তোমারই আমি আছি পর্ব ১২

#তোমারই_আছি_আমি
পর্ব-১২
#saraMehjabin

খান প‍্যালেসের বেশিরভাগ পার্টি মিডনাইটের পরে শেষ হয়। কিন্তু গেস্টরা আজকের পার্টাটা এতোই বেশি উপভোগ করেছে যে পার্টি শেষ হতে হতে রাত কাবার হয়ে গেল।

পার্টির শেষে আকাশ বলল, ড‍্যাড আমি কিছু বলতে চাই। সেটা উনাদের সবাইকে সাক্ষী রেখে এবং তোমাদের উদ্দেশ্যে।

বেবিন খান কিছুক্ষণ ভাবলেন কি বলতে চায় আকাশ। তারপর বললেন, হ‍্যা হ‍্যা নিশ্চয়ই।

আকাশ সবার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে প্রথমে সবার দিকে তাকিয়ে হেসে শুরু করল, আপনারা জানেন আজকের দিনটা আমাদের জন্য খুব স্পেশাল। আজ আড়াই বছর পর আমার দিদা বিদেশ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে। আমরা আমাদের সেই স্পেশাল দিনটা ভাগ করার জন্য এই পার্টির অ্যারেন্জ করেছি। শুধু এটাই নয় আরও খুশির খবর হচ্ছে আমাদের কোম্পানি খান ইনডাস্ট্রিজ হক ইম্পোর্ট এ্যান্ড এক্সপার্ট কোম্পানির সাথে একটা মিউচুয়াল বিজনেস ডিল আজ-ই ফাইনাল করেছে।

চারদিক করতালিতে মুখরিত রেখেই আকাশ আবার বলতে শুরু করে, আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না এই বিজনেস ডিলটার কারন শুধু ব‍্যবসায়িক সম্পর্ক নয়; হক ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্টের ওনার মি. আশরাফুল হক ইজ দ‍্য বেস্ট ফ্রেন্ড অফ মাই ড‍্যাড অ্যান্ড দ‍্য গ্রান্ড নিউজ ইজ হি ইজ মাই উড বি ফাদার ইন ল। খুব শীঘ্রই উনার একমাত্র মেয়ে সামিহা মেধাকে আমি বিয়ে করতে চলেছি।

আকাশের কথা শুনে আগত অথিতিরা করতালি তুললেও খান পরিবারের সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। এটা কি বলল আকাশ? দুইদিন আগেই যখন আকাশ মেধার বিয়ের প্রসঙ্গ উঠে আকাশ বলেছিল সে এখন বিয়ে করতে পারবে না। তার সময় চাই। আজকে এই ভরা পার্টিতে এগুলো কি বলছে?

আকাশ বলল, মেধার আর আমার অনেকদিনের সম্পর্ক। প্রায় সাত বছর আমরা অ্যাফেয়ারে আছি। তাছাড়া আমাদের ফ‍্যামিলি অনেক ছোটবেলাতেই আমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, মেধা ইজ মাই লাইফলাইন। সি ইজ মাই ড্রিম, মাই লাইফ, মাই এভরিথিং। কারণ আমি সবসময় এমন একজনকে লাইফ পার্টনার হিসেবে চেয়েছি যে সাধারণ মেয়েদের মতো হবে না। যার সবকিছু থাকবে আপডেটেড,,অ্যাট্রাক্টিভ। মেধার মধ্যে আমি এই জিনিসটা পেয়েছি। ও অনেক স্পেশাল আমার জন্য। তাই আমি তাকে পেতে চাই সারাজীবনের জন্য।

