তুমি আসবে বলেছে হৃদয় পর্ব -১০

#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-১০
#মেঘলা_আহমেদ

আবহাওয়া টা কেমন যেনো রাশভারী লাগছে। বিষন্ন লাগছে বাতাস ও। দমবন্ধকর পরিবেশের মধ্যে, এরিকের কন্ঠ যেনো সাইলেন্ট ঘুর্ণিঝড়ের আভাস দিলো। একটা কালো গোলাপের বুফে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এরিক। তার চেহারা শান্ত। দেখে মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেই। রিদিশা আর ময়ূরী তাকিয়ে আছে সদর দরজায় দাঁড়ানো এরিকের দিকে। এরিক এগোতে এগোতে বলল-

-” সবাই কি এক হয় রিদিমনি? আমাকে কি একটু সুযোগ দেয়া যায়না? আমাকে একটু ভালোবেসে দেখো। তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো। তোমার কষ্ট পাওয়ার কারণ আমি হবো না। বিশ্বাস করো তোমাকে সবসময় আগলে রাখবো। তুমি চাইলে বছর বছর বাচ্চার মা বানিয়ে দেবো। প্লিজ! একসেপ্ট মি!

রিদিশার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো এরিকের কথায়। অস্বস্তিতে গলা কেউ চে|পে ধরেছে মনে হচ্ছে। সময় কা|টছে না কেন। সে আরচোখে মিসেস ময়ূরীর দিকে তাকালো। তিনিও মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। রিদিশার এরিক কে বেশরম প্রাণী মনে হচ্ছে। গুরুজনের সামনে কেউ এভাবে কথা বলে। এই ছেলের লাজ লজ্জা কিছুই নেই। ছিহ মার্কা কথা বার্তা। কি লাগামহীন এই ছেলে। এর মুখটা সুঁই দিয়ে সেলাই করার মতো ভয়ং|কর ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখলো রিদিশা। রেগে কটমট করে তাকিয়ে বলল-

-” দেখলে দাদি তোমার নাতি কত লাগাম ছাড়া। এর সাথে তুমি আমাকে সারাজীবন রাখার প্ল্যান করছো? কখনো না। এরকম একটা অসভ্য ছেলেকে আমি কখনো বিয়ে করবো না।

রিদিশা গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে বসলো সে। মস্তিষ্ক টা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। সব চিন্তা ভাবনা সাইডে ফেলে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো রিদিশা। ঝড় টর্নেডো এলেও সে উঠবে না। বড্ড ঘুম পাচ্ছে। মিসেস ময়ূরী তাহসান আর এরিক জোড়ে হেসে উঠলো। ময়ূরী নাতীর কান ধরে নিজের পাশে বসালো। রাগী মুড নিয়ে বলল-

-” কোথায় গিয়েছিলি হতচ্ছাড়া? এতদিন আমার কান পচিয়েছিস ভালোবাসা ভালোবাসা করে। যখনই বিয়ের কথা বললাম ওমনি বাবার মতো সুরসুর করে পালালি।

এরিক ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। হালকা আর্তনাদ করে বলল-

-” আহ গ্র্যান্ডমা ছাড়ো লাগছে তো আমার।

গ্র্যান্ডমা হেসে কান ছেড়ে দিলো। এরিক কান ডলতে ডলতে বলল-

-” এভাবে কেউ ধরে। এগুলো আমার বউয়ের জিনিস, তুমি ধরে ধরে সেকেন্ড হ্যান্ড বানিয়ে দিচ্ছো কেন? আর বুড়ি শোন তখন আমি পালিয়ে যাইনি। আমি মোটেও তোমার ছেলের মতো ভিতু নই‌। আমি এই কালো গোলাপের বুফে টা আনতে গিয়েছিলাম। এটা রিদি কে দিয়ে দিয়ো। এটা ওর খুব পছন্দের। আচ্ছা দাদি ও কি সত্যিই আমাকে একসেপ্ট করবে?

