তুমিময় বেদনা পর্ব -০৫

#তুমিময়_বেদনা~
#Mst_Nafisa~
#Part_5

রাত ১ টা বাজে মিহুর ঘুম আসছে না তাই সে ছাদে যাবে বলে উঠে দাঁড়ায়। রুম থেকে বেরিয়ে ওপরে যেতে লাগে পুরো বাসা অন্ধকার সবাই ঘুমাচ্ছে। মিহু দুতালায় উঠে দেখতে পায় জিসান রুম থেকে বের হচ্ছে,, এই মুহূর্তে জিসানের সামনে পরার কোনো ইচ্ছে নেই মিহুর তাই সে লুকিয়ে পরে। কিন্তু জিসান এতো রাতে কথায় যাচ্ছে বুঝতে পারছে না মিহু। মিহু উকি মেরে দেখে মাহির সেই বন্ধ দরজা রুমটার তালা খুলছে, মিহুর কিউরিওসিটি বেরে গেলো। কি আছে এই রুমে আর কেনই বা বন্ধ করে রাখা হয় সেটা জানার আগ্রহ বেরে গেলো মিহুর। জিসান এতো রাতেই বা কেন এই রুমে যাচ্ছে কি আছে এই রুমে? জিসান রুমের ভিতরে ঢুকে লাইট অন করে হালকা করে দরজাটা চেপে দিলো।

মিহু পায়ে পরা জুতা টা সেখানেই খুলে রাখে যাতে পায়ের আওয়াজ না হয়। মিহু চুপি চুপি দরজার কাছে এসে কপাটের ফাক দিয়ে দেখার চেষ্টা করে ভিতরে কি আছে তা। কিন্তু মিহু দেখতে পাচ্ছে না কারণ দরজার ফাক দিয়ে যেটুকু দেখা যাবে সেই খানে জিসান দাঁড়িয়ে আছে। কিছুতেই সরছে না জিসান। মিহু বিরক্ত হয় বুঝতে পারছে না এক যায়গায় দাঁড়িয়ে সামনে কি দেখছে জিসান। বেশ অনেক্ক্ষণ পরে জিসান সেখান থেকে সরে দাঁড়ায় মিহু ও দেখে সামনে একটা বড়ো ফ্রেমে ছবি। একটা লোক আর তার সঙ্গে একটা ১০ থেকে ১২ বছরের ছেলের ছবি। মিহু বুঝতে পারছে না এই ছবিটা কার ছোট ছেলে টাকে দেখে জিসানের মতো লাগছে। তাহলে কি এই ভদ্রলোক জিসানের বাবা? মিহুর চোখ আরেকটু নিচে নেমে এলো সেখানেও একটা ছবি টাঙ্গানো। হ্যাঁ মিহু ঠিক ধরেছে এটা জিসানের বাবা কারণ নিচের ছবিটাই মামনি জিসান আর জিসানের আব্বু এক সঙ্গে আছেন। কথায় কথায় ডালির কাছে শুনেছিলো মিহু জিসানের বাবা নাকি খুন হয়েছে। কে করতে পারে জিসানের বাবাকে খুন? মিহু এটাও শুনেছে জিসানের বাবা কোনো মাফিয়া ছিলেন না উচ্চপদের বিজনেসম্যান ছিলেন আরমান খান। আর ছোট থেকেও জিসান মাফিয়া না তাহলে সেই সময় শত্রু তো থাকার কথা না তাহলে জিসানের বাবা খুন হলো কার হাতে? মিহুর মনে একটা প্রশ্ন এলো, জিসান কি জানে তার বাবার খুনি কে? নাকি জানে না? এই রুম বন্ধ করে রাখা হয় মানে এই রুমে আরও কিছু লুকিয়ে আছে। মিহু কে এই রুম ঘেটে দেখতেই হবে একদিন। বেশ অনেক্ক্ষণ পরে জিসান রুম থেকে বেরিয়ে আসতে নেয়,, মিহু এটা দেখার পরে তাড়াতাড়ি আবার আগের যায়গায় লুকিয়ে পরে। জিসান রুম থেকে বেরিয়ে আবার তালা ঝুলিয়ে দেয় সেই রুমে, তালা দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

সকালে উঠে মিহু মামনির রুমে যায় গিয়ে দেখে মামনির মেডিসিন শেষ হয়ে গেছে। এটা জিসানকে বলতে হবে ভেবে মিহু জিসানের রুমের দিকে যায়। জিসানের রুমের কাছে এসে নক না করেই ভিতরে চলে যায়। জিসান মাত্র সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে আলমারি থেকে ড্রেস বের করছে পরার জন্য। মিহু ভিতরে গিয়ে হা হয়ে যায় নিজের লজ্জার মাথা খেয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে জিসানের পিঠের দিকে। জিসান এখনো দেখেনি মিহু রুমে এসে বেহায়ার মতো তাকে দেখছে। জিসানের হাতে বেল্ট ছিলো সেটা হাত থেকে টুস করে পরে যায় সেই আওয়াজে মিহুর ধ্যান আসে। সে কি করছিলো ভেবেই নিজের ওপর রাগ লাগে তার জিসান এখনো মিহুকে দেখেনি তাই আবার রুমের বাইরে চলে যায় মিহু। আর নিজেকে নিজেকে বকা দেই।

“ছি মিহু তুই কবে থেকে এতো লজ্জাহিন হলি রে কি বেহায়ার মতো দেখছিলি। যদি জিসান দেখে ফেলতো তখন কি হতো ছি ছি ছি!! ” (মনে মনে)

নিজেকে ঠিক করে নক করে মিহু।

“স্যার আসবো?”

ভিতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠে আওয়াজ আসে।

“ওয়েট!”

কিছুক্ষণ পরে আবার জিসান বলে,”আসো” মিহু ভিতরে গিয়ে মাথা নিচু করে রাখে কারণ আগের বারের মতো ভুল করবে না সে। জিসান বলে,৷ “কিছু বলবে?” মিহু এক পলক জিসানের দিকে তাকায় দেখে জিসান ড্রেস পরে নিয়েছে তাই জিসানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।

“মামনির মেডিসিন শেষ হয়ে গেছে, এনে দিলে ভালো হতো। ”

“মামনি কে?” (ব্রু কুচকে বলে জিসান)

দাতে দাত চেপে বলে মিহু “আপনার আম্মু”।

” বাহ আমার আম্মুকে মামনিও বানিয়ে ফেলেছো।”

“আপনার কোন সমস্যা?”

“না আমার কেন সমস্যা হবে। বাট আম্মুর মেডিসিন শেষ হয়ে গেছে এটা আগে বলোনি কেন? ”

“মাত্র দেখলাম আগে খেয়াল ছিলো না।”

“খেয়াল ছিলো না বললে তো হবে না তোমাকে রাখা হয়েছে আম্মুর সব কিছু দেখা শুনা করার জন্য আর আম্মুর মেডিসিন শেষ হয়ে গেছে এটা আজ জানছো?” (গম্ভীর কন্ঠে বলে জিসান)

“আজকে খাওয়ানোর মেডিসিন আছে বাকি গুলো এনে দিবেন।”

কথা বলেই হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো মিহু। জিসান খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে এই মেয়ে অনেক জেদি প্লাস রাগি একটা মেয়ে।

।।

“আমি আপনাকে যে মেডিসিন পাঠিয়েছি সেটা ঠিক কিসের মেডিসিন চেক করে বলেন আমাকে মিস্টার রাসেল।”

“আমি আপনাকে দুই দিনের মধ্যে চেক করে বলছি পি.এ।”

“ঠিক আছে রাখছি এখন।”

।।

মিহুর হাতে মামনির নতুন মেডিসিন এনে ধরিয়ে দেয় ডালি, মিহু সব চেক করে মামনির রুমে রেখে আসে। রান্না শেষ করে গোসল করতে চলে যায় মিহু। গোসল করে এসে রান্না ঘরে গিয়ে মামনির জন্য খাবার নিয়ে মামনির রুমের দিকে যায়। মিহু রুমে ঢুকতে যাবে তার আগেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে হাতে কিছু কাপর নিয়ে আবুল নামের এক কাজের লোক। মিহু অবাক হলো এই সময় এই লোক কে মামনির রুমে দেখে, লোকটাও কেমন কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিহু বলে,,

“এই সময় এই রুমে কি মামা?”

“ম্যামের ময়লা কাপর নিতে এসেছিলাম।” (বেশ ভয়ে ভয়েই বললো আবুল)

মিহু কিছু বললো না কিন্তু সন্দেহের তালিকায় উঠে পরলো আবুল। মিহু আর কিছু না বলে ভিতরে চলে যায়,, ভিতরে গিয়ে মামনিকে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন খাওয়াতে যায় মিহু। কিন্তু মেডিসিন দেখে বেশ অবাক হয় কারণ ডালি যে ওকে মেডিসিন দিয়েছিলো সেই মেডিসিন এই গুলা না। মিহু এবার খুব ভালো করে বুঝে গেলো মামনিকে কেউ ইচ্ছে করে ঠিক হতে দেয়না ভুল মেডিসিন খাইয়ে। এই বাসার মধ্যেই কেউ আছে যে জিসানের ভালো চাইনা। কিন্তু মামনিকে ঠিক না হতে দেওয়ার কারণ কি? মামনি কি তাহলে কিছু জানে? জিসানের আব্বুর খুনের ব্যাপারে?

।।

মিটিং রুমে বসে আছে জিসান ও তার কাজের কিছু লোক। লোক গুলোর মধ্যে একটা লোক বলে উঠে।

“স্যার গোপন সুত্রে জানা গেছে আপনার বিরুদ্ধে প্রমান খুঁজার চেষ্টা করছে এক নতুন গোয়েন্দা টিমের মেম্বার।”

জিসান শয়তানি হেসে বলে।

“বাহ কাজে নতুন জয়েন হয়ে জিসান খানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে,ইন্টারেস্টিং। তো ডিটেইলস কি তার?”

“তার বিষয়ে কোন কিছু জানা যায়নি স্যার, নাম ঠিকানা কেউ জানে না। গোয়েন্দা টিমে নতুন এসেছে টিমের কেউ জানে না ব্যাপারে শুধু এতো টুকুই জানে ‘পি.এ’ নামের কেউ জয়েন হয়েছে।”

মনে মনে দুই তিন বার আওরায় জিসান “পি.এ”।

” এই পি.এ র ফুল ডিটেইলস আমার চাই যে করেই হোক। আর কিছু দিন সময় দিচ্ছি এই পি.এ কে আমার সামনে চাই। জিসান খানের বিরুদ্ধে যাওয়ার শাস্তি তো পেতেই হবে তাকে।”

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here