তোকে দিয়েছি মন পর্ব ৫+৬

#তোকে_দিয়েছি_মন❤
৫+৬
পর্ব – ৫
Writer: Sidratul Muntaz

🍂
প্রচন্ড উত্তেজনায় আমার হাত পা কাপছে। আমি ইশানের শার্টের কলার খামচে ধরে গলা ছেড়ে চিৎকার করে যাচ্ছি। জায়গাটা এতোই নিরব যে আমার চিৎকারের প্রতিধ্বনি আমি নিজেই শুনতে পাচ্ছি। আর ইশান?? সে তো হেসেই খুন। আমার ভয় পাওয়া দেখে যেন পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠেছে সে। সাইকেলের স্পিড তো কমছেই না বরং সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। জানিনা কোন জনমের প্রতিশোধ নিচ্ছে সে আমার উপর। মাঝে মাঝে ঝাকির ঠেলায় আমি আমার জায়গা থেকে সরে পড়ছি,,,, তখন ইশানকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে ওকে আশ্রয় করেই টিকে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছি। মনে হচ্ছে ইশানকে ছেড়ে দিলেই সব শেষ। দাতে দাত চেপে চোখমুখ লাল করে চিৎকার করতে করতে যখন অবস্থা আমার যায় যায় ঠিক তখনি জোরে একটা ধাক্কা অনুভব করলাম। কোনো এক অজানা আতঙ্কে আমার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো সাথে সাথে। এই বুঝি আমি শেষ। মনে হচ্ছে চোখ খুলেই হয়তো দেখব বিশাল কোনো পর্বতের চূড়ায় ঝুলছি আমি। শক্ত করে ধরে আছি কোনো ঢালকে। যেটা ছেড়ে দিলেই আমার জীবন প্রদীপ নিভে যাবে। দুই হাত একত্র করে চোখ মুখ কুচকে বিড়বিড় করতেই লাগলাম ক্রমাগত। মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ছি। বিপদের সময় ভালো কাজে দেয় এই দোয়া। হঠাৎ গালে কারো কোমল স্পর্শ অনুভব করায় চোখ মেলে তাকানোর সাহস টা জেগে উঠল আমার। আধখোলা চোখ পিটপিট করে তাকাতেই ইশান ভাইয়ার সৌন্দর্য্যে ভরা উজ্জল মুখটা দেখতে পেয়ে গেলাম আমি। সাথে ভরসা টাও সজাগ হল মুহুর্তেই। কিছুক্ষণ ইশান ভাইয়ার দিকে তব্দা লেগে তাকিয়ে রইলাম আমি। ইশান ভাইয়ার শার্টের কলারের দুই মাথা এখনো মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে আছে আমার দুই হাতের ভাজে। হাত পা এখনো হালকা হালকা কাপছে। কয়েকটা ঢোক গিলে জানিনা কি মনে করে হঠাৎ জাপটে জরিয়ে ধরলাম ইশান ভাইয়াকে। ইশান ভাইয়া আমার আচরণে কতটা অবাক হয়েছেন কিংবা আদৌ অবাক হয়েছেন কিনা সেটা আমি জানিনা। শুধু এইটুকু জানি ঠিক এই মুহুর্তে উনাকে আকড়ে ধরাটা আমার জন্য জরুরি। খুব বেশিই জরুরি। আমার মনে জমে থাকা একরাশ অস্থিরতা আর ভয়গুলো নিমিষেই মিলিয়ে যাবে এতে। ইশান ভাইয়া আমার পিঠে হাত রাখলেন। হালকা হেসে কোমল স্বরে বলে উঠলেন–

তুমি না আট বছর ধরে সাইকেল চালাও?? এই বুঝি তোমার আট বছরের এক্সপেরিয়েন্স?? সামান্য স্কেটিং এই এতো ভয়??

আমি এবার উনাকে ছেড়ে দিয়ে সাইকেল থেকে নেমে গেলাম। কিছুটা দূরে সরে গিয়ে মাথা নিচু করে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে পড়লাম। উনাকে জরিয়ে ধরার জন্য এখন লজ্জা লাগছে আমার।

উনি আমার আচরণে ফিক করে হেসে দিয়ে মুখে হাত রেখে আমার দিকে তাকালেন। কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুখ থেকে হাতটা সরিয়েই বলে উঠলেন–

চলো তারা!! ( হাত বাড়িয়ে)

আমি কিছুটা চমকে উঠে বললাম — কোথায় যাবো??

