনেকক্ষন ধরে মিহু দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু জিসান কিছুই বলছে না মিহু এবার বিরক্ত হচ্ছে। বিরক্ত হয়েই বলে,,,

“কিছু বলবেন স্যার?”(মুখ ফুলিয়ে)

” হুম কি?(আনমনে জিসান বলে)

মিহু বিরক্ত হয়ে দাতে দাত চেপে বলে।

“কিছু বলবেন?”

“হ্যাঁ বলছিলাম আম্মু কেমন আছে? মেডিসিন খাচ্ছে তো ঠিক মতো? ”

“নিজে গিয়ে দেখে আসতে পারিস না আমারে জিজ্ঞাস ক্যান?(মনে মনে বলে মিহু)

জিসান উত্তর না পেয়ে বলে, ” কি হলো উত্তর কই?”

“জি ভালো আছেন, মেডিসিন ও খাচ্ছে ঠিক মতো, আর কিছু?”

“আর কিছু মানে কি?(জিসান)

” মানে আর কিছু বলবেন?”

“ওহ, না! ডিনার রেডি করো আমি আসছি খেতে।”

মিহু জি বলে বেরিয়ে আসে জিসানের রুম থেকে।

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here