তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব -১১+১২

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১১
Tahrim Muntahana

আজকে সবাই একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠেছে। মহিলারা সবাই রান্না করতে ব্যস্ত। ছোটরা সবাই ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। হৃদান বসে আছে আর সিডির দিকে বার বার তাকাচ্ছে হৃদিতা এখনো নামেনি। ওর অবস্থা দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে। একটু পর হৃদানের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হৃদিতা নামলো। সাওয়ার নিয়ে এসেছে চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। হাতে তোয়ালে। তা দেখে হৃদান ভ্রু কুচকালো। হৃদিতা এসেই পরশের টুনায় বসে পড়লো। পরশ তোয়ালে নিয়ে চুল মুছে দিতে শুরু করলো। এ নতুন না প্রায় ই পরশ করে। তার একটু পরেই সিয়া আর হিয়া নামলো। পরশ আর হৃদিতাকে দেখে ওরা ভেঙচি কাটলো।

এত বড় হয়েছো এখনো চুল মুছতে পারো না -হিয়া

তো -হৃদিতা

তো কি মানে বিয়ের পর কি করবে -সিয়া

আমি আমার বউয়ের চুল মুছে দিবো প্রতিদিন -হৃদান

শুনলে তো সো রিলেক্স আমাকে নিয়ে তোমাদের চিন্তা না করলেও চলবে যারা করার তারা করছেই -হৃদিতা

কারেক্টটটটট -রাইসা

হৃদরাজ আমার না খুব খিদে পেয়েছে -হৃদিতা

দাড়াও আমি খাবার দিতে বলছি -হৃদান

মম তো কাজ করছে খাইয়ে দিবো কে (মুখ ছোট করে বলল হৃদিতা)

আমি খাইয়ে দিবো। আমার হৃদপরীর খিদে পেয়েছে আমি খাইয়ে দিতে পারবো না -হৃদান

কেন ওর ভাই আছে না তোমার কেন দিতে হবে -হিয়া

সেটা তোকে ভাবতে হবে না -হৃদান

বলেই রান্নাঘর থেকে খাবার এনে হৃদিতাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। হৃদান গল্প বলছে আর হৃদিতা খাচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে। মাঝে মাঝে হিয়া আর সিয়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে ইশারা করছে। আর সবাই সব ই লক্ষ্য করছে ওরাও মিটিমিটি হাসছে।

কোথাও যেন পুড়া পুড়া গন্ধ আসছে -রাহি দুষ্টু হেসে বলল

শাশুড়ি মম কিছু পুড়ে গেছে নাকি গন্ধ আসছে কেন -চিল্লিয়ে রাইসা বলল

কিছু তো পুড়েনি মা তুই কোথায় পাচ্ছিস পাজি -পরশী চৌধুরী

আরে আন্টি তুমি পাচ্ছো না কিন্তু আমরা ঠিক পাচ্ছি ইশশ কিরকম আস্তে আস্তে পোড়ার গন্ধটা তীব্র হচ্ছে -আধির

বলেই সবাই শয়তানি হাসলো। হিয়া আর সিয়া রেগে উপরে চলে গেল। তা দেখে ওরা জোরে হেসে উঠলো।

তুই ও পারিস হৃদি -রোহানী

আমি খুব মজা পেয়েছি হিহিহি -সাহিল

বেশী পেকে গেছিস তোরা -নাশিন

ভালো হয়েছে আমি খুশি হয়েছি। ওই দুইটাকে আমার একদম দেখতে ইচ্ছে করে না -আনহা

আনহু এভাবে বলতে হয় না। তোমার বড় ওরা -পরশ

ঠিকি বলছে দুইটাই বিয়াদপ -হৃদান

আমার হৃদরাজের দিকে নজর দেই সাহস কত। আসলে সিয়াকে আমি খেলার মাঠে দেখবো তাই এখন কিছু বলছি না -হৃদিতা

হ্যাঁ কবে থেকে প্রেকটিস শুরু হবে -নাশিন

বিয়ের ঝামেলা টা মিটে গেলেই। আজ তো রিসিপশন কালকের পর থেকে ট্রেনিং শুরু করতে হবে ভাইয়া -রাহি

