তেজপাতা পর্ব -০২

#তেজপাতা
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

বাড়ি তে এসে হাসি- খুশির মা রিনা সব রা’গ জিনিস পত্রের উপর দেখাচ্ছে। সব কিছু ঠা’স ঠু’স রাখছে।

খুশি চুপচাপ মায়ের সব কাজ কারবার দেখছে সোফায় বসে। এখন কিছু বলা যাবে না। বলতে গেলেই সব রা’গ তার উপর দিয়ে যাবে।

হাসি রুমেই ছিলো জিনিস পত্রের আওয়াজ শুনে বাইরে বেরিয়ে আসে। দেখেই বুঝা যায় মা রে’গে আছে। তাই হাসির দিকে তাকিয়ে বলে,,কিরে খুশকি হাওয়া এতো গরম কেন?

” চুপ থাক সব তোর জন্য হয়েছে। ”

“আমার জন্য মানে! আমি আবার কি করলাম?”

তোর জন্য ব’ল’দ দেখতে গিয়েছিলাম।
সেইখানে গিয়ে যুদ্ধ লাগছে।

আমার জন্য ব’ল’দ দেখতে গিয়েছিলি মানে? কি বলছিস?

চুপ থাক বোইন কিছু না।

—————————
হাসি খুশি নিজেদের রুমে বসে আছে। দুই বোন এক সাথে একই রুমে থাকে।

এমন সময় পাশের বাসায় ঝগড়া লাগে।ওদের রুম থেকে আবার সব দেখা যায়। কি নিয়ে ঝগড়া লাগলো কি হয়েছে দেখার জন্য এগিয়ে যাবে জানালার কাছে, এর মধ্যে কোথা থেকে তাদের ভাই সাদ হুরমুর করে ছুটে আসে।

দুই বোনের দিকে একবার তাকিয়ে কিছু না বলে,, তারাতাড়ি জানালায় ল’টকে উঁকি দিয়ে ঝগড়া দেখতে থাকে।

হাসি খুশি একে অপরের দিকে তাকিয়ে ওরাও তারাতাড়ি গিয়ে জানালার কাছে এগিয়ে যায় ঝগড়া দেখতে। সাদ একে বারে মাঝে গিয়ে ল’টকে আছে।

হাসি সাদের পিঠে চি’মটি কেটে বলে,,এই পা’দ এক সাইডে যা আমাদের ও দেখতে দে।

দাড়াও ঝ’গড়া টা শেষ হোক তারপর আমি আম্মুর কাছে বিচার দিবো। তুমি আমাকে আবার পা”দ বলেছো।

কেউ আর কথা না বাড়িয়ে ঝ’গড়া দেখায় মনোযোগ দেয়। পাশের বাসার আন্টি অন্য বাসার আন্টির সাথে ঝ’গড়া লেগেছে। কিন্তু পাশের বাসার আন্টির সাথে উনার স্বামী ও মিলে ঐ মহিলার সাথে ঝ’গড়া লেগেছে।

ঝ’গড়া দেখতে দেখতে ভু’ল বশতো সাদের কুনুই গিয়ে লাগে খুশির কপালে।খুশি কপাল ডলতে ডলতে বলে আম্মুর বাচ্চা তুই আমার কপাল ফাটিয়ে দিলি। এই তুই ছোট মানুষ তুই কিসের ঝ’গড়া দেখিস রে?

আমাকে বলে,,তোমরা ও তো দেখতেছো।

আমরা দেখে শিখতেছি ভবিষ্যতে কাজে লাগাবো। তুই কি করবি? জানতে চায় হাসি।

আমিও কাকার মতো আমার বউয়ের সাথে মিলে ঝ’গড়া করবো তাই শিখতেছি।

দুইবোন অবাক হয়ে তাকায় ভাইয়ের দিকে।দেখেছিস ক্লাস টু তে পড়া ছেলে কি রকম কথা বলে?

ওদের কথার মাঝে ওদের মা রিনা এসে উপস্থিত হয়। জানতে চায় কি হচ্ছে কি এখানে? আর কোনো কাজ নেই? পড়াশোনা নেই?

