তেজপাতা পর্ব -০৩

#তেজপাতা
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam

রাতের খাবার খেয়ে দুই বোন নিজেদের রুমে এসে গ’ড়া’গ’ড়ি খাচ্ছে।
কিছু সময় পর সাদ হাতে করে চিপস ও বই খাতা নিয়ে আসে।

“খুশি জিজ্ঞেস করে,,কিরে সাদু,পা’দু তোর এখানে কি?”

‘সাদ উত্তর দেয় না। ‘

ততক্ষণে হাসিও উঠে বসেছে।

সাদ বই খাতা গুলো বিছানায় রেখে চিপসের প্যাকেট থেকে চিপস বের করে। দুই বোনের মুখের সামনে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে মুখে পুরে নেয়।এমন ভাবে আওয়াজ করে খাচ্ছে যেনো কি সুস্বাদু।

চিপস বড়াবড়ই হাসি খুশির খুব প্রিয়। সাদের খাওয়া দেখে ওদের ও খেতে ইচ্ছে করছে। জিভে পানি চলে আসছে।

দুজনই এক সাথে হাত বাড়িয়ে বলে দেওয়ার জন্য। সাদ সরু চোখে বোনদের দিকে তাকায়। তারপর আরেকটা নিয়ে মুখে দেয়।

দে আমাদের ও খাই।(হাসি)

সাদ একটা চিপস বের করে তা দুই ভাগ করে অর্ধেক হাসির হাতে।আর অপর অর্ধেক খুশির হাতে দেয়।

এই ছিনিমিনি কি দিলি? এটাতো দাঁতের কোনায় ও লাগবে না আম্মুর বাচ্চা। (খুশি)

দিয়েছি যে এটাই অনেক তোমরা তো আমায় তা ও দিতা না।আরো দিবো তবে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।

কি কাজ? হাসি জিজ্ঞেস করে।

আমার ইংরেজি হোমওয়ার্ক করে দাও।যে করে দিবা তাকে এই পুরো প্যাকেট দিয়ে দিবো।

সাদের কথায় হাসি উঠতে যাবে, তার আগেই খুশি তারাতাড়ি উঠে সাদের ইংরেজি খাতা নিয়ে হোমওয়ার্ক করে দিতে থাকে।

কাজ শেষে এক হাত দিয়ে সাদের খাতা দেয় খুশি।অন্য হাত দিয়ে চিপসের প্যাকেট বাড়িয়ে দেয় সাদ খুশির দিকে।

চিপসের প্যাকেট হাতে নিয়ে খুশি দেখে কিছুই নেই পুরাই ফাঁকা। শুধু চিপসের গুড়া গুলো চিপসের প্যাকেটের কোণায় পরে আছে।

আম্মুর বাচ্চা তুই দাড়া বলেই খুশি চি’ল্লানী দেয়।

সাদ ততক্ষণে তার বই খাতা নিয়ে উধাও।সে আগেই চিপস গুলো খেয়ে ফেলেছিলো।ভাগ্যিস আগে থেকে কয়টা চিপস আছে দেখতে চায় নি।

এই দিক দিয়ে হাসি খুশির অবস্থা দেখে জোরে জোরে হাসতে থাকে।বেশ হয়েছে ফা’লপাইরা আগে আগে গেলে এমনই হয়।কথায় আছে না “আগে গেলে বা’ঘে খায়।”

তোর খুব হাসি পাচ্ছে তাই না হাসুনির মা?

হুম পাবেই তো।প্যাকেটে চিপস থাকলেও তো আমায় দিতিস না নিজেই আমায় দেখিয়ে দেখিয়ে খেতিস।

তো আমি কষ্ট করেছি না? আমিইতো খাবো তোকে কেনো দিবো?