তোমাকে ফোন দিয়েছিলো প্রিন্সিপাল স্যার -রোহানি

হুমম দিয়েছিলো -নাশিন

আমিও প্রেকটিস করাবো তোদের শুধু নাশিন কেন -হৃদান

মানে তুমি পারো -হৃদিতা

হৃদপরী মনে রেখো তুমি The great business man ridan chowdhury কে এ কথা জিজ্ঞেস করছো -হৃদান

ওলে ওলে আমার জামাইটা -হৃদিতা

এই তোদের লজ্জা করে না বড় ভাই ভাবি দের সামনে প্রেম করছিস -রাইসা

ওরে আমার ভাবী সাহেবা আমার ভাইয়ের লগে যখন করো তখন কই যাই নিতি -হৃদিতা

আরো অনেকক্ষন হাসি মজা করে ব্রেকফাস্ট করে একটু রেস্ট নিতে গেল। বিকেলের দিক দিয়ে আলোর শশুড় বাড়ি যেতে হবে। সবাই একে একে রেডি হয়ে হৃদিতা আর হৃদানের জন্য অপেক্ষা করছে। ওদের আসার নাম ই নেই। আজকেও ম্যাচিং করে পড়েছে। হৃদান সাদা শার্ট এর উপর নীল ব্লেজার পড়েছে আর হৃদিতা নীল লং গ্রাউন পড়েছে। হৃদিতা হৃদানের এক হাত জড়িয়ে ধরে হেসেহেসে কথা বলতে বলতে আসছে। ইশশ কি সুন্দর জুটি। দেখলেই প্রাণ ভরে যায়। বাড়ির সবাই খানিক প্রশংসা করে বেরিয়ে পড়লো। আলোর ওখানে এসে হৃদান হৃদিতার হাত একটুও ছাড়ছে না।

আরে সবসময় হাত ধরে রাখতে হবে নাকি -হৃদিতা

রাখবো না আজকে তোমাকে পরীর চেয়ে বেশী সুন্দর লাগছে কেউ যদি নজর দেই আমি কোনো রিস্ক চাই না -হৃদান

তুমি আসলেই পাগল। সবাই কি ভাববে -হৃদিতা

কে কি ভাবলো এতে আমার কিছু আসে যায় না। হয়ছে চলো খিদে পেয়েছে -হৃদান

ওরা খাওয়ার জায়গায় চলে গেল। গিয়ে দেখল সবাই ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। রাইসা বায়না করছে পরশের কাছে ওকে খাইয়ে দিতে হবে।

হঠাৎ তোর মাথায় এমন ভুত চাপলো কেন -পরশ

এএএএ শাশুড়ি মম তোমার ছেলে আমাকে বকে -রাইসা

এই একদম মিথ্যে বলবি না আমি তোকে কখন বকলাম। মম কে বলে আমাকে বকা খাওয়ালে তোকে একদম টাইট করে ফেলবো -পরশ

ভাইয়ু মেয়েটা এত করে বলছে খাইয়ে দাও না -হৃদিতা

একসাথে আমি দুটোকে খাইয়ে দিতে পারবো না -পরশ

পরশ তুই তোর বউকে খাওয়া আমি আমার বউকে খাইয়ে দিই তাহলেই হবে

জিওও ভাইয়া আপনাকে এক বালতি থেঙ্কু -রাইসা

হৃদান হৃদিতা কে খাইয়ে দিচ্ছে পরশ রাইসা কে হঠাৎ করেই রাইসা পাশের টেবিলের মেয়ে গুলোর সাথে কথা বলা শুরু করল

আপু তোমাদের নাম কিগো -রাইসা

মেয়েগুলো এতক্ষন ওদের কেই দেখছিলো। ওখানকার একজন মেয়ের পরশকে ভালো লাগে সেটা বলতেই রাইসা শুনতে পায় তার জন্যই রাইসা ওমন করেছে। মেয়েগুলো বিরক্ত হয়

কেন কি দরকার

কিছুই না আপু। আচ্ছা আপু শুনো না, ওনাকে চিনো। ও হো সরি না বললে চিনবে কেমনে আমি বলছি এইটা আমার বর বুঝছো। আমাকে এত এত ভালোবাসে। দেখো না আমি বললাম যে সবার সামনে খাইয়ে দিতে হবে না। কি ভাববে সবাই। কিন্তু কে শুনে কার কথা তার এককথা আমার বউকে আমি খাইয়ে দিবো কার কি। আমার বউকে না খাইয়ে দিলে আমি খেতে পারি না সেটা কি কেউ জানে?

