তেজপাতা পর্ব -০১

পাত্রকে ও তার বাড়ি- ঘর দেখতে পাত্রী ছদ্মবেশে স্বয়ং নিজে উপস্থিত তার অভিভাবকদের সাথে।

কথাটা মুহূর্তের মাঝে পাত্রের পরিবার ও আশেপাশের লোকজনের কাছে ছড়িয়ে গেছে। আশে পাশের লোকজন উঁকি ঝুঁকি দিয়ে এসে একনজর এমন একটা মেয়ে কে দেখতে এসেছে।

চারদিকে হই হই পরে গেছে। এমন দিন ও দেখতে হলো? মেয়ে নিজে এসে শ্বশুর বাড়ি পছন্দ করছে তার পরিবারের সঙ্গে। কি জা’মা’না এসে গেল।মানুষ আগে বিয়ের কথা শুনলে লজ্জা পেতো মুখ লুকাতো আর এখন? লজ্জা পাবে দূরে থাক নিজে এসেছে দেখতে।

সোফায় চুপচাপ বসে আছে খুশি। চারদিকে চোখ বুলিয়ে সব অবলোপন করছে। আর অন্য দিকে তার বাবা মা পাত্রের মা কে কিছুতেই বুঝাতে পারছে না। উনারা যা ভাবছে তা সঠিক নয়।

উনাদের তিন মেয়ে এক ছেলে।বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাকি আছে দুইটা। এই দুইজন জমজ। নাম তাদের হাসি খুশি। হাসি খুশির চেয়ে কয়েক মিনিটের বড়। তাদের সাথে যে এসেছে সে খুশি। তারা যার জন্য পাত্র দেখতে এসেছে সেটা হাসি।

হাসি খুশি জমজ হলেও ওরা দেখতে একরকম না।চেহারা পুরাই ভিন্ন। স্বভাব চরিত্র সবই ভিন্ন। শুধু এক জায়গায় তাদের অনেক মিল সেই জায়গা থেকে দেখলে কেউই প্রথমে চিনতে পারবে না কোনটা হাসি আর কোনটা খুশি।

তাদের মিলের ক্ষেত্রটা হলো চোখ। দুইজনের চোখ জোড়া হুবহু এক। খুশি যেহেতু বোরকা পরে এসেছে তার চোখ ছাড়া কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। তাই এমন ভুল টা হচ্ছে। আর হাসি কে ছেলের বাবা ছাড়া কেউ দেখেনি। ছেলের পরিবার শুধু ছবি দেখেছে।

বিয়ের কথা তেমন ভাবে আগায় ও নি।ভার্সিটি যাওয়ার পথে হাসি কে দেখে ছেলের বাবার পছন্দ হয়। হাসির বাবা কে সেটা জানায়। তাই হাসিকে না জানিয়েই চুপি চুপি দেখতে এসেছে পরিবার কেমন।

খুশিও কিছু জানতো না। সে একটু কাজে বের হয়েছিলো। তার মা তাকে ফোন দিয়ে বলে,,তারাতাড়ি চৌরাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়াতে। খুশি জিজ্ঞেস করেছিলো কি হয়েছে? কেন ঐখানে গিয়ে দাঁড়াবে? কিছুই বলেনি তার মা।

জিজ্ঞেস করায় বলেছে যা বলছি তাই কর চুপচাপ। বেশি কথা বললে ফোনের ভিতর দিয়েই দুইটা থা’প্প’ড় লাগাবো গালে।

খুশি নিজের গালে হাত দিয়ে বলে,ঠিক আছে বলতে হবে না। আমি দাড়াচ্ছি তোমরা আসো।তারপর মোড়ে প্রায় দৌড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে খুশি।দেরি হলে নয়তো আবার রাস্তাতেই বকা শুরু করবে। এরপর এখানে ধরে নিয়ে আসে।এখানে এসে আসল কাহিনী জানতে পারে খুশি।

এইখানে আসার পর থেকেই ছেলের মা কেমন স’ন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো খুশির দিকে। খুশির কাজ কারবার সব নি’খুঁত ভাবে লক্ষ করছে।