এজন্যই প্যাকেট খালি।বলেই হাসি আবার হাসতে থাকে।

খুশি বালিশ হাতে নিয়ে হাসিকে বারি মেরে বলে,,আজ আমি মশারি টাঙাবো না। এতোদিন আমি টাঙিয়ে দিয়েছি।আজ থেকে তুই টাঙাবি।

ইশশশ এতোদিন যে আমি বিছানা ঝাড়া দিয়ে গুছিয়েছি ঘুমানোর জন্য।

ঠিক আছে দুইজন দুইটা করতাম আজ থেকে যার যার টা সে করে নে।বলেই খুশি মুখ ভেংচি কাটে।

অপরদিকে রিনা অন্য রুম থেকে চিললিয়ে বলে,,,আর একটা সাউন্ড যদি আমি শুনি তাহলে খবর আছে। এমন দেওয়া দিবো দুইটারে কথা বলতেই ভুলে যাবি।

মায়ের গলা শুনে দুই বোন কথার সাউন্ড কমিয়ে দেয়।

হাসি আস্তে করে বলে,, বিছানা না হয় ঝাড়ু দেওয়া যাবে যার যার টা সে সে।কিন্তু মশারি টানাবি কি করে?

খুবই সহজ। মশারির চার কোনা আমার পাশের দুই কোনা আমি টানাবো তোর পাশের দুই কোণা তুই।

কথাটা বলে খুশি আগে আগে গিয়ে নিজের পাশের দুই কোণা টানিয়ে আসে।

হাসি ও গিয়ে নিজের পাশের দুটো টানায়।দুই বোনের মধ্যে ঝগড়া চলছে।

হাসি এসে শুতেই খুশি শোয়া থেকে উঠে বসে।এই দাড়া শুবি না একদম।

খুশির কথায় হাসি হা’মি দিতে দিতে বলে,,কি হয়েছে তোর আবার? সর ঘুমাতে দে আমায়।

‘”তুই ঝ’গ’ড়ার সময় আমার ঐ অবস্থা দেখে খুব হেসেছিলি তাই না?

“- তো চোখের সামনে জো/কার দেখলে যে কেউ ই হাসবে।”

“আমি জো/কার?”

সর তো খুশি ঘুমাতে দে তোর সাথে ত’র্ক করার মোড নেই আমার।

— তুই ঘুমা না না করেছে কে? তবে এই যে বিছানার চাদরের দা’গ টা দেখতে পাচ্ছিস? এটা হলো বর্ডার এটা অতিক্রম করে আমার দিকে একদম আসবি না। আর আমার বালিশের সাথে যেনো তোর বালিশ ও না ঠেকে।

— হাসি খুশির দিকে তাকিয়ে বলে ঠিক আছে। তোর ও যেনো এই বর্ডারের কথা মাথায় থাকে।

তারপর দুইবোন দুইজন কে পাশ ফিরে শুয়ে পরে।

কিছু সময় সব ঠিক থাকলেও ঘুমের ঘুরে একজন আরেকজনের উপর হাত পা উঠিয়ে দেয়।

———————————-

সকাল সকাল ই হাঁড়ি পাতিল জোরে জোরে আওয়াজ করে রাখার শব্দে ঘুমে ব্যা’ঘাত ঘটতে চায়।তাও ঘুম থেকে উঠে না দুই বোন। কানে হাত দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়।

কিন্তু আর কি ঘুমানো হবে?

রিনা বকবক করতে করতে এসে মশারির দুই কোনা খুলে মেয়েদের মুখের উপর ফেলে রেখে যায়।

মশারি নাকে মুখে পড়ায় ঘুমের মাঝেই হাতড়িয়ে মশারি সরানোর চেষ্টা করে। অপর দিকে মশা সেই সুযোগে কানের কাছে গিয়ে গুনগুন করে গাইছে।

নিজের গালে কানে নিজেই থাপড়িয়ে মশা তাড়ানোর চেষ্টা করে। আর বলে,,বন্ধ কর না ভাই তোর গান সহ্য হচ্ছে না। দরকার পরলে খেয়ে চলে যা তাও গান শুনাতে আসিস না।

রিনা ঘুরে আবার মেয়েদের কাছে আসে।এসে ধা’ক্কা দেয়। তোদের বাপ তো আমারে এই বাড়িতে চা’ক’রা’নী করে আনছে তাই না?