রাইসার কথা শুন মেয়েটার মুখটা ছোট হয়ে গেল তা দেখে রাইসা শয়তানি হাসি দিলো। আর সবাই রাইসার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো মনে হচ্ছে বিশেষ করে পরশ, ও তো রাইসার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কাচুমাচু করে বলল

ভালো তো আপু। সুখে থাকো তোমরা

দোয়া করো আপু

মেয়েটা চলে গেল তার দেখাদেখি সাথের মেয়েগুলোও চলে গেল। তা দেখে রাইসা জোরে হেসে দিলো। এতক্ষনে সবাই বুঝলো রাইসার এমন পাগলামি করার কারণ। পরশ কেন জানি রাগ করতে পারলো না। রাইসা যে কোনো ভাবে জেলাসি হয়েছে বুঝেছে সে। আর ভালো না বাসলে জেলাসি হয়না কেউ। তাই পরশ হেসে খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই আলো আর নিয়নকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো।
নিয়নের কোনো ভাইবোন নেই আর কাজিনরা সবাই চলে যাবে তাই নিয়নের সাথে আহির আর সামান্তা এসেছে। সামান্তাকে দেখে হৃদিতার একটু রাগ হয়েছিলো কিন্তু কিছু বলেনি। ফিরতে ফিরতে রাত হলো সবাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে গেল।
আজকে থেকে হৃদিতা রোহানি রাইসা রাহি আধির সাহিলের বাস্কেটবল ট্রেনিং শুরু। হৃদিতা ভিষণ এক্সাইটেড। অনেক সকালে উঠেই এক্সারসাইজ করে অনেকক্ষন দৌড়ের প্রেকটিস করেছে আজকে বাস্কেটবলের প্রথম ট্রেনিং বলে ভার্সিটিতে ক্লাস হবে না। 11 টার দিকে হৃদিতাদের যেতে বলেছে। হৃদিতারা রেডি হয়ে বসে আছে নাশিন আর হৃদানের খবর নেই। তখনি ওখানে আলো আর নিয়ন আসলো।

আমরা কাল আসলাম আর শালিকারা আমাকে রেখেই চলে যাচ্ছো -নিয়ন

এটা কিন্তু ঠিক না আমাদের একা রেখে চলে যাচ্ছিস -আলো

তোমরা যাবে আমাদের সাথে -রাইসা

আজকে তো ক্লাস নেই ট্রেনিং এর পর ঘুরতে যাবো সবাই মিলে -রাহি

তাহলে ভালো হয় -আলো

হ্যাঁ একদম সুপার হয়েছে তোমরা পাঁচ মিনিট বসো আমরা রেডি হয়ে আসছি -নিয়ন

আচ্ছা আনহা তুই ও যা তোর তো ছুটি আছে -আধির

সত্যি ইয়েয়েয়ে -আনহা

কোথায় যাচ্ছো তোমরা -সিয়া

কেন শুনতে পাওনি -সাহিল

আমরাও যাবো। আমাদের একা রেখেই চলে যাচ্ছো -হিয়া

বাকিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই হৃদিতা বাঁকা হেসে বলে উঠল

