তুমি আসবে বলেছে হৃদয় পর্ব -০৩

#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-০৩ (বোনাস পার্ট)
#মেঘলা_আহমেদ

এরিকের কেবিনে ঢুকতেই একটা মেয়ের সাথে কিস করা অবস্থায় দেখে ছিটকে বেরিয়ে এলো রিদিশা। আগে ভেবেছিলো এই ছেলে পাজি কিন্তু এখন দেখছে চূড়ান্ত লু|চু। শব্দ পেয়ে এরিক আর মেয়েটা চমকে উঠলো। এরিক মেয়েটিকে ছেড়ে দিলো। ফাইলগুলো নিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলো। মেয়েটি যেতে চাইলো না, কিন্তু এরিক জোড় করে পাঠিয়ে দিলো। মেয়েটি মুখ কালো করে বেড়িয়ে গেল। দরজার পাশে রিদিশা কে দেখে বলল-

-” ম্যানারলেস। নক করে ঢুকতে হয় জানো না? আর এই সময় আসার কি দরকার ছিলো?

রিদিশা অবাক হলো। তেতে উঠে বলল-

-” আমি আমার টাইম মতো অফিসে এসেছি। আপনারা যে এভাবে দরজা খুলে রেখে উল্টাপাল্টা কাজ করছিলেন সেটা কে জানবে?

তখনি ভেতর থেকে এরিক বেরিয়ে এলো। বিদেশী মেয়েটাকে চোখের ইশারায় বেড়িয়ে যেতে বলল। রিদিশা রাগী চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে অপমান করলো। এর শোধ নিয়েই ছাড়বে। মেয়েটা বিরবির করতে করতে চলে গেলো। এরিক রিদিশার দিকে তাকিয়ে ভেতরে চলে গেলো। রিদিশা রাগে গজগজ করতে করতে গিয়ে এরিকের কেবিনে নিজের চেয়ারে বসলো। এরিক রাগী গলায় বলল-

-” এই যে আন্টি! আপনি নক না করে এসেছেন কেন?

রিদি চমকে উঠলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখলো রুমের মধ্যে তো কেউ নেই। রিদি রেগে বলল-

-” আপনি কাকে আন্টি বলছেন?

এরিক বাঁকা হাসলো। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে ঘুরলো কয়েকবার। তারপর চোখ বন্ধ করে বলল-

-” আপনার ডিটেইলস এ দেখলাম আপনি আমার তিন বছরের বড়। সিনিয়র তাই আন্টি ডাকছি।

রিদিশা এবার অবাকের সপ্তাকাশে উঠলো। এই ছেলে তার তিন বছরের ছোট তা দেখে বোঝার উপায় নেই। হাইটে তার থেকে দুই এক ইঞ্চি লম্বা হবে হয়তো। আর খেয়ে খেয়ে শরীর একদম ফিট রেখেছে। রিদিশা খুশি হলো যাক সে সিনিয়র এখন বেশি কথা বললে দিবে এক ধমক। এরিক তুড়ি মেরে বলল-

-” কি হলো আন্টি কই হারালেন?

রিদিশা রেগে দাঁড়িয়ে বলে-

-” আপনি আমাকে আন্টি বলছেন কেন?

-” তো কি ডাকবো?

রিদিশা কিছুক্ষন ভেবে বলল-

-” মিস বা সিস্টার নাহয় নাম ধরেও ডাকতে পারেন। তবুও আন্টি বলবেন না‌। খব|রদার!

এরিক বাঁকা হেঁসে বলল-

-” আচ্ছা মিস রেদি আপনি আমার ইম্পর্টেন্ট টাইম নষ্ট করেছেন। নক না করে ঢুকেছেন। তাই এই ৫৩ টা ফাইল সব কম্পিলিট করতে হবে আজকে আপনার।

রিদিশার চোয়াল ঝুলে গেলো। নিজেরা দোষ করে তাকে শাস্তি দিচ্ছে। এই ছেলে পেয়েছে টা কি রেগে স্পষ্ট বাংলায় বলল-

-“‌ শালা লু|চু কোথাকার। অফিসে বসে লু|চুগিরি করবে আর মানুষ কে শাস্তি দিবে।

এরিক বাংলা না বুঝে বলল-

-” হেই বাংলা বলবেন না প্লিজ। ইংরেজি তে বলুন।

রিদিশা কিছু বলল না আর‌। মুখ ভেঙচি কেটে কাজ শুরু করলো। এতগুলো কাজ কম্পিলিট করতে করতে আজ জান পানি পানি হয়ে যাবে। এরিক মনে মনে হেসে বলল- রাগলে মন্দ লাগেনা সিনিয়র কে! সিনিয়র আসলেই? পেঁচা মুখো সিনিয়র! উহুম কিউট সিনিয়র!