কথাগুলো বলার সময় মেধা আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশ কথা শেষ করে মেধার হাতে আংটি পড়িয়ে দেয়। সকলের সামনে হাটু গেড়ে বসে মেধার আংটি পড়া হাতটায় চুমু খায়। সকলের সামনেই মেধার ঘাড়ে থুতনি রেখে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, বলেছিলাম না এ বিগ সারপ্রাইজ ইজ ওয়েটিং ফর ইউ। কেমন দিলাম, হুম! আকাশ হেসে মাথা নিচু করে মেধার কপালের পাশে কপাল লাগাল। এদিকে মেধা বুঝতেই পারছে না সে কি করবে। ঘটনাটায় তার খুশি
হওয়া উচিত কিনা। এতগুলো বছর সে যা চেয়েছে আজ তাই হলো। কিন্তু এত সহজে? উহু,,,এরকমটা
হওয়ার কথা নয়। যে আকাশ মেধার এক শর্তে মিথ‍্যা রিলেশনে রাজি হয়েছিল শুধু ভালবাসার মানুষটার ক্ষতির ভয়ে ,,,ভালবাসার মানুষের জীবনে যেন বিপদের ছায়া না পড়ে। যে আকাশ ভালবাসার মানুষকে বলে বিপদমুক্ত রাখতে নিজের ভালবাসা স‍্যাক্রিফাইস করেছে,,, যার একবিন্দু চোখের পানি সহ‍্য করতে পারত না নিজ দায়িত্বে তাকে প্রতিনিয়ত কাঁদিয়েছে মেধার কথামতো,,,ভালবাসার মানুষের কাছে ঘৃনার পাত্রে পরিনত হয়েছে,,,হৃৎপিন্ডে রাখা মানুষটার চোখে আজকে ও সবচেয়ে খারাপ, সবচেয়ে বড় অপরাধী। তাও সব মেনে নিয়েছে যাতে অন্তত ও সেইফ থাকে, ওর জীবনের কালো অধ‍্যায়টা যেন কেউ না জানতে পারে। সেই আকাশ এমন কি ঘটল যে মেধাকে বিয়ে করতে চাইছে। ইদানীংকার আকাশের আচরনগুলোও অস্বাভাবিক। সাত বছর আকাশকে আকৃষ্ট করার কোন প্রকার চেষ্টা সে বাদ রাখে নি। এমনকি আকাশকে বিয়ের আগে ফিজিক্যাল রিলেশনের সুযোগ দিতে চেয়েছে একটা মেয়ে হয়েও। মানুষ সম্পর্কে মনের মিলনের থেকে শারীরির মিলনে যায়। মেধা চেষ্টা করেছিল শরীরের পথ ধরে আকাশের মনে ঢুকতে। ভেবেছিল পুরুষ মানুষ,, এ ধরনের প্রস্তাব পেলে শিকারির মতো ঝাপিয়ে পড়বে। কিন্তু আকাশ তার শরীর মন কোথাও মেধাকে প্রবেশ করতে দেয় নি।
আর এখন? সেই আকাশ কথায় কথায় মেধাকে ছুচ্ছে,,ওর কাছাকাছি আসতে চাইছে। মেধাকে দেখলেই নেশায় পড়ে যাচ্ছে এমন একটা ভাব। ব‍্যাপারগুলির একটাও স্বাভাবিক নয়। আকাশের মনে আসলে কি চলছে?

—————————————————————————–

সারাদের বাসায়। সকালবেলা। সারার মা জাফরিনা রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছেন। সারা তার মা’কে সাহায্য করছে। আজকে শুক্রবার। তাই সবাই বাসায়।

সারার বাবা জুয়েল সাহেব পত্রিকা দেখছিলেন আর সায়ানের সাথে কথা বলছিলেন। সায়ানের বিদেশ যাওয়ার ব‍্যাপারে। জুয়েল সাহেব ব‍্যাপারটা সাপোর্ট করলেও কালকে সারারা বাসায় ফিরে বলার পর থেকেই জাফরিনা মুখ অন্ধকার করে রেখেছেন। সায়ানের সাথে তো কথাই বলছেন না; জুয়েল সাহেব ওকে সাপোর্ট করছেন দেখে তাকেও অনেক গুলো ঝাড়ি শুনিয়েছেন।

“নবাব সাহেবদের বিদেশি আলাপ শেষ হলে টেবিলে নাশতা বেড়েছি। খেয়ে উদ্ধার করুন।”

জাফরিনার মনটা ভার হয়ে আসছে। সায়ান আর ওর বাবার কোন হেলদোল নেই। তাকে নিয়ে উল্টো মজা নিচ্ছে। একা একা বিদেশে কত বিপদ আপদ হতে পারে,,,কোন খোঁজ খবর-ও পাওয়া যাবে না। কোথায় থাকবে কি করবে সায়ানকে সারার চেয়ে একটু বেশিই গুরুত্ব দেন তিনি। ছেলেটা এই যে চোখের সামনে তাও যদি বাইরে কোথাও যায়,,,ফিরতে দেরি হয়,,,অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে তার। আর সেখানে অত দূর ভিনদেশে একা ছেলেকে পাঠিয়ে কিভাবে বুকে পাথর বেঁধে রাখবেন! সায়ান কি কিচ্ছু বোঝে না! তার দুশ্চিন্তা,, ভয়-ভীতি, এসবের কোন মূল্য নেই ওর কাছে!