ওকে তাড়াতাড়ি এসো তোমরা

দশ মিনিটের মাথায় সবাই রেডি হয়ে নিচে নামলো। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ল। পরশ আগেই অফিসে চলে গেছে। বিয়ের জন্য অনেক কাজ পড়ে আছে কিন্তু হৃদিতার হুকুম ট্রেনিং এর সময় পরশকে আসতে হবে। পরশ তো বোন বলতে পাগল কাজ থাকলেও যাবে বলেছে। 11 টার 10 মিনিট আগেই ওরা চলে এসেছে। এসে দেখলো ভার্সিটিতে সবাই মাঠে দল দল করে বসে আছে। খেলা দেখবে বলে। চারটা গাড়ি ঢুকতেই সবাই গেটের দিকে তাকালো। একে একে সবাই নেমে দাঁড়ালো। সবাই তো হা হয়ে চেয়ে আছে ইশশ কত সুন্দর সুন্দর ছেলে। রাহি রিয়াকে নিয়ে আসছে। ওর যদি মন খারাপ হয় তাই নিয়ে আসতে চাইনি কিন্তু রিয়ায় জোর করে এসেছে। ওদের কে আসতে দেখেই প্রিন্সিপাল সহ বাকি প্রফেসর গুলোও এগিয়ে আসলো। ওরা সালাম দিলো।

কেমন আছেন স্যার -নশিন

ভালো নাশিন তোমরা কেমন আছো

ভালো

আচ্ছা শোনো তোমাদের ভরসাতেই কিন্তু এই রিস্কটা নিয়েছি তাই আশা রাখবো ভালো খবরই পাবো -প্রিন্সিপাল

চেষ্টা করবো। যাও যারা যারা খেলবে রেডি হয়ে এসো ফাস্ট -নাশিন

হৃদিতা ওরা হলরুমে চলে গেল রেডি হতে। প্রিন্সিপাল স্যার হৃদানকে দেখে খুব খুশি হলেন আলাদা আপ্যায়ন করতে চেয়েছিলেন হৃদান না করেছে। প্রিন্সিপিল যখন শুনলো নাশিনের পাশাপাশি হৃদান ও ট্রেনিং এ সাহায্য করবে তখন তিনি আরো ভরসা পেলেন। হঠাৎ করেই সবার চোখ রিয়ার দিকে পড়লো। সবার মুখ ই মলিন হয়ে গেল। বাস্কেটবলের রানী এখন খেলতে পারবে না ভাবতেই কতটা খারাপ লাগে।

রিয়া মামুনি কেমন আছো তুমি -প্রফেসর

আমি ভালো আছি স্যার আপনারা কেমন আছেন -রিয়া

ভালো তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছি আমরা দাড়াও তোমাদের বসার ব্যবস্থা করি -প্রফেসর

পিয়নকে ডেকে ওদের বসার ব্যবস্থা করল। বাকি স্টুডেন্ট হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে বাস্কেটবল খেলার স্পটে এগিয়ে আসলো। একটু পরেই সবাই রেডি হয়ে বের হলো। মেয়েরা নীল সাদা জার্সি নিচে নীল ট্রাউজার। ছেলেরা নীল সাদা জার্সি নিচে নীল থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। নাশিন আর হৃদান ও জার্সি পড়ে এলো। হৃদান জার্সি পড়ে এসেই হৃদিতার সাথে ডজন খানেক ছবি উঠালো। এসব দেখে সিয়া আর হিয়া লুচির মতো ফুলছে। হৃদান হৃদিতার কপালে সবার সামনে ঠোট ছুয়ে দিয়ে অল দা বেস্ট জানালো। হৃদিতা লাজুক হেসে চলে গেল।
#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১২
Tahrim Muntahana

আজকে দেখবো কেমন খেলোয়াড -হিয়া

বাস্কেটবল এতো সোজা নাকি বললাম আর খেললাম হুমম -সিয়া

দেখবি খেলতে গিয়ে পা টা ভেঙে ঘরে ফিরবে -হিয়া

হিহিহিহি-সিয়া

নাশিন প্রথমে সবাই কে খেলার রুলস গুলো বলল হৃদান ভালো করে বুঝিয়ে দিলো কখন কিভাবে পজিশন নিতে হবে কখন কোন পদক্ষেপ নিতে হবে। হৃদান আর নাশিন এত সুন্দর করে বুঝাচ্ছে ওরা একবার শুনেই ভালো করে বুঝতে পারছে। ছেলেদেরকে নাশিন আর মেয়েদের কে হৃদান ট্রেনিং দিচ্ছে। রাইসা শুধু গেটের দিকে তাকাচ্ছে।

চিন্তা করার দরকার নাই বান্ধুপি তোমার জামাই যখন বলছে আসবে তো আসবে -রাহি

তোমারটাতো শুধু তোমাকেই দেখছে -রোহানি

হুমম তোমারটার দিকে তাকাও চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে -রাইসা