ওইযে ওই পাহাড়টা দেখতে পাচ্ছো…. তোমাকে নিয়ে ওইটার চূড়ায় যাবো আমি। ( আঙুল দিয়ে ইশারা করে)

আমি পাহাড়টার দিকে তাকিয়েই চোখ বড় করে ফেললাম। এই উচু পাহাড়ের চূড়ায় উঠা কি কোনে সোজা সাপ্টা ব্যাপার?? হঠাৎ এভারেস্ট জয় করার শখ হল কেনো উনার?? তাও আবার আমাকে নিয়ে?? সাইকেলের ঝাকি খেয়ে কি মাথার বুদ্ধি গুলো সব হাটুতে নেমে এসেছে উনার?? নাহলে এমন উদ্ভট চিন্তা করলেন কি করে উনি?? আমি রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠলাম–

আপনি কি আমার সাথে ফাজলামো করছেন??

ইশান ভাইয়া সাইকেলের ঝুরি থেকে টায়রাকে বের করে নিলেন। সাথে একটা মোটা সাদা রঙের দড়িও বের করলেন। অতঃপর আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে উঠলেন–

না একদমই না!! অবশ্যই খুব সিরিয়াস আমি।

বলেই আমার কোমড় ধরে টেনে উনার সাথে মিশিয়ে নিলেন আমাকে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটা দড়িটা দিয়ে বাধতে শুরু করলেন আমাকে….. শুধু আমাকে বাধলেও এতোটা অবাক হতাম না আমি। কিন্তু উনি যে আমাকে উনার সাথে একসঙ্গে বেধে ফেলছেন। আমি তো রীতিমতো চমকের সপ্তম আকাশে পৌছে গেছি। এসব কি করছেন উনি?? সত্যিই মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেল না তো?? মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন উকিঝুকি মারছে আমার। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলাম–

এসব কি করছেন আপনি?? পাগল হয়ে গেছেন?? এভাবে বাধছেন কেনো??খুলে দিন প্লিজ। আমার দম আটকে আসছে।

ছটফট করতে লাগলাম আমি। কিন্তু এসবের কোনো তোয়াক্কাই করলেন না উনি। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই দড়িটা গিট লাগিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলেন–

এখন আমরা পাহাড়ে উঠবো। তুমি শুধু আমার উপর ভর দিয়ে রাখবে। বেশি ভয় লাগলে চোখ বন্ধ করে থাকবে। দুজনেই সেইফ থাকবো। বিলিভ মি কিচ্ছু হবে না।

ইশান ভাইয়ার কথা শুনে মাথাটা ঝিম ধরে উঠল আমার। যেন এখনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলব। এসব কি হচ্ছে আমার সাথে?? আমি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছি না তো?? যদি সত্যিই দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকে তাহলে খুব বাজে একটা দুঃস্বপ্ন এটা। এমন দুঃস্বপ্ন আমি দেখতে চাইনা। ভয়ংকর ওই পাহাড়ে উঠার কথা কল্পনা করতে গেলেও যে আমার আত্মার পানি শুকিয়ে আসে। সেইখানে কিনা এইরকম অবস্থায় আমি পর্বত আরোহণ করবো?? মাথাটা ঘুরতে লাগল আমার। ইশান ভাইয়া হয়তো আমার অনুভূতিটা বুঝতে পারলেন। দুই কাধে হাত রেখে খানিকটা ঝাকিয়ে বলে উঠলেন–

এই তারা! কি হয়েছে এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?? তুমি না পাহাড়ি মেয়ে? তবুও এতো ভয়? জন্ম থেকে পাহাড়ি অঞ্চলে বেড়ে ওঠা মেয়েটাকে কি এমন আচরণ মানায়?? একদমই মানায় না। চলো তো! আমি থাকতে কিচ্ছু হতে দিব না তোমার।

উনি সামনের দিকে হাটতে লাগলেন। আর আমার মনে হচ্ছে আমি যেন পিছিয়ে যাচ্ছি। যতটা পিছিয়ে যাচ্ছি ঠিক ততটাই উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। কেমন অদ্ভুত লাগছে সবকিছু। মুখ দিয়ে কথাও বের হতে চাইছে না। কেন জানি মনে হচ্ছে এইটাই আমার জীবনের শেষ মুহুর্ত। আর কিছুক্ষণ পরেই আমি দুনিয়া ছেড়ে পগার পা হয়ে যাবো। ওই পাহাড়ে চড়তে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। ভাবতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে আমার। ঢোক গিলতেও কষ্ট হচ্ছে। ইশান ভাইয়া আমার মাথাটা উনার বুকের উপর চেপে ধরে বলে উঠলেন–

