তোমার পিছুপিছু পর্ব -১৩+১৪+১৫

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব- ১৩ +১৪+১৫

বর্নর খুব আনইজি লাগছে….. এভাবে কতক্ষন বসে থাকতে হবে কে জানে!!! মিলন সাহেব খুব গভীর আলোচনায় মগ্ন হয়ে আছেন তার ক্লায়েন্টের সাথে….. এবং পারভিন বেগম গভীর মনোযোগ দিয়ে চাইনিজ টি সেট কালেকশনগুলো দেখছেন….. বর্নরা যেই লিভিং রুমটায় বসে আছে….. সেই রুমের একপাশের দেয়ালজুরে বড়সড় একটা ওয়াল সো কেস,,,,,… সেই ওয়াল সো কেসের ভিতরেই নানা সাইজ এবং ডিজাইনের চাইনিজ টি সেটগুলো সযত্নে ঠাই পেয়েছে….. শুধু তাই নয় কিছু খুব সুন্দর সুন্দর মালোয়েশিয়ান ফ্লাওয়ার ভাজও আছে…. এছাড়াও রুমের চারপাশে…. বড় বড় চারটা মাটির ফ্লাওয়ার ভাজ মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে……

পারভিন বেগম বেশকিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে ছেলের পাশে বসলেন….
-বাপ দেখ… কি সুন্দর সুন্দর চায়ের কাপ….. ভাবছি আমি কয়েকটা আনাবো বাহির থেকে…. গেস্টদের চা-টা দিলে পুরোই অবাক হয়ে যাবে….
বর্ন শুধু ভাবলেশহীন ভাবে মায়ের দিকে তাকালো…. এই মুহুর্তে মা’কে বুঝনোর ঝামেলা নিতে ইচ্ছা করছে না… যে চাইনিজ টিপটে চা করা আর বাংলাদেশের গ্যাসের চুলায় কেটলিতে চা করা দু’টা সম্পুর্ণ ভিন্ন ব্যাপার…..

মিলন সাহেব আর তার ক্লাইন্টের কথাবার্তায় মিলন সাহেব খেয়াল করলেন বর্ন সোফা ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছে…. তারপর হেটে গিয়ে দাড়ালো কাচের স্লাইডিং দরজার সামনে….. দরজার ওপাশে একটা খুব সুন্দর বাগান……
-তোমার বোধহয় খুব বোর ফিল হচ্ছে,,,,তাই না!?….
বর্ন ফিরে তাকালো….. মিলন সাহেবের ক্লায়েন্ট মিড ফরটিসের লোকটা যাকে ওর বাবা মাহমুদ বলে সম্বন্ধন করছেন.….. হাসি হাসি মুখ করে বর্নর দিকে তাকিয়ে আছে….. বর্নও কেবল জবাবে হাসলো…..
-তুমি একটু বসো আমি আমার মেয়েকে ডেকে দিচ্ছি….. ওর সাথে নাহয় তুমি একটু ঘুরে-টুরে দেখলে………
বলতে বলতে মাহমুদ সাহেব কলি বলে ডেকে উঠলেন…. ভিতর থেকে একজন ১৪/১৫ বছরের মেয়ে সামনে এসে দাড়ালো…..
-কলি,,, যেয়ে তোর আপা মনিকে ডেকে নিয় আয়,,,,বলবি খালু ডাকছে…..
মেয়েটা মাথা নেড়ে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো…… এবং কিছুক্ষন পরেই গোমড়া মুখ করে নিচে নেমে এলো….
-আফায় ধমকায় খালু…..
মাহমুদ সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন….
-আসলে আমার মেয়েটা একটু পাগলাটে স্বভাবের,,,,, মনমর্জি মত চলে…. যখন মন চাইবে সারাদিন টোই টোই করে সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াবে… আর যখন মন চাইবে দুইদিনেও নিজের মুখ দেখাবে না….,,,, আচ্ছা বাবা,, তুমি একটু বসো… আমি যেয়ে ওকে নিয়ে আসছি….
-ও যখন আসতে চাইছে না,,,তখন নাহয় থাক,,,,এক কাজ কর বর্ন,,, তুই যেয়ে নাহয় কথা বলে আয়…… ওর ও আসতে হবে না… তোরও বোরিং লাগবে না…..
স্ত্রীর এমন বকবকানি তে মিলন সাহেব কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন পারভিন বেগমের দিকে….. সেই চাহনি সম্পুর্ণ উপেক্ষা করেই পারভিন বেগম আবার বললেন…..
-নিশ্চয়ই এতে কোন অসুবিধা হবে না…. কি বলেন ভাই!?..
-হ্যা!!! হ্যা হ্যা,,,তাও করা যায়…. বাবা তুমি সিড়ি বেয়ে দোতালায় গেলেই দেখবে বারান্দার সাথের রুমটা,,,,
বর্ন কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে… অপ্রস্তুতের মত এগুলো সিড়ির দিকে…