সবাই শুরু করো -হৃদান

খেলা শুরু প্রথমে হৃদিতার একটু খেলাটা ধরতে অসুবিধা হয়েছে তা দেখে হিয়া আর সিয়া শয়তানি হাসি দিচ্ছে। ওদের হাসি দেখে হৃদিতা একটা বাঁকা হাসি দিলো। হৃদান ওকে চিয়ার্স আপ করেই যাচ্ছে। সবার রেংকিং ই খুব ভালো। তখন পরশ আসলো। এতক্ষন হৃদিতা পরশের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। পরশ এসেই হৃদিতার কপালে আদর দিয়ে শুভেচ্ছা জানালো। রাইসা ওদের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরাও চেয়ে আছে পরশের দিকে। ওদের চাওয়া দেখে পরশ ঠোট কামড়ে হেসে ওদের দিকে এগিয়ে গেল। গিয়ে ওদের কপালেও চুমু দিলো। ওরাও পরশ কে জড়িয়ে ধরলো। রাইসা বাদে ওরা পরশকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখে। পরশ ও ওদের ভাইবোনের মতোই দেখে। যখন ওরা একসাথে থাকে তখন হৃদিতাকে আদর করলে ওদের কেউ করতে হয়। এই দৃশ্যটা সবাই খুব ইনজয় করলো। পিয়ানি অরনি সোহা সোহান সাগর তো খুব মজা পেয়েছে। আসলে বিদেশে এরকম দৃশ্য তো দেখাই যায় না। ওদের বাংলাদেশ আসা টা সার্থক হয়েছে।

পরশ গিয়ে চেয়ারে বসলো। হৃদিতাকে চোখ দিয়ে আশস্ত করলো তারপরেই শুরু করলো নিজের কারিশমা। রাইসা বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ হৃদিতা ঝড়ের গতিতে রাইসার থেকে বলটা নিয়ে সবাইকে কাটিয়ে বলটি ছুড়ে দিলো। ঠিক গোলের মধ্যে পড়ে গেলো। সবাই তো জাস্ট হা হয়ে গেছে। একটু আগেই যে বুঝছিলো না সে এইভাবে গোল দিবে ভাবা যায়। সিয়া আর হিয়ার মুখটা চুপসে গেল কি ভেবেছিলো কি হলো। সবাই অবাক হয়েছে পরশ আর ওর বন্ধুরা বাদে।ওরা জানে যেদিন থেকে বাস্কেটবল খেলার ডিসিশন নিয়েছে সেদিন থেকে বাস্কেটবল নিয়ে অনেক পড়াশুনা করেছে ভিড়িও দেখেছে এবংকি ভিড়িও আর রাইসাদের নিয়ে প্রেকটিস ও করেছে। ছেলেদের পারফর্ম ও খুব ভালো। মেয়েদের রাইসা রাহি রোহানি হৃদিতা এক হলেও হৃদিতা একটু বেশি পারে কারণ ও দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন। প্রিন্সিপাল স্যার তো ওদের পারফর্ম দেখে নিশ্চিত যে জয় ওদেরই হবে। বাস্কেটবল খেলার শেষে হৃদিতা রিয়া কে মাঠের মধ্যে নিয়ে গেল। গোল থেকে কতদূর তা মাপলো।

রিয়ু এখান থেকে সোজা 11 পা দূরে গোল রাউন্ড যাও -হৃদিতা

হৃদিরানী আমি পারবো না -রিয়া

সবাই শুধু ওদের দেখছে সিয়া আর হিয়ার মুখে কুটিল হাসি ওরা ভাবছে কোনো অন্ধ নাকি বাস্কেট বল খেলবে।

পারবে তুমি। যাও চ্যাম্পিয়ন শুধু চ্যাম্পিয়ন ই হয় তাই তোমাকে আজ দেখাতে হবে কে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্য -হৃদিতা