ভয়ের কিচ্ছু নেই তারা! তুমি শুধু চোখ বন্ধ করে রাখো। চোখ খুললেই দেখতে পাবে প্রকৃতির এক অদ্ভুত সৌন্দর্য্য।

আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। উনার বুকের ধাকধাক শব্দ প্রতিধ্বনির মতো আমার কানে বারি খাচ্ছে। খুব অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে আমার। উনার বুকে মাথা ঠেকিয়ে সেই অনুভূতির স্বাদগ্রহণে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আমি। জানিনা এভাবে কতটা সময় কেটে গেছে। হঠাৎ গলায় ঠান্ডা পরশ পেয়ে চমকে উঠলাম। ইশান ভাইয়ার বুক থেকে মাথা তুলতেই আরেকবার চমকাতে হল আমায়। উত্তেজনায় মুখ চেপে ধরলাম আমি। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা আমার সামনে। আমার নিজের শহর সম্পুর্ণ টাই একনজরে দেখতে পাচ্ছি আমি। সবুজ শহরের সাথে নীল আকাশটা মিশে গিয়ে তৈরি হয়েছে এক অন্যরকম সৌন্দর্য্য। শিশিরভেজা সবুজ ঘাসগুলো চকচক করছে। কুয়াশায় চারিপাশটা হালকা ধোয়াটে রুপ ধারণ করেছে। এক চিলতে মিষ্টি রোদ উকিঝুকি মারছে সবুজ পাতাগুলোর ফাকে ফাকে। সবুজের এই আশ্চর্য সৌন্দর্য্য এর আগে এইভাবে কখনো ধরা পড়েনি আমার চোখে। জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি। আমার হাত পা খানিকটা কাপছে। কিন্তু সেটা ভয়ে নয়… হিমশীতল এই পর্বতশৃঙ্গের ঠান্ডা পরশ টাকেই অনুভব করছি আমি। ইশান ভাইয়া আমার কাধের উপর হাত রাখলেন হঠাৎ। খানিকটা নিচু হয়ে আমার কানের কাছে এসে বলে উঠলেন তিনি–

কেমন লাগছে??

আমি আরেকবার স্বস্তির একটা শ্বাস নিয়ে বলে উঠলাম—

অসম্ভব ভালো লাগছে। এতোটাই ভালো….. যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

আর এই ভালো লাগা টা কে যদি এবার ভালো বাসায় পরিণত করি?? কেমন হয়??

আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম– মানে??

উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোট চেপে বড় করে” হুমমম….. ” উচ্চারণ করলেন। মাটি থেকে টায়রার খাচাটা তুলে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন–

নাও। টায়রাকে এবার আকাশে উড়িয়ে দাও। ওর সবুজ পালকের শরীর টা হারিয়ে যাক এই সবুজের নীড়ে। নীল আকাশে উন্মুক্ত করে দাও ভালোবাসাকে। দেখে নিও,, উড়তে উড়তে পথ হারা হয়ে একদিন তোমার খাচাতেই ফিরে আসবে সে।

উনার কথা শুনে আমার মুখটা মলিন হয়ে উঠলো। আচমকা উনার হাত থেকে টায়রার খাচাটা নিয়ে বলে উঠলাম আমি–

কিছুতেই না। আমার টায়রাকে আমি দেবো না উড়ে যেতে। ও হারিয়ে গেলে আমি তো মরেই যাবো।

হারাবে না তারা। মুক্তি পাবে শুধু। এই বন্দী জীবন টায়রার জন্য না। সে তো ডানা ঝাপটানো পাখি। তাকে উড়তে দিতে হবে নিজের মতো। তবেই না পরিণতি পাবে তোমার টায়রার প্রতি ভালো বাসা।

আমি চোখ তুলে উনার দিকে তাকাতেই উনি হাত থেকে খাচাটা নিয়ে নিলেন। আমি কিছু বলার আগেই খাচার দরজাটা ফট করে খুলে দিলেন উনি। দরজায় হাত ঢুকিয়ে টায়রাকে হাতের তালুতে উঠে আসার জন্য ইঙ্গিত দিলেন টায়রা এক পা দুপা করে উঠে আসল উনার হাতের তালুতে। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে টায়রাকে মুক্ত বাতাসে ছেড়ে দিলেন উনি। টায়রা কয়েকবার ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যেতে লাগল। আমি মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলাম শুধু। কিচ্ছু বলতে পারলাম না। টায়রা পুরো আকাশ জুড়ে একবার চক্রাকারে ঘুরে একটা উচু ডালে চড়ে বসল হঠাৎ । এখন হয়তো টায়রাকে চাইলেও আমি ধরতে পারবো না। কিন্তু ধরতে যে আমায় হবেই। টায়রাকে ধরার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিলেই ইশান ভাইয়া পথ আটকালেন আমার–

তারা কি করছো?? ওদিকে গেলে পড়ে যাবে তো??