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব- ১৪

কাঠের ডিজাইন করা দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে বর্ন দরজায় ঝুলানো প্লাকার্ডটার দিকে তাকিয়ে রইল…. প্লাকার্ডটায় বড় বড় করে লিখা….” বিরক্ত করিয়া অপমানিত হইবেন না”…. বর্ন কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবলো…. সেচ্ছায় যেয়ে অপমানিত হওয়াটা কি খারাপ দেখাবে… এর আগে কখনো অপমানিত হতে হয় নি….. হয়েছে কি!!!! মিস তামান্না শুধু একবার হামকি ধামকি করেছিলো…. কিন্তু সেটাকে অপমানতো বলা যায় না…… জীবনে একবার অপমানিত হওয়াই যায়…
বর্ন একবার নক করল… কোনো সাড়াশব্দ নেই…. দ্বিতীয়বার নক করল…. তাও কোন সাড়াশব্দ নেই…. বর্ন ফিরে যাবে ভাবতেই ভিতর থেকে সাড়া এলো…. “কাম ইন”…
দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই বর্নর চোখে পড়ল ছোট্ট একটা বারান্দা…. যেটা একদম ওর বরাবর সামনে..… বারান্দায় ছোট ছোট ঝুলানো টবে গাছ…. আর একটা গোল ঝুলন্ত দোলনা…. কিন্তু মানুষ কই!!!
বর্ন ভ্রু কুচকে বায়ে তাকালো…. তারপর ডানে…. এবং রীতিমতো চমকে উঠল।
মেয়েটা ইয়োগা পজিশনে আছে… আপসাইড ডাওন পজিশন…. মাথা নিচে পা উপরে দিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আছে……
বর্ন হালকা একটু মাথা কাত করে মেয়েটাকে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করল…..
ঠিক তখনই বর্নকে আরেকদফা চমকে দিয়ে মেয়েটা হঠাৎ করে চোখ মেলে তাকালো….
তাকিয়েই মেয়েটা মুখ ভর্তি এক হাসি দিয়ে বলল
-হ্যালো দেয়ার স্ট্রেঞ্জার….. ইউ ওয়ানা জয়েন মি?
বর্ন জবাব দেয়ার আগেই বলল,,,
-এভাবে ঘন্টাখানেক ধ্যান করলে আপনার ব্রেইন স্টেস ফ্রী থাকবে…. এবং আপনার মাইন্ড ফোকাস ও ভালো থাকবে…. সুতরাং আসুন আসুন ,,,, দাঁড়িয়ে কেনো!!! আসুন…
-জ্বী মানে!!! আসলে আমি ওভাবে উপুড় হতে পারি না….
মেয়েটা তখন পা দুটো সামনে করে তড়াক করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো….. তারপর বর্নর দিকে ঘুরে তাকালো…
-ডিগবাজি খেতে পারেন??
-জ্বী?
-দেখি একটা ডিগবাজি খেয়ে দেখান তো…. কাম অন,,,, কাম অন…..
-আমি পারি না ডিগবাজি খেতে…..
মেয়েটা এবার বর্নর দিকে দুই কদম এগিয়ে এলো…. বর্ন এবার খেয়াল করল মেয়েটার চোখের মনি নীল….. হালকা নীল না….. স্পষ্ট নীল…. এতক্ষন কেনো চোখে পড়ল না…. সাধারণত বর্ন খুব ভালো অবজারভার…….
-ওয়াও ইউ আর ওয়ান হ্যান্ডসাম ম্যান….
-ধন্যবাদ…..
-কিন্তু সুন্দর হলে কি হবে!!! একটা সাধারণ ডিগবাজিও মারতে পারলেন না…..
-আসোলে……..
বর্ন মাথার পিছন চুলকাতে লাগলো…..
-থাক হয়েছে হয়েছে….কিন্তু স্ট্রেঞ্জার…. আপনি আমার রুমে কেনো!!!!
বর্ন জবাব দেয়ার আগেই…. কলি নামের মেয়েটা দরজা ঠেলে উকি দিলো….
-আফা আফনেরে খালু বোলায়….
-তোর খালু বোধহয় আজ আমাকে একটু বেশিই মিস করছে…. নারে কলি!!!
বলতেই বলতেই মেয়েটা দরজার সামনে এগিয়ে গিয়ে আবার ঘুরে তাকালো….