তিনজনই সুরসুর করে জানালার পাশ থেকে সরে আসে। আমতা আমতা করতে থাকে।

রিনা ওদের কথার গুরুত্ব না দিয়ে জানালার কাছে গিয়ে ঝ’গড়া দেখতে থাকে। মায়ের পিছন থেকে ওরাও উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।

ঝ’গড়ার সমাপ্ত হলে তিন ভাই বোন সরে যায়। কিন্তু রিনা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কি যেনো ভাবে।

এর মধ্যে রিনা,কে খুঁজতে খুঁজতে হাসি খুশির রুমে উপস্থিত হয় তাদের বাবা।

রিনা বলে ডাক দিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই রা’গী চোখে তাকায় উনার দিকে। তারপর রা’গে ফোসফাস করতে করতে বলে,, এদের বলে জামাই বউয়ের সাথে কি সুন্দর মিলে অন্য মহিলাকে ঝ’গ’ড়া তে হারিয়েছে।

আর আমার জন কে দেখো নিজে ইচ্ছে করে আমাকে অন্য মহিলার কাছে হারিয়েছে। আমার কোনো দাম আছে এই সংসারে?

–“কি বলছো তুমি এসব রিনা?”

— এতো বছর সংসার করে আমার মুখের কথা ও উনি বুঝতে পারেন না।বাহ্ বাহ্।

— গা*ধার মতো খেটে হুদাই এই জীবন টা শেষ করলাম।।

— আরে বলবাতো কি হইছে?

— কিছুই হয় নাই। কি হইবো। বাবা গো এ তুমি কার কাছে আমারে বিয়ে দিলা? আমার জীবন টা শেষ।

তিন ভাই বোন চুপচাপ এতো সময় মায়ের কথা শুনেছে। হাসি কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে কি হইছে মা?

রিনা রাগী চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,চুপ কর। সব কটা তো বাপের মতো হইছস।আমার কষ্ট কেউ বুঝে না। হুদাহুদি আমি খা’ইটা ম’রি। খাওয়াইয়া শরীরের ব’ল বেশি হয়ে গেছে। আর রান্না করে খাওয়াবো না।উপোস থাকবি সব কটা। দেখ কেমন লাগে। আজ চুলায় আগুন জ্বলছে না।

কথা গুলো বলেই সবকটার দিকে রা’গী চোখে তাকিয়ে হনহন করে চলে যায় রিনা।

আহাদ মোল্লা বউয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,আশ্চর্য এমন করার কোনো মানে হয়? কি শুরু করেছে?

খুশি বলে,, মা রা’গ করে আছে পাশের বাসার কাকার মতো তুমিও কেন ঐ মহিলা কে মায়ের পক্ষ নিয়ে কিছু বললা না।
পাশের বাসার কাকা এখন তার বউয়ের পক্ষ নিয়ে আরেক মহিলার সাথে ঝগড়া করেছে।

‘তো? আমি কেন করতে যাবো? তোর মা কি কম পারে নাকি? বাড়ি বয়ে ঝগড়া করে জিতে এসেছে। এখন আবার মে’জা’জ দেখাচ্ছে কেন? কথাটা বলে আহাদ মোল্লা ও চলে যায়।

রিনা রান্না করবে না বলেছে যখন তখন ঠিকই আজ রান্না করবে না। তাই দুই বোন মিলে যায় রান্না করার জন্য। রান্না ঘরের কাছে গিয়ে দেখে তাদের মা রান্না ঘরে তালা দিয়ে রেখেছে।

এইরে আজ সত্যি সত্যি সবকটা কে উ’পোস থাকতে হবে।

দুপুর বেলা ভাতের বদলে তিন ভাই বোন বসে বসে মুড়ি চিবোচ্ছে। তাদের বাবা বসে বসে বই পরছে। ভাগ্যিস মুড়ির টিন টা বসার ঘরে ছিলো।নয়তো মুড়ি ও খেতে পারতো না।

খাওয়ার এক পর্যায়ে শুকনো মুড়ি হওয়ায় সাদ এর গলায় আটকে যায়। কাশতে থাকে।

হাসি দৌড়ে পানি আনতে যায়।

খুশি ঠাস করে পিঠে একটা কি’ল মেরে বলে,আস্তে খা তোর খাবার কেউ নিয়ে যাচ্ছে না।

তারপর মুড়ি খেয়ে তিন ভাই বোন বসে থাকে।

বিকেলের দিকে পাশের বাড়িতে আবার ঝ’গড়া লাগে।এবার পাশের বাসার আন্টি আর আংকেলই মা’রা’মা’রি লেগেছে।আন্টি কে আংকেল মা’রছে।মা’রা’মা’রি সামনে থেইকা না দেখলে মজা না।তাই ছোট লাগায় দেখার জন্য।