সকাল থেকে একা একা সব কাজ করে তোদের মুখে তুলে দিবো তোরা খালি গি*লবি আর কোনো কাজ নেই।

এতোকিছু বলার পরও যখন উঠার নাম নেই তখন রিনা আরো জোরে চিল্লাতে থাকে এই যে ন’বাবের বংশধর। ন’বাবের বেটিরা।আপনাদের কানে যাচ্ছে না? আরে এই জ’মি’দা’রের মেয়েরা উঠ।

মায়ের ডাকে এবার দুইজন ই উঠে বসে।নয়তো খাওয়া জুটবে না আজ। হাসি খুশিকে উঠতে দেখে আবার বকবক করতে করতে রিনা চলে যায় সাদের রুমে।ওদের পাশের রুমটা তেই সাদ থাকে।

ঐ রুম থেকে সব শুনতে পাওয়া যায়। রিনা গিয়ে সাদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,,আব্বা উঠো এবার অনেক তো ঘুম হলো উঠে পরো আরবি পরতে যেতে হবে তো। আব্বা উঠো।

খুশি আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলে,, নিজের ছেলেকে ডাকার সময় আব্বা ঘুম থেকে উঠো।

আর আমাদের ডাকার সময় জ’মিদারের বে’টিরা উঠেন।খাবার সময় ও আব্বা খেয়ে যাও।

আর আমাদের সময় ন’বা’বের বে’টিরা কয়টা গি*লে আমাকে উ’দ্ধার করেন। জীবনটা তেজপাতা।

————-
সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে তৈরি করে দিয়েছে সাদ কে রিনা।আরবি পরতে যাওয়ার জন্য। সাদ এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে যেতে চায় না। শীতের মাঝে সকালের ঘুম থেকে উঠতেই ইচ্ছে করে না।সব ঘুম সকালে চোখে এসে চোখ আপনা আপনি ই বন্ধ করে যেমন দিয়ে যায়।

মা আদর করে তৈরি করে দিয়েছে। এখন যদি বলে যাবে না এতোসময় যেই আদর দিয়ে সব করেছে এখন ঠিক ততটাই মা’ইর পরবে পিঠে।

সাদ আর তার ছোট কাকার ছেলে একসাথে পড়তে যায় সকালে। রাহাদ তার নাম।রাহাদ আবার সাদের থেকে অনেক ছোট। একটু বোকা টাইপ।

সাদ ভাবলো শীতের সকালে একটু রাহাদের সাথে দুষ্টুমি করা যাক তাহলে ঘুম টা কেটে যাবে।

হঠাৎ করে চিৎকারের আওয়াজে সকলে বাসা থেকে হুরমুর করে বেরিয়ে আসে।

রাহাদ মুখে হাত দিয়ে কান্না করছে।

হাসি খুশি রাহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চায় কি হয়েছে?

আমার পেটের ভিতর আগুন লেগেছে।দেখো আমি হা করলে আর কথা বললেই ধোঁয়া বের হয়। আমাকে বাঁ’চাও আগুন নিভাও।আমার পেটের ভিতর সব পু’ড়ে গেলো। বাঁ’চাও বাঁ’চাও আ’গুন আ’গুন।

রাহাদ চিৎকার করছে।সাদ ভোলা ভালা বাচ্চার মতো পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো সে কিছুই জানে না।

শীতের সকালে কথা বললে এমনিতেই তো মুখ থেকে ধোঁয়ার মতো বের হয়। আর রাহাদ ভ’য় পাচ্ছে তার পেটের ভিতর আ’গুন লেগেছে।

#চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here