উনার ডাকে চমকে উঠে আমি নিচের দিকে তাকালাম। সবকিছু খুব ক্ষুদ্র লাগছে। এইখান থেকে একবার নিচে পড়লে আর বাচার আশা নেই। কিন্তু তবুও কেন জানি ভয় হচ্ছে না আমার। টায়রাকে হারানোর ভয়ের কাছে এই ভয় কিছুই না। আমি মাথা উচু করে আবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম ওই গাছের ডালে। কিন্তু ওখানে টায়রা নেই। কোথায় গেল টায়রা। চারিপাশে চোখ বুলিয়ে টায়রাকে খুজতে লাগলাম আমি। এদিক সেদিক দৌড়াতে শুরু করলাম। কোথায় আমার টায়রা?? ইশান ভাইয়া আমার হাত ধরে থামিয়ে নিলেন আমাকে। দুই কাধ স্পর্শ করে বলে উঠলেন উনি–

তারা এমন কেন করছো?? জায়গাটা খুব রিস্কি। যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারো তুমি।

আমি উনার কথা কানে নিলাম না। ভাবলেশহীন ভাবে আশেপাশে তাকিয়ে আওরাতে লাগলাম একটাই শব্দ ” কোথায় টায়রা?? কোথায়??” মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পরলাম আমি। উপলব্ধি করলাম আমার চোখ ভিজে আসছে। সবকিছু ঝাপসা হয়ে যেতে লাগল কয়েক মুহুর্তেই। ইচ্ছে করছে পা ছড়িয়ে কাদি। দুই হাত মাথায় খামচে ধরে এবার কেদেই উঠলাম আমি। ইশান ভাইয়া অবাক চোখে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ আমার সামনে এসে বসে পড়লেন। আমার দুই গাল স্পর্শ করে বলে উঠলেন–

টায়রা ফিরে আসবে তারা! বিলিভ মি! টায়রা উইল কাম ব্যাক।

আমি কাদতে কাদতে অস্পষ্টভাবে বললাম–

কি করে ফিরে আসবে?? টায়রা হারিয়ে গেছে। ও আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। হারিয়ে ফেললাম ওকে আমি। আপনার জন্য হারিয়ে ফেললাম। কেনো করলেন আপনি এটা?? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি আপনার?? এইটা কিসের রিভেঞ্জ নিলেন?? আমাকে আমার টায়রা থেকে আলাদা করে কি পেলেন আপনি??

ইশান ভাইয়া আমার কথার উত্তরে কিছু বললেন না। শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন শুধু। হয়তো আমার মেজাজ ঠিক হওয়ার অপেক্ষা করছেন। আমি চোখের পানি মুছে পুরো মুখ মালিশ করে নিলাম। তারপর কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উনার দিকে তাকালাম। উদ্দেশ্য উনাকে কয়েকটা কড়া কথা শোনানো। কেনো আমার এতোবড় ক্ষতি করলেন উনি?? কিন্তু সেটার সুযোগ হল না। তার আগেই টায়রার কণ্ঠে আমার নামের প্রতিধ্বনি শুনে চমকে উঠলাম আমি। টায়রা ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে আমার কাধে এসে বসল।
🍂
তোকে_দিয়েছি_মন❤
পর্ব – ৬
Writer: Sidratul Muntaz

টায়রা আমার কাধে এসে বসতেই বিদ্যুৎ গতিতে তাকে দুই হাতে চেপে ধরলাম আমি। সবুজ ডানায় নাক ঘষে চুমু দিয়ে আদর করতে লাগলাম। চোখে পানি নিয়েও মুখে হেসে চলেছি আমি। ইশান ভাইয়া কপালে হাত রেখে কিছুক্ষণ আমার কান্ড কারখানা দেখলেন। তারপর হঠাৎ হেসে মাটিতে আসন পেতে বসে পড়লেন তিনি। আমি উনার দিকে তাকাতেই গালে হাত রেখে উনি বলে উঠলেন–

বলেছিলাম না?? টায়রা ফিরে আসবে? আমার কথা সত্যি হয়েছে?