-এই যে মি. স্ট্রেঞ্জার… আপনি এভাবে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছেন কেনো….. আশ্চর্য্য!!!! ড্যাবড্যাব করে তাকাতে পারেন,,,, আর ডিগবাজি মারতে পারেন না!!! হুহ…..
মেয়েটা ঘুরে কাধ বরাবর চুলগুলো এক ঝাড়া মেরে বের হয়ে গেলো…. বর্ন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল…..তারপর একটা অবাক হাসি ফুটে উঠল ওর মুখে….
রুম ছেড়ে বের হতেই সিড়ির মাথায় মেয়েটা আর কলিকে পেয়ে গেলো…..
সিড়ি বেয়ে ওরা সবাই নিচে নামতেই….মেয়েটা লিভিং রুমের তিনজন ব্যাক্তির উদ্দেশ্য বলল,
-গুড আফটারনুন লেডিস এন্ড জেন্টালম্যান,,,,, নীলময়ী ইজ হেয়ার….
লিভিং রুমের সবাই ওদের দিকে ঘুরে তাকালো… এবং পারভিন বেগম রীতিমতো আতকে উঠলেন…. ইয়া মাবুদ আল্লাহ….. এই মেয়ে লেংটা কেনো!!!!
নীলময়ীর পড়নে জিন্সের শর্টস…. আর গ্রে কালারের একটা লুজ টি-শার্ট,,,,যেটা ইন করা….
বর্ন মায়ের চেহারার ভাবভঙ্গি দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে,,,,নীলময়ীকে ওর মা’র দুচোখে দেখতেই ইচ্ছে করছে না….. ছেলের বউ বানানো তো দূরের কথা….. তারপরও চুপচাপ যেয়ে সোফায় বসল….. নীলময়ী হয়ত পারভিন বেগমের হাবভাব দেখেই উনার সাথে যেয়ে বসল…. একদম ঘেষে…..এক পা উঠিয়ে ভাজ করে….
মাহমুদ সাহেব অসহায়ভঙ্গিতে মেয়ের দিকে তাকালেন….
-মা’রে এভাবে বড়দের সামনে বসে না…… ঠিকমত বসো…..
নীলময়ী ওসবের ধার না ধরে সোজা পারভিন বেগমের দিকে ঘুরে তাকালো….
-এই হ্যান্ডসাম হেবলাটা কি আপনার ছেলে??
পারভিন বেগম কটমট করে তাকালেন নীলময়ীর দিকে….
-আপনি জানেন আপনার ছেলে ডিগবাজি খেতে জানে না….. উহু… একদমই না….. কিন্ত আমি ঠিক করেছি… আমি নিজে এই ছেলেটাকে ডিগবাজি খাওয়া শিখাবো….
” লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবাহনাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ যোয়ালিমিন” (বানান ভুল গেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন),,,এই মেয়ে বলে কি!!!! এতো বড় ধামড়ি মেয়ে কিনা ডিগবাজি খাওয়া শিখাবে….. আর আমার ছেলে কিনা হেবলা!!!! এই মেয়ে কি জানে…. ওয়ানে থাকতে বর্ন ২৫ এর ঘরের নামতা পর্যন্ত মুখে মুখে বলে দিতে পারতো…..
বর্ন মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে…. ও বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারছে,,,মা সাংঘাতিক পরিমান রেগে যাচ্ছে…. কান আর নাক লাল হয়ে যাচ্ছে… যেনো এই মুহুর্তে ধুয়া বের হবে…. ঠিক তখনই নীলময়ী বলে উঠল…
-ও মাই গড ওল্ড লেডি….ইউ আর লুকিং সো ফানি….. আপনার কান এতোটা লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে এই বুঝি ধুয়া বের হয়ে যাবে…. জানেন একবার মিনা কার্টুনে এক পর্বে দেখেছিলাম এক ইয়া মোটা লাল ষাড় গরুর কান থেকে এভাবে ধুয়া বের হয়েছিলো…..
বলেই নীলময়ী খিলখিল করে হেসে উঠল,,,,
বর্নর এখন একদমই বোরিং লাগছে না….. ও সম্পুর্ণ সিচুয়েশানটা চুপচাপ উপভোগ করছে….. বর্নর মনে হল,,,,মেয়েটা খুব ইন্টারেস্টিং তো…..