________

কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে রিদিশা। এই এরিকের বাচ্চা তার জীবনটা তেজপাতা করে দিবে। এরিক রিদিশার সামনে এসে বলল-

-” উঠো!

রিদিশা বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো। বিরক্তিতে চ শব্দ করে বলল-

-” কেন উঠবো?

এরিক ডেস্ক এ হেলান দিলো। ভাবলেশহীন ভাবে বলল-

-” আমি তোমার বস। তুমি আমার পিএ। সো আমি যা বলব তাই করবে সিনিয়র। চলো এখান আমার সাথে আসো। ফলো মি।

রিদিশা রাগে উঠে দাঁড়ালো। লু|চু একটা ছেলে। খালি মেয়েদের দেখলেই লু|চুগিরি করে। আমার সাথে একবার লাগতে এসো দেখো কি করি। এরিক হাঁটছে, রিদিশা তার পিছে না গিয়ে ইথানের কেবিনে গেলো। রিদিশা ইথানের কেবিনে গিয়ে অবাক হল। কারণ সকালে এরিকের কেবিনে যে মেয়েটাকে দেখেছে সে এখন ইথানের কেবিনে পিএ এর জায়গায় বসে কাজ করছে। এরিক রিদিশাকে ইথানের কেবিনে যেতে দেখে কপাল চাপড়ালো। হায় উপরওয়ালা এই মেয়েকে নিয়ে আমি কি করি। এখন কোন সিন ক্রিয়েট করবে কে জানে? ইথান স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে রিদিশাকে জিজ্ঞেস করলো-

-” কি ব্যাপার রিদিশা? তুমি আমার‌ কেবিনে কেন? কোন প্রব্লেম হয়েছে নাকি?

রিদিশা আগে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল-

-” স্যার এই মেয়ে আপনার কেবিনে কেন?

ইথান আবারো হেসে মেয়েটির দিকে ঘুরে বলল-

-” মিট মাই নিউ পিএ ফিওনা।

ফিওনা মেয়েটা একবার আড়চোখে রিদিশার দিকে তাকালো। মুখ ভেংচি কেটে কাজে মনযোগ দিলো। রিদিশা মুখটা কালো করে বলল-

-” স্যার এখন কাজের সময় কিন্তু এরিক স্যার আমাকে কাজ করতে না দিয়ে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।

এরিক তখন ভেতরে প্রবেশ করে বলল-

-” হেই ব্রো। আসলে আমার একটা দরকারি কাজ আছে। মিস রেদিশা তো আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট তাই ওনাকে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু উনি আপনার কেবিনে এসেছেন। আমার সাথে নাকি কাজ করবেনা‌। আপনার এখানে এসেছে তাই‌।

ইথান একটু অসন্তুষ্ট হলো। রিদিশার দিকে কঠোর চোখে তাকালো। রিদিশার প্রাণ পাখি উড়ে যায় যায় অবস্থা। এই দুই বছরেও ইরানের কঠোর রূপের সাথে তার পরিচয় হয়নি। তাই কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। ইথান কঠোর কন্ঠে রিদিশা কে হুকুম দিলো-

-” দেখুন মিস রিদিশা। আপনি আমার সাথে দুই বছর কাজ করেছেন কোন কাজ পালনে অমান্য করেন নি। তাই এরিক যা বলে তাই করুন। না হলে আমাদের কম্পানি এই পদের জন্য অনেক লোক পেয়ে যাবে।

রিদিশা আঁতকে উঠলো। একেবারে চাকরি খেয়ে দেয়ার ধান্দা করছে। আল্লাহ আমার মাথায় রাখা উচিত ছিলো এই বজ্জাত এরিকের মিথ্যা কথাই সবাই বিশ্বাস করবে। এরিক বাঁকা হেসে বলল-

-” ফলো মি মিস রেইদেইশ্যা!