আমি চোখের পানি মুছে মুখে হাসি নিয়ে বললাম–

হ্যা হয়েছে। কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন??

আমি জানতাম। তোমার আর টায়রার মধ্যে একটা স্পেশাল বোন্ডিং আছে। তুমি যে টায়রাকে এতো ভালোবাসো….. সেইটারই প্রতিদান ছিল এটা। মানুষেরা ভালোবাসার প্রতিদান দিতে জানে না তারা!! কিন্ত পশুপাখিরা জানে। তুমি টায়রাকে একেবারে মুক্ত করে দিয়েছো। সেই বিশ্বাস নিয়েই কিন্তু ও ফিরে এসেছে। ওকে আর বন্দী করে রেখো না। স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার ওর ও আছে। ওকে উড়তে দেওয়া উচিৎ।

হ্যা ঠিক বলেছেন। ওকে উড়তে দেওয়া উচিৎ।

বলেই টায়রাকে উচু করে ধরলাম আমি। টায়রা আমার নামটা একবার উচ্চারণ করে ডানা ঝাপটালো। তারপর উড়তে লাগল নীল আকাশ জুড়ে। আমি টায়রার আনন্দ দেখে উঠে দাড়ালাম। টায়রার সাথে তাল মিলিয়ে হাত তালি দিয়ে লাফাতে শুরু করলাম। আজ খুব খুশি লাগছে টায়রাকে উড়তে দেখতে। এইটা ভেবে আরো ভালো লাগছে যে মুক্তি পেয়েও টায়রা আবার আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমাকে ভুলে যায়নি। খুশিতে চোখ আমার অশ্রুভেজা হয়ে উঠলো।
ইশান ভাইয়া আমার পাশে এসে দাড়াতেই উনাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম আমি–

— থ্যাংক ইউ।

ইশান ভাইয়া আমার মাথায় স্পর্শ করে বললেন–

টায়রার ভালো বাসা টা বুঝতে পারছো….. আমারটা কবে বুঝবে তারা? আমিও টায়রার থেকে কম কিসে শুনি?? টায়রার মতো আমিও যে সারাক্ষণ তোমার নাম উচ্চারণ করি। টায়রা কিচিরমিচির শব্দে ডাকে বলে তার ডাকে সাড়া দাও। আর আমার মন টা যে কাতর হয়ে সারাটাক্ষন তোমার নাম ধরে ডেকে যায়…….সেই ডাক টা শুনতেও পাও না তুমি। শোনার চেষ্টাও করো না কখনো । এইটা তো অন্যায় হচ্ছে তারা!! কেনো এতোটা কষ্ট দিচ্ছো আমায়?? আমিও যে ভালোবাসি। কবে বুঝবে তুমি??

উনার কথা শুনে লজ্জায় কিছুটা দূরে সরে দাড়ালাম আমি। কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছি না। সত্যিই কি আমায় এতো ভালোবাসেন উনি?? আমি কি সত্যিই এতো লাকি? কিছুক্ষণ নিরবতা পালনের পর লজ্জামাখা কণ্ঠে বলে উঠলাম আমি–

আমাকে এই জায়গায় নিয়ে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এর আগে কখনো পাহাড়ে উঠিনি আমি। মা… ভাইয়া… অনেক চেষ্টা করেছিল আমাকে নিয়ে পাহাড়ে চড়তে। কিন্তু আমি পাহাড় দেখলেই ভয় কাদতাম। উচুস্থান খুব ভয় পাই। এই প্রথম আপনার হাত ধরে আমি পাহাড়ে উঠেছি। আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি পাহাড়ের চূড়ায় দাড়িয়ে আছি। জীবনের প্রথম পাহাড়ে উঠার এই অভিজ্ঞতা টা দারুন। পৃথিবীটা যে এতো সুন্দর…… সেটা এইখানে না আসলে আমার জানা হতো না। ( দু হাত দু দিকে ছড়িয়ে লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে) খুব ভালো লাগছে আমার।

কথাগুলো বলতে বলতে ইশানের দিকে তাকিয়েই থমকে গেলাম আমি। ইশান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি দুই হাত একত্র করে দাড়ালাম। উনাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কেমন অস্বস্তি লাগছে আমার। সেইসাথে লজ্জাটাও বেড়ে যাচ্ছে। আমার এই লজ্জা ও অস্বস্তির অবসান ঘটিয়ে টায়রা আমার কাধে এসে বসল। টায়রার ডানা ঝাপটানোর শব্দে ঘোর কাটল ইশানেরও। উনি একটু নড়েচড়ে আশেপাশে তাকালেন। তারপর গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলেন–