খুশি মায়ের কানে বার কয়েকবার বলেছে দেখো মা এই মো’টকি মহিলা আমার দিকে কেমন করে স’ন্দে’হের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমি চো’র আর ইনি পুলিশ আমাকে ধরার চেষ্টা করছে।

খুশির কথায় খুশির মা মেয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।খুশি চুপ হয়ে যায়।

কিন্তু হুট করে ঐই মহিলা উঠে যায়।তারপর দুই মিনিটের ভিতর ফিরে এসে ঝা’মেলা বাঁধায়।

মেয়ে নিয়ে ছেলে দেখতে এসেছেন? আমরা কি কানা? ভেবেছেন বোরখা পরিয়ে আনলেই আমরা বুঝতে পারবো না। যে এটাই পাত্রী। এমন দিন ও দেখতে হলো ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা কি লজ্জা। আমাদের বিয়ের কথা উঠলে মুখ লুকিয়ে বসে থাকতাম এক সপ্তাহ লজ্জায় কারো সামনে আসতাম না।

আর এই মেয়েকে দেখো ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে চলে এসেছে নিজের শ্বশুর বাড়ি দেখতে।এমন মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবো ভাবলেন কি করে?

এই মেয়ে তো আমার ছেলে কে নাকে দ’ড়ি দিয়ে ঘুরাবে।

“কেন আন্টি আপনার ছেলে কি গা’ধা নাকি ঘো’রা? যে নাকে দ’ড়ি দিয়ে ঘুরানোর কথা বলছেন?”খুশি কথাটা বলেই মুখ টিপে হাসে।

“খুশির মা কটমট করে মেয়ের দিকে তাকায়।”

খুশি মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করার ভঙ্গিতে থাকে। সে আবার চুপচাপ থাকতে পারে না। সবাই কে যোগ্য জবাব দিতে জানে।

খুশির বাবা ওদের ভদ্রতার সাথে জিগ্যেস করে দেখুন আপনারা কি বলছেন বুঝতে পারছি না।

এএএ বুঝতে পারছে না। এই মেয়ের জন্যই তো আমার ছেলে কে দেখতে এসেছেন। আবার একে সাথে করে নিয়ে এসেছেন?

এতোক্ষনে আসল ব্যাপার টা বুঝতে পারে কেন এই মহিলা এমন কে’চাল করছে।

“আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। এটা মেয়ে না!”
খুশির কাকা বোঝানোর ভঙ্গিতে কথাটা বলে।

ছেলের মা বলে উঠে,, মেয়ে না তো কি এটা ছেলে?

খুশি তার কাকার কানে কানে গিয়ে বলে,,এই কাকা কি বলো? আমি মেয়ে না তো কি? তুমি দেখি আমার মান সম্মান সব প্লাস্টিক করে ফেলতেছো।

খুশির কাকা জিভে কা’মড় দেয়। আমতা আমতা করে বলে,,ইয়ে মানে আসলে আমি বুঝাইতে চেয়েছিলাম এটা সেই মেয়ে টা না এটা আরেকটা।

পাত্রের মা কিছুতেই মানতে না’রাজ যে এটা সেই মেয়ে না যার জন্য ছেলে দেখতে এসেছে।

আচ্ছা আমরা মেয়ের মুখ খুলে দেখাই? তাহলেই তো বুঝতে পারবেন এটা ঐ মেয়ে নাকি অন্য মেয়ে। খুশির কাকা কথা টা বলে।

আপনারা বললেই আমরা বিশ্বাস করে নিবো যে এইটা সেই মেয়ে না? আমাদের কি চোখ নাই নাকি আমরা কি অন্ধ? আপনাদের চোখ দিয়ে দেখি? আর এই মেয়ের মুখ আমরা দেখতেও চাই না।

খুশির মায়ের এবার রা’গ হয়।না জেনে বুঝে এমন করার মানে হয়?

দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।আমাদের কথা ভালো করে শুনছেন ই না। কথাটা বলে খুশির মা মহিলার দিকে তাকায়।

মা আন্টির মনে হয় কানে সমস্যা। নয়তো ময়লা জমেছে তাই।

বে’য়া’দ’প মেয়ে বড়দের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় জানে না। এই পরিবার আর এই মেয়ের সাথে আমার সোনার টুকরো ছেলের বিয়ে ঠিক করতে যাচ্ছিলো ঐই বেটা? আজ শুধু বাড়িতে আসুক।

খুশির বাবা সমস্যা সমাধানের জন্য খুশি কে বলে মুখোশ খোলার জন্য। কিন্তু খুশির মা আটকে দেয়।এতো সময় যখন বিশ্বাস করে নি।এখন কিছুতেই মুখ দেখাবে না। আর দেখিয়ে ও লাভ নেই এই বাড়িতে উনার মেয়ে কে কিছুতেই বিয়ে দিবে না।

তুমোল পরিমাণে ঝামেলা বেঁধে যায়।কথার পিঠে কথা উঠতেই থাকে।কেউ কাউকে ছাড়তে রাজি না। খুশির মা আর ঐ মহিলার মাঝে কথা কাটাকাটি লেগে যায়। পুরুষ রা কেউ কাউকে থামাতে পারছেনা।

খুশি ও মাঝে মাঝে ভিতর দিয়ে মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে দুই এক কথা মহিলাকে শুনাচেছে।

শেষে অনেক কষ্টে শান্ত করা গেলো দুইজন কে। দুইজন ই রা’গে ফুসছে।খুশির মায়ের মনে হলো তিনি ভালো করে বলতে পারেন নি। এর মধ্যে খুশি এসে এক কথা বলে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে।

মা তুমি তো ঐ মহিলার থেকে ঝগড়া ভালো করতে পারলা না।ঐ মহিলা একশো থেকে একশো তুমি নিরানব্বই।

খুশির মা খুশির বাবার কাছে গিয়ে বলে,,আমাকে এই ভাবে হারিয়ে দেওয়ার জন্য তুমি পরিকল্পনা করে এইখানে এনেছো তাই না?

খুশির বাবা কিছু বলতে নিবে তার আগেই খুশির মা হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেয়।
থাক কিছু বলতে হবে না।

“আমি দেখে তোমার সংসার করে গেলাম।সহজ সরল দেখে। অন্য কেউ হলে কবেই চলে যেতো।”

খুশির বাবা আ’হাম্মক সেজে দাড়িয়ে আছে। তিনি নাকি ইচ্ছে করে ঝগড়া তে হারিয়ে দেওয়ার জন্য এনেছে।

তারপর সবাই চলে যেতে ধরে,, এমন সময় বলে উঠে৷ ঐ মহিলা যান যান বিদেয় হোন।কি ঝ’গ’ড়াটে পরিবার ভাগ্যিস আমি আগেই জানতে পারলাম।নয়তো আমার ছেলের কি দূ’র্গতিই না হতো।

খুশি এবার বলে উঠে,, কে ঝগড়াটে বুঝে গেছে সবাই।ভাগ্যিস আমরাও আগে থেকে জানতে পেরেছি নয়তো আমার বোনের কি দূ’র্গতিই না হতো।বাংলা সিনেমায় অভিনয় করা ঝ’গড়াটে দ/জ্জাল রিনা খান।

কথাটা বলে মুখ ভেংচি দিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। মায়ের দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা ঢুক গিলে।

তোতলাতে তোতলাতে বলে,,,তো- তোমারে বলি নাই মা।

ততক্ষণে রা’গে হনহন করে চলে যায় রিনা। খুশি ঝ’গড়ার তালে ভুলেই গিয়েছিল তার মায়ের নাম রিনা।

মা ওমা আমি তোমাকে বলিনি।আমি তো ও মা শোনো না। বলতে বলতে৷ মায়ের পিছু ছুটে খুশি।আজ খবরই আছে৷

#চলবে,,,,,

#তেজপাতা
#সূচনা_পর্ব
#Jhorna_Islam

আসসালামু আলাইকুম, এই গল্প টা একটু ফানি টাইপ হবে।আশা করি সকলের ভালো লাগবে। রেসপন্স করার অনুরোধ রইলো।❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here