মিসেস ময়ূরী তাহসানের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে গর্ব করে বলল-

-” আমার এমন সুদর্শন নাতি কে রিজেক্ট করার ক্ষমতা রিদিশার নেই। ও অবশ্যই তোকে মেনে নেবে‌। তবে তোকে ওর পিছে পড়ে থাকতে হবে। নিজের প্রতি ওর ভালোলাগা তৈরি করতে হবে‌। ঠিক তোর দাদু যেমন আমার পিছে পড়ে থাকতো। তোর প্রতিটা কাজ যেনো ওর ভালো লাগে। আর পারলে ওকে একটু জেলাস ফিল করাবি। তাতেই কাজ হয়ে যাবে‌‌। ও যাকে ভালোবাসে তাকে নিয়ে ভয় নেই‌। সে তো ওর ছোট বোনেরই স্বামী। তাই এখন কিভাবে ওকে নিজের করতে পারো সেই চিন্তা করো‌।

এরিক গভীর মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি কথা শুনলো। এরপর দাদির দিকে তাকিয়ে বলল-

-” দেখো গ্র্যান্ডমা তুমি অনেক ভালো পরামর্শ দিয়েছো। তবে এই বিষয়ে আমার গ্র্যান্ড পাপার পরামর্শ নেয়া উচিত। বুড়ো তোমাকে কিভাবে পটিয়েছে সেটা শেখা উচিত। এ বিষয়ে তো সে পটু। তুমি সাইডে চাপো।

এরিকের কথায় মিসেস ময়ূরী তাজ্জব বনে গেল। সে নিজে এতকিছু করলো অথচ তার নাতী দাদুকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এরিক সেদিকে না তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। চিৎকার করে – ও গ্র্যান্ড পাপা ও গ্র্যান্ড পাপা। বলতে বলতে এলেনের রুমে গেলো। মি. এলেন ম্যাগাজিন পড়ছিলেন। এরিকের চেঁচানো তে সে উঠে বসলো। এবার হয়তো তাকে কাজে লাগবে। এরিকের কথায় সায় দিয়ে এলেন বলল-

-” আয় ভেতরে আয়। ষাঁড়ের মতো না চেঁচিয়ে কাছে আয়।

এরিক গিয়ে এলেনের গা ঘেঁষে বসলো। তার আগামাথা নিরীক্ষণ করে বলল-

-” গ্র্যান্ড পাপা তুমি কি জানো, তুমি এখনো কতটা ইয়াং আছো? পাশাপাশি বেশ স্ট্রং ও আছো। তোমাকে আরেকটা গ্র্যান্ডমা এনে দিলে তুমি পারবেনা আমাকে একবছরের মধ্যে একটা ফুপি এনে দিতে? বলো পারবেনা? রিদিশার তো একটা ফুপি শ্বাশুড়ি ও লাগবে।

নাতীর মুখে এমন কথা শুনে এলেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সে যেন রেগে কিছু বলতেও ভুলে গেল। মিসেস ময়ূরী দরজার ওপাশ থেকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মি. এলেনের চোখ ময়ূরীর উপর পড়তেই তার মূখটা অসহায় হয়ে গেলো। ময়ূরী চোখ কটমট করে তাকালো এলেনের দিকে। এই বয়সে এসে প্রেয়শীর রাগী রূপ দেখে এলেন যেন আবার প্রেমে পড়লো। এরিক দুজন কে আর চোখে দেখে বলল-

-” গ্র্যান্ড পাপা তুমি ভয় পেয়ো না। গ্র্যান্ড মা কিছু বলবেনা। তুমি আমাকে ফুপি দিতে পারবে না কি সেটা বলো। নাহলে আমি গ্র্যান্ড মা কে বিয়ে করিয়ে দিচ্ছি। সেই ফুপির ব্যবস্থা করুক।

এবার ময়ূরী আর দাঁড়িয়ে থাকলেন না। সে তেড়ে এসে এরিক কে কান ধরে দাঁড় করালেন। রেগে বললেন-

