তুমিময় বেদনা পর্ব -০৬

#তুমিময়_বেদনা~
#Mst_Nafisa~
#Part_6

“মামনির সব দায়িত্ব আমাকে দিন, ওনার কাপড় ধোয়া থেকে মেডিসিন কিনে আনা সব কিছুই আমি করবো আজ থেকে।”

মিহুর এহেম কথায় অবাক হয় জিসান ব্রু কুচকে বলে।

“সব কাজের জন্য তো আলাদা আলাদা লোক রাখা আছে তুমি একা সব করবে কেন?”

“আমি যেটা বলছি সেটা আপনি শুনবেন কি না?(বিরক্ত হয়ে বলে মিহু)

জিসান মিহুর দিকে একটু তাকিয়ে থেকে, আচমকাই নিজের কাছে টেনে আনে মিহুকে। মিহু জিসানের এই কাজে অবাক হয় আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে জিসানের হাত থেকে। জিসান মিহুকে নিজের অনেকটা কাছে এনে মিহুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে।

” এতো তেজ পাও কোথায় তুমি? ভয় করে না আমাকে?”

মিহুর রাগ নিয়ে বলতে চাইলো “আমি আপনাকে ভয় পায়না আর কখনো পাবাও না।” কিন্তু না মিহুর মুখ থেকে টুশব্দ বের হলো না। জিসানের গরম নিঃশ্বাসে কেপে উঠছে মিহু বার বার,, গলার মধ্যে কথা আটকে যাচ্ছে।জিসান মিহুর কানে কিস করে আবার সেই মাতাল করা ভয়েসে বলে।

“কি হলো মিস তেজপাতা কোথায় গেলো তোমার তেজ? ”

জিসানের এহেম কান্ডে মিহু অবাকের সাত আসমানে উঠে গেছে। মিহু বুঝতে পারছে না জিসান তার সঙ্গে এমন কেন করছে? ডালির কাছে যতদূর শুনেছে জিসান মেয়েদের সম্মান করে কারো সঙ্গে খারাপ ব্যাবহার বা কাউকে পছন্দও করেনি এখনো। তাহলে তার সঙ্গে কেন এমন করছে তাহলে কি জিসান তার ওপর দুর্বল? মিহু শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জিসানকে দূরে সরিয়ে দেয়। মিহু চাই না জিসান মিহুকে নিয়ে কিছু ভাবুক।

জিসান দূরে দাঁড়িয়ে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে, এভাবে জিসানকে দূরে ঠেলে দেওয়াটা জিসানের মটেও পছন্দ হয়নি। মিহু জিসানকে কিছু বলার সুজগ না দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। এই দিকে জিসান মিহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজে নিজে বলে।

“জিসান খানকে আজ পর্যন্ত কোন নারী দুর্বল করতে পারেনি কিন্তু জানি না তোমার মধ্যে কি আছে, আমার তোমাকে চাই এতো দিন নিজেকে কন্ট্রোলে রাখলেও দিন দিন তোমার প্রতি আমার অনুভূতি বারতেই থাকছে। জিসান খানের তোমাকে চাই আর জিসান খান একবার যেটা চায় বলে সেটা সে নিয়েই ছারে যে করেই হোক।”

সময় যাচ্ছে নিজ গতিতে, মিহু এখন মামনির সব কিছু করে কাউকে করতে দেয়না। মিহু বুঝে গেছে এই বাসার কেউ মামনি কে সুস্থ হতে দিবে না, সে চাইনা জিসানের ভালো। এত দিন মামনি যে মেডিসিন খাওয়ানো হতো সেটা সুস্থ করার না উল্টো আরো অসুস্থ করে দেওয়ার। দেখতে দেখতে ২ মাস কেটে যায় এই দুই মাসে জিসান মিহুকে অনেক বিরক্ত করেছে। মিহু বুঝে জিসান মিহুকে পছন্দ করে, আগে বাধা দিলেও এখন আর বাধা দেয়না জিসানকে। এখন মিহুই চাইছে জিসান তাকে প্রোপজ করুক। মিহু আগের মতো আর জিসানের ওপর রাগ দেখায় না।