হাসি ছুটে চলে যায়। খুশিও দৌড়ে নামে দেখার জন্য।যাওয়ার আগে আলনা থেকে নিজের জন্য একটা উড়না নিয়ে নেয়। নিচে গিয়ে জানতে পারে তাদের মেয়ে হিরা সব গহনা, টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাই এমন ঝ’গড়া।

অনেক লোকই জরো হয়েছে ঝ’গড়া দেখতে। খুশি লক্ষ করে দেখে ঝ’গড়ার মাঝে কয়েকজন কেমন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বেশি পাত্তা দেয়নি।ভেবেছে খুব সুন্দর লাগছে তাকে।তাই আরেকটু ভাব নিয়ে দাঁড়ায়।

হাসি খুশির দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।

খুশি ব্রু কোচকে বলে,,কিরে হাসুনির মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিস কেন?

নিজের দিকে একবার ভালো করে তাকা তাহলেই বুঝতে পারবি।

খুশি প্রথমে নিজের পায়ের দিকে তাকায়। এক পায়ে তার বাবার ছিরে যাওয়া জোতা আরেক পায়ে নিজের জোতাই তবে বাম পায়ের টা ডান পায়ে। আর সবচাইতে বড় কথা যেইটা সে উড়না ভেবে তাড়াহুড়ো করে গায়ে জড়িয়ে এসেছে সেইটা সাদের প্যান্ট। মুহূর্তের মাঝে নিজেকে সুন্দর লাগছে বলে এতোসময় যেই ধারণা টা ছিলো ফুসস করে তা উড়ে গেলো।চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে যায় খুশি। মান সম্মানের ফা’লুদা হয়ে গেছে।

হিরার মা কে মে’রেছে মেয়ে চলে গেছে খবর নাই।তার উপর সব কিছু নিয়ে গেছে সেই দিকে ও হুঁশ নেই এই কারণে।

বাড়িতে ঝ’গড়া দেখা শেষ করে,, সোফায় বসে আছে। রিনা এখনো বাইরে। এই সুযোগে আহাদ মোল্লা বলে,,তোদের মা যে হিরার বাবার সাথে তুলনা দিচ্ছিল এখন যে নিজের বউকে মারলো এটার তুলনা দিবে না?

হাসি বলে,,তুমি গিয়ে মা কে জিজ্ঞেস করো।

আহাদ মোল্লা মেয়ের কথায় গলা খেঁকারি দিয়ে চলে যায়।

রিনা ঝগড়া দেখে এসে সুরসুর করে রান্না ঘরে চলে যায় রান্না করতে।

———————
রাতে দুই বোন পড়াশোনা বাদ দিয়ে গান গাইছে,,

“আজ ফাগুন ও পূর্ণিমা রাতে চল পা’লায়ে যাই।”

ঠিক সেই সময় বই নিয়ে সাদ এসেছিলো পরতে বোনদের কাছে।সে আর এই গান শুনেনি কখনো। এটা যে গান এাট ও মাথায় ঢুকেনি।ভেবেছে হিরার মতো বুঝি বোনরা ও পালিয়ে যাবে।

বই খাতা হাতে নিয়েই দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,, দুই বোন নাকি পালিয়ে যাবে। সে চুপিচুপি শুনে ফেলেছে।

রিনা ছেলের কথা শুনে দৌড়ে যায়।

মা কে আসতে দেখে দুই বোন ই গান গাওয়া বাদ দেয়।

রিনা এসে দুই মেয়ের হাত থেকে আংটি,গলা থেকে চেইন আর কান থেকে ছোট দুল গুলো খুলে নেয়।

হাসি জানতে চায় কি হয়েছে মা এগুলো খুলে নিচ্ছো কেন?

দিনকাল ভালো না। আশে পাশে কতো লো’ভী মানুষ আছে।তোদের ভুলিয়ে ভালিয়ে এই স্বর্নের লোভে নিয়ে যাবে।তারপর এগুলো রেখে তোদের মে*রে ফেলবে।

চুপচাপ খেতে আয়।

#চলবে,,,,,

গল্পটার সাথে বাস্তবতা মিলাতে যাবেন না। এটা বিনোদনের জন্য সকলকে হাসানোর জন্য লিখা।সেই হিসেবেই নিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here