-” খুব শখ না আমাদের বিয়ে করানোর। দাঁড়াও তোমার রিদিশাকে আমি বিয়ে দেবো। তুমি দেখবে আর জ্বলবে।

এরিকের মুখটা একটুখানি হয়ে গেলো। সে চোখ দিয়ে দাদিকে বোঝাচ্ছে এমন টা না করতে। এরিক মুখে জোড়পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল-

-” দেদেখো ছাড়ো গ্র্যান্ডমা‌ লাগছে। আমি কিছু বলিনি। কিছু করবেনা তুমি। আমি যথেষ্ট স্ট্রং। রিদিশার জন্য আমিই যথেষ্ট আছে। আমি ভালো ছেলে। গ্র্যান্ডপাপা তুমি বরং আমাকে মেয়ে পটানোর সরি রিদি কে পটানোর কিছু ট্রিক শিখিয়ে দাও। আমি বাসায় যাব। আম্মু আম্মু আর এলিনা চিন্তা করছে হয়তো।

দুজনেই ফিক করে হেসে দিলো এরিকের কথায়। এরিক নিজেও তার মেলালো তাদের সাথে। দরজার পাশ থেকে সবটা দেখলো রিদিশা। তার বুকটা বিষিয়ে উঠলো। এদের মাঝে এতো ভালোবাসা কেন। সে আবারো ছুটে গেলো নিজের রুমে। সবকিছু বিষাক্ত লাগছে। দুইটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো। একটু ঘুমানো দরকার।

___

এরিক বাসায় যেতেই তার মা এলিজা তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে ছেলের দিকে তাকালেন। ছেলের দিকে তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লেন –

-” সারাদিন কই ছিলে?

এরিক মায়ের কথায় থেমে গেলো। মৃদু হেসে জবাব দিলো-

-” আমার খোঁজ রাখার সময় আছে বুঝি তোমার। ফেলিক্স এসেছে তো‌। যাও তাঁকে কোলে নিয়ে বসে থাকো। নিজের ছেলে থাকতেও তাকে কম্পানিতে বসাবে তোমরা। তার প্রতি এতই দরদ। যাওনা তার কাছে। আমার খোঁজ নিতে এসো না।

এলিজার মনটা খারাপ হয়ে গেলো ছেলের কথায়। সত্যিই কি ছেলেকে সময় দেয়া হয়না তার? আর ফেলিক্স কে হিংসা করছে তার ছেলে। কালকেই সব বুঝতে পারবি এরিক। ফেলিক্স কে কেন কম্পানিতে বসাতে চাইছি সব বুঝতে পারবি। কোন মা বাবাই চায় না তাদের সন্তানের বিপদ হোক। তোকে বাঁচাতেই এত কিছু করা, তুই তো আমাদের নিষ্ঠুর ভাবছিস। তোর পিছে এতবড় ষ|ড়যন্ত্র হচ্ছে যার এক কণাও তুই জানিস না। এলিজা সাবধানে চোখের কোণে আঙুল দিয়ে পানিটা মুছে ফেললো। সন্তানের জন্য যতই করুক না কেন সেটা কখনোই তারা দেখে না। তাদের চাহিদা পূরণ না হলেই তারা হাজার অভিযোগ করবে। কিন্তু পাছে বাবা মায়ের কষ্টগুলো দেখবে না। এরিক সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেছে। এলিজা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

__

সকালে অফিসে যেতেই এরিক কিছুটা অবাক হয়। তার বাবা আর ফেলিক্স একত্রে এসেছে। সাথে তার গ্র্যান্ড মা গ্র্যান্ড পাপা এমনকি তার মাও আছে। তারা সবাই যেনো এরিকের অপেক্ষাতেই ছিলো। তখনি তারা ইথানের কেবিনে ঢুকে পড়ে। আচ্ছা কি হতে চলেছে? ফেলিক্স কে কি ইথানের জায়গায় দেবে‌। এরিকের ভাবতেই খুশিতে মন ভরে ওঠে। কিন্তু ভেতরে তার জন্য বড় চমক অপেক্ষা করছে!

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here