হৃদিরানী আমি পারবো না প্লিজ -রিয়া

তোমাকে পারতে হবে। আমার জন্য প্লিজ রিয়ু। গো -হৃদিতা

হৃদিতার কথায় রিয়ার মাথায় ও জেদ চাপলো যে ও পারবে। ওকে পারতে হবে।সবাই শুধু ভাবছে পারবে কি। রিয়া একটু চোখ বন্ধ করে দম নিলো। তারপর এক পা একপা এগিয়ে গোল রাউন্ড পরিক্ষা করে নিলো। আবার আগের জায়গায় ফিরে এসে পজিশন নিয়ে দাঁড়ালো। সবাই ব্যপক ভাবে এর শেষ দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। রিয়া এগিয়ে গেল চার লাফ দিয়েই জোরে গোল নিক্ষেপ করে বল টা ছুড়ে মারলো। বলটা গোলের মধ্যে পড়ে গেল। সবাই জোরে চিল্লিয়ে উঠল। হৃদিতা গিয়ে রিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। রিয়া কাঁদছে। আজকে ওর খুব কান্না পাচ্ছে। সবাই অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে হিয়া আর সিয়ার মুখ তো দেখার মতো ছিলো। তারপর হিয়া সিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ওরা চেঞ্জ করতে চলে গেল। দশ মিনিট পর ওরা এসে দেখলো আনহা রিয়া হিয়া সিয়া আলো নিয়ন একপাশে দাড়িয়ে আছে আর স্টুডেন্ট গোল হয়ে দাড়িয়ে চিল্লাচিল্লি করছে। আনহা রেগে ফুসফুস করছে। হৃদিতারা এসেই ভ্রু কুচকে ওইদিকে গেল। হৃদান ওদের দেখা যাচ্ছে না।

কি হচ্ছে এখানে -হৃদিতা

হৃদিতার কথা শুনে সবাই ওকে সাইড় দিলো ওরা ভেতরে গিয়ে দেখলো হৃদান পরশ পিয়াস সাগর সোহান নাশিন বসে আছে আর মেয়েগুলো ওদের ঘিরে দাড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। সিনক্রিয়েট হবে বলে ওরা চুপ করে আছে কিন্তু রাগ উঠছে তরতর করে কিছু বলতেও পারছে না। হৃদিতা গিয়েই দেখলো প্রিন্সিপালের মেয়ে অনিতা হৃদানের সাথে ঘেসার চেষ্টা করছে আর তার বন্ধুরা আর সবার সাথে ভাব জমানের চেষ্টা করছে।

হৃদিতাকে দেখে অনিতা ডং করে বলতে লাগলো

হৃদিতা ওনি তোমার কাজিন না আমার না খুব পছন্দ হয়েছে একটু দেখবে বিষয়টা। আমাকে ওনার সাথে বড্ড মানাবে দেখো

হৃদিতার তো রাগ আরো বেড়ে গেল হৃদানের সামনে গিয়ে কটমট করে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো

কি হচ্ছে এখানে সং এর মতো বসে আছেন কেন। মেয়েদের সাথে ঢলাঢলি করতে ভালো লাগে তাইনা। এতগুলো মেয়ের সাথে কি করছেন। লজ্জা করে না।

হৃদপরী এভাবে বলছো কেন আমি কি করেছি

কিভাবে বলবো। এই মেয়ের সাহস কি করে হয় আপনাকে নিয়ে এসব বলার। আর আপনিও তো সং সেজে বসে আছেন খুব আনন্দ পাচ্ছেন মেয়েগুলো আপনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। আবার আমার সামনে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে প্যানপ্যান করেন। এটা আপনার ভালোবাসা। ভালোবাসা মাই ফুট

বলেই একটা চেয়ারে লাথি মেরে ফুল স্পিডে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। রাগ হচ্ছে খুব ওর।

কেন কেন আমার হৃদরাজের দিকে চোখ দিবে কেন হৃদরাজ শুধু আমার। আর কারো না যে হৃদরাজের দিকে নজর দিবে আমি তাকে শেষ করে দিবো খুন করে দিবো। হৃদরাজ শুধু আমার

এইসাইডে গাড়ি পার্ক করে স্টেয়ারিং এর উপর মাথা রেখে বিড়বিড় করছে এসব। যখনি ও শান্ত হলো তখন বুঝতে পারলো রাগের মাথায় কি কি বলে এসেছে। তখন খুব খারাপ লাগলো হৃদিতার