সারা কাল থেকেই মায়ের মতিগতি লক্ষ্যে রাখছে। মনে হয় মা ভাইয়ার যাওয়ার ব‍্যাপারে রাজি না। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে। আম্মুকে দিয়েই যেভাবে হোক ভাইয়ার যাওয়া আটকাতে হবে। যদিও সারা সারার মাকে অনেক ভয় পায়। মা সায়ানকে সবসময় আদর-আহ্লাদ করে কথা বললেও সারাকে ধমক ছাড়া কথা বলেন না। তবুও যাই হোক মা’কে বোঝাতে হবে। যেন ভাইয়াকে যেতে না দেয়।

এমন সময় দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ।

“এ্যাই সারা,,,পরোটা ভাজছি আমি। শব্দ কানে যায় না তোর? দরজা খুলতেও কষ্ট?”

কিছুক্ষণ গজরগজর করে আবার পরোটা বানানোয় মন দিলেন।

সারা এসবেই অভ‍্যস্ত তাই গিয়ে দরজা খুলে দিল।

দরজায় একজন লোক দাঁড়ানো। পোস্টম‍্যানের ড্রেস।

: কাকে চাই?

: এটা জুয়েল সাহেবের বাসা তো?

: ওনার আর ওনার ফ‍্যামিলির নামে একটা কার্ড এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা এই বাসায় সারা কে?

: আমিই সারা।

: কার্ডের সাথে একটা চিঠি আছে। কিন্তু এটা পারসোনাল। বলা হয়েছে সারাকেই দিতে। সারা ছাড়া অন‍্য কাউকে দিতে পারব না।

লোকটার কথাগুলো অদ্ভুত ঠেকল সারার। তাকে চিঠি কে দিবে? তাও এত গোপনীয়তা করে?

লোকটা সারার হাতে কার্ড ও চিঠি দিয়ে চলে যায়। সারা কার্ডটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। কার্ডের ডিজাইনটা বেশ জাকজমকপূর্ণ। মনে হয় বিয়ের কার্ড। বোঝা যাচ্ছে কার্ড পাঠানো ব‍্যক্তি যথেষ্ট বড়লোক।

সায়ান, বাবা, মা সবাই জড়ো হলো।

বাবা: দেখি কার্ডটা,,, কে দিল।

জুয়েল সাহেব কার্ডটা হাতে নেন। নূরনবী খান বেবিন নামটায় চোখ থমকে যায় তার। রাগে চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। ঐ লোকের সাহস হয় কিভাবে তাকে দাওয়াত দেয়ার?ঐ লোকের ছেলের জন্য তাঁর বাচ্চা মেয়েটা কতখানি কষ্ট বুকে পুষে বেড়াচ্ছে আজো। কিন্তু আশ্চর্য হলেন তাঁর সমন্ধি যে কিনা তাঁকে দু’চোখে দেখতে পারে না তাদের আত্মীয় বলে পরিচয়ই দেয় না সে তাঁকে নিজে দাওয়াত করেছে তাঁর ঐ হাইফাই পার্টিতে। কিন্তু বিয়েটা কার?

কৌতুহলবশত জুয়েল সাহেব কার্ডটা খুললেন। সারা দেখল তার বাবা কেমন যেন করছেন। থরথর করে কাঁপছেন কার্ড হাতে।

সারা: বাবা কি হয়েছে,,,দেখি তো কার্ড টা দাও।

জুয়েল সাহেব দিতে চাইলেন না সারা জোরাজুরি করে নিল।

কার্ডের লেখার দিকে তাকিয়ে পায়ের তলার মাটি সরে গেল তার।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here