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব- ১৫

-মেয়েটার কত্ত বড় স্পর্ধা দেখেছিস,,,,,, আমাকে বলে কিনা আমি নাকি দেখতে ফানি,,,, আমার কান দিয়ে নাকি,, ধুয়া বের হবে,,!!! এত্ত ফাযিল মেয়ে….
বর্ন রেয়ার ভিউ মিরর দিয়ে মা’র দিকে তাকালো…. ওর মুখে এখনো হাসি লেগেই আছে…. নীলময়ী ওর মা’কে ষাড়ের সাথে তুলনা করেছে সেটা ওর মা’র মাথা থেকে আউট হয়ে গেছে…. মা’কে কি একবার মনে করিয়ে দিবো!!!
-আহা হয়েছে তো… থামো এবার একটু.. গাড়িতে বসেছো পর থেকে শুরু হয়েছে তোমার গজগজানি….
-তুমি চুপ থাকো…. যত্ত নষ্টের মূল হচ্ছো তুমি…. তোমায় আমি বলেছিলাম মেয়ে দেখতে…. এই মেয়ে দেখেছো তুমি!!! আধা লেংটা পাগল মেয়ে দেখাতে নিয়ে গেছো কেনো তুমি আমাদের…. কোন আক্কেলে মনে হলো এই মেয়েকে আমি আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিবো…. হ্যা বলো তুমি….
-স্টপ ইট ওমেন…. ইউ আর ক্রিয়েটিং নয়েজ পলিউশন….
-খবরদার ইংরেজি মারাতে আসবে না,,,আমার সাথে…..
-পারভিন,,,, মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ….
এবার একটু গম্ভীর স্বরে বললেন মিলন সাহেব….
বর্নর দৃষ্টি গাড়ির জানালার বাহিরে স্তগিত হয়ে আছে…… আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে….. যেদিন মিস তামান্নার সাথে দেখা হয়েছিলো,,,,,সেদিনও ঠিক এমনটাই কালো মেঘে ছেয়ে ছিলো আকাশ……