তার তো কোনো দোষ নেই মেয়েগুলোই তো চিপকে থাকতে চাই। আমি শুধু শুধু এতগুলো মানুষের সামনে ওনার সাথে রাগারাগি করলাম। সবার সামনে নিশ্চয় অপমান হয়েছেন তিনি। ইশশ ক্ষমা চাইতে হবে

এসব ভাবতে ভাবতে হৃদিতা গাড়ি স্টার্ট দিলো অন্যদিকে হৃদিতার চিল্লাচিল্লিতে মেয়েগুলো সব চলে গিয়েছে হৃদান প্রচন্ড অপমান বোধ করছে। মাথা নিচু করে বসে আছে।

হৃদান প্লিজ কিছু মনে করিস না হৃদিপাখি একটু ছেলেমানুষি করে ফেলেছে -পরশ

এটাকে ছেলেমানুষি বলে না পরশ হৃদিতার বুঝা উচিত ছিলো -অরনি

এত গুলো মানুষের সামনে অপমান করা ঠিক হয়নি -সোহান

মানছি মেয়েটা একটু বেশিই করছে তাতে হৃদানের দোষ টা কোথায় ওকে অপমান না করলেও পারতো -সোহা

তোমরা ওর রাগ টাই দেখলে রাগের নিচে যে ভালোবাসা টা আছে সেটা দেখলে না -আনহা

পিচ্চি তুমি ভালোবাসার কি বুঝো। এটা হৃদিতার জেদ আর কিছু নয় -পিয়ানি

তুমি ভুল পিয়ানি আপু এটা ভালোবাসা। হৃদি সহ্য করতে পারে না হৃদান ভাইয়ার পাশে কোনো মেয়েকে -রাহি

না এটা ওর জেদে পরিণত হয়েছে। হৃদানের পিছে এত মেয়ে ঘুরে ও সেখানে হৃদানকে পেয়েছে তাই ওর মধ্যে জেদ চেপেছে -সোহা

সাট আপ আমার বোনের ভালোবাসার দিকে আঙুল তুলো না -নাশিন

তোমরা জানো না আপু হৃদরানী হৃদভাইয়াকে কতটা ভালোবাসে -রিয়া

এতক্ষন সব কথা শুনছিলো হৃদান একটা কথাও বলে নি আজকে হৃদিতার কথা গুলো হৃদানের ইগো তে খুব লেগেছে।

ওরাই ঠিক বলছে পরশ হৃদিতার মোহ আমি ভালোবাসা না। আজকে বুঝতে পারলাম ও এসব জেলাসি থেকে না জেদ থেকে এরকম করে। আমিই পাগল ভালোবাসা ভেবে কত খুশি ছিলাম -হৃদান

প্লিজ হৃদভাইয়া তুমি আবার আর সবার মতো হৃদিকে ভুল বুঝো না -সাহিল

আমি ঠিকি বুঝেছি -হৃদান

কতবছর ধরে ভালোবাসো হৃদিকে -রোহানি

চুপ

বলো কত বছর ধরে -আধির

১৬ বছর -হৃদান

হৃদানের বন্ধুরা চমকে উঠলো ওর কথা শুনে শুধু পিয়াস বাদে

এতবছর ধরে ভালোবাসেন অথচ ঠিক ভাবে চিনতেই পারলে না -রাইসা

মানে কি বলছিস -হৃদান

আমার বোনের ভালোবাসার দিকে আঙুল তুলেছিস না তোরা। চল আজকে প্রমাণ দেই তোদের কিন্তু প্রমাণের পর কি হবে তা কিন্তু বলতে পারবো না -পরশ

কোথায় যাবো -সোহান

চল আমার সাথে -পরশ

ওরা পরশের পিছে পিছে গিয়ে একে একে
গাড়িতে বসলো। পরশ গাড়ি ঘুরিয়ে ওদের বাড়ি দিকে নিলো। অন্যদিকে হৃদিতা ভার্সিটিতে এসে দেখলো ওরা কেউ নেই ফোন দিতে যাবে তখনি দেখলো আনহার ম্যাসেজ।

চলবে….?
চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here