তাহলে চলো,,, আমরা এখন যাই। দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আমি কিছু বললাম না। মাথা নাড়লাম শুধু।
উনাকে দড়িটা মাটি থেকে তুলতে দেখে বলে উঠলাম আমি–

এইটার কোনো দরকার নেই। আমি একাই পারবো এবার।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললেন—

আমি কোনো রিস্ক নিতে চাইনা।

আমি আর কিছু বললাম না তারপর। মাথা হেলিয়ে রাজি হলাম শুধু।

.

.

ইনা আপুদের বাসা থেকে এবার বাসায় ফিরছি আমরা। উনি খুব ধীরগতিতে সাইকেল চালাচ্ছেন। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমাদের জায়গাটা পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় সন্ধ্যা হলেই সবকিছু ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। এই অন্ধকারের মধ্যেও উনার উজ্জল মুখটা জলজল করছে। উনার পারফিউমের গন্ধে মুখরিত হয়ে আছে আমার চারপাশ। মাঝে মাঝে ইশান ভাইয়ার গরম নিঃশ্বাস আমার গালে লাগছে। ছোটখাটো ঝাকিতে আমার গালের সাথে উনার গাল মিশে যাচ্ছে। খোচা খোচা দাড়ির ধার অনুভব করছি আমি। এই অনুভূতি গুলো উনার কেমন লাগছে আমি জানিনা। কিন্তু আমার কাছে স্বর্গীয় সুখের মতো মনে হচ্ছে। কেউই কোনো কথা বলছি না আমরা। শুধু মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে ইশান ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি। উনার দৃষ্টি সামনে স্থির। টায়রাকে হাতে নিয়ে বসে আছি আমি। মাঝে মাঝে সবুজ পালকে হাত বুলাচ্ছি। সাইকেলটা খুব আস্তে চললেও আমার মনে হচ্ছে খুব দ্রুত পথ অতিক্রম করছি আমরা। রাস্তা ফুরিয়ে আসছে ক্রমাগত। কিন্তু এই সুন্দর সময়টা শেষ হয়ে যাক এটা আমি একদমই চাই না। এই পথ যদি কোনো দিন শেষ না হতো তাহলে কেমন হতো?? আচ্ছা উনিও কি এইরকম কিছু চিন্তা করছেন?? ইচ্ছে করছে সাইকেলটা থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করতে। উনার মাধুর্য ভরা চেহারায় চুমু একে দিতে। ছি ছি!! কি চিন্তা করছি আমি এসব?? যত্তসব নির্লজ্জ চিন্তাভাবনা। মনে মনে হেসে উঠলাম আমি। হঠাৎ ইশান ভাইয়ার গলা ঝাড়ার শব্দে ভাবনার জগতে ছেদ পরলো আমার। ইশান ভাইয়া বললেন—

এসে গেছি আমরা। নামো।

উনার কথা শুনে সামনে তাকাতেই আমাদের বাড়িটা চোখে পরল। মন টা খারাপ হয়ে গেল মুহুর্তেই। ইশান ভাইয়া সাইকেল থেকে নেমে দাড়ালেন। আমিও টায়রাকে নিয়ে নামলাম। ইশান ভাইয়া বললেন–

তুমি যাও। আমি সাইকেলটা পার্ক করে আসছি।

মাথা হেলিয়ে টায়রাকে কোলে নিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম আমি। হঠাৎ ইশান ভাইয়া পিছু ডাকলেন–

তারা!!

আমি সাথে সাথে ঘুরে তাকালাম।

উনি হাত ভাজ করে সাইকেলের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে বলে উঠলেন–

তুমি আমাকে কি নজরে দেখো আমি জানিনা। কিন্তু আমি তোমাকে কি নজরে দেখি সেটা নিশ্চয়ই তুমি জানো?

আমি মাথা নিচু করলাম। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। ইশান ভাইয়া আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে বললেন–

তারিফের বিয়ের পর আমরা এখান থেকে চলে যাবো। তারপর তোমার সাথে আর দেখাও হবে না। জানিনা কিভাবে থাকবো। সেই কথা চিন্তা করতেও বুকে ব্যথা হচ্ছে আমার। আমি সহ্য করতে পারছি না তারা! খুব কষ্ট হবে তোমাকে ছাড়া থাকতে। এই কষ্ট থেকে একটু হলেও রেহাই পাবো যদি তোমার মুখে ভালোবাসার কথাটা শুনে যেতে পারি। বলবে তারা একবার??