রিদিশা আবারো ক্ষেপে গেলো। ইচ্ছা করে তার নামটাকে বিকৃত করছে এই বান্দা। রাগে গজগজ করতে করতে এরিকের পেছনে হাঁটা দিয়ে বলল-

-” এই যে, আমি তোমার সিনিয়র। তাই সিনিয়রদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হয় জানো না। আমার নাম ইচ্ছা করে বিকৃত করবেনা। আর নেক্সট আমার সামনে কোন মেয়ের সাথে অস|ভ্যতা করবে না।

এরিক হেসে বলল-

-” কেন তোমার কি জেলাসি হয় নাকি?

রিদিশা চমকালো এরিকের কথায়। ছেলেটা পাগলের মত কি বকছে। খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রিদিশা। এরিক মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতে রিদিশার‌ হাসি‌। ডিম্পল পড়া গাল দুটোতে অদ্ভুত মায়া মায়া ভাব। হাসলে রিদিশাকে একদম নিষ্পাপ বাচ্চাদের মত লাগে। রিদিশা হাসতে হাসতে বলল-

-” তোমার মত জুনিয়রের রোমান্স দেখে আমার জেলাসি হবে কেন। আর তুমি আমার জুনিয়র ছোট ভাই তাই জেলাসি হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।

এরিক বিরক্ত হয়ে বলল-

-” আজব বারবার বয়সের পার্থক্য টানছো কেন? তিনবছর কোন ব্যাপারই না হুহ। আর ভাই বলবেনা।

এরিক মুখটা গোমরা করে গাড়িতে বসল। বলাই ভুল হয়েছে আমি ওর জুনিয়র। এখন কথায় কথায় খালি জুনিয়র সিনিয়র দোহাই দিবে। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা|রা এটাকেই বলে এরিক বোঝ এবার। রিদিশা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এরিক গাড়ির গ্লাসটা নামিয়ে মাথা টা বের করে বলল-

-“‌কি হলো মিস? দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো।

রিদিশা এক হাতের তালুতে অপর হাতের তালু ঘসে বলল-

-” গাড়িতে কেন বসবো? আমরা কোথায় যাচ্ছি?

এরিক এতক্ষনে বুঝলো রিদিশার সমস্যা। অন্য কোন মেয়েকে গাড়িতে ওঠার কথা বললে বিনা বাক্যব্যয়ে উঠে পড়তো। এই মেয়ে প্রশ্ন করছে। এরিক ভাবুক হয়ে বলল-

-” চলো একটু মাইন্ড ফ্রেশ করে আসি। সারাদিন কাজ করে করে বোরিং হয়ে গেছি। এখন একটু হাওয়া খেয়ে আসবো। বেশি দুরে যাবোনা।

রিদিশা পেছনের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে দরজাটা ধরতে যাবে তখনই এরিক বলে উঠল-

-” তোমাকে নিয়ে আমি কি করি। আল্লাহ বাঁচাও। এই মেয়ে তুমি পেছনে বসছো কেন? আমাকে কি তোমার ড্রাইভার‌ মনে হয়? সামনে এসে বসো।

এরিকের এক ধ|মকে রিদিশা চুপসে গেলো। বাধ্য মেয়ের মত সামনে এসে বসলো। রিদিশা উৎসুক করছে। তা দেখে এরিক বলল-

-” কি হয়েছে মিস? কিছু বলবে?

রিদিশা এই কথাটা শোনার অপেক্ষাতেই ছিল যেন। কাল বিলম্ব না করে নিজের প্রশ্নটা বলে দিল-

-” আচ্ছা তুমি কি মুসলিম?‌ একটু আগে আল্লাহ বাঁ|চাও বললে যে।

রিদিশার কথা শুনে এরিক জোড়ে গাড়ির ব্রেক কষলো। রিদাশা ভয় পেয়ে গেল। গেলি রিদি এবার তুই গেলি। সবসময় বেশি কথা না বললে তোর হয়না। এরিকের রাগী চাহনী দেখে রিদিশার অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here