।।

সকালে জিসান নাস্তা করার জন্য নিচে আসে, টেবিলে বসতেই মিহু জিসান কে নাস্তা বেরে দেয়। আলু পরটা ভাজি, ভুনাখিচুড়ি, যদিও অনেক দিন এমন নাস্তা খায়নি জিসান কিন্তু মিহু বানিয়েছে ভেবে এক টুকরো মুখে দেয়। জিসান খাবার মুখে দিয়ে বেশ অবাক হয় তবে কিছু না বলে এবার খিচুড়ি মুখে দেয়, এবারেও অবাক হয় জিসান। জিসান ভাবতেও পারেনি মিহু তার মা এর হাতের মতো রান্না করতে জানে। এই খাবারের সাদ একদমি জিসানের মা এর হাতের রান্নার মতো,, অনেক দিন পর এমন খাবার পেয়ে তৃপ্তি করে খেলো জিসান। অন্য দিনের চেয়ে আজ একটু বেশিই খেলো। খাওয়া শেষে জিসান মিহুর দিকে তাকিয়ে বলে।

“থ্যাঙ্ক ইউ মিহু আমাকে আমার মা এর হাতের রান্নার সাদ দেওয়ার জন্য। আমি ভাবতে পারিনি তুমি আমার মা এর মতো রান্না করো।”

“কিন্তু আমি তো এই রান্না করিনি।”

জিসান ব্রু কুচকে বলে “তাহলে কে রান্না করেছে?”। মিহু মুচকি হেসে বলে,, ” চোখ বন্ধ করুন”

“কি পাগলামি এটা মিহু”

“আরে করুন না।”

জিসান মিহুর কথায় চোখ বন্ধ করে। বেশ কিছুক্ষণ পরে মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পায়। জিসান চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে আকাশ থেকে পরার মতো চমকে উঠে। জিসানের চোখে পানি মুখে কিছু বলতে চাইছে বাট বলতে পারছে না, অনেক কষ্টে মুখ থেকে একটা বাক্য বের করে।

“আম্মু!”

জিসানের আম্মু চোখে পানি আর মুখে হাসি নিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে হুইল চেয়ারে বসে। জিসান তার আম্মুকে ঝাপটে ধরে হাওমাও করে কান্না করে দেয়। মিহু দূর থেকে মা ছেলের ভালোবাসা দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে খুশির কান্না। বেশ অনেক্ক্ষণ ধরে কান্না করছে জিসান তার আম্মুকে ধরে কিছু বলছেও না। মিহু এবার নিজের চোখের পানি মুছে জিসানের কাছে গিয়ে বলে।

“দেখি উঠুন তো ছারুন আমার মামনি কে, আপনি এমন করে আমার মামনি কাদাবেন জানলে কখনো নিয়ে আসতাম না আপনার কাছে, ছারুন এবার ছারুন।”

মিহু জিসানকে মামনির কাছ থেকে ছারিয়ে নেয়। জিসান নিজেকে ঠিক করে মামনির পা এর কাছে বসে বলে।

“আম্মু তুমি ঠিক হয়ে গেছো জানো আমি কতটা চেষ্টা করেছি তোমাকে ঠিক করার কিন্তু কিছুতে কিছু হয়নি।”

মামনি ইশারায় মিহুকে কিছু বলে, মিহু বুঝতে পেরে মামনির হাতে একটা খাতা কলম ধরিয়ে দেয়। মামনি খাতাতে কিছু লিখে জিসান কে দেয় জিসান পড়ে তাতে লিখা।

“এতো দিন আমার মিহু মা টাকে নিয়ে আসিস নি বলে সুস্থ হয়নি, এখন নিয়ে এসেছিস তাই আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি। আমার মিহু মায়ের হাতে জাদু আছে আমাকে কতো তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুললো।”