আমি নিজের মনে হাসলাম। কথাগুলো যেন বুকে গিয়ে বিধলো আমার। সেই সাথে লজ্জাটাও চেপে বসল মনের। কেউ সত্যিই আমায় এতো ভালো বাসে?? উনার ব্যাকুল কণ্ঠে উচ্চারিত কথাগুলো মিথ্যা হতে পারেনা। কিছুতেই না। আমি চোখ তুলে তাকাতেই দেখলাম উনি করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আমার উত্তরের অপেক্ষা করছেন। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই পেছন থেকে মায়ের গলা শুনতে পেলাম। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম মা হাত নাড়িয়ে আমাকে ডাকছেন। আমি একবার ইশান ভাইয়ার দিকে তাকালাম। উনি ইশারা করে আমাকে যেতে বললেন। আমিও আর দাড়ালাম না। মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। মায়ের মুখে বড় হাসি। আমি মায়ের সামনে গিয়ে দাড়াতেই মা আমার গলার ওরনাটা টেনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিলেন। মায়ের আচরণে বিস্মিত হয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম–

কি হয়েছে মা?? ঘোমটা কেনো দিচ্ছো??

মা বিড়বিড় করে বললেন–

তোর দাদী এসেছে। ঘরে ঢুকেই কিন্তু পা ধরে সালাম করবি আগে। আর ঘর থেকে একদম বের হবি না। সারাখন দাদীর কাছে বসে থাকবি। যা বলছি মনে থাকবে তো??

আমি মুখ কুচকে বললাম — মানে?? দাদী এতো জলদি কেনো এসেছে?? উনার না পরশু আসার কথা ছিল?? ভাইয়ার বিয়ে তো পরশু। তাহলে আজকে কেনো……

মা আমার মুখ চেপে ধরলেন। ধমকের সুরে ফিসফিস করে বললেন– আস্তে কথা বল তারু। দাদী শুনে ফেলবে তো।

আমি হাত ভাজ করে দাড়ালাম। ভীষণ বিরক্ত লাগছে আমার। দাদী মানেই আমার জীবনের একটা প্যারা। উনি কিন্তু মোটেও আমার আপন দাদী না। আমার দাদা- দাদী গত হয়েছেন জন্মের আগেই। এখন যার কথা মা বললেন….. সে হলো বাবার খালা। ছোটবেলা থেকে উনি আমাদের উপর দাদীর অধিকার ফলাচ্ছেন। মা উনাকে খুব মান্য করলেও আমার আর ভাইয়ার কাছে উনি শুধুই একটা বুড়ি। শুধু বুড়ি বললে ভুল হবে। উনি আসলে একটা কুচুটে বুড়ি। জানিনা কোন জন্মের শত্রুতার জন্য ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব অপছন্দ করেন উনি। প্রত্যেকটা পদে আমার ভুল খোজেন। আমি ভালো করলেও উনার কাছে খারাপ। যতদিন বাসায় থাকবেন ততদিন নিজের বাসাটা হবে আমার জন্য জেলখানা। আমার সব স্বাধীনতাহরণ করাই যেন উনার একমাত্র উদ্দেশ্য। তার উপর এখন আবার ইশান ভাইয়া আছেন। ওই বুড়ির জন্য তো ইশান ভাইয়ার সাথে কথাও বলা যাবে না। বুড়ির যা শকুনি চোখ!! একটু উনিশ বিশ হলেই বুঝে ফেলবে সবকিছু। তারপরই তো শুরু হবে তুলকালাম কান্ড। টেনশনে মাথা কাজ করছে না আমার।

আমার ঘরে ঢুকেই দেখলাম পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে বুড়িটা। আমি জানতাম এসেই সবার আগে আমার ঘরটা দখল করবে উনি। না হলে তো আবার উনার অন্ন হজম হয়না। পান খেয়ে মুখটা লাল হয়ে আছে বুড়ির। সাদার উপর বেগুনি ফুলের ছাপা শাড়ি পড়েছে। আমার উপস্থিতি টের পেয়েই চোখ ঘুরিয়ে তাকালো বুড়িটা। কি ভয়ংকর দৃষ্টি!! বীভৎস লাগে আমার। আমি পায়ে ধরে সালাম করলাম না। উনার কাছে গেলেই পানের গন্ধে বমি আসে আমার। আজরাতটা উনার সাথে থাকতে হবে এটা ভাবতেই গা গুলিয়ে আসছে। আমি ভ্রু কুচকে বুড়িকে সালাম দিয়ে কাধে ঝুলানো ব্যাগটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলাম। মাথা থেকে ওরনাটা খুলে চুল ঠিক করায় ব্যস্ত হলাম। বুড়ি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল–

ডেং ডেং কইরা ঘুরতে গেসিলি??