তামান্না অফিস থেকে এসেই সরাসরি বিছানায় পড়েছিলো….. আজকাল খুব ক্লান্ত লাগে নিজেকে…. কিন্তু এই ক্লান্তি, পরিশ্রম, রুটিন, অফিস, সবকিছুই তামান্না উপভোগ করে…..কারন এই চাকরিই ওর সব টেনশনের অবশান ঘটাবে….. এসব ভাবতে ভাবতেই তামান্না গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো…..
তামান্নার যখন ঘুম ভাংলো,,,তখন বাজে ঘড়িতে ১০.০৭,,,,এখন ঘুম থেকে উঠার ওর কোন ইচ্ছাই ছিলো না….. একঘুমে রাত কাবার করে দেওয়ার প্লান ছিলো…. মিনিট খানিক পরেই নিজের ঘুম ভাংার উৎস খুজে পেলো….. সোফার রুমে টিভিতে ওর মামির জি-বাংলা সিরিয়াল চলছে….ভলিউম এতোটাই হাই ছিলো যে,,,সিরিয়ালের ব্যাকগ্রাউন্ড ঘুড়ুম ঘাড়ুম মিউজিকে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেছে…… তামান্না উঠে দাড়ালো,,,বাহিরের কাপড় ছেড়ে বাসায় পড়ার কাপড় পড়ল…… পুরোনো কাঠের সিংগেল বিছানায় ট্যাক্সের বইটা নিয়ে বসল,,,,থিউরিগুলো পড়া দরকার সামনে পরীক্ষা,,,, বই খোলা মাত্রই ওর পেট “গ্রোওওল” করে ডেকে উঠল,,,,
তামান্না মাথা নিচু করে একটা অস্বস্তিকর নিঃশ্বাস ছাড়লো…. পেট যেনো এতে আরো জোরে জোরে ডাকতে শুরু করল,,,,কি আশ্চর্য্য!!!! তামান্না বইটা রেখে রুম ছেড়ে বের হলো….. বারান্দায় পড়ার টেবিলে ল্যাম্প জ্বেলে ওর মামাতো ধুমসে পড়ে যাচ্ছে….এতো আওয়াজের মাঝেও,,,,মেয়েটার কি মনোযোগরে বাবা!!! তামান্না হেটে রান্না ঘরে গেলো….. ভাতের পাতিল ছোট্ট হাউজে ভিজানো…. অর্থাৎ ভাত নেই…. তরকারির পাতিল দেখা যাচ্ছে না,,,ফ্রিজে নাকি!!! রান্নাঘর ছেড়ে বের হয়ে ফ্রিজে হাত দিতেই,,,,মামীর গোলার আওয়াজ শোনা গেলো সোফার রুম থেকে….
-ফ্রিজের তরকারি তোমার মামা আর বিন্তির সকালের নাস্তা….. ওইটা বের করার চিন্তাও করবে না…. নবাবজাদির মত ঘুমিয়ে যখন তখন উঠে খাবার খুজবে,,,আর তোমার জন্য হাজির হয়ে যাবে,,,তা হবে না,,,,
তামান্না চুপচাপ ফ্রিজের দিকে মুখ করে চেয়ে রইল…..
-আর কত এসব পালতে হবে কে জানে….. মাগনা থাকা খাওয়া আবার নবাবজাদির চ্যাটাং চ্যাটাং ব্যবহার…..
এই কথাটা বিড়বিড় করে বললেও,,,তামান্না শোনার মত যথেস্ট জোরেই বলল,,,,
তামান্না ঘুরে টেবিল থেকে একগ্লাস পানি খেয়েই নিজের রুমে এসে বসল,,,,, মানুষ কতটা সুবিধাবাদী,,,,, যতক্ষন লাভ আছে ততক্ষন সম্পর্ক আছে….। যেই সুবিধা আর লাভ গায়েব হয়ে যায় অমনি সম্পর্কও গায়েব….. তামান্না ভেবে পায় না ওর আপন মামী কিভাবে ওর সাথে এতোটা খারাপ ব্যবহার করতে পারে…. এই মামা মামী গ্রামে গেলেই ওর বাবা বাজারের সবচেয়ে বড় মাছটা কিনে নিয়ে আসতো,,,,একমাত্র ওনাদের জন্য….. আর এখন ওর সেই মামা মামী এই ব্যবহার!!!!
তামান্না বিছানায় পা তুলে বসে ট্যাক্সের বইটা মুখের উপর রেখে বিড়বিড় করে থিউরি পড়তে লাগল,,,।

(আসছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here