লিখাটা পড়ে জিসান একবার মিহুর দিকে তাকায় তারপরে আবার মামনির দিকে তাকিয়ে বলে।

“আগে তো পাইনি আম্মু তোমার মিহু মা কে তাই আনিনি, আগে যদি জানতাম ওর হাতে তুমি সুস্থ হতে চাও তাইলে যেখান থেকেই হোক তুলে নিয়ে আসতাম।”

জিসানের কথায় মিহু মুখ ভেংচি দেয় আর মামনি হাসে। মিহু বলে,,

“মামনির সঙ্গে এখন বেশি কথা বলা ঠিক না এমনেই আজ রান্না করেছে এতো করে বললাম শুনলো না। মামনির প্যারালাইসিস কাটলেও এখনো কথা বলতে পারে না আর হাটতে পারে একটু একটু তবে কিছু দিনের মধ্যে একদম পুরোপুরি হাটতে পারবে। আপনি আরও ভালো কোনো ডাক্তার দেখুন যাতে মামনি কথা বলতে পারে। আমি এখন মামনিকে রুমে নিয়ে যাচ্ছি মেডিসিন খাওয়াতে হবে।”

বলেই মিহু মামনিকে রুমে নিয়ে যায় মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে বেডে শুইয়ে দেয়।

মিহু নাস্তা করছিলো তখন কাজের একটা লোক বলে।

“আফা আপনি খাইয়া লেন দিয়ে কফি লইয়া স্যারের ঘরে যান, স্যার বললো। ”

মিহু অবাক হলো জিসান এখনো অফিস যায়নি ভেবে আর এই সময় তো কফি খায়না আজ আবার কি হলো। মিহু তার খাওয়া রেখে কফি বানাতে যায়, কফি বানিয়ে জিসানের রুমে যায়। রুমে গিয়ে দেখে জিসান কথাও নেই কফি টা ছোট টেবিলে রেখে মিহু চলে যেতে নিচ্ছিলো তখন হুট করে কেউ পিছন থেকে জরিয়ে ধরে। মিহু বুঝতে পারে এটা জিসান তাই চুপ করে থাকে। জিসান নেশা লাগানো কন্ঠে বলে,,,

“তুমি আমাকে যে খুশি ফিরিয়ে দিয়েছো তাতে ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করবো না।”

জিসানকে থামিয়ে মিহু বলে, “এটা আমার কাজ ছিলো আমি আমার কাজ টাই করেছি।”

জিসান উত্তরে কিছু বলে না, মিহুর চুলে মুখ ঢুবে রেখেছে।

“ছারুন কেউ দেখে ফেলবে, আর আমার কাজ আছে।”

“আমার রুমে কেউ আসার সাহস পাবে না আর কাজ করার জন্য আরও কাজের লোক আছে।”

“তবুও….. (মিহু কে থামিয়ে)

” চুপ!!, আমি কিছু চাই তোমার কাছে দিবে?”

“কি চাই আপনার? ”

“ডালিকে দিয়ে একটা ব্লাক শাড়ি পাঠাবো সন্ধায় ওটা পরে রেডি থেকো প্লিজ।”

মিহু জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখে অনেক অনেক ভালোবাসা আর ভালোবাসা পাওয়ার তৃষ্ণা। মিহু জিসানের চোখের দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলো না। চোখ নামিয়ে নিলো জিসান ব্যাপার টা খেয়াল করেছে মিহু কখনো জিসানের চোখে চোখ রেখে কথা বলে না, হয়তো মিহু লজ্জা পায় তাই এমন করে ভেবে কাটিয়ে দেয়।

“ঠিক আছে আমি রেডি থাকবো।”

মিহুর কথায় জিসান খুশি,, “ওকে আমি এখন যায় ” এই বলে জিসান মিহুর গালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায়। মিহু গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। মিহুর কাছে জিসান একটা উঠতি বয়সি ছেলের মতো করে। একদম বাচ্চা এই জিসান কেই নাকি পুরো কলকাতার লোক ভয় পায়। মিহুর কাছে জিসান তার সব রকমের দুর্বলতা প্রকাশ করে। মিহুর মন খারাপ খুব মন খারাপ কেন খারাপ তা শুধু মাত্র মিহু জানে।

চলবে?

( বানান ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here