আমি দাদীর দিকে না তাকিয়েই বললাম–

হিমালয় পর্বতমালায়।

পর্বতমালা?? ( ভ্রু কুচকে) তোর মায় দেহি কইলো তুই তারিফের বউয়ের বাইত গেছোস??

জানোই যখন তাহলে জিজ্ঞেস করলে কেনো??

বুড়ি মুখ বাকিয়ে বললেন–

ওহ। তোরে তো আবার কিছু জিগানও যাইতো না। আমাগো সময় আমরা মুরব্বি গো লগে কি মান্যি কইরা কথা কইতাম। দেহা অইলেই পায়ে পইড়া সালাম করতাম। যতখান উঠতে না কইতো অতখান উঠতাম না। চোখ তুইলা তাকাইতে পারতাম না ডরে। আর তোরা তো বেদ্দপ হইছোস।

জানতাম পায়ে ধরে সালাম না করার খোটা টা উনি দিয়েই ছাড়বে। আমি উনার কথার কোনোরকম কর্ণপাত না করে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। ঠিক তখনি পেছন থেকে দাদী ডেকে উঠল–

খাড়া। কই যাস??

মা বলেছে রান্নাঘরে যেতে। তাই যাচ্ছি।

কথাটা বলে শেষ করতেই দেখলাম মা শরবত হাতে এদিকেই আসছে। মাকে দেখে আমি আর এগুলাম না। মা ঘরে ঢুকেই দাদীমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। শরবতটা দাদীকে দিয়ে বলে উঠলেন–

রাতে কি খাবেন মা??

দাদিমা শরবতটা টেবিলের উপর রেখে দুই হাত একত্র করে বললেন–

ওইসব আলাপ পরে হইবো। আগে বসো তোমার লগে জরুরি কথা আছে। মা বসে পড়লেন। আমি এখানে দাড়িয়ে থাকার প্র‍য়োজন মনে করলাম না। তাই চলে যেতে নিতেই বুড়ি আবার ডাক দিল–

ওই ছেমড়ি তুইও বয়। জরুরি কথা তো তোরে লইয়াই।

আমি ভ্রু কুচকে বুড়ির দিকে তাকালাম। আমাকে নিয়ে আবার কি জরুরি কথা?? নিশ্চয়ই মেজাজ খারাপ করার মতো কিছু বলবে। মুখ ভার করে টেবিলের উপর ঠেস দিয়ে দাড়ালাম–

কি কথা বলো।

দাদী আরাম করে পা তুলে বসলেন। খাটের বাম সাইডে থাকা বালিশটা কোলে নিয়ে খুব উৎসাহের সাথে বলতে শুরু করলেন–

— শোনো আয়শা( মায়ের নাম)। তোমার তারুর লাইগা খুব ভালা একটা সম্বন্ধ পাইসি। পোলা বিরাট শিক্ষিত। বিদেশ থেকা সাই পাশ করা আইসে।

দাদীর কথাটায় কপাল কুচকালাম আমি। সাই পাশ আবার কি পাশ?? পরমুহূর্তেই বুঝতে পারলাম ওটা সিএ পাশ হবে।

দাদী আবার বললেন— পোলার বাপের বিরাট ব্যাবসা। আমাগো এলাকাতেই থাকে। কোনো টাকা পয়সা কিচ্ছু লাগবো না। হেগো খালি দরকার ষোল সতরো বছরের একটা সুন্দরী মাইয়া।

কথাগুলো শুনে রাগ লাগছে আমার। বিদেশ থেকে সি এ পাশ করা ব্যাটা নিশ্চয়ই কচি খোকা হবে না!! সর্বনিম্ন তিরিশ বছর তো হবেই। তার আয়ার দরকার ১৬/১৭ বছরের মেয়ে!! ছি!! কিন্তু মায়ের কথা ভাবতেই ভয় লাগছে আমার। মা যদি আবার বিয়ের জন্য হ্যা বলে বসবে না তো?? মা রাজি হয়ে গেলে যে সর্বনাশ!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here